আঁকাশে প্রচন্ড মেঘ জমেছে।বৃষ্টি আসার আগেই বাসায় পৌঁছাতে হবে।কলেজে ক্লাস শেষে বাসায় ফিরছি।আজ যেনো পথ ফুরাতেই চাচ্ছেনা।রাস্তার পাশে একটা কেজি স্কুলের সামনে আসতেই থমকে দাঁড়ালাম।একটা ছোট্র মেয়ে কেজি স্কুলের গেট ধরে কাঁদছে।উল্টোদিকে ঘুরে থাকায় আমি মেয়েটার মুখ দেখতে পাচ্ছিলাম না।আমি মেয়েটার কাছে এগিয়ে গেলাম।মেয়েটার হাত ধরে আমার দিকে ঘুরাতেই অবাক হয়ে গেলাম।এতো একটা ছোট্র পরী।আমার মনে হলো কোন পরীর দল থেকে হারিয়ে গেছে সে তাই কাঁদছে।আমি কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাঁকিয়ে থাকলাম।মেয়েটার বয়স বেশি হলেও ৭ বছর হবে।তারপর জিঙ্গেস করলাম
কাঁদছো কেনো?(আমি)
একটা ছেলে আমার ক্যাডবেরি নিয়ে চলে গেছে।(মেয়েটি)
এখানতো কাউকেই দেখতে পাচ্ছিনা।
সবাই চলে গেছে।
হঠাৎই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।আমি মেয়েটার হাত ধরে টেনে নিয়ে একটা দোকানের মধ্যে গেলাম বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য।মেয়েটার দিকে তাঁকিয়ে মনে হলো সে আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছে।আমি ওকে স্বাভাবিক করার জন্য বললাম
তুমি ভয় পেওনা।আমি তোমার কোন ক্ষতি করবোনা।নাম কী তোমার?(আমি)
আমার নাম আপনাকে বলবো না।(মেয়েটি)
কেনো বলবেনা?
আমার আন্টি বলেছে অপরিচিত কারো সাথে কথা বলবিনা।
ওমা তাই।আমি তেমাকে ক্যাডবেরি কিনে দিবো
আমি অন্যের দেওয়া জিনিস খাইনা।
এটাও কী তোমার আন্টি মানা করেছে?
হ্যাঁ
তোমার আন্টি মিথ্যা বলেছে।
না আমার আন্টি মিথ্যা বলেনা।তুমি মিথ্যাবাদী
এতটুকু মেয়ের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম।কী সুন্দর করে কথা বলে।আমি দোকান থেকে দুইটা ক্যাডবেরি কিনে মেয়েটাকে দিলাম কিন্তু ও নিলোনা।৩ মিনিট পরে মেয়েটা নিজেও আমাকে বলছে
ক্যাডবেরি আমি নিতে পারি কিন্তু কালকে আপনাকে টাকা দিয়ে দিবো। আমি হাঁসতে হাঁসতে বললাম দিও
আচ্ছা তাহলে একটা দাও।আর আমার আন্টিকে কিন্তু বলোনা আমি ক্যাডবেরি খেয়েছি। উনি শুনলে খুব রাগ করবে।
আচ্ছা বলবোনা।
মেয়েটা আমার হাত থেকে ক্যাডবেরিটা নিয়ে খেতে শুরু করলো।আমি মুগ্ধ হয়ে ওর খাওয়া দেখছি।
তোমার নাম কী?(আমি)
পরী
খুব সুন্দর নামতো।কে রেখেছে এই নাম?
আমার আন্টি রেখেছে।
ওমা তাই।তোমাকে এখন কে নিতে আসবে?
আন্টি আসবে।
তোমার আম্মু কোথায়?
আম্মু আব্বু দুজনেই আল্লাহর কাছে থাকে। পরীর কথা শুনে এবার কিছুটা কষ্ট লাগলো।বাচ্ছা ছেলে মেয়েরা কখনো মিথ্যা বলেনা।আমি আবার জিঙ্গেস করলাম

আমি আবার জিঙ্গেস করলাম
:-তুমি কী তোমার আন্টির সাথেই থাকো?
:-হ্যাঁ।আমার আন্টি খুব ভালো
হঠাৎ কে যেনো পরী বলে ডাক দিলো।পরী ডাকটা শুনা মাএই ছুটে চলে গেলো।আমি সামনের দিকে তাঁকিয়ে দেখলাম হিজাব পড়া একটা মেয়েকে গিয়ে পরী জরিয়ে ধরলো।আমার আর বুঝতে বাঁকি রইলো না এটাই পরীর আন্টি।পরী ওর আন্টির কাছ থেকে দৌঁড়ে আবার আমার কাছে আসলো।আমার গালে একটা চুমু খেয়ে ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেলো।আমি ওর চলে যাওয়া দেখছি।দোকানের বাইরেই একটা মাইক্সো দাঁড়ানো ছিলো সেটাতে ওঠে ওরা চলে গেলো।বৃষ্টি কমে গেছে তাই আমিও বাসায় চলে আসলাম।বাসায় এসে কিছুতেই পরীর কথা ভুলতে পারছিলাম না।সেদিন শুধু পরীর কথায় মনে হলো।পরেদিন সকাল থেকেই পরীকে মিস করছিলাম।পরীদের স্কুল ছুটি হয় ১২ টায়।আমাদের বাসা থেকে পরীদের স্কুল বেশি দুরে না তাই জানি ওদের স্কুল কখন ছুটি হয়।১২ টার সময় পরীর স্কুলের সামনে গেলাম।গিয়ে দেখি স্কুল ছুটি দিয়ে দিয়েছে।সব ছেলে মেয়েরা বের হচ্ছে।দেখলাম পরীও গেট দিয়ে বের হচ্ছে।পরী আমাকে দেখে আমার কাছে এগিয়ে আসলো।ওর সাথে সামনের দোকানটায় বসে গল্প করতে বসে গেলাম।আস্তে আস্তে পরীর সাথে ভালোই বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।আমি প্রতিদিন পরীর স্কুলের সামনে যেতাম।প্রতিদিন ওর সাথে মাএ ১৫ মিনিট কথা বলার সুযোগ পেতাম।১৫ মিনিট পর ওর আন্টি এসে ওকে নিয়ে চলে যেতো।পরীর আন্টিকে কোনদিন হিজাব ছাড়া আসতে দেখিনি। পরীর কাছ থেকে ওর আন্টির ব্যাপারে অনেক কিছুই জেনেছি।পরীর আন্টি কোনদিন আমার সাথে কথা বলেনি আবার আমিও বলিনি।এভাবে কেটে যায় ৭ দিন।পরী আর আমি এখন খুব ভালো বন্ধু

আজ পরীর জন্নদিন।ও আমাকে ইনভাইট করেছে ওদের বাড়ি।প্রথমে যেতে চাইনি কিন্তু পরে ওর আন্টির অনুরোধে যেতে রাজি হয়েছি।পরীর জন্য একটা গিফট কিনেছি আর একটা জামা।সন্ধায় অনুষ্ঠান।এখন সন্ধা ৬ টা বাজে।রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।পরীর দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী পৌঁছাতে পৌঁছাতে ৬:৫০ বেজে গেলো।বাড়ির সামনে গিয়ে আমি অবাক হয়ে গেলাম।এত বড় বাড়ি ওদের।বাড়িটা সম্পুর্ন নানা রকম লাইট দিয়ে সাজানো হয়েছে।আমি গেট দিয়ে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করলাম।বাসার মধ্যে ঢুকতেই পরীকে খুঁজতে লাগলাম।বেশিক্ষণ খুজতে হলোনা।পরী আমাকে দেখেই এগিয়ে আসলো।পরীর সাথের মেয়েটাকে দেখে আমি বড় ধরনের একটা ক্রাশ খেলাম।এ যেনো সাক্ষাৎ পরী।আমি একদৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাঁকিয়ে আছি।পরীর হাতের ধাক্কাতে বাস্তবে ফিরলাম।

চাচ্চু তোমাকে দারুন লাগছে।(পরী) পরী আমাকে চাচ্চু বলে ডাকে
তোমাকেও অনেক সুন্দর লাগছে মামনী।পরী একটু এদিকে আসতো(আমি) পরীকে একটু সাইডে এনে জিঙ্গেস করলাম
:-তোমার সাথে ছিলো ওই মেয়েটা কে?
ওমা তুমি জান্নাত আন্টিকে চিনছোনা
:-চিনবো কী করে এর আগে কী কোনদিন হিজাব ছাড়া দেখেছি।
তাও ঠিক।আচ্ছা তুমি আবার ক্রাশ খাওনিতো, কী বলে পিচ্চি মেয়েটা।এতটুকু মেয়ে ক্রাশ খাওয়াও বোঝে।
চাচ্চু কেথায় হারিয়ে গেলে।
:-কোথাও না মামনি।
আপনার সাথে কথা বলা যাবে?(জান্নাত)
:-যাবেনা কেনো?(আমি)
আমি জান্নাত।হাত বাড়িয়ে
:- জানি।আর আপনি ইন্টার ফাষ্ট ইয়ারে পড়েন এটাও জানি।আমি হুসাইন
:-জানি।
ভালো।আচ্ছা পরীর আব্বু আম্মুর কী হয়েছিলো।
উনারা দুজন একটা দুরঘর্টনায় মারা যান।তারপর থেকে পরী আমার কাছেই থাকে।
একটা কথা বলবো
বলুন
আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে আমার কথা শুনে পরী বললো
সুন্দর লাগবেনা মুখে দশ কেজি আঁটা মেখেছে। জান্নাত পরীর কথা শুনে পরীর কান ধরে বললো
:-এই বুড়ি আমি কখন মুখে আটা মাখলাম। পরী জান্নাতের হাত থেকে কান ছুটিয়ে আমার কোলে এসে বললো
:-আমি পাকনা বুড়ি না।তুমি পাকনা বুড়ি।(পরী)
তবরে বুড়ি(জান্নাত)
কথাটা বলেই পরী জান্নাতের দিকে ধেয়ে আসলো।পরী আমার কোল থেকে নেমে দিলো এক দৌঁড়।জান্নাতও ছুটলো পরীর পিছু পিছু।আমি দাঁড়িয়ে ওদের দৌঁড়ানো দেখছি আর হাঁসছি।কিছুক্ষণ পর জান্নাত ওর বাবা মায়ের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলো।ওদের সব আত্মীয়স্বজন আসার পর কেট কাটা হলো।সেদিন রাতে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ১টা বেজে গেলো।মিলির আম্মু অনেকবার থাকতে বললো কিন্তু আমি চলে আসলাম।বাসায় এসে খুব ক্লান্ত লাগছিলো তাই ঘুমিয়ে পড়লাম।এভাবে কাঁটতে থাকে দিনগুলো।সেদিনের পর থেকে জান্নাতের সাথেও অনেকবার কথা হয়েছে।আস্তে আস্তে জান্নাতের সাথেও একটা ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।পরীর সাথে পরিচয়ের ২৪ তম দিনে শুনতে পায় পরীর প্রচন্ড জ্বর হয়েছে।পরীকে হাতপাতালে নেওয়া হয়েছে। আমি তাঁড়িতাঁড়ি হাতপাতালে যায়।গিয়ে দেখি পরী শুয়ে আছে।ওর পাশে জান্নাত বসে আছে।জান্নাতের বাবা মা সহ ওদের বাড়ির অনেকেই আছে।আমাকে যেতে দেখে পরী বললো
তুমি এসেছো চাচ্চু।জানো তোমাকে খুব মিস করছিলাম(পরী)

আমিও বুড়িটাকে খুব মিস করছিলাম।(আমি)
জানো চাচ্চু আমি মনে হয় আর বাঁচবো না।জানো চাচ্চু আব্বু আম্মুর কথা খুব মনে পড়ছে।

জানো চাচ্চু আমার আব্বু আম্মুর কথা খুব মনে পড়ছে। স্কুলে যখন সবার আম্মু এসে তাদের বাচ্চাদের খাইয়ে দেয় তখন আমারও আম্মুর কথা খুব মনে পড়ে।পরীর মুখে এমন কথা শুনে আমার চোখে পানি চলে আসলো। জান্নাতের মা তো কেদেই ফেললেন। সবার দিকে তাকিয়ে দেখি সবার চোখে পানি। আমি পরীর মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম বুড়িটার কিছুই হবেনা।খুব তাঁড়াতাঁরিই বুড়িটা ভালো হয়ে যাবে।এবার আমি বুড়িটাকে অনেকগুলো ক্যাডবেরি কিনে দিবো।(আমি)
:-শুধু ক্যাডবেরি দিলে হবেনা আমাকে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে(পরী)
:-আচ্ছা নিয়ে যাবো।এখন ঘুমিয়ে পড়ো।
:-না ঘুমাবো না।আমি ঘুমালে তুমি চলে যাবে।
:-যাবোনা তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।
:-আচ্ছা।
আমি পরীর মাথার কাছে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম।কিছুক্ষণের মধ্যেই পরী ঘুমিয়ে পড়বো। পরী এখন মুটামুটি বিপদ মুক্ত।ওর সব আত্নীয় স্বজন চলে গেছে।আমি, জান্নাত,জান্নাতের আব্বু আম্মু এই কয়জনই আছি।
:-হুসাইন তোমার কী বাড়িতে কোন কাজ আছে?(আন্টি)
না আন্টি(আমি)
তাহলে তুমি আর মিলি এখানে থাকো আমি আর তোমার আঙ্কেল বাসা থেকে ঘুরে আসি।
আচ্ছা যান।
মিলির আব্বু আম্মু চলে গেলো।আমি পরীর মাথার কাছে বসে আছি আর জান্নত পরীর পায়ের কাছে।আমি বারবার আড় চোখে জান্নাতের দিকে তাঁকাচ্ছি আবার জান্নাত তাঁকাচ্ছে।মাঝে মাঝে চোখাচোখিও হচ্ছে।
কী ব্যাপার দুজনের মধ্যে খুব চোখাচোখি হচ্ছে দেখছি।(পরী)
পরীর কথা শুনে আমি মিলি দুজনেই লজ্জা পেলাম।কিছু হয়নি এমন ভান করে বললাম
:-তুমি কখন জাগলে।
:-মাএই।তো কবে থেকে সামথিং সামথিং চলছে হু।
:-ওই বুড়ি কিসের সামথিং সামথিং।বেশি পেঁকে গেছিস তাইনা।চুপচাপ ঘুমা(জান্নাত)
:- সত্য কথা বললেই দোষ।
আবার কথা বলিস।চুপ করে ঘুমা(জান্নাত)
ও বুঝতে পারছি আমার জন্য তোমাদের সমস্যা হচ্ছে তাইনা।ঠিক আছে এইযে চোখ বন্ধ করে ঘুমালাম।
পরী অন্যপাশে মুখ করে শুয়ে রইল।আমি চুপ করে বসে আছি।জান্নাতের দিকে তাঁকালাম।দেখি ও একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাঁকিয়ে আছে।আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।জান্নাতের আব্বু আম্মু আসলো সন্ধার দিকে।ওনারা আসলে আমি বললাম :-আন্টি এখন আমাকে বাসায় যেতে হবে।আবার কাল সকালে আসবো।(আমি)
আচ্ছা যাও।বাইরে গাড়ি দাঁড় করানো আছে।আমি ড্রাইভার কে বলে দিচ্ছি তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবে।(আন্টি)
আচ্ছা।
আমিও বাসায় যাবো(জান্নাত)
তাহলে হুসাইনের সাথে এক গাড়িয়ে চলে যা।(আন্টি)
আমি আর জান্নাত বাইরে এসে গাড়িতে ওঠলাম।

জান্নাত আমার পাশের সিটে বসলো।গাড়ি চলতে শুরু করলো।জান্নাত বারবার আমার দিকে আড়চোখে তাঁকাচ্ছে।আমিও তাঁকাচ্ছি তা না।গাড়ি আমার বাসার সামনে এসে থামলো।আগে থেকেই ড্রায়ভারকে বলে রেখেছিলাম কোথায় যেতে হবে। গাড়ি থেকে নামার আগে জান্নাতের ফোন নম্বরটা নিয়ে নিলাম আর আমারটা দিলাম।তারপর গাড়ি থেকে নেমে বাসায় মধ্যে চলে আসলাম।বাসায় আসতেই আম্মু জিঙ্গেস করলো পরীর এখন কী অবস্থা। আমি বললাম ভালো।আম্মুকে পরীর কথা অনেক আগেই বলেছি।জান্নাতের কথাও বলেছি।আমার আম্মুকে আমি একজন ভালো বন্ধু ভাবি তাই আম্মুর কাছে সবকিছু শেয়ার করি।আম্মু ফ্রেশ হয়ে খেতে যেতে বললো।আমি ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে আমার রুমে আসলাম।রুমে এসে ভাবলাম জান্নাতকে ফোন দিবো কীনা ভাবছি।না থাক এখন ফোন দিলে কী মনে করে এই ভেবে দিলাম না।অনেক ক্লান্ত লাগছে তাই শুয়ে পড়লাম। –
ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো।ঘড়ির দিকে তাঁকিয়ে দেখি ১ টা বাজে।ফোনের স্কিনে তাঁকিয়ে দেখি জান্নাতের ফোন।ফোনটা রিচিভ করলাম
:-হ্যালো।আপনাকে সেই কখন থেকে ফোন দিচ্ছি ধরেন না কেনো?(জান্নাত)
:-ঘুমাচ্ছিলাম(আমি)
:-পরীর ঘুম ভাঙ্গার পর শুধু আপনাকে দেখতে চাচ্ছে।আব্বু ফোন করে বললো আপনাকে নিয়ে তাঁড়িতাঁড়ি যেতে।আমি গাড়ি নিয়ে বেরোচ্ছি আপনি রেডি হয়ে বাসার সামনে দাঁড়ান।
:-ওকে
বিছানা ছেরে ওঠে আম্মুদের রুমের সামনে গিয়ে আম্মু ডাক দিলাম
:-কী হয়েছে।এতরাতে ডাকাডাকি করছিস কেনো?(আম্মু)
:-পরী নাকি আমাকে দেখতে চাচ্ছে।এখনি হাসপাতালে যেতে হবে।
:-এতরাতে কীভাবে যাবি
:-জান্নাত গাড়ি নিয়ে আসছে।
:-আচ্ছা সাবধানে যাস।
রেডি হয়ে গেটের সামনে দাঁড়ালাম।কিছুক্ষনের মধ্যেই জান্নাত চলে আসলো।জান্নাত নিজেই গাড়ি চালাচ্ছে।আমি গাড়িতে ওটে বসলাম।আমি পিছনের সিটে বসতে গেলাম কিন্তু জান্নাত বললো সামনে বসতে তাই সামনে বসলাম।গাড়ি নিয়ে মাঝ পথে আসতেই পুলিশ আটকালো আমাদের। জান্নাত ওর বাবার নাম বলাতে পুলিশ আমাদের ছেড়ে দিলো।জান্নাত গাড়ি চালাচ্ছে আর মাঝে মাঝে আমার দিকে তাঁকাচ্ছে।আমিও তাঁকাচ্ছি।হাসপাতালে পৌঁছাতে বেশিক্ষণ লাগলো না।গাড়ি থেকে নেমে আমি আর জান্নাত দুজনেই ভিতরে গেলাম।পরী আমাকে দেখেই বেড থেকে নেমে ছুটে আসলো।এক দৌঁড়ে আমার কোলে এসে উঠলো।
:-চাচ্চু তুমি আমাকে ছেড়ে কোথায় চলে গিয়েছিলে।জানো তোমাকে খুব মিস করছিলাম(কাঁদতে কাঁদতে কথাটা বললো পরী)
পরীর কান্না আমার সহ্য হয়না।ওর চোখ মুছায়ে দিয়ে বললাম

একটু বাড়িতে গিয়েছিলাম।
:-আমাকেও নিয়ে গেলেনা কেনো।
:-তুমি সুস্থ হলেই নিয়ে যাবো।
আমি পরীকে আবার বেডে শুয়ায়ে দিলাম।পরীর পরিবারের সবাই আমার প্রতি পরীর এমন ভালবাসা দেখে অবাক হয়ে গেছে।মাএ এই কয়দিনেই পরী আমাকে এতটা ভালবেসে ফেলবে সেটা উনারা ভাবতে পারেননি।আমি পরীর মাথার কাছে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম।পরী আমার একহাত ধরে রেখেছে যাতে আমি কোথাও চলে না যায়।এতটুকু মেয়ের ভালবাসা আমাকে মুগ্ধ করে দিয়েছে।কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে দেওয়ার পরেই পরী ঘুমিয়ে পড়লো।
সকালে জান্নাতের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো।রাতে পরীর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ওর মাথার কাছেই ঘুমিয়ে পড়েছি।পরী এখনো ঘুমাচ্ছে।আমার হাতটা এখনও ধরে রেখেছে।আমি ওর হাত থেকে আমার হাত ছাড়াতে গেলাম ওমনি পরী জেগে ওঠলো।আমি বললাম

:-ঘুম ভাঙ্গলো মহারানীর(আমি)
:-হ্যাঁ ভাঙ্গলো।
১০ টার দিকে ডাক্টটার এসে পরীকে দেখে বললেন এখনি ওকে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারি।১০:৩০ এ আমরা সবাই হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে পড়লাম।বাইরে এসে সবাই গাড়িতে ওঠলাম।সামনের সিটে জান্নাতের আব্বু আর আম্মু ওঠলো।ড্রায়ভার আসেনি তাই জান্নাতে আব্বুই চালাবে।আমি পরী আর জান্নাত পিছনে বসলাম।পরী মাঝে বসলো আমি আর জান্নাত দুজন দুপাশে বসলাম।
:-চাচ্চু তোমার সামথিং সামথিং কতদুর? (পরী)
:-মানে(বুঝেও না বুঝার ভান করলাম)
:-মানে তোমার আর আন্টির কতদুর
:-ওই তুই চুপ করবি নাকি থাপ্পর খাবি(জান্নাত) জান্নাতের কথা শুনেই পরী কেঁদে দিলো।কাঁদতে কাঁদতে বললো
:-আজ আমার আমু আব্বু নেই বলে আমাকে ধমক দিয়ে কথা বলছো তাইনা।আমি যেদিন মরে যাবো সেদিন— আমি আর পরীকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে ওর মুখ চেপে ধরলাম।জান্নাতকে বললাম থামো। পরীর কান্না থামালাম।গাড়ি জান্নাতদের বাসার সামনে এসে থামলো।সবাই ভিতরে চলে গেলো।আমিও গেলাম।পরীকে বললাম
:-আমি এখন বাড়িতে যায় বিকেলে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো(আমি)
:-তোমার কথা বিশ্বাস করিনা।প্রমিস করো।
:-আচ্ছা বাবা প্রমিস করলো।
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে ভাবছি আজ জান্নাতকে আমার ভালবাসার কথা বলে দিব কীনা।না এ হয়না।জান্নাতের পরিবারের সবাই আমাকে ভালো ভেবে ওদের পরিবারে জায়গা দিয়েছে।এখন যদি শুনে জান্নাতের সাথে আমি প্রেম করি তাহলে উনারা অনেক কষ্ট পাবে।এমনকী আমার সাথে সব সম্পর্ক নষ্টও করে দিতে পারে।সবকিছু ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম জান্নাতকে ভুলে যাবো।

নিজের মনকে অনেক শক্ত করলাম।জান্নাতের পরিবারের সবাই আমাকে অনেক বিশ্বাস করে।আমি তাঁদের বিশ্বাসের অমর্যাদা কিছুতেই করবোনা।রুমে বসে এসব ভাবছিলাম এমন সময় রুমে আম্মু এলো
:-কিরে পরীর এখন কী অবস্থা(আম্মু)
:-এখন সুস্থ।(আমি)
:-তোর কী কিছু হয়েছে।মনে হচ্ছে অনেক টেনশনে আছিস। এই হলো মায়ের মন।কিছু হবার আগেই বুঝে যায়।আমার আম্মুকে আমি সবথকে ভালো বন্ধু ভাবি তাই সবকিছু খুলে বললাম।
:-সবইতো শুনলাম। জান্নাত কী তোকে পছন্দ করে।(আম্মু)
:-মনে হয়তো করে।(আমি)
:-তাহলে আমার মনে দুজন রাজি থাকলে সমস্যা হবেনা।
:-কিন্তু জান্নাতের বাবা মা যখন ব্যাপারটা জানবে তখন কী হবে।ওনারা বললে ভালো ভেবে পরিবারে জায়গা দিয়েছিলাম কিন্তু সেই সুযোগ নেবে সেটা ভাবিনি।আমি ওকে ভুলে যাবো।
:-তুই কী ওকে ভুলতে পারবি
:-না পারলেও পারতে হবে।
:-আচ্ছা এসব নিয়ে পরে ভাবিস এখন খেতে আয়।
:-তুমি যাও আমি আসছি।
আমি চলে গেলো।আমি আবারো চিন্তায় পড়ে গেলাম কী করবো।জান্নাতকে কিছুতেই মাথা থেকে নামাতে পারছিনা।আচ্ছা জান্নাত যদি নিজের থেকে কিছু বলে তখন দেখা যাবে।এখন ক্ষুদা লেগেছে খেতে যায়।ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে আবারর রুমে এসে বসলাম এমন সময়,জান্নাতের ফোন
:-চাচ্চু কোথায় তুমি।আমাকে কখন ঘুরতে নিয়ে যাবে(পরী)
:-এইতো একটু পরেই।তুমি রেডি থেকো আমি গিয়ে নিয়ে বসবো।(আমি)
:-আমিতো সেই কখন থেকেই রেডি।তুমি তাঁড়াতাঁড়ি আসো।
:-আচ্ছা একটু পরেই আসছি।
:-আর তুমি আসার সময় পান্জাবি পড়ে আসবে।
পাশ থেকে জান্নাত এটা পরীকে শিখিয়ে দিলো এটা ভালো করেই শুনতে পেলাম।
:-আচ্ছা আসবো।এখন রাখছি।বাই
ফোনটা রেখে ভাবছি মাএ এই কয়েকদিনের পরিচয়ে পরীকে কত আপন মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে ওকে যুগ যুগ ধরে চিনি আমি।৪ টার দিকে রেডি হয়ে পরীদের বাড়িতে গেলাম।গিয়ে দেখি পরী রেডি।পরীকে জিঙ্গেস করলাম
:-তোমার আন্টি যাবেনা(আমি)
:-যাবে।রেডি হচ্ছে(পরী)
:-তুমি গিয়ে তাঁড়াতাঁড়ি রেডি হতে বলো।
পরী চলে গেলো।২ মিনিট পরে আবার আমার কাছে ফিরে আসলো।
:-চাচ্চু তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে।আন্টি আজ তোমাকে দেখে ক্রাশ খাবে।
আমি পরীর মুখ চেপে ধরে আমার পাশে বািয়ে বললাম
:-একথা আর কখনো বলবেনা।আবার বললে আমি আর তোমাদের বাসায়,আসবোনা।
:-ঠিক আছে বলবোনা।
:-আমাকে পুরো ২৫ মিনিট বসিয়ে রেখে তারপর জান্নাত আসলো।আমি জান্নাতের দিকে তাঁকাতেই বড় রকমের ক্রাশ খেলাম।জান্নাত আজ শাড়ি পড়েছে।

মুখে হালকা মেকাপ।হাতে কাঁচের চুড়ি।কানে দুল।এক কথায় ডানা কাটা পরী।আমি মুগ্ধ হয়ে তাঁকে দেখছি।জান্নাতও এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাঁকিয়ে আছে।
:-চাচ্চু এভাবে তাঁকিয়ে থেকোনা।এভাবে তাঁকিয়ে থাকলে চোখ নষ্ট হয়ে যাবে।হি হি হি
আমি আর জান্নাত দুজনেই লজ্হা পেলাম।জান্নাতের দিকে তাঁকিয়ে দেখলাম লজ্জায় ওর মুখটা লাল বর্ন ধারণ করেছে।মেয়েদের লজ্জা পেলে এত সুন্দর লাগে আগে জানা ছিলনা।কেউ যদি আমাকে এখন জিঙ্গেস করে এই পৃথিবীর সেটা সুন্দরী কে আমি এক কথায় জবাব দিয়ে দেবো জান্নাত। আমরা তিনজন বেড়িয়ে পড়লাম।আজ আর জান্নাত গাড়ি নিলোনা।বললো রিক্সায় চড়ে ঘুরবে।
তিনজন এখন রিক্সায় বসে আছি।পরী মাঝখানে আর আমরা দুজন দুপাশে। পরী রাস্তায় এপাশে ওপাশে সবকিছু দেখছে আর আমাকে জিঙ্গেস করছে এটার নাম কী ওটার নাম কী।আমি সবকিছুর উওর দিচ্ছি।আমরা একটা শিশু পার্কে এসে থামলাম।পার্কের মধ্যে অনেক লোকজন।পরী ভিতরে ঢুকেই সব বায়না শুরু করে দিলো এটাতে ওঠবো ওটাতো ওঠবো।আমি আর কী করবো একএক করে ওকে সবগুলোতে ওঠালাম।একক্ষণ জান্নাত একটা কথাও বলেনি শুধু চুপচাপ দেখেছে সবকিছু।পরীর সবকিছু ঘুরে দেখানোর একটা বেন্চে বসলাম।আমি পরীকে বললাম
:-কেউ মনে হয় আমাদের দুজনের উপর রাগ করে আছে।(আমি)
সঙ্গে সঙ্গে কাজ হলো
:-আমি কারো উপর রাগ করে নেই।(জান্নাত)
আমাদের কথার মাঝে দুজন লোক এসে আমাদের সামনে দাঁড়ালো।একজন পুরুষ আরেকজন মহিলা।
:-আপনাদের বাবুটাতো অনেক সুন্দর(মহিলা)
:-সুন্দর হবেনা।দেখো মা বাবা দুজনেই কত সুন্দর(পুরুষ লোকটি)
:-ইস আমাদের যদি এরকম একটা মেয়ে থাকতো।(মহিলা)
তাঁদের কথা বার্তায় যা বুঝলাম তা হলো ওনাদের কোন সন্তান নেই।
:-আপনাদের দেখে মনে হচ্ছেনা খুব বেশিদিন বিয়ে হয়েছে।এত তাঁড়াতাঁড়ি এত কিউট একটা বেবি।আমার কেনো যানি বিশ্বাস হচ্ছেনা।(মহিলাটি বললো)
:-ওই মিয়া আপনি কে।আপনার বিশ্বাস হলেই কী আর না হলেই কী।এটা আমাদের বাবু।আমি ওর মা আর ওইটা ওর বাবা।বেশি কথা না বলে এখান থেকে ফুটন নাহলে খারাপ কিছু হয়ে যাবে।(জান্নাত) জান্নাতের এমন কথা শুনে উনারা তাঁড়াতাঁড়ি চলে গেলো।আমি আর পরী দুজন দুজনার দিকে তাঁকিয়ে আছি।পরী আমার দিকে তাঁকিয়ে মিটমিট করে হাঁসছে। পরীকে এভাবে হাঁসতে দেখে আমি জোরে হেঁসে ফেললাম।।আমার হাঁসিটা মনে হয় জান্নাতের পছন্দ হলোনা তাই :-হাঁসার কী হলো। আমি জোকার যে আমি হাঁসির মত কথা বলছি।(জান্নাত)

এমন এক রাগি লুক নিয়ে কথাটা বললো যা দেখে আমার এবং পরীর দুজনের হাঁসি মুহুর্তেই হারিয়ে গেলো।
:-আজ আর ঘুরবো না।বাসায় চলুন
আমাকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বললো জান্নাত।আমিও বাধ্য ছেলের মত ওঠে দাঁড়ালাম।সারা রাস্তায় জান্নাত একটা কথাও বললো না।এটা দেখে আমি আর পরীও চুপ করে রইলাম।বাসার সামনে আসতেই জান্নাত রিক্সা থেকে নেমে রাগে কটকট করতে করতে ভিতরে চলে গেলো।আমি পরীকে নিয়ে দিয়ে ওই রিক্সায়ই বাসায় ফিরে আসলাম।বাসায় আসার পর আব্বু তাঁর রুমে ডেকে পাঠালেন।আমি ফ্রেশ না হয়েই আব্বুর রুমে গেলাম :-আব্বু তুমি নাকি ডেকেছো(আমি)
:-হ্যাঁ বস।(আব্বু)
আমি বসলাম
:-এখন একটু তোর ফুপিদের বাড়িতে যেতে পারবি।
:-এখন এই সন্ধা বেলায়।
:-কাজটা একটু বেশি জরুরী।নাহলে আর কী আমাকেই যেতে হবে।
:-আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে তারপর বেড়োচ্ছি।
আমি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলাম। আব্বু আম্মুকে বিদায় দিয়ে রওনা দিলাম।আমার ফুপির বাসা আমাদের বাসা থেকে অনেক দুরে।তাঁদের বাসায় পৌঁছাতো পৌঁছা ১১:৩০ বেজে গেলো।ফুপির ছেলে আমাকে বাস স্টান্ড থেকে নিয়ে গেলো।ফুপিদের বাড়িতে গিয়ে।
:-কেমন আছিস। এতদিন পর ফুপির কথা মনে পড়লো।(ফুপি)
:-পড়াশুনার চাপে আসতে পারিনা।
:-এবার যখন এসেছিস কিছুদিন থেকে যাবি।
:-আচ্ছা দেখা যাবে।
ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমানোর জন্য রুমে গেলাম।রুমে গিয়ে পরীর কথা মনে হতেই ফোনটা বের করলাম ও শিট ফোনটা অফ হয়ে আছে।তাঁড়াতাঁড়ি ফুপির কাছ থেকে চার্জার নিয়ে চার্জে দিলাম।কিছুক্ষন পরে ফোনটা অন করেই জান্নাতকে ফোন দিলাম। প্রথমবার ধরলোনা।দ্বিতীয়বার ধরলো :-আপনার ফোন অফ ছিলো কেনো।জানে পরী আপনার সাথে কথা না বলে কিছুতেই ক্ষেতে চাইছিলো না।পরে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে(জান্নাত)
:-আসলে আমি বাড়িতে আসার পরেই আব্বু ফুপিদের বাসায় পাঠালো তাই ফোনটা চার্জে দেওয়ার সময় পায়নি।(আমি)
-ও।বাসায় কবে আসবেন।
:সঠিক জানিনা।কালকেও যেতে পারি আবার দুএকদিন দেরিও হতে পারে।
ও আচ্ছা
জান্নাতের সাথে অনেকক্ষণ কথা বললাম।তারপর ফোনটা রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম।সকালে ফুপির ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো।ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেশ হওয়ার পরে ফুপি নাস্তা দিলো।নাস্তা করে ফুপিদের বাসার চারপাশ দেখতে লাগলাম।হঠাৎ খেয়াল করলাম একটা মেয়ে আমাকে ফলো করছে।তাই আর বাইরে না থেকে রুমে চলে আসলাম।রুমে এসে জান্নাতকে ফোন দিলাম।রিং হবার সাথে সাথে ফোনটা রিচিভ হলো :-চাচ্চু তুমি কোথায়।

চাচ্চু তুমি কেথায়।তোমাকে অনেক মিস করছি(পরী)
:-এইতো মামনি আমি একটা কাজে বাইরে এসেছি কাজটা শেষ হলেও তোমার কাছে চলে আসবো।(আমি)
:-তোমার কোন কাজ করা লাগবেনা।তুমি আজই চলে আসো।
:-না মামনি কাজটা না করলে আমার আব্বু আমাকে পিটানি দিবে।তুমি খেয়েছো এখন?
:-না খাবোনা।তুমি না আসলে খাবোনা।
:-একটু বোঝার চেষ্টা করো।এইতো আমি যত তাঁড়াতাঁড়ি পারি চলে আসবো।তুমি খেয়ে নাও।
:-না খাবোনা
:-ঠিক আছে তুমি না খেলে আমিও খাবোনা।
:-আচ্ছা খাচ্ছি।তুমিও খেয়ে নাও।
:-ঠিক আছে।এখন লক্ষি মেয়ের মতে খেয়ে নাও।আমি এখন রাখছি আবার পরে কথা হবে।
ফোনটা রেখে পরীর কথা ভাবছি।মেয়েটা আমাকে ছাড়া কিছুই বোঝেনা।সারাদিন নানা ব্যস্ততার মাঝেও পরী আর জান্নাতের কথা একটুও মন থেকে সরাতে পারিনি।যে কাজে এসেছিলাম সেটা একদিনেই শেষ হয়ে গেলো।বিকেলে বাসায় যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে রুমে বসে আছি এমন সময় একটা মেয়ে আসলো।এসে আমার হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে দৌঁড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।আমিতো বোকার মত তাঁর চলে যাওয়া দেখছি।কাগজটা খুলে দেখলাম একটা ফোন নম্বর।মেয়েটা আমাকে ভালবাসে সেটা বুঝা গেছি আছি।এখানে আর বেশিক্ষণ থাকা যাবেনা।ফুপিদের সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম।বাসে ওঠে মেয়েটার নম্বরটা ছিঁড়ে ফেলে দিলাম।আমার মনে শুধু জান্নাতের বসবাস এখানে আর কেউ বসতে পারবেনা।বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধা সাতটা বাজলো।বাসায় এসে ফ্রেশ না হয়েই জান্নাতদের বাসায়,গেলাম।পরীকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে।জান্নাতদের বাসার মধ্যে গিয়ে প্রথমে দেখা আন্টির সাথে। :-কেমন আছেন আন্টি(আমি)

:-ভালো আছি।তুমি কেমন আছো(আন্টি)
:-এইতো ভালোই।পরী কোথায়?
পরী আর জান্নাত ছাঁদে।পরীতো সারাদিন শুধু তোমার কথা বলে।
:-জানি।আমি ছাঁদে গেলাম।
:-আচ্ছা যাও
ছাঁদে গিয়ে দেখি পরী আর জান্নাত বসে বসে গল্প করছে।আমি এসেছি এটা ওরা জানেনা।ওরা কী গল্প করছে সেটা পিছনে দাঁড়িয়ে শুনার চেষ্টা করলাম। পরী বলছে
:-জানো হুসাইন চাচ্চু খুব ভালো।
:-না ও একটুও ভালোনা।একটা বদের হাড্ডি।আমি ওকে এত ভালবাসি একটুও বোঝার চেষ্টা করেনা।(জান্নাত)
:-চাচ্চুও তোমাকে ভালবাসে।
:-তুই কী করে বুঝলি?
কারণ তুমি যখন চাচ্চুর সামনে থাকো তখন উনি লুকিয়ে লুকিয়ে তোমাকে দেখে।
:-পরী মামনি।
আমার কথা শুনে দুজনেই পিছন ফিরে তাঁকালো।পরী এক দৌঁড়ে এসে আমার কোলে ওঠলো।
তুমি কখন এলে(পরী)
এইতো কিছুক্ষণ হলো(আমি)

এইতো কিছুক্ষণ হলো(আমি)
:-জানো তোমাকে অনেক মিস করেছি।
:-আমিও।আচ্ছা তুমি নিচে যাও আমি আর তোমার আন্টি একটু পরে আসছি।
:-কী ব্যাপার।সামথিং সামথিং তাইনা
:-এসব কিছুই না।শুধু একটু কথা বলবো।
:-আমি ছোট নেই সব বুঝি কথাটা বলেই পরী আমার কোল থেকে নেমে দৌঁড়ে চলে গেলো।আমি জান্নাতের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।আমিই প্রথমে বললাম
:-কেমন আছো?(আমি)
:-ভালো
:-ভালো থাকলেই ভালো।
কিছুক্ষণ দুজনেই চুপচাপ।হঠাৎ করেই জান্নাত আমাকে জরিয়ে ধরলো।এমন পরিস্থির জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। জান্নাত আমাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলো।কাঁদতে কাঁদতে বললো :-তুমি একটা বিলাই,মহিষ,গরু,বানর। আমাকে শুধু কষ্ট দাও।আমি তোমাকে এত ভালবাসি কেনো তুমি বুঝতে চাওনা।জানো আমি প্রতিদিনই ভাবতাম তুমি আমাকে তোমার ভালবাসার কথা বলবে কিন্তু বলোনি।
আমি জান্নাতকে নিজের থেকে ছাঁড়িয়ে দিলাম।তারপর বললাম
:-এ হয়না।কোথায় তুমি আর কোথায় আমি।আমার পড়াশুনা এখনো শেষ হয়নি।তাছাড়া তোমরা অনেক বড়লোক তোমার পরিবার এ সম্পর্ক কখনো মেনে নিবেনা।(আমি)
আমার ফ্যামিলিকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার।
তবুও এটা সম্ভব না।
:-আজ যদি তুমি আমাকে ভাল না বাসো তাহলে আমি ছাঁদ থেকে লাফ দিবো।
কথাটা বলেই ছাঁদের কোনায় চলে গেলো।ও অনেক জেদী মেয়ে। জেদের বসে সবকিছু করতে পারে।আমি ওর কাছে গিয়ে হাত ধরে ওকে বুকে টেনে নিয়ে বললাম
:-আমাকে কখনো কষ্ট দিবে নাতো?(আমি)
:-না কখনোই না।
:-কিন্তু আমি দিবো।আমাকে ক্যাডবেরি না কিনে দিলে সবাইকে বলে দিবো(পরী)
আমি আর জান্নাত দুজন দুজনাকে ছেরে দিলাম জান্নাত এক দৌঁড়ে ছাঁদ থেকে নেমে গেলো।পরী আমার কাছে এসে বললো
আমি কিন্তু সব দেখে ফেলেছি।তাঁড়াতাঁড়ি আমায়,ক্যাডবেরি এনে দাও।(পরী)
:-আচ্ছা দিচ্ছি নিচে চলো।
এভাবে ভালোই চলছিলো দিনগুলি।জান্নাতের সাথে রিলেশন।পরীর সাথে আড্ডা সব মিলিয়ে ভালো চলছিলো দিনগুলি।

পরীর সাথে আড্ডা সব মিলিয়ে ভালোই চলছিলো দিনগুলি।জান্নাতের পরিবারের একজন সদস্য হয়ে ওঠলাম।এভাবে কেটে যায় ৫ টি মাস।হঠাৎ জান্নাতের আব্বুর বন্ধুর ছেলের সাথে জান্নাতের বিয়ে ঠিক হয়ে যায়।আমি জান্নাত তখন দিশেহারা হয়ে যায়। কী করবো কিছু বুঝে ওঠতে পারিছিলাম না।আমার আম্মুকে সবকিছু খুলে বলি।আম্মু আব্বুকে বুঝিয়ে জান্নাতের আব্বুর কাছে পাঠায়।জান্নাতের আব্বু আমার আব্বুকে অপমান করে।আমার আব্বুকে বলে আমি যেনো ওই বাড়িতে আর না যায়। জান্নাতের সাথে যেনো কোনরকম যোগাযোগ না করি।রাতে জান্নাতকে ফোন দিই। জান্নাতের ফোনটা ওর আব্বু ধরে। আমাকে অনেক কথা শুনায় জান্নাতের সাথে কথা না বলে থাকতে পারছিলাম না।বিশেষ করে পরীকে বেশি মিস করছিলাম।পরেরদিন সকালে জান্নাত গোপনে আমাকে অন্য একটা ফোন দিয়ে বলে পালিয়ে যাওয়ার জন্য।আমি কী করবো বুঝতে পারছিলাম না।একদিকে আমার বাবা মায়ের সম্মান অন্যদিকে জান্নাতের ভালবাসা।অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম জান্নাতকে ভুলে যাবো।বাবা মায়ের সম্মানের কথা ভেবে নিজের ভালবাসাকে বলি দিলাম।জান্নাতকে যতই ভুলে থাকার চেষ্টা করি ততই বেশি মনে পড়তে থাকে।এর তিন দিন পরের কথা।

রাতে রুমে বসে পরী আর জান্নােতর কথা ভাবছিলাম।তখন রাত প্রায় ১১ টা।একটা অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে।

:-তুমি কী হুসাইন(ওপাশ থেকে)
জ্বি কিন্তু আপনি কে?(আমি)
আমি জান্নাতের মামা।জান্নাত ব্লেড দিয়ে হাত কেটে আত্নহত্যা করতে চেয়েছিলো।পরে আমরা টের পেয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসি।তুমি তাঁড়াতাঁড়ি হাসপাতালে চলে আসো।
ওপাশ থেকে ফোনটা কেটে গেলো।জান্নাত হাসপাতালে এটা শুনতেই মাথাটা চক্কর দিলো।তাঁড়াতাঁড়ি রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।রাস্তায় একটা গাড়িও নেই।কিছুদুর হাঁটার পর একটা গাড়ি পেলাম তাও ডাবল ভাড়া চাইলো।আমার কিছু করার নেই ডাবল ভাড়া দিয়েই রওনা দিলাম।হাসপাতালে পৌঁছে দেখি জান্নাতের পরিবারের লোকজন সহ বাইরের লোকজনও আছে।পরী আমাকে দেখা মাএই আমার কাছে ছুটে আসলো।আমার কোলে ওঠে কাঁদতে কাঁদতে বললো
চাচ্চু তুমি এতদিন কোথায় ছিলে।জানো তোমাকে এতগুলা মিস করেছি।জানো চাচ্চু জান্নাত আন্টি প্রতিটা রাতেই তোমার জন্য কাঁদতো।(পরী)
পরীর কাঁন্না দেখে আমিও কেঁদে দিলাম।পরী আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদছে আর আমি ওকে ধরে।
জান্নাতেরর আব্বু আমাকে দেখে এগিয়ে আসলো।ওনার এভাবে আসতে দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম।পরীকে কোল থেকে নামিয়ে দিলাম।জান্নাতের আব্বু আমার কাছে এসে আমাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলেন।আমি উনার এমন ব্যবহারে খুব অবাক হয়ে গেলাম।
:-বাবা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও।আমি নিজের মেয়ের সুখের কথা না ভেবে সবসময় নিজের মান সম্মানের কথা ভেবেছি।আমি যদি তোমাদের সম্পর্কে মেনে নিতাম তাহলে জান্নাতের আজ এমন অবস্থা হতোনা(আংকেল )
:-না আংকেল আপনার কোন দোষ নেই।আপনিতো জান্নাতের ভালোর জন্যই এমন করতে চেয়েছিলেন।(আমি)
:-রোগির জ্ঞান ফিরেছে আপনারা সবাই ভিতরে যেতে পারেন।(ডাক্টর
সবাই ভিতরে গেলাম।পরী গিয়ে জান্নাতের মাথার কাছে বসলো।জান্নাত আমার দিকে একবার তাঁকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলে।মেয়েটা এই কয়দিকে একদম শুকিয়ে গেছে।সারারাত হাসপাতালেই কাঁটালাম।জান্নাত আমার সাথে একটাও কথা বলেনি।পরেরদিন সকালে জান্নাত বাসায় আনা হলো।জান্নাতের বাবা আমার বাবাকে ডেকে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করলেন।আমারো পড়াশুনা শেষ।একটা চাকরী হয়ে গেলেই আর বেকার থাকবোনা।জান্নাতের বাবা তাঁর এক বন্ধুর অফিসে আমার চাকরি ঠিক করে দিলেন।বেতনও ভালো ৩০ হাজার।জান্নাত এসবের কিছুই জানেনা।জান্নাত বাড়িতে আসার পর ওর সাথে আমি অনেকবার কথা বলতে গিয়েছি কিন্তু ও বলেনি।বিকেলে পরীকে দিয়ে জান্নাতকে ছাঁদে ডেকে পাঠালাম।
আমি আর জান্নাত ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছি।
:-আমার সাথে কথা বলছোনা কেনো?(আমি)
:-ইচ্ছা হয়না তাই বলিনা।(জান্নাত)
:-আমার অপরাধ কী?
:-তোমার কোন অপরাধ নেই।অপরাধ আমি করেছি।তোমাকে ভালবাসাটা আমার অপরাধ।
প্লিজ জান্নাত এসব বলোনা।আমি দুই পরিবারের মান সম্মানের কথা ভেবেই এমনটা করেছিলাম।
অন্যের মান সম্মানের জন্য নিজের ভালবাসাটাকে বলি দিলে।
:-এসব এখন বাদ দাও।সামনে ১৫ তারিখ আমাদের বিয়ে।
:-কী?আমাদের বিয়ে মানে?
:-মানে তোমার আর আমার বিয়ে।
:-আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবোনা।
:-কেনো পারবেনা?
তুমি একটা প্রতারক ঠকবাজ।আমি আজই বাবাকে বলছি এই বিয়ে ভেঙ্গে দিতে।
:-থামো।অনেক হয়েছে আর না।তুমি কী মনে করো নিজেকে?একাই আমাকে ভালবাসো আর আমি তোমাকে ভালবাসিনা।আমিও ভালবাসি।তোমার বাবা আমার বাবাকে অনেক অপমান করেছিলো।আমাকে ভয় দেখিয়ে বলেছিলো আমি যদি তোমাকে ভুলে না যায় তাহলে আমার পরিবারের সমস্যা করবে তাই সবকিছু মেনে নিয়েছিলাম।এই কয়দিন তুমি একাই কাঁদোনি আমিও প্রতিটা মুহুর্তে কেঁদেছি।ঠিক আছে তুমি যখন চাওনা বিয়ে হবেনা।ভেঙ্গে দাও

বাসায়,এসে রুমের দরজা বন্ধ করে কাঁদতে লাগলাম।যাকে এতটা ভালবাসি সেই এমন কথা বলতে পারলো।

রাতে আম্মু বললো জান্নাতদের বাড়িতে আমাদের সবার দাওয়াত আছে।আমি প্রথমে যেতে চাইনি পরে আব্বুর কথায় যেতে হলো।ভাবলাম সবার সামনেই বিয়েটা ভেঙ্গে দিবো।জান্নাত যখন চায়না তখন এ বিয়ে হবেনা।সবাই রেডি হয়ে জান্নাতদের বাসায় গেলাম।জান্নাতদের বাসায় গিয়ে যা শুনলাম তাতে আমার আকাশ থেকে পরার অবস্থা।আমার আর জান্নাতের নাকি এখনি বিয়ে।আর বিয়েটা জান্নাতের ইচ্ছাতেই হচ্ছে।পরীকে ডাক দিলাম
:-তোমার জান্নাত কোথায়?(আমি)
:-উনার রুমে(পরী)
:-আচ্ছা
আমি জান্নাতের রুমের দিকে গেলাম।রুমের মধ্যে গিয়ে দেখি মহারাণী জানালা দিয়ে বাইরে তাঁকিয়ে আছে।আমি ওর হাত ধরে আমার দিকে ঘুরালাম।ওর চোখে চোখ রেখে বললাম
:-আমাকে অনেক ভালবাসো?(আমি)
জান্নাত কিছু না বলে বাচ্চা মেয়ের মত কাঁদতে কাঁদতে আমার বুকে মাথা রাখলো।এই মেয়েটা আমাকে এতটা কেনো ভালবাসে আমি আজও তাঁর উওর খুজে পায়নি।

বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে জান্নাতের বাড়ির সবার থেকে বিদায়,নিয়ে জান্নাতকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসলাম।সাথে পরীও আসলো।ও জান্নাতকে ছাড়া ঘুমাতে পারেনা তাই জান্নাতের আম্মু পরীকে আমাদের সাথে দিয়ে দিয়েছে।বাসায় এসে ঘড়ির দিকে তাঁকিয়ে দেখি ১০ টা বাজে।আম্মু জান্নাতকে আমার রুমে দিয়ে আসলো।আমি রুমে ঢুকে দেখি পরী আর জান্নাত বসে আছে।আমি গিয়ে জান্নাতের পাশে বসে বললাম
:-পরী কী এখানে থাকবে?(আমি)
:-তো আমি কোথায় থাকবো?আমি আন্টিকে ছাড়া ঘুমাতে পারিনা।(পরী)
:-জান্নাত আজকে পরীকে আম্মুর কাছে দিয়ে আসো।
:-না আমি যাবোনা।।বাসর রাতটাও করতে দেবেনা। জান্নাতর দিকে তাঁকিয়ে দেখলাম ও মিটমিট করে হাঁসছে।পরী আর কিছু না বলে খাটের মাঝখানে শুয়ে পরলো।আমি মনে মনে ভাবছি আজ থেকে পরী আর পরীর আন্টির জ্বালানো শুরু হলো।নিজের কপাল এখন নিজেই চাপড়াতে ইচ্ছা করছে কেনো যে পরীকে নিয়ে আসতে গেলাম।ওর জন্য বাসর রাতটাও করা হলোনা।