–তোর চোখ গুলো না অনেক সুন্দর…(আমি)
–ওই কিছু বললি???(রিয়া)
–কই নাত..(আমি)
–ওই মিথ্যা বলিস না..আমি সুনেছি.. আমার চোখ যেন কেমন না কি বললি??(রিয়া)
–বললাম যে তোর চোখ দেখতে একদম পেত্নীর মতন..(আমি)
–কি আমার চোখ দেখতে পেত্নীর মতো?? তোকে তো…..(বলেই আমাকে মারতে লাগলো)
রিয়া আমার পিছনে পিছনে দৌড়াতে লাগলো মারার জন্য…কিছুক্ষণ দৌড়িয়ে আসে আমি নিজেই ধরা দিলাম…
–তুই আমাকে মারবি??? তাহলে মার…(আমি)
–তাহলে মারবো না.চল ক্লাস এ যাই..(রিয়া)
–হুম চল…
আমরা ক্লাস এ চলে গেলাম… আমার পরিচয়তো আপনাদের দেওয়াই হই নি… আমি রাতুল…ভাল নাম সাব্বির হোসেন..সবাই রাতুল বলেই ডাকে… যার সাথে এতক্ষণ কথা বললাম সে আমার বেস্টু রিয়া..তার ভালো নাম তাসনিমা আক্তার রিয়া…আমরা ক্লাস ১১ থেকে একসাথে পড়াশোনা করছি আর তখন থেকেই বন্ধু… আমি যেইদিন প্রথম কলেজে এ ভর্তি হই সেইদিন আমার রিয়ার সাথে পরিচয় হয়….আর আমরা তখন থেকেই বন্ধু… পরে এক সাথেই এক কলেজ এবং এখন এক ভার্সিটিতে পড়ি… আমাদের ক্লাস শেষ…
–রিয়া চল বাড়িতে যায়… আমার আর ক্লাস করতে ভালো লাগছে না.. (আমি)
–তাহলে চল ফুচকা খেয়ে আসি..(রিয়া)
–হুম চল…ওনেক দিন তোর টাকায় ফুচকা খাওয়া হইন… (আমি)
–ওই সালা আজ তুই খাওয়াবি…(রিয়া)
–সালি আমার বাবা কি তোর বাবার মত ধনী নাকি (আমি)
–ঠিক আছে আমিই বিল দেব..সেইটা আবার নতুন কি…কিন্তু আমি তোর কোন জন্মের সালি লাগি রে???(রিয়া)
–তুই আমাকে সালা বললি তাই আমিও তোকে সালা বললাম..সমান সমান..(আমি)
–ওকে বাবা..তোর সাথে আমি কথাই পারবোন.. তুই ফাস্… (রিয়া)
–পারবি নাতে লাগিস কেন..(আমি)
–ওই তোর পেচাল বাদ দিয়ে ফুচকা খা…(রিয়া)
–আরেক প্লেট নিলেইতো হত..তোর প্লেট থেকে খাব??(আমি)
–তোকে কে আমার প্লেট থেকে খেতে বলেছে?? এইটা তোর প্লেট আর আমিই তোর প্লেট থেকে খচ্ছি..(রিয়া)
আপনাদেরতো বলাই হইনি..আমার বাবা অনেক গরিব..আমাদের বাড়ি গ্রাম… বাবা বাড়িতে কৃষি কাজ করে…..আমার একটা ছোট বোন আছে…আর রিয়ার বাবা শহরের বড় ব্যাবসায়… আমার সাথে কিভাবে যে রিয়ার ফ্রেন্ডশিপ হলো সেটাই ভেবে পাইনা.. কিন্তু আমিতো নিজেই অজান্তেই রিয়াকে ভালোবেসে ফেলেছি..তবে এখনো বলিনি কারণ আমার সাথে রিয়ার যাইনা…আবার বললে যদি ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট হয়ে যাই সেই ভয়ে…
–ওই তুই কোথাই হারিয়ে গেলি??(রিয়া)
এতক্ষণ রিকশা করে বাড়ি যাচ্ছিলাম…রিয়ার বাড়ি আমার মেসে যেতে রাস্তাই পড়ে তাই একসাথেই আসি..
–এখানেইতো আছি..(আমি)
–তাহলে আমি এতক্ষণ বকবক করে যাচ্ছি আর তুই কোন কথাই বলছিছ না.(রিয়া)
–তোর পেচাল শুনতে শুনতে আমার কান নষ্ট হয়ে গেছে তাই আর কোন কথা কান দিয়ে ডুকছে না(আমি)
–কি আমি পেচাল পেড়ে তোর কান নষ্ট করে দিয়েছি??(রিয়া রাগি ভাবে বলল)
–তোর বাড়িতে চলে আইছি..তুই নাম..(আমি)
–তোকে আমি পরে দেখবো..(রিয়া)
–দেখিস এখন বাড়িতে যা(আমি)
রিয়া আমার দিকে রাগি ভাবে তাকিয়ে বাড়িতে ডুকে গেল…আসলে আমি রিয়াকে ইচ্ছে করে রাগাই..ওকে রাগলে দেখতে ভালো লাগে…আমিও মেসে চলে আসলাম..রাতে আবার রিয়াকে ফোন দিলাম…প্রথম বার ফোন ধরলোনা..আবার ফোন দিতেই ধরেছে…
–হ্যালো..(আমি)
–হ্যালো কে আপনি??(রিয়া)
–তোমার সুয়ামি গো..(আমি)
–কি যাতা বলছেন?? আপনি মনে হয় ভুল নাম্বারে ফোন দিয়েছেন..(রিয়া)
–ওই আমি ঠিক নাম্বারেই ফোন দিয়েছি..(আমি)
–আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে.আমি ফোন রাখলাম..(রিয়া)
–ওই ফোন রাখবি না..যা বাবা কিছু বলার আগেই ফোন কেটে দিল…(আমি)
রিয়া এতটা রেগে গেছে..এখন মনে হচ্ছে ওকে রাগানো ঠিক হয়নি..আরো কয়েকবার ফোন দিয়েয়ো ধররো না…কালকে সকালে ভাসিটি গিয়ে দেখা যাবে.. এখন ঘুমাই..
সকালে আমি ভাসিটি ঢুকছি তখনি আমার চোখ গেলো কদম গাছ তলাই..ওখানে রিয়া একটা ছেলের সাথে পাশাপাশি বসে খুব হেসে হেসে কথা বলছে.. আমারতো দেখেই মাথা খারাপ হয়ে গেলো..কিন্তু কিছু করার নাই..রিয়াতো আমাকে ভালোই বাসে না…আমি যেই রিয়াদের পাশ কাটিয়ে চলে আসবো তখনি..
–ওই রাতুল আমাকে দেখেও তুই চলে যাছিস কেন??(রিয়া)
–(আমি কোন কথা বললাম না.)
–কাল রাতের জন্য সরি…আসলে কালকে আমি মজা করছিলাম…(রিয়া)
–কি বলবি বল(আমি)
–তোর সাথে পরিচয় করেদি..(পাশের জনকে দেখিয়ে) এ হলো আমার হবু বর আসিফ…আসিফের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে… সামনে সপ্তাহে আমার আর আসিফের বিয়ে…(রিয়া)
–হাই আমি আসিফ(আসিফ হাত বাড়িয়ে)
–আমি রাতুল..রিয়ার ফ্রেন্ড..(আমি হেন্ডসেক করে)
–রিয়া তোমার কথা অনেক বলেছে..(আসিফ)
–রিয়া আমার আজ ক্লাস করতে ভালো লাগছে না…আমি বাড়িতে যান(আমি)
–ওকে..
আমি এখান থেকে মেসে চলে আসলাম…ওদের একসাথে দেখতে পারবো না…এখন অনেক দিন পর বাড়ির কথা খুব মনে পড়ছে… আমি চিন্তা করে বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম…কারণ এখানে থেকে আমি রিয়ার বিয়ে দেখতে পারবো না…যাকে ভালোবেসেছি তাকে অন্য কারো হতে দেখতে পারবো না… আমি কালকের বাসের টিকিট কেটে আসলাম…কাল সকালেই বাড়িতে চলে যাব…শেষ রিয়ার সাথে কথা বলার জন্য ফোন দিলাম কিন্তু ফোন বেস্ত দেখাচ্ছে..আমি আর ডিস্টার্ব না করে ফোন অফ করে রেখে দিলাম..তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম..
দুপুর ১ টার ভিতরেই আমি বাড়িতে পৌছে গেলাম…আমার ছোট বোন বাড়ির বাহিরেই খেলছিলো…আমাকে দেখেই ভিতরে গিয়ে সবাইকে ডেকে আনলো…আমাকে দেখতো সবাই খুব খুশি.. সবচেয়ে খুশি আমার মা হয়েছে..
–তুই কত শুকিয়ে গেছিস..?? ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করিস না??(আম্মু)
–ছেলে কে কি বাড়ির বাইরেই দারিয়ে রাখবে নাকি ভিতরে নিবে…(আব্বু)
–আই বাবা ভিতরে এই…কত দিন পর এলি…(আম্মু)
–আম্মু আমার খিদা লেগেছেতো..(আমি)
–যা বাবা তুই ফ্রেশ হয়ে আই…আমি খাবার দিচ্ছি..(আম্মু)
আমি ফ্রেশ হয়ে আসে খেয়ে নিলাম..কিছুক্ষণ বোনের সাথে গল্প করে বিকেলে বাজারে গেলাম..পুরাতন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিলাম… এইভাবে তিন দিন চলে গেল…আমার ফোনও অফ করে রেখেছি..কিন্তু রিয়ার কথা প্রতি মুহূর্তে মনে পরছে..রিয়ার কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি যানিনা…সকালে ঘুম ভাঙ্গলো গায়ে পানি পড়ার জন্য..বাড়িতে এসে কয়েকদিন অনেক বেলা করে ঘুম পাড়ি. আমি পানিতে ভিজে ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসলাম… দেখছি রিয়া আর আমার ছোট বোন আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে…আমিতো রিয়াকে দেখে আবাক হয়ে তাকিয়ে আছি…ভাবছি রিয়ে এখানে কিভাবে…
–মিতু(আমার ছোট বোনের নাম) তুমি একটু বাহিরে যাও..(রিয়া)
–ওই তুই এখানে কি করে এর ঘরের দরজা বন্ধ করছিছ কেন??(আমি)
–তোর খবর আছে…(রিয়া)
–আমি আবার কি করলাম??(আমি)
–তুই আমাকে না বলে চলে এলি কেন??(রিয়া)
–আমার ওখানে ভালো লাগেনি তাই(আমি)
–নাকি আমার বিয়ের কথা শুনে চলে আসেছিস??(রিয়া)
–তোর বিয়ের কথা শুনে আমি চলে আসবো কেন??(আমি)
–তুই আমাকে ভালোবাসিস তাই..(রিয়া)
–কে তোকে ভালোবাসে?? আমি কাউকে ভালোবাসি না..(আমি)
–সত্যি ভালোবাসিসনা??(রিয়া)
–হুম আমি তোকে ভালোবাসি না..(আমি)
–তাহলে আব্বু তোর আর আমার বিয়ে ঠিক করেছে…আমি এখন বিয়েটা কেন্সিল করে দি??(রিয়া)
–তোর আর আমার বিয়ে মানে??(আমি)
–হুম..আমার আর তোর(রিয়া)
–তোরনা বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে..?? আসিফের সাথে বিয়েনা তোর??(আমি)
–সালা আসিফ আমার মামতো ভাই হয়…তুই নিজে যেন আমাকে propose করিস সেই জন্য আসিফের সাথে অভিনয় করেছিলা..(রিয়া)
–সত্যি বলছিস??(আমি)
–তুইতো আমাকে propose করা বাদ দিয়ে বাড়িতে চলে আসলি…আমি বাবাকে নিয়ে চলে আসেছি..তোকে বিয়ে করে তবেই বাড়িতে যাব…(রিয়া)
আমি ভাবছি রিয়া যা বলছে তা কি সত্যি…রিয়ের সাথে কি আমার সত্যি বিয়ে হবে…আমারতো খুশিতে লুঙ্গি dance করতে মন চাচ্ছে..রিয়া আছে বলে আমি করতে পারলাম না…
–কিরে কথা বলছিস না কেন??তোর এর বিয়েতে ইচ্ছা নেই??আমি আসিফকেই বিয়ে করবো??(রিয়ে)
–ওই সালি আমি থাকতে তুই আসিফকে বিয়ে করবি কেন??(আমি)
–ওই তুই আমাকে সালি বললি কেন?? যা আমি বিয়ে করবো না..(রিয়া)
–আরে না…তুমিতো আমার সোনা বউ…রাগ করে না সোনা…(আমি)
–তুই আমাকে এখন propose করবি না হলে আমি বিয়ে করবো না..(রিয়া)
–তুই কি আমার তুমি হবে?? আমার পথ চলার সাথি হবে?? আমার উপর রেগে গেলে এমন করে মারবে..?? আর আমাকে কি তোমার রাগ ভাঙ্গানোর আধিকার দেবে?? তুমি কি আমাকে ভালোবাসবে?? আমি তোকে ভালোবাসি?? I Love You Riya..(আমি রিয়ার সামনে হাটু গেড়ে বসে)
–ভালোবাসতে পারি কিন্তু একটা শর্তে (রিয়া)
–আমি সব শর্তে রাজি(আমি)
–আমাকে কখনো কষ্ট দিতে পারবি না?? আমাকে ছেড়ে অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকাতে পারবি না..?(রিয়া)
–আমি রাজি.. (আমি)
–আমি তোকে খুব ভালোবাসি রাতুল..I Love You too Ratul..(রিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো)