-দোস্ত তোরা সবাই দেখ আমাদের ভার্সিটির মফিজ টা আজকে আসছে(নিশি)
-আরে ও মফিজ না তো, ও আবুল।
-ঐ একই কথা
এসব বলে সবাই হাসাহাসি করতাছে।
ওরা যাকে মফিজ বলল সে হলো তাদের ভার্সিটির সবচেয়ে বাজে স্টুডেন্ট, নাম তার ফারহান। মা-বাবার টাকা আছে তাই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করিয়েছে। ফারহানের বাবার ইচ্ছা সে একদিন অনেক বড় হবে কিন্তু সে পড়ালেখায় বেশি ভালো না।
সবার সাথে কথা কম বলে আর একা একা চলতে পছন্দ করে।
১ম সেমিষ্টার পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে ক্লাসে যেদিন রেজাল্ট ঘোষনা করছে সেদিন ফারহানের পরীক্ষার খাতা গুলো নিয়ে আসে।
-ফারহান কে?(স্যার)
-জি স্যার আমি(ফারহান)
-দাড়াও
-ফারহান তখন দাড়ায়
-ইন্টার পরীক্ষা কিভাবে পাশ করছো?
-ফারহান চুপ হয়ে আছে
-এগুলো তুমি কি লিখছো? মানুষ স্টুডেন্ট হিসাবে খারাপ হয় কিন্তু এতটা খারাপ আমি আমার জীবনে দেখি নাই বলে খাতা গুলো সবার সামনে তুলে ধরে।
সবাই খাতা দেখার পর ক্লাসে একটা হাসির রুল পরে গেছে।
তখন থেকেই সবাই ফারহানকে মফিজ আর আবুল বলে ডাকে।
কয়েকদিন পরে ক্লাস টিচার ফারহানকে সামনে নিয়ে বলে এটা সবাইকে বুঝিয়ে দাও।ফারহান তখন মার্কার কলম হাতে নিয়ে কাপাকাপি শুরু করে। এসব দেখে ক্লাসের প্রায় সবাই হেসে দেয়।
ক্লাস শেষে ফারহান মন খারাপ করে বেড় হয়। নিশি আর তার বান্ধবীরা ও ফারহানের সাথে সাথে বের হয়।
-কি রে আবাল তুই এমন কেনো?(নিশি)
-আরে ও আবাল না তো আবুল(জান্নাত)
-বাড়িতে পড়ালেখা করিস না?(নিশি)
-আমার পড়তে ভালো লাগেনা
-কি করতে ভালো লাগে?
-ঘুমাতে
-তোরে নিয়ে যে সবাই এত হাসাহাসি করে তাতে কি তোর লজ্জা হয় না?
-তাদের ভালো লাগে তাই হাসে
-ওহহহ তার মানে তোর মনে কিছু আসে যায় না?
-প্রথম প্রথম মন খারাপ হতো এখন আর হয় না বলে ফারহান হাটা শুরু করে।
পরেরদিন ভার্সিটিতে আসার পরে নিশিদের আরেক বন্ধু ফারহান কে ডাক দেয়।
ফারহান তখন তাদের কাছে এসে বসার পরে
-এই দাড়া(নিশি)
-কেনো?(ফারহান)
-কানে ধর
-কানে ধরবো কেনো?
-এখানে সবাইকে সালাম দিছিস?
-নাহ
-এখানে বসার জন্য কারো থেকে অনুমতি নিছিস?
-নাহ
-এখানে কানে ধর
-তোমরা তো আমার ব্যাচমেট তোমাদের সালাম আর এখানে বসার জন্য অনুমতি নিবো কেনো?
-যা বলছি তা কর
-ফারহান চুপচাপ দাড়িয়ে আছে
-কথা শুনিস না? কানে না ধরলে কিন্তু প্যান্ট খুলে সারা ক্যাম্পাস ঘুরাবো
-ফারহান এসব কথা শুনে কানে ধরে ফেলে
-নিশিরা তখন সবাই হাসিতে মেতে উঠে
-ফারহান হঠাৎ একটু শব্দ করে কান্না করে দেয়। তখন ভার্সিটির সব স্টুডেন্ট তাদের দিকে তাকিয়ে দেখে এটা ফারহান।তখন পুরো ক্যাম্পাসের সবাই হাসতে থাকে।
সেদিন ফারহান ক্লাস না করে বাসায় চলে যায়।
২-৩ দিন পরে ফারহান কলেজে আসার পরে….
-মুরগি টা আসছে রে(জান্নাত)
-ঐ ফারহান এদিকে আয়(নিশি)
ফারহান তাদের কোনো কথা না শুনে ক্লাস রুমে চলে যায়।
কতক্ষণ পরে তারা সবাই ক্লাসে আসে।
ক্লাসে আসার পরে নিশি আর তার সাথে ৪-৫ জন ফারহানের সাথে বসে।
-গোসল কয়দিন হয় করিস না?(নিশি)
-সকালেই করে আসছি
-তাহলে তোর শরীরে এমন বাজে গন্ধ কেনো?
-ক্লাসে তো শুধু তুমি না, আশে পাশে আরো অনেক ছেলে মেয়ে আছে তাদের নাকে কি বাজে গন্ধটা যায় না?
-ওদের মনে হয় তোর মতো সর্দি লেগে আছে তাই ভালো খারাপ কিছু বুঝতেছেনা
-ওহহ তাহলে তুমি নাকে সরিষা তেল লাগিয়ে বসে থাকো
-এই এই দেখ আমাদের মফিজ তো কথা শিখে গেছে বলে হাসতে শুরু করে।ফারহান তখন ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে যায়।
এর পরেরদিন ফারহান ভার্সিটিতে আসার পর নাঈম নামের একটা ছেলে যেটা নিশির বেস্টফ্রেন্ড হয়,সে ফারহানকে কাছে ডেকে আনে।
-তোকে একটা কাজ করে দিতে হবে(নাঈম)
-কি কাজ?(ফারহান)
-পকেট থেকে একটা কাগজ বেড় করে, যা এটা দিয়ে আয়
-আমি কেনো দিতে যাবো?
-ঐদিনের কথা মনে আছে?
-কোনদিনের কথা?
-সেদিন যে কানে ধরে দাড়া করিয়ে রাখছিলাম
-কাকে দিতে হবে বলো?
-ঐ যে নেবি ব্লু ড্রেসটা পরে রাখছে তাকে দিয়ে আসবি
-ও তো আমাদের ভার্সিটির সিনিয়র
-এই তোরে এত কথা বলতে বলছি?(নিশি)
-যা দিয়ে আয়(নাঈম)
ফারহান তখন খোলা চিঠি টা নিয়ে সবার সামনেই ঐ মেয়েটিকে দিয়ে আসে।
মেয়েটি তখন চিঠিটা খুলে দেখে আজেবাজে কতগুলো লিখা আর নিচে দেওয়া ইতি তোমার ফারহান।
এসব দেখে মেয়েটি সবার সামনেই ঠাস ঠাস করে কয়েকটা থাপ্পড় মেরে দেয়।
ফারহান তখন কান্না করে দেয়।
আর নিশিরা সবাই হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হয়ে যাওয়ার মতো।
ফারহান সেদিন কান্না করতে করতে সবার সামনে দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করে।
তারপরে
দুইমাস হয় ফারহান ভার্সিটিতে আসে না।
সবাই মনে করছে আর পড়ালেখা করবে না তাই হয়তো ভার্সিটিতে আসে না।
২য় সেমিষ্টার এর পরীক্ষা যখন শুরু হয় তখন ফারহান ভার্সিটিতে আসে।
ফারহানকে দেখতে পেয়ে সবাই হাসতে থাকে।
২য় সেমিষ্টার পরীক্ষা দেওয়ার পর ক্লাসে যখন রেজাল্ট প্রকাশ করবে তখন সবার আগে ভার্সিটির ভিসি তাকে দাড় করায়।
সবাই তখন ভাবতে থাকে এবার হয়তো ও খাতায় কোনো লেখা ই লেখেনি।
-তুমি গত দুইমাস ক্লাসে আসো নাই কেনো?(ভিসি)
-এমনি
-পরীক্ষায় কি কোনো নকল করছো?
-না স্যার
-ওকে বসো।
ভিসি রেজাল্ট কার্ড নিয়ে যখন বলে যে এবার আমাদের ভার্সিটির সেরা রেজাল্ট করেন মো.ফারহান চৌধুরী।
সবাই তখন অবাক হয়ে যায়।নিশি তো তখন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে।
রেজাল্ট ঘোষনার পর সব স্যার তাকে অভিনন্দন জানায়।
ক্লাস রুম থেকে বের হওয়ার পরে ফারহান নিশিকে সামনে দেখতে পেয়ে………

ফারহান ক্লাসরুম থেকে বেড় হয়ে নিশিকে সামনে দেখতে পেয়ে নিশির দিকে চেয়ে একটা মুচকি হেসে সামনের দিকে চলে যায়।
পরেরদিন ভার্সিটিতে এসে নিশি ফারহান কে দেখতে পেয়ে
-ঐ এদিকে আয়?(নিশি)
-হ্যা বল
-হোয়াট?
-কি বলবি বল
-আমাকে তুই করে বললি কেনো?
-তো কি আপনি করে বলবো?
-আপনি করে বলবি
-ওমাহ রে মাহ সেতি কয় কি? বলে নিজে নিজে হাসি দেয়
-ঐ চুপ কর
-শোণ তোরে আমি এটা উদাহরন দেয় যেটাতে তুই অল্পতে বুঝে যাবি,মনে কর আমি একটা সিগারেট খাচ্ছি এমন সময় কোনো একটা সম্মানিত ব্যাক্তি দেখে সিগারেট টা হাতে লুকিয়ে রাখলাম,ঐ ব্যাক্তিটা সেটা দেখার পর ও যদি আমার সামনে দাড়িয়ে থাকে তাহলে কি আমার হাত টা পুড়ে যাবে না?
-কি বুঝাতে চাইছিস
-যা বলছি তার উত্তর দে
-হ্যা পুড়বে
-তার পরেরদিন ও যদি আমি সেইম প্রবলেম ফেইস করি তাহলে কি আমি উনাকে দেখে সিগারেট হাতে লুকিয়ে রাখবো নাকি উনার সামনেই টানবো?
-নিশি চুপ হয়ে আছে
-ঠিক তেমনি তোকে আমি সম্মান করতাম কিন্তু সেটা ধরে রাখতে পারিস নাই, বলে ফারহান ক্লাসরুমের দিকে চলে যায়। নিশি এসব শুনে রাগে নাক মুখ লাল হয়ে যায়।
একদিন নিশি আর তার কয়েকটা বান্ধবী বসে আছে।
-দোস্ত দেখ ভার্সিটির প্রেট্টি বয় আসছে(সালমা)
-কোথায়?(নিশি)
-ঐদিকে দেখ কে আসছে
-ঐদিকে তো ফারহাইন্না ছাড়া আর কেউ নাই
-ওরে কি তোর কাছে কিউট মনে হয় না?
-ইয়াকককক
-ইসশশ দোস্ত দেখ কতো সুন্দর লাগতেছে, ব্লেজার টা অনেক মানাইছে
-তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে এটা সালমান খান
-ও আমাদের বাংলাদেশের সালমান খান
-নাঈম্মা তাইরে পাবনার পাগলীখানা নিয়া ভর্তি করিয়ে দিয়ে আয় রে ভাই
-ঐ তোরা চুপ কর, চল ক্লাসে যাই(নাঈম)
সবাই ক্লাস যাওয়ার পরে স্যার ক্লাস রুমে আসে।
-এই সবাই শুনো(স্যার)
ক্লাসের সবাই তখন স্যারের কথায় মনযোগ দেয়।
-সামনের সপ্তাহে আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে বিতর্ক প্রতিযোগিতা আছে, সেখানে দুজন যেতে হবে। একজন ছেলে আরেকজন মেয়ে। আমরা সবাই মিলে ঠিক করছি আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ফারহান আর নিশি সেই প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করবে। তোমরা কি বলো?
নিশি তখন দাড়ায়
-স্যার ছেলেদের মধ্যে অন্য কাউকে নেওয়া যায় না?
-কেনো?
-স্যার অন্য কোনো ছেলেকে নিলে ভালো হতো
-গত পরীক্ষায় সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট কে করছে?
-ফারহান
-ক্লাসে সবসময় এক্টিভ থাকে কে?
-জি স্যার জানিনা
-সবার মধ্যে ফারহানের প্রেজেন্টেশন বেশি
-নিশি তখন চুপ হয়ে থাকে
-আগামী সপ্তাহে তোমরা দুজন প্রস্তুত থেকো
-ওকে স্যার।
ফারহান তখন দাড়ায়
-স্যার কোন বিষয়ের উপর প্রতিযোগীতা হবে?
-দুজন অফিসে এসে জেনে নিবা
-ওকে স্যার
আরো কতক্ষণ কথা বলে
ক্লাস শেষ করার পরে ফারহান অফিসের দিকে যাইতে থাকে, ফারহানের পিছনে পিছনে নিশি জান্নাতকে সাথে করে নিয়ে অফিস থেকে সবকিছু জেনে নেয়।

ফারহান ক্যাম্পাসের দিকে
হাটছে এমন সময় নিশি নাঈমকে দিয়ে ডাক দেওয়ায়।
ফারহান আসার পরে
-কি রে মফিজ কি অবস্থা?( নাঈম ফারহানের কাধে হাত রেখে)
-মফিজ কে?
-তুই যে মফিজ না সেটা তে তোর সন্দেহ আছে নাকি?
-ওহহহ
-হ্যা
-হুমম আপু ভালো, তুমি কেমন আছো?
-ঐ তোরে ওরা বলে নাই, আমি বলছি সো উত্তরটা আমারে দে
-উত্তর তো তোকেই দিলাম
-তাহলে আপু বললি কারে?
-তোরে
-কিহহহ
-হ্যা, তুই তো শালা লেডিস,সারাদিন এই দেমাগির সাথে থাকিস
-এই এই কি বলছিস?(নিশি)
-যা বলছি তা শুনতেই পাচ্ছিস
-এসব বলবি কেনো?
-তো কি বলবো? আমার তো ইচ্চা হয় তোকে থাপ্পড় দিতে।শুধু মেয়ে বলে থাপ্পড় খাওয়া থেকে বেচে যাচ্ছিস বলে ফারহান সামনের দিকে হাটতে থাকে এমন সময়ে নিশি ফারহানের কলার টেনে ধরে
ফারহান তখন হাটা থামিয়ে পিছনের দিকে চেয়ে
-শার্টের কলারে ধরছিস কেনো?
-আমি দেমাগি?
-তা নয়তো কি?
-কি দেখে আমাকে তোর দেমাগি মনে হলো?
-তোর মতো ক্যাম্পাসে অন্য কোনো মেয়ে আছে কি না?
-আছে
-তারা তোর মতো এসব করে?
-আমি কি করছি?
-কি না করছিস? একমাত্র তুই আর এই ছ্যাচরা ই মফিজ বলিস
-হা হা হা, মফিজকে মফিজ বলবে না তো কি করবে?
-আরেকবার বলিস, বললে কান সহ গড়ম করে দিবো
-ওমাহ মফিজে কয় কি রে?(নাঈম)
ফারহান তখন নাঈমের গালে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা…….

-হা হা হা, মফিজকে মফিজ বলবে না তো কি করবে?(নিশি)
-আরেকবার বলিস,বললে কান সহ গড়ম করে দিবো
-মফিজে কয় কি রে?(নাঈম)
ফারহান তখন নাঈমের গালে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা থাপ্পড় মারে।
নিশি এসব দেখে নিশির মাথা গড়ম হয়ে যায়।
নিশি তখন হাত উঠিয়ে ফারহানকে থাপ্পড় দেওয়ার জন্য হাত বাড়ায়। ফারহান তখন নিশির হাত ধরে নিশিকেও থাপ্পড় দেয়।
নিশিরে থাপ্পড় দেওয়ার পরে নিশির চোখ দিয়ে পানি চলে আসে।
ফারহান তখন কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বেড় হয়ে যায়।
কতক্ষণ পরে নিশি আর নাঈম গাছতলায় বসে আছে এমন সময় জান্নাত আসে।
-কিরে ফারহানের সাথে নাকি তোদের কি গন্ডগোল হয়ছে?
-নিশি আর নাঈম চুপ হয়ে আছে
-কিরে কথা বলছিস না কেনো?
-কি বলবো? বিপদের সময় তোরা তো হাড়িয়ে যাস(নাঈম)
-আমি তো তোদের বলেও গেছি যে আমি রুদ্রর সাথে মিট করতে গেছি(রুদ্র জান্নাতের বয়ফ্রেন্ড)
-দুজনই চুপ হয়ে আছে
-কিরে কিছু বলবি না?
-কি আর বলবো? কিছু হয় নাই। যা দেখার আমিই ওর সাথে দেখবো বলে নিশি বসা থেকে উঠে চলে যায়।
নিশি বাসায় যাওয়ার পরে রুমে গিয়ে ভাবতে থাকে।ছোট লোকের বাচ্চা আমাকে থাপ্পড় দেওয়ার স্বাদ মিটিয়ে দিবো।
শালারে এখন পাইলে চুলগুলো টেনে ছিড়ে ফেলতাম।ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে নিশির বড় ভাই জিহান আসে।
-কিরে নিশি মন খারাপ?(জিহান)
-না ভাইয়া
-তাহলে এভাবে বসে আছিস কেনো?
-এমনি
-কি হয়ছে বল
-কিছু হয় নাই তো
-তোর এই গাল টা লাল হয়ে আছে কেনো
-ভাইয়া আমার টা আমি দেখে নিবো
-কে মারছে বল
-নিশি তখন সবকিছু বলে
জিহান এসব শুনে জিহানের মাথা গড়ম হয়ে যায়।
তুই এসব নিয়ে চিন্তা করিস না। আমি সব দেখে নিবো।এখন ফ্রেস হয়ে লক্ষি বোনের মতো খেয়ে একটু ঘুমিয়ে থাক বলে জিহান রুম থেকে বের হয়ে যায়।
জিহান নিশির বড় ভাই।তাদের ভার্সিটির সাবেক ভিপি। ছাত্রজীবন থেকেই জিহান পলিটিক্স করে তাই প্রায় সবকিছুই চেনা জানা।
দুইদিন পরে ভার্সিটিতে যাওয়ার পরে নিশি ফারহানকে দেখতে পেয়ে রাগি চোখে তাকিয়ে থাকে।ফারহান ও নিশির দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
-সানি বুঝছিস এখানকার দিনে কিছু পাগল-ছাগল আছে যেগুলো অন্যের ভালো দেখতে পারে না (ফারহান নিশিকে শুনিয়ে শুনিয়ে)
-আরে দোস্ত তুই কথা বলছিস(সানি,একটু জোকার টাইপের ছেলে)
নিশিকে তখন ও এভাবে চেয়ে থাকতে দেখতে পেয়ে ফারহান চোখ টিপ দেয়।।
ক্লাসে যাওয়ার পরে ক্লাস চলাকালীন ফারহান হাসাহাসি করতাছে এমন সময় স্যার ওকে দাড়া করায়…
-হাসছো কেনো?(স্যার)
-জি স্যার এমনি(ফারহান)
ফারহানকে দাড়া করানোর পরে ফারহান নিশির দিকে চেয়ে দেখে নাক মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।
-তুমি হাসছো না?
– স্যার
-এমন একটা কিছু করো যেটার জন্য সবাই হাসে
-এমন কি আছে যেটার জন্য সবাই হাসতে পারে
-গান বলো একটা
-স্যার গান পারিনা
-কি পারো?
-ফারহান চুপ হয়ে আছে।
-ওকে তুমি একটা হাসির কাহিনী বলো
-স্যার আজ না বললে হয় না?
-না আজই বলো
-ওকে স্যার
একদিন সকালে একটি
মেয়ে বাসায় বসে চা
খাচ্ছিল।
একটা বাচ্চা মাছি নতুন
উড়তে শিখেছে,
তো মাছিটা উড়তে উড়তে
চায়ের কাপে পড়ে গেলো।
মেয়েটা না দেখে মাছি
সহই চা খেয়ে ফেলল।

পরে মাছিটার বাবা খোঁজ
করতে এলো।
এই আপা শুনেন,
আপনার পেটে আমার বাচ্চা
মেয়েটি তখন অবাক হয়ে বলে কি বলছো? মাথা ঠিক আছে?
হ্যা আমার বাচ্চা আপনার পেটে।
-কিভাবে কেমনে?
আমার ছোট বাচ্চাটা উড়তে উড়তে আপনার চায়ে এসে পরছিলো আর তা খেয়ে ফেললেন বলে মাছি চিৎকার করলো।
মেয়েটি এই কথা শুনে অজ্ঞান হয়ে যায়।
এই কথা শুনে ক্লাসের সবাই হেসে দেয়। স্যার তখন হাসতে হাসতে ফারহানকে বসতে বলে।
ফারহান তখন নিশির দিকে চেয়ে দেখে আবার আগের মতো প্যাচার মুখ করে আছে।
ফারহান তখন হাত দিয়ে থাপ্পড় দেখায়।
ক্লাস শেষ হওয়ার পরে,ফারহান ক্যম্পাসে সানির কাধে হাত দিয়ে হাটছে এমন সময় দুই-তিনটা ছেলে এসে ফারহানকে সাথে করে নিয়ে আড়ালে নিয়ে যাচ্ছে। এমন সময় ফারহান নিশির দিকে চেয়ে দেখে সে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর মুখে একটা মুচকি হাসি।
আড়ালে নিয়ে যাওয়ার পরে…………

ক্লাস শেষ হওয়ার পরে, ফারহান ক্যাম্পাসে সানির কাধে হাত দিয়ে হাটছে এমন সময় দুই তিনটা ছেলে এসে ফারহানকে সাথে করে আড়ালে নিয়ে যাচ্ছে এমন সময় ফারহান নিশির দিকে চেয়ে দেখে অগ্নিদৃষ্টিতে চেয়ে আর মুখে একটা হাসির আভা ফুটে উঠছে।
আড়ালে নিয়ে যাওয়ার পরে…
-তোমার বাবার নাম সেলিম নাহ?(জিহান)
-হ্যা
-ওহহ, এখানে তোমাকে যেটার জন্য ডাকলাম সেটা হলো নিশি আমার বোন।
আমি এই ভার্সিটির সাবেক ভিপি।
ওর সাথে আর কখনো খারাপ ব্যাবহার করবানা
-কুকুর পায়ে কামড়ালে তাকে মুকুর দিয়ে মারতে হয়, না হলে কুকুরের কলিজা বড় হয়ে যাবে
-মানে?
-জি হ্যা,মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটা আপনার বোন নিশিকে শিখাবেন
-তোমার সাথে কি কোন ধরনের খারাপ ব্যাবহার করছে?
-সেটা ওরে জিজ্ঞাসা করবেন বলে ফারহান সামনের দিকে হাটতে থাকে।
-ভাই এইটা কি আমাদের নেতা সেলিম সাহেবের ছেলে?(জিহানের সঙ্গি)
-ওরে ছাড়ছি কি শুধু শুধু? ও যদি অন্য কারো ছেলে হতো শালারে এতক্ষণে হাত-পা নিজের হাতে ধরিয়ে দিতাম,চল
বলে মোটরসাইকেল করে ক্যাম্পাস থেকে বাহিরে চলে যায়।
ফারহান সামনের দিকে যেয়ে দেখে নিশি, নাঈম আর জান্নাত একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে।
ফারহান তখন নিশির কাধে হাত রাখে।
নিশি পিছনে তাকিয়ে দেখে ফারহান তার কাধে হাত রাখছে। নিশি তখন আরো রেগে যায়।
– ঐ শালা তোরে ভাইয়া কিছু করে নাই?(নিশি)
-তোর ভাই কেনো? এই এলাকার কারো কলিজা নাই যে কেউ কিছু করে দিবে।
আগে অগুছালো ছিলাম তাই যে যার মতো আমাকে ব্যবহার করছে,সো আগের কথা ভুলে যা
-মফিজ ছিলি যে সেটা ভুলে যাবো
-এখন মাথা গড়ম করবিনা
-কি করবি তুই?
ফারহান তখন নিশিকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে অন্য দিকে চলে যায়।।
নিশি ও তখন রাগে নাক মুখ লাল করে বাসায় যায়।
বাসায় যাওয়ার পরে।
-ভাইয়্যাআআআআআ(জোরে জোরে চিল্লানি দিয়ে)
-কি হয়ছে এভাবে চিল্লাছিস কেনো?
-তুমি না ফারহান কি করে ফেলো? কই কি করছো? ওর তো একটা লোম ও ফালাইতে পারো নাই
-জিহান বুঝতে পারে তার বোন খুব রেগে আছে
-কোনো কিছু বলছোনা কেনো?
-ওর বাবার জন্য মারতে পারো নাই
-ওকে মারার সময় কি ওর বাবা তোমাদের পায়ে ধরে বসেছিলো নাকি?
-ওরে মারলে আমাদের খুব সমস্যা হবে
-কি সমস্যা হবে?
-নেতা সেলিম সাহেব কে চিনিস না?
-হ্যা
-ফারহান সেলিম সাহেবের ছেলে
-নিশি এটা শুনে চুপ হয়ে যায়
-সবাই তো জানে সেলিম সাহবের ছেলে একটা বোকা টাইপের কিন্তু ওরে তো দেখে এরকম মনে হয় না
-ও আগে বোকা ছিলো কিন্তু এখন সবকিছু চেইন্জ হয়ে গেছে।কিভাবে কি হলো কিছুই বুঝতে পারছিনা।(নিশি)
-তুই ওর সাথে কোনো কথা বলার কম চেষ্টা করিস, না হলে প্রবলেম হতে পারে বলে জিহান চলে যায়।
নিশি এসব শুনে নিশির মাথা আরো গড়ম হয়ে যায়।
যেই ছেলেকে সবসময় লজ্জা দিতাম আর আজ সেই ছেলেকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে হবে এটা ভেবেই নিশির অশান্তি যেনো আরো বেড়ে গেলো।
পরেরদিন ভার্সিটিতে যাওয়ার পরে জান্নাত আর নাঈম নিশিকে জিজ্ঞাসা করে ফারহানকে কিছু করে নাই কেনো?
-সেলিম সাহেব রে চিনিস না?(নিশি)
-হ্যা উনাকে আবার কে না চেনে(নাঈম)
-ফারহাইন্না শালা ঐ বেটার ছেলে তাই কিছু করা সম্ভব না (নিশি মন খারাপ করে)
-কি বলছিস তুই?(জান্নাত)
-হ্যা রে
-দোস্ত এখন থেকে ওর সাথে আর কথা বলার দরকার নাই, ওর চলা ও চলবে আর আমাদের চলা আমরা চলবো
-আচ্ছা ক্লাসে চল।
ক্লাসে স্যার প্রবেশ করার
কতক্ষণ পরে ফারহান ক্লাসে প্রবেশ করে। ক্লাসের ভিতর যেয়ে দেখে কোনো বেঞ্চ খালি নাই শুধু একটা টেবিলে নিশি আর জান্নাত বসে আছে।
স্যার ফারহানকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বলে ঐ টেবিলে গিয়ে বসো(হাত দিয়ে নিশিদের টেবিলটা দেখিয়ে বলে)
ফারহান তখন নিশির সাথে গিয়ে বসে।
বসার সাথে সাথে নিশি ঠোট বাকিয়ে অন্যদিকে চেয়ে থাকে।
ফারহান ঠোট বাকানো দেখে হেসে দেয়।
ক্লাস করানোর সময় স্যার ফারহান আর নিশিকে দাড় করায়।
দুজনকে একসাথে এক টেবিলে দাড়াতে দেখে ক্লাসের সবাই মুচকি মুচকি হাসছে।
-তোমাদের প্রস্তুতি কেমন?(স্যার)
-আলহামদুলিল্লাহ স্যার(ফারহান)
-নিশি তোমার প্রস্তুতি কেমন?
-আল্লাহ্ এর রহমতে ভালো
-দুইদিন পরে কিন্তু তোমাদের প্রতিযোগীতা,তোমরা ভালো করলে এই ভার্সিটির সুনাম হবে আর খারাপ করলে দুর্নাম হবে।সেহেতু আমি বলবো তোমরা তোমাদের সেরাটা দিও বলে স্যার ক্লাস শেষ করে বের হয়ে যায়।
ফারহান তখন নিশির………………..

স্যার ক্লাস থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরে ফারহান তখন নিশির দিকে চেয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে ক্লাস থেকে বেড় হয়ে যায়।
দুদিন পরে সকাল আটটার দিকে ফারহান আর নিশি উপস্থিত হয়।
দুজন স্যার সহ তাদের সাথে গাড়িতে উঠে।
ফারহান আর নিশিকে স্যার একসাথে বসায় কারন দুজন কিছু আলোচনা করতে পারবে।
গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার কতক্ষণ পরে ফারহান নিশিকে বলে…
-প্রস্তুতি কেমন?(ফারহান)
-হ্যা,ভালো
-ভালো হলেই ভালো
-তোমার প্রস্তুতি কেমন?
-ফারহান এই প্রথম নিশির মুখ থেকে তুমি কথাটি শুনতে পায়।
-কি হলো?
-হ্যা আল্লাহ্ রহমতে ভালো
গাড়ি তার নিজস্ব গতিতে চলছ এমন সময় বাতাশের কারনে নিশির খোলা চুলগুলো ফারহানের নাকে মুখে এসে।
ফারহান ও এমন মাতাল করা ঘ্রানের কারনে চুলগুলো মুখ থেকে না সরিয়ে মনে মনে চাইছে আরো বেশি করে চুলগুলো তার মুখে আসতে।
নিশি এসব দেখতে পেয়ে ফারহানের দিকে চেয়ে স্যরি বলে।
-স্যরি কেনো?(ফারহান)
-তোমার মুখে চুল পরছে তাই(নিশি)
-তো কি হয়ছে?
-না কিছু না

দুজন প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করার পরে দুজনই ভালো পারফরমেন্স করে।
ফলে তারা ভালো একটা রেজাল্ট নিয়ে ভার্সিটিতে ফিরে।
পরেরদিন ভার্সিটির সব শিক্ষক সহ অরডিটেরিয়ামের মধ্যে সবাই উপস্থিত হয়।
এবার আমাদের ভার্সিটি এই প্রতিযোগীতায় সবচেয়ে ভালো পারফর্ম করেছে।আর যাদের জন্য এই রেজাল্ট টুকু পেলাম তারা হলো ফারহান আর নিশি।
তোমাদের সামনে আসার জন্য অনুরোধ করছি
সবার সামনে দুজনকে তখন ভিসি স্যার ফুলের মালা পড়িয়ে দেয়।
আর সবাই তখন হাতের তালি দিয়ে দুজনকে বরন করে নেয়।
অনুষ্টান শেষে সবাই বেড় হয়।
পরেরদিন ফারহান আর নিশি সহ আরো কয়েকজন মিলে ঘুরতে যায়।
সবাই একসাথে হাটতে চলে গেছে।
আছে শুধু ফারহান আর নিশি।নিশি তখন ফারহানের কাছে এসে বলে।
-চলো ঐ দিকটাতে যায়(নিশি)
-হুম চলো
ফারহান আর নিশি একসাথে হাটছে আর কথা বলছে।এমন সময় হঠাৎ নিশি ফারহানকে প্রশ্ন করে….
-তোমার জিএফ কেমন আছে?
-হি হি হি
-হাসো কেনো?
-আমার এসব নাই,তোমার আছে?
-না, এই বদমেজাজি মেয়েকে আবার কে পছন্দ করবে?
-এই ২-৩ দিন তো অনেক নরমাল দেখতাছি
-হুমম
-কেনো?
-এমনি
এমন সময় ছোট একটি মেয়ে এসে নিশিকে জড়িয়ে ধরে বলে আপু দুলাভাই কে এই ফুলগুলো দেও। দেখবা খুশি হবে আর তোমাকে অনেক ভালেবাসবে
-এই এই কি বলছিস এসব?(নিশি)
-এই দুলাভাই বলো না আপুকে ফুলগুলো নিতে(ফারহানকে জড়িয়ে ধরে)
ফারহান তখন পকেট মানিব্যাগ হাতে নিয়ে টাকা দেওয়ার পরে মেয়েটা নিশির হাতে ফুলগুলো দিয়ে।
-আপু ফুলগুলো দেওয়ার সময় একটু রোমান্টিক ভাবে দিও তাহলে সারারাত তোমাকে বুকে রাখবে
-এই পাজি এসব কি বলছিস বলে নিশি মেয়েটির দিকে যায়।মেয়েটি তখন দৌড়ে সামনের দিকে চলে যায় আর ফারহান তখন হাসতে থাকে।
-হাসলে লাগে মফিজের মতো,আসছে আবার হাসতে
-বির বির করে কি বলতাছো?
-কিচ্ছু না, চলো
তখন ফারহান আর নিশি হাটতে থাকে।।সবাই আবার একসাথে হওয়ার পরে…..
-কিরে নিশি তোর হাতে কিসের ফুল?(জান্নাত)
-দোস্ত নিশিরে প্রপোজ করছিস নাকি?(সানি)
-আরে এসব কি বলছিস?(ফারহান)
-দোস্ত তোদের মানাবে রে(জান্নাত)
-জান্নাতি এখন চুপ করবি নাকি মাইর খাবি?
-এখন তো মাইর দিতেই পারবি কারন আরেকটা পাওয়ার কে নিজের করে নিছিস তাই
-দোস্ত তোরা দাড়া তোদের একটা পিক তুলছি
-শালা দাড়া (সানির উদ্দেশ্যে)
সানি তখন দৌড়ে পালিয়ে যায়।
সবাই গাড়িতে উঠার পরে নিশি আর ফারহান গাড়িতে উঠে এক সিটে বসে।
গাড়ি চলার মাঝে নিশি ফারহানের কাধে মাথা রেখে………….

গাড়ি চলছে এমন সময় হঠাৎ নিশি ফারহানের কাধে মাথা রেখে আছে আর চুলগুলো উড়ছে।
ফারহান খেয়াল করে দেখে নিশি ঘুমিয়ে গেছে। ফারহান তখন নিজের হাত দিয়ে নিশির চুলগুলো ঠিক করে দেয় কিন্তু অবাধ্য চুলগুলো আবারো ফারহানের নাকে-মুখে এসে উড়ে পরছে।
ফারহান তখন খেয়াল করে নিশি ঘুমের মধ্যে নিশির হাত দিয়ে ওর হাতটা জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে থাকে।
ফারহান ও তখন ক্লান্ত থাকায় নিজের অজান্তে ঘুমিয়ে যায়।
সানি তখন খেয়াল করে জান্নাতকে দেখায়।
জান্নাত আর সানি তাদের এমন রোমান্টিক অবস্থায় দেখে সাথে সাথে ক্যামেরাতে বন্দি করে নেয়।
সানি ফারহানের মোবাইল হাতে নিয়ে সাথে সাথে ফেবুতে ক্যাপশন দেয় মাই লেডি লিখে নিশিকে ট্যাগ করে ফেবুতে আপলোড করে দেয়।
কতক্ষণ পরে নিশির ঘুম ভেঙ্গে যায়।নিশি চেয়ে দেখে সে ফারহানের কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে আর হাতের ভিতর দিয়ে হাত দিয়ে রাখছে। আর ফারহান ও নিশির কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে।
ফারহান ও নড়াচড়া করার জন্য ঘুম ভেঙ্গে যায়।ফারহান তখন চেয়ে দেখে নিশি তার দিয়ে চেয়ে আছে।
-স্যরি(ফারহান)
-কেনো?(নিশি)
-এমন পরিস্থিতির জন্য
-আমারো তো সেইম অবস্থা ছিলো
-হুমমম
-আগে জানতা?
-হুমমম
-তাহলে মাথাটা সরিয়ে দিতে পারলানা?
-ভালো লাগছিলো তাই না সরিয়ে একজন ঘুমপরী কে দেখছিলাম
-কিহহ আমি ঘুম পরী?
-তা নয়তো কি?
-কিভাবে ঘুম পরী হলাম?
-ঘুমের মধ্যে অনেক কিউট লাগছে
-সামনাসামনি লাগে না বুঝি
-সামনাসামনি ও তো আরো বেশি কিন্তু ঘুমানো অবস্থায় অন্যরকম সুন্দর লাগে
-হয়ছে, আর গুন গায়তে হবে না বলে নিশি ফারহানের দিকে চেয়ে ফিক করে হেসে দেয়।
এভাবে নিশি আর ফারহান কথা বলতে বলতে গাড়ি তার নিজস্ব জায়গায় এসে থেমে গেছে।তখন সবাই নেমে যার যার বাসায় সবাই চলে যায়।
নিশি বাসায় যাওয়ার পরে ক্লান্ত থাকায় ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরে।
নিশি শুয়ে শুয়ে ভাবে যেই ছেলেটা ৩-৪ দিন আগেও আমার চোখের কাটা ছিলো আজকে কতো ফ্রেন্ডলি কথা বলছি। নিশি এসব ভেবে হাতে মোবাইল নিয়ে ফেসবুকিং করার সময় তার প্রোফাইলে ডুকে দেখে এমন পিক দিয়ে ক্যাপশন দেওয়া মাই লেডি।
নিশি এটা দেখে তো অবাক হয়ে যায়।আর কিছুটা রেগে ও যায়।নিশি সাথে সাথে ফারহানকে ফোন করে।
-ঐ ফেসবুকে এসব কি আপলোড করছো?(নিশি)
-কি আপলোড করছি?
-২ঘন্টা আগে তোমার আর আমার পিক দিয়ে এসব কি লিখছো?
-আরে আমি তো লাস্ট দুপুরে একটু ফেসবুকিং করছি
-হয়ছে আর মিথ্যা বলতে হবে না
-কে মিথ্যা বলছে?
-সামনাসামনি বলে দিলে কি এমন হতো?
-কি?
-কালকে দেখা হউক তারপরে মজা দেখাবো বলে ফোন কেটে দেয়।
ফারহান তখন ফেসবুকে ডুকে দেখে সত্যি সত্যিই এসব আপলোড করে রাখছে।
আর সবাই নানানরকম কমেন্ট করে রাখছে।নিচের দিকে চেয়ে দেখে তাদের স্যার ও কংরাটস লিখে কমেন্ট করছে।
পরেরদিন ভার্সিটিতে যাওয়ার পর দেখে নিশি আগেই বসে আছে।ফারহানকে দেখে নিশি ফারহানের দিকে এগিয়ে যায়।
-এই এসব কি?(নিশি)
-কোন সব?
-জানোনা?
-আমি করি নাই তো এসব
-তোমার মোবাইল দিয়ে কি আমি করছি
-হতেও পারে কারন আমি দুপুরের দিকে মোবাইল টিপছিলাম এর পরে আর মোবাইল টিপি নাই
-এখন কিন্তু ভালো হবে না
-খারাপ কিছু করবা নাকি?
নিশি তখন ফারহানকে কয়েকটা কিল ঘুষি দেয়
-আরে আরে এসব কি করছো?(ফারহান হাসতে হাসতে)
-আমি তোমার মোবাইল ধরছি তাই না?
-আচ্ছা আমিই করছি এখন চলো ক্লাস মনে হয় শুরু হয়ে গেছে।
ক্লাসের সামনে গিয়ে দুজন দাড়ানোর পরে
-আসো(স্যার)
নিশির পিছন পিছন ফারহান যাচ্ছে এমন সময় স্যার দুজনকে দাড়াতে বলে
-নিশি প্রেম কেমন চলছে?(স্যার)
-জি স্যার আলহামদুলিল্লাহ ভালো
-ফারহান তখন অবাক চোখে নিশির দিকে তাকায়
নিশি তখন ফারহানকে চোখ নাচিয়ে স্যারের দিকে তাকায়।
-এখন পড়ালেখায় সময় দেও না হলে ফিউচারে অনেক প্রবলেম হবে
-জি স্যার দোয়া করবেন
-অবশ্যই, এখন টেবিলে গিয়ে বসো
টেবিলে দুজন একসাথে বসার পরে…
-স্যারের সাথে এসব কি বলছো?(ফারহান)
-যা সত্যি তা-ই বলছি?
-মানে?
-মানে হলো………..

স্যারের সাথে এসব কি বলছো?(ফারহান)
-যা সত্যি তা-ই বলছি(নিশি)
-মানে?
-মানে কি জানোনা?
-কি?
-ফেসবুকের ক্যাপশন টা কি যেনো?
-মাই লেডি
-এটা যেনো মনে থাকে
-কিহহ
-এখন ক্লাসে মন দেও।
ক্লাসের পরে কথা হবে।
ক্লাস শেষ হওয়ার পরে ক্যাম্পাসের দিকে ফারহান আস্তে আস্তে হেটে যাচ্ছে নিশি তখন হাটার মাঝে হালকা দৌড়ে ফারহান হাত ধরে চোখে চোখ রেখে মুচকি হাসি হাসে।
-যেভাবে হাত ধরছো তাতে মানুষ সন্দেহ করতে পারে(ফারহান)
-সন্দেহ করবে কেনো? সবাই তো জেনেই গেছে
-কি জানছে?
-তোমার আর আমার মধ্যে কোনো ধরনের সম্পর্ক আছে এটা সবাই জানে।
-কিহহ
-হ্যা
-কিন্তু এটা তো মিথ্যা
-মিথ্যা টা সত্যি হলে কি খুব বেশি প্রবলেম?(নিশি)
-মানে?
-মানে হলো আমিও তোমার লেডি হতে চাই,শুধুই তোমার(চোখ বুজে)
-ফারহান তখন নিশির দিকে চেয়ে থাকে
-নিশি চোখ খুলে, ঐ মফিজ্জা কি ভাবছিস?
-কিহহহ
-কি ভাবতাছো?
-এর আগে কি বলছো?
-বাসর ঘরে ও বলবো বলে তারাতারি হাটতে হাটতে চলে যায়
-ফারহান তখন নিজের অজান্তে হেসে দেয়।
ফারহান বাসায় যাওয়ার পরে খাবার খেয়ে রুমে শুয়ে শুয়ে নিশির কথা ভাবছে।
নিশির গালের টোল টা অনেক সুন্দর আর ঠোটের কোনায় যে তিল টা আছে এটা যেনো কোনো অপ্সরীকেও হার মানাবে,এমন সময় ফারহানের ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে মোবাইলের রিঙ হচ্ছে।
ফারহান মোবাইল হাতে নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে নিশির মোবাইল থেকে ফোন আসছে।
ফোন রিসিভ করার পরে
-খায়ছো?(নিশি)
-হুম, তুমি?
-হুম, কি করো?
-শুয়ে শুয়ে কারো কথা ভাবছি(ফারহান)
-কার?
-বলা যাবে না
-হয়ছে হয়ছে ঢং বাদ দাও
-কি?
-জানি কার কথা ভাবছো
-কার কথা ভাবছি?
-কার আবার? আমার কথা ই তো ভাবতাছো
-তুমি জানছো কিভাবে?
-জাদু আছে
-ভালো তো
-কি ভাবছো বলো না?
-ভাবছি ডাইনিটা এতো সুন্দর কেনো?
-ওমাহহহ
-কিহহহ?
-আমার সুন্দর কি এতদিনে তোমার চোখে ধরা পরছে?
-আগে তো লেডি ভিলেন ছিলা
-হি হি হি
-হাসো কেনো?
-তখন তো শুধু তোমার সাথেই এসব করতাম
– পারলো এখন কইরো
-এখন না বিয়ের পরে করবো
-কার বিয়ে?
-তোর আর আমার বিয়ে হবে,এবং।খুব তারাতারি
-হিহিহি
-আবার দাত কেলাইয়া হাসো কেন
-কিছু না এখন ফোন রাখো,আমি ঘুমাবো
-ওকে বায়
ফারহান তখন বায় বলে ফোন রেখে নিশিকে নিয়ে কল্পনায় ভেবে ভেবে ঘুমিয়ে যায়।
পরেরদিন সকালে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেড় হয়।
ভার্সিটিতে যাওয়ার পথে ফারহান রাস্তার পাশ দিয়ে হাটছে এমন সময় একটা বাইক এসে ধাক্কা দেয়।
ফারহান তখন রাস্তার পাশে পরে যায়।
তখন কিছু লোক তাকে ধরে নিয়ে স্থানীয় একটা ফার্মেসীতে নিয়ে যায়। হাতের কিছু অংশ কেটে যাওয়ায় ব্যান্ডেজ করে দেয়।।
হাতে ব্যান্ডেজ নিয়েই ভার্সিটি যায়।
ক্যাম্পাসের মধ্যে সানি আর ফারহান গাছ তলায় বসে আছে…
-সাবধানে চলতে পারিস না?(সানি)
-আরে রাস্তার পাশ দিয়েই তো হাটছিলাম কিন্তু ঐ শালা কেনো যে আমায় ধাক্কা দিলো আল্লাহ ই জানে
-ঐ দেখ কে আসছে?
ফারহান তখন সামনে তাকিয়ে দেখে নিশি তারাতারি হেটে আসছে।
-এই কি হয়ছে তোমার?
-কই কিছুনা
-কিছু না হলে হাতে কি লাগাইয়া রাখছো
-সামান্য একটু কেটে গেছে তাই
-সাবধানে চলাফেরা করো না কেনো?
-ঐ ছেলে আমার উপরে উঠায় দিয়া চলে গেছে এখানে সাবধানের কি আছে?
-ঐ শালারে চিনো?
-আচ্ছা এখন এখানে বসো,পাগলামি করতে হবে না।
নিশি তখন ফারহানের পাশে বসে ফারহানের হাত টা তার হাতে নিয়ে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে ফারহানের হাতে অনেকগুলো কিছ করতে থাকে।
ফারহান তখন নিশির দিকে চেয়ে
-এই কি করছো কি?
-কি করছি?
-সানির সামনেই এসব করতাছো?
-আসো ভার্সিটির সবাইকে ডেকে তারপর তোমার ঠোটে দেই
-না থাক,বিয়ের পরে বাসর ঘরে দিও
-মনে থাকে যেনো বলে ফারহানের…….

-সানির সামনে এসব কি করতাছো?(ফারহান)
-আসো ভার্সিটির সবাইকে ডেকে তারপর তোমার ঠোটে আমার ঠোট রাখবো
-না থাক বাসর ঘরে দিও
-মনে থাকে যেনো বলে ফারহান কে নিয়ে ক্লাসে যায়।
ক্লাস শেষ হওয়ার পরে নিশি ফারহানকে গাড়িতে উঠিয়ে বাসায় যায়।
ফারহান বাসায় যাওয়ার পরে……
-তোর হাতে কি হয়ছে?(ফারহানের মা)
-তেমন কিছু না মা
-কি হয়ছে বল
-হাত একটু কেটে গেছে
-কিভাবে?
-ফারহান তখন তার মা কে সবকিছু খুলে বলে।
রাতের দিকে খাবার খাওয়ার পরে ফারহান শুয়ে শুয়ে ফেসবুকিং করতেছে এমন সময় নিশি নক করে
-এখন কেমন লাগতাছে?(নিশি)
-ভালো
-খাইছো?
-হুমম,তুমি?
-হুমম, ঔষধ ঠিকমতো খাইছো তো?
-হুমম
-কি করো?
-শুয়ে শুয়ে ফেসবুকিং আর তোমার সাথে চ্যাটিং, তুমি কি করো?
-সেইম
-ওহহ
-মিস করি
-কাকে?
-একটা বলদকে
-কিহহহ
-হ্যা
-যাও তোমার সাথে কোনো কথা নাই
-কালকে আসলে কিন্তু ক্লাসে সবার সামনে জড়িয়ে ধরে কামড় দিমু
-হুহহহ
-এখন যদি তোমার কাছে থাকতাম তাহলে কতকিছু হতো
-কি হতো?
-তোমাকে জড়িয়ে ধরে অনেকগুলা কিছ করতাম আর তোমার বুকে মাথা রাখতাম
-আমার সন্দেহ হয়তেছে
-আমাকে?
-হ্যা
-কি সন্দেহ?
-তুমি ছেলে নাকি মেয়ে এটা
-কুত্তা তোরে এখন পাইলে কি যে করতাম নিজেও জানিনা
-ওকে যা করার কাল ভার্সিটিতে কইরো,চোখে অনেক ঘুম,এখন বায়
-এই শুনো(আহ্লাদী সুরে)
-বলো
-একটা আদর দিয়ে যাও
-সামনে থাকলে দিতে পারতাম কিন্তু এখন কিভাবে দিবো?
-এখন ফোন দিচ্ছি তুমি দিয়ে দাও বলে নিশি ফোন দেয়।
নিশি ফোন দেওয়ার পরে ফারহান রিসিভ করে…
-কিভাবে দিবো?
-উমমমমমমমমমমমম্মা-উমমমমমমমমমমম
ম্মাহহহহ
-আহহ কত মজা
-কুত্তা তারাতারি দে
-উমমমমমমমমমমমমমম্-উমমমমমমমমমমম
মমম্মাহহহ
-থ্যাংকু কলিজা,গুড নাইট
-গুড নাইট
সকালে ভার্সিটিতে যাওয়ার পরে দেখে নিশি আগেই এসে গাছতলায় বসে আছে।ফারহান আসার পরে
-এতো দেরি হলো কেনো?(নিশি)
-টাইম দেখো, ৫ মিনিট আগে আসছি
-একটু আগে আসলে কি হয়?বলে নিশি অন্যদিকে মুখ নিয়ে নেয়।ফারহান তখন নিশির কাধে হাত দিয়ে নিশিকে বুকে নিয়ে…
-সারাজীবন এমন ভালোবাসা থাকবে তো?(ফারহান)
-ইনশাল্লাহ
ফারহান তখন নিশিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে
-ফারহান(নিশি)
-হ্যা বলো
-তোমার সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে
-ফারহান তখন নিশির কপালে হালকা করে চুমু খেয়ে নিশিকে জড়িয়ে ধরে।
পিছন দিয়ে জান্নাত সহ আরো কয়েকজন জন এসে….
-পাবলিশ প্লেইসে এসব কি হচ্ছে? (জান্নাত)
-তোরা আসার আর সময় পেলি না?(নিশি)
-ডিস্টার্ব করলাম তাই না?
-হয়ছে এখন ঢং বাদ দিয়ে ক্লাসে চল(নিশি)
-হুম চল
এভাবে দুইবছর চলার পরে ফারহান একটা প্রাইভেট জব পায়।
তখন দুই পরিবারের সম্মতি নিয়ে তাদের বিয়ে হয়।। ১২ টা বাজে
নিশি বাসর ঘরে বসে অপেক্ষা করতাছে কিন্তু ফারহানের আসার নাম নেই।
১২.৩০ টা বাজে ফারহান আসার পরে।
-ঐ মফিজ্জা এতক্ষণ কই ছিলি?(নিশি)
-আল্লাহ তোমার কাছে বিচার দিলাম
-কি?
-স্বামী ঘরে আসলে সব নারী স্বামীর পা ধরে সালাম করে আর তুমি প্রথম রাতেই আমার নাম খেতাবি করতাছো?
-এত দেরি হলো কেনো?
-দুলাভাইরা টিপস শিখাইয়া দিছে
-কিসের টিপস
-টি-টোয়েন্টি ইনিংস কিভাবে খেলে সেটা বলে দিছে
-আমার সাথে টি-টোয়েন্টি হলে চলবেনা,টেস্ট খেলতে হবে
-কিহহ
-হ্যা
-টেস্ট খেলার রুলস কেউ শিখায় নাই
-আমি আছি কিসের জন্য?
আমি এখন শিখাবো বলে মুচকি হাসি দিয়ে ফারহানকে জড়িয়ে ধরে ফার্স্ট ইনিংসের জন্য প্রস্তুত হয়।