কনফিউজড

রমজান মাসে অফিস করতে মেহরাবের একদম ভালো লাগেনা। তার উপর মিহি একটু আগে কল করে বললো-
“আমার শরীরটা প্রচন্ড খারাপ লাগছে মেহরাব। বুকে ব্যাথা করছে অনেক”।
মিহি। এই মেয়েটাকে অনেক ভালোবাসে মেহরাব। এই পৃথিবীতে তার একমাত্র আপনজন। একমাত্র ভালোবাসার মানুষ। একমাত্র স্ত্রী। মিহির কথাটা শুনে মেহরাবের ভিতরটা ছটছট করলো। তারপরেও স্বাভাবিক হয়ে বললো-

– হয়তো রোজা রাখছো এজন্য শরীরটা দূর্বল লাগছে। তুমি রোজাটা ভেঙে কিছু খেয়ে নাও আগে”।
-আরে না মেহরাব। রোজা ভাঙবো কেনো? তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসিও, দেখি তোমাকে নিয়ে একবার ডাক্তারের কাছে যাবো”।
-আচ্ছা ঠিক আছে”।
মেহরাব ফোনটা কাটলো৷ কিন্তু মনটা মিহির কাছেই পড়ে রইলো।

দুপুর ৩টা। মিহি ঘুমের ঘোরে অনুভব করলো তার মাথায় কেউ হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। অবশ্য তার সেটা ভীষণ ভালো লাগছে। চোখটা আস্তে আস্তে খুললো। দেখলো মেহরাব তার পাশে বসে আছে। মিহি অবাক হলো অনেক। একিইসাথে ৩টা প্রশ্ন করলো-
-তুমি এখন?? কয়টা বাজে?? অফিস নাই তোমার”??
-উফফ। এতো প্রশ্ন করো কেনো? অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি। আর এখন ৩টা বাজে। তুমি কোনো কথা না বলে চুপ করে শুয়ে থাকোতো”।
-এখন শুয়ে থাকলে চলবে? ৩টা বেজে গেছে। ইফতার বানাতে হবেনা”?
মেহরাব মিহির একটা হাত ধরলো। অন্য হাতটা মিহির গালে আলতো করে স্পর্শ করে বললো-
-এখনো অনেক সময় বাকি আছে। তুমি আরেকটু ঘুমাও, রেস্ট নাও”।
মিহি অনুভব করলো “এই ছেলেটা যতোটা সময় তার পাশে থাকে, মনের ভিতর বড্ড শান্তি লাগে তার।

সন্ধ্যা ৬টা। মিহির ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে মেহরাব ভাবছে “একটা মানুষ এতোটা ঘুমাতে পারে কিভাবে? এই মেয়েটাকে যদি কেউ না ডাকে, তাহলে হয়তো ২৪ঘন্টা এই মেয়ের জন্য ঘুমানো কোনো ব্যাপার না। সহজ বাংলায় যাকে বলে “ঘুম পাগলি”। আস্তে আস্তে ডাক দিলো-
– মিহি উঠোও… ৬টা বেজে গেছে”।
প্রথম ডাকে না উঠলেও পরের ডাকে মিহি তাড়াহুড়ো করে বিছানা থেকে উঠে বসলো। কিছুটা বিরক্তি আর টেনশন নিয়ে বললো-
-মেহরাব তুমি আমাকে আগে ডাকবেনা? উফফফ, ৬টা বেজে গেছে। এখন ইফতারির কি হবে? আমি এতো সময় বিছানায় পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিলাম? ধুররর।
– আরে টেনশন নিওনা। তোমার শরীর কিছুটা দূর্বল তো, এজন্য তোমাকে আর ডাকিনি। ইফতারিটা আজকে আমিইই বানিয়ে নিলাম”।
মিহি বড় বড় চোখ করে মেহরাবের দিকে তাকালো।
– তুমিই বানিয়েছো?? ইফতার”??
– হু আমিইই বানিয়েছি। যদিও তোমার মতো এতো ভালো পারিনা, তারপরেও কিছুটা চেষ্টা করলাম। এখন তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে আসো, আজান হয়ে যাবে”।

খাবার টেবিলের সামনে এসে রীতিমত বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো মিহি। চোখটা কপালের খানিকটা উপরে তুলে বললো-
-এতোওওও কিছু?? আমি তো ভাবছিলাম এক দুইটা পদ থাকবে”।
মেহরাব মুচকি হাসলো। বললো-
– এতো অবাক না হয়ে আগে চেয়ারটায় বসো। আর এখানে এত্ত কিছু না, জাস্ট শরবত, পিঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, ছোলা, কাবাব, আর হালিম”।
মিহি কিছু না বলে আবারো মেহরাবের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। এরকম তাকিয়ে থাকা দেখে মেহরাব হাসলো। প্রচন্ড হাসলো। সাধারণত মিহির এরকম চেহারা খুব একটা দেখা যায়না। মেহরাব হাসতে হাসতেই বললো-
– আগে চেয়ারটায় তো বসো। আজান হয়ে যাবে তো”।
– সত্যি করে বলো মেহরাব, এগুলো তুমিই বানিয়েছো??
– হুম আমি বানিয়েছি। শুধুমাত্র হালিমটা বাইরে থেকে নিয়া আসলাম। যদি এগুলো খেতে না পারো এটা ভেবে”।
মিহি আর কিছু বললো না। অপেক্ষা করতে থাকলো আজানের জন্য।

আজান হচ্ছে। মেহরাব জাস্ট একটু পানি খেয়ে মিহির দিকে তাকিয়ে রইলো। হালিমটা মিহি স্পর্শ ও করলোনা। ওটা সাইডে রেখে বাকি সবকিছু খেয়েই যাচ্ছে। কোনো শব্দ ছাড়া, কথা ছাড়া। অবিরাম।
মেহরাব আমতা আমতা করে জিজ্ঞাস করলো-
“কেমন হইছে”??
কোনো উত্তর পেলো না।
প্রায় ১০মিনিট ধরে মিহি চুপ করে খাচ্ছে। খাবার শেষে একগ্লাস পানি খেয়ে মিহি চেয়ার থেকে উঠলো। মেহরাবের দিকে তাকিয়ে বললো-
“শুনো… আজকে থেকে সেহরির রান্নাটাও তুমি করবে। আমি এতো মজার হাতের রান্না মিস করতে পারবোনা।
তুমি যা যা পারোনা আমি শিখিয়ে দিবো। ঠিক আছে??
কথাটা বলে মিহি রুমে চলে যায়। মেহরাব গালে হাত দিয়ে মিহির চলে যাওয়া দেখতে থাকে। “প্রশংসা শুনলো না’কি বাশ খেলো” ঠিক এই মুহুর্তে মেহরাবের মাথায় ঢুকছেনা। একদম না !!