# পর্ব :১
১!!
_ও লাইট পিংক শার্ট ওয়ালা ভাইয়া আপনার জানালা খোলা।
ছেলেটা চারপাশে তাকিয়ে রাস্তার ফুটপাত এ দাড়ানো চারটা মেয়ের দিকে তাকালো। এ্যাশ কালারের সেলোয়ার কামিজ পরা মেয়েটার দিকে তাকাতেই, মেয়েটা বাম হাত মুখ চেপে নিজের হাসি কোন মতে দমিয়ে বলল,
_ভাইয়া আপনার দোকানের জানালা খোলা জলদি বন্ধ করুন, নয়ত বাইরের মানুষ ভিতরের জিনিসপত্র সব দেখে ফেলবে।
ছেলেটা কিছুই বুঝতে না পেরে ক্যাবলাকান্তর মত তাকিয়ে রইল। মেয়েটা ছেলেটির বিস্ময় ভরা চোখ দুটো দেখে বুঝলো সে কিছুই বুঝতে পারেনি।
মেয়েটা এবার খানিক অট্টহাসি দিয়ে বলল,
_ভাইয়া নিচে তাকিয়ে দেখেন আপনার প্যান্টের জানালা খোলা।
ছেলেটা নিচের দিকে তাকিয়ে, নিজেকে ওমন লজ্জাজনক অবস্থায় দেখে নিজেকে ধরনী মাতার গভীর অতলে সমাহিত করার ইচ্ছা পোষন করছে। কিন্তু পিচ ঢালা রাস্তায় বোধ হয় সেটা সম্ভব না।
ছেলেটার ভীষন রাগ হলো। নিজের প্যান্টের চেইন আটকে মেয়েটার দিকে তেড়ে গিয়ে বলল,
_বেয়াদপ।
মেয়েটা রাগ করে বলল,
_একে তো আপনাকে সাহায্য করলাম। ইজ্জত যাওয়া থেকে বাঁচালাম, অথচ ধন্যবাদ না দিয়ে আমাকেই বেয়াদপ বলছেন? আপনি একটা মহা ট্রিপল বেয়াদপ।
_আগে যা লোক না দেখছে তোমার জোড়ে চিৎকার শুনে রাস্তার সব লোক দেখছে। তুমি মজা নেয়ার জন্য এমনটা করছ। হেল্প করতে চাইলে আমার কাছে গিয়ে আস্তে করে বলতে।
এবার মেয়েটা থতমত খেয়ে বলল,
_না মানে ইয়ে!
_চুপ! মন চাচ্ছে থাপড়ে সবকটা দাত ফেলে দি। যত্তসব।
ছেলেটা হনহন করতে করতে চলে গেলো। মেয়েটা হা হয়ে তার যাবার পানে তাকিয়ে রইল।
মেয়েটার সাথে থাকা মেয়েগুলোর মধ্যে ইভু বলল,
_মৃদু মন খারাপ করিস না। ঐ ব্যাটা বেয়াদপ।
_ধূর ঐ ক্যাবলাকান্তের কথায় আমি কেন মন খারাপ করবো! কিন্তু কথা হচ্ছে সে আমাকে থাপ্পড় মারার কথা বলছে আর আমি কিছু না বলে তাকে ছেড়ে দিয়েছি। এটা আজব না!
ইভু মৃদুর কাঁধে হাত দিয়ে বলল,
_বাদ দে তো। তা যে ছেলের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিস তার নাম কী?
মৃদু হালকা হেসে বলল,
_মোঃ জাফর হাসান ‌নিভৃত।
_কেয়া বলল, পেশা কী?
_ডাক্তার! চাইল্ড স্পেশালিস্ট।
_বয়স কত?
_৩০।
_কেয়া বলল, তোর থেকে তো প্রায় ছয় বছরের বড়।
_তো প্রবলেম কোথায়!
_কেয়া বলল, এইজ গ্যাপ খুব বেশি মনে হলো না?
_আমার নিজের বাবা আমার মায়ের চেয়ে তেরো বছরের বড়। তো?
_কেয়া বলল, তাও ঠিক। এইজ ডাজেন্ট ম্যাটার! ছেলে কেমন সেটা আগে জানা দরকার।
_রাইট।
_ইভু বলল, মৃদু তোর মত চঞ্চল মেয়ে এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ করছে, বিশ্বাস হচ্ছে না। আমরা সবাই ভেবেছিলাম তুই ঋজুর সাথে লাভ ম্যারেজ করবি।
_জাস্ট শাট আপ ইয়ার। ঋজু জাস্ট টাইম পাস ছিলো। ভালো বন্ধুর মত ছিলাম আমরা। তাছাড়া আমি ঋজুকে কখনো বলিনি আমি ওকে বিয়ে করব। দুজন দুজনার সাথে কমফোর্টেবল ফিল করতাম তাই বন্ধুর মত মিশতাম। এছাড়া কিছুনা। তাছাড়া ও আমার খালাতো ভাই। সে হিসাবে ওকে বিয়ে করা বা ভালোবাসা কোনটাই আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
_কেয়া বলল, কিন্তু ঋজু ভাইয়া তো তোকে ভালোবাসে! তাছাড়া গত দু মাস যাবত তুই তার সাথে রিলেশনে ছিলি।
_সো হোয়াট কেয়া! জরুরি নয় যে, আমাকে ভালোবাসবে আমারও তাকে ভালোবাসতে হবে। ঋজু যখন তার ভালোবাসার কথা আমাকে বলছিল আমি তখন বলেছিলাম, ভালো বন্ধু হিসাবে আমরা সময় কাটাতে পারি। বাট বিয়ে ভালোবাসা এসব আমার পক্ষে সম্ভব নয়। বন্ধুর মত থাকতে পারলে থাকো নয়ত গেট লস্ট।
_জেবা বলল, তুই সব সময় এত স্ট্রেট কাট কথা কী করে বলিস মৃদু।
_মিনমিন করে কথা বলা আমি বরাবরই পছন্দ করি না। তাছাড়া ঋজুর সাথে তোরা রিলেশন বলতে বুঝাতে চাচ্ছিস আমরা প্রেম করেছি বা আমাদের দুজনার মধ্যে অন্তরঙ্গতা ছিলো। বাট নো। উই আর জাস্ট গুড ফ্রেন্ড। নাথিং এলস! যদি ঋজুর সাথে ভালো বন্ধুত্ব করার জন্য ওকে বিয়ে করতে হয় তবে বলবো এর আগেও আমার দুটো ছেলের সাথে ফ্রেন্ডশীপ ছিলো। তবে তারা কী দোষ করেছে! তাদেরও তবে বিয়ে করা উচিত। তাদের ধারনা মতে আমি তাদের সাথে প্রেম করেছি। বাট আমি তাদের বন্ধু ব্যতীত অন্য কিছুই ভাবিনি। আমার কাছে বিয়ের আগে রিলেশন জাস্ট টাইম পাস। ‌সেটা তাদের সবসময় বলেছি। এমন নয় তাদের কাছ থেকে লুকিয়েছি কিছু।
_জেবা বলল, তবুও তাদের সাথে মেন্টালী কী এ্যাটাস ছিলি না!
_দেখ জেবু আমি তাদের সাথে রিলেশনে ছিলাম কেমন, জাস্ট ফোনে কথা বলতাম, হয়ত মাসে দু’একবার কোন রেস্তরাঁয় এ দেখা করতাম। তাছাড়া কাউকে হাত পর্যন্ত ধরতে দেইনি। সবাইকেই প্রথমে বলে দিয়েছিলাম, বন্ধু হিসাবে থাকো নো প্রবলেম। কিন্তু বিয়ের কথা মাথায় আনবে না। আমি বিয়ে তাকেই করবো যাকে বাবা আমার জন্য নির্বাচন করবে। কিন্তু ঋজু সে বিয়ের জন্য পাগল হয়ে উঠল যার কারণে গত মাসে বাধ্য হয়ে তাকে কড়া কথা বলে দিয়েছি, আমাদের মধ্যের সব বন্ধুত্ব শেষ।
_ফাহি বলল, ঋজুর ভাইয়াকে যদি তোর বাবা পছন্দ করতো তবে কী বিয়ে করতি?
_হ্যাঁ করতাম। কিন্তু ঋজুর পরিবার আর আমার পরিবারের দা কুমড়ো সম্পর্ক। তো বুঝতে পারছিস বাবা কখনো বিয়েতে রাজি হবে না। আর না ঋজুর সাথে আমার বিয়ে হবে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কেয়া বলল,
_তুই সব বিষয় কত নরমাল আর সফটলী নিস। আমরা কেন পারি না।
_কারণ তোরা অতিরিক্ত ভিতু!
_যাক আমাদের কথা বাদ দে। তা যার সাথে দেখা করতে যাচ্ছিস তাকে পছন্দ হলে বিয়ে করবি?
_অবশ্যই। বাবা যখন পছন্দ করছে তখন অবশ্যই সে ছেলে এ ওয়ান হবে। আমি শুধু কথা বলে বাসায় মতামত দিবো। সব ঠিক থাকলে দু তিন মাসে আমি মিস মৃদুলা থেকে মিসেস মৃদুলা হয়ে যাবো।
_আচ্ছা যা তবে। বেস্ট অফ লাক। এমনিও লেট হয়ে গেছে অনেক।
_ওকে বাই।
*২!!
বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে নিভৃত। ত্রিশ মিনিট হয়েছে ক্যাফেটেরিয়াতে বসে আছে অথচ মৃদুলার কোন খবর নেই। যেসব মানুষের সময় জ্ঞান কম তাদের নিভৃত একদমই পছন্দ করে না। রাগ লাগছে খুব। পর পর দুটো ক্লোড ড্রিংক’স শেষ করে ফেললো। এমনি আজ রাস্তায় আসার পথে এক অসভ্য মেয়ের খপ্পরে পড়েছিলো। হাতে সময় কম ছিলো নয়ত বুঝিয়ে দিতো নিভৃত কী।
_আই অ্যাম সরি ‌মিঃ নিভৃত আমার দেরী হয়ে গেলো।
_ইট’স ওকে।
অতঃপর দুজন দুজনার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। ‌নিভৃতের রাগ আরো বেড়ে গেলো। নিজের রাগ সামলে মৃদুর দিকে তাকিয়ে বলল,
_আর ইউ মৃদুলা?
মৃদু দাঁত চেপে বলল,
_ইয়েস। নিভৃত?
_হু। বিয়ে ক্যান্সেল।
_আমিও বিয়ে ক্যান্সেল করলাম।
_কথা ধীরে বলবেন মিস মৃদুলা এটা একটা ক্যাফেটেরিয়া। আপনি সিনক্রিয়েট করলে আমি তিনগুন করব।
_করুন না আমিও সবাইকে বলে দি, একজন ডাক্তার হয়ে আপনি বলদের মত রাস্তায় প্যান্টের চেইন খুলে হাঁটছিলেন। মনেহয় পুরো রাস্তাটাকে XX আর XY ক্রোমোজমের পার্থক্য শিখাচ্ছিলেন।
_মুখ সামলে কথা বলবেন। ডোন্ট কল্ড মি বলদ।
_একশো বার বলবো, আপনি বলদ, শুধু বলদ না গাছবলদ। নিজের শরীর দেখিয়ে বেড়ায় আবার বলদের মত রাগ দেখায়। পুরো রাস্তাটাকে মেডিকেল রিসার্চ সেন্টার মনে করেন নাকি!
নিভৃত প্রচন্ড বদরাগী। রাগের মাথায় হুস থাকে না মোটেও। মৃদুর অনেকটা কাছে গিয়ে জামার পিছনে চেইন আর ফিতায় হাত দিয়ে বলল,
_গাছ বলদ যখন বলছেন, তখন জানেন তো গাছ বলদের সব জায়গায় লাফানোর অভ্যাস আছে। তাই
আপনার এগুলো ছিড়ে, আপনার জামার ভিতরে কি রঙের টপ আছে সেগুলো সবাইকে দেখিয়ে, চূড়ান্ত বলদামির পরিচয় দিয়ে দি, কী বলেন!
মৃদু ঢোক গিলে বলল,
_প্লিজ ডোন্ট ডু দ্যাট। আমি একটা মেয়ে।
_সো হোয়াট? মেয়ে হলে আচরন মেয়েদের মত হতে হয়। অসভ্যদের মত নয়!
_প্লিজ জামার ফিতাটা ছাড়ুন।
_ফাস্ট সে সরি!
_সরি সরি।
নিভৃত মৃদুর থেকে খানিকটা দূরে গিয়ে বলল,
_এরপর থেকে কাউকে লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়তে দেখলে তাকে নিয়ে মজা না করে বরং তাকে লজ্জা থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করবেন। বেয়াদপ মেয়ে।
মৃদু মনে মনে বলল,
_তোকে বাগে পাই তারপর লজ্জার নানি কে তোকে মনে করিয়ে দিবো।
নিভৃত মৃদুর দিকে তাকিয়ে ওয়েটারকে ডাক দিলো,
_ওয়েটার!
_জি স্যার।
_আমার কোল্ড ড্রিংক’স এ বিলটা ম্যাডাম দিবে, সাথে তোমাকে পাঁচশ টাকা টিপ দিবে আজ ম্যাডামের খুব ভালো একটা শিক্ষা হয়েছে।
আশি টাকা ড্রিংক’স বিলের সাথে পাঁচশ টাকা টিপ দিয়ে মৃদু হনহন করে বেড়িয়ে গেলো।
*৩!!
_নিভু তুই ডাক্তার হয়েও এত রাগী কেন?
_পৃথিবীর কোন বইতে লেখা আছে ডাক্তার হলে তার রাগ থাকতে পারবে না। গিনেস বুকে আছে?
_না লেখা নেই! তবুও একটা মেয়ের সাথে এভাবে করা উচিত হয়নি তোর!
_বেশ করেছি। বেয়াদপ মেয়ে একটা। মন তো চাইছিল থাপড়ে দাঁত ফেলে দি।
_থাপ্পড় মারলে নাহয় কথা ছিলো! কিন্তু তুই তো সোজা মেয়েটার জামার পিছনের ফিতা ছিড়ে ফেলছিস। ভাবতো ব্যাপারটা কতটা লজ্জার!
_ঐ মেয়ের লজ্জা আছে? তাছাড়া ফিতাতে শুধু হাত দিয়েছি ছিড়ে ফেলিনি।
_ঐ একই কথা। যেই লাউ সেই কদু। সিরিয়াসলি নিভু ইউ আর টু মাচ।
_এখানে আমার কী দোষ!
_আরে ভাই মেয়েটা তো তোর হেল্প ইকরেছে।
_কিসের হেল্প! ও হেল্প নয় আমাকে লজ্জা দিয়ে মজা নিতে চেয়েছিল।
_হুম বুঝলাম। ভাই একটা কথা বল!
_কী?
_আন্ডাওয়্যার পড়ে ছিলি! নাকি——।
_গত সপ্তাহে তোর সাথে গিয়ে যেগুলো কিনেছিলাম সেটাই ছিলো।
অতঃপর নিভু আর তুষার দুজনেই হাসতে হাসতে বসে পড়ল।
তুষার পেট চেপে বলল,
_আল্লাহ রক্ষা করছে যে, তোদের বিয়ে ভেঙে গেছে। নয়ত রোজ রোজ ঘরে ক্রুক্ষেত্র চলত। তোরা দুটোই চরম রাগী। আর নিভু, তোর রাগ তো আউট অফ কন্ট্রোল।
_আজকে আমি যে লজ্জায় পড়ছি তার জন্য তুই দায়ী।
_আমি কী করলাম?
_মনে নেই মেডিকেল থেকে বের হবার সময় ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম, তখন তুই বাথরুমের দরজায় ধাক্কা দেয়া শুরু করলি। তোর চক্করে তাড়াহুড়ো করে বের হতে গিয়ে ওমন ভুল হলো।
_হি হি।
_আবার বলদের মত হাসছিস? আসল গাছ বলদ তো তুই।
_তুষার নিশ্চুপ
*৪!!
_আমি ঐ হারামি ডাক্তারকে ছাড়বো না। ওর নামে মান হানির মামলা করব!
_রিলাক্স মৃদু। দোষ তোরও কিছু কম নেই।
_আমার কী দোষ! নাহয় একটু মজা করছি তা বলে ভরা ক্যাফেটেরিয়াতে দাড়িয়ে আমার সাথে ওমন করবে?
_সরিরে আমার তোকে আগেই বলা উচিত ছিলো।
_কী?
_নিভু খুব রাগী ছেলে! রাগ হলে মেয়ে হোক বা ছেলে, ছোট হোক বা বড় ও কাউকে মানে না। প্রয়োজনে চড় মারতেও থামে না ছেলেটা।
_নিভুটা আবার কে?
_নিভৃত ওকে সবাই ভালোবেসে ছোট করে নিভু ডাকে।
_যেই না চেহারা নাম রাখছে পেয়ারা। ঐ রকম বজ্জাত লোককে ভালোবেসে ‌কেউ কী করে ‌কেউ ডাকতে পারে! ওকে তো গালাগাল দিয়ে ডাকা দরকার। ওকে একবার বাগে পাই। চৌদ্দগুষ্ঠির নাম ভুলিয়ে ছাড়ব বলে দিলাম।
মৃদুর বোন মিথিলা মাথায় হাত দিয়ে বলল,
_ইহা সত্যি কথা দুটো একই স্বভাব ধর্মী লোক কখনো একসাথে বসবাস করতে পারে না। চুম্বক তার বিপরীত মেরুকে আকর্ষণ করে। আর এরা দুজন একই মেরু। কাছে যত আসতে চাইবে তত দূরে ছিটকে যাবে।
*৫!!
মৃদু নিজের বাবার রুমে কাছে গিয়ে বলল,
_আব্বু আসবো?
_হ্যাঁ।
_আব্বু আপনি খেয়েছেন?
_হ্যাঁ তুই।
_নাহ মাথা গরম। ঠান্ডা হলে খাবো।
_আবার কী হলো?
_আব্বু আপনি আমার জন্য অন্য ছেলে দেখুন। নিভৃত সাহেবকে আমার পছন্দ হয়নি।
_আচ্ছা।
_আব্বু একটা কথা বলুন।
_বলেন মা জননী।
_আমি আপনাকে বললাম, ছেলে পছন্দ হয়নি। আপনি একবারও কারণ জানতে চাইলেন না! কেন?
_আমি আমার মেয়েদের বিশ্বাস করি।
মৃদু জয়নাল আবেদিনের (মৃদুর বাবা) হাত ধরে বলল,
_এত বিশ্বাস করা কী ঠিক আব্বু। কোন দিন ভুল করলে আপনি খুব কষ্ট পাবেন তখন।
জয়নাল সাহেব মেয়ের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসলেন শুধু।
জয়নাল আবেদিন,
পেশায় অবসরপ্রাপ্ত আর্মি অফিসার। বছর চারেক আগে তিনি অবসর গ্রহন করেছে। পেনশনের টাকা দিয়ে ব্যবসা করছেন। বেশ ভালোই রমরমা চলছে তার ব্যবসা। মেজ ছেলেই তার ব্যবসার সকল বিষয় দেখেন। মৃদুরা চার ভাই বোন। মৃদুর, বড় ভাই মিহির, মেজ ভাই মাহির আর বোন মিথিলা। মৃদু সবার ছোট।
*৬!!
মৃদু ওর ফুফু জায়েদা বানুর কোলে মাথা দিয়ে বলল,
_ফুপি সত্যি কী মানুষ ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আগাম কোন বার্তা দিতে পারে?
_জানি না। তবে শুনেছি যারা আল্লাহর ধ্যানমগ্ন থাকে তারা নাকি অনেক ক্ষেত্রে আগাম বিপদের ইশারা দিতে পারে। তবে তারা জোর দিয়ে কিছু বলে না নাকি। যা বলার শুধু ইশারায় ইঙ্গিত দিয়ে বলে আর বিস্তারিত কিছুই বলে না!
_তুমি কী এর কোন সত্যতা যাচাই করেছো কখনো?
_নিজের জীবন থেকে প্রমাণ পেয়েছি।
_মানে?
_বহু বছর আগে আমার কিছু রোগের জন্য আমার মা
এক বৃদ্ধ বয়স্ক কবিরাজের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন! ‌তিনি মানুষকে বিভিন্ন সমস্যার জন্য দোয়া পড়ে ফু দিতেন বা পানি পড়া দিতেন। মানুষের হাত দেখে তার আংশিক ভবিষ্যৎ বলে দিতেন। কোন বিপদ আপদের কিছু দেখলে আভাস দিতেন। তার কথা নাকি অনেকসময় সত্যিও হতো। তবে তিনি বিপদ থেকে মুক্তি লাভের কোন উপায় বলতো না। শুধু বলত আল্লাহর যা মর্জি তাই হবে। বিপদে তাকে স্মরণ করুন। তিনিই বিপদমুক্ত করবেন। তিনি এও বলতেন তার ধারণা সত্যি হবে এমন কোন কথা নেই। তিনি শুধু আভাস দেন।
_তারপর তারপর ফুপি!
_মা আমাকে তার কাছে নিয়ে গেলেন। তিনি আমাকে শুধু পানিতে ফু দিয়েছিলেন। তখন তিনি মাকে বলেছিলেন আমার বিয়ে হবার সম্ভবনা নাকি খুব কম। আর দেখছিস তো আজ চল্লিশ বছর বয়স হবার পরও বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারিনি।
_ফুপি এটা তো হতে পারে তার বলা কথায় তোমাদের মনে ভয় গেঁথে গেছে যার কারণে বিয়ে হয়নি বা তোমরা চেষ্টা করো নি।
মৃদু হেসে জায়েদা বলল,
_আমার ষোল বছর বয়স থেকে বাবা মা বিয়ের জন্য চেষ্টা করছে। তবে হ্যাঁ এটা সত্যি যে, বিয়েটা আমার নিজের দোষে হয়নি।
_কেন ফুপি?
_কারো অপেক্ষা করছি। সারা জীবন তার অপেক্ষায় কাটাবো। তবে বিয়ে যে কারণেই না হোক, আমার বিয়ে কিন্তু সত্যি হয়নি। হোক ডায়রেক্টলি বা ইনডায়রেক্টলি সেই বৃদ্ধ কবিরাজের কথা কিন্তু সত্যি হলো।
_ওটা তো কো-ইনসিডেন্স ও হতে পারে!
_হ্যাঁ পারে। তবুও ঘটনাটা ঘটেছে তো!
_কিন্তু ফুপি এগুলো অন্ধবিশ্বাস। যা দেখতে পাওয়া যায় না তাতে কি বিশ্বাস করা ঠিক!
_হাওয়া/বাতাস দেখতে পাওয়া যায় না তা বলে কী হাওয়া/বাতাস নেই? মৃদু আমাদের পৃথিবী পুরোটাই রহস্যে ঘেরা আর রহস্যময় পৃথিবীর রহস্য সমাধান করা যেই সেই ব্যাপার না। আমরা মানুষরা তো কেবল অল্প কিছু রহস্যের সমাধান করেছি। এ বিশ্বের সকল রহস্যের সমধান করা মানুষের সাধ্যের বাইরে। সৃষ্টিকর্তা বিশ্বে বহু মায়াজাল বিছিয়ে রেখেছে। যার একটা রহস্য সমাধান করলে হাজারটা রহস্য সামনে এসে দাড়ায়। এমন রহস্যের বহু উদাহরণ হয়ত পূর্বেও বহুবার আমরা পেয়েছি। সব কিছু যে আমরা চোখে দেখব এমন কোন কথা নেই! চোখ দেখেনা এমন কিছুও আছে রহস্যময় দুনিয়াতে। হয়ত সব বিষয় আমাদের চিন্তা শক্তির বাইরে। কোথাও পড়েছিলাম “প্রকৃতি কিছু রহস্য খুব যত্নে নিজের মাঝে লুুকিয়ে রাখে”।
_ফুপি তবে কী আমাকে নিয়ে বলা কথাও সত্যি হবে?
_কোন কথা?
_মনে নেই বেশ ক’মাস আগে এক পাগলাটে ধরনের বৃদ্ধ লোক অামাকে দেখে বলেছি, তুমি কাউকে ভালোবেসো না। আমি কারণ জিজ্ঞেস করায় সে বলল, যে তোমাকে ভালোবাসবে আর যাকে তুমি ভালোবাসবে তারা সবাই তোমার দ্বারা তীব্র কষ্ট পাবে। আর তুমি নিজেও খুব কষ্ট পাবে। সত্যি কী আমার দ্বারা কেউ কষ্ট পাবে!
_বাদ দে তো এসব অতীত আর ভবিষ্যতের কথা। আমরা অতীত বদলাতে পারবো না,
ভবিষ্যৎ জানতে পারবো না,
আমাদের হাতে আছে শুধু বর্তমান। তাই বর্তমানটাকে নিজের সবটা দিয়ে উপভোগ করাই শ্রেয়।
_হু।
*৭!!
নিভুদের বাসায় আসার পর থেকে তুষার বার বার চারপাশে উঁকিঝুকি মারছে। কিছুক্ষণ পর অর্পি এসে বলল,
_কী ব্যাপার তুষার ভাই কাউকে খুঁজছেন?
তুষার মনে মনে বলল,
_যখন যখন অর্পি আমাকে ভাইয়া ডাকে তখন তখন আমার হার্টে একটা করে মিনি এ্যাটাক হয়।
নিলীমা আক্তার অর্পি। নিভুর একমাত্র ছোট বোন। এবার অনার্স ৪র্থ বর্ষে, ইতিহাস বিভাগে পড়াশুনা করছে।
তুষারের সাথে নিভুর পরিচয় বছর তিনেক এর মত। গত এক বছর আগে তুষার প্রথম নিভুদের বাসায় আসে। তখন অর্পির সাথে পরিচয়। প্রচন্ড ভদ্র আর শান্ত স্বভাবের মেয়ে অর্পি। তবে ভীষণ পড়ুয়া মেয়ে। কিভাবে যেনো তুষার অর্পিকে ভালোবেসে ফেললো। কিন্তু নিভুর ভয়ে নিজের ভালোবাসার কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না। নিভু সত্যিটা জানলে হয় তুষারের হাত ভাঙবে, নয়তো পা। নিজের হাত, পা রক্ষা করার জন্য বেচারা অর্পিকে নিজের মনে কথা জানাতে পারছে না।
_তুষার ভাইয়া চা খাবেন!
_হ্যাঁ দাও।
অর্পি তুষারকে চা দিয়ে। নিজে বইয়ে মুখ গুজে বসলো। তুষার চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,
_তা তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে?
_খুব ভালো।
_হাতে ওটা কিসের বই?
_”আলীবর্দী খান” সহ বেশ কজনার জীবনী।
_”আলীবর্দী খান” কে?
_”মির্জা মুহাম্মদ সিরাজ-উদ-দৌলা” নানা।
_সেটা আবার কে?
_আপনি “নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা” কে চিনেন না!
_ওহ হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়ছে ক্লাস সেভেনে মেবি সামাজিক বিজ্ঞান বইতে পড়েছিলাম।
_তাহলে বলুন তো ” নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা” কত সাল থেকে কত সাল পর্যন্ত রাজ্য শাসন করছে।
তুষার দাঁত বের করে হেসে বলল,
_বহু আগে পড়েছি তো মনে নেই। কাল জেনে জানাই।
_আমি অলরেডি জানি, ১৭৫৬ – ১৭৫৭ সাল। মাত্র এক বছর ছিলেন।
_ওহ। আচ্ছা অর্পি তুমি লাভ স্টোরী পড়ো না! মানে প্রেমের ইতিহাস, কাব্য, উপন্যাস। পৃথিবীতে বহু মহান প্রেমিক প্রেমিকারা তাদের মহান প্রেমের রচনা রেখে গেছেন।
_না। অামার প্যানপ্যানানি মূলক লাভ স্টোরীতে কোন আগ্রহ নেই।
_কেন তুমি লাভ স্টোরী পছন্দ করনা?
_না।
_আচ্ছা তোমার মতে লাভ মানে কী?
_লাভ ইজ ওয়েস্ট অফ টাইম তুষার ভাই।
তুষার মনে মনে বলল,
_ভাইয়ের রাগ নাকের ডগায়। আর বোন কথার আগে পিছে দু’বার ভাই ডাকে। তাদের কাছে ভালোবাসার মত সুন্দর জিনিসকে সময় নষ্টই মনে হয়।
_আপনি আর কিছু বলবেন তুষার ভাই?
_কেনো তুমি কী ব্যস্ত?
_হ্যাঁ। আজকে ডেল কার্নেগির কয়েকটা মোটিভেশনাল রচনা পড়ব।
_ওকে যাও পড়ো। নিভুকে বলো তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হতে।
_ঠিক আছে।
৮!!
এই মুহূর্তে মৃদু দাড়িয়ে আছে নিভুর সামনে।
_মা ও মা। আমার চা?
_মৃদু আমি কাজ করছি হাত বন্ধ। রান্না ঘর থেকে নিয়ে নে।
মৃদু রান্না ঘর থেকে চা নিয়ে ড্রয়িং রুমে আসলো। ভাবলো টিভি দেখতে দেখতে চা খাবে। কিন্তু ড্রয়িং রুমে এসে দেখলো, ঋজু সবার সাথে বসে গল্প করছে।
ঋজুকে দেখলে মৃদুর খুব খারাপ লাগে। ছেলেটা খুব ভালো। ওর মত ছেলেকে স্বামী হিসাবে পাওয়া নিঃসন্দেহে যে কোন ‌মেয়ের জন্য ভাগ্যের ব্যাপার।
মৃদু ঋজুর দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বলল,
_ঋজু তোমার মত স্বামী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার হলেও, আমি সে ‌সৌভাগ্যের ভাগ্যবতী হয়ত নই। আমি আমার বাবাকে ভালোবাসি।
বিয়ের ব্যাপারে যতটা ছেলে ‌মেয়ের মতামত দরকার ততটাই পারিবারিক মতামত দরকার। দুজন দুজনার পরিপূরক। একজনকে পাবার জন্য অন্যদের ছাড়া চরম বোকামি। আর যেখানে আমাদের পরিবারই মানবে না সেখানে ভালোবাসা নামক শব্দের উচ্চারন করাও হয়তো ঠিক না। ঋজু আমাদের পরিবার মানলে হয়তো আমি তোমায় ভালোবাসার সাহস করতাম। এখন সে সাহস করতে পারছি না। তুমি আমার বন্ধু আছো বন্ধুই থাকো।
ঋজু জয়নাল সাহেবকে দেখে সালাম করে বলল,
_কেমন আছেন খালুজান।
_আলহামদুলিল্লাহ্, ভালো। তুমি?
_হ্যাঁ ভালো।
_আচ্ছা তোমরা গল্প করো আমার কিছু কাজ আছে।
_জি।
ঋজু প্রায়ই মৃদুদের বাসায় আসে। ঋজু আর মৃদুদের পুরিবারের সমস্যা বড়দের মধ্যে। বড়রা নিজেদের ঝামেলায় বাচ্চাদের জড়ায়নি। ঋজু নিজের খালাবাড়ি অাসে থাকে কিন্তু ঋজুর মা “মায়া বেগম” গত সাত বছরে মৃদুদের বাড়ির চৌকাঠ পেরোয়নি। এমনকি নিজের বোন মালিহার সাথেও গত সাত বছরে কথা বলেননি। মৃদুর মা ও তেমন। গত সাত বছরের বোনের চেহারা পর্যন্ত দেখেননি!
ঋজু রোজ নামাজে প্রার্থনা করে একটা কো-ইনসিডেন্স হোক নয়তো মিরাক্কেল। যার ফলে ওদের দু পরিবারের সকল ঝামেলা দূর হয়ে যাক। কিন্তু ওর প্রার্থনা আল্লাহ কবে শুনবে তা কেউ জানে না!
মৃদু ঋজুর পাশে বসে বলল,
_চা খাবে?
_হ্যাঁ
_বসো বানিয়ে আনছি।
মৃদু নিজের চায়ের মগটা রেখে রান্না ঘরে গেলো। চায়ের কাপ নিয়ে এসে দেখলো, ঋজু মৃদুর মগ থেকে দিব্যি চা খাচ্ছে। মৃদু , মৃদু করে হাসলো। এ ঘটনা নতুন নয়। মৃদু বহুবার ঋজুকে এ জন্য বকাও দিয়েছে কিন্তু কাজ হয়নি। মৃদু ঋজুর পাশে বসে বলল,
_অভ্যাসটা পাল্টাবে না।
_নাহ্। কিছু অভ্যাস চিরতরে রাখা ভালো নয়কি!
_প্লিজ ঋজু এই পাগলামী গুলো ত্যাগ করো। নয়তো তুমিই কষ্ট পাবে। আমি তোমায় ছাড়া দিব্যি সুখে জীবন কাটাতে পারবো। কিন্তু তুমি তোমার পাগলামী বন্ধ না করলে সারা জীবন কষ্ট পাবে।
_ওমন কষ্ট পেতে আমি হাজারবার রাজি।
মৃদু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
_বাইক এনেছো?
_হ্যাঁ।
_হাওয়াই মিঠাই খেতে ইচ্ছে করছে।
_ওকে চলো।
মৃদু ঋজুকে যত দেখে তত অবাক হয় একটা মানুষ কী করে এত ভালো হতে পারে! মৃদুর নিজের উপর খুব রাগ হয়। কেন ও ঋজুকে ভালোবাসতে পারেনা। কেন ওর মন ঋজুকে বন্ধু ছাড়া অন্য কিছু মানতে পারে না! কী হবে এই ছেলেটাকে একটু ভালোবাসলে। কিন্তু নাহ মৃদুর মন ঋজুকে ভালোবাসার অনুমোতি দেয় না। কখনো দেয়না।
লোকে সত্যি বলে, কিছু মানুষ সারা জীবন আমাদের সাথে থেকে, পাশে থেকে, আমাদের ভালোবাসায় ভরিয়ে দিলেও, আমাদের মন তাকে ভালোবাসে না। আর কিছু মানুষ হুট করে জীবনে এসে পুরো হৃদয়টা দখলে নেয়।
লোকে একটা কথা সত্যি বলে মেয়েরা ভালো ছেলেদের পছন্দ করে না। ভালো ছেলেরা ভনিতা করতে পারে না। এরা নিজের সবটা দিয়ে শুধু ভালোবাসতে জানে। আর এদের শুদ্ধ, আর পবিত্র ভালোবাসা মব মেয়েরা বোঝে না।
১১!!
_কী হলো নিভৃত সাহেব। নিজ থেকে ডেকে কতক্ষণ যাবত চুপ করে বসে আছেন!
_মনে মনে কথাগুলো গুছিয়ে নিচ্ছি।
_আপনার গোছানো শেষ হলে বলবেন।
_ভাবছি আপনি কিছু মনে করবেন কিনা!
_মনে করার মত কথা বললে অবশ্যই মনে করবো।
_মিথিলা বিয়ে করতে রাজি কেন হচ্ছে না।
_আপনি কি আপুকে বিয়ে করতে চান?
_কী? ইন্নালিল্লাহ্। এসব কী বলছেন? মিথিলা আমার সহপাঠী হলেও, আমার নিজের বোনের ন্যায় ওকে স্নেহ করি। ওকে নিয়ে ওসব চিন্তা কখনো মাথায় আনি না।
_তবে আপুর বিয়ের কথা কেন উঠছে?
_দেখুন মিস মৃদুলা, মিথিলার হ্যাজবেন্ড মারা গেছে বেশ ক’বছর আগে। আপনার মনে হয় না,মিথিলার এখন নিজের জীবনটা আবার নতুন করে সুন্দরভাবে গোছানো দরকার! আপনি চান না আপনার বোন আবার হাসি আনন্দে থাকুক!
_হ্যাঁ চাই। কিন্তু আপু বিয়ের জন্য প্রস্তুত নয়। ওকে এর আগে যতবারই নিজেকে নিয়ে নতুন করে ভাবার কথা বলছে, ততবারই চিল্লাপাল্লা করে বাড়ি মাথায় তুলছে। এ জন্য বাবা বলছে ওকে যেনো কেউ এ বিষয়ে আর কিছু জিজ্ঞেস না করে।
_ওহ।
_কিন্তু আপনি হঠাৎ আপুর বিয়ে নিয়ে জানতে কেন চাইছেন?
_আসলে গত পরশু আমার এক বড় ভাইয়া মিথিলাকে দেখে ওকে পছন্দ করেছেন। সে নিতুল এর দায়িত্ব খুশি খুশি নিতে চায়। আমি বিয়ের কথা সরাসরি মিথিলাকে বলতেই রাগ করে চিল্লাপাল্লা করে ফোন বন্ধ করে দিলো। তাই ভাবলাম আপনার কাছে জিজ্ঞেস করি। আমার ভাইয়ার বয়স ৩৫ বছর। সফল ব্যবসায়ী। আসলে পরিবারের সবার দায়িত্ব উঠাতে গিয়ে তার আর বিয়ে করা হয়ে উঠে নি। সেদিন সে মিথিলাকে আমার সাথে দেখলো। তারপর ওর সম্পর্কে সব জেনে বিয়ের কথা বললো।
_হুম বুঝলাম। কিন্তু মিঃ নিভৃত আপু বিয়ের জন্য রাজি না। ও ভাইয়ার স্মৃতি নিয়েই কাটাতে চায়।
_কিন্তু এটা তো ঠিক না। ওর নিজের কথা ভাবা উচিত। সারা জীবন কেউ একা চলতে পারে না।
_সেটা আপনি বা আমি ভাবলেও আপু ভাবে না।
_ওহ। এখন কী বলবো ভাইয়াকে?
_তাকে বলুন অন্য কোথাও বিয়ে করে নিতে। মনে হয়না আপু রাজি হবে।
_আপনি মিথিলার সাথে কথা বলে দেখতে পারেন।
_আমি?
_হ্যাঁ।
_সরি মিঃ নিভৃত এর আগে যতবার এসব বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি, ততবার আপু কম হলেও পনেরো দিন আমার সাথে কথা বলেনি।
_ওহ।
তারপর দুজনেই বড় মাঠটার দিগন্ত পানে তাকিয়ে রইলো।
_আপনি চা/কফি কিছু খাবেন মিস মৃদুলা?
_আজ আমি বিল দিতে পারবো না। ওয়েটারকেও পাঁচশ টাকা টিপ’স দিতেও পারবো না। আমার কাছে অত টাকা আজ নেই।
_হা হা হা। আজ আমিই দিবো চলুন।
১২!!
_অর্পি এই অর্পি!
_কিরে তুই চেঁচাচ্ছিস কেন? শব্দ দূষণ কেন করছিস!
_মানে?
_এই যে তুই এত এত চেঁচিয়ে শব্দ দূষণ করছিস। তুই জানিস না জোড়ে কথা বলা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
_মাফ কর বোন। তোর আর আমাকে বায়োলজি আর সামাজিক বিজ্ঞান বুঝাতে হবে না। মা কোথায়?
_পাশের বাসায় গেছে।
_মা নাকি আমার জন্য তার কোন বান্ধবীরে মেয়েকে দেখছে।
_হ্যাঁ। আগামী শুক্রবার দেখতে যাবো সবাই।
_কেন?
_তোর বিয়ের জন্য। কতকাল আর সিঙ্গেল থাকবি। বয়স তো কম হলো না। দুদিন পর মেয়েরা তোকে আঙ্কেল ডাকবে, তখন মেয়ে পাবি না। আর কতকাল মা বোন কে জ্বালাবি। তোর অর্ডার শোনার জন্য আমরা তোর ওয়েটার না। এবার বিয়ে করে বৌয়ের উপর খবরদারি কর। আর আমাদের শান্তি দে।
_তোকে বিয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে তবে শান্তি দিবো।
_দেখ ভাই আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বই পড়ছি। জ্বালাস না।
_রাখ তোর ইতিহাস। মাকে বলবি আমি তার বান্ধবীর মেয়ের প্রতি আগ্রহী নই।
_তো কাকে বিয়ে করবি? মৃদু আপুর মত মিষ্টি মেয়েটাকে না করে দিলি। দেখিস তোর কপালে রিনা খানের মত ঝগড়াটে বৌ জুটবে।
_তবে রে! দাড়া। তোকে মজা দেখাচ্ছি।
_মজা পরে দেখাস। আগে তোর প্যায়ারের তুষারের কাছে যা।
_তুষার আমাদের বাসায়?
_কতক্ষণ আগে আসছে। এসে আজেবাজে কথা শুরু করছে। আমার পড়ায় ডিস্ট্রাব হচ্ছে।
_কোথায়?
_তোর সাথে নাকি কী কাজ আছে। তোর রুমে বোধ হয় নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।
১৩!!
_নিতুল মাই প্রিন্সেস। হোয়ার আর ইউ?
_খালামুনি আমি ওয়াশ রুমে হাগু করি।
_ইয়াক।
নিতুল মিথিলার মেয়ে। বয়স ছয় বছর। ভীষণ স্মার্ট। মৃদুর সাথে থেকে থেকে মৃদুর মতই দুষ্টু হয়েছে।
_খালামনি আমি ওয়াশরুমে গেলেই তুমি কেন আমাকে ডাকো।
_সরি মা। আজ স্কুলে যাবে না।
_হুম। তুমি নিয়ে যাবে।
_হ্যাঁ জলদি তৈরী হয়ে নাও।
স্কুলে পৌঁছে গেটের সামনে বসে মৃদু নিতুলকে বোঝাচ্ছে,
_নিতুল মা দেখো ক্লাসে বাচ্চাদের সাথে দুষ্টুমি কম করবা। আমি স্কুল ছুটির সময় তোমাকে এসে নিয়ে যাবো।
_আচ্ছা খালামনি।
নিতুলকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে মৃদু নিজের কাজে রওনা হলো। দেরী হয়ে গেছে তাই ভিতরের রাস্তা দিয়ে শর্ট কাটে যেতে চেয়েছিলো। কিন্তু বিপত্তি বাঁধালো কুকুর। একটা কুকুর মৃদুকে বেশ দৌড়ানি দিলো। কোন মতে জান বাঁচিয়ে ভিতরের গলি থেকে বের হতেই গলির মুখে নিভুকে ‌দেখলো। কার সাথে জানি কথা বলছে।
মৃদুকে দেখে বলল,
_আরে মিস মৃদুলা। আপনি এখানে।
মৃদু হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
_হ্যাঁ
_তা এত হাঁপাচ্ছেন ‌কেন?
পর্ব:২
৮!!
নিভু মৃদু দুজন মুখোমুখি দাড়িয়ে। নিভু মৃদুর দিকে তাকিয়ে বলল,
_আপনি এ হসপিটালে কী করতে আসছেন?
_কুত কুত খেলতে আসছি। শুনলাম এখানে গোল্লাছুট খেলার প্রতিযোগিতা হয়, আর গাছ বাদররা সেখানে অংশ নেয় তাই বিনোদিতো হতে এসেছি।
_আপনি নিজেই তো ফুল প্যাকেজ বিনোদন বক্স।
_আজকাল হসপিটাল অর্থোরেটি বড্ড কেয়ারলেস।
নিভু ভ্রু কুচকে বলল,
_কেন?
_নকল করে পাশ করা ডাক্তারদের চাকরি দেয়। আল্লাহ্ জানে কোন পেশেন্টকে ভুল ঔষধ দিয়ে না মেরে দেয়।
_আপনি নিজেরটা দেখবেন। দেখবেন আপনাকে না আবার ভুল ঔষধ দিয়ে ছেলে থেকে মেয়ে বানিয়ে দেয়।
_এক্সকিউজ মি! ছেলে থেকে মেয়ে বানিয়ে দেয় মানে? আপনার মতে কী আমি ছেলে?
_তবে কী আপনি ছেলে নন। তবে কী তৃতীয় লিঙ্গের কেউ। ওহ মাই গড!
_মিঃ নিভৃত এটা হাসপাতাল বলে কোন সিনক্রিয়েট করছি না। নয়ত আপনার অবস্থা বারোটা বাজিয়ে ছাড়তাম।
নিভু মৃদুর কথায় গুরুত্ব না দিয়ে, মিথিলার দিকে তাকিয়ে বলল,
_মিথিলা তুই এখানে?
_আর বলিস না নিভু,
মাঝ পথে মৃদু দুজনকে থামিয়ে বলল,
_এক মিনিট এক মিনিট। মিথিলা আপু তুমি আর মিঃ নিভৃত দুজন দুজকে তুই তুকারি করে কেন বলছো?
_মিথিলা হেসে বলল, তোকে না বলেছিলাম নিভু আমার ক্লাসমেট। HSC পর্যন্ত আমরা একসাথে পড়াশুনা করেছিলাম। তারপর নিভু মেডিকেলে চান্স পেলো আর আমি অনার্সে।
_হয়েছে হয়েছে। আর বলতে হবে না।
নিভু মৃদুর দিকে তাকিয়ে বলল,
_মিথিলা উই আর গুড ফ্রেন্ড। আমরা আমাদের মত করে কথা বলি। বাইরের লোকের দিকে কান না দিয়ে তুই আমার সাথে কথা বল।
_গতকাল রাতে আমার মেয়ে নিতুল এর সাথে দুষ্টুমি করতে গিয়ে মৃদুর হাতের কব্জি হয়তো হালকা মচকে গেছে, নয়তো ভেঙে গেছে। ওর নাকি ব্যথা করছে তবে তেমন বেশি না। তবুও চেকাপ করাতে আনলাম ভেঙেছে কিনা দেখার জন্য! এক্স-রে করালেই হয়ত ডাক্তার বলতে পারবে!
_আমি কী দেখতে পারি?
_মৃদু বলল, সরি আমি হাতুরে ডাক্তারদের দেখাই না।
_মিথিলা বলল, আহ মৃদু জেদ করিস না তো। কই হাতটা দেখি।
মিথিলা নিজেই মৃদুর হাতটা তুলে নিভুর দিকে বাড়িয়ে বলল,
_দেখতো নিভু! ভেঙেছে কিনা!
নিভু হালকা করে হাতে চাপ দিলো। মৃদু ঠোঁট কামড়ে ব্যথা লুকালো।
নিভু ভালো করে পর্যবেক্ষন করে বলল,
_নাহ ভাঙেনি তবে মচকে গেছে। একটা ডাইক্লোফেনাক জেল ‌লিখে দিচ্ছি, আর ব্যথার ঔষধ। এক সপ্তাহে ঠিক হয়ে যাবে। হাতে কদিন প্রেশার কম দিবেন।
_মৃদু মিথিলার দিকে তাকিয়ে বলল, আপু উনি তো শিশু বিশেষজ্ঞ, আর আমরা অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ দেখাবো। উনি কিভাবে কোন প্রকার পরীক্ষা না করে বলে দিলো ভাঙেনি? উনি কিভাবে বুঝলো?
_নিভু বলল, এতটুকো বোঝার জন্য অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ বা ডাক্তার হতে হয়না। সাধারণ মানুষও বোঝে।
_তবুও আমি ডাক্তার দেখিয়েই ঔষধ নিবো। আপনার ভুল চিকিৎসার ফলে কিনা আমার হাতটাই হারাতে হয়।
_তো দাড়িয়ে আছেন কেন? যান যান। ডাক্তারের ভিজেটিং ফি সহ, একগাদা টাকার টেস্ট দিবে, ঔষদের দাম তো আলাদা। আর সময়ের হিসাব নাহয় না বললাম। আমি মিথিলার কথা ভেবে এতগুলো টাকা নষ্ট করা থেকে বাঁচালাম। বাকি বিশ্বাস না হলে যান। আপনার মনের শান্তির জন্য হলেও এক্স-রে করাতে পারেন।
_মিথিলা মৃদুর দিকে তাকিয়ে বলল, তুই চুপ কর। নিভু তুই জেলটার আর ঔষধের নাম লিখে দে।
ওরা মৃদুর থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাবার পর তুষার বলল,
_কিরে কী দেখছিস?
_মেয়েটা সুন্দর।
_কোন মেয়েটা?
_মিস মৃদুলা।
_মানে?
_না মানে একেবারে সাধারন। সবসময় সেলোয়ার কামিজ পরে, সাথে ইয়া বড় একটা ওড়না, বেশ লাগে দেখকে। পাট কাঠির মত শুকনা, তবে স্নিগ্ধ। তবে রাগ প্রচন্ড। ওর রাগ আর ইগো কম থাকলে আমি ওকে বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলে দিতাম।
_রাগ তো তোরও অনেক বেশি। তা বলে কী মেয়েরা তোকে বিয়ে করবে না!
_ব্যাপারটা তেমন নয়। আসলে সংসার সামলানোর জন্য ঠান্ডা মেজাজের একটা মেয়ে দরকার। আর মৃদুলার রাগ তো দেখছিস। ও মেয়ে পারলে ভরা মজলিশে আমাকে উত্তম মধ্যম দেয়। এমন বিয়ে করে ঘরটাকে যুদ্ধের ময়দান বানাতে কে চায় বল!
_হা হা হা।
৯!!
_মৃদু আমাকে বিয়ে করতে তোমার প্রবলেম কী?
_ঋজু তোমাকে হাজার বার বলেছি আমি বিয়ে তাকেই করবো যাকে বাবা পছন্দ করবে। আর তোমার পরিবারে, আমার বিয়ে দিতে বাবা কখনো রাজি হবেন না।
_তাহলে চলো পালিয়ে যাই।
_থাপড়ে দাঁত ফেলে দিবো। সাহস কী করে হয় তোমার পালিয়ে যাবার কথা বলার। আমি তোমায় কতবার বলছি আমাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বের চেয়ে আগে বাড়ানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আর নিজের পরিবারকে কষ্ট দিয়ে পালানোর মত গাধামি আমি জীবনেও করবো না।
_তাহলে আমি কী করবো মৃদু?
_তুমি তোমার আর আমার পরিবারকে রাজি করাতে পারলে, আমার কোন অবজেকশন নেই।
_সে অসম্ভব একরকম। জানো তো তোমার আর আমার পরিবারের মধ্যে কত ঝামেলা।
_ঋজু সেটাই বলতে চাচ্ছি আমি। আর এ ঝামেলার সমাধান হওয়া অনেকটা এভারেস্ট জয় করার মত কষ্টকর। তোমার পরিবার যা করছে তা ক্ষমার অযোগ্য।
_কিন্তু মৃদু এতে আমার দোষ কোথায়?
_শোনো ঋজু তোমার কোন দোষ নেই। দোষ নেই দেখেই তো বাবা আমাকে কখনো তোমার সাথে মিশতে বারণ করেননি। নয়ত সাত বছর আগে হওয়া ঘটনার পর তোমার মনে হয় আমাদের দু পরিবারের মধ্যে কখনো সম্পর্ক ভালো হতে পারে!
_কিন্তু মৃদু।
_শোনো ঋজু। উই আর কাজিন। ছোট বেলা থেকে দুজন দুজনকে চিনি জানি। বেশ ভালো বন্ধুত্ব ছিলো আমাদের। কিন্তু তারপর সাত বছর আগে ঘটা সে ঘটনার পরও আমরা দুজন ভালো বন্ধু হিসাবে থেকেছি। বাবা সেটা জানেও। তিনি তাতে কোন আপত্তি করেননি। ‌কিন্তু বাবার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব না। পৃথিবীতে আমি আমার বাবা ব্যতিত কারো কথা ভাবতে চাই না। সো প্লিজ লিভ মি। আর নিজের মত নিজের জীবন সাজাও।
_মৃদু প্লিজ আমার কথা শোনো।
ফোনটা কেটে দিলো মৃদু। ভালো লাগছে না ওর কারো সাথে কথা বলতে।
ঋজু ফোনের দিকে কতক্ষন তাকিয়ে থেকে ওর বড় ভাই ইফতির কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে দিলো। ইফতি কিছুটা বিচলিত হয়ে বলল,
_কী হয়েছে ঋজু। কাঁদছিস কেন?
_ভাইয়া মায়ের ভুলে এতগুলো জীবন নষ্ট হয়ে গেলো। আমার মৃদুকে চাই ভাইয়া, আমার মৃদুকে চাই। প্লিজ ভাইয়া কিছু একটা করে আমাদের দু পরিবারের দ্বন্দ মিটিয়ে দাও। মৃদুকে ছাড়া আমি মরে যাবো।
ইফতি নিজের ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
_ভাই তুই ভালো করে জানিস এটা অসম্ভব। আমাদের দুই পরিবারের দ্বন্দ সমাধান করা কতটা কষ্টকর তা তো তুই জানিস।
_তখন মৃদুও বলল, আমাদের দুই পরিবারের দ্বন্দ সমাধান করা অনেকটা এভারেস্ট জয় করার মত কষ্টকর। কিন্তু ভাইয়া এভারেস্ট জয় করা হলেও অসম্ভব তো নয়। বহু লোক এভারেস্ট জয় করেছে। তবে আমরা কেন আমাদের পরিবারের সমস্যা সমাধান করতে পারবো না।
_আচ্ছা আমাকে ভাবতে দে।
_আচ্ছ।
_তার আগে একটু হাসি দে। আমাদের ঋজুর মুখে হাসি ছাড়া কান্না মানায় না।
ঋজু হালকা হাসি দিলো।
ইফতি নিজের ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ভাবল,
_ছেলেদের হাসি যে কতটা মনমুগ্ধকর হতে পারে তা আমাদের ঋজুকে না দেখলে জানতাম না। ঋজু! আমাদের ঋজু নিজের নামের মতই সরল মনের। কুটিলতা ওকে স্পর্শ করতে পারে না। ছোট বেলা থেকে আমাদের পরিবারের ঋজুর মত সুন্দর ছেলে আর একটা হয়নি। যেমন দেখতে ফিট, স্মার্ট, সুন্দর, স্বভাবে ততটাই নরম, ভদ্র আর সরল। এই ছেলে এত সরল যে ভবিষ্যতে কষ্ট না পায় তা নিয়ে খুব চিন্তা হয়।
১০!!
_হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।
_ওয়ালাইকুম আসসালাম।
_কে বলছেন?
_মিস মৃদুলা, আমি নিভৃত!
_আপনি আমাকে কেন ফোন দিয়েছেন?
_আমার আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো। কোথাও মিট করি?
_কী কথা?
_আই থিংক ফোনে বুঝানো সম্ভব নয়। দেখা করাই উত্তম।
_কেনো দেখা করবো?
_মিথিলার ব্যাপারে কথা ছিলো!
_কী? আপুর ব্যাপারে কী কথা?
_দেখা না করলে কী করে বলবো।
_ওকে কোথায় দেখা করতে হবে!
_আমার হসপিটাল থেকে দূরে বড় মাঠটা সেখানে।
_আচ্ছা।
_কখন আসবেন?
_কালকে বিকালে।
_ওকে ধন্যবাদ।
ফোনটা রেখে মৃদু ভাবলো, ঐ ব্যাটা ডাক্তার আবার আপুর ব্যাপারে কী বলবে?

_মা ও মা। আমার চা?
_মৃদু আমি কাজ করছি হাত বন্ধ। রান্না ঘর থেকে নিয়ে নে।
মৃদু রান্না ঘর থেকে চা নিয়ে ড্রয়িং রুমে আসলো। ভাবলো টিভি দেখতে দেখতে চা খাবে। কিন্তু ড্রয়িং রুমে এসে দেখলো, ঋজু সবার সাথে বসে গল্প করছে।
ঋজুকে দেখলে মৃদুর খুব খারাপ লাগে। ছেলেটা খুব ভালো। ওর মত ছেলেকে স্বামী হিসাবে পাওয়া নিঃসন্দেহে যে কোন ‌মেয়ের জন্য ভাগ্যের ব্যাপার।
মৃদু ঋজুর দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বলল,
_ঋজু তোমার মত স্বামী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার হলেও, আমি সে ‌সৌভাগ্যের ভাগ্যবতী হয়ত নই। আমি আমার বাবাকে ভালোবাসি।
বিয়ের ব্যাপারে যতটা ছেলে ‌মেয়ের মতামত দরকার ততটাই পারিবারিক মতামত দরকার। দুজন দুজনার পরিপূরক। একজনকে পাবার জন্য অন্যদের ছাড়া চরম বোকামি। আর যেখানে আমাদের পরিবারই মানবে না সেখানে ভালোবাসা নামক শব্দের উচ্চারন করাও হয়তো ঠিক না। ঋজু আমাদের পরিবার মানলে হয়তো আমি তোমায় ভালোবাসার সাহস করতাম। এখন সে সাহস করতে পারছি না। তুমি আমার বন্ধু আছো বন্ধুই থাকো।
ঋজু জয়নাল সাহেবকে দেখে সালাম করে বলল,
_কেমন আছেন খালুজান।
_আলহামদুলিল্লাহ্, ভালো। তুমি?
_হ্যাঁ ভালো।
_আচ্ছা তোমরা গল্প করো আমার কিছু কাজ আছে।
_জি।
ঋজু প্রায়ই মৃদুদের বাসায় আসে। ঋজু আর মৃদুদের পুরিবারের সমস্যা বড়দের মধ্যে। বড়রা নিজেদের ঝামেলায় বাচ্চাদের জড়ায়নি। ঋজু নিজের খালাবাড়ি অাসে থাকে কিন্তু ঋজুর মা “মায়া বেগম” গত সাত বছরে মৃদুদের বাড়ির চৌকাঠ পেরোয়নি। এমনকি নিজের বোন মালিহার সাথেও গত সাত বছরে কথা বলেননি। মৃদুর মা ও তেমন। গত সাত বছরের বোনের চেহারা পর্যন্ত দেখেননি!
ঋজু রোজ নামাজে প্রার্থনা করে একটা কো-ইনসিডেন্স হোক নয়তো মিরাক্কেল। যার ফলে ওদের দু পরিবারের সকল ঝামেলা দূর হয়ে যাক। কিন্তু ওর প্রার্থনা আল্লাহ কবে শুনবে তা কেউ জানে না!
মৃদু ঋজুর পাশে বসে বলল,
_চা খাবে?
_হ্যাঁ
_বসো বানিয়ে আনছি।
মৃদু নিজের চায়ের মগটা রেখে রান্না ঘরে গেলো। চায়ের কাপ নিয়ে এসে দেখলো, ঋজু মৃদুর মগ থেকে দিব্যি চা খাচ্ছে। মৃদু , মৃদু করে হাসলো। এ ঘটনা নতুন নয়। মৃদু বহুবার ঋজুকে এ জন্য বকাও দিয়েছে কিন্তু কাজ হয়নি। মৃদু ঋজুর পাশে বসে বলল,
_অভ্যাসটা পাল্টাবে না।
_নাহ্। কিছু অভ্যাস চিরতরে রাখা ভালো নয়কি!
_প্লিজ ঋজু এই পাগলামী গুলো ত্যাগ করো। নয়তো তুমিই কষ্ট পাবে। আমি তোমায় ছাড়া দিব্যি সুখে জীবন কাটাতে পারবো। কিন্তু তুমি তোমার পাগলামী বন্ধ না করলে সারা জীবন কষ্ট পাবে।
_ওমন কষ্ট পেতে আমি হাজারবার রাজি।
মৃদু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
_বাইক এনেছো?
_হ্যাঁ।
_হাওয়াই মিঠাই খেতে ইচ্ছে করছে।
_ওকে চলো।
মৃদু ঋজুকে যত দেখে তত অবাক হয় একটা মানুষ কী করে এত ভালো হতে পারে! মৃদুর নিজের উপর খুব রাগ হয়। কেন ও ঋজুকে ভালোবাসতে পারেনা। কেন ওর মন ঋজুকে বন্ধু ছাড়া অন্য কিছু মানতে পারে না! কী হবে এই ছেলেটাকে একটু ভালোবাসলে। কিন্তু নাহ মৃদুর মন ঋজুকে ভালোবাসার অনুমোতি দেয় না। কখনো দেয়না।
লোকে সত্যি বলে, কিছু মানুষ সারা জীবন আমাদের সাথে থেকে, পাশে থেকে, আমাদের ভালোবাসায় ভরিয়ে দিলেও, আমাদের মন তাকে ভালোবাসে না। আর কিছু মানুষ হুট করে জীবনে এসে পুরো হৃদয়টা দখলে নেয়।
লোকে একটা কথা সত্যি বলে মেয়েরা ভালো ছেলেদের পছন্দ করে না। ভালো ছেলেরা ভনিতা করতে পারে না। এরা নিজের সবটা দিয়ে শুধু ভালোবাসতে জানে। আর এদের শুদ্ধ, আর পবিত্র ভালোবাসা মব মেয়েরা বোঝে না।
১১!!
_কী হলো নিভৃত সাহেব। নিজ থেকে ডেকে কতক্ষণ যাবত চুপ করে বসে আছেন!
_মনে মনে কথাগুলো গুছিয়ে নিচ্ছি।
_আপনার গোছানো শেষ হলে বলবেন।
_ভাবছি আপনি কিছু মনে করবেন কিনা!
_মনে করার মত কথা বললে অবশ্যই মনে করবো।
_মিথিলা বিয়ে করতে রাজি কেন হচ্ছে না।
_আপনি কি আপুকে বিয়ে করতে চান?
_কী? ইন্নালিল্লাহ্। এসব কী বলছেন? মিথিলা আমার সহপাঠী হলেও, আমার নিজের বোনের ন্যায় ওকে স্নেহ করি। ওকে নিয়ে ওসব চিন্তা কখনো মাথায় আনি না।
_তবে আপুর বিয়ের কথা কেন উঠছে?
_দেখুন মিস মৃদুলা, মিথিলার হ্যাজবেন্ড মারা গেছে বেশ ক’বছর আগে। আপনার মনে হয় না,মিথিলার এখন নিজের জীবনটা আবার নতুন করে সুন্দরভাবে গোছানো দরকার! আপনি চান না আপনার বোন আবার হাসি আনন্দে থাকুক!
_হ্যাঁ চাই। কিন্তু আপু বিয়ের জন্য প্রস্তুত নয়। ওকে এর আগে যতবারই নিজেকে নিয়ে নতুন করে ভাবার কথা বলছে, ততবারই চিল্লাপাল্লা করে বাড়ি মাথায় তুলছে। এ জন্য বাবা বলছে ওকে যেনো কেউ এ বিষয়ে আর কিছু জিজ্ঞেস না করে।
_ওহ।
_কিন্তু আপনি হঠাৎ আপুর বিয়ে নিয়ে জানতে কেন চাইছেন?
_আসলে গত পরশু আমার এক বড় ভাইয়া মিথিলাকে দেখে ওকে পছন্দ করেছেন। সে নিতুল এর দায়িত্ব খুশি খুশি নিতে চায়। আমি বিয়ের কথা সরাসরি মিথিলাকে বলতেই রাগ করে চিল্লাপাল্লা করে ফোন বন্ধ করে দিলো। তাই ভাবলাম আপনার কাছে জিজ্ঞেস করি। আমার ভাইয়ার বয়স ৩৫ বছর। সফল ব্যবসায়ী। আসলে পরিবারের সবার দায়িত্ব উঠাতে গিয়ে তার আর বিয়ে করা হয়ে উঠে নি। সেদিন সে মিথিলাকে আমার সাথে দেখলো। তারপর ওর সম্পর্কে সব জেনে বিয়ের কথা বললো।
_হুম বুঝলাম। কিন্তু মিঃ নিভৃত আপু বিয়ের জন্য রাজি না। ও ভাইয়ার স্মৃতি নিয়েই কাটাতে চায়।
_কিন্তু এটা তো ঠিক না। ওর নিজের কথা ভাবা উচিত। সারা জীবন কেউ একা চলতে পারে না।
_সেটা আপনি বা আমি ভাবলেও আপু ভাবে না।
_ওহ। এখন কী বলবো ভাইয়াকে?
_তাকে বলুন অন্য কোথাও বিয়ে করে নিতে। মনে হয়না আপু রাজি হবে।
_আপনি মিথিলার সাথে কথা বলে দেখতে পারেন।
_আমি?
_হ্যাঁ।
_সরি মিঃ নিভৃত এর আগে যতবার এসব বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি, ততবার আপু কম হলেও পনেরো দিন আমার সাথে কথা বলেনি।
_ওহ।
তারপর দুজনেই বড় মাঠটার দিগন্ত পানে তাকিয়ে রইলো।
_আপনি চা/কফি কিছু খাবেন মিস মৃদুলা?
_আজ আমি বিল দিতে পারবো না। ওয়েটারকেও পাঁচশ টাকা টিপ’স দিতেও পারবো না। আমার কাছে অত টাকা আজ নেই।
_হা হা হা। আজ আমিই দিবো চলুন।
১২!!
_অর্পি এই অর্পি!
_কিরে তুই চেঁচাচ্ছিস কেন? শব্দ দূষণ কেন করছিস!
_মানে?
_এই যে তুই এত এত চেঁচিয়ে শব্দ দূষণ করছিস। তুই জানিস না জোড়ে কথা বলা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
_মাফ কর বোন। তোর আর আমাকে বায়োলজি আর সামাজিক বিজ্ঞান বুঝাতে হবে না। মা কোথায়?
_পাশের বাসায় গেছে।
_মা নাকি আমার জন্য তার কোন বান্ধবীরে মেয়েকে দেখছে।
_হ্যাঁ। আগামী শুক্রবার দেখতে যাবো সবাই।
_কেন?
_তোর বিয়ের জন্য। কতকাল আর সিঙ্গেল থাকবি। বয়স তো কম হলো না। দুদিন পর মেয়েরা তোকে আঙ্কেল ডাকবে, তখন মেয়ে পাবি না। আর কতকাল মা বোন কে জ্বালাবি। তোর অর্ডার শোনার জন্য আমরা তোর ওয়েটার না। এবার বিয়ে করে বৌয়ের উপর খবরদারি কর। আর আমাদের শান্তি দে।
_তোকে বিয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে তবে শান্তি দিবো।
_দেখ ভাই আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বই পড়ছি। জ্বালাস না।
_রাখ তোর ইতিহাস। মাকে বলবি আমি তার বান্ধবীর মেয়ের প্রতি আগ্রহী নই।
_তো কাকে বিয়ে করবি? মৃদু আপুর মত মিষ্টি মেয়েটাকে না করে দিলি। দেখিস তোর কপালে রিনা খানের মত ঝগড়াটে বৌ জুটবে।
_তবে রে! দাড়া। তোকে মজা দেখাচ্ছি।
_মজা পরে দেখাস। আগে তোর প্যায়ারের তুষারের কাছে যা।
_তুষার আমাদের বাসায়?
_কতক্ষণ আগে আসছে। এসে আজেবাজে কথা শুরু করছে। আমার পড়ায় ডিস্ট্রাব হচ্ছে।
_কোথায়?
_তোর সাথে নাকি কী কাজ আছে। তোর রুমে বোধ হয় নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।
১৩!!
_নিতুল মাই প্রিন্সেস। হোয়ার আর ইউ?
_খালামুনি আমি ওয়াশ রুমে হাগু করি।
_ইয়াক।
নিতুল মিথিলার মেয়ে। বয়স ছয় বছর। ভীষণ স্মার্ট। মৃদুর সাথে থেকে থেকে মৃদুর মতই দুষ্টু হয়েছে।
_খালামনি আমি ওয়াশরুমে গেলেই তুমি কেন আমাকে ডাকো।
_সরি মা। আজ স্কুলে যাবে না।
_হুম। তুমি নিয়ে যাবে।
_হ্যাঁ জলদি তৈরী হয়ে নাও।
স্কুলে পৌঁছে গেটের সামনে বসে মৃদু নিতুলকে বোঝাচ্ছে,
_নিতুল মা দেখো ক্লাসে বাচ্চাদের সাথে দুষ্টুমি কম করবা। আমি স্কুল ছুটির সময় তোমাকে এসে নিয়ে যাবো।
_আচ্ছা খালামনি।
নিতুলকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে মৃদু নিজের কাজে রওনা হলো। দেরী হয়ে গেছে তাই ভিতরের রাস্তা দিয়ে শর্ট কাটে যেতে চেয়েছিলো। কিন্তু বিপত্তি বাঁধালো কুকুর। একটা কুকুর মৃদুকে বেশ দৌড়ানি দিলো। কোন মতে জান বাঁচিয়ে ভিতরের গলি থেকে বের হতেই গলির মুখে নিভুকে ‌দেখলো। কার সাথে জানি কথা বলছে।
মৃদুকে দেখে বলল,
_আরে মিস মৃদুলা। আপনি এখানে।
মৃদু হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
_হ্যাঁ
_তা এত হাঁপাচ্ছেন ‌কেন?

# পর্ব :৪,৫
_মিস মৃদুলা আপনি এভাবে হাঁপাচ্ছেন কেন?
_কুকুর—– কুকুর।
_কুকুর কী?
_আমাকে একটা কুকুর ধাওয়া করতাছে।
_কোথায়?
_পিছনে।
_কই দেখি।
নিভৃত কুকুর দেখার জন্য গলির ভেতরে দেখতেই কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করতে করতে তেড়ে আসছিলো।নিভৃত মৃদুর হাত ধরে বলল,
_কুকুর ভাইজান এখনো বোধ হয় অনে রেগে আছে। জলদি পালান।
দুজন কতদূর ছুটে নিভৃতের বাইকের সামনে আসতেই, নিভৃত বলল, বাঁচতে চাইলে বাইকে বসুন।
মৃদু কোন কিছু না ভেবে বাইকে বসলো। দ্রুত বাইক চালু করতে গিয়েও হচ্ছিল না। কিন্তু ককুরটা ঠিকই তেড়ে আসলো। শেষ রক্ষা হলো না। এসেই মৃদুর পায়ে আঁচর বসিয়ে দিলো। আঁচর ঠিকভাবে দেয়ার আগেই বাইক নিয়ে পালালো। নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে নিভৃত বাইক থামিয়ে মৃদুকে জিজ্ঞেস করল,
_কুকুরটা কী কামড় দিয়েছে?
_নাহ তবে আঁচর দিয়েছে।
_সর্বনাশ। নামুন তো তাড়াতাড়ি পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
নিভৃত পাশের দোকান থেকে পানি আর একটা কাপড় কাঁচা সাবান কিনে বলল,
_মিস মৃদুলা কোথায় আঁচর লেগেছে দেখি?
_পায়ের গোড়ালী থেকে একটু উপড়ে।
_কই দেখি।
_না মানে।
_না মানে পরে করবেন, দেখতে দিন। ক্ষত বেশি হলে ইনফেকশন হতে পারে। সেলোয়ারটা হালকা উপড়ে তুলুন।
মৃদু পায়ের গোড়ালীর উপরে সেলোয়ার তুলতেই নিভৃত দেখলো, হালকা আঁচর লেগে ছিলে গেছে, রক্ত বের হয়নি দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। নিভৃত ক্ষত স্থানে সাবান, পানি দিয়ে ধুয়ে বলল,
_টিটেনাসের ইনজেকশন নিয়েছেন কবে?
_গতমাসে নিয়েছিলাম।
_ওহ তাহলে লাগবে না। আমি কী আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিবো।
মৃদু অসহায় চোখে নিভৃতের দিকে তাকালো।
_নিভৃত বলল, আচ্ছা বলুন আমি পৌঁছে দিচ্ছি।
১৩!!
রাতে বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে মৃদু। ঘুম পাচ্ছে না। লোকটা ওকে এত হেল্প করলো অথচ ও একটা ধন্যবাদ পর্যন্ত দিলো না। অনেক ভেবে চিন্তে ‌ফোনটা হাতে নিয়ে নিভৃত কে কল দিলো।
_হ্যালো মিঃ নিভৃত!
_হ্যাঁ মিস মৃদুলা। এত রাতে কী মনে করে?
_ধন্যবাদ।
_কেনো?
_আজ হেল্প করার জন্য।
_ওয়েলকাম। মিস মৃদুলা আপনার পুরো নাম “জামিলা জাহান মৃদুলা” কে রেখেছিলো।
_আমার দাদি। কেন?
_নামের সাথে কাজের খুব মিল তো তাই।
_বুঝলাম না।
_নাম জামিলা, পরিবর্তিত ঝামেলা। যেখানেই যান সেখানেই ঝামেলা লাগে।
_কী বলতে চাইছেন?
_না বোঝার মত কিছু বললাম কী ঝামেলা সুন্দরী
_আমি বিনয়ী হয়ে আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনি তো আপনার নামের মত মীর জাফর।
_হোয়াট?
_জি। মোঃ জাফর হাসান নাম তো আপনার। জাফরের আগে মীর লাগিয়ে দিলেই পলাশীর যুদ্ধের সেই, মীর জাফরের কথা মনে পরে।
_দেখুন বেশি হয়ে যাচ্ছে।
_শুরুটা কে করেছিলো!
_গুড বাই।
_সবসময়ের জন্য গুড বাই।
ফোনটা রেখে মুদু রাগে চেঁচাতে চেঁচাতে সামনের রুমে গিয়ে ওর দাদিকে (দিলারা) বলল,
_ঐ কুটনী বুড়ি আমার নাম জামিলা কেন রাখছিলা!
_তোকে বললাম না আমার মায়ের নাম ছিলো।
_তো তা বলে আমার নাম কেন তার নামে রাখা লাগবে। সে তো মরে গিয়ে বেঁচে গেছে। তার নামের কারণে আমাকে ফাসতে হয়। স্কুল লাইফ থেকে বন্ধু বান্ধব সবাই নামটা নিয়ে মজা করে। আর এখন—।
_এখন কী?
_এখন আমার মাথা। ধূর ভাল্লাগে না।
১৪!!
_হ্যালো মিস মৃদুলা।
_হ্যালো মিঃ নিভৃত।
_ভাবিনি আপনার সাথে পুনরায় আবার দেখা করবো।
_আমারও সেটাই মনে হয়েছিলো।
_ তা কেমন আছেন?
_জি আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?
_ জি ভালো।
_ মিঃ নিভৃত, নিতুল এর রিপোর্টের কী খবর?
_এখন মোটামুটি। স্যালাইন দিয়েছি। দেখা যাক কী হয়। আচ্ছা নিতুল কী বাইরের খাবার বেশি খায়?
_ না তো।
_ তাহলে নিশ্চয়ই খাবারে কোন গন্ডগোল হয়েছে। নয়ত ফুড পয়জনিং কী করে হয়। অতটুকো বাচ্চা গতকাল রাত থেকে বমি করতে করতে ক্লান্ত। পানি শূণ্যতার অভাব পূরণের জন্যই মূলত শরীরে স্যালাইন দেয়।
_হ্যাঁ বুঝেছি।
_আচ্ছা গতকাল রাতে ঠিক কী হয়েছিলো বলুন তো!
_ নিতুল রাতে আমার সাথেই ঘুমায়। রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে বলল, খুব পেটে ব্যথা করছে। সাথে বার বার বমি করছিলো। অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। যার কারণে দ্রুত হসপিটালে নিয়ে আসলাম। কপাল ভালো রাতে আপনি ছিলেন। আমাদের এতটা সাহায্য করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
_গত কালকে রাতে ছোট্ট একটা বাচ্চার অবস্থা খুব খারাপ ছিলো। তার কারণেই গতকাল অনেক রাত অব্দি হসপিটালে ছিলাম। আর আপনাদের হেল্প করতে পারলাম। যাই হোক হেল্পটা মিথিলা আর নিতুলের জন্য করেছি। আপনার জন্য নয়!
_আপনি আমার সাথে সবসময় এভাবে কেন কথা বলেন মিঃ নিভৃত! আমি কী খুব খারাপ!
_ হা হা হা। আপনিও তো বলেন।
_ আচ্ছা আমি আর বলবো না।
_তাহলে আমিও বলবো না।
_ ফ্রেন্ড’স!
_ মিস মৃদুলা তার জন্য আমাকে ভাবতে হবে।
_ আগ বাড়িয়ে বন্ধুত্ব করতে চাইলাম বলে ভাব নিচ্ছেন! আপনার ভাবার প্রয়োজন নেই। হুহ।
মৃদু রাগ করে চলে গেলো। নিভৃত হেসে বলল,
_ বাপরে কী রাগ মেয়েটার।
মৃদু রাগ করে বাইরে দিকে যাচ্ছে। ধুম করে একজনের সাথে ধাক্কা খেয়ে দুজনেই ছিটকে পড়লো।
মৃদু মেয়েটাকে তুলে বলল,
_সরি সরি। আপনি ঠিক আছেন তো! আমি সত্যি সরি।
অর্পি দাড়িয়ে বলল,
_এক শর্তে সরি গ্রহন করতে পারি।
_এ্যাঁ
_ সরি বললেন না। তাই বললাম আমি আপনার সরি এক শর্তে গ্রহন করতে পারি।
মৃদুর কাছে ‌মেয়েটার চরিত্রটা বেশ মজাদার লাগলো। বলল,
_কী শর্ত?
_ বলুন ‌তো আওরঙ্গজেব কত সালে জন্মগ্রহন করেন?
_ ১৬১৮।
_ তারিখ
_ ৪ নভেম্বর ১৬১৮
_ওয়াও! তার স্ত্রীর নাম?
_ “নবাব বাই বেগম”, “দিলরাস বানু” আরো দু একজন ছিলো মেবি তবে ইতিহাসে কিছু জায়গায় দেয়া কিছু জায়গায় দেয়া নেই।
_ ওয়েল ডান। আজ পর্যন্ত খুব কম মানুষ আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছে।
_ তো এবার সরি গ্রহন করুন।
_ ওকে। ফ্রেন্ড’স।
_ ডান।
_ আমি অর্পি।
_ আর আমি——
_ জানি তোমার নাম মৃদুলা।
_ তুমি কিভাবে জানলে?
_ তোমার ছবি দেখেছি।
_ কোথায়?
_ আমার বাসায়।
_ আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
_ আমি নিভৃতের বোন।
_ ঐ গড্ডল ডাক্তার তোমার মত মিষ্টি মেয়েটার ভাই কি করে হয়!
_ প্লিজ আপু আর যাই বলো গড্ডল বলো না। আমার ভাই তো, তাই খুব লাগে।
_ ওকে।
_ চা বা কফি চলবে?
_ স্পেরাইট।
_ ওকে ক্যান্টিনে চলো।
দুজন ক্যান্টিনে বসার পর অর্পি বলল,
_তা আপু হসপিটালে কেন?
_আমার বড় বোনের মেয়ে নিতুল গতকাল রাত থেকে অসুস্থ ওর সাথে ছিলাম।
_ও তা এখন ওর কী অবস্থা।
_ মোটামুটি।
_ওর কাছে কে আছে?
_ মিথিলা আপু আছে।
_ও। আল্লাহ বাচ্চাটাকে জলদি সুস্থ করুক।
_তা তুমি এখানে? তোমার ভাইয়ের কাছে আসছো নাকি?
_না। আরেক গড্ডল এর গায়ের লোম ছিড়ে, মাথার ঘিলু বের করতে এসেছি।
_ কে?
_ আমার ভাইয়ার বন্ধু তুষার ভাইয়া।
_ তুষার ভাইয়াকে তো আমি চিনি।
_ কিভাবে?
_ আমার বাবার বন্ধুর ছেলে। সেই তো তোমার ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ের ঘটকালি করেছিলো।
_ ওহ।
_ তা তুমি তার উপর ক্ষেপলা কেন?
_ আর বলো না, গত পরশু রাতে তুষার ভাই লম্বা একটা মেসেস দিছে, যার মানে এটা যে সে আমাকে ভালোবাসে। সোজা বাংলায় প্রেম নিবেদন করছে।
_ রিয়েলী?
পর্ব: ৫
_রিয়েলী!
_হ্যাঁ।
_তা তুমি কী উত্তর দিলে?
_উত্তর কী করে দিবো গাধাটা তো ফোনই ধরছে না। ফোন দিলে ফোন কেটে বলে যা বলার মেসেজ করে বলো। তোমার সাথে কথা বলার সাহস নেই। কেমন লাগে বলোতো। প্রেম করার সাহস না থাকলে প্রেম নিবেদন করার কী দরকার ছিলো।
_তো এখন কী করবা?
_ গতকাল তাদের বাসায় গিয়েছিলাম। সে আমার সামনেই আসেনি। তাই আজ হসপিটালে এসেছি হাতে নাতে ধরতে।
_গুড যাও ধরো। বেস্ট অফ লাক।
_যাবো তার আগে নিতুলকে দেখে যাবো।
_ আচ্ছা চলো।
নিতুল ঘুমাচ্ছে। মাত্র এক রাতেই বাচ্চাটার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। অর্পি মৃদুলকে জাগালো না। মিথিলার সাথে কথা বলে চলে গেলো।
১৫!!
তুষার নিজের চেম্বারে ঢুকে অর্পিকে দেখে ঢোক গিলে বলল,
_বোধ হয় ভুল রুমে ঢুকে পরেছি।
_ তুষার ভাইয়া ঠিক রুমেই ঢুকেছেন। আপনার তো এখন তেমন পেশেন্ট নেই। আপনি কী আমার সাথে যাবেন নাকি আমি ভাইয়াকে আপনার মেসেজটা দেখাবো।
_ না না। কোথায় যেতে হবে বলো।
_ আগে চলুন তারপর বলছি।
অর্পি তুষারকে নিয়ে সোজা তুষারদের বাড়ি আসলো। তুষার বুঝতে পারছে না অর্পি ওকে ওর বাড়ি কেন নিয়ে আসলো।
তুষার ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো,
_এখানে কেন?
_ ভিতরে চলুন
অর্পি তুষারকে নিয়ে ভেতরে গিয়ে দেখলো তুষারের বাবা মা বসে গল্প করছেন। অর্পি তাদের সাথে কুশল বিনিময় করে বলল,
_অাঙ্কেল-আন্টি আপনাদের একটা কথা বলতে চাই।
তুষারের মা তিতলি বেগম বলল,
_হ্যাঁ বলো।
_আন্টি তুষার ভাই আমাকে প্রপোজ করেছে। আমি তার প্রপোজালের কোন উত্তর দেই নি। আমি মূলত আমার বিয়ের দায়িত্ব আমার পরিবারকে দিয়েছি। তো তুষার ভাই যেহেতু আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে তাই, আপনাদের এ বিষয়ে অবগত করানো দরকার। আপনারা যদি আমাকে পছন্দ করে থাকেন তবে আমার পরিবারের সাথে কথা বলুন। বাকি সিদ্ধান্ত তারা নিবে। তাদের সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত।
অর্পির এ সৎ সাহসীকতা দেখে তুষারের বাবা শামিম খান মুগ্ধ হয়ে গেলেন। ‌তিনি তুষারের দিকে তাকিয়ে বলল,
_শেখ কিছু। খালি ভালো রেজাল্ট করে বড় ডাক্তার হলেই হয় না, কথা বলার মত সৎ সাহস থাকা প্রয়োজন।
_তুষার মিন মিন করে বলল, আমার সাহস থাকলে তো এতদিনে অর্পি আমার বাচ্চার মা হয়ে যেতো।
তুষারের বাবা অর্পির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
_আমরা আগামী শুক্রবার তোমাদের বাসায় যাবো।
_আচ্ছা আঙ্কেল। আমি বাসায় বলে দিবো।
_তার আগে বলো আমার ছেলে সম্পর্কে তোমার মতামত কী?
_সত্যি বলবো নাকি মিথ্যা!
_সত্যি।
_ আঙ্কেল আপনার ছেলে কিছুটা গড্ডল।
_ বাহ্ চমৎকার বলেছো। একদম সত্যি।
তুষার মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল,
_ইয়ে মানে গড্ডল অর্থ কী?
শামিম খান তুষারের দিকে তাকিয়ে বলল,
_তুই আসলেই একটা গড্ডল।
_ সেটা নাহয় বুঝলাম কিন্তু গড্ডল মানে টা কী?
_ গড্ডল মানে ভেড়া।
_ তুষার মুখ বোচা করে বলল, শেষমেস ভেড়া! ওহ নো!
তুষারের কথায় কান না দিয়ে শামীম খান অর্পিকে জিজ্ঞেস করলো,
_তুমি আমার গড্ডল ছেলেটাকে পছন্দ করো?
অর্পি লজ্জা পেয়ে তুষারের দিতে তাকিয়ে বলল,
_তুষার আমাকে বাড়ি পৌঁছে দাও।
বাইকে বসে তুষার জিজ্ঞেস করল,
_মেসেজ এর উত্তরটা দিলে খুশি হতাম।
_মেসেজ এর উত্তর মুখে কেন দিবো?
_ মুখে বললে কানে শুনে, তবে মুখে উত্তর দিবো।
তুষার রাস্তায় ইউ ট্রান নিয়ে, বাইক নিয়ে সোজা নদীর পাড়ে গেলো। সেখান নদীর পাশ থেকে একগুচ্ছ কলমি ফুল ছিড়ে বলল,
_অর্পি এই তুষারের হিম শীতল ভালোবাসার পরশের শীতলতা নিবে। আমার ভালোবাসার শীতল পরশে সারা জীবন তোমায় আগলে রাখবো। বৌ হবে আমার?
অর্পি মুদু হাসলো। তারপর তুষারের কাছে গিয়ে বলল,
_একটু জড়িয়ে ধরি।
তুষার শব্দ করে হেসে অর্পিকে জড়িয়ে নিলো নিজের মাঝে। নিভৃতের কথা মনে পড়তেই মুহূর্তেই তুষারের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। ভাবছে নিভৃত শুনলে কোন লঙ্কা কান্ড করবে কে জানে।
১৬!!
দুদিন হলো নিতুল বাড়ি এসেছে। এখন মোটামুটি সুস্থ। তবুও মিথিলা নিভৃতকে অনুরোধ করলো আরেকবার বাড়ি এসে দেখতে। মিথিলা মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো। মাঝে মাঝে নিজেকে খুব অসহায় লাগে। বেঁচে আছে শুধু নিতুলের জন্য । নয়ত কবেই মরে যেতো। মিথিলা নিজে নিজে বলছে,
_নিতুলের বাবা চলে গেলো। আমি বিধবা হলাম। এক ঘটনা কতগুলো সম্পর্ককে নষ্ট করলো। শুধু একজনের জেদের কারণে, আমার নিতুলটা নিজের বাবাকে পর্যন্ত দেখলো না। আর না নিতুলের বাবা জানতে পারলো তার মনের মতই লক্ষ্মী রূপী ওর মেয়ে তার ঘর আলো করে আছে।
দুনিয়ার ‌নিয়ম বড়ই অদ্ভুত। এখানে কেউ সব দিক থেকে সু্খী হতে পারে না। একজন এক দিক দিয়ে সুখী হলে, অন্য দিক থেকে দুঃখ এসে সুখটাকে চেপে ধরে। সুখ সে তো অচিন পাখি। তাকে সর্বদা নিজের কাছে বেঁধে রাখা যায় না। যায় না খাঁচায় বন্দী করা। সে নিজের মর্জির মালিক। নিজের মর্জি মতো আসে আবার মর্জি মত চলে যায়।
বিকালে নিভৃত আসলো। মিথিলা ওকে নিজের রুমের সামনে নিয়ে বলল,
_নিতুল বোধ হয় মৃদুর সাথে খেলছে। তুই নিতুলকে চেক কর। আমি চা নিয়ে আসছি।
নিভৃত রুমে ঢুকে দেখলো, নিতুল আর মৃদু দুজনই ঘুমে বিভোর। নিভৃত মুগ্ধ হয়ে মৃদুর দিকে তাকিয়ে রইল,
_কবি সাহিত্যিকরা ঠিক বলে, মেয়েরা ঘুমালে সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে।
মৃদু আলুথালু হয়ে ঘুমিয়ে আছে। গায়ের ওড়না ঠিক নেই। সেলোয়াটা প্রায় হাঁটু পর্যন্ত উঠে গেছে। এবার নিভৃতের লজ্জা লাগছে। এভাবে হুট করে বেয়াদপের মত ঢোকা উচিত হয়ন ওর। নিভৃত পাশের চাদরটা মৃদুর গায়ে জড়িয়ে দিয়ে এক কান্ড করে বসলো। টুপ করে মুদুর গালে চুমো খেয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলো। নিভৃত নিজেও বিশ্বাস করতে পারছে না ও এমন কান্ড করেছে। মিথিলা নিভৃতকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে বলল,
_কিরে ভেতরে ঢুকিসনি?
_ওরা দুজন ঘুমাচ্ছে।
_আচ্ছা আমি ওদের জাগিয়ে দিচ্ছি। তুই আয়।
মিথিলা দুজনকেই জাগালো। দুজন ঘুম ঘুম চোখে মিথিলাকে বলল,
_প্লিজ ঘুমোতে দে।
মিথিলা দুটোকে বকা দিয়ে উঠিয়ে বলল,
_উঠ। ডাক্তার নিতুলকে দেখতে আসছে।
মৃদু চোখ বন্ধ করেই বলল,
_ডাক্তার নিতুলকে দেখবে তাতে আমার কেন ঘুম থেকে উঠতে হবে!
মৃদু আবার শুয়ে পড়লো। নিভৃত হেসে বলল,
_থাক মিস মৃদুলাকে আর উঠাতে হবে না। আমি নিতুলকে দেখছি।
নিতুলকে চেকাপ করার সময় নিভৃত বার বার মৃদুর ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকাচ্ছিলো।
গত তিন রাত নিভৃত ঘুমাতে পারেনি। চোখ বন্ধ করলেই শুধু মৃদুর ঘুমন্ত মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠে। গতকাল রাতে একটু ঘুমিয়েছিলো, তখন স্বপ্নে ‌দেখলো মৃদুর হাত ধরে দুজন হাঁটছে। মৃদুকে নিজের বুকের মাঝে আকড়ে রাখছে। এরকম স্বপ্ন নিভৃত কখনো কোন মেয়েকে নিয়ে দেখেনি। তবে মৃদুর ঘুমন্ত মুখটা গত কদিন যাবত ওকে ঘুমাতে দিচ্ছে না। বড্ড জ্বালাচ্ছে মেয়েটা। নিভৃত নিজে নিজে বলছে,
_আচ্ছা আমাকে আবার ভালোবাসা নামক ভয়ানক ব্যধিতে আক্রমন করলো নাতো? তাহলে তো সর্বনাশ। তাও শেষ মেস ঐ রাগী মেয়েকে। ও মেয়ের সাথে সংসার করবো কী করে। না না আমি এ রোগে আক্রান্ত হতে পারবো না। আমাকে এ রোগের ঔষধ বের করতে হবে।
১৭!!
নিভৃতের রুমে অসম্ভব সুন্দর করে সাজানো বিছানায় বধূ বেসে বসে আসে মৃদু। নিভৃত মৃদুর খুব কাছে এসে বলল,
_ভালোবাসি মিস মৃদুলা।
_মিঃ নিভৃত!
_হুম।
_ভালোবাসি।