বিয়ের নয় মাস পরেও আমার স্ত্রী তাতসিকে আমার পছন্দ না।তাকে দেখলেই আমার বিরক্ত লাগে।এমন না যে অন্য কাউকে আমার পছন্দ।তাতসিকে আমার এমনিই ভালো লাগে না।আবার এমন ও না যে তার সংসারের প্রতি মন নেই।আমি সহ পরিবারের সবার খেয়াল তাতসি একাই রাখে।আমি বাদে পরিবারের সবাই তাকে অনেক ভালোবাসে।
তাতসিকে আমার পছন্দ না কারণ সে বড্ড সেকেলে।বন্ধুর বউরা কোনো অনুষ্ঠানে গেলে কত পরিপাটি হয়ে যায় আর তাতসি একেবারেই সাধারণ,সাদামাটা!
দামি শাড়ি তার পছন্দ না।কম দামি শাড়ির দিকেই বেশি ঝুঁকে।যদি বলি একটু পার্লারে গিয়ে নিজেকে পরিপাটি করে এসো তাতেও রাজি না।এইসব আমার মোটেও ভালো লাগে না!নিজের বউকে একটু পরিপাটি কে না দেখতে চাই?একা হাতে একটা সংসার সামলায় অথচ আমার মন বোঝে না।
যাই হোক আমার খুব কাছের এক বন্ধু সেদিন বিয়ে করেছে আর তাদের একটা পারিবারিক অনুষ্ঠানে আমাকে,তাতসিকে আর আরো কয়েকজন বন্ধুকে এক সাথে দাওয়াত করেছে।
সব কিছু ঠিক থাকলেও তাতসিকে নিয়ে আমার খুব চিন্তা হয়।বিশেষ করে তার স্টাইল আর রুচি নিয়ে আমি খুব চিন্তিত।
তাতসিকে ডেকে বললাম
“চলো একটা দামি শাড়ি কিনে দিই”
“কি দরকার বলো?আমার তো আলমারি ভরতি অনেক শাড়ি আছেই”
“আমি যেটা বলেছি সেটাই হবে”
“না আমি যাব না।অযথা টাকা খরচের কোনো মানে হয় না”
“টাকা গেলে যাক।তারপরেও তোমাকে পরিপাটি দেখতে চাই”
“যাব না বলেছি তো”
তাতসির অনেক বুঝানোর পরেও যখন সে বুঝলো না নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে এক পর্যায়ে বললাম
“তুমি ভীষণ খ্যাত”
কথাটা বলার পর তাতসির দিকে তাকানো যাচ্ছিল না।তার চোখে পানি ছলছল করছিল।মনে হচ্ছিল পলক পড়লেই চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়বে।সেদিন বন্ধুর বাসায় আর যাইনি।
তাতসিকে তার রুচি আর স্টাইলের জন্য বহুবার বহুভাবে অপমান করেছি।সে বেশ সুন্দরী কিন্তু পরিপাটি না।স্টাইল বুঝে না,রুচি বুঝে না!
প্রায় ৪০ বছর কোনোভাবে তাতসির সাথে সংসারটা করেছি।২টা ছেলে আর একটা মেয়ে হয়েছে আমাদের।মেয়ে বিয়ে দিয়েছি।ছেলেদের জন্য বউ এনেছি।তারা যে যার মত নিজের কাজে ব্যস্ত।
বিয়ের প্রায় ৪০ বছর পর অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছি।সকাল থেকে রাত অবধি তাতসিকে ছাড়া আমি অচল।অচল মানে একেবারেই অচল।আমার হাত পা অকেজো।আমি এখন প্যারালাইজড রোগী!
সকালে চোখ খোলার পর থেকে রাতে না ঘুমানো অবধি তাতসি আমার খেয়াল রাখে।এতটা যত্ন নেয় যে আমি তার কাছে কখনো এর ঋণ শোধ করতে পারবো না।কোনোদিনও না।
কয়েকদিন আগে আমার বন্ধুর ছেলে আমাকে দেখতে এসেছে।সে বলল তার বাবাকে দেখার জন্য আলাদা কাজের লোক রেখেছে।তার মা নাকি নিজের অসুস্থতার জন্য তার বাবাকে মানে আমার বন্ধুর দেখাশুনা করতে পারে না।
একসময় বন্ধুর বউয়ের তুলনা দিতাম তাতসিকে।কত অপমান করেছি তা কেবল আমিই জানি!আমার বন্ধুর ছেলে কথা গুলো যখন আমাকে বলছিল তখন আমি অসহায়ের দৃষ্টিতে তাতসির দিকে তাকিয়ে আছি।আর তাতসি তখন ও নিচের দিকে মাথা ঝুকিয়ে আছে।আমার নিজের কাছে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে।এতটা অপরাধী বোধহয় কোনো খুনিও হয় না।
বৃদ্ধ বয়সে বুঝা যায় স্ত্রী আসলে কি।