–বাহ,আপনি তো দারুণ লেখেন!
–ধন্যবাদ।
–কি করেন আপনি?
–লেখি।
–কি লেখেন?
–কল্পনা।
–মানে?
–কল্পনায় যা আসে,তাই লেখি।
–আপনার কল্পনা গুলো অনেক সুন্দর।
–ধন্যবাদ।
–আপনার পিক নেই কেনো প্রোফাইলে?
–ইচ্ছে।
–এতো ভাব নেন কেনো?
–ভাবের টাংকি ফুল,তাই একটু খরচ করছি।
–থাকেন আপনি আপনার ভাব নিয়ে।বাই….
.
এইভাবেই নীল আর নীলার কথোপকথন শুরু
হয়।নীল মাঝারি মাপের একজন লেখক।তার
কল্পনা গুলো লেখার ভাষায় প্রকাশ করাই
তার কাজ।নীলার মতো অনেকেই এইভাবে
তাকে মেসেজ করে প্রশংসায় ভাসায়।হয়তো
তার লেখাগুলো সত্যিই ভালো লাগে।এই
নিয়ে নীলের কোনো উন্মাদনা নেই।
কোনো
মেয়ের প্রতিও কোনো আকর্ষণ নেই।কারণ
একটা মেয়ের প্রেমে মগ্ন থাকা অবস্থায়ই
বাঁশ টা খেতে হয়েছিলো।তারপর থেকেই সে
এমন।কোনো মেয়ে মেসেজ করলে
একপক্ষীয়
প্রশ্ন করতে হয় মেয়েটির।আর উত্তরগুলোরও
ঘাড়বাঁকা থাকে,তাই কেউ দ্বিতীয় বার আর
মেসেজ করেনা।কিন্তু নীলা নামের মেয়েটা
একটু ব্যতিক্রম।তাকে অনেকেই মেসেজ
করেও রিপ্লাই পায়না,কিন্তু নীলকে
প্রতিদিন নিজ থেকেই মেসেজ করে বকবক
করে।নীলের প্রতিটা লেখাই ভালো লাগে
নীলার,তাই হয়তো একপক্ষীয় প্রশ্নের বাঁকা
উত্তর পেয়েও সন্তুষ্ট নীলা।এইভাবেই
অতিক্রম হয় প্রায় তিনমাস।কিন্তু নীল
কখনো জানতেও চায়নি আইডিটার মালিক
সম্পর্কে।তবে একটুখানি মায়া তো জমেছেই।
কেনোনা,মানুষটা যে প্রায় ৯০দিন ধরেই
কেয়ার নিচ্ছে তার।ধীরে ধীরে নীল
বাঁকাউত্তর বাদ দিতে থাকে।নীল কিংবা
নীলা,কেউই জানেনা তাদের সম্পর্কের নাম
কি।তবে নীলের কাছে বন্ধুত্ব ছাড়া আর
কিছু নয়।নীলের ফ্রী হওয়া থেকে নীলার
দুর্বলতা বাড়তে থাকে।অথচ কেউ কাউকে
দেখেওনি এখনো,এমনকি বাসা কই সেটাও
জানেনা।শুধু জানে দুজনই ঢাকায় পড়াশুনা
করে।নীলা বহুবার জানতে চাইলেও উত্তর
মেলেনি।নীলা বহুবার দেখা করতে
বলেছিলো,কিন্তু এড়িয়ে গেছে নীল।
অবশেষে ঈদের পর দেখা করবে বলে
আশ্বস্ত
করলো নীলাকে।আজ দুজনই তাদের গ্রামের
বাসায় যাচ্ছে পরিবারের সাথে ঈদ উত্সব
করার জন্য।অতঃপর দুজনই বিরক্তিকর সময়
কাটাচ্ছে…….
–থ্যাংকস গড!অবশেষে লেখক সাহেবকে
অনলাইনে পাওয়া গেলো।
–আর বলোনা,পাশে একটা মেয়ে ফোন হাতে
বসে আছে।আমিও ফোন হাতে নিলে ভাববে
আমি তাকে লাইন মারছি।
–হইছে হইছে,আর সাধু সাজতে হবেনা।পাশের
মেয়েটা কি খুব সুন্দর?
–মনে হয়.ভালো করে দেখিনি।
–দেখতে হবেনা।আর শুনো,মেয়েটার সাথে
কথা বলারও দরকার নেই।
–কেনো?হতেই তো পারে মেয়েটা আমারই
এলাকার।
–এলাকা হোক আর যাই হোক,যেটা বলছি
সেটা শুনো।
–কেনো?তুমি কি আমার বিয়ে করা বৌ
নাকি যে তোমার সব কথা শুনতে হবে?
–যেটা ভেবে তুমি খুশি থাকো।
–ভালোভাবে কথা বলছি বলে অধিকার
দেখাচ্ছ?
–হুম,আর খারাপ ভাবে বললেও দেখাতাম।
–কেনো?কে হই আমি তোমার?
–আচ্ছা শুনো,পরে কথা বলছি।
–কেনো?
–সিট চেঞ্জ করা যায় কিনা দেখি।পাশে
একটা রামছাগল বসে আছে।
–ও তাই?লাইন মারতেছে নাকি?
–না,বাট সমানে ফোন টিপেই যাচ্ছে।ভাব
নিচ্ছে মেবি।
–তাহলে সিট চেঞ্জ করা কি দরকার?তুমিতো
লাইন মারতে পারো।দেখো রিলেশন করা
যায় কিনা?
–এইসব নিয়ে ফাইজলামি একদম ভাল্লাগেনা।
–ফাইজলামি করছিনাতো।সাজেস্ট করলাম।
–তুমি জানোনা আমি একজনকে খুব
ভালোবাসি?
–ওহ সরি।জানতাম না আগে।
–ইটস ওকে।
–ওয়েট ওয়েট.আমার পাশের সুন্দরী মেয়েটা
আমাকে কিছু বলবে মনে হচ্ছে।
–তুমি ওর পাশ থেকে উঠে গিয়ে অন্য কোনো
সিটে বস।
–ফাইজলামি পাইছো?অন্য সিট পাবো কই?
এটা কি লোকাল বাস?
–হুম,আমিও এইজন্যই সিট চেঞ্জ করতে
পারছিনা।এক কাজ করো,অন্য কাউকে
তোমার সিটে বসিয়ে তুমি তার সিটে বস।
–আরেহ,ভালোভাবে কথা বলছি বলে কি তুমি
মাথা কিনে নিয়েছো?
–আমার অধিকার আছে বলেই বলতেছি।
–কিসের অধিকার তোমার?
–ভালোবাসি তোমাকে।বুঝোনা তুমি?
–কিহ?আমাকে কখনো দেখোনি,জানোনা,চ
িনোনা।তাতেই ভালোবাসো?
–ভালোবাসতে চেনা-জানা লাগেনা,রূপ-
লাবণ্যও না।শুধু মনের অনুভূতি টা লাগে।
–রাখো তোমার অনুভূতি।তুমি আমাকে আর
মেসেজ দিবানা।(কথাটা বলেই নীলাকে
মেসেজ ব্লক )
.
অতঃপর বাসের মধ্যেই কাঁদতে শুরু করলো
নীলা।পাশের ছেলেটা “কি হইছে আপু”আস্ক
করতেই একটা ধমক দিলো নীলা।
নীলা ভাবছে এতদিনে জমানো ভালোবাসা
একনিমিষেই শেষ?কিভাবে পারলো এটা?
একটু মায়াও কি জন্মায়নি নীলের?
এইগুলা ভাবছে আর অশ্রু ঝরছে।
এদিকে নীলও কিছুটা বিমর্ষ,খুব খারাপ
লাগছে তার।কিছুটা মিসও করতেছে
নীলাকে।নীল ভাবছে হয়তো নীলা সত্যিই
তাকে ভালোবাসে।তার সাথে এমনটা করা
উচিত হয়নি।তাই মেসেজ ব্লক খুলে……..
–সরি নীলা,আসলে আমি ভেবেছি হয়তো সব
মেয়েই একরকম,সবাই ধোঁকাবাজ।তবে আমরা
সবাই জানি সত্যিকারের ভালোবাসা আছে
বলেই মানুষ বাঁচে।তুমি আমাকে কেমন
ভালবাসো জানিনা,বাট আমি তোমাকে খুব
মিস করেছি এতক্ষণ।
–আমি সত্যিই তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
তুমি ফিরিয়ে দিয়েছো বলে অনেক
কেঁদেছি।
–তাই?একটা পিক দিবে?
–সুন্দর না হলে ভালোবাসবেনা,তাই নাহ?
–ধুর,আমি আমার পাগলিটা কে দেখতে
চাইছি জাস্ট.
–পেয়েছো?আমি দেখতে খুব পচা,তাই নাহ?
–এতো সুন্দর মানুষ হয়?সত্যিই তুমি অনেক
সুন্দর।
–পাশের মেয়েটার চেয়েও?
–পাশের মেয়েটা কে দেখিনি সেভাবে।তবে
তোমার কাছে তো হার মানতেই হবে৷
–তোমার একটা পিক দিবে?
–দিবো,তবে এখন বাই।বাস থেকে নামতে
হবে৷
–বাই।
.
বাস থেকে নামলো দুজনই।অতঃপর……
–আরে আজব,দেখে নামতে পারেন না?
–সরি
–তুমি?
–আমি মানে?আপনি আমাকে চিনেন?
–নাহ,তবে একটু আগে একটা পিক-এ দেখেছি।
–মানে?
–আপনি কি নীলা?নাকি নীলের পাগলি?
–তুমি……???
–নীল।নীলার সত্যিকারের ভালোবাসা।
–চুপ।কিসের ভালোবাসা?তুমিতো আমায়
ভালবাসোনা।
–জানতাম নাতো।
–কী?
–ভালোবাসি তোমায়।
.,– এভাবে দুজন দুজনকে জরিয়ে ধরে
অতঃপর নীলা তার নীলকে জড়িয়ে ধরে
কান্নার সুরে বললো…..
–আমি সত্যিই তোমাকে খুব ভালোবাসি।
তোমাকে এইভাবে জড়িয়ে ধরে কান্না
করার পর চোখের অশ্রু মুছে দেওয়ার জন্য
হলেও তোমাকে আমার চাই……..!