— চোখে কাজল দিস কেনো?(আমি)
— তোর ভালো লাগে তাই। (নেহা)
— কেনো?আমার ভালো লাগলেই কি তোকে
সব করতে হবে।(আমি)
— প্রিয় মানুষটার জন্য এতটুকু করতে পারবো না?(নেহা)
— তা চোখে কাজল দিস ভালো কথা। কাঁদিস কেনো
তাহলে? লেপ্টে গেলে তো তোকে খুব
বিশ্রি লাগে।(আমি)
— তুই কাঁদাস তাইতো কাদি।(নেহা)
— এমন আবদার করিস কেনো যাতে আমি রাজি না হই।।
আর আমি রাজি না হলেই তো তুই
কেঁদেদিস।(আমি)
— ঠিক আছে আর কাদবো না।
চল কোথাও ঘুড়ে আসি।
ক্লাস করবো না।(নেহা)
— যাবি? চল তাহলে!(আমি)
— হুম।(নেহাল
.
আমি মাহিদ হাসান কুতুব। মাগুরা সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ি।
বাবা নেই আমার।
পরিবারের আপন বলতে মা আর আমিই।
তিনটা টিউশনির মাধ্যমে জীবন চলে ।
আর এ আমার বেস্টু সাদিয়া ইসলাম নেহা ।
আমাকে খুব ভালোবাসে।
হয়তো আমিও ভালোবাসি।
কারন ওর ছোট ছোট আবদার গুলো কখনো ফেলে দিতে পারিনা।
তারপরেও বাস্তবতার টানে একটা কথা
সত্যি।
গরিবদের প্রেম করতে নেই।
তাই ওর চোখের মায়াজাল থেকে বারবার বেরিয়ে আসতে চাই।
বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে।
কোনো এক বিচিত্র কারনে তিন বছর আগে
আমাদের ফ্রেন্ডশিপ হয়েছিলো।
এখনো টিকে আছে আমাদের বন্ধুত্ব। আর ও আমাকে নাকি
ভলোবাসে।
প্রতিদিন ওর মুখে কথাটা শুনতে
শুনতে আমি অভ্যস্ত।
আর কিছু উনিশ-বিশ হলেই
কেঁদে দিবে।
এতো জল কোথা থেকে
আসে আমি জানি না।
.
পরের দিন..!
— দোস্ত বাসায় অনেক মেহমান আসবে আজ। যাবি
আমাদের বাসায়? (নেহা)
— কেনো?
— আরে চল। একা যেতে ভালো লাগছে না ।(নেহা)
— নাহ অন্যদিন।
— আরে চলতো।(নেহা)
(এই বলে টানতে টানতে নিয়ে চললো একটা রিকশার দিকে..!)
.
— আম্মু মাহিদ কে আজ নিয়ে আসছি। (নেহাদের বাসায় যাবার পর)
— আস্ সালামু আলাইকুম আন্টি(আমি)
— বাবা কেমন আছো?(নেহার আম্মু)
— জ্বি আন্টি ভালো! আপনি কেমন আছেন?
— ভালো। আমাদের তো ভুলেই যাও। মাঝে মাঝে তো আমাদের বাসায় আসতে পারো?(নেহার আম্মু)
— আন্টি ব্যস্ত থাকি তো তাই।
— আম্মু ওকে নাস্তা দাও। আমি ফ্রেস হচ্ছি।(নেহা)
— আচ্ছা যা ।(নেহা চলে গেলো) বাবা বসো। (নেহার আম্মু)
— আচ্ছা
.
একটু পর আন্টি নাস্তা নিয়ে এলো!
— বাবা জানো আজকে তোমাকে একটা কারনে ডেকেছি। (নেহার আম্মু)
— মানে?
— আজ নেহাকে দেখার জন্য ছেলে আসবে।
নেহার আব্বুর বন্ধুর ছেলে! আমারতো কোনো
ছেলে নেই তাই সবকিছু তোমাকেই দেখতে হবে।(নেহার আম্মু)
— (বুকটা হঠাৎ মোচড় দিয়ে উঠলো! হয়তো কোনো কিছু হারানোর অনুভুতি! যা নিয়ে আমি
কোনোদিনও ভাবিনি) আচ্ছা আন্টি কোনো চিন্তা
করবেন না। আমি আছি তো।
— ধন্যবাদ বাবা।(নেহার আম্মু)
.
একমাসের মাথায় বিয়েটা হয়ে গেলো। ছেলেটা
আমার চাইতে অনেক সুদর্শন।
টাকা পয়সারও অভাব নেই।
আর আমি কিনা এমন একটা ছেলের সাথে তুলনা যোগ্য? কখনোই না।
বিয়ের তিনদিন আগে নেহা আমাকে জোড় দিয়ে বলেছিলো…!
— আমাকে ভালোবাসিস?(নেহা)
— হয়তো!
— পালাতে পারবি?(নেহা)
— না।
— কেনো?(নেহা)
— আমি মাত্র লেখাপড়া করি। তারপর অনার্স
মাষ্টার্স শেষ হবে তার পর চাকরি নামক সোনার হরিন।
পালালে কি খাওয়াবো?
আর নিজেই বা কি খাবো?
— তোর এসব চিন্তা করতে হবে না।(নেহা)
— দেখ এসব চিন্তা বাদ দে।
আর নতুন করে স্বপ্ন দেখ।
— যাকে নিয়ে গত তিন বছর স্বপ্নের জাল বুনেছি
আজ সেই জালটাকে ছিড়ে ফেলতে বলছিস? (নেহা)
— হুম!
— তুই পারবি ছিড়তে? তুই পারলে আমিও পারবো।
পারবি বল? (নেহা)
— না।
— তবে? (নেহা)
— দেখ বাস্তবতা অনেক কঠিন। চাকরি না পেলে
ছেলেদের কোনো মূল্য নেই।
— ফিরিয়ে দিচ্ছিস? বাঁচতে পারবি আমায় ছাড়া?(নেহা)
— কষ্ট হবে। তবুও পারবো। কারন ছেলেরা স্বার্থপর।
— চাকরি পাবি একদিন।
কিন্তু আমাকে ঐদিন আর পাবি না। (নেহা)
.
পাঁচ বছর পর..!
(বসে আছি সেই বেঞ্চ টায়। যেখানে তিনটা বছর
গল্প করে কাটিয়েছি। নেহা ও পাশে আছে।
তবে দুই জন দুই মাথায়।
মাঝখানে অনেকটা ফাকা।
যেটা কোনোদিনও ছিলো না।
আজ মাঝখানে একটা
২বছরের পিচ্চি বসে আছে।
যে মামা বলে সম্বোধন করছে)
— কাজল দিয়েছিস কেনো আজ?
— তোর সাথে দেখা করলে আমি কি কাজল ছাড়া
যেতাম?(নেহাল
— না। কিন্তু তুই কি আর আমার আছিস?
— না। ভাগ্যের পরিহাসটা দেখ। আমার বাবুটা তোকে
মামা বলে ডাকলো! এটা কিন্তু অন্য কোনো ডাকও
হতে পারতো। (নেহা)
— বাদ দে এসব।
— পাচ বছর কই ছিলি?(নেহা)
— টিসি নিয়ে চলে গেছিলাম।
— ওওও। আমাকে ভুলে থাকার জন্য? (নেহা)
— হয়তো।
— আবার ফিরে এলি কেনো? (নেহা)
— একটা কথা বলতে।
— বল? (নেহা)
— আমি একটা সোনার হরিণ পেয়েছি। আজ খুব করে বলতে ইচ্ছা করছে একটি কথা।
— কি কথা? ( নেহা)
— আমিও তোকে ভালোবাসতাম।
তোর চাইতেও অনেক বেশি।
যেটা তুই কল্পনাও করতে পারতিস না।
— আজ বলে কি লাভ? (নেহা)
— হুম। বাস্তবতার কাছে সব কিছু হেরে যায়।
একসময় তোকে পাওয়ার জন্য
একটা চাকরির দরকার ছিলো কিন্তু সেটা পাওয়া সম্ভব
হয়নি। কিন্তু আজ দেখ! চাকরি পেয়েছি ঠিকই! কিন্তু
তোকে হারিয়ে ফেলছি।
শূন্যতা আজ ঠিকই তোকেই খুঁজে।

এরপর দুজনের মাঝে নিরবতা

–আর হয়তো দেখা হবে না ,,!!
— কেনো ?? (নেহা)
— মিথ্যা মায়া বাড়িয়ে লাভ কি ,,??
–হুম ঠিক বলছিস ,,,।। (নেহা)
— ভালো থাকিস,, 😭😭
— তুই ও (নেহা)

(নেহার কাজল লেপ্টে যায় নিরব কান্নায়)
নেহা চলে যাচ্চে আর আমি বসে দেখছি
আর চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই পানি বেয়ে পড়ছে