লাল পাড়ের হলুদ শাড়ী
বেশ কিছুদিন আগে আমার বাবা তার খালি জমিতে একটা অসহায় পরিবারকে থাকতে দেন। বেশ কয়েক বছর পর বাবা বাড়ি করার জন্য জমিটা ছাড়তে বললে তারা ছাড়তে রাজি হলো না। পরে অনেক কসরত করে, টাকা দিয়ে তাদেরকে সরানো হলো। শুনে যা বুঝলাম, তাহলো একটা জমিতে অনেকদিন থাকলে নাকি তাতে তার অধিকার জন্মে যায়। আমিতো অবাক। দয়া করে থাকতে দিয়েছে। কোথায় কৃতজ্ঞ হবে,তা না উল্টো দখল করে বসে আছে। ভাবলাম জমির ব্যাপারতো, তাই লোভ সামলাতে পারেনি।
আমি যেখানে থাকি, সেখানে এক রিক্সাওয়ালা আছে, আমার দেশি। বাজারে সে থাকলে আমি তার রিক্সাতেই আসি। বাজার থেকে আমার বাসা পর্যন্ত ভাড়া ১৫ টাকা ফিক্সড। তবে আমি নিয়মিত ২০ টাকা দিতাম। একদিন আমার কাছে খুচরা ১৬ টাকা ছিলো। ঐ টাকাই দিলাম। টাকাটা দেয়ার সাথে সাথে একরকম চিৎকার করেই বলে উঠলো, “আর চার টাকা?” আমি কিছুক্ষন চুপ থেকে বললাম, “ভাড়াতো পনেরো টাকা, বাকি এক টাকা ফেরত দেন।” লোকটা হেসে বলল, না, সবসময়তো ২০টাকা দেন, তাই কইলাম। ভাবলাম থাক, গরিব মানুষতো, তাই এমন করলো।
আমার এক প্রতিবেশী। রোজ বাচ্চাকে স্কুলে দিতে যায়। তার গোয়ালাটা সে ফেরার আগে দুধ নিয়ে আসে। আমি বাসায় না থাকায় সেই দুধ নেয়ার দায়িত্বটা আমার কাজের লোকের উপর পড়ে। প্রতিবেশি হিসেবে এটুকু উপকারতো করতেই হয়। একদিন আমার কাজের লোকটি কোথাও একটু বেড়াতে গেছে, দুধটা আর নেয়া হয়নি। আমি বাসায় ফেরার পর উনি এসে বলল,” আপনার কাজের লোক কোথায়? “
— একটু বেড়াতে গেছে।
–আমাকে আগে বলল না। এখন দেখেন তো আমার ছোট ছেলেটা কি খাবে? আগে বললে আমি অন্য কাউকে দায়িত্ব দিতাম।
–ভাবি, ও হয়তো ভুলে গেছে।
–না ভাবি, যাই বলেন, কোনো দায়িত্ব নিলে ঠিক ভাবে পালন করতে হয়।
–ভাবি, ও হয়তো আপনার এই দায়িত্বের জন্য উপযুক্ত পারিশ্রমিক পায়না, তাই অবহেলা করেছে। আপনি বরং দায়িত্বটা অন্য কাউকে দিয়েন।
সে কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে গটগট করে চলে গেলো। ভাবলাম, অল্প শিক্ষিত মহিলাতো, তাই এমন আর কি।
আমার এক কলিগ। তখন গর্ভবতী। আমি তার কষ্ট দেখে তার একটা কাজের দায়িত্ব নিজে থেকেই নিলাম। সে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে গেলো। একসময় কাজে ফিরেও এলো। তাকে কাজটা ফিরিয়ে দিতে চাইলে সে গরিমসি শুরু করলো। ভাবটা এমন, কাজটা আমার।এবার ভাবনাটা বদলালাম।
আসলে মানুষ একটা সুবিধা বেশিদিন ভোগ করলে সেটাকে তার অধিকার ভেবে নেয়। ভুলে যায় –“It’s facility, not right.” তাই শুধু সুবিধা দেয়া নয়, নেয়ার ক্ষেত্রেও সাবধান থাকা দরকার।
হিউম্যান বিহেভিয়ার খুব অদ্ভুত। এটা প্রায় সবার ক্ষেত্রেই কাজ করে।
টিউশনি করার সময় আন্টি প্রতিদিন নাস্তা দিতেন। হঠাৎ টানা ২-৩ দিন নাস্তা না দেয়ায় আমার খুব খারাপ লেগেছিল। এরপর তো নাস্তাই বন্ধ করে দিল।
পরে অবশ্য আমার নিজের আচরণে আমি নিজেই অবাক হই। আমার সাথে তো অভিভাবক এর নাস্তা নিয়ে চুক্তি হয়নি। তারা তো আমাকে নাস্তা দিতে বাধ্য নন। বরং নাস্তা দেয়ার জন্য আমার তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিৎ।
কোনটা অধিকার আর কোনটা অতিরিক্ত পাচ্ছি, সেটা বোঝা জরুরি।।
তাই যতোটুকু সম্ভব, আজ থেকেই বিনয়ের সাথে সবার ভুল গুলো ধরিয়ে দিন।”
– সংগৃহীত