এনগেজমেন্ট

– কাল রাতে কোথায় ছিলা তুমি?
– মেঝেতে।
– মেঝেতে মানে? তুমি ফাজলামো করো আমার সাথে?
– ফাজলামি করবো কেন? তুমি কি আমার বেহান লাগো?
– ফাজিল একটা! কই ছিলা তুমি?
– ওই তো! মেঝেতেই।
– মানে কী?
– গতকালকে গ্রাম থেকে চাচা আসছেন। উনাকে খাটে ঘুমাতে দিয়ে আমি মেঝেতে শুইছিলাম।
– ওহ! তোমাকে যে চার পাঁচবার ফোন দিলাম। রিসিভ করলা না কেন?
– আমার ফোনে শব্দ হয় না।
– শব্দ হয় না মানে?
– ফোনে ভাইব্রেশন দিয়ে রাখছিলাম তো।
– ভাইব্রেশন দিয়ে রাখলেও তো বোঝা যায়!
– ভাইব্রেশন হয়েছিলো। কিন্তু আমি ভাবছিলাম চাচা ঘুমের মধ্যে নাক ডাকতেছে।
– ওই, তুমি ভালো হবা না?
– কী করছি আমি?
– তুমি আমার ফ্রেন্ড ইরার সাথে আবার ফাজলামো করছো।
– ফাজলামো কখন করলাম?
– তবে কী করছো? হা?
– আমি অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলাম। সেদিনের মত বাসে দেখি ইরাও বসে আছে।
– তারপর তোমার হাতে একটা খালি প্যাকেট ছিলো। ওটাই ইরাকে দিয়ে বললা, এটা যেন বাসায় নিয়ে খুলে ও। তাই তো?
– খালি হবে কেন?
– তবে কী ছিল?
– হাওয়াই মিঠাই।
– কই গেল হাওয়াই মিঠাই?
– বাসায় যেতে যেতে মনে হয় মিলিয়ে গেছে!
– উফ! তোমাকে নিয়ে আর পারি না। তুমি ওর পেছনে লাগছো কেন বলো তো?
– ও তোমার কাছে আমার কথা বদনাম করে তাই।
– ওরকম করবা না আর ওর সাথে। আর এখন কী করছো তুমি?
– গান শুনি।
– কার গান?
– কলের গান।
– এই যুগে তুমি কলের গান কই পাও?
– ওই তো কছিম মামার কাছে আছে একটা।
– কছিম মামা কে আবার?
– ওই যে আমাদের বাসার সামনে রিকশার যে গ্যারেজ আছে ওটা দেখাশোনা করে। তোমাকে এর আগেও কতবার বলছি মামার কথা!
– খোদা! আমারে উঠাইয়া নাও তুমি!
– আমিন।
– আমিন মানে? এতদিন আমার সাথে প্রেম করে এখন মৃত্যু কামনা? আমি মরে গেলেই বাঁচো। তাই না?
– কী করছি তোমার সাথে ?
– প্রেম করছো।
– এইগুলা আমি বুঝিই না।
– বুঝো না মানে? এই শুক্রবারে যে তোমার বাবা মা কে নিয়ে আমাদের বাসায় আসার কথা?
– বাবা আসবেন না।
– কেন?
– বাবা বলছেন মেয়েটা অপয়া!
– ওই আমি অপয়া হইলাম কবে?
-বাবা ঢাকা আসার জন্য রওনা দিয়েছিলো
। আসার পথে তিনবার জুতা ছিঁড়ছে।
– তুমি কী শুরু করছো আমার সাথে?
– আমার বাবা মা অন্য জায়গায় মেয়ে দেখছে।
– তাহলে এতদিন ধরে তুই এগুলা কী করতেছিস আমার সাথে?
– লীলা খেলা।
– তোকে যদি সামনে পাই আমি!
– কিস করবা? আমি আজ সকালে দাঁত ব্রাশ করি নাই কিন্তু।
– অসভ্য। ফাজিল! তোর সাথে রিলেশনে জড়ানোই ভুল হইছে আমার।
– ওকে। ভুল শুধরে নাও।
– তাই নিবো। তোর সাথে ব্রেক আপ আমার। এখন থেকেই।
– ব্রেক আপ বললেই হবে?
– আর কী লাগবে?
– তোমাকে যে গত মাসে আংটি দিলাম, ওটা ফেরত দিতে হবে না?
– ওটা ফেরত নিয়ে কী করবি তুই?
– বিক্রি করে বাড়ি ভাড়া দিব। আর টাকা বাচলে এক প্যাকেট বেনসন কিনব।
– বদমাশ!তুই না আমার মাথা ছুঁয়ে সিগারেট খাওয়া বাদ দিলি?
– আমি খাব না তো। নাবিলা খাবে।
-নাবিলা খাবে মানে? তুই এই আংটি বিক্রি করে নাবিলাকে সিগারেট খাওয়াবি?
রূপা মিনিট দুই কথা বলতে পারলো না ফোনে। তারপর ডুকরে কেঁদে ফেললো। কেঁদেকেটে কান্না জড়ানো কণ্ঠে বললো, বেশ তুমি থাকো। আমি তোমার আংটি খুলে ফেলছি। এখনই নিয়ে আসছি।
কলিং বেল বাজতেই দরজা খুলে দিলেন মা। রূপা কান্না করে চোখমুখ এত লাল করেছে যে ওকে পদ্মফুলের মত লাগছে এখন।
অপ্রত্যাশিতভাবে রূপা মা কে দেখতে পেয়ে প্রথমে কিছুটা অবাক হলো। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে ওড়না নিয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে মাকে সালাম করলো। মা আমাকে দেখিয়ে দিয়ে বললো, তোমাদের এনগেজমেন্ট তো আগামী শুক্রবার। কিন্তু তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো। তাই ওকে বললাম, তোমাকে যেন আজই একটু আসতে বলে। তা তুমি কিছু মনে করো নি তো মা?
রূপা হঠাৎ মা কে জড়িয়ে কান্না জুড়ে দিয়ে বললো, মা আপনার ছেলে খুব খারাপ। আমার সাথে সব সময় ফাজলামো করে।
মেঘমুক্ত নির্মল আকাশ।
সেদিন শেষ বিকেলে অলিন্দে আমার পাশে রূপা এসে দাঁড়িয়েছে। রুপাকে আজ মা নিজেই একটা মেরুন রঙের শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে। আমি রূপাকে বললাম, আজ থেকে ইরা বাদ। তোমার পেছনে লাগলাম।
-কেন?
– কারণ তুমি মায়ের কাছে আমার নামে অভিযোগ করেছো।
রূপা আমাকে মারতে মারতে বললো, পাজি, দুষ্ট, ফাজিল, অসভ্য! তোমার জন্য আংটিই খুলে ফেলছি আমি।
– ভালো হয়েছে।
– কেন?
– আশীর্বাদ স্বরুপ মা তোমাকে আর একটা আংটি পরিয়ে দিবেন শুক্রবারে।
– কিন্তু আমি দুটোই পরবো।
– কীভাবে?
– দু হাতের অনামিকায় দুটো।
হেসে ফেললাম দুজনেই। রূপা মাথা রাখলো আমার কাঁধে। সত্যিই “লাইফ ইজ কালারফুল”।