নিজের রুমে ঢুকতে গিয়ে স্নেহার সাথে ধাক্কা খেলাম। ও নিজে কন্ট্রোল করতে পারছিলো না তাই ওকে ধরে নেই। ভুল বসতো ওর কমড়ে হাত লেগে যায়।
আব্বুর কাছে গিয়ে ২ কিলোমিটার লম্বা করে বলে সে এই কথাটা। সে আব্বুকে বলে,
— আংকেল আরিয়ান আমাকে একা তার রুমে দেখে খারাপ কিছু করতে চায়। আমি চলে আসছিলাম তখন ও আমাকে ফেলে দেওার চেষ্টা করে আর আমি ওকে ধরে নেই। তার পরে ও আমাকে কিস করার চেষ্টা করে।
আব্বুতো আমাকে পারলে মেরে দেয়। তার বেষ্ট ফ্রেন্ড এর মেয়ে আসছে আমাদের বাসায়। আম্মু আমাকে বলেছিলো আমার বিয়ে নাকি তার সাথে ফিক্সড করে রাখছে আব্বু আর তার বন্ধু। কিন্তু আজকে এই মেয়ে আমার আব্বুরে যা বলেছে তার পরে আব্বু আমারে যেমনে মারছে। সেটা থেকে আমি বুঝে গিয়েছি এই মেয়ে আমাকে এক ইঞ্চিও পছন্দ করে না।

আর আব্বুতো ধুয়ে দিলো আমাকে। আমি কি করবো? ভেবে পাচ্ছিলাম না। যেই বাপে আমারে মাথায় করে রাখতো সেই বাপে আজকে আমারে মারছে।
পরে আম্মুথেকে জানতে পারলাম। আব্বু নাকি কান্না করে দিছে। কথাটা শুনে মনে হচ্ছিলো আমার ভিতরটা কেউ দুমরে মুচরে দিচ্ছে। প্লাস ব্যবহার করে , যেভাবে নাট বোল্ট টাইট দেয় ঠিক একই ভাবে আমার সাথেও করছে।
ভেতর থেকে কষ্ট হচ্ছিলো অনেক কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।

সেদিন বিকেলে আমি আব্বুর কাছে গেলাম। গিয়ে আব্বুর হাত ধরে বললাম।
— আব্বু স্নেহা তোমাকে যা যা বলেছে সব মিথ্যা । আমি রুমে যাচ্ছিলাম তখন ও বের হচ্ছিলো আর আমার সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যাচ্ছিলো আমি ধরেছি।
আব্বু আমাকে সাথে সাথে বললো।
— কে সত্যি বলছে আর কে মিথ্যা বলছে সেটাতো আমি জানিনা। কিন্তু যদি জীবনে কেউ আর কিছু বলে তোর নামে তাহলে আমি তোরে আমার এই বাড়িতে যায়গা দেবো না। হয় তুই যাবি নয়তো আমি যাবো।

খুব কষ্ট পেলাম আমি আব্বুর কথায়। যে আব্বুরে ছাড়া আমি ৫ দিন কাটাতে পারিনা। সে কিনা আমাকে বের করে দেবে বাসা থেকে। মাথা নিচু করে আব্বুর রুম থেকে বের হয়ে চলে আসলাম। বাইরে আসতেই দেখি। স্নেহা দারায় আছে। আমাকে দেখেই একতা পৈশাচিক হাশি দিয়ে চলে গেলো।

আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না। খুব দ্রুতই আমাকে এই বাড়ি ছারতে হবে। কি আর করার যদি চলে যেতে হয় তাহলে চলে যাবো। কিন্তু আব্বুরে খুব মিস করবো।

এসব ভাবতে ভাবতে রুমে চলে এলাম এসে শুয়ে আছি। বন্ধুগুলা ফোন দিলো। আর বললো,
— কিরে বান্দিরপো কই তুই? আয় ঘুইরা আসি।
— কোথায় যাবো?
— এলাকায় নতুন মেয়ে আসছে। ওটা নাকি রিমুর চাচার বাড়ি। তো আমরা সেখানেই যাচ্ছি।
— দোস্ত আমি গেলেতো তোরা দাম পাবি না। আমার দিকেই মেয়ে তাকায় থাকবো। যেমনটা ছিলো নীলের ক্রাস। মনে আছে?
— মনে পরামুনে। তুই আয়। দেখুমনে মেয়ে কারে বেশি লাইক করে। হুহ।
— হাহাহাহাহাহা।
— তুই বেটকাবি নাকি আবি?
— কৈ তোরা?
— তোর বাসার নিচে।

আর কিছু বললাম না চলে আসলাম বাসার নিচে। দেখলাম এক বন্ধুর হাতে সিগারেট। সে আমার মুখে ধুয়া মারলো।
— আমি যাইতাম না। [আমি]
— আরে সিগারেট ফেলে দিবো তো [রায়হান]
— না দোস্ত ঘোরার মুড একেবারেই শেষ।

তার পরে রায়হান আর সবাই ঐ বন্ধুরে বকতে লাগলো। আমি যেহেতু বলেছি যাবো না তাই গেলাম না আর। আমি আবার নিজের রুমে এসে শুয়ে পরলাম সালায় এখনো মুখে গন্ধ আছে। আচ্ছা যারা সিগারেট খায় তাদের গফরা কি কিছু বলে না? সিগারেট খাইয়া নিজের জীবনটাও নষ্ট করে আর সাথে আরো কয়েকটা নিস্পাপ জীবন ধংস করে [বিদ্রঃ যেদিন নিজের অনেক কাছের কাউরে হারাবা এই সিগারেটের কারনে সেদিন বুঝবা। হারানো বলতে মেরে ফেলা বুঝাইছি]

যাইহোক নিজের রুমে এসে শুয়ে আছি তখন স্নেহা আব্বুরে নিয়ে আসলো। আমি উঠে বসলাম আব্বু এসেই আমার শার্ট শুকতে শুরু করে দিলো। সাথে সাথে ঠাসস করে থাপ্পড় লাগায় দিলো।

আব্বু নিজের পেন্টের বেল্ট খুলে আমাকে মারা শুরু করে দিলো। পেছনে দারিয়ে থেকে স্নেহা মুচকি মুচকি হাসছে। আমি জানি এই মেয়ে এবার কি বলছে। আমার আব্বু জানে আমি এসব একেবারেই ছুই না। তার পরেও আমার চাইতে বেশি এই মেয়েকে বিশ্বাস করলো আব্বু। কিন্তু এখানেতো সমস্যা আরো একটা আছে। আমার শরিরে এখনো সিগারেটের গন্ধটা রয়েই গিয়েছে। তাই আব্বু আমার উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে।
কয়েকটা আঘাত করার পরে আব্বু আমাকে মারা বন্ধ করে দিয়ে বললো। আমি বাসায় এসে যাতে তোরে এই বাড়ীতে না দেখি। তোরে বাড়ীতে দেখলে আমি এই দুনিয়া ছেরে চলে যাবো।

এবার খুব বেশি কষ্ট পেলাম । কিচ্ছু বললাম না। চোখ নিচু করে দারায় রইলাম । কিন্তু কেনো জানি আমার কোনো অনুতাপ ছিলো না তখন। এক ফোটাও পানি পরে নাই চোখ থেকে। কারনটা বুঝতে পারছিলাম না। হয়তো আমি জানি এখানে আমার একটুও দোষ নাই তাই আমার কোনো কষ্ট হচ্ছে না।

বাষা থেকে বের হয়ে চলে এলাম। আম্মু অনেক আটকানোর চেষ্টা করেছে। একটা কথাও আমি ভালো করে শুনি নাই। আব্বুর যতো গুলা গিফট ছিলো সব কিছু নিয়েছি। আমার যতোগুলা ছবি ছিলো দেয়ালে সব গুলা ভঙ্গে দিয়েছি। যেহেতু আমাকে দেখতে চায় না আব্বু তাহলে কিছুতেই দেখতে পারবে না। আর আমি চাইনা আমার মতো কুলাঙ্গারকে দেখে সে নিজের রক্ত মাংসের টাকা খরচ করে বানানো বাড়ীটা থেকে চলে যাক। আমি বাসা থেকে বের হয়ে চলে এলাম । কোথায় যাবো কি করবো কিচ্ছু জানিনা। শুধু এই টুকু জানি আমি আর এই বাড়িতে ফেরত আসবো না। আমি যখন শেষ বারের মতো আমার রুমটা দেখছিলাম তখন মনে হচ্ছিলো আমাকে বলছে তুমি যেওনা। আমি তোমাকে ছাড়া অসহায়।

এখন আমি চলে আসার পরে হয়তো এই রুমটা হবে স্টোর রুম। এটা যাতে না হয় তাই আম্মুকে বলে গেলাম।
— আম্মু আমার শেষ আবদার তোমার কাছে। আমার রুমটা স্টোর রুম বানাইয়ো না।
বলেই চলে আসলাম আম্মু শারীর আচল মুখে গুজে দিয়ে কান্না করছিলো। আর তার পেছনে দারিয়ে ছিলো স্নেহা। ওর হাশিটা দেখে কিছুটা আচ করতে পারলাম ও হয়তো ভাবছিলো।
— অনেক বিয়ে করার সখ আমাকে তাই না। দেখ আমাকে বিয়ে করার ইচ্ছায় তোর থেকে তোর সব কেরে নিলো।

আচ্ছা আমি কি খুব বড় অপরাধ করে ফেলেছি? আব্বু জানে আমি এসব কিছুই করবো না। তার পরেও কেনো সে আমাকে বিশ্বাস করলো না? এই মেয়েকি আব্বু কাছে আমার চেয়েও অনেক বড় হয়ে গিয়েছে?
এসব ভাবতে ভাবতে অনেক দূরে চলে আসছি। মোবাইলটা বের করে গুগল এ ঢূকে দেখলাম ঢাকার বাইরে চলে আসছি। কোন বাসে উঠছিলাম জানি না। এখন যেই যায়গায় আসছি সেটার নাম দেখাচ্ছে মুন্সিগঞ্জ।

এখন আমি করবো কি? চলেতো আসলাম। আচ্ছা দেখা যাবে কি করা যায়। এখন হোটেল খুজতে হবে। অনেক খুজে একটা হোটেল পেলাম সেটায় কোনো রকমে রাত পার করতে হবে। ম্যানেজারের কাছে গিয়ে একটা রুম নিলাম । মোটামুটি ভালোই চাইলো ভাড়া কি আর করবো নিয়ে নিলাম এমনিতেও অনেক রাত হয়ে গিয়েছিলো। প্রায় ১১ টা…….

এখন হোটেল খুজতে হবে। অনেক খুজে একটা হোটেল পেলাম সেটায় কোনো রকমে রাত পার করতে হবে। ম্যানেজারের কাছে গিয়ে একটা রুম নিলাম । মোটামুটি ভালোই চাইলো ভাড়া কি আর করবো নিয়ে নিলাম এমনিতেও অনেক রাত হয়ে গিয়েছিলো। প্রায় ১১ টা এখন যে একটা হোটেল পেয়েছি এটা ভাগ্যের ব্যাপার।

রুমের চাবি নিয়ে চলে এলাম রুমে। এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। বাথ টাবে বসেয়াছি আর ভাবছি কি হলো আমার সাথে কী একটা মেয়ে আসলো আর ও আমার জীবনটাকে সম্পুর্ন গোলমাল পাকিয়ে দিলো। আব্বু খুব রাগ করছে এইবারে ।

চিৎকার করে বললাম,
— আব্বু আমি কিছু করিনাই। আমার কোনো দোষ নাই। কেনো এইবার বুঝার চেষ্টা করলানা আমাকে।

তখনি কিছু একটা ফিল করলাম । আমার চোখে পানি? আজব জিনিস। আমার চোখে আজ পানি।
আজব আমি কি করে কিভাবে? এসব মনে পরছে কেনো? কারন আমি শেষ কবে কান্না করেছি সেটা আমার নিজের মনে নাই। আব্বুর কোনো কাজে আমি কখনো এতো কষ্ট পাই নাই যে কান্না করবো। কিন্তু আজ এই মেয়ে কি করলো , আব্বুর থেকেই দূরে থাকতে হচ্ছে। এই জিনিশটাই আমি মেনে নিতে পারছি না তাই হয়তো কান্না করছি।

কি আজব জিনিস!!! আমাদের ছেলেদের নাকি কান্না করতে নাই। কিন্তু কেউ কি জানে আমরা কান্না করি তখনি যদি ও কেবল যদি এতোটা কষ্ট পাই যেটা সহ্য করা আমাদের জন্যে সম্ভব না। যেটা কয়েক হাজার নারীর কষ্ট একত্র করলে হবে।

গোসল করে চলে এলাম রুমে। রুমে এসে ল্যাপ্টপ টা নিয়ে বসলাম। অনেক দিন হয়েছে ফ্রিলান্সার ডট কমে ঢুকা হয় না।

আরে বাপরে আমিতো ভুলেই গিয়েছি আমার ২০২১ ডোলার এখনো পরে আছে সেই একাউন্টে। টাকা গুলা বের করলে তো অনেক টাকা হয়ে যাবে। আগামী কাল গিয়ে বের করে নিবো।

কিছুক্ষন ঘুরলাম অনলাইনে ডার্কওয়েব ডীপওয়েব ঘুরে দেখলাম। তার পরে লেপ্টপ অফ করে দিয়ে। বেল্কনিতে দারালাম। আব্বুর কথা মনে পরছিলো তখন। খুব কষ্ট হতে লাগলো। কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। আব্বুর কথা মনে পরার পর পরেই মনে পরেগেলো স্নেহার কথা।

কি একটা মেয়ে। আমি জানতাম মেয়ে জাতী মানেই ভালোবাসা আর এই মেয়ে নিজে কি করেদিলো ? আমাকে আমার পরিবারের কাছ থেকে দূরে সরায় দিলো? কি দোষ ছিলো আমার আমি কি তাকে কষ্ট দিয়েছিলাম? আমি নিজে তাকে ভালো করে চিনতাম ও না। কিন্তু সে আমার জীবনটা শেষ করে দিলো। কি পেলো সে?

আমাকে একটি বার সে বলতো সে আমাকে বিয়ে করতে চায় না। তাহলে আমি আমার আব্বুর পায়ে ধরে হলেও এই বিয়ে টা আটকায় দিতাম কিন্তু এখন এই মেয়ে যা করেছে তার জন্যে আব্বুর পাটাও নেই।

তখনি ফোনের দিকে তাকায় দেখি আম্মুর ফোণ। তখনি মনে পরলো আমি এখনো ফোনের সিম চেঞ্জ করি নাই। কোনো রকমে সিমটা খুলে ভেঙে ফেললাম। পরে চলে রুমে। এসে ঘুমায় গেলাম। সকালে উঠে দেখি বালিশ ভিজে গেছে।

আমি এতোদিন বুঝতাম মানুষ কান্না করে নিজের ইচ্ছায় । এবং সুধু শারিরিক আঘাত পেলেই নাকি কান্না করে। কিন্তু গতকালকের পরে থেকে আমি অনেক কিছু সিখেছি। এখন বুঝতে পারছি জীবনে অনেক কিছু করা অনেক কিছু জানা এখনো বাকি আছে।

এতোদিন কোনো গোল ছিলো না। বা লক্ষ ছিলো না জীবনে কিন্তু আজকে থেকে একটা লক্ষ পেতে হবে। কি করা যায়? আচ্ছা আগে টাকা তুলে নিয়ে আসি। তার পরে দেখা যাবে।

চলে এলাম ব্যাংকে টাকা তুলে নিয়ে চলে আসলাম হোটেলে । এতক্ষন ভাবছিলাম কি কি করা যায়। আমি কি কি পারি?
১। নাচতে পারি।
২। কম্পিউটার এক্সপার্ট আছি।
৩। খুব ভালো হ্যাকিং পারি।
আর কিছু পারি কি? উহু আর কিছু পারি না। তাহলে কি করা যায়? নেচে তো সম্পুর্ন জীবন পার করা সম্ভব না। কম্পিউটার এক্সপার্ট আছি সেটা দিয়ে জীবনে অনেক কিছুই করতে পারবো। কিন্তু করবো কি?
ফ্রিলান্সিং করতাম না। অনেক মানুষ করে তাই জব পাওয়া যায় না। আচ্ছা একটু চাকরি খুজলে কেমন হয়? কি চাকরি করবো?
আচ্ছা গুগলে নিজের ডেটা দিয়ে রাখি তাহলেই হয়ে যাবে। আগামী ১ সপ্তাহে তো খুব ভালো একটা চাকরি পেয়ে যাবো। ততদিনের জন্যে এই টাকায় চলে যাবে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। মুখের কথা একেবারেই নয়।

গুগলে ডাটা দিয়ে হোটেলের সব টাকা সোধ করে দিয়ে বাসা থেকে বের হলাম। ওরে বাবারে যেই পরিমানে টাকা চার্জ করেছে তাতে আমার সম্পুর্ন পরিবার ১০ দিন অনায়েসে খাবার দাবার চালিয়ে যেতে পারতো।

হোটেল থেকে বের হয়ে বাসা খুজছি। একদিন আব্বু বলেছিলেন কথায় কথায়। গ্রাম অঞ্চলে নাকি বাসা বেচেলার দেরকেও ভাড়া দেয়া হয়। আমি বাসা খুজেই যাচ্ছি বাসা খুজতে খুজতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো কিন্তু বাসা খুজে পেলাম না একটা। মন খারাপ করে বসে আছি। হঠাৎ চখে পরলো। এক বড় আপু হয়তো বাজার করে বাসায় ফিরছে। আমি তাকে দেখে বুঝতে পারলাম তার কষ্ট হচ্ছে সব জিনিস গুলা একা বইতে। তাই আমি গিয়ে তার থকে তার এক হাতের সব জিনিস পত্র নিয়ে নিলাম। আর বললাম,
— চলো আপু তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।
সে সুধু হ্যা করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তখন মনে হচ্ছিলো আমি একজন এলিয়েন। তার পরে আরকি আমি আপুর সাথে হাটতে হাটতে তার বাড়ির কাছে পর্যন্ত গিয়ে তাকে এগিয়ে দিয়ে আসলাম। এর মাঝেই তার আর আমার অনেক কথা হয়েছিলো। যেমন,
আমার নাম কি? আমি কি করি? কোথা থেকে এসছি? বাসা কেনো ছারলাম ইত্যাদি। সব কিছুর জবাব দিয়ে দিয়েছি। এক কথায় বলতে গেলে আপুর সাথে আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। এই রাস্তা টুকুর মাঝেই আমি কিছুই জিজ্ঞেস করি নাই।

যখন আপুকে তার বাসায় তার জিনিস পত্র দিয়ে চলে যাচ্ছিলাম তখন আপু পেছন থেকে ডেকে বললেন।
— আরিয়ান,
— জ্বী আপু বলো।
— তুমিতো আমার ছোট ভাইয়ের মতো তুমি চাইলেই আমাদের বাসায় থাকতে পারো। যতদিন তোমার ইচ্ছা।
— না আপু এতো কষ্ট দিয়ে থাকতে চাইনা। আমি একটা বাসা ঠিক খুজে নেবো।
— ঐ বেটা বেশি কথা বলস কেনো? যা বলছি তা করবি।

মুহুর্তের মধ্যে আমার কিউট আপু একটা ভয়ানক দনবীর রূপ নিলো। সে আর কথা না বলে আমার ব্যাগ টা নিয়ে নিলো আমার কাছে থেকে আমি তার কথা অনুযায়ী তার পেছন পেছন চলতে লাগলাম। সে আমাকে একটা ফ্লাটে পাঠিয়ে দিলো। ও বাড়িটার কথাতো বলাই হয় নাই। বাড়িটা তিন তালা। বাড়িতে আপুর আব্বু আম্মু আর আপুই থাকে।

মানে এখন মেঘ না চাইতেই জল পেয়ে গেলাম। সব আছে তার উপরে একটা পরিবার পেয়ে গেলাম। কিন্তু আপুর আম্মু হয়তো আমাকে ততটা পছন্দ করে নাই। কেমন জানি করেন আমাকে দেখে……………………

গেলাম। সব আছে তার উপরে একটা পরিবার পেয়ে গেলাম। কিন্তু আপুর আম্মু হয়তো আমাকে ততটা পছন্দ করে নাই। কেমন জানি করেন আমাকে দেখে। মনে হয়না আমাকে পছন্দ করে একটুও।

আমি বারে বারে কেনো জানি আপুর মায়ের সামনে পরে যেতাম আর তিনি আমাকে সব সময় সন্দেহের চোখে দেখতেন। আমার কেনো জানি ভয় করতো তাকে দেখলে। সে কেনো আমার দিকে এমন করে তাকায় থাকে।

তাকে দেখলে আমার খাওয়া পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যেতো। এসব ছাড়া বাকি যা ছিলো সব ফার্স্ট ক্লাস চলছিলো। আমি আপুর বাসায় খুব মজা করতাম। আপুকে অনেক কিছু সিখাইছি। আপুর কাছ থেকে অনেক কিছু সিখছি। কিন্তু একটা সময় ছিলো প্রতিদিনেই যেই সময়টা আমি আমার আব্বুকে আর আমার পরিবারকে ভেবে কাটাই।

আমি আমার মতো করে সেই সময়টাতে থাকতাম আপুও জানতো তাই সেও আসতো না । আমার মন ভালো হলেই আমি আবার বের হতাম মজা করতে। প্রতিদিন স্নেহার কথা মনে পরে। কেনো মনে পরে? ঐ মেয়ের কারনে আমি ঘর ছাড়া হয়েছি তাহলে ওকে তো আমি শান্তি দেবো না এটাই স্বাভাবিক। তাই আমি সারাদিন ওর কথা ভাবতাম আর চিন্তা করতাম কি করে প্রতিশোধ নেওয়া যায়।

আপু আমার সব ঘটনা জানতো। ওহ কথায় কথায় আপুর নামটাইতো বলা হলোনা। আপুর নাম হচ্ছে মুক্তা। খুব সুন্দর নাম আমার ভালো লাগে বিশেষ করে। কারন মুক্তা আমার মায়ের নামও। সেটাও আপু জানে। যদি আমি এখান থেকে চলে যাই বা হারিয়ে যাই। বা রাগ করে বা যে কোনো কারনে যদি কোথাও আমাকে না পাওয়া যায়। তাহলে আপু বলতে পারবে আমি কোথায় আছি। কেননা আমার আব্বুর পরে আমি আপুকেই সব চাইতে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। তো এখন সেই দিন গুলার কথা বলি সেই মিষ্টি ঝগড়া গুলা যা আমার আর আপুর মাঝে প্রায় সময়েই হয়ে থাকতো।

*** আমি মুখ খারাপ করে ছাদে বসে আছি। মুক্তা আপু হঠাৎ করে এসে, আমাকে ধাক্কা দিলো। আমি ভয় পেয়ে যাই। তাই একটা চিৎকার দেই আপুও ভয় পেয়ে যায়। আমি যখন দেখি আপু পেছনে দারিয়ে আছে তখন আমার প্রচন্ড রাগ হয় তাই আমি আর তার সাথে কোনো কথা না বলে নিজের রুমে চলে আশি । আমাকে যেই রুম দেওয়া হয়েছিলো আরকি। সেটাতে এসে আমি দরজা লাগিয়ে দেই।

আপু এসে অনেক্ষন দরজা ধাক্কায় কিন্তু আমি খুলিনাই। কিছুক্ষন পরে দেখি কেউ নাই মানে কোনো সারা শব্দ নাই আরকি। তার উপরে আবার রাত বেজে গিয়েছে ১২টা আমি না খেয়ে থাকতে পারি না। তাই রাতে এক গ্লাস পানি খাওয়ার জন্যে বের হয়েছি। যেমন কথায় আছে না, “নাই মামার চেয়ে কানা মামাও ভালো।“ আমার বেলায়ও ঘটণাটা ঠিক এমনি হয়েছিলো। কিছু না খাওয়ার চেয়ে পানি খেয়ে থাকাও ভালো তাই আমি এক গ্লাস পানি খেতে বের হলাম। বের হয়ে দেখি আপু খাবার নিয়ে আমার রুমের দিকে আসছেন।

আমি যেই দরজা আবার আটকাতে যাবো তখনি আপু বললো,
— যদি এখন তুই দরজা আটকাস তাহলে আমি বাইরে থেকে দরজা আটকায় দেবো।

আমিতো না খেয়ে ঘুমাতে পারি না এখন যদি ভাব দেখাই তাহলে পরে নিজেকেই পস্তাতে হবে। তাই আর ভাব না নিয়ে দরজা খুলে দিলাম।
— এইতো আমার লক্ষি ভাই এখন যদি একটা বাড়ি থাকতো তোর নিজের তাহলে তোকে খুশির ঠেলায় একটা বিয়ে করায় দিতাম।

লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছিলাম। তখন আমার বয়স হবে মাত্র ২১ আর আপুর বয়স হবে ২৩ এমন সময় যদি কেউ বিয়ের কথা বলে তখনতো লজ্জা লাগবেই। [ বিদ্রঃ বিয়ে পাগলা হলে আরেক কথা। আর শুধু ছেলেদের কথা বলছি] ওহ আপনাদেরকে তো বলাই হয়নি আপুর বিয়ে হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই আপুর স্বামী নৌবাহিনীর হেড । দেখা করি নাই কখনো তার পরেও তিনি খুব পছন্দ করেন আমাকে। আপুর সব খুদ মানে কি কি খারাপ দিক আছে সেগুলা আমার থেকে যেনে নেয়। দুলা ভাই নাকি বাসর রাতটাও আপুর সাথে কাটিয়ে শান্তি পান নাই যেহেতু এরেঞ্জ মেরেজ ছিলো। আর তার উপরে পরের দিন সকালেই ভাইকে যেতে হচ্ছিলো কাজে তাই আর কিছুই করতে পারে নাই। আচ্ছা যাইহোক,

সেদিন রাতে আপু আমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিছিলো। আমি এই সুজোগ কিভাবে হাত ছাড়া করতাম। দুলাভাইকে জালানোর একটা সুজোগও হাত ছাড়া করি না আমি। আপু আমার ঘর থেকে বের হতেই আমি দুলা ভাইকে কল দেই।

— কিরে সালা তোর খবর কি? [দুলা ভাই]
— আরে রাখো আমার খবর তোমার বউতো আমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিলো। তুমি মিস করে ফেললা।
— আরে আমাকে জিজ্ঞেস করেই এই কাজ করেছেরে তুই রাগ করেছিস জেনেই আমি এটা করতে বলেছিলাম।
— ধুর মিয়া তুমি আমার মজা করার মুড টাই নষ্ট করে দিলাম তোমার সাথে ২ ঘণ্টার জন্যে কাট্টি । কথা বলবা না একেবারে আমার সাথে।

আমার কথা শুনে দুলাভাই কিছুটা হেসেহ কল কেটে দিলেন আমি আর তেমন কিছু না করে কিছুক্ষন ফ্রিলান্সার ডট কমে কাজ করে ঘুমায় গেলাম। এখন আমি টাকা জমাচ্ছি কবে যে একটা বাড়ি বানাবো এখন হয়তো ১৫ লাখা জমা হয়েছে। আর ১৫ লাখ হলেই একটা বাড়ি কিনবো। আর আপুর পরিবারে যখন যা লাগছে তার জন্যে আমি তাদের পাসেতো আছিই। যেমন যদি আন্টির কোনো কিছু হয় তখন সব খরচ আমি উঠাই। আর হ্যা ইদানিং নিজের বাসায়ও চিঠীর মাধ্যমে টাকা পাঠাই মাসে হয়তো ৪০০০০ টাকা দেই।

এভাবেই যাচ্ছিলো দিন কাল। এরি মধ্যে কদিন আপুকে নিয়ে রাতে বের হলাম ঘুরতে সে ফুচকা খাবে। তাই আমি আর সে গিয়ে বসলাম এক ফুচকার দোকানের সামনে। হায়রে মানুষ এমনিতে অভাব নেই। তার উপরে আবার সন্ধার সময়। কি আর করার অপেক্ষা করতে লাগলাম । এক সময় অপেক্ষার বাধ ভেঙে গেলো তাই আপুরে বললাম,
— আপু আজকে আর ফুচকা খাওয়ার দরকার নাই। আমি কালকে নাহয় নিজে তোরে ফুচকা বানায় খাওয়াবো এখন চল প্লিজ।
— এমনি এমনি খাওয়ালে হবে না। তুই ফুচকার দোকান দিবি আগামী কাল। ১ সপ্তাহ আমাকে ফুচকা খাওয়াবি ।

কি আর করার এর থেকে বাচার যে আর কোনো উপায় নাই। তাই আমি রাজি হয়ে গেলাম।
এই মেয়ে খাটায় নিলো আমাকে। প্যারা দেওয়ার সুযোগ পেলে আর ছারে না। শুধু আপু কেনো কেউই ছাড়েনা। যেমনটা ছারেনাই স্নেহা। ওর নামটা মনে পরলেই এখন গা ঘিন ঘিন করে ঘেন্নায়। কেমন মানুষ হলে সে নিজের জন্যে আমার জীবনটা ধংস করে দলো। আসলে মেয়ে জাতীটাই এমন। [ বিদ্রঃ এখন যেই ছেলেরা ছেকা খায় তারাই এসব বলে বেরায় তার উপরে এই আরিয়ানরে তো বাসা থেকে বের করে দিছে সুতরাং এর এমনটা ভাবাই স্বাভাবিক সুতরাং কোনো আপু মাইন্ড করবা না প্লিজ] আচ্ছা যাইহোক। আমি আপুকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম ।

সকাল হতেই ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে। কাজে লেগে পরলাম। আপু জন্যে আমি তৈরি করে ফেললাম আমার দোকান। সব কিছু প্রস্তুত করতে প্রায় বিকেল হয়ে গেলো আপুও প্রস্তুত হয়ে চলে এলো। আমি সব নিয়ে দারায় আছি। আপু বেলকনি থেকে মাত্র ঘরে ঢুকছে আজান দিচ্ছে বলে। সে নামাজ পরে আমার দোকানে আসবে । আর আমিও চলে গেলাম নামাজ পরতে।

নামা পরে ফিরে এসে দেখি আপু নিজের গেটে দারায় আছে আর আমার এখানে অনেক গুলা মেয়ে এসে দারায় আছে। মানে কি এটার এরা আসলেই কি আমাকে ফুচকা ওয়ালা ভাবছে? আপুর দিকে চোখ পরতেই দেখি সে মুচকি হাসছে। আমার বুঝতে বাকি রইলো না এটাই এই ডাইনীটার কাজ। আমি দোকানের সামনে যেতেই সবাই আমাকে ঘিরে ধরলো,
বলতে লাগলো,
— মামা আমাকে এতোটা ফুচকা দাও।
— আরে মামা আমাকে দাও।
— আরে মামা আমি অনেক আগে থেকে দারায় আছি আমাকে আগে দাও।
— আরে মামা আমি টাকা বেশি দেবো আমাকে আগে দাও।

— আরে মামা আমি টাকা বেশি দেবো আমাকে আগে দাও।
এসব বলছে আর আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি। নিজের কাছে নিজেরকে চিরিয়া খানার নতুন কোনো জন্তু মনে হচ্ছিলো যাকে দেখার জন্যে সবাই এসেছে।
কী আর করার সবাই এতো আশা নিয়ে আমার কাছে আসছে ফুচকা খাবে তেদেরকে কি আর না করতে পারি? তাই বসে পরলাম ফুচকা বিক্রি করতে। রাত প্রায় ১১ টা তখন কিছুটা ভীর কমে গেলো। আর তার কিছুক্ষন পরেই ভীর একেবারে শেষ হয়ে গেলো।
সবাই যাওয়ার পরে আপু নিচে নেমে আসলো। পেতনিটা আমার এই অবস্তার মজা নিচ্ছিলো উপরে দারায় থেকে। আর আমি এখানে খেটে খেটে মরছিলাম। তখন মনে চাচ্ছিলো তারে ২ দিনের জন্যে যদি পিটাইতে পারতাম। কিন্তু তা আর হলো কই?
আমি নিজের মতো করে তারে ফুচকা বানায় খাওাইলাম। ফুচকা খাইয়া পুরাই ফিদা হয়ে গেলো,
— ভাই তুই কি আগে কখনো ফুচকার ব্যাবসাই ছিলি?
— না।
— তাহলে নিশ্চই আগের জন্মে তুই ফুচকা বেচতি।
কেনো জানি আমার খুব রাগ হচ্ছিলো। কিন্তু তার মুখে হাসি দেখে সব রাগ শেষ। শতহোক আমি তার জন্যে ফুচকার দোকান দিছি। আর এখন আমি তারে ফুচকা খাওাইতাছি। তখন আপু হঠাৎ করে বলে উঠলেন।
— কিরে কতটাকার ফুচকা বেচলি?
— আরে কতো আর হবে ১ – ২ হাজার।
— আচ্ছা দেখি। টাকাগুলা বের করতো।
আমি তখনি টাকা বের করলাম। ওড়ে আমার খোদারে। এতো টাকা আসলো কোত্থেকে? কম করে হলেও ১০০০০ টাকা হবে। মানে আমি শুধু ফুচকা কিনেছি আর দোকান বানিয়েছি সব মিলিয়ে ৩০০০ টাকাও খরচ হয়নাই। আর এখন এক দিনেই ১০০০০+ টাকা হয়ে গেলো। আপু ফুচকা খাচ্চে আর আমি গুনছি। কতো টাকা হয়েছে। সব গুনে দেখলাম। ১৭,৫৪০ টাকা হয়েছে। মানে এতো গুলা টাকা আমি শুধু এক দিনেই আয় করে ফেলেছি। সুতরাং আমি যদি ১ মাস ফুচকা বিক্রি করি তাহলে আমার হবে ১৫০০০ * ৩০ = ৪৫০০০০ টাকা আমি ১ বছর কি করলাম তাহলে? কই ১ বছরে ১৫০০০০০ টাকা আর কই ১ মাসে ৪৫০০০০ টাকা।
আমি আপুকে শুনিয়ে শুনিয়ে সব বলছিলাম আপু বললো,
— আহহ, এই টাকা পয়সা বাদ দেতো। জীবনে অনেক কামাই করতে পারবি। এখন বল কোনো মেয়ে পছন্দ হইছে কি না?
— মানে?
— বুঝো না দুদু খাও?
— তুমি নিজেইতো প্রত্যেক রাতে ১ গ্লাস করে দিয়ে যাও। এটা আবার জিজ্ঞেস করার কী আছে?
— ঐ ছেরা ঐ তোর কি আসলেই কোনো মেয়ে পছন্দ হয় না?
— না আমার ইচ্ছা ছিলো আমার মায়ের পছন্দে বিয়ে করবো কারন তার পছন্দের মেয়ে গুলা খুব কিউট হয়। কিন্তু এখন যেহেতু এখানে মা নাই। তাহলে তোমার ইচ্ছাতেই বিয়ে করবো।
কেনো জানি আপু আমাকে জরায় ধরলো। বুঝতে পারলাম আমার কাধ ভিজে গেছে। তার মানে আপু কান্না করছে। কি এমন বললাম যে ইনি কান্না শুরু করে দিলেন? ওহ মায়ের সমান মর্যাদা দিছি তাই হয়তো। কিন্তু তিনি আমার জন্যে অনেক কিছু করছে। এখন যদি আপু না থাকতো তাহলে হয়তো আমি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাম।
সেদিন রাতে আমি আর আপু ইচ্ছে মতো ফুচকা খেয়ে রুমে চলে আসলাম। এসে আমি ঘুমায় পরলাম। আপুও হয়তো ঘুমায় গেছিলো।
এভাবে ফুচকা বিক্রি করে আমার দিন যাচ্ছিলো ৯ দিন চলে গেলো একিভাবে। কিন্তু আজকে ভীর আর কমতাছে না। মানে মানুষ আর শেষ হয়না। কেনো জানি মনে হচ্ছে আজকে আমাকে রাত ১ টা পর্যন্ত ফুচকা বিক্রি করতে হবে। এসব ভাবছি আর ফুচকা বিক্রি করছি।
তখনি আমার চোখ গিয়ে আটোকিয়ে গেলো এক গোলাপের উপর। হ্যা একটা গোলাপের উপরে। মানে গোলাপ ধরে একটা মেয়ে দারায় ছিলো কিন্তু তার ঠিক উপরেই তার চেয়াহারাটা ছিলো আর আমার চোখ পরেছে তার চেয়াহারায়। যেহেতু চেয়াহারা গোলাপের উপরে সুতরাং আমার চোখ পরেছে গোলাপের উপরে।
আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি। আমি শুধু মেয়েটাকেই দেখছিলাম কিন্তু তার পাসে যে একটা ছেলে দারায় আছে সেটা আর দেখি নাই। আর এই দিক দিয়ে আমার কাস্টোমার রা যে কাউ কাউ করছে ফুচকার জন্যে সেটাও খেয়াল নাই। সালায় প্রেমে প্রলে নাকি, সব থেমে যায়। ভাবতাম এসব মজা করে বলে। কিন্তু আজকে প্রমান পেয়ে গেলাম মেয়েটির হাসি ছাড়া আর কিছুই আমার চোখে পরছিলো না। এমনকি তার সাথে থাকা ছেলেটিকেও দেখি নাই। কিন্তু যখন এক কাষ্টোমারের ধাক্কায় বাস্তবতায় ফিরি তখন নিজেকে গুলি করে মারতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। সালায় কি চেয়াহারা নিয়ে কার সাথে প্রেম করে।
কথায় আছে তো, ‘ কৈ মহারানী আর কৈ বিছানায় মুতনি’ এখানেও ঘটনাটা ঠিক এক ছেলে টা দেখতে একেবারে গাঞ্জা খোরের লিডারের মতো। আর তার হাত ধরে দারিয়ে আছে একটা পরি আরে পরি না। এতো সাক্ষাত জান্নাতের হুর। পরি বলে একে অসম্মান করতে চাইনা।
খুব কষ্ট করে হলেও সেই দিন ফুচকা বেচা শেষ করে। আপুর সাথে বসে বসে ফুচকা খাচ্ছিলাম। তখন আপু জিজ্ঞেস করলো,
— আরিয়ান মেয়েটিকে তুই চিনিস?
— কোনটা?
— গোলাপ ওয়ালি।
— কোন গোলাপ ওয়ালি?
— যার দিকে তুমি ড্যাব ড্যাব করে তাকায় ছিলা সেই গোলাপ ওয়ালি।
— নাগো আপু আমি তাকে চিনি না।
— তাহলে নিশ্চই ভালো লাগছে।
— কিন্তু লাভ নাইতো। সাথে দেখো নাই বফ দারায় ছিলো।
— আরে তাতে কি? আমি আছিতো এতো চিন্তা কিসের? তুই ভুলে যাসনা ভাই আমার আমি এখনো বেচে আছি।
— হ্যা আমি জানি তুমি এখনো বেচে আছো। কিন্তু তুমি বেচে থাকলেই বা কি? আর মরে গেলেই বা কি? আমিতো আর এই মেয়েকে পাচ্ছিনা।
আপু ভীম্রি খেয়ে পরলো,
— কি তুই কি বললি? আমি মরে গেলেই বা কি? হ্যা এখন নতুন মেয়ে পাইছ এই পুরাতন বোনকে কি ভালো লাগবে আর?
— আরে না আমি ঐ মিন করে বলি নাই।
— হ্যা আর সাফায়াত করতে হবে না। আমি বুঝি বুঝি সব বুঝি।
— বালডা বুঝো। দেখো নাই ছেলে ছিলো সাথে একটা। গাঞ্জাখোর। আচ্ছা আপু তোমাদের মতো কিউট মেয়েরা কি আমার মতো কিউট ছেলেদের দেখে না। নাকি আসলেই তারা বোকা তাই আমাদের কাছে আসে না।
— মানে কি তোর দুলা ভাই কিউট না?
— আরে আমিকি সেটা বলেছি নাকী? আমিতো বাকি বলদ মেয়েদের কথা বললাম। তোমারোতো এরেঞ্জ মেরেজ। নিজেতো আর পছন্দ করে করো নাই।
— তা ঠিক তবে এখনতো আমার বর তাইনা। আর আমার মতো মেয়েরা তোমার মতো কিউট ছেলেদের ঠিকি দেখে কিন্তু তোরা কিউট বলে ভাব নেস তাই তারা আর সামনে আসে না। আর নাহয় ভাবে এতো কিউট পোলারতো গফ আছেই। এসব ভেবে আরকি। আসে না।
— হ হইছে বুঝছি। আমি জানি সুন্দরি মেয়েদের বুদ্ধি কম থাকে। তাই তারা এসব গাঞ্জা খোড়দের মিষ্টি কথার ফাদের পরে। কিন্তু আমরা যারা আসলেই ভালো ছেলে তারা তো মিস্টি করে কথা বলতে পারি না। তাই আমরা তাদের কাছে ভালো না

— হ হইছে বুঝছি। আমি জানি সুন্দরি মেয়েদের বুদ্ধি কম থাকে। তাই তারা এসব গাঞ্জা খোড়দের মিষ্টি কথার ফাদের পরে। কিন্তু আমরা যারা আসলেই ভালো ছেলে তারা তো মিস্টি করে কথা বলতে পারি না। তাই আমরা তাদের কাছে ভালো না।
— উম কথাটা একেবারে ভুল বলিস নাই আবার সম্পুর্ন ঠিক ও বলস নাই।
— এতো পেচাও কে? তুমি জানো না আমি অবুঝ। বুঝিনা কিছু।
— আরে না শোন। আমরা মেয়েরা সবাই কিন্তু এক না। যেমন ধর, আমি আমার বান্ধুবি টিনা আর রিয়া। আমরা বেষ্ট ফ্রেন্ডস ছিলাম। আর রুম মেট ও। এরা………
— এরা কী?
— বেশি কথা বলবি না। চুপ।
— আমি আম্মু আব্বুর ইচ্ছায় বিয়ে করেছি। টিনা টাকা দেখে প্রেম করে এখন বিয়ে করেছে। কয়েকদিন আগে তাদের ডিভোর্স হলো। আর রিয়া ওতো তোর কথা অনুযায়ী গাঞ্জাখোর দেখে কথার ফাদের পরে ছবি না দেখে পালায় গেছে। পরে ওরে ধরে টাকা পয়সা রেখে রেপ করে পরে ছেরে দিছে। এখন ও কৈ জানস?
— বান্ধুবি আমার নাকি তোমার?
— এখন ও পতিতালয়ে।

শেষ কথা শুনে সব থমকে গেলো। আমার খুব ইচ্ছে করছিলো মেয়েটিকে দেখার। যে কিনা এক সময় এই মেয়েটির বন্ধু ছিলো যে আমার সাথে বসে ফুচকা খাচ্ছে আর তার এক বান্ধুবি যে কিনা তার সাথে থাকতো এবং পড়তো এখন পতিতালয়ে। হাজারো পুরুষের প্রতিদিনের খোরাক।

আমি এসব ভাবতেছি অন্যদিকে তাকিয়ে। পরে আপুর দিকে তাকিয়ে দেখি সে মাথা নিচু করে আছে। আমি জানি এই ১ বছরে অনেক দেখেচি। আপু মাথা নিচু করে কান্না করে। এই মেয়েটা কেমন যেনো। কান্না করে কিন্তু কোনো শব্দ হয় না।

আমি তাকে কি বলে কান্না থামাতে বলবো বুঝতে পারছি না। তার একোটা বন্ধু যে এখন পতিতালয়ে তার পরেও কিছু বলার আছে বলে মনে হয়না। আমার নিজের কাছেই ত খুব খারাপ লাগছে। তার কাছে কেমন লাগছে সেটা বুঝতে আর বেশি কষ্ট করতে হলো না। কারন আপু তখন শব্দ করে কান্না শুরু করে দিয়েছে।

চোখের সামনে একটা মেয়েকে এভাবে কাদতে দেখে কতো কষ্ট হয়? সেটা আমি আগে শুধু ভাবতাম এখন বুঝতে পারছি। এখন মনে হচ্ছে কেনো আমি এসব চিন্তা করতাম? বুকের ভিতরটা কেউ চাকু দিয়ে হাজার আঘাত দিলেও মনেহয় এতো কষ্ট হতো না যেই কষ্ট টা এখন হচ্ছে।

আপুকে কি সান্তনা দেবো আমি নিজেই মন খারাপ করে নিলাম। তার পরেও আপুকে নিয়ে কোনো মনে বাসার ভীতরে ঢুকলাম বাসায় ঢুকে তাকে তার রুমে দিয়ে আসলাম আমি এসে ঘুমায় গেলাম।

রাতে শুয়ে আছি আজকে কেনো জানি খুদা লাগছে না। প্রত্যেক রাতে না খেয়ে ঘুমাতে পারতাম না। আজকে রাতে কিচ্ছু খাই নাই। তবুও খুদা অনুভব হচ্ছে না। হয়তো ঐ মেয়েটির কথা ভাবছি তাই। আরে মেয়ে মানে আপুর বান্ধুবী।

কত কষ্ট জমা হলে একজন মানুষ তাও আবার একটি মেয়ে নিজের দেহ বিক্রি করে? কি করে পারলো ছেলেটা এসব করতে? আমি অনেক ছবি দেখছি এই আপুর আমার আপুর ফোনে কম্পিউটারে সব যায়গায়। সে তার কলেজ লাইফের সব কিছু বলেছে আমাকে। তাই তাদের জীবনটা কতো মজার ছিলো সেটা বুঝতে ততো কষ্ট করতে হয়নি।

আমাকে সব সময় তার বন্ধু টিনার কথা বলতো মুক্তা আপু। কিন্তু কখনো যদি রিয়া আপুর কথা জিজ্ঞেস করতাম তখন তিনি এরিয়ে যেতেন। আমার কেনো জানি সন্দেহ হতো। আমি ভেবেছিলাম মারা গেছে হয়তো তাই কথা বলতে চায়না তার বেপারে। কিন্তু ইনিজে জাহান্নামের চেয়েও খারাপ যায়গায় আছে সেটা বুঝতে পারি নাই। আসলেই আমি এখনো বাচ্চাই রয়ে গিয়েছি।

আমার না রিয়া আপুর সাথে দেখা করতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে। আচ্ছা আমি যদি মুক্তা আপুরে বলি তাহলে কি ইনি আমাকে রিয়া আপুর কাছে নিয়ে যাবেন? আচ্ছা বলেই দেখবো আগামী কাল। কিন্তু যদি তিনি আবার কোষ্ট পায় তাহলে? উম্মম্মম আচ্ছ একবার বলেই দেখি পরে যা হবে দেখা যাবে।

এসব কথা আরো হাজারো নানান ধরনের কথা ভাবতে ভাবতে রাতটা পার হয়ে গেলো। ফজরের আযান দিলো নামাজ পরে নিলাম। তার পরে বিছানায় আসতেই ঘুমায় গেলাম।

ঘুম ভাংলো আপুর ধাক্কায়। চোখ খুলে দেখি আপু হাসছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে,
— আরে ওঠ আর কতো ঘুমাবি আর ঘুমের মধ্যে কি বলছিস এসব?
— কি বলছি?
— আপু আমি বাশর ঘরে ঢুকবো না। আমাকে ছেরে দাও আরো কত কি? হ্যারে কি স্বপ্ন দেখছিলি রে?
— কে জানে?
একটা লজ্জা পেলাম মোটা মুটি ভালোই। আমি নাকি ঘুমের মধ্যে এসব বলছিলেম? আমি ঘুমের মধ্যে কি বলেছি সেটা মনে পরছে না কেনো? আমারনা একটা আজব অভ্যাস ঘুমে কি স্বপ্ন দেখছি সেটা ঘুম থেকে উঠলে মনে থাকে না।
ফালতু অভ্যাস যতোসব।

তার পরে আপু কিছুক্ষন আমাকে নিয়ে মজা নিলো। আমি ফ্রেস হয়ে ব্রেকফাষ্ট করে নিলাম। ঘুম না হওয়ার চোখ লাল হয়ে ছিলো। সেটা নিয়েযে কতো কি শুনালো আপু। যেমন ,
— কিরে রাতে কি স্বপনের মেয়ের নিয়ে ভাবছিলি?

কি বলবো আমি আর? লজ্জায় সম্পুর্ন চেয়াহারাই লাল হয়ে গেলো। খাওয়া শেষে ছাদে গেলাম। যেটা আমি সচরাচর করে থাকি। আপুও কিছুক্ষন পরে আসলো। আমি আপুর লাগানো গোলাপ চারা গুলায় পানি দিচ্ছিলাম আপু এসে আমার সাথে দারালো।

আমি কোন ধ্যায়ানে ছিলাম মনে নাই। কিন্তু আমি হঠাৎ করেই আপুকে জিজ্ঞেস করে বসলাম,
— আচ্ছা আপু রিয়া আপুর সাথে দেখা করে আসি একবার চলো।
সাথে সাথে আমার মুখে হাত। আর মুক্তা আপু চলে গেলো গম্ভীর অবস্তায়। কিছুক্ষন পরে আপু বললো,
— আচ্ছা চল। অনেক বছর হয়েছে ওর সাথে দেখা হয়না। দেখা করেই আসি এক বার। জানিস আমিও গতকাল রাতে ভাবছিলাম ওর সাথে গিয়ে দেখা করা দরকার।

এমনি ভাবে কিছুক্ষন আমি আর আপু কথা বললাম । সেদিন বিকেলেই আপু আর আমি আসবো বলে ঠিক করলাম। কিন্তু একটু পরে আপু বললো,
— আজকে কিন্তু ১০ দিন হবে। মানে আজকেও তোকে আমাকে ফুচকা খাওয়াতে হবে।
— কিন্তু আজকে তো আমাদের রিয়া আপুর কাছে যাওয়ার কথা।
— হুম তোকি আমরা আগামী কাল যাবো। কিন্তু আজকে আমাকে ফুচকা খাওয়াতে হবে।
— আচ্ছা ঠিক আছে।

অতঃপর আমি আজকেও সব ফুচকা বিক্রি করে ফেললাম তার পরে আমি আর আপু খেতে লাগলাম ফুচকা। আপু বললো,
— আজকে গতকালকের মেয়েটে আসছিলো।
— জানি না দেখি নাই।
— আরে আমি তোরে জিজ্ঞেস করছিনা। আমি তোরে বলছি , মেয়েটা আজকেও আসছিলো। আর আজকে একা ছিলো। তাই আমি তার সাথে কথা বললাম। কন্ঠটা যে সুন্দর রে।
মুক্তা আপু কারো প্রসংসা করছে তার মানে এই মেয়ে যে সে না। আমি যদি এখন জিজ্ঞেস করতে যাই তাহলে আমাকে ক্ষেপাবে তাই আমি আর জিজ্ঞেস করলাম না। কিন্তু মনের মধ্যে কয়েক হাজার প্রশ্ন ঘুরছে।
কিছুক্ষন পরে আপু নিজেই বলতে লাগলো,
— গতকালকের ছেলেটা মেয়েটার বফ ছিলো না।
— তাহলে কি স্বামী ছিলো?
— আরে না। তোর এই একটা সমস্যা একটা কথাও সম্পুর্ন বলার আগে। বা হাত ঢুকাস কথার কথার মাঝে।
— আচ্ছা বলো আর বলতাম না।
— ছেলেটি ছিলো মেয়েটির বড় ভাই।
আমিতো খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলাম। নাচতে ইচ্ছে করছিলো খুশি তে। কিন্তু তখনি মনে কেনো জানি মনটা খারাপ হয়ে গেলো। মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন জাগতে লাগলো।

মেয়েটি কে এখানে কি করছিলো? ফুচকা খেতে আসছিলো? কিন্তু একদিনো তাকে আমি দেখি নাই ফুচকা খেতে। আমাকে দেখছিলো ? হ্যা তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে অনেক্ষন কিন্তু কেনো? আসলে এই কে? একদিন ওতো আমি একে আসতে বা যেতে দেখি নাই। কোত্থেকে উদয় হলো এই মেয়ে? অনেক কম মানুষ আছে যাকে আমি চিনি না। কিন্তু এই মেয়েকে কেনো চিনি না? আর এর আগে কখনো এই এরিয়াতে দেখি নাই। তাহলে কে এই মেয়ে? কি তার পরিচয়?
আপুকে জিজ্ঞেস করলাম,
— এই মেয়ের নাম কি?…..

আপুকে জিজ্ঞেস করলাম,
— এই মেয়ের নাম কি?
— উম্মম্ম না নাম বলে নাই।
— আহহা কি করেছো নাম জিজ্ঞেস করবা না?
— জিজ্ঞেস করেছিলাম কিন্তু এরিয়ে গিয়েছে।
— ওহ।

এমন ভাবেই কিছুক্ষন কথা বলার পরে। আমি আর আপু ঘরে চলে আসলাম। তার পরে আরকি খাইলাম আর ঘুমায় গেলাম।

পরের দিন কথা মতো আমি আর আপু সকাল সকাল বের হয়ে গেলাম রিয়া আপুর সাথে দেখা করবো বলে। কেনো জানি তাকে চিনা চিনা লাগে। কোথায় যানো দেখেছি। মুক্তা আপুর কম্পিউটার ছারাও কই যেনো দেখেছি। কিন্তু কৈ?

আচ্ছা যাইহোক এসব ভেবে মাথা ঘামালে চলবে না। এখন যাই দেখি কি হয়। হতেও পারে আমি তাকে চিনি সেও আমাকে চেনে হতেও পারে সে আমাকে চিনে ফেললো। এসব আজাইরা কথা ভাবছিলামা আর যাচ্ছিলাম । দুপুরের দিকে গাড়ি থামালাম তার পরে আমি আর আপু লাঞ্চ করলাম । লাঞ্চ করার পরে আমরা আবার আমাদের জার্নি শুরু করলাম।
আমাদের আসতে আসতে প্রায় বিকেল ৪টা বেজে গেলো। এসে আমরা যেই পতিতালয়ের গেটে গিয়ে দারালাম। তাকায় দেখি, কতো সুন্দর সুন্দর মেয়ে দারায় আছে। মানে এক কথায় বলতে গেলে সবাই দেখতে এক একটা পরির চাইতে কম না। কিন্তু কেনো তারা এখানে কেনো? কি এমন ঘটেছে তাদের জীবনে যে তারা এই জাহান্নামে?

অনেক্ষন হয়তো তাদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তখন পতিতালয়ের ভেতর থেকে একটা মহিলা এলো। কেমন যেনো দেখতে জল্লাদ টাইপের। সে এসে আমাকে বলতে লাগলো,
— কিরে ছেমরা মজ করতে আইছত? সরম পাইতাছত নাকি? আরে সরম পাইছনা। যেই মাইয়া ভালো লাগে ওরলগে রাত রঙ্গিং করগা কেউ আটকাইবো না। কিন্তু টাকা পয়সা দিতে হইবোতো। ১ জনের লাইগা ৫০০০ আর ২ জনের লাইগা ২০০০০ ।
আমি শুধু তাকে বললাম,
— আমার রিয়াকে লাগবে।
মহিলাটি কেমন যেনো করতে লাগলো। বললো,
— ওরে দিয়া তোর কাম কি? ও এখন ছুটিতে আছে।
— আপনি শুধু ডেকে দিন। যত টাকা লাগে দেবো।
— উম্মম্ম আইচ্ছা ১৫০০০ দে।

টাকা টা দেওয়ার পরেই মহিলাটি আমাকে নিয়ে গেলো রিয়া আপুর কাছে। সাথে আমার মুক্তা আপুও ছিলো। আমি একটা একটা করে রুম পার করছিলাম আর ভাবছিলাম কেনো তারা এই নরকের জীবনকে বেছে নেয়? কি এমন হয়েছে যে এই নরকেই আসলো তারা?

এসব ভাবতে ভাবতে আপুর রুমের সামনে চলে আসলাম তখন ঐ মহিলা বললো,
— এইযে পোলা এইডা হইলো রিয়ার ঘর। তুই যা কিন্তু মনে রাখিস ও কিন্তু ছুটিতে আছে। চাইলেই কিছু করতে দিবো না।

আমি মাথা নারালাম শুধু। তার পরে রিয়া আপুর রুমে ঢুকে পরলাম আমার সাথেই ছিলো মুক্তা আপু। আমরা দুজনে ঢুকতেই দেখি রিয়া আপু রুমে কিছু একটা করছে। তিনি আমাদের দেখেন নাই। তিনি বলছিলেন,
— আমার আজকে ছুটি তুমি যেই হও চলে যাও এখান থেকে। আর না গেলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।

তখন মুক্তা আপু তাকে ডাক দিলেন,
— রিয়া।
বিষ্ময়ের সাথে রিয়া আপু পেছনে তাকালেন। আমি তার চেয়াহারা দেখার সাথে সাথে তাকে চিনে ফেললাম। ইনি হচ্ছেন স্নেহার বড় বোন যাকে আমি স্নেহাদের বাসায় দেখেছিলাম। আমি এই আপুর কথা জিজ্ঞেস করলাই তারা কথা ঘুরিয়ে ফেলতো। আমি তখন ভেবেছিলাম হয়তো এমন কিছু করছে যেটা তাদের পছন্দ নয়। তাই তারা তার বিষয়ে কথা বলতে চায় না। তাই আর জিজ্ঞেস করি নাই। আচ্ছা যাই হোক,
রিয়া আপু মুক্তা আপুকে দেখে তার মুখটা ঘুরিয়ে নিলো। মাথা টা নিচু করে নিলো। তখন মুক্তা আপু আবার বললো,

— রিয়া আমাকে ক্ষমা করে দে। আমি জানতাম না তুই এমন কিছু করবি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে।

রিয়া আপু কোনো কথা না বলে দৌড়ে এসে মুক্তা আপুকে জরায় ধরে। আমি দেখে তাকায় আছি তাদের দিকে। দুজনেই কান্না করছে। আবার দুজনের মুখেই হাশি। আসলেই মেয়েদের বুঝা খুব কঠিন।

কিছুক্ষন পরে।

আমি , রিয়া আপু আর মুক্তা আপু বসে আছি রেস্টু রেন্টে। আপুরা দুই জনে তাদের আগের দিনের কথা বলছে। তাদের কথা বলা শেষ হচ্ছেই না। আমাকে যেনো ভুলেই গিয়েছে। হঠাৎ মুক্তা আপু জিজ্ঞে করে বসলো,
— আচ্ছা কি হয়েছিলো এমন তোর সাথে যার কারনে তুই এখন এই নরকে?
আমি মুক্তা আপুর দিকে হা করে তাকায় আছি। মানে এই মেয়ে যেটা বলেছিলো সেটাও মিথ্যা ছিলো। হায়রে মানুষ।

কিছুক্ষন নীরবতার পরে রিয়া আপু মাথা নিচু করে বলা শুরু করলো।
— আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিলো যার কারনে আমি তোদের কাউকে কিছু না বলেই চলে আসছিলাম বাসায়। বাসায় এসে দেখি আমার হবু স্বামী বসে আছে। দেখতে ততটাও খারাপ ছিলো না। কিন্তু আমিযে প্রেম করতাম সেটার কি হবে। এভাবেই কিছু দিন চলে গেলো প্রায় ৪ দিন পরে আমি জানতে পারলাম এই ছেলেই ছিলো আমার ফেসবুক প্রেমিক। আমি খুব বেশি খুশি ছিলাম জানিস। কিন্তু উপর ওয়ালার হয়তো আমার খুশি ভালো লাগে নাই।

বলেই আপু কান্না করে দিলো মেয়েদের এই একটাই সমস্যা কথায় কথায় কান্না করে। কান্না থামলো প্রায় ১০ মিনিট পরে তার পরে আবার বলা শুরু করলো,
— আমি রিফাতকে [রিয়া আপুর হবু বর + প্রেমিক] বললাম খুব ভালোই মজা করলা। তখন ও হেসে আমাকে বলেছিলো নিজের হবু বউয়ের সাথে প্রেম করেছি তাতে কার কি? তার পরে আমরা অনেক প্রেম করি। কিন্তু হঠাৎ একদিন রিফাত আমাকে সেক্স করার জন্যে বলে। আমি নিষেধ করায় সে বলে আমরা তো বিয়েই করছি। তাহলে সমস্যা কিসের। আর তুমি রাজি না হলে আমি খুব বেশি কষ্ট পাবো। আমি আর কোনো গতী না পেয়ে রাজি হয়ে যাই। সারা রাত সে আমার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত থাকার পরে ফজরের আগে আমরা ঘুমায় পরি। সকালে উঠে দেখি। রিফাত আমার পাসে নাই। তার যায়গায় একটা চিরকুট পরে আছে। সেটাতে লিখা ছিলো “ যাহ তোরেও ভোগ করা হয়ে গেলো। তুই যে ভার্জিন ছিলি জানতাম না। আর ভার্জিনদের চু***তে এতো মজা জানতাম না। জাক আমার যা পাওয়ার তা আমি পেয়ে গিয়েছি। এখন আমি চলে যাচ্ছি। তুই যদি আগে রাজি হয়ে যেতিস তাহলে আমাকে এতো কষ্ট করতে হতো না। আচ্ছা যাইহোক যত কোষ্ট করেছি সব সার্থক হয়েছে। ভালো থাকিস আর নিজের মতো দেখে একটা ছেলেকে বিয়ে করে নিস।“ তখন আমার সম্পুর্ন দুনিয়া আটকে যায় আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। আত্মহত্যা করবো? সাহস নাই। কিন্তু আমার মান সম্যান কিছুইতো নাই এখন আর আমি নিজের স্বামীকে কি দেবো । এসব ভেবে ভেবে একাকার হয়ে গিয়েছিলাম তখন আমি কোনো রকম কমড়ে বেথা নিয়ে বাসায় আসি। আম্মু আমাকে দেখেই বুঝে ফেলে কি করেছি। তার একটি বারের জন্যেও আমাকে বিশ্বাস করে নাই। আমার ছোট বোন যাকে আমি আমার কলিজা ভাবতাম সেও আমাকে বিশ্বাস করে নাই স্নেহাও বিশ্বাস করে নাই আমাকে। তখন আমি আর কোনো উপায় না পেয়ে । শেষ ডিসিসন নেই। যেহেতু এক জন ইজ্জত নিয়েছে সুতরাং হাজার জনকে দিলেও এখন আর কিছু আসবে যাবে না। তার চেয়ে বরং আমার নিজেকে বিক্রি করি তাতে আর কিছু হোক আর নাহোক আমার মতো আরো কয়েকটা রিয়া এমন পতিতা হওয়ার হাথ থেকেতো বেচে যাবে।

কথাগুলা শুনছিলামা আর রাগে আমার গা জলছিলো। এমন সময় যদি ঐ ছেলেটারে পাইতাম তাহলে আমি নিজ হাতেই ওকে খুন করতাম। আর তার নিজের পরিবার তাকে অবিশ্বাস করলো। একটি বার ভেবে দেখলো না। ছেলেটি কই গিয়েছে। কি ভাবে কি? একটি বার বিশ্বাস করে দেখতো। কি এমন যেতো তাদের? সব বাবাইতো তার মেয়েকে ভালোবাসে সেই ভালোবাসা দিয়ে কি আংকেল রিয়া আপুকে নিজের কাছে রাখতে পারতো না সারা জীবন?
বিশ্বাস খুব খারাপ একটা জিনিস। দেখুন না একটি মেয়ে নিজের সব কিছু দিলো একটি ছেলেকে বিশ্বাস করে । সেই মেয়েটি আবার নিজের পরিবারের কাছে অবিশ্বাসের পাত্র হয়ে গেলো সেই ছেলেটির কারনেই এখন এই বিশ্বাসের কারনে মেয়েটির ইজ্জতের দাম ওঠে প্রতি দিন।

খুব কষ্ট হচ্ছিলো এসব ভেবে। তখনি আমি রিয়া আপুকে বললাম,
— আচ্ছ আপু স্নেহার আর তোমার সম্পর্ক কেমন ছিলো?
কেনো জিজ্ঞেস করলাম কিচ্ছু জানি না। শুধু জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো তাই জিজ্ঞেস করে ফেললাম।….

— আচ্ছ আপু স্নেহার আর তোমার সম্পর্ক কেমন ছিলো?
কেনো জিজ্ঞেস করলাম কিচ্ছু জানি না। শুধু জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো তাই জিজ্ঞেস করে ফেললাম। আপুরাও কিছুটা চমকে গেলো তারা হয়তো ভাবে নাই আমি এমন কিছু জিজ্ঞেস করবো। কিচ্ছুক্ষন চুপ থাকার পরে রিয়া আপু বলে,
— ছিলো ভালো ছিলো। আমি ওকে অনেক ভালোবাসতাম। ও নিজেও আমাকে ভালোবাসতো ।

কথা শুনেই বুঝে গেলাম মিথ্যা বলছে। প্রথমে যখন বললো আপু স্নেহাকে ভালোবাসতো সেটার মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস ছিলো কিন্তু যখন বললো স্নেহার কথা তখন কোনো কিছু খুজে পেলাম না কথার মাঝে। মানে কষ্ট টা ছাড়া আর কিছুই নাই। আর স্নেহার কথাটা আসতে করেই বলেছিলো আপু। আমি তাকে বললাম,
— মিথ্যা কেনো বলতাছো? তোমার বোনকে আমি খুব ভালো করে চিনি।
— কি??
— হুম চিনি তোমার বোনের জন্যেই আজকে আমি বাড়ি ছাড়া। তোমার বোনের সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা সে আমার সব উলট পালট করে দিছে আমাকে বিয়ে করবে না তাই।

মুক্তা আপুও হা করে তাকায় আছে আমার দিকে। সে নিজেও হয়তো ভাবে নাই। সেই মেয়েটি এই স্নেহাই। আমি আপুকে সব খুলে বললাম। কোথায় কিভাবে কাকে দেখেছি। রিয়া আপু বললো,
— ও এমনি যখনি দেখে ওর ক্ষতি হবে বা যা চায় সেটা পাবে না তখনি ও কেমন যেনো হয়ে যায়। মানে নিজের জন্যে ও সব করতে পারবে। সামনের মানুষটার সাথে কি হতে পারে সেটা ও চিন্তাও করে না। তাছারা আমর বোনটা খুব ভালো।

এসব ভাবে সুখ দুঃখের কথা বলতে বলতে অনেক সময় পার হয়ে গেলো। পরে আমরা পাসের একটা হোটেলে রুম নিয়ে রাত কাটিয়ে দিলাম। পরের দিন রিয়া আপুকে নিয়ে আসার জন্যে আমরা উঠে পরে লাগলাম কিন্তু সে এক কথায় আটকে আছে। তাকে কেউই বিশ্বাস করবে না। আর এখানে কতো খদ্দর আছে যারা তাকে না পেলে অন্যদের সাথে খুব খারাপ আচরন করে। আর তার চেয়েও বড় কথা তাকে যেতে দেবে না।

এসব নিয়ে অনেক সময় কাটালাম আমরা। পরে আমরা তার কাছে হেরে গিয়ে তাকে সেখানে রেখেই ফেরত চলে আসলাম। বাসায় আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। বাসায় আসার পরে মুক্তা আপু ধরলো আরেক বায়না। আমার নাকি তাকে ফুচকা বানায় খাওয়াতে হবে।

কি আর করার রাত ১০ টার দিকে দোকানের সামনে গেলাম গিয়ে দোকান খুলেই দেখি একটা চিরকুট পরে আছে। খুব বিস্ময়ের সাথে আমি চিরকুটটা খুললাম। খুলে পড়া শুরু করলাম। কেমন যেনো হাতের লিখা গুলা চেনা চেনা লাগছিলো। কি যে হচ্ছে আমার সাথে কিছুই বুঝতে পারছিনা।

চিরকুটটিতে লিখা ছিলো, “ কি ভুলে গেছো। আর আজকে আসোনাই কেনো? তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো তাই আসছিলাম। কিন্তু তুমিতো আর আসলানা। কেউ একজন যে তোমাকে মিস করে সেটাতো তুমি মনেই রাখো না। এখনো ভালোবাসি।
– তোমার পেতনি।

আমার পেতনি? মানে কি? আমাকে সবাই স্কুলে সয়তান বলতো। আর একটা মেয়েকেই পেতনি বলতো। নামটা অবস্য আমি নিজেই দিয়েছিলাম। কারন সে এমনিতে খুব কিউট ছিলো কিন্তু মেকাপ করলে পেতনির চাইতে কম লাগতো না কিছুতে। কিন্তু তার সমস্যা ঐ একটাই সে মেকাপ করতো প্রচুর। যেটা আমার ভালো লাগতো না। সে আমার এক প্রকারের ক্রাস ছিলো কিন্তু এখানে সে আসবে কোথথেকে?

তাহলে কে এটা? ধুর ভালো লাগে না।

আমি সব ভাবনা বাদ দিয়ে আপুর জন্যে ফুচকা বানিয়ে উপরে চলে গেলাম। গিয়ে আপুকে ফুচকা দিলাম। সে আমার হাতে চিরকুট টা দেখে জিজ্ঞেস করলো,
— কিরে এটা ভাই?
— কে জানে কি কি আজব আজব জিনিস লিখা আছে।
— পড়ে শুনা দেখি।
অতঃপর পরে শুনালাম সম্পুর্ন চিরকুটটি । আপু তো হ্যা করে তাকায় আছে আমার দিকে। যেমন আমি একটা এলিয়েন আর আমাকে দেখে সে খুব খুশি হয়েছে।
কিছুক্ষন পরে আপু বললো,
— যাক তাহলে একটা কাজ কমে গেলো আমার।
— মানে?
— বুঝবিনে। কালকে দেখিস।
কিজে বলছে এই মহিলা। মাথা ঘুরাচ্ছে আমার। তাই গিয়ে শুয়ে পরলাম। পরের দিন আগের দিন গুলার মতোন। ঘুম থেকে উঠে আপুর সাথে ফাজলামো করলাম তার পরে ফ্রিলান্সারস ডট কমে ঢুকলাম ঢুকে দেখি আমার ৫০০০০ ডলার জমে আছে।
কিন্তু কি করে?
একটু ঘাটা ঘাটি করে দেখলাম একটা ইমেইল ছিলো যাতে লেখা।
“ Hello Ariyan! You are our Desginer of the year. We ar very proud that you are with us thanks for bing with us. This is your reword. Have a good day sir.
— Freelancers Team “ [ ওহে আরিয়ান! আপনি আমাদের এই বছরের সবচাইতে সুন্দর ডিজাইনারের পুরষ্কারটি প্রাপ্ত করেছেন। আমরা গর্বিত আপনি আমাদের সাথে আছেন তাই। ধন্যবাদ আমাদের সাথে থাকার জন্যে। এটা আপনার পুরুষ্কার। শুভকামনা। ]

আমি সব পরে তো পুরাই বোকা হয়ে গেলাম ৫০০০০ ডলার মানে ৪০০০০০০ টাকা প্রায়। আমিতো খুশিতে রিতিমতো লাফাতে লাগলাম। আমি কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আপুকে বলার পরে সেও খুব বেশি খুশি হয়ে গেলো।

খুব খুশিতে দিনটা কাটালাম । আমার পছন্দের খাবার রান্না করা হলো। রাতে আপু আবদার করার আগেই আমি নিচে চলে গেলাম। ফুচকা বানাতে গিয়ে দেখি আজকেও একোটা চিরকুট পরে আছে। আমার এইবার মনে হতে লাগলো এই মেয়েটি আমার জন্যে লাকি। এই বারের চিরকুটে লিখা ছিলো,
— বাহ ভালোইতো একটা রিপলাই চিরকুট দিতেও ইচ্ছে করলো না। যাও তোমার সাথে আর কথা নাই। আমি আর চিরকুট লিখবো না যদি তুমি না লিখ।

আমার মনে চাচ্ছিলো রিপলাই দিতে । কিন্তু কি করা যায়। এই মেয়েকেতো চিনিও না। আমি আপুকে জিজ্ঞেস করায় উনি বললেন।
— তুই লিখবি। যদি আমাকে পেতে চাও তাহলে আগামী কাল রাতের আগে আমার সাথে দেখা করো। নাহলে চির জোবনের জন্যে হারাবে।

আমিতো আপুর খুব আদরের ভাই তাই তার কথাটা আর ফেলতে পারলাম না। তাই লিখে ফেললাম এমন করে একটা চিরকুট তার পরে মেয়েটা যেই যায়গায় চিরকুট রাখতো আমিও সেই যায়গায় রেখে দেই।
সেদিনের মতো আমি ঘুমিয়ে গেলাম। কারন পরের দিন আমি আর আপু বাসা দেখতে যাবো।

আমি আর আপু পরের দিন সকালে বের হলাম বাসা দেখতে। অনেক গুলা বাসা দেখলাম। তার পরে একটা বাসা পছন্দ করে রাতে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে ঘুমিয়ে পরেছি তখন আপু এসে আমাকে উঠালো।

আমি উঠে তাকিয়ে হতচকিত হয়ে গেলাম। তাকিয়ে দেখি আমার সামনে সেই মেয়েটি যে আমার দোকানের সামনে এসে দারায় থাকতো কিন্তু ফুচকা খেতো না। আমি আপুকে জিজ্ঞেস করলাম,
— আপু ইনি এখানে কি করছে?
— তুইতো আসতে বলেছিস।
— মানে?
— মানে এই তোমার সেই পেতনি।
— মানে কি তুমি কি আমাকে চেনো? [মেয়েটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেসো দৃষ্টিতে]
— তোমাকে না চিনলে তোমার হলাম কি করে?
কন্ঠ শুনেই চিনে ফেলেছি। এটা আর কেউ না এটা জাহান । আমার স্কুল লাইফের ক্রাস অরুপ পেত্নি। কিন্তু এই মেয়ে এখানে কি করছে?
— মানে তুমিই জাহান। দ্যা ফেমাস পেত্নি। কিন্তু তুমি এখানে কি করছো ? আর এসব চিরকুটের মানে কি?
— ঐ তুমি জানতা না আমি তোমাকে ভালোবাসতাম।
— কী?
— মজা লও? আমি নিজের নাম পেত্নি কেনো দিছিলাম?
— তুমি নাকি আমি দিয়েছিলা?
— ঐ একি । কেনো?
— কেনো?
— কারন তোমাকে সবাই সয়তান বলতো। সেই অনুযায়ী আমি পেতনি ছিলাম।

বলেই মুখটা নিচু করে নিলো। আর আমার মনের মাঝেতো লাড্ডু ফুটছিলো। আপু বলল,
— তোরা কথা বল আমি চা বানিয়ে নিয়ে আসি।
আপু যাওয়ার পরে জাহান বললো,
— আচ্ছা তুমি কি এখন ফুচকা বিক্রি করেই দিন পার করো?
— আরে না। আমি ফ্রিলান্সার আজকে নিজের জন্যে বাসা কিনে নিয়ে আসলাম। আপু বলেছিলো আমার জন্যে মেয়ে দেখা শুরু করবে। কিন্তু এখন্তো তুমি চলে আসছো সুতরাং মেয়ে দেখতে হবে না আর।

বলেই আমি হেসে দিলাম ।
— তুমিনা এখনো আগের মতো ফাজিল রয়ে গিয়েছো। [জাহান]

আরো কতো আজাইরা কথা বললাম। তার পরে আপু আসলো তার সাথে বসে চা খাচ্ছিলাম আর আজাইরা পকর পকর করছিলাম।
তার পরে থেকে আমার ফুচকার দোকান বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে কিছুদিন চলার পরে আমার আর জাহানের বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ে করে আমি যখন বাসর ঘরে ঢুকলাম তখন জাহানকে বললাম,
— এইযে বউ প্রস্তুত হয়ে নাও।
— মানে?
— মানে বুঝোনা?
— আজকে আমরা কথা বলে পার করি। কিছু দিন পর থেকে করি।
— কি করবো?
— যা করতে চাইছো এখন।
— কি করতে চাচ্ছি?
— যা দুষ্টু আমি বলতে পারবো না।
— আরে পাগল মেয়ে আমি এসব কিছুই বলছি না। তোমাকে না স্কুলে বলেছিলাম আমার ইচ্ছে আমি বাসর রাতে আমার বউরে নিয়ে পালাবো। ক্যানাডা চলে যবো। তারপরে হানিমুন করে ফিরে আসবো।
— ওহহহহ আমিতো ভাবলাম আবার কি না কি?
— এতো ভাবতে হবে না তারতারি প্রস্তুত হও।

তার পরে আরকি আমি আর জাহান চলে এলাম। ক্যানাডায় যখন ফ্লাইটে বসে আছি তখন আমি জাহানের সাথে কথা বলার সময় লক্ষ করলাম তার ঠোতের মাঝে একটা তিল আছে। যেটা সে মুখ বন্ধ করে রাখলে দেখা যায় না। আমি তিলটা দেখেতো পুরাই থ হয়ে গেলাম।
তারপরে জাহানকে বললাম,
— আচ্ছা বউ আমার একটা আবদার রাখবা?
— রাখতে পারি তবে আমার একটা সর্ত আছে ।
— কী সর্ত?
— আমাকে বউ বলতে পারবা না।
— তাহলে কি বলবো?
— বউ বাদে যা ইচ্ছা। তোমাকে না বলেছিলাম স্কুলে আমার স্বপ্ন আমার স্বামী আমাকে বাবুনি বলে ডাকবে।
— আচ্ছা তাহলে এখন থেকে বাবুনি বলবো।
— ওকে তাহলে এখন বলো তোমার আবদার কি?
— আমি তোমার ঠোটের মাঝের তিলটায় একটা চুমু খাবো।

বলতে দেরি জাহানের চুমু দিতে দেরি নাই। এটা ছিলো আমাদের যাওয়ার গল্প। তার পরে ক্যানাডায় আমরা সাত দিন ছিলাম । মুক্তা আপু ছাড়া আর কেউ জানতো না। পরে যখন আমরা আসছিলাম তখন আমি মজা করে জাহানের সাথে ঝগরা করি, খুনসুটির মতো তাতে সে রাগ করে আমার সামনের সিটে গিয়ে বসে পরে। যেহেতু কেউ ছিলো না তাই সমস্যা হয় নাই। তখন আমি বসে পরলাম আমার মতো করে। আমার পাসের সিটে একটা মেয়ে ছিলো কিন্তু কে সেটা আমি খেয়াল করি নাই।

যখন আমাদের বাংলাদেশে পৌছাতে ৩০ মিনিট বাকি তখন মেয়েটির দিকে তাকিয়েছিলাম একবার। আমি তাকায়তো পুতাই থ। মেয়েটি হচ্ছে স্নেহা। একটা ছেলের হাত ধরে বসে আছে চান্দি ছিলা। মাটে টাক আরকি। আমি নিজের হাসি আর আটকে রাখতে না পেরে হেসে ফেললাম।

আমাকে হাসতে দেখে স্নেহা বলে উঠলো,
— কিরে ছাগল তুই এইহানে কি করস?
— বাসায় যাচ্ছি।
— দেখছোস এটা আমার বর ক্যানাডায় ৫ টা বাড়ী আছে নিজের তোর চাইতে কতো ভালো দেখছিস?
— হুম তাতো দেখতেই পাচ্ছি।
— তুই বিয়া করস নাই?
— হ্যা করেছিতো। তোমার মতো সুন্দর না। তুমি সেটা নিয়ে চিন্তা করনা।
— আরে তুই এসব ভাবছিস কেনো আমি জানি তোর বউ আমার সামনে কিছুইনা। আমার খারাপ লাগার প্রশ্নই আসে না।
— না আমি ভাবলাম যদি হিংসে করো আরকি তাই।
— আমি হিংসে করবো এমন মেয়ে তোর কপালে জুটলেতো হইছিলোই। আমার হিংসে হতে পারে সামনে বসে থাকা মেয়েটিকে দেখলে। দেখতুই কি লম্বা চুল।

এবার খুব কষ্ট করেই নিজের হাসিকে আটকে রাখলাম। প্রায় ২ মিনিট পরে সামনে বসে থাকা মেয়েটি মানে জাহান চলে আসলো পেছনে। আর বলতে লাগলো,
— তুমি খুব বেশি চালাক হয়ে গিয়েছো।
— আপনি অচেনা একটী ছেলের সাথে কথা বলছেন কেনো? এই ছেলেটা কিন্তু ভালো না। [স্নেহা বললো আমার উপর দিয়ে এসে]
— মানে কি আমার স্বামীর সাথে আমি যা মনে চায় করবো তাতে আপনার কি?

জাহানের কথাটা বলার সাথে সাথে আমি তার ঠোটে চুমু খেলাম এটা দেখে স্নেহা। মুখ ঘুরায় নিলো। একটী বারে জন্যেও আমাদের দিকে তাকায় নাই। আমি খেয়াল করলাম তার জামাই নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। চান্দিছিলা সালায় জিনিস একটা ।

যখন আমরা নেমে যাবো তখন দেখলাম স্নেহা তার স্বামীকে ধাক্কাছে আর বলছে ফেরত চলে যাবে। তার পরে তার স্বামী তাকে একটা গালী দিয়ে বললো,
— তোর বাপের টাকা দিয়ে কি টিকেট কেটে দেশে আসছি?
আমি পারছিলাম না নিজের হাসি আটকে রাখতে তবুও খুব কষ্টে হাসি চেপে রেখে এয়ারপোর্টের বাইরে আসলাম কিন্তু কে জানতো এখানে মুক্তা আপু আমার জন্যে আরেক সার্পাইজ রাখছে। আমি বাইরে এসে দেখি আম্মু আব্বু দারায় আছে। সাথে মুক্তা আপুও আছে। আমার বুঝতে বাকি রইলো না এই মেয়েটা তাদের সব সত্যি বলে দিছে।

আমি যেতেই আব্বু আমাকে বুকে টেনে নিলো। আর আম্মু টেনে নিলো জাহানকে। ওরে হ্যাপি ফেমিলিরে। আমিতো আমার জাহান আর আমার পরিবারকে পেয়েগেলাম। এখন আর কোনো রহস্য বাকি রইলো না । সুতরাং এখানে গল্প খতম।