ছেলেটি নাম ছিলো রানা। দেখতে স্মার্ট চিকন চাকন চাকন বয়স খুবই কম মাত্র ১৩ বছর। গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের এক ছেলে, ছোট বেলায় বাবা মা কে হারিয়ে ছেলেটি বড় নিঃস হয়ে পড়ে, যাহা ছিলো বাড়ি ভিটা সব চাচা আত্নসাৎ করে নেয়, ছোট মানুষ তো কিছুই তার করার থাকেনা বললেই চলে, নিজের বাড়ি ভিটা থেকেও বলতে নেই, চাচা যাহা বলতেন তাহাই শুনতেন, না শুনলেই তাকে ধরে মারতেন। এমন কি সেদিন তার ভাত খাওয়া বন্ধ করে দিতেন। সারাদিন কাজ করতেন আর রাত হলে গুন গুনিয়ে পড়া পড়তেন। পাশে পড়তো ওর চাচাত বোন মেঘলা। মেঘলা আর রানা দুজনে ক্লাস সিক্স এ পড়ে শিমুতলি উচ্চ বিদ্যালয়ে। । বই খাতা কলম কেনার জন্য মেঘলা রানা কে খুব সাহায্য করত। খাতা শেষ হইলেই মেঘলা ওর বাবার কাছ থেকে টাকা এনে দিত। রানা খুব খুশি হতো। নিজে যখন পড়তো মেঘলা কে ও পড়াতো। আর মেঘলা কে আদর করে কপালে চুমো দিত পড়ার শেষে। তাদের এই ভাই বোনের ভালোবাসা টা ছিল অন্যরকম। রাত পেরিয়ে দিন এলে রানা খুব চেষ্টা করতো স্কুলে যাওয়ার জন্য কিন্তু রানার চাচার অর্ডার শুধু মাত্র বৃহস্পতিবার স্কুলে যেতে হবে, বাধ্য হয়ে রানা তার চাচার আদেশ পালন করত।

একদিন স্কুলে স্কুলের মাষ্টার তাকে ব্রেঞ্চে দাড় করিয়ে প্রশ্ন করে-

– এই তুমি দাঁড়াও
রানা ভয়ে থরথর করে কাপতে কাপতে দারিয়ে যায়।
স্যার বলেন, তুমি স্কুলে আসোনা কেন?
রানা তার চাচার ভয়ে বলেন, “-স্যার আমার সমস্যা আসতে পারব না।
– কি সমস্যা কেনো আসতে পারবেনা, আসতেই যদি না পারো তাহলে পড়াশুনা করার কি দরকার।
রানা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। স্যার আবার রানাকে বলে এই ছেলে কথা বলছো না কেনো আমার প্রশ্নের জবাব দাও কেনো স্কুলে আসতে পারবেনা?
রানা তবুও কিছু বলেনা। না বলাতে স্কুলের মাষ্টার রানা মাথা ব্রেঞ্চের নিচে ঢুকিয়ে একটি চিকন লাঠি দিয়ে রানার পিঠে আঘাত করে।
রানা ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাদতে থাকে। রানা কান্না দেখে
পাশে মেঘলা ছিলো, চোখের পানি ফেলে। কিন্তু কিছুই করতে পারেনা। রানার এই কষ্ট দেখে স্কুলের সবাই আফসোস করে। ক্লাস শেষে রানা কে সবাই ঘিরে ধরে আর প্রশ্ন করে এই তুমি স্কুলে আসতে পারোনা। স্কুলে আসলে তো আর এই মার টা খেতে না। রানা কাউকে কোনো প্রতি উত্তর দিতে পারেনা।

কারন উত্তর দিয়েই বা কি হবে, পারবে না তার চাচা কে মেনেজ করতে।

স্কুল ছুটি হলে রানা আর মেঘলা দুজনে হাটতে থাকে বাড়ির দিকে, মেঘলা আগে যায় আর রানা আসতে আসতে। রানার পায়ের গতি আসতে দেখায় মেঘলা রানা কে বলে, ভাইয়া একটু দাঁড়াও তো।
রানা দাঁড়িয়ে গেলে মেঘলা বলে ভাইয়া তোমার শার্ট টা একটু খুলবা।
রানা বলে, শার্ট খুলে কি হবে।
– ভাইয়া খুলো বলছি।
রানা তার শার্ট টি খুলে। মেঘলা রানার পিঠের আঘাত দেখে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে, রানা এখন কি করবে ভেবে পায়না। খুব কষ্টে মেঘলা কে কোলে নিয়ে পা নেছড়ে নেছড়ে সামনের দিকে নিয়ে আসে। রাস্তার পাশে পুকুর ছিলো। রানা দুহাতে করে পানি নিয়ে আসতে আসতে সব পানি শেষ হয়ে যায়। ছোট মানুষ কি করবে চিন্তা করে পায়না। শেষে গায়ের গেঞ্জি খুলে পুকুরে চুবাইয়া পানি নিয়ে এসে মেঘলার মুখে দেয়, অবশেষে মেঘলার জ্ঞান ফিরে আসে।

মেঘলার জ্ঞান ফিরে এলে মেঘলা রানা কে বলে,
ভাইয়া আমার কি হয়েছিলো?
রানা বলে- অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলি।
– ভাইয়া দেখি তোমার পিঠ।
না দেখানো যাবেনা, পরে আবার অজ্ঞান হবি।
হবোনা। আর দেখাও না।
রানা বলে বাড়ি গিয়ে দেখিস চল।

দুজনে বাড়িতে পৌছার পর মেঘলার আম্মু ওদের দুজন কেই প্রশ্ন করে কিরে তোদের জামা কাপড়ে কাদো কেন?
মেঘলা বলে আম্মু আমরা স্কুলে ছোটাছুটি খেলেছি। তাই ময়লা লেগে গেছে।
যা দুজনে গিয়ে গোসল করে আয়। মেঘলা তুই আগে যা। আর রানা তুই ততক্ষনে গরুর খাবার দিয়ে আয়।

রানা হাটতে পারেনা, তবুও খুব কষ্টে গরুর জন্য খাবার নিয়ে যায়।
ফিরে এসে গোসল করে খুব কষ্টে।
মেঘলার আম্মু দুজন কে খাবার দেয়, খাওয়া শেষে রানা কে বাজারের ব্যাগ ধরিয়ে দেয়।
বাজার থেকে ফিরলে পাই পাই সব খরচ গুনে নেন।
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত এলে রানা খাবার না খেয়েই বিছানায় শুয়ে পড়ে। আর কষ্টের কারনে কোকাতে থাকে। কিছুক্ষণ পর মেঘলা এসে রানার ঘরে প্রবেশ করে রানা কে বলে আম্মু তোমাকে ডাকছে খাবার খাওয়ার জন্য।
– আমি খাবনা, ক্ষিদে নেই।
মেঘলা ওর আম্মুকে চিল্লায় বলে আম্মু ভাইয়া নাকি খাবেনা।
– ঠিক আছে তুই খাবার টা নিয়ে যা ও পরে খেয়ে নিবে।
মেঘলা টেবিলে এসে খাবার রেখে দিয়ে। বইটি খুলে পড়তে বসে, হঠাৎ রানার কোকড়ানো আওয়াজ শুনতে পেয়ে রানার কাছে যায়, রান্না কে বলে ভাইয়া তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে তাইনা, রানা হু বলে। মেঘলা রানার মাথায় হাত দিয়ে দেখে প্রচুর জ্বর। মেঘলা দৌড় দিয়ে ওর মায়ের কাছে গিয়ে বলে আম্মু ম্যাচ টা কই দাও তো।
– ম্যাচ দিয়ে কি করবি।
– দাওনা একটু কাজ আছে আমার।
মেঘলা ম্যাচ নিয়ে রানার ঘরে ডুকে তিনটি ইট জোরা দিয়ে পাতিলে সামান্য একটু পানি কুসুম কুসুম গরম করে।
রানাকে বলে ভাইয়া উপড় হইয়া শুয়ে পড়। রানা উপড় হয়ে শুইলে, রানার ফুলে যাওয়া পুঠে প্রলেপ দিতে থাকে, রানা কষ্টে মাগো বলে চিৎকার করে, মেঘলার আব্বু রাতে বাড়ি ফিরলে মেঘলার আম্মুকে বলে মেঘলা কি পড়তে বসেছে?
– হুম পড়তেছে!
– কই কোনো শব্দ পাচ্ছিনা কেনো?
মেঘলার আব্বু ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে মেঘলাকে ডাক দেয়।
মেঘলা?
জি আব্বু।
দরজা খুলো তো?
রানা ও মেঘলা খুব ভয় পায় কি করবে ভেবে পায়না।
মেঘলা তারপর ও বলে আব্বু আমি পড়তেছি পারব না খুলতে।

রাগে মেঘলার আব্বু বলে, দরজা খুল বলছি…

মেঘলা রানা কে বলে ভাইয়া এখন কি করবো। রানা বলে…
তাড়াতাড়ি মেঝো ক্লিয়ার করে দরজা খুলে দে। যেনো বুঝতে না পারে কিছুই
মেঘলা ক্লিয়ার করে দরজা খুলে দেয়।
মেঘলার আব্বু ঘরে ডুকে, কিরে এতক্ষন লাগে দরজা খুলতে এতক্ষন কি করলি।
– আব্বু একটি প্রশ্ন লিখছিলাম, লিখা শেষ করে খুলে দিলাম।
মেঘলার আব্বু রানার কাছে গিয়ে কিরে পড়া বাদ দিয়ে এ সময় কিসের ঘুম এই বলে রানার গা ধরে ধাক্কা দেয়, রানা উহু বলে উচ্চারণ করে। গায়ের চাদর টান দিয়ে যখন সরাইয়া ফেলে রানার আব্বু দেখে অবাক হয়ে যায়। কিরে এমন অবস্থা তোর কি করে হলো?
রানা চুপ করে থাকে। মেঘলা বলে তোমার জন্য তুমি স্কুলে যেতে দাওনা বলে স্যার ব্রেঞ্চের নিচে মাথা ডুকাইয়া মারছে। স্যার আরো বলেছে স্কুলে না আসলে তার নাম স্কুল থেকে কেটে দেয়া হবে।

ঠিক আছে আগামীকাল থেকে রানা প্রত্যহ স্কুলে যাবে। মেঘলা শুনে খুব খুশি হয়।
রানা কষ্টে উঠতে পারেনা, তবুও রানা আব্বা জোর করে রানা কে পড়ার টেবিলে বসিয়ে চলে যায়। যাবার সময় মেঘলা কে বলে পড়া শেষে হলে চলে আসিস।
মেঘলার আব্বু চলে গেলে।

রানা অসুস্থ শরীর নিয়ে চেয়ারে বসে মেঘলা কে পড়াতে থাকে। এবং রানা কাদে আর নিজে ভেজা গলায় পড়ে। মেঘলা কি আর পড়বে, সারাক্ষণ রানার দিকে তাকিয়ে থাকে।

মেঘলা বলে ভাইয়া কেদোনা তো? তুমি কাদলে আমার খুব কষ্ট হয়, সবাই পর হলেও আমি তো তোমার আপন তাইনা। আমি জানি ভাইয়া, আব্বু তোমাকে খুব কষ্ট দেয়, তোমার দাঁড়ায় সব কাজ করিয়ে নেয়। আমি যদি বড় হতাম আব্বুর সাথে তর্ক করতাম, আব্বুকে বলতাম তুমি কেনো রানা ভাইয়া এত কষ্ট দাও। আমার মত কেনো তাকে হাসি খুশি থাকতে দাওনা।

রানা মেঘলার মুখের দিকে তাকিয়ে সব নিশ্চুপ হয়ে শোনে।
রানা আর মেঘলার গল্প রানার আব্বুর কানে কিছুটা গেলে মেঘলার আব্বু অন্য ঘর থেকে বলে কিরে মেঘলা কিসের গল্প করিস পড়া বাদ দিয়ে।

মেঘলা এবার চুপ রানা ও চুপ। দুজনের পড়া শেষ হলে মেঘলা রানাকে নিজ হাতে গায়ে চাদর দিয়ে মুড়িয়ে দেয়। মেঘলা রানা কে বলে ভাইয়া আমার কপালে আদর করে আজ চুমো দিবেনা।

রানা মুচকি হাসি দিয়ে মেঘলার মুখটি কাছে টেনে নেয়। আলতো করে মেঘলার কপালে একটি চুমো একে দেয়।

মেঘলা ঘরের দরজা লাগিয়ে নিজের রুমে চলে যায় ঘুমানোর জন্য।

ভোরের কিচিমিচির শব্দে ঘুম ভাংগে রানার। রানা ব্রাশ নিয়ে বারান্দায় আসে, রানার চাচা রানা কে দেখে বলে বাড়ির কাজ শেষে স্কুলে যাবি প্রতিদিন মনে থাকে যেনো। নয়ত দুপুরের ভাত বন্ধ করে দিব।
– চাচা আমি সব করে দিতে রাজি আমাকে শুধু প্রতিদিন স্কুলে যেতে দিবেন।
– যা কাজ কর যা, পেচাল বাদ দিয়ে।

রানা কাজ শেষে মেঘলা কে নিয়ে স্কুলে রওয়ানা দেয়, পথের মধ্যে মেঘলা রানা কে বলে ভাইয়া আজ আমাকে কেমন লাগছে বলতো, গতকাল আব্বু এই জামা টা কিনে এনেছে।
– রানা খেয়াল-ই করেনি। রানা বলে খুব সুন্দর লাগছে।
– Thnks ভাইয়া।
দুজনে স্কুলে পৌছে ক্লাসে ঢুকে স্যার রানা কে দেখে খুব খুশি হয়।
স্যার ক্লাস নিচ্ছেন ক্লাস শেষে স্যার সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন আজ তোমাদের কিছু গুরত্বপূর্ন জিনিস শেখাবো সারাজীবন মনে রাখবে, এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে যাবে। তাহলে তোমরা জীবনে সাফল্য অর্জন করতে পারবে।

ব্লাক বোর্ডে স্যার লিখলেন
Attitude – আচরণ
Confidence – আত্নবিশ্বাস
Hard work – পরিশ্রম
Patience – ধৈর্য

লিখা শেষে স্যার বললেন, একজন মানুষের আচার আচরন নম্র এবং ভদ্র হওয়া উচিত।
Confidence – আত্নবিশ্বাস…তোমার ভেতরে যদি Confidence না থাকে তাহলে তুমি সফলতা অর্জন করতে পারবেনা। ধরো, তুমি রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছ হঠাত সামনে দেখা গেলো রাস্তা টা ভাংগা, এখন তোমার ভেতরে যদি Confidence থাকে তাহলে তুমি পার হতে পারবে নয়ত কিন্তু পারবেনা, ঠিক পড়াশুনা টাও এমন।

সবাই খুব মন দিয়ে শুনছিলেন রানার পাশের ব্রেঞ্চের একটি মেয়ে ছিলো,মেয়েটি মনটা ছিলো রানার দিকে, পুরো ক্লাস টাই রানার দিকে তাকিয়ে ছিলো। ক্লাস শেষ হলে মেয়েটি রানার কাছে গিয়ে গল্প করতে চায়, কিন্ত মেঘলা করতে দেইনা, ক্লাস ছুটির আগেই মেঘলা রানার হাত ধরে বাড়ির দিকে রওয়ানা দেয়।

পরের দিন আবারো স্কুলে এলে মেয়েটি রানাকে ইশারা করে একটু ফাকে নিয়ে যায়, রানা কে বলে আমি প্রিয়া তুমি আমার ভালো বন্ধু হবে এ।
রানা বলে, “না আমার একজন বন্ধু আছে
প্রিয়া বলে তাই কি হয়েছে আমি ও তোমার বন্ধু হবো ।
রানা হু বলে মাথা নাড়ায়।
– আমার বাড়িতে আজ বিকালে আসবে, (প্রিয়া)
– তোমার বাড়ি গিয়ে আমি করবো। (রানা)
– আমরা দুজনে গল্প করবো। জানো আমার বন্ধু গুলো ভালোনা, তোমার মত সুন্দর করে ওরা কথায় বলেনা।
শুধু আইস্ক্রিম খাওয়ার জন্য টাকা চায়।
রানা কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসে।
প্রিয়া স্কুল থেকে রানাকে হাত দিয়ে তার বাড়ির ঠিকানা দেয়।

এদিকে সমস্ত স্কুল মেঘলা রানা কে খুজতে থাকে, রানা কে না পেয়ে ক্লাস রুমে গিয়ে মন খারাপ করে বসে থাকে।

রানা প্রিয়ার কাছ থেকে ফিরে ক্লাসে এলে, মেঘলা রানা কে বলে ভাইয়া কই গেছিলা, অনেকক্ষণ ধরে তোমাকে খুজছি।
রানা বলে, প্রিয়ার সাথে গল্প করছিলাম।
মেঘলা শুনে কিছুটা মন খারাপ করে। রানাকে বলে…
একা একা আমাকে রেখে প্রিয়ার সাথে গল্প করো আমাকে ডাকোনি কেনো আমি ও তোমাদের সাথে গল্প করতাম। জানো তোমাকে না পেয়ে আমার খুব খারাপ লাগছিলো।
– খারাপ লাগবে কেন? ক্লাসে তো আরো অনেক বন্ধু আছে ওদের সাথে গল্প করতি।
– না ওদের সাথে আমার গল্প করতে ভালো লাগেনা। শুধু তোমার সাথে গল্প করতে ভালো লাগে।

সেদিনের মত স্কুল ছুটি হলে দুজনে বাড়ি চলে যায়।
রানা বাড়ির কাজ শেষে প্রিয়ার কাছে চলে যায়।
প্রিয়া রানাকে পেয়ে তাদের বাড়ি নিয়ে যায়। প্রিয়া তার মাকে বলে আম্মু এ রানা খুব ভালো স্টুডেন্ট আমাদের ক্লাসের ফাস্ট বয়। আমরা দুজনেই এবার ক্লাস এইটে পড়ি। প্রিয়ার আম্মু রানা কে বিস্কিট দেই। দুজনে খেয়ে প্রিয়া রানাকে নিয়ে পুকুর ঘাটে আসে।

দুজনে খুব কাছাকাছি এসে খুব মজা করে গল্প করে।
রানার চাচা বাজার থেকে বাড়ি ফিরতেই রানার পাশে একটি মেয়েকে দেখতে পায়। কাছে গিয়ে রানা কে থাপ্পড় লাগিয়ে বাড়িতে টেনে নিয়ে আসে।

বাড়িতে এসে মেঘলার আম্মুকে চিল্লায় চিল্লায় বলে এই হারামজাদা দেখি পুকুর পাড়ে আসাদ এর মেয়ের সাথে গল্প করছে, আর কোনদিন যদি দেখি তাহলে তোকে বাড়ি বের করে দিব।

মেঘলার আম্মু বলে, যা হাত মুখ ধুয়ে পড়তে বস, জানিস তো তোর চাচা ভালো না, কেনো তুই এসব করতে যাস।

আন্টি ও আমার বন্ধু হয়, আমি তো কিছু করিনি।
না রানা বন্ধু হোক কিছু হোক আর কোনদিন যাবিনা। ওরা আমাদের শত্রু।

এতক্ষন মেঘলা দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে সব শুনছিলো।
রানা পড়তে বসলে মেঘলা ও চলে আসে।
দুজনে পড়ছে একটু পড়েই মেঘলা রানাকে বলে ভাইয়া কে সে মেয়েটি।
রানা বলে, আরে প্রিয়া।
মেঘলা কথা শুনে মন খারাপ করে বই নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে, রানা বলে একটা কথা শুনে যা। মেঘলা ব্যাক করে কাছে এলে রানা মেঘলার কপালে একটি চুমো দেয়।

মেঘলা চলে যায়। নিজের রুমে গিয়ে পড়তে বসে, কিন্তু পড়াতে আর মন বসাতে পারেনা, পুরো খাতায় লিখে রানা I Like You, I Love You.
লিখতে লিখতে মেঘলা ঘুমিয়ে পড়ে।

সকাল হলে আবারো সেই স্কুলের পথে রওয়ানা দু ভাই বোন। যদিও তারা চাচাত ভাই বোন কিন্তু এখন আর তাহা নাই কারন তাদের চোখে এখন ভালো লাগা শুরু হয়েছে। দুজনে হাত ধরে স্কুলের দিকে যাচ্ছে।
মেঘলার রানা কে বলল, আচ্ছা ভাইয়া আমি কি দেখতে খারাপ।
রানা বলে না তো তুই খুব সুন্দর।
– জানো ভাইয়া আমার না একজন কে খুব-ই ভালো লাগে কিন্তু সে আমার কথা ভাবে কি না জানিনা। তাকে না মনে মনে আমি তাকে খুবই পছন্দ করি।
– কে সেই ছেলেটি আমাকে বল। আমি তোকে সাহায্য করবো।
– তুমি কি পারবে।
– কারো জন্য না পারলে তোর জন্য আমাকে পারতেই হবে।
মেঘলা কথা শুনে মনে মনে খুব খুশি হয়। কিন্তু মেঘলা জানেনা যে রানাo মেঘলাকে পছন্দ করে।
মেঘলা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর আবারো প্রশ্ন করে, ভাইয়া একটি কথা বলবো।
– হুম বল, একটা না হাজার টা।
– ভাইয়া তুমি গতকাল প্রিয়ার কাছে গিয়েছিলে।
হুম। গিয়েছিলাম, গল্প করতে।
কি কি গল্প করেছো।
– ওগুলো কি মনে থাকে হাজার রকমের গল্প।
– তোমার কি প্রিয়ারে ভালো লাগে। উহু না তোকে আমার ভালো লাগে।
– না তুমি মিথ্যা বলছো।
– সত্যি বলছি তোকে আমার ভালো লাগে।
দুজনে গল্প করতে করতে স্কুলে পৌছে যায়।
স্কুলে পৌছেই দেখে প্রিয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে রানা কে দেখা মাত্রই- প্রিয়া বলল
তোমার জন্য কতক্ষন ধরে Wait করছি তুমি জানো।
রানা একটু এসে, আমার জন্য Wait করার কি আছে,
– বারে তুমি আমার বন্ধু না।তাই করছিলাম। সাথে মিস ও করছিলাম।
মেঘলা কথা গুলো প্রিয়ার দিকে এক নজর তাকিয়ে ক্লাসের ভেতরে ঢুকে যায়।
আর রানা ক্লাসে ঢোকার আগেই প্রিয়ার সাথে গল্পে মজে যায়, স্যার ক্লাসে ঢোকে পড়ে তবুও তাদের গল্প যেনো শেষ না হয়। অবশষে মেঘলা ক্লাস থেকে বের হয়ে আসে। রানার হাত ধরে ক্লাসে নিয়ে যায় আর বলে স্যার ডুকছে তবুও তুমি গল্প করছো।
-স্যার কে আমি লক্ষ করিনি, স্যার কখন এসেছে।
স্যার বলেন সামনের তোমাদের Ssc. পরিক্ষা তাই তোমরা এখন ঘর থেকে বেরুবে না। সারাক্ষন বইয়ের সাথে লেগে থাকবে, সামনের তোমাদের খুব সুন্দর দিন গুলি রয়েছে, খুব ভালো রেজাল্টের মাধ্যেমেই তোমরা সেই সাফ্যলের সিড়ি বেয়ে উপড়ে উঠবে।

স্যার ক্লাস শেষে চলে গেলে প্রিয়া রানা কে ইশারায় ডাকে। রানা কে বলে চলো আজ আর ক্লাস করবো না বাহিরে গল্প করে ক্লাসের সময় টুকু কেটে দিবো। রানা মেঘলার কাছে এসে বলে আমি বাড়ি যাচ্ছি আমার কাজ আছে।

মেঘলা রানার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে যে রানা মিথ্যা বলছে, মেঘলা রানার কথা শুনে মন খারাপ করে,। রানা পাশে বসে মেঘলা কে বলে মন খারাপ করিস কেন। তোর মন খারাপ হলে আমার যে ভালো লাগেনা।
মেঘলা কথা শুনে খুব খুশি হয়। রানা বলে আমি তাহলে যাই রে। মেঘলা হু বলে মাথা নাড়ায়। রানা ক্লাস থেকে বেরিয়ে পড়লে মেঘলা ও বেরিয়ে পড়ে রানার পিছু পিছু রানাকে ফলো করার জন্য…

রানা বাহিরে এসে দেখে প্রিয়া দাঁড়িয়ে আছে, প্রিয়া রানাকে নিয়ে একটি বকুল ফুলের গাছের নিচে বসে যায়। প্রিয়া বলে রানা তুমাকে একটি কথা জিজ্ঞেস করতাম। কি কথা বলও,
– তুমি কি কাউকে ভালোবাসো।
বাসিনা তবে একজন কে ভালো লাগে খুব।
প্রিয়া ভাবে নিশ্চই আমি হবো। আচ্ছা রানা মেয়েটি দেখতে কেমন।
– ঠিক তোর মতন।
রানা আমিও একজনকে ভালোবাসি কিন্তু কিভাবে যে বলি, মুখফুটে বলতে পারছিনা।
সমস্যা নাই বলতে পারিস, আমি তোর বন্ধুনা।
আসলে রানা আমি ত তো কথা টি বলতেই মেঘলা এসে।
ভাইয়া তুমি আমাকে মিথ্যা কথা বলতে পারলে,
আসলে মেঘলা,
আসলে মেঘলা কি আজ বাড়িতে গিয়ে সব আব্বুকে বলে দিবো। মেঘলার পায়ের গতি ১০০ স্প্রীডে বাড়ির পথে, রানা দৌড়ে গিয়ে মেঘলার হাত টি ধরে প্লিজ চাচা কে বলিস না নয়ত আমাকে ঘর থেকে বের করে দিবে, তুই কি চাস আমি বাড়ি থেকে চলে যাই।
– ঠিক আছে বলব না তবে একটি শর্ত আছে?
– কি শর্ত বল,
তুমি আর কোনদিন প্রিয়ার সাথে দেখা বা কথা বলবেনা।
রানা কিছুক্ষন চুপ থেকে , আমি প্রিয়ার সাথে কথা না বললে তুই খুশি। হুম আমি খুশি।
– ঠিক আছে তাই হবে কথা বলব না।

এদিকে প্রিয়া মন খারাপ করে বাড়ি চলে যায়।

রানা মেঘলা বাড়িতে পৌছে রাতে খেয়ে রানা পড়তে বসে, আর মেঘলা আয়নার সামনে গিয়ে সাজতে থাকে। মেঘলার মা মেঘলাকে বলে কিরে, এই সন্ধ্যা বেলা আয়নার সামনে গিয়ে কি করিস যা পড়তে বস।
মেঘলা বলে, যাচ্ছি আম্মু।
মেঘলা নীল পোশাক পড়ে রানার রুমে চলে যায়। রানা মেঘলাকে দেখে অবাক হয়ে যায়। দুজনে টেবিলে আসে, রানা মেঘলা কে বলে তোকে আজ সুন্দর দেখাচ্ছে।
– অন্যদিন সুন্দর দেখায় না বুঝি।
দেখায় তবে, আজ বেশি সুন্দর লাগছে।
দুজনে পড়া শুরু করে দেয়। রাত ১১ টা পাড় হইলে মেঘলা রানা কে বলে ভাইয়া একটা অংক বুঝিয়ে দিবি।
রানা মেঘলার খাতা টা নিয়ে পৃষ্টা উল্টাতেই দেখে। প্রতিটি পৃষ্টায় লেখা Rana I Love You. রানা বলে এসব কি?
মেঘলা বলে সত্যি ভাইয়া আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
– মেঘলা তুই আমাকে ভালোবাসিস আমি চাইনা।
– কেনো চাওনা।
– আমি তোদের বাড়িতে কাজ করে খাই আমার নাই কেউ নাই কোনো ভিটা। এই বিষয়টি যদি চাচা জানতে পারে তাহলে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিবে। তুই কি চাস আমি বাড়ি থেকে চলে যাই।
– ভাইয়া আব্বু জানলে তো।
মেঘলারে সত্য কখনো চাপা থাকে না একদিন না একদিন প্রকাশ পাবেই।
ভাইয়া আমি প্রকাশ করতেই চাই। আমি আব্বুকে বলতে চাই আমি তোমাকে বিয়ে করবো।
– না মেঘলা এটা ভুলে ও বলিস না প্লিজ।
এখন বলবো না তো। পরিক্ষা টা শেষ হোক তারপর।ভাইয়া আমার ঘুম পাচ্ছে ঘুমাবো।
ঠিক আছে যা, শোন আমার পাওয়ানা দিবিনা।
– কিসের পাওয়ানা।
– আমার খুব লজ্জা করছে,
– আগে তো লজ্জা করেনি এখন কিসের লজ্জা।
– আগে ছোট ছিলাম।
– এত কথা বুঝিনা কাছে কি তুই আসবি।
মেঘলা লজ্জাবতি বউয়ের মত আসতে আসতে কাছে আসে, রানা মেঘলাকে বুকে টেনে নেয়।
মেঘলার আব্বু বাজার থেকে ফিরছিলো, রানার ঘরের পাশ দিয়ে যাইতেই
মেঘলা রানাকে বলছে ভাইয়া তুমি আমাকে ভুলে যাবেনা না তো।
– না রে সবাইকে ভুলা গেলেও মনের মানুষ্কে নয়। মেঘলার আব্বু দরজার আড়ালে কান টুকিয়ে সব শুনছিলো।
মেঘলা রানা কে বলল, ভাইয়া তাড়াতাড়ি করো।এখন আব্বু আসার সময় হইছে?
– কি তাড়াতাড়ি করবো।
জানিনা আমি কি করবা।
রানা মেঘলা দুহাত চাপ দিয়ে ধরে আজ আর কপালে নয় ঠোটে কিস বসিয়ে দেয়।
মেঘলার আব্বু সব শুনে নিজের ঘরে গিয়ে একটি লাঠি নিয়ে ধাক্কা দিয়ে রানার দরজা খুলে…

ঐ হারামজাদা আমার ঘরে থাকিস আর আমার মেয়ের…

আমার মেয়ের সাথে লটর পটর করছিস, আমার খাস আমাকেই ভাজিস। হারামজাদা, রানার চাচা বলছে আর রানা গায়ে ইচ্ছেমত আঘাত করছে, বাহির হ এক্ষুনি নয়ত আজ তোকে মেরেই ফেলবো।
মেঘলার আব্বুর লাঠির আঘাতে রানা চিল্লায় চিল্লায় মাগো মাগো বলে কাদছে, মেঘলা রানার কান্না সহ্য করতে না পেরে রানা সামনে গিয়ে দুহাত দুদিকে দিয়ে বলে আব্বু ওর কোনো দোষ নেই সব আমার দোষ প্লিজ ওকে মেরোনা।
ও হারামী দূর হ সামনে থেকে নয়ত তোকেও এই বলে মেঘলাকে ঠিক মত কয়েকটি লাঠির বাড়ি। হারামীর বাচ্চা কাজের ছেলের সাথে এসব করতে তোর লজ্জা করেনা দাড়া কালকেই তোকে বিয়ে দিব। বলছে আর মেঘলাকে আঘাত করছে। মেঘলার চিৎকার এ মেঘলার আম্মু এসে সামনে দারায় মারছো কেনো ওদের। মেঘলার আব্বু কোনদিক না তাকিয়ে মেঘলার আম্মুকে বারি আর গালি শালি সব তোর জন্য বাড়িতে কি করিস খোজ রাখিস না কে কোথায় কি করে। একটা অঘটন ঘটে গেলে মান সম্মান আমার কোথায় যাবে। মেঘলার আব্বু তিনজনকেই ঘাড় ধাক্কা দিয়ে রাতের বেলা বের করে দেয়। তারপর

মেঘলার আব্বু নিজের ঘরে গিয়ে একাই একাই বকবক করতে থাকে। গ্রামের মানুষ চিল্লাচিল্লি শুনে সবাই ছুটে আসতে পারত কিন্তু কেউ বাড়ির আংগিনায় পর্যন্ত আসার সুযোগ পায়না। কারন তারা সবাই জানে মেঘলার আব্বু লোকটা ভালো না।

মেঘলার আম্মু বেশ কিচ্ছুক্ষন পর বলে তোরা কি করেছিস?
“-আম্মু আমরা কিছুই করিনি। আব্বু এসে খামাখা মার শুরু করছে।
“-রানা যাও গিয়ে ঘুমাও, মেঘলা যা তুই ও ঘুমিয়ে পড়।
পরে মেঘলার আম্মু ও ঘরে চলে যায়।

সকাল হলে মেঘলার আব্বু বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগে বলে মেঘলা যেনো আর রানার ঘরে না যায়, ওকে আমি অন্যকোথাও টিউশনি ধরে দিব। আর ঐ হারামজাদাকে বাড়িতে যেনো আর না দেখি আমি।
মেঘলার আব্বু চলে যায়।

মেঘলার আম্মু রানা ও মেঘলাকে ডেকে খাবার দেয়।
আর বলে মেঘলা তোরে তোর আব্বু রানার ঘরে যাইতে নিষেধ করেছে। ভুলে ও আর যাসনা। নয়ত তোরে আস্ত রাখবেনা। দুজনে কান পেতে শুনে খাওয়া শেশ হলে দুজনে স্কুলের পথে, সাত দিন পর তাদের এস এস সি পরিক্ষা। মেঘলা বলে ভাইয়া পরিক্ষা শেষ হলে চলো পালিয়ে যাই?
– না এটা ঠিক হবে না মেঘলা।
– কেনো তুমি আমাকে ভালোবাসোনা।
– বাসি কিন্তু খাবার না থাকলে ভালবাসা পালিয়ে যাবে। আমার কি আছে বল, না কোনো থাকার যায়গা না কোন বাসস্থান, তোরে কি খাওয়ামু, কই রাখমু।
– তুমি কি কিছুই করতে পারবা না।
– পারব না বললে ভুল হবে , কিছু না পারলেও রিক্সা চালাইয়া খাওয়াই তে পারুম।
– তাহলে চল যাই পরিক্ষা শেষে।
মেঘলা খুশিতে গদগদা মনে হয় বললেই হলো।
– মুখে বললেই হয়না, এটা একটা জীবন। সব কিছু ভেবে চিনতে করতে হবে, আমি আগে নিজের পায়ে দাঁড়ায় তার পর মহাধুম ধামে তোকে বিয়ে করবো।
– তোমার নিজের পায়ে দাড়াতে আব্বু যদি আমাকে বিয়ে দিয়ে দেই।
– সমস্যা কি বিয়ে করে নিবি।
– না আমি তোমাকে ছাড়া কাউকেই বিয়ে করবো না প্রয়োজনে ফাস লটকাবো। তবুও না।

গল্পের মাঝেই স্কুলে পৌছে যায় তারা দুজনে। ক্লাস শেষে মেঘলা ও রানা বাড়ির দিকে যাইতে থাকে।
পিছন থেকে প্রিয়া চিল্লায়া ডাক দেয়, রানা দাড়া…আ আ।
দুজনে পিছনে ফিরে দেখে প্রিয়া ডাকছে। দাঁড়িয়ে গেলে প্রিয়া বলে রানা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
মেঘলা বলে Sorry প্রিয়া তোমার সাথে আমার ভাইয়ার কোনো কথা থাকতে পারেনা।
– মেঘলা তুই আমাকে ভুল বুজতেছিস। রানা আমার একজন বন্ধু। আমি শুধু রানা কে একটি কথা বলবো।
প্লিজ তুই একটু ফাকে যা। প্লিজ মেঘলা মনে কিছু করিস না।
– কি এমন কথা আমার সামনে বল-
– তোরে পরে বলছি আগে রানা কে বলি।
– ঠিক আছে আমি কিন্তু বেশিক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতে পারবনা। তাড়াতাড়ি বল।
মেঘলা একটু দূরে গেলে।
প্রিয়া রানার খুব কাছে এসে বলে, রানা আমি তোমাকে ভালোবাসি।
– রানা শুনে মেঘলার দিকে তাকায়।
– জানো রানা আজ তিন দিন হলো আমার চোখে ঘুম নেই, প্লিজ না করোনা।
– না রে প্রিয়া এটা অসম্ভব। আমি ভালোবাসতে পারবানা।
– প্রিয়া ভেজা গলায়, আমি তোমাকে ভালোবাসি ভালবেসেই যাবো। তোমার অপেক্ষায় থাকবো। যদি কোনদিন আমাকে তোমার প্রয়োজন মনে হয় তাহলে আমাকে ডেকো আমি তোমার ডাকে ছুটে আসবো।
এই বলে প্রিয়া চলে যায়…

মেঘলা কাছে এসে কি বলল- ভাইয়া…
– সামনে নাকি পরিক্ষা খুব নাকি ভয় করছে। আমি বললাম, ভালো করে পড় আর চিন্তা করিস না।

দুজনে আবার সেই বাড়ির দিকে।
– ভাইয়া স্কুল তো বন্ধ হয়ে গেলো আমি তোমার সাথে গল্প করবো কিভাবে।
– শোন রাত্রে তুই আমার ঘরে না আসলেই হলো চাচা তো আর দিনের বেলায় বাড়ি থাকেনা তাই না। তা ঠিক।

দুজনে বাড়ি চলে আসে। দুজন দুপ্রান্ত দুই রুমে মন দিয়ে পড়াশুনা করে।

অত:পর সাতদিন পর তারা পরিক্ষা দিতে যায়। তিনটা পরিক্ষা দেয়াপর একদিন তারা বন্ধ পায়। সেই সুযোগে মেঘলা ও রানা বাড়ির পাশে খুব কাছাকাছি বসে মনের সুখে গল্প করে। মেঘলার আব্বুর চোখে আবার ও তারা ধরা খেয়ে যায়। রানা কে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। আর বলে কোনদিন আমার বাড়ির ত্রিসীমানায় আসবিনা।
রানা বলে চাচা আমাকে বাড়িতে ঢুকতে না দেন। দয়া করে আমার বই গুলি।
রানার বাবা বই গুলি রানার ঘর থেকে নিয়ে এসে রানার গায়ে ছুড়ে মারে।
রানা বই গুলি কুড়িয়ে একটি ব্যাগে নিয়ে কাদতে কাদতে বাড়ি থেকে ধীরে ধীরে বেড়িয়ে পড়ে। কোথায় যাবে কি করবে সে নিজেও জানেনা। হাটতে হাটতে প্রিয়ার বাড়ির কাছে প্রায় এসে পড়ে। সন্ধ্যা ও ঘনিয়ে আসে।

অন্যদিকে মেঘলা পড়া বাদ দিয়ে কাদতে থাকে। মায়ের কাছে বায়না ধরে ভাইয়া কে এনে দাও আমার কাল পরিক্ষা আছে নয়ত আমি ফেল করবো।
মেঘলা আব্বু ধমক দিয়ে বলে ঐ হারামীর নাম যদি আর একবার মুখে আনিস তোকে ও বের করে দিব। মেঘলা ধমক খেয়ে নিজের রুমে ছুটে যায়। গুন গুনিয়ে কাদতে থাকে আর বলতে থাকে, ভাইয়া কোথাও যেওনা, আমি তোমাকে না পেলে মরে যাবো।

প্রিয়ার বাড়ির কাছে একটি থাম্বার নিচে বসে গেলাম। বড় একা লাগছে নিজেকে, মেঘলা ছিলো আপন মানুষ সেও পর হয়ে গেলো। বড্ড ক্ষুদাও পেয়েছে, আবার আগামীকাল Math পরিক্ষা ও আছে, এসব ভাবতেই আলোর ঝলাকানি পেলাম, উপড়ে চেয়ে দেখি কারেন্ট এসেছে তার মানে আমি যেখানে হেলান দিয়ে আছি এটা কারেন্টের থাম্বা। ভালোই হলো পেটে কিছু না গেলেও পড়তে তো পারবো।

খাতা বই বাহির করে Math করা শুরু করলাম, পড়তে পড়তে রাত ১০ টা বেজে গেলো।
হঠাৎ করে এক লোক সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেলো। আমাকে বললো কে তুমি বাবা?
খুব ভয় পেয়ে ছিলাম তার কথা শুনে,
– জি আমি রানা।
– কোথায় থেকে এসেছো?
কোথাও থেকে আসিনি, আমি এই গ্রামেরই পোলা। চাচার বাড়িতে থাকি উনি আজ আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন।
– তা তুমি এত রাতে এখানে কি করছো।
– আসলে আংকেল আগামীকাল আমার পরিক্ষা আছে তাই পড়ছি।
– তোমার বাবা মা কোথায় থাকে?
বাবা মা কথা শুনে চোখে পানি এসে গেলো।
– তুমি কাদছো কেনো?
– আংকেল আমার বাবা মা বলতে কেউ নেই সবাই আমাকে ফাকি দিয়ে হারিয়ে গেছে।
– Sorry বাবা মনে কিছু করোনা। কষ্ট দিলাম তোমায়। তুমি এখানে একটু থাকো কোথাও যেওনা কেমন। আমি এক্ষনি আসছি।

লোকটি প্রিয়ার বাড়িতে ঢুকে গেলো। এই যে গেলো আর কোনো খবর নেই। রাত এগারোটা বেজে গেলো খুব ঘুম পাচ্ছে না পড়লেও নয়, আবার পড়া শুরু করলাম।

এদিকে প্রিয়াও পড়ছে, প্রিয়া যখন পড়। বন্ধ করে তখন আমার পড়ার শব্দ শুনতে পায়। আসতে করে বাহিরের দরজা টা খুলে আমার দিকে এগিয়ে আসে।

আমার চোখটি সামনের দিকে যায়, প্রথমত আমি খুব ভয় পাই, কিন্তু যখন প্রিয়া কাছে আসে আমি আমার মাথাটা নিচু করি।
প্রিয়া বলে রানা তুমি এখানে?
আমি বলি, ভাগ্য টেনে এনেছে?
– কিন্তু এত রাতে এখানে বসে পড়ছো? আমাকে খুলে বলোতো কি হয়েছে।
প্রিয়া চাচা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।
– তুমি আমার সাথে আসো?
– কোথায়।
– কোথায় আবার আমার বাড়িতে।
– তোমার বাবা মা দরি দিয়ে বেধে রাখবে, এত রাতে আবার কেউ…
– আরে বোকা আমার বাবা মা বুঝলে তো।
– মানে
– মানে তুমি চুরি করে আমার সাথে থাকবা। আমার বাবা মা বুঝতেই পারবেনা।
– আর যদি পায়, তখন কি হবে।
– এত কথা বলোনা তো, যা বলছি তাই করো। বই গুলি গুছিয়ে প্রিয়ার পিছু পিছু গেলাম।
প্রিয়া ফিস ফিস করে বলল, এই আসতে আসো পায়ের শব্দ করোনা।
– কি আর করা প্রিয়ার কথা মত আসতে আসতে গেলাম। প্রিয়া ওর রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।
– এই তুমি দরজা লাগালে কেনো? আমার খুব ভয় করছে।
– আরে বোকা দরজা না লাগালে কি খোলা রাখবো। ধরা খাওয়ার জন্য।
– কিন্তু।
– কোনো কিন্তু নয়। তুমি বিছানায় ঘুমিও আমি ফ্লোরে ঘুমাবো।। কিছুই তো খাওনি মনে হয়।।
ফ্লোরে বস।
আমি ফ্লোরে বসে গেলে প্রিয়া তার নিজের খাবার টুকু সামনে নিয়ে এলেন, পুরো খাবার টি আমাকে দিলেন। সব গুলো আমাকে দিচ্ছ কেনো। তুমি খাবেনা।
প্রিয়া বলল, আমি যাকে পছন্দ করি, সে খাইলেই আমার খাওয়া হবে।
– এসব আবেগি কথা বাদ দাও। এই নাও তুমি ও খাও আমি ও কিছু খাই।
– আমাকে দিওনা, তুমি খাও আমাকে তুলে খাওয়ালেই পেট ভরে যাবে।
খাওয়া শেষে প্রিয়া বলল, কখনো দরজা খুলবা না। সকালে আমি তোমাকে ডেকে তুলবো।
– প্রিয়া আমার খুব ভয় করছে যদি তোমার বাবা মা টের পায়, কি অবিস্থা যে হবে,
– ও নিয়ে তোমাকে চিনতে করতে হবেনা। যাও লক্ষি ছেলের মত এখন ঘুমিয়ে পড়ো।

বিছানায় গিয়ে লক্ষি ছেলের মত ঘুমিয়ে গেলাম।
কিন্তু ঘুম ধরছেনা, আমার মেঘলাকে খুব মনে পড়ছে, মেঘলা তুমি কেমন আছো জানতে বড় ইচ্ছে করছে।

এই রানা তুমি প্রিয়ার সাথে ঘুমিয়েছো? তুমি না আমাকে ভালোবাসো। তুমি না আমাকে বলেছো। প্রিয়ার সাথে আর কখনো কথা বলবে না, তবে আজ কেনো প্রিয়ার কাছে দাঁড়াও প্রিয়ার বাবাকে বলছি। মেঘলা প্রিয়ার বাবাকে বলে দিলে প্রিয়া বাবা এসে আমাকে একটি ছুড়ি দিয়ে গলায় আঘাত করলে আমি চিৎকার দিয়ে উঠি। জেগে দেখি ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখছিলাম। আমার চিৎকার এ প্রিয়ার ঘুম ভেংগে যায়, প্রিয়া বলে কি হয়েছে?
– একটি বাজে স্বপ্ন দেখছিলাম। প্রিয়া একগ্লাস পানি আমাকে খাওয়াইয়া বলে এখন ঘুমাও।
– আমার যে ঘুম আসছে না।
– ঠিক আছে আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি । প্রিয়া আমার মাথায় হাত বুলাইতে বুলাতে ঘুমিয়ে গেলাম, সকাল হলে আমরা দুজন জেগে উঠার আগেই প্রিয়ার আম্মু দরজায় এসে ঠক ঠক করে শব্দ এবং বলতে লাগলো…

প্রিয়া, প্রিয়া এই প্রিয়া…
প্রিয়ার আম্মু চিল্লানীতে আমার ঘুম ভেংগে গেলো। চেয়ে দেখি প্রিয়া আর ফ্লোরে নয়, আমার বুকেই ঘুমিয়েছে, আমি প্রিয়াকে আসতে করে বললাম প্রিয়া, প্রিয়া উ বলে আরো আমাকে জড়িয়ে ধরলো।

প্রিয়ার মা এবার জোরে জোড়ে ডাকতে শুরু করলো প্রিয়া শুনতে পেয়ে চমকে উঠলো। প্রিয়াকে বললাম এখন কি হবে…

প্রিয়াকে ফিস ফিস করে বললাম এখন কি হবে যদি ধরা পড়ে যাই।
– তুমি খাটের নিচে ডুকে যাও কোন কথা বলোনা কিন্তু।
– যদি খাটের নিচে খুজে
– আরে খাটের নিচে খুজবে কেন? তুমি কি চোর চুরি করতে আসছো?
– ভয় করছে খুব।
– কিরে প্রিয়া ঘুম থেকে কি উঠছিস। দরজা খুলতেছিস না কেনো।
– দাঁড়াও আম্মু
আমি খাটের নিচে গেলাম, সাজ সকালে
প্রিয়া দরজা খুলে দিলো। প্রিয়ার আম্মু ঘরে প্রবেশ করলো। ক’টা বাজে তোর কি খেয়াল আছে পরিক্ষা দিতে যাবিনা।
– যাবানা মানে অবস্যই।
– ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নে। তোর আব্বু আবার অফিসে যাবে। তার নাকি দেরি হয়ে যাচ্ছে।
– ঠিক আছে আম্মু তুমি যাও আমি আসতেছি।
প্রিয়ার আম্মু চলে গেলে প্রিয়া আবার দরজা বন্ধ করে দিলো। আমি ভেতর থেকে বের হলাম।
– যাক বাবা বেচে গেলাম, যদি আজ ধরা পড়তাম, পরিক্ষা এখানেই আজ শুরু হয়ে যেত। প্রিয়া আমাকে বাসা থেকে বের হবার উপায় বের করো।
– খাবা না?
– এটা কি শশুর বাড়ি খাবো আমি
– শশুর বাড়ি হইলে সমস্যা কি?
না রে প্রিয়া তাহা Possible নয়। কথা টি বলতেই প্রিয়া খুব কাছে এলো চোখের দিকে মায়ার নজরে তাকালো।
– রানা সত্যি আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।
আমি প্রিয়ার দিকে এক নজর তাকালাম। প্রিয়া ও দেখতে অনেক সুন্দর। খুব সুন্দর লাগছে, ঠোটে মায়াবী হাসি লেগেই যেনো আছে।
– এই রানা কি ভাবছো।
– কিছুনা, আমাকে বের করে দাও।
দাঁড়াও দরজা টা খুলে আমার হাত ধরে সরাসরি বের হতে লাগলো।
আমি অবাক হয়ে প্রিয়া কে বললাম এই কেউ দেখে ফেলবে তো ।
– সমস্যা নাই এখন তো আর রাত নয়। প্রিয়া আমাকে টেনে ওর আম্মুর কাছে নিয়ে গেলো। আম্মু নাস্তা রেডি করেছো।
প্রিয়ার আম্মু আমাকে দেখে আরে বাবা তুমি।
আন্টি আসসালামু আলাইকুম।
ভালো আছো বাবা। জি আন্টি ভালো আছি।
প্রিয়ার আব্বু অন্যরুম থেকে বলল, কে আসছে রে প্রিয়া, বলতে বলতে কাছে এলো।
আমাকে দেখে টাস্কি খেয়ে গেলো। এই তুমি সেই ছেলেটি না, গতকাল আমার বাড়ির পাশে বসে পড়ছিলো।
– জি আংকেল আপনার কথা ঠিক বুঝলাম না।
প্রিয়ার আম্মু বলল, এই তুমি কাকে কি বলছো ।
ও প্রিয়ার বন্ধু।
– বন্ধু তা বুঝলাম, গতকাল এরে আমি দেখেছি।
– ও তুমি ভুল দেখেছো। আমি সব শুনছি আর আল্লাহ আল্লাহ করছি।
যাই হোক অবশেষে প্রিয়ার আম্মু বলল, যাও বাবা টেবিলে গিয়ে বসো নাস্তা নিয়ে আসছি। প্রিয়া আমাকে নিয়ে নাস্তার টেবিলে গেলো। খাওয়া শেষে প্রিয়া বলল, আব্বু ওর ও আজ পরিক্ষা ও আমাদের সাথে যাবে।
বাহিরে এলাম সবাই প্রিয়াকে বললাম আমার ব্যাগটা তোমার ঘরে আছো নিয়ে আসো। প্রিয়া দৌড়ে ব্যাগ টি নিয়ে এলো। প্রিয়া আমি ও প্রিয়ার বাবা এক সাথে পরিক্ষার সেন্টারের দিকে রওয়ানা হলাম। হল সেন্টারে গিয়ে দেখি মেঘলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখা মাত্রই ছুটে এলো।

কাছে এসে হাতটি ধরে ভাইয়া তুমি কেমন আছো। মেঘলার দিকে তাকিয়ে দেখি চোখ পানিতে টলমল করছে।

আব্বু না হয় রাগ করে বলেছে তুমি বের হয়ে যাও। তাই বলে তুমি চলে যাবে । তুমি চলে যাওয়ার পর আমি কত কেদেছি জানো। কোথায় ছিলে রাতে।
পাশে ছিলো প্রিয়া, প্রিয়া চটকরে বলে দিলো । আমার সাথে আমার রুমে ছিলো। মেঘলার প্রিয়ার দিকে চোখ বড় করে তাকালো ।।
এমন সময় পরিক্ষা শুরু হওয়ার ঘন্টা বেজে উঠলো। সবাই যে যার মত ছুটে রুমে যেতে লাগলো।
এই মেঘলা চল, প্রিয়া চলো। রুমের দিকে যেতে লাগলাম, মেঘলা হাত টি টেনে ধরলো ভাইয়া দাঁড়াও।
– পরিক্ষা শেষে আমার সাথে দেখা করবা।
– আচ্ছা, চল তাড়াতাড়ি, খাতা দেয়া মনে হয় শুরু হইছে।
হল রুমে ডুকে গেলাম। খুব ভাল ভাবে পরিক্ষা দিলাম। পরিক্ষা শেষে স্যার কে খাতা জমা দিলাম, সামনে পিছনে তাকালাম মেঘলা নেই। তাহলে কি মেঘলা আমার আগেই বেড়িয়েছে। প্রশ্নটি দেখতে দেখতে বেরিয়ে এলাম, বাহিরে এসে দেখে মেঘলা দাঁড়িয়ে আছে।
কিরে পরিক্ষা তো ভালোই দিয়েছিস তাই না। আগেই বেরিয়েছিস।
– না বেশি ভালো হয়নি (মেঘলা)
তাহলে আগেই বের হইছিস যে।
– তোমার জন্য। চল বাসায় চলো।
– আমার কি যাওয়া ঠিক হবে। যদি চাচা ।
– আব্বু কিছুই বলবেনা। আব্বু আরো তোমাকে খুজছে।
এই রানা পরিক্ষা কেমন হলো(প্রিয়া)
– হুম খুব ভালো হইছে তোমার?
– ভালো হইছে। বাসায় যাবা না ।
– হুম।
এই ভাইয়া চলো না পরে কথা বলিও। (মেঘলা)
মেঘলা আমার কাধের নিচে হাত ডুকাইয়া বলল, চলো তো,
প্রিয়া কাল দেখা হবে।
মেঘলার সাথে চাচা বাড়ি মানে জমের বাড়ি গেলাম।
পৌছে ফ্রেশ হলাম। আন্টি খাবার দিলেন। খাওয়া শেষে নিজেত রুমে গিয়া একটু কাত হলাম। খুব ঘুম পাচ্ছে।
মেঘলা এসে ভাইয়া কি করো।
– এইখানে আসলি কেন?
– তোমার সাথে গল্প করতে আসলাম।
মেঘলা খুব কাছে এসে, ভাইয়া আমার মাথার চুল গুলো এলোমেলো করতে লাগলো।
– এই মেঘলা এই খান থেকে তুই যা প্লিজ।

ভাইয়া তোমাকে ছাড়া আমার কিচ্ছু ভালো লাগেনা।
– প্লিজ যানা পরে কথা বলব।
– আসলে তুমি একদিনে বদলে গেছো । সত্য করে বলতো প্রিয়া যে পরিক্ষার হলে বলল সেটা কি সত্য।
– মিথ্যা হওয়ার কি আছে,
– কি তুমি সেদিন প্রিয়ার সাথে ছিলে, ছি -ছি-ছি মেয়েটি কি বাজে একটি ছেলের সাথে কিভাবে রাত কাটালো।
– একটি ছেলের সাথে থাকলেই কি মেয়েটি বাজে হয়।
– জি হ্যা।
– জি না হয়না, হয়ত সমাজের চোখে খারাপ হবে, কিন্তু সত্য বলতে যদি ও একরুমে ছিলাম, কিন্তু দুজন দু প্রান্তে বুজছো এখন।
– আমি তো আর দেখিনি (মুখ অন্যদিক করে ফিস ফিস করে মেঘলা বলল)
– এ কি বললি,
– কই কিছু না তো।
– আচ্ছা আমি যদি আজ তোরে বলি তুই আমার সাথে এক বিছানায় থাকবি। তুই কি থাকবি ।
– হুম অবস্যই থাকবো ।
– তোমার বেলায় শোলো আনা প্রিয়ার বেলায় কি।
– আমি তোমাকে ভালোবাসি, আর তোমাকেই আমি বিয়ে করবো ।
– যদি আমি রাত কাটানোর পর বলি আমি বিয়ে করবো না তখন।
– সেটা তুমি বলবেই না, কারন আমি জানি তুমি ও আমাকে ভালোবাসো । সেই বিশ্বাস আমার আছে।

রানা মেঘলার কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে যায়, মেঘলাকে বুকে টেনে নেয়। মেঘলা কখনো আমাকে ভুলে যাসনা। নয়ত আমি কিন্তু খুব কষ্ট পাবো।
-কখনো যাবোনা, তবে ভাইয়া তুমি কিন্তু প্রিয়ার সাথে কথা বলোনা কোনদিন। আমার খুব খারাপ লাগে।
– ভাইয়া আমি এখন যাই।
মেঘলা চলে যায়।

একমাস অতিবাহিত হওয়ার পর পরিক্ষা শেষ হয়। আজ দুপুর বারোটাই রেজাল্ট, খুব টেনশন করছি, কখন যে রেজাল্ট হবে, আর কি যে হবে। একমাত্র উপড়ওয়ালা জানে।

রুমেই ছিলাম শুয়ে, যাই দেখি একটু মেঘলার মুখ খানি দেখে আসি, মনে যদি তৃপ্তি আসে।

রানা রুম থেকে বেরিয়ে মেঘলার রুমের দরজার কাছে আড়াল করে মেঘলাকে খুজতে থাকে, মেঘলা রুমের ভিতরে কি যেনো লিখছিলো।

মেঘলার মা রানা কে দেখে বলল-

কি ব্যাপার রানা, এখানে কি করছো যাও ভেতরে যাও।
জি আন্টি যাচ্ছি। রানা মেঘলার রুমে গিয়ে পিছন থেকে জাপ্টে ধরে। মেঘলা বলে এই ভাইয়া কেউ দেখে ফেলবে।
রানা ছেড়ে দেই, মেঘলার আব্বু এসে মেঘলার রুমে প্রবেশ করে,

রানা আজ বলে তোমাদের রেজাল্ট দিবে।
জি চাচা দুপুর বারোটাই।
চাচা কি ফেরেস্থা হয়ে গেলো নাকি (রানা মনে মনে)

দুপুর বারো টা পার হয়ে গেলে রানা আর মেঘলা কোনো রেজাল্ট পেলোনা।
তারা বড্ড ফাপড়ে পড়ে গেলো। তাদের দুজনের ধারনা ফেল করেছে।

প্রিয়ার বাড়িতে লেপটপ ছিলো। প্রিয়া অনলাইনে রেজাল্ট পেয়ে রানা দের বাড়ি খুজতে খুজতে এলো।
রানার বাড়িতে ঢুকে রানা রানা বলে চিল্লান শুরু করলো।

রানার চাচা চাচী ও মেঘলা রানা সহ বেরিয়ে এলো।
রানা বলল- আরে প্রিয়া তুমি?
রেজাল্ট পাইছো? না পাইনি। তুমি পাইছো।
হুম পাইছি আমরা সবাই ভালো রেজাল্ট করেছি, তবে তুমি বেশি ভালো রেজাল্ট করেছো ।

প্রিয়ারে আন্টি ভেতরে নিয়ে গেলেন? আমাদের কে বললেন ভেতরে আসতে, ভেতরে গেলে আন্টি মিষ্টি বের করে আমাদের তিনজনের মুখে দিলেন, আমি প্রিয়া খাইলাম, কিন্তু মেঘলা খাইলো না। মেঘলার দিকে তাকালাম চেয়ে দেখি ফিকে আছে। আন্টি জোর করে খাইয়ে দিলেন মেঘলাকে।

আন্টি প্রিয়া কে বললেন মা তোমার বাড়ি কই।
– জি উত্তর পারায়।
তোমার নাম কি? বাবা কি করেন?
নাম প্রিয়া, বাবা চাকরী করেন?
– মা তুমি দেখতে খুব সুন্দর।

আন্টি আসতে করে আংকেল কে বললেন? রানার সাথে প্রিয়ার বেশ মানাবে কি বলো।
প্রিয়া শুনে মুচকি হাসি দিলো। আর মেঘলা রাগ করে সেখান থেকে চলে গেলো।

আমি উঠে মেঘলার পিছু পিছু গেলাম, মেঘলার রুমে গিয়ে হাত টি চেপে ধরে বললাম-
কি হয়েছে ময়না পাখি এত রাগ কিসের চলে আসলে কেন?
– মেঘলার চোখের পানি ছল ছল করছে,, মেঘলা বলল- খুব মজা পাচ্ছ তাই না।
– কিসের মজা তোমার পিতা যতই বলুক না কেন? আমি যে মেঘলা নামের একজন কে ভালোবাসি।

রানা মেঘলাকে নিয়ে এদিকে আয় তো ( চাচা)
এই তোমার জম বাবা ডাকছে চলো-
– আমি যাবোনা তুমি যাও?
মেঘলাকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে বললাম, এই চলোনা, রাগ করলে আমি ও কিন্তু রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবো।
মেঘলা মুখের দিকে তাকালো, হাত টি ধরে এই রুমে নিয়ে এলাম।

মনির সাহেব বাড়ি আছেন?
চাচা বাহিরে স্য্যার আপনি আমার বাড়িতে।
– আসতে কি বারন করছেন?
প্রিয়াকে বললাম দেখতো কে বাহিরে স্যারের কন্ঠের মত লাগছে।
প্রিয়া বাহিরে এসে, আসসালামু আলাইকুম স্যার আপনি।
– প্রিয়া তুমি এখানে, যে
– স্যার রানার কাছে আসছিলাম।
-স্যার ভেতরে আসুন (চাচা)
স্যার বসুন।
এই মেঘলা মা চা নাস্তার ব্যাবস্তা করো। স্যারকে আগে মিষ্টি মুখ করাও।
– রানা মেঘলা তো খুব ভালো রেজাল্ট করেছে কোথায় ভর্তি করাবেন বলে ভাবছেন?
চাচা বললেন- কোথায় ভর্তি করালে ভালো হয়।
দুজন কেই শহরে পাঠিয়ে দিন। ছেলে মেয়েদের মানুশের মত মানুষ করতে চাইলে তাদের পিছনে টাকা খরচ করতে হবে, ভয় করলে চলবেনা।
– দেখি করা যায়।
স্যার আমার মেয়েকে শহরে পাঠাবো আর রানাকে গ্রামের কলেজেই ভর্তি করিয়ে দিব।
– একি বলছেন- রানা তো মেঘলার চেয়ে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট রানাকে না দিয়ে মেঘলাকে দিবেন?
– জি স্যার আমার বড্ড আসা মেয়েকে ডক্টর বানানো।

ঠিক আছে, আমি এখন আসি। রানা ভালো থাকো।
হুম স্যার আপনি ও ভালো থাকবেন।
স্যার চলে গেলো, চাচা মেঘলাকে বললেন? দু দিন পর তোমাকে শহরে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করিয়ে দিব।
– না আব্বু আমি যাবোনা।
আমিও রানার সাথে গ্রামের কলেজে ভর্তি হবো।
না তোকে শহরেই করাবো । শহরে থাকবি ভালো করে পড়বি। মানুশের মত মানুষ হবি । গ্রামে কি আছে।

আংকেল আন্টি আমি এখন যাই। ( প্রিয়া)
হুম মা যাও আবার আসিও! (আন্টি)
প্রিয়া ঘর থেকে বেরিয়ে এলোলো আমিও ঘর থেকে বেরুলাম, মেঘলার বসা থেকে উঠে দরজার আড়ালে দাড়ালো।
আমি প্রিয়ার কাছে গিয়ে বললাম, তুমি কোথায় ভর্তি হবে।
প্রিয়া দরজার দিকে তাকালো। মেঘলাকে দেখে আসতে করে বলল, তুমি যেখানেই যাবে আমি ও সেখানেই হবো।
প্রিয়ার কথা শুনে আমিও পিছনে চেয়ে দেখি মেঘলা দাঁড়িয়ে আছে, প্রিয়াকে বলল, তুমি এখন যাও।
প্রিয়া বলল, আগামীকাল সকালে আমার সাথে দেখা করিও আমাদের পুকুর পারে।

আমি আসতে করে বললাম, ওকে

প্রিয়া চলে গেলে নিজের রুমে গেলাম।
মাথা টা টগবগ করছে, এই সালার চাচা যে নাছর বান্দা মেঘলাকে যে শহরে পাঠাবে এটা নিশ্চিত। থাকুম কেমনে আমি ওরে ছাড়া।
যত্নে গড়া ভালোবাসা কি নিঃশেষ হয়ে যাবে আমার। আমি কি করবো এখন, আজ আমার মা বাবাক খুব মন পড়ছে। আজ যদি আমার মা বাবা বেচে থাকত কতই না খুশি হত। মা গো তুমি যদি আজ আমার পাশে থাকতা আগেই বলতা আমিও তোমাকে শহরে ভর্তি করিয়ে দিব। আজ আমার কেউ নেই, একজন আছে সেও যদি চলে যায় আমি কার সাথে গল্প করবো। চোখ জলে ভিজে যাচ্ছে তুমি কেমন আছো মা। আমার জন্য দোয়া করিও আমি যেনো মানুষের মত মানুষ হতে পারি।

মেঘলা শহরে চলে গেলে আমি কি সেই আগের মেঘলাকে খুজে পাবো। মনে হয় না, শহরের কলেজে ভর্তি হবে, আমার চেয়ে আর ও কত হ্যান্ডসাম পোলা আছে তাদের ভালোবাসায় জরিয়ে যাবে।

ভাইয়া ভেতরে আসবো। (মেঘলা)
ভেতরে আসতে কখনো অনুমতি লাগেনি আজ অনুমিত নিচ্ছিস।
– হঠাৎ করে এসে পড়েছি তো তাই। কি করছো না করছ তাই আর কি বললাম।

হায়রে ভালোবাসা যাকে বুকে জড়িয়ে আদর করি, মুখে চুমো খাই, কপালে চুমো খাই বুকে যার ওড়না থাকেনা আমার ঘরে এলে, আর সেই আজব প্রশ্ন করছে।

ভাইয়া তুমি কাদছো কেনো?
কই না তো? কাদবো কেনো?
ভাইয়া আব্বু আমাকে শহরে পাঠাবে, প্লিজ তুমি আব্বুকে বুঝাও না আমি শহরে যাবোনা।
– কেন যাবিনা, ভালো রেজাল্ট করেছিস, বড় হবি এটাই তো আমি চাই।
– আমি জানি এটা তোমার মনের কথা নয়।
আমি তোমাকে নিয়ে আগামীকাল পালাবো। কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করে ঢাকার বাহিরে চলে যাবো।
বাবার তহবিল থেকে আমি টাকা চুরি করবো অনেক গুলা।

আসলে এই পাগলি হয়ে গেছেন। আপনারাই বলুন, এই ছোট্ট ভালোবাসা কদিন টিকবে টাকা টা ফুরালে ভালোবাসা তো জানালা দিয়ে পালাবে। পরে ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে মা বাবার পায়ে ধরে বলবে মা আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে মাপ করে দাও।

মেঘলা মুখে বললেই তাহা হয়না কথায় আছে না ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না।
পালিয়ে বিয়ে করলেই শখ মিটবেনা। সব কিছু ভেবে চিনতে করতে হবে।

এত কিছু বুঝিনা, আগামীকাল ভোর পাচটায় তোমাকে নিয়ে পালাবো এটাই ফাইনাল।
আমি যাই।
মেঘলা রুমে থেকে বের হতেই বললাম, বেশি পাগলামো করিস না।
– আমি যা বলছি তাই, সকালে রেডি থাকবা। গেলাম আমি…

আচ্ছা টেনশনে পরে গেলাম দেখি। এই মেয়েটিকে নিয়ে যদি আমি পালায় তাহলে কি অবস্থা হবে আমাদের। কোথায় যাবো, কি খাওয়াবো। আর যদি বাইসাস ফিরে আসি তাহলে আমাদের যে পিটাবেনা এটা নিশ্চিত।

কি করে যে বোঝায় ওরে।
রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। যাই একটু প্রিয়ার সাথে প্রেম করে আসি। প্রিয়ার বাড়ি পৌছে সরাসরি প্রিয়ার বাড়ি ঢুকলাম।

বাবা তুমি?
হ্যা আন্টি বাজার থেকে ফিরছিলাম তাই ভাবলাম প্রিয়ার সাথে দেখা করে যাই।
– তুমি বসো আমি প্রিয়াকে ডেকে দিচ্ছি। প্রিয়া এইমাত্র মার্কেট থেকে ফিরলো।
আমি বসে গেলাম। প্রিয়ার আম্মু জোরে জোরে প্রিয়া এই প্রিয়া..আ।
– জি আম্মু আসছি।
প্রিয়ার আম্মু প্রিয়ার কাছে গিয়ে, এই রানা এসেছে,
– কি রানা এসেছে বসতে বলো আমি এক্ষুনি আসছি।
প্রিয়া আমার নাম শুনে কই আর থাকে, কই মাছের মত লাফালাফি করে দৌড়ে এলো।

রানা কেমন আছো।
আমি আর কেমন থাকবো গরীব মানুষ বলে কথা।
– চা খাবা।
– না চা খাওয়ার এখনো বয়স হয়নি ।
– চা খাওয়ার বয়স লাগে বুঝি।
– হুম অবস্যই। আমি ছোট মানুষ না।
– চলো পুকুর পাড়ে গিয়ে বসি।
হুম চলো।

আল্লাহ জানে পুকুর পাড়ে বসে আবার আজকে কে দেখে ফেলে কি ভাবে। একবার তো অঘটন ঘটছে।

পুকুর পারে গিয়ে। বসলাম দুজন খুব কাছাকাছি।
বসতে না বসতেই প্রিয়া বলল, তুমি একটু বসো। আমি আসছি । কই যাবা আবার তুমি।

– আরে বসো না, আমি যাবো আর আসবো।
কি আর করা বসে গেলাম। প্রিয়া দৌড়ে বাড়িতে ঢুকে হাতে করে কি যেনো নিয়ে এলো। দেখছি একটা বক্স।
কাছে আসলে বললাম, এগুলো কি মিষ্টি।

কথা শুনে প্রিয়া হেসে, দিলো। প্রিয়ার হাসিটি কিন্তু অসাধারণ, হাসলেই গালে টোল পড়ে। ধুর এসব ভাবা যাবেনা, আমার মেঘলা আছে, আজ রাতে মেঘলাকে গিয়ে বলবো তুমি একটু হাসো তো আমি দেখছি।

এই রানা কি ভাবছো?
– কই কিছুনা তো।
– তাহলে?
তাহলে কি?
– চোখ দুটি বন্ধ করো।
– একটি বন্ধ করলে হয়না।
– জি না দুটোই করে।

কি আর করা এই সন্ধাবেলা চোখ দুটি বন্ধ করলাম।
প্রিয়া বক্স টা খুলছে শব্দ পাচ্ছি। এই প্রিয়া আর কতক্ষণ।
– এই তো দাঁড়াও। হ্যা এখন চোখ খুলো।
– চোখ খুলে দেখি। মোবাইল।
– কার ফোন এটা তোমার।
– হুম আমার কিন্তু এখন তোমাকে এটা আমি দিব।
– না আমি নিবোনা।
– নিবানা মানে আজকেই আমি তোমার জন্য কিনে এনেছি। তোমার একটা আমার একটা।
– এটা নেয়া যাবেনা, মেঘলা দেখলে বকবে আমি।
– বকার কি আছে আমি তোমাকে বন্ধু হিসেবে গিফট দিচ্ছি নাও বলছি।

হাত টি এগিয়ে দিলে প্রিয়া ফোন টি তুলে দিল। ফোন টি নিলাম। আবার প্রিয়া বলল আবার হাত বাড়িয়ে দাও।
হাত বাড়ালে প্রিয়া আমার হাত টি শক্ত করে ধরে বলল।
– রানা আই লাভ ইউ।
– আই লাভ ইউ বন্ধু
এইভাবে বলছো কেনো বলো আই লাভ ইউ।
– জিনা বলতে পারুম না।
– রানা আমি এখন যাই সন্ধ্যা হয়ে আসছে। নয়ত আম্মু মাইন্ড করবে।
– ওকে যাও।
– আমি কিন্তু রাতে তোমাকে ফোন করবো।
– আইচ্ছা কইরো।

প্রিয়া চলে গেলো আমি আর কি করি। আমি ও আমার বাড়িতে গেলাম।

চাচা দেখে কি রে ফোন কই পাইলি ।
ঐ যে গতকাল যে মেয়েটা আসছিলো না, প্রিয়া নাম, ঐ আমাকে গিফট করেছে।

আচ্ছা শোন তোর নাম্বার টি দে আর আগামীকাল সকাল ৯ টায় মেঘলাকে নিয়ে বাজারে আসিস। ওরে শহরে গিয়ে ভর্তি করাবো।

– মুখের উপড়ে কিছু আর বলার সাহস পেলাম না।
– ঠিক আছে চাচা।
রাত ৯ টা বাজলে মেঘলা এসে। ভাইয়া খেতে আসো।
যাচ্ছি যা।
মেঘলার মন টা খুব খারাপ।
খাবার টেবিলে গিয়ে বসলাম।
খাওয়া শেষে বেড রুমে গেলাম, যাওয়ার আগে মেঘলাকে ইশারায় আমার রুমে আসতে বললাম।

ওহ নো। রাত এগোরোটা বেজে যাচ্ছে মেঘলা এখনো আসছে না কেনো। মেঘলা কি তাহলে ঘুমিয়ে গেলো। না মেঘলা কে ইশারায় ডেকেই আসলাম।
– ভাইয়া,
এই ভাইয়া ভাইয়া করতেছিস এতক্ষনে আসার সময় হলো। এখন ক’টা বাজে দেখেছিস। তোর জম আব্বা জান জানলে ১২ টা বাজাবে।
– আমি ওটাই চাই। তোমাকে ছাড়া আমি আর এক মুহুর্ত থাকতে পারছিনা। আমাকে একটু তোমার বুকে টেনে নিবা।
মেঘলার দিকে তাকিয়ে বুকে টেনে নিলাম। কিছুক্ষন ধরে থাকার পর। ছেড়ে দিয়ে দুহাত দিয়ে মুখ ধরে বললাম-
– সকাল হলে চাচা তোকে নিয়ে যাইতে বলছে, তোরে নাকি শহরে ভর্তি করিয়ে দিবে।
– আমি যাবোনা, আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। আমি মরে যাবো।
– মেঘলা তুই কি আমাকে সত্যি ভালোবাসিস।
– হুম ভাইয়া অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি।
– তাহলে তুই চলে যা।
বলার সাথে সাথে মেঘলা কেদে কেদে তুমি আমাকে এই কথা বলতে পারলে, তুমি প্রিয়ারে ভালোবাসো না।
– না রে আমি তোকেই ভালোবাসি।
– তুই যদি না যাস, চাচা আমাকে দোষারোপ করবে।
– আমাকে তুমি দূরে ঠেলে দিচ্ছ। আমি বলছি না যাবো না যাবোনা, সকালেই আমি তোমাকে নিয়ে পালাবো। – -আমি পালোবানা না আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

মেঘলা আর কিছু বলছে না, মাথা নিচু করে শুধু উু উু করে কাঁদছে, কাঁদতে কাদতে বেরিয়ে গেলো।

সেদিন সারারাত আমার ঘুম ধরেনি। মেঘলার কথা ভাবতে ভাবতে ভাবতে।

সকাল হলে পাখির কিচির মিচির এ ঘুম ভেংগে গেলো।
আন্টি প্রিয়া কে রেডি করিয়ে আমার কাছে নিয়ে এলো।
মেঘলা কাছে এসে, ভাইয়া আমি যাবোনা। প্লিজ তুমি আম্মুকে বুঝাই বলো।
মেঘলা খুব কাদছে আবার আন্টিকে জড়িয়ে ধরে মা গো আমি যাবোনা। আমি থাকতে পারবোনা তোমাকে ছাড়া, তুমি আব্বুকে ফোন দিয়ে বলনা, মেঘলা যাইতে চাইছে না।
– না রে তোর আব্বুর মেজাজ ভালো না।
আমি মাথা নিচু করে আছি । আমি কাদতে পারছিনা । কিন্তু আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে, আমার মেঘলা আমাকে রেখে চলে যাচ্ছে।

মোবাইলে ফোন এলো রিসিভ করলাম। চাচা ফোন করেছে।

রানা মেঘলা কি রেডি হয়েছে।
– হ্যা হয়েছে ।
তাহলে দেরি করিস না তাড়াতাড়ি ওকে নিয়ে আয়।
মেঘলাকে ব্যাগ নিয়ে বাড়ি থেকে রাস্তায় এলাম। মেঘলা ওর আম্মুর সাথে পিছু পিছু এলো।

একটি রিক্সা ভাড়া করে দুজনে উঠলাম। কিছুদুর যাওয়ার পর মেঘলার দিকে তাকিয়ে দেখি মেঘলা কাদছে। বাম হাতটি মেঘলার কমরে ধরে বললাম, কাদছিস কেন? দেখ তুই যদি এভাবে কাদিস আমি কিন্তু বাড়ি থেকে চলে যাবো। আর কোনদিন আসব না।

– মেঘলা কিছু বলছে না। চুপচাপ। বাজারে গিয়ে পৌছিলে, চাচা এসে একটি টিকিট আমার হাতে ধরে দিয়ে বললেন, যা তুই মেঘলাকে ওর সিটে বসে দিয়ে আই। আমি আসতেছি।

চাচা একটা কথা বললাম মেঘলা বলছিলো? ওরে একটি ফোন কিনে দিতেন।
– ঠিক আছে আমি আসার পথে ওরে ফোন কিনে দিয়ে আসবো।

এক হাতে মেঘলার ব্যাগ অন্য হাত ধরে ট্রেনের কাছে গেলাম। ট্রেনে উঠে মেঘলার কাছে বসলাম।

মেঘলা ওর মাথাটি আমারে ঘারে রাখলো। আর হাত টি দিয়ে আমার হাত চেপে ধরলো। মেঘলা বলল-
ভাইয়া, আমাকে ভুলে যেওনা। আর প্রিয়ার সাথে বেশি দেখা করোনা। নয়ত তোমার বিপদ হতে পারে।

আমি মাথা নিচু করে সব শুনছি। এবার আমার চোখে জল এসে গেছে, জল আটকাতে না পেরে প্রিয়ার হাতে এক ফোটা পড়ে গেলো।

মেঘলা জল দেখে মাথাটা ঘাড় থেকে সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ভাইয়া বলে কেদে ফেললো। আমাকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে বলতে লাগলো আমি যাবোনা।

কথা টি বলতেই চাচা এলো।
গাড়ির হরেন বেজে উঠলো…

চাচা বললো, রানা নেমে বাসায় যা, গাড়ি ছেড়ে দিবে।
গাড়ি থেকে নেমে আবারো জানালার কাছে গেলাম…

কাছে গিয়ে প্রিয়ার হাত টি ধরতেই গাড়ি ধীরে ধীরে ছেড়ে দিলো..

যতই দূরে যাচ্ছে মেঘলার মুখ খানি সূর্যের মত ডুবে যাচ্ছে…

মেঘলা চলে যাওয়ার পর রানা বাড়ি ফিরে আসে। বাড়ি ফিরে রানা প্রথম রাতেই মেঘলাকে খুব মিস করতে থাকে। মেঘলার প্রতিচ্ছবি রানার চোখের সামনে ঘুরে আর রানা অঝোরে চোখের জল ফেলে।

রাত যখন ১০ টা বাজে তখন রানার মোবাইলে একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে। রানার রিসিভ করে অপর প্রান্ত থেকে ভেজা গলায় আওয়াজ আসে।
ভাইয়া-

রানা চমকে উঠে বলে মেঘলা
– হু ভাইয়া কেমন আছো?
ভালো নাই রে তোরে খুব মনে পড়ছে
মেঘলা রানার কথা শুনেই কেদে ফেলে।
রানা বলে- ঐ পাগলি কাদছিস কেন?
ভাইয়া তোমারে ছাড়া আমার এক মুহুর্ত সময় কাটছে না।

রানা মেঘলার কথা শুনে দুর্বল হয়ে পড়ে লাইন টি কেটে ফোন অফ করে দেয়।

এইভাবে সেকেন্ড মিনিট ঘন্টা দিন সপ্তাহ মাস পার হতে থাকে । প্রতি রাতেই তাদের কথা হয়, সারাদিন কে কি করে সব জমিয়ে রেখে রাতের বেলা আদান প্রদান হয়।

একদিন বিকাল বেলা প্রিয়া রানা কে খবর পাঠায় তার বাড়ি আসার জন্য, রানা প্রিয়ার কাছে গেলে প্রিয়া বলে-

তুমি যদি রাজি হও আমি তোমার বউ হতে চাই, তোমার আর আমার বিষয় আমি আমার মা বাবা কে বলেছি।

রানা কোন কিছু না বলে বাড়ি চলে আসে। প্রতিদিনের মতো
রাত্রে আবারো মেঘলার সাথে রানা কথা শুরু। বেশ কিছুক্ষণ ধরে কথা বলায় রানা চাচা সন্দেহ করে বসে।
রানার হাত থেকে ফোন টি কেড়ে নিয়ে নিজের কানে ধরে।

অপর প্রান্তে থেকে মেঘলার আওয়াজ আসে, ভাইয়া প্লিজ কথা বলো, তুমি কথা না বললে আমি কিন্তু ভিষন রাগ করবো।

মেঘলার বাবার বুঝতে আর বাকি থাকেনা যে এটা মেঘলা কথা বলছে ,
বুজতে পেরে রানার ফোনটি মেঘলার বাবা নিয়ে যান।

তারপর থেকে আর তাদের কথা হয়না । দুজন দুজন খুব ভেংগে পড়ে।

কিন্তু তাদের করার কিচ্ছু থাকেনা।
পায়ে যদি কাটা বিধে ব্যাথা কিন্তু থাকে সহজেই ঘুম ধরতে চায়না, কিন্তু ঠিকই ঘুম ধরে যায়।

ঠিক তেমনই মেঘলার আর রানার ভালোবাসা।

দীর্ঘ ২ বছর এভাবেই অতিবাহিত হয়ে, আর অন্যদিকে প্রিয়া ও রানাকে পাগলের মতো ভালোবাসে।

রানা প্রিয়াকে ভালোবাসেনা এটা সত্য কিন্তু মাঝে মাঝে প্রিয়ার সাথে সময় কাটানো গল্প করা মজা করা প্রিয়ার কাছে যেনো ইহা ভালোবাসায় রুপান্তরিত।

প্রিয়ার যখন রানার সাথে দেখা করে, প্রিয়ার আব্বু আম্মু দেখে ও না দেখার ভান করে।

কারন তারা জানে প্রিয়া রানাকে ভালোবাসে।

মেঘলার সাথে রানার যোগাযোগ না থাকায় মেঘলা দিমে দিনে পরিবর্তন হতে থাকে। আর রানা মেঘলার প্রতি আসক্ত হয়ে থাকে, রানা মেঘলার প্রতিক্ষার প্রহর গুনতে থাকে।

আগামীকাল মেঘলার রেজাল্ট, রানা চাচার কাছে শুনে খুশিতে লাফালাফি করে, কখন দিন পেরিয়ে রাত হবে, রাত পেরিয়ে সকাল হবে।

রাতে খেয়ে বিছানায় শুয়ে মেঘলার কথা ভাবে, না জানি আমার মেঘলা কত সুন্দর হয়েছে, সারারাত পরিকল্পনা মনে কিভাবে কথা বলবে, ফাস্ট কি কথা বলবে, ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ে।

সকাল হলে মেঘলার জন্য রাস্তার মোরে গিয়ে বসে থাকে কখন মেঘলা আসবে।
কিন্তু মেঘলার আর দেখা পায়না।
সারাদিন কেটে যায়, তবুও মেঘলার দেখা না পায়।

মন খারাপ করে বাড়ি ফিরে। বাড়িতে এসে শুনে মেঘলা।এসেছে।।

মেঘলার আম্মুকে রানা বলে আন্টি মেঘলা কখন এসেছে?
– দুপুর দুটোয় এসেছে?
– আন্টি মেঘলা কেমন আছে? এখন কোথায়?
– মেঘলা নাকি খুবই ক্লান্ত তাই ঘুমিয়েছে।

আন্টির কাছে শুনে রানা মেঘলার রুমের দরজায় গিয়ে উকি দেয়। মেঘলা কি সুন্দর করে ঘুমিয়েছে। রানা আর মেঘলাকে ডাক না দেয়।

মেঘলার আম্মু বলে রানা বাজারে যাও তোমার চাচার কাছ থেকে বাজার করে নিয়ে আসো।
রানার মন খারাপ তবুও মনে মনে ভাবে মেঘলা ক্লান্ত হয়তো। তাই পরে হয়তো আমার সাথে কথা বলবে। খুশি মনে ব্যাগ নিয়ে বাজারে যায়।

বাজার থেকে ফিরলে দেখে মেঘলা বারান্দায় বসে আছে। রানা মেঘলাকে গিয়ে বলে, মেঘলা কেমন আছিস?
মেঘলা বলে হ্যা ভাইয়া ভালো? আপনি ভালো আছেন? বলে মেঘলা ঘরের ভেতর ঢুকে,
রানার মন টা ভিষন খারাপ হয়। যে মেঘলা আমাকে পাইলে খুশিতে নাচত। সেই মেঘলা আজ আপনি করে বলছে, আমার সাথে কথা না বলেই ভেতরে যাচ্ছে।

রানা রুমে গিয়ে একা একা কাদতে থাকে।

সত্যি মনে হয় আজ বড় একা হয়ে গেলাম দুঃখের দিনে যে আপন ছিলো, সেও বিদেশ থেকে পর হয়ে গেছে। মেঘলারে কত্ত ভালবাসতি আমারে আর সেও তুই কেমনে পালটে গেলি, শহরে থেকে শহরের মানুষদের সাথে মিশে পর হয়ে গেলি।

রানা আজ অঝরে কাদছে, বালিশ কামড়ে ধরে। আজ আর রানার কান্না কেউ শুনছে না। রানাকে শান্তনা দেয়ার ও আজ কেউ নেই।
পৃথিবীর নিয়মই বুঝি এমন, আপন করে পোষা পাখি টা আজ আর নিজের কথা শুনে না।

হঠাত করে মেঘলা রানার ঘরে ঢুকে রানাকে বলে ভাইয়া-
রানা চমকে উঠে? রানা বলে হু
মেঘলা বলে ভাইয়া ঢাকা থেকে আমার কিছু ফ্রেন্ড আসবে আগামী পরশু আপনি কি আমাকে সেদিন একটু সময় দিবেন? আসলে আমি তো মেয়ে মানুষ আপনি যদি আমার সাথে যেতেন আমি ওদের রিসিভ করে নিয়ে আসতাম।

– ঠিক আছে, তোকে সময় না দিলে কাকে সময় দিব।
Thnx vaiya. ধন্যবাদ দিয়ে মেঘলা চলে যায়।

মেঘলা আজ আর চোখের পানি দেখে ও প্রশ্ন করেনা, ভাইয়া তুমি কাদছো কেন?

রাত টা কাঁদতে কাদতে রানার পার হয়ে যায়, সকাল হলে আর রানা নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা, বার বার মেঘলার রুমে উকি দিয়ে মেঘলা কে দেখে আসে।

মেঘলা তুই এমন হইলি কেন? আমাকে না তুই কত্ত ভালোবাসতি তাহলে কি তোর কি অভিনয়ের ভালোবাসা ছিলো। না না আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা। মানুষ যুগ যুগ জনম ধরে প্রিয় মানুষের জন্যে অপেক্ষা করে, আর তুই দুই বছরেই পালল্টে গেলি।

রানার ভাবনায় কথা গুলি উকি দিচ্ছে বার বার কিন্তু মেঘলা কি আদৌ রানাকে ভালোবাসে, যদি ভালোবাসত তাহলে মেঘলা আর আগের মত রানার কাছে গিয়ে রানাকে কেনো বিরক্ত করেনা। কেনো রানা কে বলে না, ভাইয়া আই লাভ ইউ। ভাইয়া তোমাকে অনেক মিস করেছি। কেনো এসব বলছে না। রানা কি তাহলে মেঘলাকে পাবেনা। দেখা যাক কি হয় গল্পে….

রানা বার বার উকি দেয়াতে চাচার কাছে ধরা খেয়ে যায়, চাচা রানা কে বলে তুই এখানে বার বার কেনো আসছিস?
মেঘলা ঘুমিয়ে ছিলো…
রানার চাচার চেঁচামিচি তে মেঘলার ঘুম ভেংগে যায়। বিছানা থেকে উঠে বাবা কে বলে, আব্বু কি হয়েছে, এত জোরে চিৎকার করছো কেনো?
– আর বলিস না, এই রানা বার বার তোর দরজায় উকি মারছে আর চলে যাচ্ছে..!!
– ছি ছি ভাইয়া তুমি এতটা নিচে নেমে গেছো, ছি তুমি তো এমন ছিলেনা।
– মেঘলা আসলে আমি (রানা)
– মেঘলা আসলে কি হ্যা, আপনাকে বেশি আসকরা দিতে দিতে আপনি ঘাড়ে উঠে গেছেন?
রানার বুকটা ছিড়ে যাচ্ছে মেঘলার কথা শুনে, রানা মাথা নিচু করে সব শুনছে।
– আব্বু শোনো আর একবার যদি উনি এমন কাজ করে আমাকে জানাবা, ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো। যত্ত সব।
– পাশে মেঘলার আম্মু ও ছিলো, মেঘলার আম্মু মেঘলাকে বলল, এই তুই কাকে কি বলছিস, শহরে থেকে সব ভুলে গেছিস যে রানা তোকে নিজে পড়িয়েছে তাকেই তুই চিনতে পারছিনা।
– আম্মু তুমি চুপ করোতো। পড়াইছে তাই কি হয়েছে, বিনিময়ে উনি আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, আমি আব্বুকে মিথ্যে বলে টাকা নিয়ে উনাকে দিছি।

রানার মুখ আজ বন্ধ হয়ে গেছে কিছুই আজ বলার নেই রানার।

রানা ঘরে ঢুকে ঘরের দরজা লাগিয়ে ডুকরে ডুকরে কাদতে থাকে, আর বলে মেঘলারে আমাকে ভুল বুঝিস না তোর মুখ খানি দেখার জন্যই আমি বার বার উকি দিচ্ছিলাম। আর তুই আমাকে আজ ঘার ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে চাইছিস। তুই আমার চাইতে বেশি ভালোবাসতি আর তুই আজ আমাকে চিনতে পারছিস না। কি ভুল ছিলো আমার ভালোবাসায় আমি তো কোন অপরাধ করিনি। আপন মানুষ হইয়াও তুই আজ আমার বুকে তির মারলি। আমি এখন কাকে নিয়ে বাঁচবো। কাকে আমার মনের কথা গুলো বলবো। আমার যে আর আপন বলিতে কেউ রহিলো না।

রানা ঘর থেকে আবার বেরিয়ে চাচার রুমে গেলো। চাচাকে গিয়ে মিনতির স্বরে বলল-
চাচা আমার ফোন টা কি দিবেন..

রানার চাচা না দিলে চাচী ফোন টি বের করে দিলো।
রানা বাহিরে এসে মেঘলার নাম্বার টি ডিলেট করে দেয়।
রুমে ঢুকে প্রিয়া কে ফোন দেয়। প্রিয়া রিসিভ করা মাত্রই রানা হোহোহো করে কেদে উঠে।
প্রিয়া বলে, এই রানা কাঁদছ কেনো কি হয়েছে?
রানা কিছু বলেনা, শুধু কান্না আর কান্না।
-রানা বলো কি হয়েছে?
রানা বলে- প্রিয়া রে আমি আজ সর্ব হারা হয়ে গেছি। আপন মানুষ্টির কাছে আজ আমি পর হয়ে গেছি।

প্রিয়া বলল-
প্লিজ কেদোনা, আমাকে খুলে বলো কি হয়েছে?
আমি বললাম- ফোনে সব কথা বলা যাবেনা।
– ঠিক আছে তুমি আমাদের বাড়ি চলে আসো।
– না থাক তোমাকে বলে কি হবে। নিজের দুঃখের কথা কাউকে বললে আরো হাস্যকর মনে করে।
– রানা তুমি এতদিনে আমাকে এই চিনলে। আসোনা প্লিজ।
– আচ্ছা আসতেছি।
লাইন টি কেটে ঘর থেকে বের হতেই দেখি মেঘলা দাঁড়িয়ে আছে।
মেঘলার দিকে না তাকিয়ে সোজা সুজি বাড়ি থেকে বের হচ্ছি।
পিছন থেকে মেঘলা ডাক দিলো। ভাইয়া দাড়ান…
দাড়ালাম, মেঘলা কাছে এলো।
– আমি মেঘলাকে বললাম- কিছু বলবেন?
মেঘলা মাথা নিচু করে বলল- Sorry ভাইয়া ঘুমের ঘরে আপনাকে তখন অনেক কিছু বলেছি মনে কিছু করিও না।
আমি কোন কথা বললাম না, বলে কি হবে। মন টা যে আমার একদম পচে গেছে, খুব কষ্ট এই মনে।
মেঘলার কথা শেষ হলে আবার সামনের দিকে যেতে লাগলাম।
মেঘলা আবার ডাক দিল?? ভাইয়া কোথাও যাচ্ছ তুমি।
কিছু না বলে চলে গেলাম। জানেন বড্ড খারাপ লাগছে আমার মনে হয় নিজেকে শেষ করে ফেলি। কি ছিলো আর কি হলো।।

প্রিয়ার বাড়ির কাছে যাইতে না যাইতে চেয়ে দেখি প্রিয়া দাঁড়িয়ে আছে।
কাছে গেলে প্রিয়া হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে গেলেন।
বসো? কিছু খাবে?
আমি মাথা নিচু করে নারে কিচ্ছু খাবোনা।
প্রিয়া আমার মুখো মুখি হলো…
চোখে চোখ রেখে বলল, বলো এখন কি হয়েছে?
প্রিয়াকে বলার আগেই প্রিয়ার দিকে তাকাতেই আমার চোখে জল এসে গেলো।

প্রিয়া তুমি তো আমকে ভালোবাসো তাই না?
হুম বাসি অনেক অনেক বেশি।
তোমার মত আমি ও একজন কে ভালোবাসতাম, জানো আমার চাইতে সে আমাকে বেশি ভালোবাসত। কিন্তু এখন আর বাসে না।

কে সে মেঘলা”
তুমি কিভাবে জানো?
জানতে হয়না আমি আগেই বুঝে গেছি।
আমি এখন কি করবো? আমি যে ওরে খুব ভালোবাসি।
– তুমি আমাকে ভালোবাসো। ওরে ভুইলা যাও।
প্রিয়ার কথা শুনে মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেলো, রাগে বের হয়ে এলাম,
এই রানা কই যাও। জাহান্নামে যাই।

রাগে হর হর করে চলে এলাম। ধুর কেউ ভালোনা, যার যার সার্থ তাই তাই।

কিছুদুর এসে চুপ করে বসে, পড়লাম,

ফোন টা কেপে উঠলো…চেয়ে দেখি চাচা ফোন করেছে রিসিভ করলাম…হ্যালো।
রানা তুই কোথায় মেঘলা তোকে ডাকছে।
– আচ্ছা।
বাড়িতে ফিরে আসার পর, মেঘলা ঘরে এলো, ভাইয়া ফ্রি আছো,?
হুম আছি, কিছু বলবেন?
ভাইয়া আমার কিছু ফ্রেন্ড আসছে, যদি আমার সাথে যাইতে, খুব খুশি হতাম।
ঠিক আছে রেডি হয়ে আসুন?
আমি রেডি আছি, আপনি?
বাহিরে দাড়ান, আমি আসছি
মেঘলা বাহিরে গেলো।

মেঘলা রে মানুষ যে কেমনে পালটে এখনো বুঝে উঠতে পারছিনা। বড় কষ্ট হচ্ছে তোরে যদি দেখাইতে পারতাম বুকটা ছিড়ে বুঝতি আমার কষ্ট টা।

ড্রেস কি আর চেঞ্জ করবো, ওমনে বাহিরে এলাম।
মেঘলা ওর বাবার কাছে গিয়ে ৫০০ শত টাকা নিয়ে আমাকে সহ বাহিরে নিয়ে এলেন।

এখন আর মেঘলার সাথে গেলেও চাচা আমার কিছু বলেনা, কেনো জানেন? চাচা আমার জানে, আমার মেয়ে এখখান, ছাত্রী।

বাহিরে এসে রিক্সা ভাড়া করলেন? রিক্সায় উঠলাম, দুজনে। কেউ কিছু বলছিনা চুপচাপ। কিছুদুর যাওয়ার মেঘলা বলল, ভাইয়া একটা কথা বলতাম, আব্বুকে বলবা না তো?.
– বলবোনা বলুন?
– আমি না একজন কে খুব ভালোবাসি, সেও আজ ঢাকা থেকে আসছে, জানো ও না অনেক স্মার্ট। ও আমাকে খুব ভালোবাসে।

মন টা বলে রিক্সা থাইকা নাইমা যাই। হায়রে আমার কপাল, সালা গরীবের কপালে কখনো সুখ সয়না।

বাজারে পৌছার পর বাস কাউন্টার এ পৌছা মাত্রই পাচজন মেয়ে পাচজন ছেলে, বাস থেকে নামলো, সব গুলোই সুন্দর, মেঘলা কে দেখা মাত্রই সবাই খুশিতে হেসে উঠলো।

কত রঙ বেরংগের একেক জনের ঢং আরো কত্ত কি।
মেঘলা আমাকে বললো..? ভাইয়া যাও ৫/৬ টা রিক্সা নিয়ে আসো। কি আর করা বাড়ির কাজের চাকরের মত কথা তো শুনতেই হয়। ৬ টা রিক্সা নিয়ে এলাম, মেঘলা, একটি ছেলের সাথে উঠলো, আমি এক পোলার সাথে। সবাই মজা করে যাচ্ছে আর আমি চুপ চাপ। বাড়িতে পৌছে সবাই কে গেস্ট রুমে নিয়ে যাওয়া হলো।

রুমে বসে সবাই মজা আর হইহুল্লোর। আমি ওদের কাহিনি দেখে আমি ও প্রিয়া কে ফোন দিলাম।
প্রিয়া ও এই বাড়িতে এলো…

প্রিয়াকে নিয়ে আমার রুমে গেলাম, দুজনে এই বিষয় নিয়ে গল্প করছি। এক পর্যায়ে মেঘলা ওর সব বন্ধুদের আমার রুমে নিয়ে এলো। প্রিয়াকে আমার রুমে দেখে মেঘলা অবাক হয়ে গেলো।

আরে প্রিয়া তুই, ভালো আছিস? আমি প্রিয়ার খুব কাছে ছিলাম।
হুম ভালো আছি?
এখানে কখন আসলা?
প্রিয়া বলল, আমি প্রতিদিনই আসি, তোমার ভাইয়াকে ছাড়া আমার ভালো লাগেনা।
মেঘলার এক ফ্রেন্ড বলল, ভাইয়া আপনাদের কত দিনের সম্পর্ক?
আমি বলার আগেই প্রিয়া বলল- নয় বছরের, প্রিয়ার এক বান্ধবী বলল, ভাইয়া আপনি অনেক সুইট আমার সাথেও প্রেম করবেন? আমি বললাম, একজন কেই ভালোবেসে কাদছি আর আপনি। ফান করা বাদ দিন।
ভাইয়া কাঁদছেন মানে,
আমি মেঘলার দিকে এক নজর তাকিয়ে…

যাকে ভালোবাসি আজ তাকে খুব মনে পড়ছে..
প্রিয়া বলল, রানা চলো বাহিরে যায়।
সবাই এখানে রেখে বাহিরে গিয়ে কি করবা।
– তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

ধুর আমি আনলাম এরে ডেকে যাতে মেঘলার হিংসা হয় এ বলে বাহিরে যাবে।
পরে যাবো এখন না।
গল্প করতেই মেঘলাকে যে ছেলেটি ভালোবাসে ও অন্যরুম থেকে থেকে ডাইয়েক্ট মেঘলার কাধে হাত রেখে বলতেছে জান পাখি তুমি কিন্তু আমাদের সাথে ঢাকায় যাচ্ছো, তোমাকে একলা রেখে আমরা আর যাচ্ছিনা।
মেঘলা ও ওর সাথে মিল দিয়ে না গো আসছি ক’দিন পর যাবো।
– জানো তোমাকে ছাড়া আমার কিচ্ছু সময় কাটেনা।

কি যে করি সালা আমার নায়িকা রে কেমনে করে ধরছে, কেমন ডা লাগে কন তো । মন চায় এক্ষুনি মাটিতে পুতে ফেলি।

প্লিজ আকাশ এত অধৈর্য হইওনা, আমি তো কদিন পরেই যাচ্ছি।
মেঘলা কে ছেড়ে দিয়ে আকাশ আমার কাছে এসে, ভাইয়া আপনার সাথে এখনো পরিচয় ই হয়নি। আমি আকাশ আপনি, আমি রানা,
– আপনি মেঘলার কে হন?
আমি কিচ্ছুক্ষণ পর বললাম, কেউ না।
ও আচ্ছা, আর ইনি। (প্রিয়া কে দেখিয়ে)
– ও আমার বন্ধু প্রিয়া।
আপনি কোথায় থাকেন? (আমাকে)
আমি জানিনা ভাই,
– kemon উত্তর ভাই?
এটাই উত্তর ভাই, যার ঘর নেই দুয়ার নেই, পাশে কেউ ছিলো সেও আজ নেই।
মেঘলা কথা শুনে ভন ভন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
এই মেঘলা কই যাও। (আকাশ)
– দাঁড়াও আসতেছি।
– ভাইয়া পরে কথা হবে এই বলে আকাশ ও পিছু পিছু চলে গেলো।

রানা, বাহিরে যাবা একটু?
ও হ বাহিরে গিয়ে কি হবে,
– আরে আসোই না। কি আর করা বাধ্য হয়ে বাহিরে এলাম,
কি হইছে বলো।?
– তুমি তো জানো, আমি তোমাকে ভালোবাসি।
– হুম তো।
– তুমি যদি চাও আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তোমার চাচা চাচী আর আমার বাবা মা ও রাজি আছে।
কথা গুলো শুনতেই এদিক ওদিক তাকালাম, দরজায় দেখি মেঘলা দারিয়ে আছে।

প্রিয়াকে কিছু বলার আগেই আন্টি এসে, রানা বাজারে যা, বড় মাছ কিনে আনিস, আর তোর চাচার কাছে বাজারের লিষ্ট আছে, সব কিনে তাড়াতারি চলে আয়।
চাচী প্রিয়ার দিকে চোখ পড়লে, আরে মা তুমি এখানে।
– হুম আন্টি একটু কাজ ছিলো তাই আসছিলাম। ভেতরে আসো?
না আন্টি অন্যদিন। অনেক্ষন হলো আসছি এখন বাসায় যাবো। মেঘলা দরজায় দাঁড়িয়ে সব শুনছে।
আচ্ছা মা এসো কিন্তু।

প্রিয়া চলো, তোমার সাথে গল্প করতে করতে বাজারে যাই। প্রিয়ার বাম হাত টি ধরে, ব্যাগ ডান হাতে নিয়ে পথ চলতে লাগালাম, প্রিয়া বলল, রানা বললা না তো।

কি উত্তর দিবো ভেবে পাচ্ছিনা। প্রিয়া অন্যদিন বলি আজ না।
– অন্যদিন কেনো?
– এত কথা কইতে পারুম না। অন্যদিন বলতে চাইলাম না।
– এত রাগ করছো কেন?
Sorry তুমি এখন বাড়ি যাও আগামীকাল দেখা হবে।
– না তুমি বিকালেই আমার বাড়ি আসবো।
– ওকে যাও আসবো।

প্রিয়া চলে গেলে বাজার করে বাড়ি ফিরলাম। রাতে খাবার টেবিলে সবাইকে খাবার দেয়া হলো??

সবাই খাবার খেয়ে বিছানায় গেলো।
আমি তো আমার রুমে চুপ করে আছি।
আন্টি ডাক দিলে টেবিলে গিয়ে বসলাম। খাবার খাইতেই আন্টি বলল, রানা সেদিন মেঘলার কথায় মনে কিছু করোনা ছোট মানুষ।
– আন্টি আমি কিচ্ছু মনে করিনি।
খাবারের তরকারী শেষ হলে আন্টি রান্না ঘরে চলে যায়, সেই সুযোগে মেঘলা কোথায় থেকে যেনো আমার সামনে এসে দাঁড়ায়, ভাইয়া একটা কথা বলতাম?
হুম বলেন?
তুমি আমাকে আপনি করে বলো কেনো?
বারে শহরের মানুষ তুমি করে বলতে এখন লজ্জা লাগে,
– না আর আপনি করে বলবেন না।
– কিছু বলার থাকলে বলুন?
– তুমি কি প্রিয়া রে বিয়া করবা।
– হুম করবো। ও আমাকে খুব ভালোবাসে।
– না ওরে তুমি বিয়ে করোনা, অন্য কাউকে করো।
– না ওকেই আমি করবো। আমার ও খুব ভালো লাগে।
– বললাম না করবা না, (আমাকে রেগে বলল)
আমি ও রাগ করে খাওয়া বাদ দিয়ে হাত ধুয়ে আমার রুমে গিয়ে দরজা লাগালাম।

আন্টি এসে, কিরে রানা কই গেলো।
– জানিনা, হাত ধুয়ে চলে গেলো।
– হাত ধুয়ে তো যাবেই হয়ত কিছু তুই বলেছিস, বাবা মেয়ে ছেলেটাকে শান্তি করে তোরা খাইতে ও দিবিনা।
– আমার দোষ দিচ্ছো কেনো?
– তোর দিবোনা তো কার দোষ দিব। শহরে থেকে বাদর হয়ে ঘারে চরে গেছিস তুই।

আন্টি আমার দরজায় এসে, রানা…রানা..
হু আন্টি…
খাওয়া বাদ দিয়ে আসলে যে…
আন্টি আর খাবোনা…খিদে নেই।
– রাগ করিস না খেয়ে যা।
– না আন্টি আর খাবোনা।
ভাইয়া এই রানা ভাইয়া।
মেঘলার কথা শুনে দরজা খুলে দিলাম।
– ভেতরে ঢুকে.. তুমি কি আমার উপড় রাগ করে না খেয়ে আসলা।
– না তোর উপড় রাগ করে কি হবে..
– তাহলে যে আম্মু আমাকে দোষ দিচ্ছএ।
– এমনি বলছে।।

প্লিজ আপনি এখান থেকে যান আমাকে একটু একা থাকতে দিন।
– দেখুন ঝাড়ি দিয়ে কথা বলবেন না। আমি কিন্তু পছন্দ করিনা।
– আপনি কি যাবেন?.
– না গেলে আপনি কি করবেন?
– বের করে দিবো।
– আব্বু আব্বু (চাচা আসলে)
– আব্বু তুমি ইনাকে রাত পোহালেই বাড়ি থেকে বের করে দিবেন। নয়ত আমি থাকবো না। আমাদের খায় আমাদের কেই ঝারি মারে।
– কি হইছে বলবি তো।
– কিছু হইনি তুমি রাত পোহালে দিবা কিনা?
– হুম দিবো। (মনে থাকে যেনো)
মেঘলাকে নিয়ে চাচা চলে গেলেন।

মনে হচ্ছে আমার আর কোনো আসা নেই, ভেবে ছিলাম হয়ত মেঘলাকে আবার আপন করে পাবো

সত্যি আজ খুব খারাপ লাগছে, কথায় আছে যার জন্য করি চুরি সেই কয় চোর। গরীবের কপালে ভালোবাসা কখনোই জুটেনা, নিঃস হয়ে গেলাম আমি, জানেন খুব কষ্ট হচ্ছে যত্ন করে ভালোবাসা টা তিলে তিলে শেষ হয়ে গেলো।

রানা মেঘলার জন্য আজ ডুকরে ডুকরে কাদছে, নিজের রুমে শুয়ে।
আর মেঘলা ওর বন্ধুদের সাথে হই হুল্লোর মজা করছে। কাদতে কাদতে রানা সেদিন ঘুমিয়ে পড়ে, সকাল হলে আন্টি এসে রানা কে ডেকে তুলে রানা কে বলে নাস্তা খেয়ে যা, রানা বলে আমার ক্ষিধা নেই।
মন খারাপ করিস না কারো কথায়, তোর কেউ না থাকলেও আমি আছি। তোর মা আমাকে খুব ভালোবাসত, আমাদের সংসারে অভাব অনটন হলে তোর মা আমাকে চুরি করে সাহায্য করত।

রানা ওর চাচীরর কথা শুনে কাদছে, রানার কান্না দেখে ওর চাচী কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বলছে কাদিস না। আয় আমার সাথে, রানার হাত ধরে খাবার টেবিলে নিয়ে আসে, নাস্তা দেয়, রানা কাদে আর একটু একটু করে নাস্তা মুখে নেয়।

নাস্তা শেষে রানা বাড়ি ছেড়ে দূরে কোথাও গিয়ে বসে বসে মেঘলার জন্য কাদে, আর যে রানা কখনো সিগারেট খাইনি আজ সে একটি মেয়ের জন্য একটির পর একটি সিগারেট খেতে থাকে।
রানা রাস্তার পাশেই বসে ছিলো। পুরোনো সেই স্কুলের কিছু ফ্রেন্ড রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো, রানার সিগারেট খাওয়া দেখে তারা প্রিয়া বাড়ি গিয়ে প্রিয়া কে বলে রানা রাস্তার ধারে বসে কাদছে আর সিগারেট খাচ্ছে।

প্রিয়া খবরটি পেয়ে দৌড়ে রানার কাছে ছুটে আসে, রানা কে বসা থেকে টেনে তুলে রানা উঠতে চায়না, হাউমাউ করে কাদতে থাকে,
প্রিয়া বলে আমি তোমাকে ভালোবাসি, আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসনা, কিন্তু আমি তোমাকে এভাবে তিলে তিলে শেষ হতে দিবোনা। চলো আমার সাথে।
রানা নাছর বান্দার মত বসে থাকে কোনো কথা শুনে না।

রানা প্রিয়া কথা বলতেই মেঘলা ওর বন্ধুদের নিয়ে এদিকেই ঘুরতে আসছিলো। দুজনকে এক সাথে দেখে মেঘলা প্রিয়া কে বলে,
তুমি আমার ভাইয়ার সাথে কোনদিন দেখা করবা না।
প্রিয়া হটাত এই অবাক করা কথা শুনে মেঘলাকে বলে, চুপ করো তুমি, ভাইয়া ডাকতে তোমার লজ্জা করেনা। কিসের ভাইয়া তুমি, যে ভাইয়াকে ছাড়া কিছুই বুঝোনি সেই ভাইয়া আজ তোমার পর হয়ে গেছে তাইনা।
তুমি কি বলতে চাও?
আমি কি বলছি তুমি শুনছো না, ফকিরের বেটি একজন মানুষ তিলে তিলে নিজেকে শেষ করে দিচ্ছে আর তুমি… ছি মানুষ এতটাই কি পরিবর্তন হয়।
মেঘলা রাগ সামাল দিতে না পেরে প্রিয়াকে একটা থাপ্পড় মারে। প্রিয়া থাপ্পড় খেয়ে বাড়িতে চলে যায়, যাওয়ার আগে বলে আমি আজকের রাত্রেই রানা কে বিয়ে করবো, যদি না করতে পারি আত্নহত্যা করবো।

মেঘলা ওর বন্ধুসহ রানা কে নিয়ে বাড়ি ফিরে। আর প্রিয়া বাড়িতে গিয়ে বাবার কাছে বায়না ধরে তুমি যদি রানার সাথে আজ আমার বিয়ে না দাও আমি সুইসাইড করবো।

দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলে মেঘলার বন্ধুরা সবাই ঢাকায় চলে যায়। মেঘলাকে ভালো থাকিস বলে তারা বাড়ি থেকে বিদায় নেই।

এদিকে…

প্রিয়ার বাবা মা মেয়ের কথা শুনে ভয়ে রানার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে। প্রিয়ার বাবা বলেন, আপনার যত টাকা চান আমি দিব। তবুও রানার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিন।
রানার চাচা টাকার লোভী টাকার কথা শুনে খুব খুশি হয়ে প্রস্তাব সাদরে গ্রহন করে। কিন্তু মেঘলা বলে এ বিয়ে হতে পারেনা।
ঐ মেয়ের ব্যাবহার ভালোনা। ঝগড়াটে মেয়ে, মেঘলার আম্মু মেঘলাকে ধমক দিয়ে বলে চুপ কর। তুই বলার কে? তোর চেয়ে ব্যবহার ভালো আছে।

আমি আমার রুমে বসে ছিলাম, আন্টি আমাকে ডাক দিলে, আমি তাদের কাছে আসি, আন্টি বলে রানা তুমি কি বলো, আমি মেঘলার দিকে একনজর মায়ার নজরে তাকাই তারপর ভেজা গলায় বলি, আপনারা যাহা ভালো বুঝেন।

প্রিয়া আব্বু বলে তাহলে কথা ফাইনাল, আগামীকাল আমরা বিয়ের কাজ সুসম্পুর্ন করতে চাই। চাচা হু বলে মাথা নাড়ায়।
প্রিয়ার বাবা মা মিষ্টি মুখ করে চলে যায়।
আর আমি ও উঠে নিজের রুমে চলে যাই, দরজা বন্ধ করে বিছানায় একটু কাত হই।

ঘন্টা খানেক পর প্রিয়ার ফোন আসে, রাত তখন ৮ টা হবে।
রিসিভ করলে প্রিয়া বলে, বিয়ের পর তমার বোনকে আমি শায়েস্তা করবো।

আমি কিছুই বলিনা, চুপ করে থাকি।
প্রিয়ার সাথে কথা বলা মাত্রই কে যেনো দরজায় এসে ঠক ঠক শব্দ করে, দরজা খুলে দিলে দেখি মেঘলা, অবাক হয়ে যাই আমি। মেঘলা কাছে এসে বলে ভাইয়া তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে?
আমি বলি আমার সাথে আবার কিসের কথা।
– তুমি কি সত্যি আগামীকাল প্রিয়াকে বিয়ে করছো।
মেঘলার কথা শুনে আমি মাথাটা নিচু করে বলি…

কেউ কাউকে ছাড়া যদি থাকতে পারে, আমি কেনো পারবোনা।
মেঘলা ওর হাত দিয়ে আমার মাথাটা উচু করে বলে…
প্লিজ সত্যি কি তুমি বিয়ে করছো।
আমি মেঘলার দিকে একনজর তাকিয়ে হু বলে মাথা নাড়াই,
মেঘলা আমার কথা শুনে চোখের জল ছল ছল করছে।
রাগ করে নিজের রুমে গিয়ে কাঁদছে..

একটা কথা কি জানেন? মেঘলা কেনো কাঁদছে আমি নিজেই জানিনা, মেঘলাকি তাহলে নিজের ভুল বুঝতে পেরে কাদছে সেটা ও জানিনা।
আমিও পাথর হয়ে গেছি কাদতে কাদতে চোখের জল শুকিয়ে গেছে এখন আর আমার মেঘলার জন্য একটুকু ও চোখের জল পড়েনা। কারন এই মেঘলা বহুরূপী, চেহারা পাল্টাইতে সময় লাগেনা।

দেখা যাক গল্পটি কোন দিকে যায়..

I Am ill, I’m in big trouble.
Pray for me All Guys.

যদিও আর ও কিছু লিখতাম কিন্তু অসুস্থতার কারনে লিখলাম না।।।

পৃথিবীর নিয়ম বড় অদ্ভুত ভালোবাসে একজন কে আর ঘর করে অন্যজনের সাথে, এটাই প্রকৃতির নিয়ম।

মেঘলা চলে যাওয়ার পর আমার ও কেমন জানে লাগছে জানেন, মেঘলাকে আমি খুব ভালোবাসি, কিন্তু মেঘলা আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে কেনো জানি সব কষ্ট ভুলে মনে হচ্ছে যদি আগামীকাল আমার আর মেঘলার বিয়ে হত আমি হতাম পৃথিবীর মধ্যে সেরা প্রেমিক, কিন্তু সেই সৌভাগ্য কি আমার হবে।

খুব কষ্টে হচ্ছে মেঘলার স্মৃতি গুলো আজ খুব মনে পড়ছে…খুব কাঁদছি আজ আমি, চোখে একটুকু ও ঘুম নেই, ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়, মেঘলার কথা ভাবতে ভাবতে রাত বেজে যায় তিনটা। কে যেনো দরজার কাছে এসে খুব আসতে করে টোকা দিচ্ছে, ভয় ও করছে এত রাতে খুলতে চেয়েও খুলতে মন চাইছে না। বুকে সাহস নিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম, খুলা মাত্রই মেঘলা, আপনি এত রাতে…

মেঘলা আমার মুখ চেপে ধরে বলল, আসতে কথা বলো আব্বু আম্মু শুনতে পাবে..
– তো এত রাতে আসছেন কেন?
কিছু কথা আছে আসছি । মেঘলা ঘরের দরজা লেগে দিলো। আমার পুরো শরীর থরথর করে কাপছে, যদি টের পেয়ে যায়, তাহলে যে কি হবে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা।

মেঘলা খুব কাছে এসে মুখোমুখি হয়ে, ভেজা গলায় বলল, ভাইয়া…
বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো আর বলতে লাগলো, আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ তুমি প্রিয়াকে বিয়ে করোনা, আমার খুব কষ্ট হবে, আমি কি তোমার এতই পর হয়ে গেছি, তুমি থেকে আপনি করে বলছো।

– মেঘলা মানুষের চরিত্র পাল্টাতে সময় লাগেনা, কেউ যখন কাউকে চিনতে পারেনা, তখন তাকে আপনি করেই বলতে হয়।
আমি গরীব হতে পারি তোমার মত এমন না যে কথা দিয়ে কথা রাখেনা। প্রতিটি রাত তোমার জন্য কেদেছি প্রতিটা সেকেন্ড প্রতিটা মিনিট তোমায় নিয়ে ভেবেছি আর তুমি…. প্লিজ তুমি এখান থেকে চলে যাও আমি খুশি হবো।

– পুরোনো দিনের কথা ভুলে গেলে…, তুমি না আমাকে ভালোবাসো।

– হুম ভালোবাসতাম কিন্তু এখন আর ভালোবাসিনা। যেদিন শুনলাম তুমি, অন্যকাউকে ভালোবাসো সেদিন থেকে আমি প্রিয়া কে ভালোবাসি।

– তুমি কি সত্যি তাহলে প্রিয়া কে বিয়ে করছো।
– হুম, মিথ্যা হওয়ার কিছু নাই।
– ঠিক আছে ভালো থেকে,

এই বলে মেঘলা মুখে হাত দিয়ে কাঁদতে কাদতে চলে গেলো।

আমি ও বিছানায় কাত হয়ে মেঘলাকে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেলাম, সকাল হলে মানুষের চেঁচামেচিতে ঘুম ভেংগে গেলো, বাহিরে এসে দেখি অনেক মেহমান, কিছুই বুঝলাম না চাচা যে কখন কাকে দাওয়াত করলো। পুরো বাড়ি আনন্দে ভরা সবাই যে যার মত সাজছে কিন্তু আমার মনে কোনো আনন্দ নেই, কেনো নেই আপনারা তো ভালোই জানেন।

চাচা এসে বলল, ফ্রেশ হয়ে পায়জামা পাঞ্জাবি পড়েনে,

মাথাটা হু বলে নাড়ালাম..
রুম থেকে ব্রাশ টা হাতে নিয়ে ওয়াশ রুমে গেলাম, ফ্রেশ হয়ে রুমে গেলাম, কয়েকটি মেয়ে ঘরে ঢুকলো কাউকেই চিনিনা, এসে বকবক করতে লাগ্লো। একজন বলল, এই যে লোহার পাত্তর এই নেন এগুলো তাড়াতাড়ি পড়েন, একটু মুচকি হাসি দিলাম। পাঞ্জাবী পড়ছিলাম, চোখ পড়লো দরজায় চেয়ে দেখি মেঘলা, মেঘলা কাছে এসে আমার হাতে পাঞ্জাবীর বোতাম লাগিয়ে দিলো,
লাগা শেষ হলে..
বুকের বোতাম লাগাচ্ছে আসতে আসতে সবাই চেয়ে আছে চুপ চাপ কারো মুখে কোনো কথা নাই, মেগলা যখন বোতাম লাগাচ্ছিল আমি ওর মুখের দিকে চেয়ে দেখি চোখ থেকে পানি গাল বেয়ে বেয়ে পড়ছে..

চোখের পলক ফেলছে মাঝে মাঝে আমার দিকে
বোতাম লাগা শেষে
মেঘলা আমার দিকে তাকিয়ে কাদো কাদো স্বরে বলল…
ভাইয়া তোমাকে আজ খুব স্মার্ট লাগছে..প্রিয়া তোমাকে দেখলে পাগল হয়ে যাবে…

আমি মেঘলার চোখের পানি আর কান্না ভেজা কথা শুনে কি উত্তর দিবো ভেবে পাচ্ছিনা। মাথা টা নিচু করে আছি।
ভাইয়া, আমি আজই হয়ত ঢাকায় চলে যাবো, প্রিয়ার সাথে বাসর রাতের গল্প আমাকে ফোনে শুনিও। ভাইয়া জানো আমার না আজ খুব খারাপ লাগছে..

মেঘলার চোখের পানি আমার আর সহ্য হচ্ছেনা, কি যে করি…
চোখে দুহাত দিয়ে আমি বিছানায় চুপ করে বসলাম, আমার চোখে ও পানি এসে গেছে,

এমন সময় আন্টি এসে,,, বলল, রানা তোমার সাথে একটু কথা বলতাম, আমাদের রুমে আসো তো।
মেঘলা বলল, না ভাইয়া কোনো কথা নাই, আম্মু এমনে বলছে, মেঘলা ওর আম্মুকে হাত টেনে বের হতে চাচ্ছে কিন্তু আন্টি পিছন থেকেও বার বার বলছে রানা, মেঘলার কথা তুমি শুনো না, এই রুমে আসো যা বলছি তাই করো।

কিচ্ছুপর আমার রুম থেকে আন্টিদের রুমে গেলাম, আন্টি আর প্রিয়া বসে আছে, প্রিয়া বিছানায় দুহাতের মাঝখানে দিয়ে মাথা নিচু করে আছে, কাছে গেলাম…

আন্টি বলল, রানা কিভাবে যে তোমাকে বলি…
এমন সময় ফোনটা কেপে উঠলো চেয়ে দেখি প্রিয়া রিসিভ করলাম,,,

প্রিয়া….
আমি প্রিয়া বলা মাত্রই মেঘলা মাথাটা উচু করে আমার দিকে তাকালো…
এই তোমরা কখন আসছো…(প্রিয়া)
এই তো প্রিয়া রেডি হইছি, চাচা কার ভাড়া করতে গেছে ফিরে এলেই যাবো..
আচ্ছা… রাখি বাই।

ফোন টা কেটে আন্টিকে বললাম, আন্টি….
হ্যা রানা, তুমি যে এখন কি ভাবো…
আম্মু তোমার মুখ বন্ধ করবা (মেঘলা)
এ কি হইছে কিসের মুখ বন্ধ করবে..(আমি) আন্টি বলুন…

আসলে রানা…তুমি তো…

বিঃদ্রঃ গল্পটি যে আমি লিখছি আমি বড় টেনশন করছি দুদিন ধরে। না পারছি রানার সাথে প্রিয়ার মিলন, না পারছি রানার সাথে মেঘলা। বিয়ে যে কার সাথে পড়াইয়া দেই ভেবেই পাচ্ছিনা। এই জন্য গতকাল পর্বটি দেইনি। তবুও তো টেনশন রয়েই গেলো। কি যে করি এই গল্পে…

রানা…
গতরাতে আমরা সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ি রাত তখন ১ টা বাজে, কে যেনো কাদছে কান্নার আওয়াজ শুনে আমার ঘুম ভেংগে যায়, পরে আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি মেঘলার রুম থেকে আওয়াজ আসছে, দরজা খুলে দেখি মেঘলা ডুকরে ডুকরে কাদছে…পরে মেঘলা কে বললাম কাদতেছিস কেন? মেঘলা আমাকে জড়িয়ে ধরে কেদে কেদে বলে, আম্মু…উ..উ…আমি…রানা..ভাইয়া..আ আ কে ভালোবাসি!
– কি বলছিস তুই।
– হ্যা আম্মু আমি রানা ভাইয়াকে খুব ভালোবাসি। আম্মু উ উ তুমি এ বিয়ে বন্ধ করো। আব্বুকে বলো প্লিজ।
– ঠিক আছে মা তুই এখন ঘুমা সকাল হলে তোর আব্বুকে বলবো।

পরে আমি সারারাত ঘুমাইনি মেঘলার কথা শুনে।
– আন্টির কথা শুনে আমি চুপ করে ছিলাম, কি যে বলি ভেবে পাচ্ছিনা। কিচ্ছুপর বললাম…

আন্টি আমি এখন কি করতে পারি, চাচ্চা আপনি আপনারাই তো আমার প্রিয়ার সাথে বিয়ে ঠিক করেছেন এখন যদি চাচা শুনে…
– রানা আমি ও তো বুদ্ধি খুজে পাচ্ছিনা। জানো রানা আমি তো মা মা তো জানে সন্তানের কষ্ট আমি মেঘলার মুখের দিকে তাকাতেই পারছিনা। কেদে কেদে দুচোখ ফুলিয়ে ফেলছে, আমার খুব ভয় করছে যদি কোনো অঘটন ঘটে ফেলে…

কি যে করি মেঘলার পাশে গিয়ে বসলাম, মেঘলার মাথা নিচু করে ছিলো, হাত দিয়ে মাথা টা উচু করতেই ও আমার দিকে তাকিয়ে কেদে ফেলল, ভাইয়ায়া…বলে মাথাটা আমার বুকে রাখলো। আন্টি মাথা নিচু করে আছে…

এমন সময় চাচা বাহির থেকে ঘরে আসতেই ডাক দিলো মেঘলার মা মেঘলার মা…

ডাক শুনে আমি মেঘলার মাথা টা সরিয়ে দাঁড়িয়ে যাই। চাচা ভেতরে এসে, এই রানা যা গাড়িতে গিয়ে উঠ। আর মা মেঘলা তুমি এখনো রেডি হওনি কেনো। যাও উঠো রেডি হয়ে নাও।
– আব্বু আমি যাবোনা।
– যাবিনা মানে যা রেডি হ (ধমক দিয়ে)

মেঘলা উঠে চলে যায়। আন্টি বলে মেঘলার আব্বু একটা কথা বলতাম…
– পরে শুনবো যাও রেডি হয়ে গাড়িতে বসো। দেরি করোনা, সন্ধ্যা হয়ে আসছে
আন্টি চাচার হট মেজাজ দেখে আর কিছু বলতে পারলো না…উঠে গেলো।
– যাও রানা তুমি ও গাড়িতে গিয়ে বসো।
বাহিরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম…

কিছুক্ষন পর মেঘলা রেডি হয়ে বাহিরে এলো।
মেঘলা কি সুন্দর করে সেজেছে শুধু দেখতেই ইচ্ছে করে। কিন্তু চোখে পানি লেগেই আছে।

আন্টি ও বেরিয়ে এলো। সবাই আন্টির পায়ে ছালাম করতে বলো।
নিচু হয়ে আন্টির পায়ে ছালাম করতেই মেঘলার দিকে চোখ পড়ে গেলো। মেঘলা মাথা নাড়াচ্ছে না না না।

চাচা ধমক দিয়ে কিরে সালাম কর…
সালাম করলাম, সালাম করে মেঘলাকে ইশারায় ডাকলাম, মেঘলা কাছে এলো মেঘলাকে বললাম তুই আমার সাথে পাশে বসবি। মেঘলা সামান্য একটু মাথা নাড়িয়ে হু বলল…

গাড়িতে উঠে মেঘলাকে পাশে নিলাম, বাকি সব বnddhu মেহমান পাশে। চাচা ড্রাইভার কে বললেন যাও তোমরা সামনে সাবধানে যাও, আমি পিছনের গাড়িতে আছি,

ড্রাইভার গাড়ি Start করলেন, মেঘলা আমার পাশেই ছিলো। মেঘলা বলল, ভাইয়া তোমার বুকে মাথাটা রাখি একটু অনেক দিন হলো রাখিনা। আমি আর না বলতে পারলাম না, মেঘলা আমার বুকে মাথা রেখে বলল, ভাইয়া একটা ছোট্ট গল্প শুনবা…
হুম বল—-
ভাইয়া জানো আমার একটা ভাইয়া ছিলো…ছোট বেলায় এক সাথে স্কুলে যেতাম, এক সাথে ঘুরতাম..আবার রাত হলে এক সাথে পড়তাম, পড়া শেষ হলে আমি মাথাটা এগিয়ে দিতাম, আমাকে আদর করে কপালে চুমো একে দিত।
মেঘলার কথা শুনে আমার চোখে পানি টলমল করছে..
জানো ভাইয়া, একদিন যদি আমার ভাইয়া টি আমাকে চুমো না দিত আমাকে বলত আমার চুমো দিবিনা। আমি ছোট ছিলাম ঠিকই লজ্জা লাগত খুব তারপর ও চুমোর জন্য মাথা এগিয়ে দিতাম, আর যখন বড় হলাম, তবুও ভাইয়া আমাকে চুমো দিত। আর সেই ভাইয়া আমি প্রচন্ড ভালোবাসতাম, ভাইয়া ও আমাকে ভালোবাসত, কিন্তু জানো ভাইয়া, মেঘলা কেদে কেদে সে ভাইয়া টা আমাকে আজ পর করে দিচ্ছে, আমাকে একলা ফেলে চলে যাচ্ছে।

মেঘলার কথা শুনতে আমার চোখের পানি মেঘলার কপালে পড়ে… কপাল থেকে চোখে মেঘলার আমার দিকে তাকিয়ে, চোখের জল মুছে আর বলে, ভাইয়া তুমি কাদছো কেনো…
আজ না তোমার আনন্দের দিন। মেঘলা নকল হাসি দিয়ে বলে এই দেখোনা, আমি হাসছি, নতুন ভাবি আসবে কত্ত মজা করবো আমরা। তুমি হাসোনা, ভাইয়া, মেঘলা আমার বুকে জামা ধরে টানে আর বলে ও ভাইয়া হাসোনা কেনো…

মেঘলার কথা শুনে কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছে, আমার মাঝে আর কোনো ভাষা নেই।

মেঘলা কান্না কাটি করতে করতে আমার বুকে ঘুমিয়ে পড়ে। গাড়ি গিয়ে প্রিয়ার বাড়িতে পৌছিলে সবাই গাড়ি থেকে নামতে থাকে, আমি মেঘলাকে ডেকে তুলি। মেঘলার আমার হাত ধরেই থাকে।

চাচা আসলে বিয়ের সেলামী দিয়ে আমাকে ভেতরে নিয়ে যায়, আর মেঘলা মন মরার মত কিছুই বলেনা। ভেতরে গিয়ে বসলে প্রিয়া ফোন করে, রিসিভ করে চুপপ করে থাকি আমি কিছুই বলিনা। লাইন টা কেটে দেই। মেঘলা ও পাশে ছিলো।

কিচ্ছুক্ষন পর কাজী আসে, কাজী আসা নো দেখে মেঘলা আমাকে ইশারায় না না বলল, আমি কিছু না বলাতে অবশেশে মেঘলা রাগ করে উঠে যায়, মেঘলা ওর মায়ের কাছে গিয়ে বলে, আম্মু প্লিজ ভাইয়ার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে প্রিয়ার সাথে তুমি থামাও।
মেঘলার আম্মু বলে, আমি কিছুই করতে পারবোনারে মা, তোর বাবার মুখের উপড় কিছুই বলতে পারবোনা। তুই গিয়ে তোর আব্বুকে বল…

মেঘলার মায়ের কাছ থেকে ফিরে আব্বুর কাছে গিয়ে বলে, আব্বু তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে,
মেঘলার আব্বু বলে, আমি বিজি আছি, তোমার কথা পরে শুনবো।
মেঘলা এখন বড় হয়েছে মেঘলার আব্বু এখন মেঘলার সাথে কথা বলতে একটু ভয় পায়।
মেঘলা রেগে গিয়ে বলল, তুমি আমার কথা শুনবা কি না?
– মেঘলার আব্বু মেঘলার কথা শুনে বলল, ঠিক আছে মা বল-
মেঘলা ওর আব্বুর হাত ধরে টেনে বাড়ির বাহিরে নিয়ে আসে মেঘলা বলে-
আব্বু আমি রানাকে ভালোবাসি। আমার আর রানার বিয়ে দাও।
– কি বলিস এসব, রানা আমাদের বাসায় কাজ করে ও তোর যোগ্য নয়। তোকে ভালো ছেলের সাথে বিয়ে দিবো মা। মা তুই অনেক সুখে থাকবে।
– আমি বেশি সুখ চাইনা, তুমি রানা ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে দাও, এ বিয়ে বন্ধ করো। তুমি যদি বিয়ে ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে না দাও আমি আত্নহত্যা করবো।
মেঘলার আব্বু রেগে মেঘলাকে একটি থাপ্পড় মারে। মেঘলা থাপ্পড় খেয়ে দৌড়ে প্রিয়ার রুমে চলে যায়। প্রিয়ার রুমে এদিকে ওদিক তাকিয়ে একটি সেভলনের বোতল পায়, আর তাহা নিয়ে বাহিরে এসে ঢকঢক করে গিলে ফেলে, হেলে দুলে প্রিয়ায় রুমে এসে প্রিয়ার কাছে গিয়ে প্রিয়াকে বলে…
প্রিয়াকে তখন সবাই বধু সাজ সাজাচ্ছিলো।
তুমি আমার ভাইয়াকে কে কেড়ে নিলে, আমি আর তাই চাইনা বাচতে না।
মেঘলার মুখ দিয়ে সমুদ্রের ফেনার মত পানি বেরুচ্ছে, প্রিয়া প্রথমে মেঘলার কথা শুনে অবাক হয়েছিলো। পরে যখন মেঘলার মুখ দিয়ে ফেনা ছুটছে তখন রুমে চিল্লাচিল্লি শুরু হয়। চিৎকার চেঁচামেচিতে সবাই ঘরে গিয়ে ভীড় জমে আমি এসবের কিছুই জানিনা অথচ।

চাচা খবর পেয়ে দৌড়ে ছুটে যায়, মেঘলার অবস্থা দেখে চাচা কাদো সরে বলে, মারে তুই একি করলো। তাড়াতাড়ি এম্বুলেন্স কে খবর দেয়া হয়, এম্বুলেন্স এলে মেঘলাকে গাড়িতে উঠায়, চাচা মেঘলাকে এম্বুলেন্স এ উঠিয়ে আমার কাছে এসে বলে, মেঘলা কি যেনো খেয়েছে রানা, বিয়ে বন্ধ চলে আসো। আমি চাচার কথা শুনে মাথার পাগড়ি চটকা দিয়ে ফেলে দেই। দৌড়ে গিয়ে এম্বুলেন্স এ উঠে প্রিয়ার কাছে গিয়ে দেখি মুখ দিয়ে ফেনা ছুটছে।

মেঘলা তুই এই কাজ করলি কেন?
মেঘলা কিছু বলেনা, শুধু মুখের দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে আমার মুখে বুলায় আর খুব কষ্টে বলে, ভাআই..য়া আমাকে মাপ করে দিও আমি আর বাচবনা। প্রিয়া কে যত্নে রাখি।

এম্বুলেন্স Start দিয়ে হাসপাতালের দিকে স্প্রেড এ ছুটছে, মেঘলার মাথা আমার কোলে রয়েছে…
মেঘলাকে শান্তনা দিয়ে ও আটকাইতে পারছি না। মেঘলা শুধু বলছে ভাইয়া আমার খুব কষ্ট হচ্ছে…

মেঘলাকে নিয়ে হাসপাতালে পৌছার পর ডক্টর নার্স রা এসে মেঘলা করে ধরাধরি করে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেলেন, আমি চাচা ও আন্টি মেঘলার জন্য ছটপট করতে লাগলাম কি যে হয়,
আমি একটু দূরে গিয়ে বসলাম, ফোন টা হাতে নিয়ে টিপছিলাম, হঠাত প্রিয়ার ফোন আসে, রিসিভ করে হ্যালো বললাম প্রিয়া…

মেঘলার কি খবর এখন তোমরা কোথায়?
আমি বললাম, “মেঘলারর অপারেশন চলছে আমরা সবাই হাসপাতালে আছে।
– অপারেশন শেষ হলে আমাকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিও।
আচ্ছা ঠিক আছে।
প্রিয়া কিছু একটা বলতে চাইছিলো, কিন্তু মেঘলার এই অবস্থার জন্য বলতে পারলো না।

ঘন্টাখানিক পর ডক্টর এসে বললেন, “অপারেশন সাকসেস ফুল, পেসেন্ট এখন পুরোপুরি সুস্ত আছে।
একটা কথা বলি মনে কিছু করবেন না। চাচা চাচী কে উদ্দেশ্য করে বললেন, পেসেন্টের নিশ্চই আপনারা বাবা মা, পেসেন্টের কাছে যাহা শুনলাম তাতে আমি বলতেই চাই, ছেলে মেয়েদের কিছু কিছু স্বাধীনতা কথা শুনতে হয়।
ছোট্ট একটি কথা বলে ডক্টর চলে গেলো। সবাই মেঘলার কাছে গেলাম, মেঘলা চোখ মেলে চেয়ে আছে…আন্টি গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর চাচা বলছে শহরের উচ্চ কলেজে পড়ে তুই কি এগুলি শিখেছিস, তোকে কি এই জন্য শহরে পাঠিয়েছি। মেঘলার চোখ থেকে পানি পড়ছে, আমি মাথা নিচু করে আছি।

রানা চলো , আর প্রিয়ার মা তুমি প্রিয়াকে নিয়ে বাসায় চলে যাও। আমি রানা কে বিয়ে পড়িয়ে নিয়ে আসি।

চাচা কাছে এসে চট করে আমার হাত টি ধরে টেনে হাসপাতালের বাহিরে নিয়ে এলেন, একটি সিনএনজি ভাড়া করে গাড়িতে উঠিয়ে নিলেন। ড্রাইভার কে যেতে লাগলেন। তিনি ফোন টি বের করে কোথায় যেনো ফোন দিলেন, রিসিভ হলে বললেন, বিয়ায় সাহেব আমি রানা কে নিয়ে আসছি কাজী তো আছে না কি চলে গেছে।
– ঠিক আছে চলে আসুন। আপনার মেয়ে কি সুস্ত আছে।
চাচার কথা শুনে মনে হলো, ইনি প্রিয়ার বাবার কাছে ফোন করছে আমাকে না বিয়ে করিয়ে আর ছারছে না।

ফোন টি বের করে প্রিয়ার কাছে ফোন দিলাম।
প্রিয়া হ্যালো বলার পর প্রিয়াকে আসতে করে বললাম…যাতে চাচা বুঝতে না পারে।

প্রিয়া নিশ্চই তুমি জানো যাহা কিছু ঘটেছে তারপর ও কি তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও?
– হুম অবস্যই কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি।
প্রিয়া তুমি তো জানো আমি মেঘলাকে কেমন ভালোবাসি।
– এই জন্যই তো মেঘলা তোমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে চাই, মেঘলা যে কত ভালোবাসে আমি তাহা জানি আমি মেয়ে মানুষ আমার চাইতে তুমি বেশি বুঝবে না। তোমার বোন তোমারেই এতই ভালোবাসে তাহলে আকাশ কে কেনো ভালবাসো, কেনো তোমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে চায়য় কেনো তোমাকে রাবিশ ভালোবাসায় গালিগালাজ করে, এরই নাম বুঝি ভালোবাসা। রানা শোনো আমি তোমার জন্য জীবন ও দিতে রাজি আছি তুমি যদি বলো, এক্ষনি মরে যেতে আমি এক্ষুনি মরে যাবো। তোমার বোনের মত ন্যাকামো করেতে নয় বাস্তবে।
প্রিয়ার কথা আসলেই ঠিক, কিন্তু মেঘলা…

রানা শোনো, প্রিয়া তোমাকে যতই ভালোবাসুক না কেনো, মনেরেখো আমি তার থেকে ১% হলেও তোমাকে বেশি ভালোবাসি। তুমি কি বলতে পারো। প্রিয়া আবার তার ভয়েস চেঞ্জ করবে কি না তার কি গ্যারান্টি আছে।
– কিন্তু আমার মনে হয় মেঘলা সব ভুল বুঝতে পারছে।
– ও এই কথা, তবে শোনো সব শেষে একটা কথা বলতে চাই তোমার সাথে যদি আমার বিয়ে না হয় আমার মৃত্যুর কথা অচিরেই শুনতে পাবে।

প্রিয়ার বাড়িতে পৌছে ভেবেছিলাম পালিয়ে যাবো। কিন্তু মনে হচ্ছে তা আর হবে।

প্রিয়ার বাড়িতে পৌছার পর দেখি যে যে অবস্থায় ছিলো সেই অবস্থায় আছে, তবে কেউ ঘুমিয়েছে কেউ বা ফোন টিপছে।

চাচা যাওয়ার সাথেই চাচার আত্নীয় রা বলতে লাগলন মেঘলার কি খবর মেঘলা এখন কেমন আছে?
চাচা বললেন মেঘলা ভালো আছে। চাচা প্রিয়ার আব্বুর কাছে গিয়ে বললেন-

আপনার মেয়েকে নিয়ে আসেন, বিয়ে পড়ানো শুরু করেন?
প্রিয়ার আব্বু বললেন ঠিক আছে।
প্রিয়াকে আমার কাছে এনে বসালেন- প্রিয়া আমাকে দেখে মুচকি হাসি দিলেন আমি ও একটু হাসলাম,

কাজী বিয়ে পড়া শুরু করলেন?
কাজী আমাকে বললেন? বাবা বলো কবুল!
আমি বললাম কবুল! আবার বলুন কবুল!
কবুল। প্রিয়াকে ও তিন বার কবুল বলতে বললেন, প্রিয়া এক নিঃশেষ এ তিনবার কবুল কবুল কবুল বলুন। প্রিয়ার কবুল কবুল শুনে অনেকেই হেসে দিলেন।

কাজী হাত উঠাইলেন, দোয়া করতে লাগলেন…
ইয়া আল্লাহ তোমার কালিমুল্লাহ শরীফ পাঠ করিয়ে দুজন মানুষকে বিবাহ বন্ধনে আজ আবব্ধ হলো তাদের তুমি সুখী রেখো, সৎ পথে পরিচালিত করো। গন্ডায় গন্ডায় বাচ্চা দিও।

দোয়ার মধ্যে একজন জোরে একজন বলল, “আমিন”
আমি প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি প্রিয়া হাসছে…

দোয়া শেষে সবাইকে মিষ্টি মুখ করা হলো।
প্রিয়ার আব্বু আম্মু প্রিয়াকে আমার হাতে তুলে দিয়ে বললেন, রানা প্রিয়া আজ থেকে তোমার, প্রিয়ার ভালো মন্দ তুমি দেখবে। তোমরা সুখী হও আল্লাহ তোমাদের সুখী রাখুক।

প্রিয়াকে নিয়ে গাড়িতে উঠে গেলাম…
গাড়ি ছেড়ে দিলে প্রিয়াকে বুকে টেনে নিলাম। প্রিয়া আমাকে পেয়ে প্রচন্ড খুশি।
বাড়িতে পোছে সবাই ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা চিল্লাচিল্লি শুরু করলো বউ এসেছে বউ এসেছে…

মেঘলা চিৎকার শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে..আমি প্রিয়াকে নিয়ে আসতে আসতে গাড়ি থেকে নামতে থাকি। মেঘলাও আসতে আসতে কাছে আসতে থাকে…

মেঘলা মনে খুব দুঃখ নিয়ে সামনে এসে আসতে করে বলে ভাইয়া আমার সেলামি দিবানা…মেঘলা টাকা নেয়ার জন্য ডান হাত টি বাড়িয়ে দেয়…
আমি প্রিয়ার হাত ধরে মাথা নিচু করে চুপ করে আছি।
‘কি ভাইয়া কাছে টাকা নাই, ভয় পাচ্ছ নাকি? তুমি আমার ভাইয়া না সেলামি না দিলেও আমি খুশি।
পকেটে হাত দিলাম টাকা নাই, পাচটা টাকা থাকার কথা, খুঁজাখুঁজি করে পাচ টাকা মেঘলা হাতে তুলে দিলাম,
মেঘলা পাচ টাকা নিয়ে বলল, তুমি আমাকে পাচ টাকা দিচ্ছ।
আমি বললাম, মেঘলা রে আমার কাছে যে এই পাচ টাকাই ছিলো, আর যে নেই, আমি টাকা কই পাবো বল।
প্রিয়া কোথা থেকে যেনো ১০০০ টাকার একটি নোট আমাকে দিয়ে বলল, মেঘলা দিয়ে দাও।
আমি নিয়ে মেঘলাকে দিলে, মেঘলা বলে না ভাইয়া এই পাচ টাকা আমার কাছে ১০০০ টাকার চেয়ে ও বেশি দামি।
মেঘলা প্রিয়ার কাছে এসে ডান হাতটি ধরে বলল, ভাবি আসো।
আমার রুমে প্রিয়াকে মেঘলা নিয়ে গেলো, আমিও পিছু পিছু গেলাম।
রুমে ঢুকে মেঘলা বলল, ভাবি বসো এখানে আমি শরবত বানিয়ে নিয়ে আসে।

আমি আর প্রিয়া দুজনে বসে গেলাম, মেঘলা কিছুক্ষণ পর এসে হাতে দুগ্লাস শরবত তুলে দিলেন।

ভাইয়া আমি নিজ হাতে বানিয়ে এনেছি ভালো হয়নি।
– হুম খুব ভালো হয়েছে।
ভাবি সরি আমি তোমাদের জন্য কিছুই করতে পারলাম না, যদি জানতাম ভাইয়া তোমাকে বিয়ে করে আনতেছে আমি সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতাম।।
ভাইয়া আমি আগামী পরশু শহরে ফিরে যাবো।
আমার জন্য দোয়া করিও আমি যেনো ভালভাবে পড়াশুনা করতে পারি।
আর ভাবি তুমি শোনো, ভাইয়াকে আঘাত দিওনা। নয়ত ভাইয়া খুব কষ্ট পাবে, চোখের সামনে না কাদলেও ভাইয়া কিন্তু আড়ালে কাঁদবে।

– কিরে মেঘলা এদিকে আয় তো (আন্টি)
– আসছি আম্মু (মেঘলা)
মেঘলা আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

প্রিয়া বিছানা থেকে নেমে দরজা লাগিয়ে দেয়। প্রিয়া বলে, জানো রানা আমি না আজ খুব খুশি, তোমাকে পেয়ে, জানো আমি প্রতি রাতেই তোমাকে মিস করেছি। সত্যি আজ আমি ভাগ্যবতী তোমাকে পেয়ে।
আমি চুপচাপ শুনেই যাচ্ছি…
এই রানা কথা বলছো না কেনো…?

আচ্ছা প্রিয়া আমি একটু আসি বাহির থেকে।
রাত বাজে নয়টা। এত রাতে কই যাবা,…?
– যাবো আর আসবো।
– তাড়াতাড়ি এসো প্লিজ, আমার একা একা খুব ভয় করে।
– আচ্ছা।

প্রিয়াকে বলে বাহিরে এলাম।
বাড়ি থেকে হাফ কিলো দূরে, খুব খারাপ লাগছে আমার এই খুশির দিনে। বিয়ে করে ভুলই করলাম না কি। মেঘলার জন্য খুব খারাপ লাগছে। আজ যদি মেঘলাকে বিয়ে করতাম, মেঘলার মুখটা কি সুন্দর হাসি দিয়ে ভরে উঠত। আর আজ মেঘলার মুখ কালো অন্ধকারে ঢেকে গেছে, কেনো যে হুট করে প্রিয়াকে বিয়ে করলাম, নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।

মিনিট ৩০ পর বাড়িতে ফিরে এলাম। ঘরে ঢুকে দেখি প্রিয়া এখনো নববধু সেজে বিছানায় বসে আছে। আমি ভেতরে গেলে প্রিয়া বিছানা থেকে নেমে ঘরের দরজা লাগিয়ে দেয়। কাছে এসে আমার পাজরে হাত রেখে ডান হাত দিয়ে পাঞ্জাবীর বোতাম খুলতে থাকে। প্রিয়া বোতাম খুলা দেখে আমার মেঘলার কথা মনে পড়ে মেঘলার সাথে এই সময় দুজনে কত গল্প করেছি, এক সাথে বই পড়েছি, কেনো জানি স্মৃতি গুলো খুব মনে পড়ছে। প্রিয়া বুঝতে পাবে বলে প্রিয়ার কাছে নকল হাসি দিয়ে আমাকে কথা বলতে হচ্ছে।

রাত টি কেটে যায় আমার প্রিয়ার ভালোলাগার মন্দ লাগার গল্প শুনে, কিন্তু আমার মনের কোনো ইমেজ নেই কেনো জানেন, আমার মন টি পড়ে আছে মেঘলার কাছে একবার যাকে হৃদয়ে যায়গা দেয়া হয়, সেই হৃদয়ে সে ছাড়া অন্য কেউ বসতে পারেনা। যার সাথে যার মনের মিল। সকাল হলে প্রিয়া এসে বলে…

এই রানা… রানা
আমি ঘুমের ঘরে হু বলি।
এই উঠবা না বেলা ক’টা বাজে সে খেয়াল তোমার আছে।
না বাজে ক’টা বাজে বাজুক।
প্রিয়া আমাকে জোর করে ঘুম ভাংগিয়ে উঠিয়ে দেয়।
যাও ব্রাশ করে ফ্রেশ হয়ে নাও। আমাদের বাড়ি যাবো।

প্রিয়ার কথা আমার কিছুই ভালো লাগেনা । তবুও ঘুম থেকে উঠতে বাধ্য হলাম। ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ টা হাতে নিয়ে বাহিরে এলাম, রাস্তায় দাঁড়িয়ে ব্রাশ করছিলাম।

হঠাৎ এক মেয়ে এসে, আপনি তাহলে সেই ব্যক্তি?
মানে-
মানে আর কি প্রেম করলেন এক জনের সাথে আর বউ বানালেন আর একজনের সাথে। একটুকু ও কি ভাবলেন না।
– দেখুন খামাখা এক টা কথা বলবেন না বুঝলেন যেটা জানেন না সেটা নিয়ে কথা বলবেন না।
– আমি না জেনে বলিনি, বুঝলেন! সব জেনে শুনে বলছি। মেঘলা আপনাকে এত ভালোবাসে আর আপনি একি করলেন।
– আমি ঠিকই করেছি, এত ভালোবাসে আমারে তাহলে শহর থেকে থেকে এসে চেঞ্জ হয়ে গেলো কেন। আমাকে এতই ভালোবাসে তাহলে আবার আকাশ কে ভালোবাসলো কেন।
– আকাশ কে ও ভালোবাসেনি। আপনাকে পরিক্ষা করার জন্য ও এসব অভিনয় করেছে।
– কি বলছেন এসব।
– হ্যা আমি ঠিকই বলছি। আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে কেন করেছে জানেন, জানেন না। ওর বাবা যাতে বুঝতে না পারে, আপনাদের ভালোবাসা।
এখন হয়ত ভাববেন বা বলতে পারেন, আমি কে এত কথা কিভাবে জানি। আমি কে জানেন আমি ওর বন্ধু এক সাথে শহরে ছিলাম। পুরো দুবছর আপনাদের ভালোলাগা আর ভালোবাসার গল্প শুনেছি আর আপনি সব শেষ করে দিলেন। আপনি একটা কাপুরুষ আপনি কি পারতেন না ওকে নিয়ে পালিয়ে যেতে, আপনি কি পারতেন না ওকে চুরি করে বিয়ে করতে। আপনি কি এতটুকু ও বুঝতে পারেন নি। আপনার জন্য যে মেয়েটি বিষ খাইলো। তবুও কি বুঝতে পারেন নি।
– কথা শুনে কলিজা টা ফেটে যাচ্ছে।
এসব কথা আপনার মানায় না বুঝলেন, যে মেয়েটি প্রতিটি রাতে আপনাকে ভেবেছে, আপনার কথা ভেবে ভেবে প্রতিদিন কেদে দুচোখ ফুলিয়েছে আর আপনি ছি! বলতে লজ্জা লাগে।

এই আপনি এখান থেকে যাবেন?
– যাবোই তো?
– আরে সুমি তুই এখানে, কি করিস (মেঘলা)
– কিছুনা।
– ভাইয়া কেমন আছো। (মেঘলা)
আমি মেঘলার দিকে একবার তাকিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে এলাম। ভেতরে এসে ফ্রেশ হলাম।

এই রানা টেবিলে নাস্তা দিছি খেয়ে রেডি হয়ে নাও। আব্বু বার বার ফোন করছে।
– ক্ষিদে নাই আমার খাবোনা।
– না খাইলে শরীর খারাপ করবে।
– করুক খাবোনা।
– ঠিক আছে তাহলে রেডি হয়ে নাও। প্রিয়া জামা কাপড় সামনে এনে দিলো। শার্ট গায়ে দিচ্ছিলাম।
– ভাইয়া- (মেঘলা ঘরে আসতেই কথা টি বলল)
– হ্যা ভেতরে আয়।
– কই যাবা এখন?
– তোর ভাবির বাড়ি। যাবি আমাদের সাথে।
মেঘলা প্রিয়ার দিকে এক নজর তাকালো, প্রিয়া ও ওর দিকে মেঘলা আর কিছু বললো না, আমি ওদের দুজনে চেয়ে দেখা আর মেঘলার উত্তর না দেয়াতে বললাম, কি যাবি?
মেঘলা আমার দিকে তাকালো, হ্যা বা না কিছুই বলছেনা। তবে ওর চাহনি দেখে বোঝা যায়, যাবে।

যা রেডি হয়ে আয় যা।
মেঘলা একটু খুশি হয়ে চলে গেলো।
আমি আর প্রিয়া রেডি হয়ে বাহিরে এলাম, আন্টি কই গো?
– হ্যা রানা বল বাবা। আন্টি মেঘলা কি রেডি হলো।
– আমি দেখছি।
এই যে আন্টি ভেতরে গেলো দেখার জন্য আর পাত্তা নাই।
বাধ্য হয়ে আমি মেঘলার রুমে ঢুকলাম, গিয়ে দেখি বেচারি বালিশ কামড়ে ধরে কাদছে।
আমি ঢুকা মাত্রই হাত দিয়ে চোখের জল মুচছে। নিজেকে আড়াল করতে চাইছে।
এখনো রেডি হসনি কেনো। রেডি হয়ে নে।
মেঘলা কোনো কথাইই শোনে না। কাছে গিয়ে হাতটি ধরে টান দিয়ে বিছানা থেকে নামিয়ে খুব কাছাকাছি নিয়ে চোখে চোখ রেখে বললাম, যাবিনা আমার সাথে।

মেঘলা মাথা নিচ দিক নাড়িয়ে নিলো।
যা রেডি হয়ে।
– এই রানা কি করছো ভেতরে আসো তাড়াতাড়ি।
– এ তাড়াতাড়ি প্রিয়া ডাকছে।
– তুমি বাহিরে যাও নয়ত তুমি থাকলে আমি।
– আচ্ছা যাচ্ছি।
বাহিরে এলাম, মেঘলা কিছুক্ষন পর পুতুলের মতো সেজে এলো। রাস্তায় এসে একটি রিক্সা ভাড়া করলাম, মেঘলাকে উপড়ে আমি আর প্রিয়া নিচে বসলাম।

– মেঘলা আমার মাথায় হাত দিয়ে চুল টানছে
প্রিয়া মাঝে মাঝে মেঘলার দিকে ফলো করছে।

রিক্সা প্রিয়ার বাড়িতে গিয়ে ব্রেক করলে, প্রিয়ার আম্মু আমাদের দেখে কাছে আসে।

– বাবা ভালো আছো। প্রিয়াকে বুকে টেনে নিয়ে। মা কেমন আছিস। ভালো মা তুমি ভালো আছো।

আসো বাবা ভেতরে আসো। প্রিয়া ওর মায়ের সাথে ভেতরে যাইতে থাকে আমি ও মেঘলা পিছু পিছু, ভেতরে ঢুকতেই একটু আড়াল হলেই, মেঘলা আমার হাত টেনে ধরে ভাইয়া। প্রিয়া বুঝতে পাবে বলে আমি ধরে ও ছেড়ে দিলাম।
– ভাইয়া তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।
আচ্ছা আমি যখন তোরে ডাকবো।
– আচ্ছা।

ঘরের ভেতরে ঢুকলাম, প্রিয় শাশুড়ি আম্মা নাস্তা দিলেন। নাস্তা খেয়ে একটু রেস্ট নিলাম। মেঘলা খুব কাছে কাছেই ছিলো।

বিকাল হলে প্রিয়াকে বললাম আমি আর মেঘলা একটু বাহির থেকে ঘুরে আসি। তুমি রান্না বান্না করো। প্রিয়া
অসম্মতি জানালে ও প্রিয়ার মা বলল, ঠিক আছে বাবা যাও তবে তাড়াতাড়ি ফিরে আসো। প্রিয়া মন খারাপ করলো, মায়ের কথার উপড় আর কোনো কথা বলতে পারলো না।

আমরা দুভাই বোন মনে খুব খুশি নিয়ে বাহিরে এসে একটি রিকশায় উঠলাম, অনতি দূরে বাড়ি ছেড়ে এক ঝাউবনে গিয়ে দুজন বসলাম, মেঘলা খুব কাছে চেপে বসল, আমার কাধে হাত ডুকাইয়া মাথাটা আমার ঘাড়ে দিয়ে বলল- ভাইয়া সত্য করে বলতো তুমি কাকে বেশি ভালোবাসো।

আমি কিচ্ছুক্ষন চুপ থেকে বললাম, এখন আর বলে কি হবে, যাকে ভালোবাসতাম সে তো নিজের ভাগ্য নিজেই হারিয়ে ছে।
– এটা তোমার ভুল ধারনা, তুমি কিন্তু পারতে তাকে বিয়ে করতে যাহা ঘটে ঘটুক। কিন্তু তুমি বাবার ভয়ে তা করোনি।
জানো ভাইয়া আমার না কদিন ধরে গায়ে প্রচুর জর আমি মনে হয় আর বাঁচব না।

জানো ভাইয়া আগে হয়ত তোমার কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমায় যেতাম আর এখন আমার ঘুম-ই পায়না। সব সময় তোমাকে মনে পড়ে আর জানো আমার চোখ দুটো মনে হয় খারাপ হয়ে গেছে সারাক্ষন পানি পড়ে, বাম হাত দিয়ে যখন মুছে দেই, তখন আর পানি দেখতে পাইনা। পরে দেখি আবার পানি এসে গেছে।

মেঘলার কথা গুলো আমি মন দিয়ে শুনছি , কি যে বলি মেঘলা কে সত্যি আমি বড় অন্যায় করে ফেলেছি। আমি মেঘলা কে কতই না খারাপ ভাবতাম আমার মেঘলা আজ আগেই মতই রয়ে গেছে।

মেঘলার কথা গুলো শুনতে আমার বড় কষ্ট হচ্ছিলো তাই মেঘলাকে বললাম…
চল বাড়ি যাই তোর ভাবি আবার রাগ করবে।
– হ্যা ভাইয়া চলো তাই ভালো হয়।
মেঘলাকে নিয়ে বাড়ি গেলাম। প্রিয়া দেখি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

এই তোমাদের এতক্ষনে আসার সময় হলো। (প্রিয়া)
– সরি গো
– যাও মেঘলা ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।
আমরা দুজনে ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে গিয়ে বসি। তিনজন তিন পাশে কিন্তু মেঘলা আমার সামনে আর প্রিয়া আমার পাশে। খাবার খাচ্ছি। মেঘলা দুষ্টুমি করে আমার পায়ে বার বার পারা দিচ্ছে।

আমি একটু বার বার নড়াচাড়া করাতে প্রিয়া একটু সন্দেহ করে বসে কিন্তু কিছু বলেনা। খাবার খাওয়া শেষ হলে প্রিয়া মেঘলাকে ওর রুম দেখিয়ে দেয়। আর প্রিয়া আমাকে নিয়ে ওর রুমে চলে যায়।

– প্রিয়া বলে এত ভালোবাসার পর ও কারো মন পেলাম না।
মানে কি প্রিয়া তোমার আবার কি হলো।
– কই কি কি আর হবে, কাউকে বলেই বা কি হবে।
– প্রিয়া তুমি কি বলতে চাইছো আমি কিন্তু জানি। প্রিয়ার সাথে একটু অভিনয় করে ওরে বুকে টেনে নিয়ে বললাম…জান পাখি আমার লক্ষি সোনা আমার তুমি যাহা ভেবেছো তাহা নয়।

– লাগবে না তোমার এই আদর মাখা অভিনয়ের ভালোবাসা।
মাইয়া মানুষ সত্যি আজ মাই কেমনে যে সব কিছু সহজেই বুঝতে পারে আজ পর্যন্ত এটাই বুঝলাম না।

প্রিয়া আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিবে।
– জিনা, আমার বয়েই গেছে।
– ওকে রাগ করলাম,
মেঘলা আমাদের রুমের দরজার সামনে বামে আড়াল করে সব শুনছিলো। মাথাটা বিল্ডিং এর সাথে ঠেকিয়ে।

আমি প্রিয়ার সাথে কি গল্প করি না করি।
হঠাৎ প্রিয়ার মা এসে বলে মা তুমি এখানে কি করো। এই কথা শুনে আমি ও প্রিয়া চমকে উঠি। আমি লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে মেঘলার কাছে আসি।

মেঘলা প্রিয়ার মাকে বলে আমি ভাবির কাছে আসছিলাম।
প্রিয়ার মা বলে ও।

কিরে মেঘলা এখনো ঘুমাস নি।
– ভাইয়া ঘুম আসছিলো না। আমি প্রিয়ার দিকে একবার তাকালাম, অভিনয়ে বললাম, চোখ বন্ধ কর। ঘুম এসে যাবে যা।

মেঘলা চলে আমি প্রিয়াকে নিয়ে ঘুমাই পড়ি।

সাত দিন প্রিয়ার বাড়িতে আমার কেটে যায়, মেঘলার গায়ে প্রচুর জ্বর। ঔষধ নিয়ে মেঘলা কে এনে দেই তবুও অসুখ ছাড়েনা। অসুস্থ শরীর নিয়ে মেঘলা ও প্রিয়া কে নিয়ে আমাদের বাড়ি ফিরি।

মেঘলা সব সময় বিছানায় পড়ে থাকে, রাত হলেই আমার মেঘলার কথা খুব মনে। দিন দিন মেঘলা কেনো জানি আরো ভেংগে পড়ে মেঘলার সাথে দেখা করতে গেলেই মেঘলা আমাকে বলে ভাইয়া আমি মনে হয় বাঁচবনা।

এভাবে তিন মাস কেটে যায় মেঘলার বিছানায় তবুও অসুখ ভালো হয়না।
চাচা আন্টি আমরা সবাই চিন্তায় পড়ে যায়। মেঘলা কে শহরে ভালো ডক্টর দেখায় চাচা কোনো অসুখ ধরে পড়েনা। ইদার্নিং আমি একটু মেঘলার রুমে আসি বলে প্রিয়া আমাকে সন্দেহ করা শুরু করেছে প্রিয়ার সাথে সব সময় আমার ঝগড়া ঝাটি লেগেই থাকে।

আজ সকালে যখন আমি মেঘলার সাথে দেখা করতে যাবো প্রিয়া হাত টেনে ধরে বলে, তুমি আর কোন দিন মেঘলার সাথে দেখা করতে যাবা না নয়ত আমি বাড়ি থেকে চলে যাবো।

আমি রেগে প্রিয়াকে একটি থাপ্পড় দিয়ে মেঘলার কাছে আসি । মেঘলাকে বলি, কেমন আছিস।
মেঘলার একই উত্তর ভাইয়া আমি বাচবনা ।
– না তুই বাঁঁচবি, আমার জন্য হলেও বাচতে হবে।

ভাইয়া জানো আমার খুব ইচ্ছে ছিলো তোমার বউ হওয়া, আমাদের ছোট্ট একটি সংসার হবে, একটি বেবি হবে, আমি আম্মু হবো তুমি আব্বু হবে, আমি অনেক আদর করবো তুমি অনেক আদর করবে। কিন্তু তা আর আমার ভাগ্যে হলোনা।

রানা তোমার বউ রাগ করে বাড়ি চলে যাচ্ছে।
আমি মেঘলার কাছে থেকে বাহিরে এসে দেখি সত্যি প্রিয়া ব্যাগ গুছিয়ে নিজের বাড়ির পথে।

কোথায় যাচ্ছো?
কোথায় যাবো দেখতে পাচ্ছ না।
– দেখো প্রিয়া তুমি তো জানো মেঘলা খুবই অসুস্থ আর এ সময় তুমি যদি অভিমান করে চলে যাও কেমন লাগবে বলো।

– কেমন লাগবে ভালই লাগবে তোমার, আমার জন্য তুমি প্রিয়ার সাথে কথা বলতে পারোনা ঠিকমত আমি তোমার কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছি, আমি চলে যাচ্ছি আরামে পাশে বসে গল্প করতে পারবা সেবা করতে পারবা।

– দেখো প্রিয়া তুমি কিন্তু বেশি বেশি বলছো? মেঘলা অসুস্থ তাই একটু ওর কাছে যাই আর তাতে তুমি যদি মাইন্ড করে নাও তাহলে আমার কিছু করার নাই।

– বলতে হবে না আমি জানি, অসুস্থ হলেই কি না হলেই কি, আগেও দেখছি যেমন এখন ও তেমন। আমি চলে যাচ্ছি আর আসবোনা।
কথাটি বলেই প্রিয়া ভন ভন করে বাহিরে যেতে লাগলো আমি প্রিয়ার হাত টি চেপে ধরলে প্রিয়া বলে…
ছারো বলছি…
আমি না ছাড়লে প্রিয়া হাত ঝাটকা দিয়ে চলে যায়। আমি শুধু বলি প্রিয়া তুমি আমাকে ভুল বুজতেছো…

প্রিয়া একটি রিক্সায় উঠিয়ে পিছনে ব্যাক করে বলে…
তোমার এই আদর মাখা মন ভুলানো কথায় আমার মন ভরবে না।

আমি আর কিছু বলিনি….

প্রিয়া চলে গেলে আমি আমার রুমে ডুকি, বিছানায় বসিয়ে পা দুটো নাচাচ্ছিলাম, আর প্রিয়ার কথা ভাবছিলাম, টেবিলে চোখ পড়ে যায়, একটি সাদা কাগজ তার উপড়ে কলম, সাদা কাগজ টি হাত দিয়ে নিয়ে দেখি প্রিয়ার লেখা…লেখা ছিল…

“এত ভালোবাসার পর তোমার মন পেলাম”

শুধু একটি মাত্র কথা পুরো জীবনের গল্পের সাথে মিলে যায়, সত্যি তো, কিন্তু আমার কি দোষ আমি কি করবো আমার মন টা যে বার বার মেঘলার কাছে ছুটে যায়। মেঘলার কান্না যে আমি সইতে পারিনা।

এসব ভাবতেই আমি কান্নার চিৎকার শুনতে পাই দৌড়ে
মেঘলার রুমে গিয়ে দেখি মেঘলা কষ্টের জালায় চিৎকার করছে…
চাচা মেঘলার পাশে বসে মেঘলাকে শান্তনা দিচ্ছে, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছেনা। মেঘলার মুখ দিয়ে একই কথা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, আন্টি মুখে কাপড় দিয়ে কাদছে,
আমি ধীরে ধীরে মেঘলার পাশে গিয়ে বসলাম, মেঘলাকে আমাকে দেখে বলল, ভাইয়া ভাবি রাগ করে চলে গেলো..আমাকে কি একটু দেখে ও গেলোনা। ভাইয়া ভাবিকে কখনো কষ্ট দিওনা।

মেঘলার কথা গুনে বুক টা কেনো জানি ছেদ করে উঠছে, তাহলে কি মেঘলা আমাকে ছেড়ে চলে যাবে…

মেঘলা…
হুম ভাইয়া বলও…
তোর কি খুব কষ্ট হচ্ছে…
হুম ভাইয়া অনেক কষ্ট হচ্ছে, আমি মনে হয় আর বাচবনা, তুমি আমাকে মাপ করে দিও।
চাচা আমাকে বললেন, রানা বাহিরে আসো, আমি বাহিরে গেলে…
চাচা মাথা নিচু করে বলল…
রানা মেঘলার একটি কিডনি ডেমেজ হয়ে গেছে, ডক্টর বলেছে…আগামী ৭ তারিখ আমরা একটি অপারেশন করবো ভাগ্য ভালো হলে আপনার মেয়ে বেচে যেতে পারে।। নয়ত তার কিডনি চেঞ্জ করতেই হবে । নয়ত তাকে বাচানো যাবেনা।
চাচার কথা শুনে আমার মাথায় যেনো আকাশ ভেংগে পড়ে। চোখ দিয়ে পানি পরতে থাকে।

চাচার কাছ থেকে ফিরে আমি আবার মেঘলার কাছে যাই। মেঘলা আমাকে দেখা মাত্রই বলে…ভাইয়া আমার কি হয়েছে আমি জানি, আমার জন্য তোমরা আর কষ্ট করোনা প্লিজ…

মেঘলা কথা গুলো বলছে আর জোরে জোরে নিঃশেষ নিচ্ছে…
মেঘলার নিঃশেষ আর ভাংগা ভাংগা কথা শুনে আমার খুব ভয় করছে…

তাহলে কি মেঘলা সত্যি মারা যাবে, মেঘলা মারা গেলে আমার খুব কষ্ট হবে। এ হতে দেয়া যাবেনা। আমি যে এ কষ্ট সহ্য করতে পারবো না।
এভাবে আরও সাত দিন পার হয়ে যায়, অন্যদিকে প্রিয়া সারাক্ষন ফোনে কাদে, আমাকে ফোন করে আর বলে রানা সরি, রানা তোমাকে আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে, প্লিজ আমার বাসায় এসো।

প্রিয়ার কথা শুনে আমার মন টা খারাপ হইলেও আমি কোনো গুরত দেইনা। কারন আমার মেঘলা আজ প্রায় মৃত্যুর কোলে।

সেদিন রাত বাজে ১১ টা। মেঘলা কষ্টের জালায় চিৎকার করছিলো। মেঘলার আম্মু ডুকরে ডুকরে কাদতেছিল। আমি আমার রুমে টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে কাদতেছিলাম।

কিছুক্ষণ পর মেঘলার, ভাইয়া ভাইয়া শব্দ শুনে রুমে ছুটে যাই, মেঘলার পাশে গিয়ে বসি। মেঘলা বলে ভাইয়া তোমার বুকে আমার মাথাটি নিবে। অবুঝের মত মেঘলার কথা আর ফেলতে পারিনা। বুকে টেনে নিলাম।

এমন সময় হাসপাতাল থেকে ফোন এলো চাচা ফোন রিসিভ করলেন…ডক্টর বললেন..
দ্রুত আপনার মেয়েকে আমাদের হাসপাতালে আনার ব্যবস্থা করুন। কিডনি পাওয়া গেছে…

চাচা কি হয়েছে…
ডক্টর ফোন করেছে এক্ষনি হাসপাতালে মেঘলাকে নিয়ে যেতে বলল…
– ঠিক আছে আপনি একটি ভ্যান এর ব্যাবস্থা করুন।
আমি মেঘলাকে নিয়ে বাহিরে আসছি জান।

চাচা বাহিরে ভ্যান ম্যানেজ করে বাহির থেকে চিল্লান দিলো…রানা

আমি মেঘলাকে কোলে নিয়ে বাহিরে আসতে লাগলাম, মেঘলা ছোট বাচ্চার মত আমার দিকে তাকিয়ে আছে ও ওর হাত দিয়ে আমার মুখ বুলাচ্ছে…

ভ্যানের কাছে গিয়ে মেঘলাকে ভ্যানে নামিয়ে দিলাম। আন্টি গায়ে একটি চাদর দিয়ে দিলেন। আমি আন্টি চাচা চাচি ভ্যানে উঠলাম। রাত বাজে ১২ টা তখন নিঝুম রাত কোনো সারা শব্দ নেই, ঝিনাই পোকা গুলো শুধু রাস্তায় ঝোপে ঝাড়ে জল জল করে জলছে। মাঝে মাঝে রাস্তায় সাইডে আলোয় মেঘলার মুখ ঝলমল করছে…

মেঘলাকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছামাত্র চারজন নার্স এসে মেঘলা কে ধরে নিয়ে গেলো। ডক্টর এসে চাচা কে বললেন, নিশ্চই আপনি পেসেন্টের অভিভাবক প্লিজ এখানে একটি সাইন করে দিন। চাচা সাইন করে দিলে ডক্টর বললেন, আপনারা বাহিরে আল্লাহ আল্লাহ করুন।

আমি চাচা ও আন্টি হাসপাতালের কমন রুমে বসে গেলাম…
মেঘলার অপারেশন শুরু হয়ে গেছে…

মেঘলার জন্য ছটপট করতে লাগলাম, একবার বাহিরে একবার ভেতরে, আবারো বাহিরে এলাম, ঘড়ির কাটা বেজেই চলছে রাত বাজে ২ টা ডক্টর এখোনো আসছে না কেনো।

প্রিয়ার কথা মনে পড়লো প্রিয়াকে ফোন দিলাম…
এই মুহুর্তে মোবাইল সংযোগ দেয়া যাচ্ছে না..
প্রিয়ার নাম্বার ও বন্ধ…

হে আল্লাহ আমার মেঘলাকে সুস্ত করে দিও। আমি আর মেঘলাকে কষ্ট দিবোনা। আমার জন্য মেঘলার আজ এই পরিস্তিতি।

হাসপাতালের কান্নার রুল শুনতে পাচ্ছি তাহলে মেঘলা আমাকে রেখে…
না না কি এসব ভাবছি দৌড়ে ভেতরে গেলাম, মেঘলার অপারেশনের পাশের এক রোগী মারা গেছে, বুক টা ছাৎ করে উঠেছিলো খুব ভয় পেয়েছিলাম। আবারো বাহিরে এলাম, একা একা বসে আছি সামনে দুইটা কুকুর আমার সামনে বসে আমাকে দেখছে, ল্যাম্পপোস্ট এর আলো পড়েছে দিনের চেয়ে ও সুন্দর দেখাচ্ছে। একটি কুকুর আর একটি কুকুর কে আদর করছে, কুকুরের ভালোবাসা দেখে আমার চোখ দিয়ে জল পড়ছে আর যেনো নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছি না, এতক্ষন ভালই ছিলাম আর পারছিনা।

আন্টি বাহিরে এসে, রানা এদিকে আসো ডক্টর ডাকছে…
বসা থেকে উঠে দৌড়ে গেলাম ডক্টর বললেন আপনি কি পেসেন্টের Husband?
আমি কথা শুনে মাথা নিচু করে বললাম না আমি ভাই।
– ও সরি, আপনাদের কপাল খুব ভালো আল্লাহ আপনাদের দিকে তাকিয়েছেন…অপারেশন সাকসেস ফুল। আপনারা এখন পেসেন্টের কাছে যেতে পারেন।

আর একটি কথা পেসেন্টের কাছে যাওয়ার আগে আমার মনে আপনার তার সাথে আগে দেখা করা উচিত যে কিডনি টি দান করেছে…তিনি এখন কষ্টের জালায় কাতরাচ্ছে, নাম বলতে নিষেধ করেছেন…
তবে তিনি মৃত্যু পথের যাত্রী আমরা না বলে আর পারছিনা। গত রাত ১০ টায় তিনি হাসপাতালে এসে আমাকে বলে ডক্টর আপনাদের একটি কিডনি খুব প্রয়োজন আমি জানি, আমি আমার কিডনি দিতে চাই। আমি বলি একজন সুস্থ মানুষের কিডনি আমরা নিতে পারিনা, এটা নিয়ম না, মেয়েটি বলে আমার কিডনি না নিলে আমি এখানেই আমার জীবন শেষ করে দিবো। আমরা বাধ্য হয়ে তার কিডনি নেয়ার ব্যাবস্থা করি।

ডক্টর এর কথা শুনে আমার গায়ের পশম দাড়িয়েছে।
হাত পা আমার কাপছে..
চলুন ডক্টর কে সেই মহান ব্যাক্তি আমি দেখতে চাই..
ডক্টরের সাথে যাচ্ছি কিন্তু আমার পা এগুচ্ছে না মনে হচ্ছে পিছন থেকে কেউ টেনে ধরছে…

ডক্টর কে বললাম আচ্ছা ডক্টর সে কি মহিলা না পুরুষ।
ডক্টর বললেন- আসুন আসলেই দেখতে পাবেন।
ডক্টর একটি কক্ষের ভেতরে ঢুকলেন পিছু পিছু। রুমে ঢুকার পর দেখি কেউ নেই। ডক্টর ল্যান্ডফোনের বাটন চাপে কল দিলেন, সংগে সংগে একজন নার্স এসে উপস্তিত হলেন,
বললেন স্যার – কিছু বলবেন?
– হ্যা কিডনি ডোনেট করা মেয়েটি কোথায়?
– স্যার উনি পেসেন্টের সুস্ততা কথা শুনে বলে গেছে।
যাওয়ার সময় পেসেন্ট কে এই কাগজ টি দিতে বলছে..

আমি বললাম দেখি স্যার কাগজ টি আমাকে দিন। ডক্টরের কাছ থেকে কাগজটি নিয়ে খুলতে লাগলাম হাত আমার থরথর করে কাঁপছে না জানি আমি প্রিয়া হয়। কাগজ খুলে পড়তে লাগলাম…

লিখা ছিলো…

“আমাকে আপনি চিনবেন না, মেঘলা আমাকে চিনবে,
আমার কিডনি তার কাছে দিয়ে গেলাম, মেঘলার মাঝে আমি বেচে থাকতে চাই সারাজীবন, মেঘলার মাঝে আমাকে খুজে নিবেন। মেঘলা আপনাকে অনেক ভালোবাসে যদি পারেন মেঘলা কে আপনার পাশে ঠাই দিবেন।। আমি অনেক অনেক খুশি হবো।।

——————অপরিচিতা বন্ধু

কাগজটি পড়ে আরো বেশি আমি Confiused. কে সেই ব্যক্তি তার পরিচয় গোপন করলো, আমাকে খুজে বের করতেই হবে, আমার প্রিয়া নয়ত তো আবার। আচ্ছা ডক্টর যিনি কিডনি ডোনেট করেছেন, উনি দেখতে কেমন।
– উনি দেখতে চিকন চাকন সুন্দরি, তবে মনে হচ্ছিলো প্রথম উনাকে দেখে উনি খুব কষ্টের যন্ত্রনায় ভুগছে।

এ নিশ্চই আমার প্রিয়া, চোখে পানি এসে পড়ছে, কাগজ টি নিয়ে মেঘলার কাছে গেলাম, মেঘলার চাচা আন্টির সাথে গল্প করছে, গুটি গুটি পায়ে মেঘলার কাছে গিয়ে বললাম কেমন আছিস। মেঘলা আনন্দে এক ফোটা চোখের জল ফেলে বলল, ভাইয়া আমি ভাল আছি খুব ভালো আছি।

আমি শুনে খুশি হলাম, কিন্তু কেনো জানি আমার খুব কষ্ট হচ্ছে বুকের ভেতরে, কিডনি কে দিলো। এই প্রশ্ন বার বার আমাকে তারা করছে, ডক্টর সাহেব আমরা কি মেঘলা কে নিয়ে যেতে পারি।
ডক্টর বললেন, হুম অবস্যই তিনি এখন পুরোপুরি সুস্থ।

চাচাকে বললাম, মেঘলা কে নিয়ে বাসায় যান। আমি এই বলে হাসপাতালের বাহিরে আসতে লাগলাম, মেঘলা পিছন থেকে আমাকে ডাকলো, পিছনে ফিরে তাকালাম…
ভাইয়া আমাকে কিডনি কে দিয়েছে আমি তাকে দেখতাম…
আমার কাছে কোনো উত্তর না থাকায় তবুও বললাম,
পড়ে শুনিস।
– না আমাকে এক্ষুনি বলো প্লিজ

আমি মেঘলাকে আর কিছু না বলে ওর দিকে এক নজর তাকিয়ে একটি রিক্সায় উঠলাম, প্রিয়াদের বাড়ির ঠিকানায় যাইতে বললাম,

রিক্সাওয়ালা প্রেট্টল মারছে আর আমি ফোন টি বের করে প্রিয়ার নাম্বারে ডায়াল করছি….

এই মুহুর্তে মোবাইল সংযোগ দেয়া যাচ্ছেনা…
প্রিয়ার মোবাইল গতকাল রাত থেকে বন্ধ তাহলে কি প্রিয়া কিডনি দিয়েছে..একই প্রশ্ন আমার ভেতর টা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে…
প্রিয়ার বাড়িতে পৌছার পর রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া মিটিয়ে প্রিয়া প্রিয়া বলে চিৎকার দিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকলাম, প্রিয়ার মা বসে আছে, আম্মা প্রিয়া কোথায়?

– আসো ভেতরে আসো প্রিয়া ঘুমাচ্ছে ও নাকি ক্লান্ত।
প্রিয়ার আম্মুর কথা শুনে আরো অবাক হচ্ছি সব মিলে যাচ্ছে…!!
– আমি নাস্তা নিয়ে আসছি তুমি বসো। প্রিয়ার মা চলে গেলে প্রিয়ার কাছে গিয়ে ফ্লোরে হাটু টেকিয়ে প্রিয়াকে একাই একাই বলতে লাগলাম আর প্রিয়ার মুখ হাত দিয়ে নাড়তে লাগলাম, এ তুমি কি করলে প্রিয়া, আমি মেঘলার সাথে একটু মিশি বলে এত বড় একটা কাজ করতে পারলে, তুমি না আমার বউ।।

প্রিয়া শুনতে পেয়ে মাথাটা একটু নাড়লো। চোখ মেলে আমার দিকে তাকিয়ে বললো আসছো তুমি জানো আমার না দুদিন ধরে প্রচুর জর, মেঘলা এখন কেমন আছে।

প্রিয়ার মাথায় হাত দিয়ে দেখি সত্যি প্রচুর জর, প্রিয়ার কথা শুনে মাথাটা এলো মেলো হয়ে যাচ্ছে, তাহলে কি প্রিয়া কিডনি দেইনি, প্রিয়ার আম্মু ঘরে এসে, রানা চা খাও, আম্মা প্রিয়ার ওষুধ আনেন নি?.

হুম বাবা এনেছি আমি নিজে গিয়ে এনেছি তারপর ও জর সারছে না। দুদিন ধরে কিছু খাচ্ছে ও না মেয়েটি, কি যে হলো।

হিসাব মিলে ও মিলছে না, প্রিয়ার জর, প্রিয়ার মা নিজে গিয়ে ঔষধ নিয়ে এসেছে তাহলে কিডনি কে দিলো।
প্রিয়া কি তাহলে কিডনি দেইনি…

এই বিছানা থেকে উঠো তো। প্রিয়া গা মোচর দিয়ে উঠার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।
– কি আমাকে কি ধরতে হবে?
– তুমি আমাকে ধরলে ও কপাল-ই খুলে যেতো তুমি কি আমাকে ধরবা । তুমি ধরবা তো মেঘলা কে।

প্রিয়ার কথা শুনে মনে মনে একটু হাসলাম, প্রিয়া কিন্তু খারাপ বলেনি। মেঘলা হইলে আমি বলার আগেই ধরতাম। প্রিয়ার কমরের নিচ দিয়ে হাত দিলাম, আহা প্রিয়া মনে হয় আরাম পাচ্ছে, তেমন ই মুখ খানা দেখাচ্ছে।
– কি হলো এই ভাবে কি ধরে থাকবা, না উঠাবা ।
কি আর করা প্রিয়াকে উঠালাম। সত্যই পিয়ার জা যেনো পুরে যাচ্ছে, এরে ও ডক্টরের কাছে নিতে হবে। সালার কি জীবন কোনো শান্তি নাই, একটা না একটা বিপদ লেগেই থাকে।
এ চলো তোমাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাই।
– লাগবে না। টেবিলে ঔষধ আছে নিয়ে আসো । খাইলেই সেরে যাবে।
– কত সারবে ভালো করেই জানা আছে দুইটা দামের ট্যাবলেট ঘরে নিয়ে আসছো।
– যে ভাবে বলছো মনে হয় কোটিপতি।
– কোটিপতি না হই, তোমার বাবার মত আমি তো আর কৃপণ নয়, চলো।
– আমি একাই যেতে পারবনা, আমাকে ধরে নিয়ে যাও।

মুখ দিয়ে তো বকবক ভালোই করলাম, দুইটাকা দামের ট্যাবলেট, পকেটে তো চার আনা পয়সা ও নাই।
– আচ্ছা একটু দাঁড়াও আসতেছি।
– কই যাবা আবার।
– আরে দাড়াও না,

প্রিয়ার কাছ থেকে ডাইরেক্ট শাশুরির কাছে, তাছাড়া তো কোনো উপায় নাই, ওদের টাকা দিয়ে ওদের কেই ভাজতেই হবে,
শাশুড়ির কাছে যাওয়ার পর।
চুপ করে সামনে গিয়ে বসলাম, শাশুড়ি আম্মা কাছে এসে আমার চুও করা দেখে প্রশ্ন না করে আর পারলো না, আমাকে বললো, রানা কিছু বলবে,
মাথা টা ডান হাত দিয়ে একটু চুলকাইয়া বললাম, আম্মা কেমনে যে কই সরম লাগতেছে।
– শাশুড়ি আম্মা কথা শুনে একটু হাসলো। সমস্যা নেই বাবা বলো।
– আসলে আমার আমার কিছু টাকা লাগতো।
– কত টাকা, আর টাকা দিয়ে কি করবে।
– আম্মা জান বলা যাবে না এখন পরে বলবো।
শাশুড়ি আম্মা আবারো হাসি।

ডয়ারের কাছে গিয়ে আচল থেকে চাবের কাটি নিয়ে খটাস করে খুলে ফেললো, হাজার দুই টাকা নিয়ে এল। এই ধরো, আরো লাগলে বলিও, কোনো শরম করিও না। তুমি আমার ছেলের মত।
– জি আম্মা জান।
নিজের আম্মু হলে গলা টা জড়ায় ধরতাম। মায়ের কথা মনে করে মন টা খারাপ করে দিলো।
– কি রানা মন খারাপ করলে কেন, টাকা কি আরো লাগবে।
– না আম্মা আসলে মায়ের কথা মনে পড়েছে। শাশুড়ি আম্মা কথা শুনে তার বুকে আমাকে টেনে নিলেন, বেচে থাকো বাবা, সারাজীবন তো আর মা বাবা বেচে থাকেনা। আর আমরা আছি না। যখন যা প্রয়োজন।

বড়ো এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রিয়ার কাছে এলাম,
– এই কখন না গেছো, কই গেছিলা কউ তো।
– ওরে ময়না পাখি বলা যাবে না। চলো বাহিরে চলো। প্রিয়া কে ধরে বাহিরে নিয়ে নিলাম।

– এই খালি, এই চারমাথা চৌরাস্তা যাবো চল (আমি)
– উঠুন।
প্রিয়াকে তুলে নিয়ে পাঞ্জা দিয়ে ধরলাম, সালির গায়ে কি জর বাপড়ে বাপ, আমার ও জর এসে যাবে।

এ তোমার এত জর কেমনে হলো হ্যা-
– তোমার জন্য ক বার আমার খোজ নিয়েছো। রাগ করে আসার পর কখনো ফোন দিছিলা, দাওনি। সারাক্ষন মেঘলা মেঘলা কে নিয়ে বিজি থাকো। আমি কি তোমার বউ মনে হয় না। যদি হতাম মেঘলার চাইতে আমাকে বেশি ভালোবাসতা।
– আচ্ছা সরি, এখন থাইকা অনেক ভালোবাসুম।
– এখন তো বাসবাই ভালো, এখন যে আমি মৃত্যুর পথে।
– মৃত্যুর পথে মানে কি বলছো আবল তাবল।
– জর আসছে না যদি মরে যাই। আমি প্রিয়ার মুখে হাত দিয়ে বললাম, না মরবা না, আর এসব কথা কখনোই বলবা না।

এই রিক্সা এখানে দাড়া। প্রিয়া কে নিয়ে ডক্টররের কাছে ডক্টর সাহেব প্রিয়ার কপালে হাত দিয়ে বললেন, কই জর তো নাই। ডক্টর এর কথা শুনে অবাক হইলাম, কি কই এই ডক্টর নিজেই প্রিয়ার কপালে হাত দিলাম। ঠিকই তো একদম ঠান্ডা সালার জর কই পালাইলো। অবাক তো বুঝলাম না। ডক্টর আপনি তারপর ও জরের ঔষধ দিন। পরে আসতে পারে।

প্রিয়াকে নিয়ে আবারো বাড়ি ফিরলাম।
প্রিয়া এবার সুস্থ ঔষধ খাওয়ার আগেই,
– এই টাকা কই পাইলা তুমি (প্রিয়া)
– আগামীকাল রিক্সা চালাইছি। (হাহাহা)
– কি রিক্সা চালাইছো ফান করোনা না তো। কই পাইছো।
– সত্যি রিক্সা চালাইছি ।
আমি মনে মনে মুচকি মুচকি হাসছি । প্রিয়া বুঝতে পেরে এই আমাকে এক জোড়া চুরি কিইনা দিবা তোমার পছন্দের।
মেয়ে মানুষ সত্যি আজব, তাদের আবদার পুরন করতে পারলে নাকি তারা খুব খুশি হয়। প্রিয়া কে এক টি কসমেটিক এর দোকানে নিয়ে গেলাম, লাল নীল চুড়ি কিইনা নিজ হাতে পড়াই দিলাম, আবারো রিক্সায় উঠলাম, কিছুদুর যাওয়ার পর, এক মাইয়া দৌড়ে এসে, রিক্সার সামনে দাঁড়িয়ে গেলো। বিনয়ের সরে বলল, ভাইয়া আমাকে বাচান, কজন মানুষ আমাকে ফলো করছে, আমি প্রিয়ার দিকে তাকালাম, কি করবো। বুঝতে পারছিনা।

– প্লিজ ভাইয়া যদি আপনার বোন হতাম, এত রাতে একটা মেয়েকে ফেলে রাখা ও উচিত নয়।
– এই রানা চলো তো, পরে আবার কি হয় না হই। এত রাতে আবার কোনো ভদ্র ঘরের মেয়ে রাস্তায় থাকে নাকি।
– না আপু আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না। প্লিজ আমাকে বাচান।

মেয়েটির কাকুতি মিনতি দেখে রিক্সায় তুলে নিলাম।
বাসায় গিয়ে তিনজনই রিক্সা থেকে নামলাম,
আমি প্রিয়ার হাত ধরে আর মেয়েটি আমাদের পিছু পিছু ঘরে প্রবেশ করলো।
কমন রুমে অরে বসতে বললাম,
আর আমি প্রিয়ার কাছে গেলাম, রানা এটা কি ঠিক কাজ করলা, এই মেয়েটিকে নিয়ে আসা।
– আরে মেয়েটি বিপদে পড়ছে না। টেবিলে খাবার দাও যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। ফ্রেশ হইয়ে কমন রুমে গেলাম, রুমে ঢুকা মাত্র মেয়েটি নিজেকে গুছিয়ে, বুকে হাত দিয়ে চুপ করে মাথা নিচু করে রইলো। কাছে গিয়ে বসলাম…

কাছে গিয়ে বসলাম মেয়েটি আরো সরে বসলো, মেয়েটিকে বললাম, এখন বলুন আপনার কি সমস্যা?
– ভাইয়া আমি একজন কে খুব ভালোবাসতাম, আমরা দুজন দুজন কে এতটাই ভালোবাসতাম যে আমাদের ভালোবাসায় কোন খাত ছিলোনা। আমাদের বিয়ে ও ঠিক হয়ে যায় কিন্তু বিয়ের আগের দিন আমার এক বন্ধু বলে ছেলেটি নেশা খোর এ বিয়ে তুই করিস না ।
– তুমি আগে জানতে না ছেলেটি নেশাখোর?
– জানতাম এমনে সিগারেট খায় কিন্তু জানতাম না যে ও মদ গাজা খায়, ছেলেটি ভালো না।
– ও আচ্ছা তারপর
– তারপর আমি বিয়ে করতে অস্মত জানাই। বিয়ে ভেংগে যায়, আর আজ আমি মার্কেট থেকে ফিরতে ও সহ ওর কিছু বন্ধু আমাকে ধাওয়া করে।
– ও আচ্ছা বুঝতে পেরেছি।
– প্লিজ আমাকে রাত টি থাকতে দিন আমি সকাল হইলেই চলে যাবে।
– ঠিক আছে সমস্যা নাই, আসেন আমার সাথে।

ডাইনিং টেবিলে যাওয়ার পর প্রিয়া ভাত দিছো।
– হুম বসো।
মেয়েটিকে নিয়ে খাবারে বসলাম। খাওয়া শেষে প্রিয়াকে বললাম ও কে ওর রুমে দিয়ে আসো। সকাল হইলেই চলে যাবে। প্রিয়ার আমার কথা শুনে একটু চোখ বড় করে তাকালো কিন্তু কিছু করার নাই।

ফোনটা বাজছে পকেট থেকে বের করে দেখি মেঘলা ফোন করেছে….
ফোন রিসিভ করলাম না। না করাতে প্রিয়া একটু কেমন যেনো করলো।
আবারো ফোন পেলাম। রিসিভ করলাম।
– হ্যা মেঘলা বলো…
– ভাইয়া বাড়ি আসবা নাহ! ‘
– হুম সকালে যাবো।
– ভাবিকে নিয়ে আসবা নাহ! প্রিয়ার কথা শুনতেই ওর দিকে তাকালাম আর বললাম, হুম ওরে ও নিয়ে যাবো।
– আচ্ছা ভাইয়া কাল এসো আবার তোমাকে খুব মিস করছি,
– রাখছি বাই।
কে ফোন করেছিলো? (প্রিয়া)
মেঘলা –
– কি বললো!
– কিছু বলেনি কবে ফিরছি সেটা
– তুমি কি বলছো।
– আগামীকাল সকালে যাবো বলেছি।
– নাহ! আমি ঐ বাড়িতে যাবো না।
– আরে নাহ! তুমি যাবা না মানে তুমি না গেলে আমি কার সাথে থাকবো।
– কার সাথে মেঘলা আছে না। আমার আবার ঐ বাড়িতে কোনো দাম আছে নাকি।
– ভুল বোঝনা! তুমি এমন করলে আমার ভাল লাগে না। আমি খাওয়া শেষে প্রিয়ার রুমে গিয়ে কাত হলাম, কিছুক্ষণ পর প্রিয়া ও এলো। কাছে এলো না আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে সাজাতে লাগলো। আমি মাথাটা বালিশে দিয়ে প্রিয়ার দিকে মুখ করে প্রিয়ার সাজানো দেখতে লাগলাম। প্রিয়া সাজানো শেষ হলে নতুন বউয়ের মত লাগছে। কাছে এসে প্রিয়া বলল, রানা আমি তোবেশি দিন বাচবনা কয়েকটা দিন মাত্র, আমি মরে গেলে মেঘলা কে বিয়ে করিও।

প্রিয়ার কথা শুনে বুকটা কেপে উঠলো.
– এই কি বলছো এসব হঠাত করে এসব।
প্রিয়ার আর কোনো উত্তর নাই, চেয়ে দেখি কাঁদছে।
– কাদছো কেনো?
প্রিয়া চোখের জল মুছতে মুছতে বলল কই না তো।
প্রিয়া আমার কাছে লুকাচ্ছে।
আজ প্রিয়াকে কেনো জানি অস্তিরতা লাগছে, সন্দেহ লাগছে প্রিয়াকে আর কেনোই না এসব বলছে।

রাত টা কেটে গেলে সকাল হলে মেয়েটিকে বিদায় করে দিলাম, ওর বাসার ঠিকানায় একটি রিক্সা ভাড়া করে।
আর আমি প্রিয়াকে নিয়ে আমাদের বাড়ি রওয়ানা হলাম। বাড়ির গেইটে দেখি আরেক জন দাঁড়িয়ে আছে।
– ভাইয়া (মেঘলা)
– হূ তোর ভাবির ব্যাগ নিয়ে বাড়ি যা। আমি বাজার থেকে আসি, কিছু বাজার নিয়ে। আর চাচার সাথে দেখা করে আসি। প্রিয়া যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।
মেঘলা প্রিয়া চলে গেলো। আমি বাজার থেকে ফিরে দুপুরে খেয়ে ঘুমাইছিলাম। জেগে দেখি প্রিয়া আমার কিছু তোলা পিক ছিলো সেগুলো দেখছে আর কাদছে।
বুঝতে পারছিনা, প্রিয়া এতো ইমোশনাল কেনো?
– এই তোমার কি হয়েছে সত্যি করে বলতো?
– কিছু হইনি, তোমার জন্য কাদছি।
কিন্তু আমার জন্য কেনো কাদছো? প্লিজ আমার কিন্তু কেমন কেমন জেনো তোমাকে লাগছে।
প্রিয়ার চাল চলন বাচন ভংগি কেমন জানি দেখাচ্ছে।

রাত এলো, মেঘলা এসে ভাইয়া আমার রুমে আসবে একটু।
– যা আসতেছি।
কিচ্ছুক্ষণ পর মেঘলার রুমে গেলাম।
– ভাইয়া বস।
– হ্যা বল কি জন্য ডেকেছিস।
– ভাইয়া তুমি বাজারে যাওয়ার পর ভাবি টিউবওয়েলে গিয়ে পড়েগেছিলো। পরে মাথায় পানি ঢেলে সুস্থ করি। ভাবি সুস্ত হওয়ার পর আমাকে বলছিলো, মেঘলা তুই তোর ভাইয়া কে খুব ভালোবাসিস না। তোর ভাইয়াকে আমি এত ভালোবাসার পর ও মন পেলাম না। জানিস মেঘলা আমার না খুব ইচ্ছে হয় তোর ভাইয়াকে নিয়ে কোথাও ঘুড়তে যেতে এক সাথে হাটতে ফুচকা খেতে কোথাও বসে গল্প করতে, কিন্তু পারিনা বলতে খুব ভয় করে, জানিস মেঘলা আমার এই ভালোবাসা আমার কাছে রয়ে গেলো, মন থেকে আর কারো ভালোবাসা পেলাম না।

– চুপ করলি কেন তারপর কি বলল,
– তারপর আর কিছু বলেনি, মুখে হাত দিয়ে রুম থেকে তার রুমে চলে যায়।
আমি পিছু পিছু ফলো করে ছিলাম ভাবিকে গিয়ে দেখি কাদছি। ভাইয়া তুমি ভাবির আবদার গুলো পুরন করোনা কেনো। ভাইয়া আমার মনে হয় ভাবির কিছু একটা হয়েছে, আজ পর্যন্ত ভাবি আমাকে কাছে টেনে এত সুন্দর করে কিছু বলেনি। ভাবি কথা গুলো যখন বলছিলো, মনে হচ্ছিলো আমার ভাবির মনে খুব কষ্ট, মনে হয় কাউকে হারিয়ে ফেলেছে।
আমি আর মেঘলা কে কিছু না বলে আমাদের রুমে যাই। প্রিয়া দেখি এখনো মন খারাপ। কিছুই বুঝতে পারছিনা, গতকাল থেকে প্রিয়া কেনো কাদছে আর কেনোই বা মেঘলাকে এসব বলছে। খুব ভয় করছে প্রিয়ার জন্য।

এই প্রিয়া কি হয়েছে বলোতো।
প্রিয়া কিছু বলছে না চুপচাপ,
– চল ভাত খাবে।
– না আমি খাবোনা, আমার ক্ষিদা নাই তুমি খেয়ে নাও।
– প্লিজ এমন করোনা, একটু খেয়ে নাও প্লিজ নয়ত শরীর খারাপ করবে।
– কি আর শরীর খারাপ করবে, আমি তো এমনে তেই
– মানে।
– কিছুনা।
– তাহলে চলো খাবে চলো।
– বললাম না আমি খাবোনা। (একটি রেগে)
প্রিয়ার জন্য আমার চোখ দিয়ে কেনো জানি পানি পড়ছে, প্রিয়া এমন করছে কেনো। কি হয়েছে বলোনা।
– রানা প্লিজ তুমি যাও খেয়ে নাও আমি কিচ্ছু হয়নি।
– তাহলে এমন করছো কেনো।
– জানিনা। যাও তুমি খেয়ে নাও।

মাথা টা নিচু করে, আন্টির ঘরে গেলাম খাবারের জন্য।
আন্টির ঘরে যাইতেই দেখি মেঘলা ও রুমে বসে কাঁদছে, কিছুই বুঝতে পারছিনা। এসব।

আন্টি ক্ষিদা পেয়েছে,
– হ্যা রানা বস। আমি খাবার দিচ্ছি। তোর বউ কই।
– আন্টি ও নাকি খাবে না। আন্টি মেঘলা কাঁদছে কেন? কি হয়েছে?
– জানিনা, বাবা ওই ভালো জানে।
আন্টি খাবার দিলে একটু খেয়ে নিলাম। পেট পুরে খাইতে পারছিনা, মহা ঝামেলায় পড়েছি, এদিকে প্রিয়া অন্যদিকে মেঘলা।
খাওয়া শেষে মেঘলার পাশে গিয়ে বসলাম, কিরে কাদছিস কেন?
মেঘলা বিছানা থেকে নেমেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো, আর বলল, ভাইয়া তোমাকে ছাড়া আমি আর থাকতে পারছিনা, আমাকে তোমার করে নাও প্লিজ।
নয়ত আমি এবার সত্যি সত্যি মরে যাবো। প্রিয়া কথা গুলো বলছে আন্টি দরজার আড়াল থেকে সব শুনছে।

আমি মেঘলার অকথ্য কথা আর না শুনে আবার আমার রুমে এলাম।
আন্টি কিচ্ছুক্ষণ পর, টেবিলে ভাত দিয়ে গেলেন আর বললেন, প্রিয়া কে খাইতে বলিস।
আন্টির প্রিয়ার প্রতি দরদ দেখে আমি মুগ্ধ। ঠিক আছে আন্টি ।

আন্টি চলে গেলে, বিছানায় মাথা দিলাম, প্রিয়া দেখি ঘুমাচ্ছে। আমি ও প্রিয়ার পাশে ঘুমিয়ে গেলাম। রাত যখন ১২ টা আমি লাইট জালিয়ে একা একাই প্রিয়াকে দেখতে ছিলাম, আর প্রিয়ার মুখ স্পর্শ করতে ছিলাম। প্রিয়া আমার হাতের ছোয়ার জেগে উঠে, জেগে উঠলে আমি প্রিয়াকে বলি, টেবিলে খাবার আছে উঠো খেয়ে নাও। প্রিয়াকে বার বার ঘ্যানর ঘ্যানর করাতে প্রিয়া হাত ধুয়ে খাইতে বসে, আমি দরজা টা খুলে টিউবওয়েল এ যাই, টিউওবয়েল থেকে ফিরে দেখি প্রিয়া গলা ধরে লাফাচ্ছে, আমি প্রিয়ার এই অবস্থা দেখে ওরে বলি

এই কি হইছে এমন করছো কেনো?
– রানা আমি এক গ্রাস ভাত খাওয়ার পর আমার কলিজায় পুরে যাচ্ছে।
– কি বলছো এসব।
– রানা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, পুরে যাচ্ছে গলা আমাকে বাচাও। প্লিজ রানা আমাকে বাচাও আমি আর পারছিনা।
প্রিয়া হাফাচ্ছে, প্রিয়ার কাকুতি মিনতি দেখে দৌড়ে গিয়ে আন্টির দরজায় নক করলাম –
আন্টি আন্টি চাচা –
আন্টি ও চাচা লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়ে।
দরজা খুলে বলে কি হয়েছে রানা।
চাচা প্রিয়া গলা ধরে চিলাচ্ছে আর বলছে রানা আমার গলা পুরে যাচ্ছে।
– চল দেখি।
– কি হয়েছে তোমার মা। কি হয়েছো বলো।
– প্রিয়া হাফাচ্ছে আর বলছে, চা আ চা চা চা আমার গলা পুরে যাচ্ছে, আমি একটু ভাত খাওয়ার পর।
রানা প্লিজ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আমি আর পারছিনা। রানা।
আমি প্রিয়ার কাছে বসে প্রিয়ার মাথাটা আমার কোলে নিয়ে তোমার কিচ্ছু হবেনা। প্রিয়া তুমার কিচ্ছু হবেনা। আমি আছি না।
– চাচা প্লিজ জরুরী এম্বুলেন্স ফোন লাগান।
– আচ্ছা আমি এক্ষুনি ফোন করছি।
– রানা প্লিজ তাড়াতাড়ি আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাও প্লিজ।
আমাদের সবার চেঁচামেচিতে মেঘলা ও আমাদের রুমে এসে ভাবি কি হয়েছে, ভাইয়া ভাবি এমন করছে কেনো।
ও ভাইয়া ভাবি এমন করছে কেনো।
– কিচ্ছু হইনি তোর ভাবির। প্রিয়া দেখো তুমি ঠিক হয়ে যাবে।
এম্বুলেন্স এলে প্রিয়াকে নিয়ে উঠে গেলাম।
হাসপাতালে নেমে চিল্লায়া ডক্টর কে ডাক দিলাম। ডক্টর সাহেব প্লিজ আমার স্তীকে বাচান। আমার স্তী গলা ধরে চিলাচ্ছে আর বলছে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আমার গলা পুরে যাচ্ছে প্লিজ ডক্টর।
– প্লিজ আপনি শান্ত হন আমরা দেখছি।
নার্স রা এসে, প্রিয়াকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেলো।

খুব টেনশন হচ্ছে আল্লাহ সব আমার দোষ আমার প্রিয়াকে তুমি রক্ষা করো। আমার প্রিয়াকে বাচিয়ে দাও। কাদছি আর বলছি।

মেঘলা পাশে এসে, ভাইয়া কেদোনা, প্রিয়া ঠিক হয়ে যাবে,
মেঘলারে বড় দেরি করে ফেলেছি, তোর ভাবির জন্য আজ আমি দায়ী, যদি তোর ভাবির কিছু হয়, আমি বড় একলা হয়ে যাবো। তোর ভাবিকে ছাড়া এখন আর আমার কিচ্ছু ভালো লাগে না। বিধাতা সামী স্তীর ভালোবাসা পবিত্র ভালোবাসা বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই ভালোবাসা যে দুটি মনের একটি মিলন। এ ভালোবাসায় খুব মায়ায় জড়ানো ভালোবাসা।

আমার প্রিয়া আজ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে, মেঘলা তোর ভাবির জন্য দোয়া কর, আমার খুব ভয় করছে। ক’দিন ধরেই কেনো জানি আমার মন ছটপট করছে প্রিয়ার জন্য না জানি আমার প্রিয়ার কিছু হয়েছে,
– ভাইয়া সব ঠিক হয়ে যাবে কেদোনা। আল্লাহ আছে উপড়ে।
মেঘলা আমার মাথাটি ওর বুকে নিয়ে আমাকে শান্তনা দিতে থাকে।
কিন্তু আমার এ হৃদয় একদম মানছে না। কখন ডক্টর সাহেব বের হবে কি যে বলবে। বড্ড ছটপট করছি আমি।

আদাঘন্টা পর ডক্টর এসে বললেন…
পেসেন্টের আপনি কে হন।
– জি আমি হাসবেন্ড
– পেসেন্ট কে বিষ খাওয়ানো হয়েছিলো। এটা কি করে হলো, আর একটু দেরি করলে পেসেন্ট কে বাচানো যেত না।
– ডক্টর সাহেব আপনি এসব কি বলছেন?
– দেখুন, আমরা পেসেন্টের কাছ থেকে বিষ পেয়েছি।
পেসেন্টের কাছে আপনারা এখন যেতে পারেন আর হ্যা, আপনি যাওয়ার সময় একা আমার সাথে দেখা করে যাবেন।
– আচ্ছা ঠিক আছে।
ডক্টর চলে গেলে প্রিয়ার কাছে সবাই গেলাম, প্রিয়া কাঁদছে বেডে শুয়ে,
আজ বুঝতে পারলাম কে আপন কে পর, প্রিয়াকে মারার জন্য এই ব্যাবস্তা করা হয়ে ছিলো। নিশ্চই এটা মেঘলার কাজ, মেঘলা এত টা খারাপ মেয়ে আমি জানতাম না।
– প্রিয়া এখন কেমন লাগছে।
– হুম ভাল আছি।
উঠে পড় বাসায় যাবো।
ভাবি আসো, চলো তো তুমি আমার সাথে, মেঘলার কথা শুনলে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
এই উঠো বলছি, না কি হাসপাতালে শুয়ে থাকবে। চলো।
প্রিয়ার হাত ধরে বাহিরে এলাম, একটি ভ্যান ঠিক করে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলাম,
বাড়িতে পৌছার পর ভাবছি মেঘলা কে কি বলে দেবো, তাকে বিষ খাওয়ানো হয়েছিলো। না বলবো না, কারন ও জেদি শুনলে যদি রাগ করে, আর কখন কি করবে বলা যায়না। ধুর সালা ডক্টর তো দেখা কর‍তে বলেছিলো। সকালে না হয় যাবো এখন না।
প্রিয়া আগামীকাল বিকালে তোমাদের বাড়িতে চলে যাবে, যাহা আছে তোমার সব গাট্টি করে নিও।
– গাট্টি করে নিও মানে।
– এখানে আর থাকবো না।
কিন্তু কেনো থাকবে না। কেউ কি কিছু তোমাকে বলেছে নাকি?
– কেউ কিছুই বলেনি, থাকব না এটাই ফাইনাল,
– ওকে, প্রিয়া খুব খুশি।
কথাগুলো প্রিয়ার সাথে বলতেই মেঘলা এসে ভাইয়া আমাকে একলা রেখে চলে যাবে।
– আমি চুপ
– ভাইয়া কথা বলছো না কেনো। আমাকে একলা করে চলে যাবে।
আমি চুপ আমি চুপ থাকাতে মেঘলা রাগ করে চলে যায়।
ধুর না যায়, ও যে আমাদের সাথে ব্যায়মানি করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য।
ঘন্টা খানেক পর মেঘলা এসে ভাইয়া একটু আসবে, আমার রুমে, প্রিয়া তখন টিউবয়েল পারে কাজ করছে, মেঘলা চুপিসারে রুমে ডুকেছে,
– না আমি গিয়ে কি করবো।
– প্লিজ আসো, না।
মেঘলার সাথে আমি ওর রুমে যায়, দেখি কি বলে।
– বল এখন কি বলবি। আসলে কি জানেন ওকে ও তো আমি ভালোবাসি মন ডা মানে না যখন ও আমাকে ডাকে।
– ভাইয়া তোমরা কি সত্যি সত্যি চলে যাবা।
– হুম আর আসব না। কোন দিনো আসব না।
– পর হয়ে গেছো আসবা কেমনে আমি কি তোমার কেউ হই কেউ না আমি তোমার। পুরোনো দিনের কথা সব তো ভুলেই গেছো।
মেঘলার চোখে পানি ছলছল করছে। কখন টপ করে ওর গাল বেয়ে পড়ে।
– আমি নিরবে মেঘলার কথা শুনছি।
– মেঘলা আর কিছু বলবি।
– আমি তোমাকে আমার করে পেতে চাই।
প্লিজ এসব আমার আর শুনতে ভালো লাগে না। ভালো থাকিস।
এই বলে আমি মেঘলার কাছ থেকে যখন চলে আসতে থাকি মেঘলা আমার হাত টি টেনে ধরে মেঘলা আমাকে বলে, তোমাকে একবার জড়িয়ে ধরতাম, আমাকে একটু ধরতে দিবা।
বাড়ি তো ফাকা কিন্তু কেউ যদি দেখে তাহলে তো আরেক প্রবলেম কি যে করি এরে নিয়ে তো কিছুই পারিনা।
– আমি মাথা টা নিচু করে হু বলে মাথাটা ইশারায় জানাই। মেঘলা আমাকে জড়িয়ে ধরে।
পরে আমি মেঘলার রুম থেকে বের হয়, বাহিরে আসা মাত্রই চাচা বাড়ির ভেতরে ঢুকে, চাচা বলে রানা আজ মেঘলার জন্য সম্নধ্য আসবে, ছেলে আমার পছন্দ খুব ভালো ছেলে, ছেলে নেঘলাকে কে পছন্দ করলেই বিয়ে।
চাচার কথা শুনে বুকটা চ্যাত করে উঠলো।
– তাই ভালো চাচা।
– শোন বিকালে বাড়ি থাকিস,
আমি হু বলে মাথা নাড়ায়।
বিকাল হলে কুটুম আসে বাড়িতে মেঘলাকে দেখার জন্য তারা দেখে মেঘলাকে খুব পছন্দ করে, আগামী দুদিন পর মেঘলার বিয়ে।
মেঘলা কখনোই ভাবতে পারেনি আজ তাকে এভাবে দেখতে আর বিয়ে ঠিক হয়ে যাবে, আমি ও তো অবাক, মেঘলার জন্য কেনো জানি আমার ও খুব খারাপ লাগছে, মেঘলা সেই বিকেল থেকে কাদছে আর ঘরে সাদা কাগজে কি যেনো লিখছে, বুঝতে পারছিনা। মন টা কেন জানি বার বার মেঘলার কাছে ছুটে যেতে চাইছে, চারটি বর্নের সমষ্টি ভালোবাসা শব্দটি সত্যি যেমন আনন্দের তেমনি কষ্টের ও, মেঘলা ও পর হয়ে যাবে দু দিনদিন পর।

Next Continue…

বিঃদ্রঃ আমার লেখা এই গল্পটি বেশ কয়েক জন কপি করছে…কপি করে নিজের নামে চালাচ্ছে। কেমন ডা লাগে কন। এত কষ্ট করে লিখি আর ওরা। এই চোর দের কি করা যায়।

এই রানা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে… (প্রিয়া)
– বলো কি বলতে চাও
– ঘরে আসো এখানে বলা যাবে না।
– কি এমন কথা এখানে বলা যাবে না।
প্রিয়া আমার হাত ধরে টেনে ঘরে নিয়ে যায় তারপর আমাকে বলে… মেঘলার বিয়ে তুমি ভেংগে দাও।
– What তোমার কি মাথা ঠিক আছে
– হ ঠিক আছে যার সাথে বিয়ে হচ্ছে সেই পোলা ভালো না।
– তুমি কেমনে জানো। দেখো প্রিয়া মেঘলার বিয়ে কই হচ্ছে না হচ্ছে সেটা ওর বাবা ভাল জানে । এ নিয়ে তোমার আমারর নাক গলানো ঠিক হবে না।
– না প্লিজ তুমি ভেংগে দাও।
রানা কই রে বাহিরে আয় তো, মার্কেটে যাবো।
– চাচা আসতেছি একটু দাড়ান।
– রানা আমি বলি ভেংগে দাও, যা বলছি তোমার ভালোর জন্যই বলছি।
প্রিয়াকে Avoid করে আমি বের হয়ে এলাম, চাচার সাথে বিয়ের Shoping করতে গেলাম।
চাচার সাথে বিয়ের কেনাকাটা করছি। উনি উনার নিজের পছন্দ মত কাপড় চোপড় কিনছে, আর আমি পিছনে দাঁড়িয়ে আছে ফকিরের মত ব্যাগ নিয়ে।

অবস্য মনে একটু দুষ্টুমি আছে, সেটা কি জানেন, মার্কেটে রংবেরঙ এর মানুষ গুলো কে দেখছে, একা একা ভালই লাগছে।

হঠাৎ করে ডক্টরের সাথে দেখা হয়ে গেলো…
আরে ডক্টর সাহেব..
ভালো আছেন…? (ডক্টর)
হুম ভালো আছি, আপনি ভালো আছেন?
– জি ভালো আছি। এখানে কি করছেন?
– ছোট বোনের বিয়ে তাই চাচার সাথে মার্কেটে আসছি।
– ও আচ্ছা আপনার কি সময় হবে, একটু কথা বলতাম।
আচ্ছা আপনি ঐ দোকানের পাশে জান আমি আসতেছি।
সেদিন ও ডক্টর কি জেনো বলার জন্য ডেকেছিলো। আজো মার্কেটে দেখা হয়ে বলতেছে একটু কথা বলতাম, আজ শোনা দরকার আসলে ডক্টর কি বলতে চায়।
চাচা কে ফাকি দিয়ে ডক্টরের কাছে গেলাম। জি ডক্টর সাহেব বলুন।
আসলে আপনাকে যে কিভাবে বলি বুঝতে পারছিনা। আবার না বললেও নয়। আপনাকে বলা খুব প্রয়োজন।
উনি তো আপনার স্ত্রী না?
জি স্ত্রী।
আচ্ছা প্রথম যেদিন যে মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে এলেন, উনি কে?
– মেঘলার কথা বলছেন? ওর ই তো মার্কেট করতে আসছি।
– O My God.
Anything Problem Doctor?
– Yes Problem, Serious Problem.
আপনাকে যে কিভাবে বলি, বলা ঠিক হবে কি না এটা ও ভাবছি।

বুঝতে পারছিনা। কি এমন কথা বলবে ডক্টর যা বলতে এমন করছে।
তাড়াতাড়ি শোনার জন্য ডক্টর কে বললাম ডক্টর সাহেব একটু তাড়াতাড়ি বলবেন কি?
– আপনার স্ত্রী কি ভালো আছেন?
– জি ভালো আছে,
– উনি কি আপনাকে কিছু বলেছে?
– মানে, কি বলবে,
Actualy আপনার স্ত্রী বেশি দিন বাঁঁচবেন না,
– What কি বলছেন এসব। আপনি কি ইয়ার্কি করছেন।
– না সত্যি বলছি উনি ১ মাস পৃথিবীতে বেচে থাকবেন। কারন আজ আপনি যার মার্কেট করতে এসেছেন। তাকে কিডনি ডোনেট করেছে আপনার স্ত্রী। আপনি নাকি আপনার স্ত্রীকে ভালোবাসেন না। অন্য কাউকে ভালোবসেন।

ডক্টর এর কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরে।
আপনারা ডক্টর হইয়ে কেমন করে একজন জ্যান্ত মানুষের কিডনি কেড়ে নিলেন।
– দেখুন কিডনি না নিলে সে সেই দিনই আত্নহত্যা করতো। আমার কাছে এসে খুব রিকোয়েস্ট করে।

আমরা বাধ্য হয়ে এ কাজটি করি।
ডক্টরের কাছ থেকে চাচার কাছে এলাম, মার্কেট শেষে বাড়ি ফিরি।
প্রিয়া দেখি কাঁদছে…
ঘরে গেলাম ঘরে ঢুকা মাত্রই প্রিয়া চোখের জল মুছে আমার কাছে নকল হাসি দিয়ে বলল-

তুমি এসেছো আমি তোমার জন্যই অপেক্ষা করছি।

আর কত লুকাবে, আর কত নিজেকে কষ্ট দিবে, একটি বারো ভাবলে না নিজের জীবনের কথা।

কি হলো কি ভাবছো (প্রিয়া)
– কই কিছুনা।
– রানা প্লিজ মেঘলার বিয়ে বন্ধ করো।
পাশ দিয়ে চাচা যাচ্ছিলেন, চাচা শুনতে পেয়ে ঘরে প্রবেশ করে, কি ব্যাপার রানা প্রিয়া কি যেনো বলছে শুনলাম, আমি চুপচাপ কিছুই বলছিনা।

চাচা আমি একটা কথা বলতাম রাগ করবেন না তো ( প্রিয়া)
– না মা বলো,
– চাচা আপনি যার সাথে বিয়ে ঠিক করেছেন মেঘলার সেই ছেলেটি ভালো না। প্লিজ এই বিয়ে বন্ধ করুন।
– কি বলছো এসবো।
– হ্যা চাচা ঠিকই বলেছি, ছেলেটি ভালোনা।

চাচা শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। আমিও ঘর থেকে বেরিয়ে আসি। বাড়ি থেকে বেরিয়ে দূরে গিয়ে কোথাও বসে একা একা কাদতে থাকি আর প্রিয়ার কথা ভাবতে থাকি। প্রিয়ারে এ তুই এ কাজ কেনো করলি, একটি বার ও আমাকে বললি না, আমি তোরে ভালোবাসি কি না জিগাইলি না। আমি কি অপরাধ করলাম, নিজের জীবন টা তুই অন্যের মাঝে বিলিয়ে দিলি। আমি তোরে আগে ভালোবাসিনি ঠিক আছে আর আজ মেঘলাকে ভুলে তোরে ভালোবাসতে শুরু করেছি আর তুই আমাকে একলা করে চলে যাচ্ছিস।

একা একা বলছি আর প্রিয়ার জন্য কাদছি। আর এই কান্না দেখে মেঘলার এক বন্ধু মেঘলাকে গিয়ে সব বলে, তোর ভাইয়া বসে বসে কাদছে…

আমি বাড়িতে ফিরলে…