বর

মেহগণি গাছে দড়ি নিয়ে বসে আছি আত্মহত্যা করার জন্য। রুমি’র অন্যজনের সাথে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। তাকে ছাড়া আমার এই জীবনের মূল্য কী? রাখব না আমি এই জীবন। রুমি যেহেতু আমার ভালোবাসা বুঝলো না, তাহলে আর রাখব না এই জীবন। মরে গেলে অন্তত বুঝবে আমি তাকে কতো ভালোবাসতাম।
দড়ির এক মাথা মেহগণি গাছের ডালে বেঁধে বাকি দড়ি গোল করে লুঙ্গির নিচের মাথা ভাঁজ করে হাঁটুর উপরে গিট্টু দিলাম। বাকি দড়ি লুঙ্গির ভাঁজে রেখে বেঁধে রাখা দড়ির মাথায় বসে পড়লাম। যেন কেউ বুজতে না পারে আমি দড়িতে ফাঁস নিয়ে মরব। রুমির জন্য মরব আমি।
একটু আগে এলাকার ছোট ভাই জুয়েলকে পাঠিয়েছি রুমিদের বাড়িতে। তাকে বলেছি বর-যাত্রী আসার সময় হয়েছে। তাদের খাওয়া-দাওয়ার পর রুমি যখন বউ সেজে কবুল বলবে তখন যেন দৌঁড়ে এসে আমাকে বলে যায়। তখনি আমি দড়ির অন্য মাথা গলায় পেঁচিয়ে নিচে ঝুলে যাবো। জুয়েল অবশ্য জানতে চেয়েছে, ভাই রুমি ভাবি কবুল বলার পর তুমি গাছ থেকে লাফ দিবা? আমি ধমক দিয়ে তখন বলেছি এই ছোট গাছ থেকে লাফ দিলে কেউ মরবে নাকি হাত পা ভেঙ্গে ঘরে বসে থাকতে হবে? আমি গাছে বসেই মনের দুঃখে গান ধরব, “লাল শাড়ি পরিয়া কন্যা রক্ত আলতা পায়, আমার চোখের জল মিশাইলা নিলা না বিদায়।”
জুয়েল এখনো আসছে না, নিশ্চয় বর-যাত্রী খেতে বসেছে।

রুমির বিয়ে ঠিক হয়েছে উজানচরে। বিয়ে ঠিক হবার পরও রুমিকে বলেছি, “চল আমরা পালিয়ে যাই। নরসিংদী শহরে তোকে নিয়ে চলে গেলে কেউ আমাদের খুঁজে পাবে না। দরকার হয় আমি রিক্সা চালিয়ে তোকে খাওয়াবো। আল্লাহ হাত পা এখনো ভালো রেখেছে। এই শরীরে যদি কাজ কর্ম কইরা তোকে না খাওয়াইতে পারি দরকার হয় ট্রেণের নিচে ঝাঁপ দিব। তবুও তুই অন্য কাউকে বিয়ে করিস না। তোকে ছাড়া বাঁচব না রুমি।”
কিন্তু রুমি আমারে উল্টা বুঝিয়ে বলল, “আমার বাবা গ্রামের মেম্বার। আমি যদি বাড়ি ছেড়ে পালাই, আমার বাবার মান ইজ্জত সব শেষ। মানুষ বলবে মেম্বারের মেয়ে শ্রাবণ’কে নিয়া পালাইছে। সামনের বছর আমার বাবা আর মেম্বারও হতে পারবে না।”
নিজের বাবার মেম্বার হওয়ার চিন্তাটাই করলো, আমার ভালোবাসা রুমি বুঝল না। তবে আমাকে রুমি বলেছিল, তুমি সাহস করে আমার বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াও। বলো আমারে তুমি বিয়ে করতে চাও। বাবার মন গলতেও পারে।
কিন্তু আমি যখন চাচারে নিয়া মেম্বারের কাছে গিয়ে বললাম, রুমিকে আমি বিয়ে করতে চাই। তখন মেম্বারের মন গলেনি। গঞ্জের হিসাবের দোকান থেকে বেরিয়ে এসে মেম্বার চাচাকে বলল, মোতালেব তোমার ভাতিজা কী বলে এসব? দিনের বেলা মদ গিলছে নাকি? আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছি উজানচরের তালুকদার বাড়িতে। আর তোমার ভাতিজা আজ এসব কী বলে? তারে নিয়া তাড়াতাড়ি আমার চোখের সামনে থেকে যাও। আমার মাথা গরম হলে কিন্তু খারাপ কিছু হয়ে যাবে।
চাচা আমাকে হাত ধরে টেনে বাড়ি নিয়ে আসলেন। তার পরদিনও রুমিকে বলছি, রুমি চল আমরা পালিয়ে যাই। রুমি রাজী হয়নি। এই জীবন আর রেখে কী করব?

গাছের ডাল একটু উঁচুতে হওয়ায় দেখতে পাচ্ছি জুয়েল দৌড়ে এদিকে আসছে। আমার সময় আর বেশি নেই। এখনি আমাকে ঝুলে পড়তে হবে। রুমির মুখটা বারবার চোখে ভেসে বেড়াচ্ছে। আমাকে ভালো বেসে আজ বউ সাজলি অন্য কারোর জন্য। আরেকজনকে কবুল বলে দিলি। আমি চলে যাচ্ছি, মরার পর বুঝবি তোকে কত ভালোবাসতাম।
-শ্রাবণ ভাই, বিয়ে হবে না। জামাইর নৌকা উজানচর থেকে আসার সময় ডুবে গেছে।
জুয়েলের কথা বুঝতে আমার সময় লাগলো। দড়ি গাছের ডালে রেখেই নিচে এলাম। জানতে চাইলাম কী ঘটেছে ব্যাপারটা? জুয়েল বলল, বরযাত্রী রওনা দিয়েছিল। মাঝ নদীতে আসার পর ঢেউয়ের সাথে নৌকা কাত হয়ে ডুবে গেছে। মরা লাশ তোলা শুরু হইছে। বিয়ে বাড়িতে কান্নাকাটি শুরু হইছে। রুমি ভাবির বিয়া বন্ধ।

জুয়েল রুমিকে ভাবি বলেই ডাকে। শুধু জুয়েল না, এলাকার আরো দুই চারটা ছোট ভাই রুমিকে ভাবি বলে। এলাকার অনেকেই তো জানতো আমার আর রুমির প্রেমের কথা। মেম্বারের কানে মনে হয় খবর গিয়েছিল। তাই তড়িঘড়ি করে বিয়ে ঠিক করেছিল রুমির। এখন জামাই নদীতে পড়ে মরে। তাড়াতাড়ি যাই, গিয়ে দেখি কী হয় ব্যাপারটা।

মেম্বারের বাড়ি তিন দিন আগে থেকেই সাজানো ছিল। কলাগাছের রঙ্গিন কাগজ কেটে জুড়ে দিয়েছিল। দুই পাশের কলাগাছের পাতাকে উপর দিয়ে একত্রিত করে বিয়ের গেইট বানানো হয়েছে। বাড়ির চারিদিকে দড়ি দিয়ে ঘেরাও দেয়া হয়েছে। সেই দড়িতে লাল, নীল, সবুজ আর বেগুণী রঙ্গের ছোট ছোট কাগজ কেটে আটার আঠা দিয়ে লাগানো হয়েছে। এখন আর কেউ খাওয়া-দাওয়া করছে না। এমন দুর্ঘটনার কথা শুনলে কেউ খাবে কীভাবে? আর খাবার দিবেই বা কে?
মেম্বার কাঠের চেয়ারে মাথা ঝুঁকে কপালে হাত দিয়ে বসে আছে। মেম্বারের বড় বউ চেয়ারের পেছনে দাঁড়িয়ে তালপাতার পাখা দিয়ে বাতাস করছে। মুরব্বি গোছের দুই লোক মেম্বারকে শান্তনা দিয়ে বলছে, “মেম্বারসাব, যা হবার হয়েছে। তাতে মেয়ের কোনো দোষ নাই। আর মেয়ে কোনো ছোট ঘরের না যে অপয়া অলক্ষ্মী বলবে কেউ। মেম্বারের মেয়ের জন্য বরের অভাব হবে না। আপনি চিন্তা করবেন না। সন্ধ্যার আগেই ভালো একটা ছেলে খুঁজে বের করে ফেলব।
মেম্বার মাথা তুলে বললেন, নৌকার সব মানুষ মারা গেছে?
মুরব্বি বললো, মাঝ নদীতে ডুবছে। সেখান থেকে সাতড়িতে পাড়ে আসার সম্ভাবনা নাই। আর বেলা পড়ে যাচ্ছে। সত্যি সত্যি না ডুবলে বর পক্ষ এতক্ষনে চলে আসতো।

আমি গিয়ে দেখি চাচাও সেখানে। পেছনে এক হাত দিয়ে আরেক হাত চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে চাচা ফিসফিস করে বললেন, ‘এখান থেকে যা এখন। মেম্বারের মাথা এমনি অনেক গরম।’ আমি একটু পিছিয়ে এসে আবারো দাঁড়িয়ে রইলাম। রুমিকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। সে কি বউ সেজেছিল? সাজলে তাকে কেমন লাগে? রুমি কান্না করছে এখন? নাকি বিয়ে না হওয়াতে খুশি হয়েছে? এতকিছু একসঙ্গে ভাবার কারণে কোনোটার উত্তরই অনুমান করতে পারছি না। এর মধ্যে মেম্বার গলা উঁচিয়ে ডেকে বলল, এই মোতালেব তোমার ভাতিজারে নিয়া এদিকে আসো।
আমি কিছুটা অবাক হলাম। সাথে কিছুটা ভয়। মেম্বার বাড়িতে সবসময় চার পাঁচটা গুন্ডা থাকে। দুইবারের ফেল করা মেম্বার এবার পাস করেছে। তার ধারণা আগের মেম্বার তার ক্ষতি করতে পারে। তাই বাড়িতে গুন্ডা রাখে চার পাঁচটা। মেম্বার বাড়ির ভালো খাওয়া-দাওয়া পেয়ে একেকটার শরীরে চার পাঁচ কেজি করে গোশত বৃদ্ধি পেয়েছে।আমি ভয়ে ভয়ে মেম্বারের দিকে এগিয়ে গেলাম। মেম্বারের বাড়ির বিশাল উঠানে মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
মেম্বার বলল, দাঁড়া এখানে। কোথাও যাবি না, আমি আমার মেয়ের সাথে কথা বলে আসি।
আমার ভয় কিছুটা কমে গেল। রুমির সাথে কথা বলতে যাওয়া মানে ভালো কিছু হবে। কিন্তু আবার ভয়টা বেড়ে গেল। রুমি আমার সাথে পালিয়ে যেতে রাজী হয়নি। এখন মেম্বার যদি আমার কাছে বিয়ে দিতে রাজী হয় রুমিকে, কিন্তু রুমি যদি না করে বসে থাকে। সেটা ভাবতেই ভয় বেড়ে গেল। ঐ দিকে বরযাত্রীর কথা মনে পড়ছে। তালুকদার বাড়ির ছেলে কতো আশা নিয়ে বিয়ে করতে রওনা দিয়েছিল। কিন্তু তাদের ভাগ্যে এত বড় বিপদ ছিল। আর এদিকে সবাই রুমিকে নিয়ে ভাবছে। শুনেছি শহরে এসব নিয়ম কানুন নাই। অথচ এই চরাঞ্চলের মানুষের ভিতর কানাকানি চলে। মেয়েটার বিয়ের আগে জামাই মরলো। এই মেয়েকে কে বিয়ে করবে? যার সাথে বিয়ে হবে তার পুরো বংশের ক্ষতি হবে। এই সেই আরো কত কথা হয় এসব নিয়ে। ঐ দিকে একটা নৌকা ডুবে কত মানুষ মরলো সে ভাবনা নেই। সবার ভাবনা রুমিকে বিয়ে করবে কে?
আমি করব রুমিকে বিয়ে। ক্ষতি হলে আমার হোক। রুমির জন্য ফাঁস নিতে তৈরী হয়েছিলাম। সেই রুমিকে বিয়ে করতে কেন রাজী হবো না?

মেম্বার ঘর থেকে বেরিয়ে এসে চাচাকে পাশের চেয়ারে বসতে বললেন। আমি আরেকটু এগিয়ে গেলাম যেন তাদের কথা শুনতে পারি। মেম্বার বলছে, “মোতালেব। শ্রাবণের বাবা তো বিদেশে, নয়তো আতাবরের সাথেই কথা বলতাম। এখন আতাবরের অবর্তমানে তুমিই শ্রাবণের গার্জিয়ান। দেখলেই তো চোখের সামনে কত বড় অঘটন ঘটে গেল। আমার মেয়ে কিন্তু ফেলনা না। জামাই পাওয়া যাবে না, এমনটা ভাবিও না। কিন্তু শ্রাবণ পোলাটা এত করে চায় আমার মেয়েটাকে। তাছাড়া এখন মেয়েটার সাথে কথা বলে জানলাম তারা আগেই পছন্দ করতো দুইজনেই। তাই আর দেরি করা ঠিক হবে না। শ্রাবণরে কও রেডি হইতে। বিয়ে এক বসাতেই হয়ে যাক।”
আমি খুশিতে আত্মহারা।উঠান জুড়ে মানুষ না থাকলে আমি কিছুক্ষন নেচে উঠতাম। চাচা আমাকে বললেন, শ্রাবণ আর বাড়ি যেতে হবে না। হাত মুখ ধুয়ে বসে পড়।
আমি বললাম, চাচা আমি গোসল করবো।
চাচা রাগ দেখানোর আগেই বললাম, জীবনে বিয়ে তো একবারই। একটু গোসল করে পাক পবিত্র হয়ে নেই।

নদীর উপরের দৈত্যাকারের বট গাছ থেকে এখন লাফিয়ে গোসল করতে পারলে ভালো লাগতো। কিন্তু এখন আমি গোসল করছি মেম্বারের বাড়ির নলকূপে। কলাপাতা দায়ে চারিদিক ঘেরা। পুরুষ মানুষ গোসল করে নদীতে। আর চারিদিকে এমন কলাপাতা দিয়ে বেড়া দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় বাড়ির নলকূপগুলোর চারপাশে। যেন বাড়ির মেয়েছেলেরা গোসল করতে পারে।
কত বছর পর বালতি ভরে গোসল দিচ্ছি মনে নেই। খুব সম্ভবত সুন্নতে খাৎনার পর বেশ কিছুদিন নদীতে যাইনি। তখন লুঙ্গি উঁচু করে হাঁটতে হতো। সেই সময়টাতে বাড়ির নলকূপে গোসল করতাম।
জুয়েল এসে হঠাৎ বলল, “শ্রাবণ ভাই বর-যাত্রী চলে এসেছে। সবার শরীর ভিজা। মনে হয় নদীর পানিতে চুবানি খেয়ে আসছে।”
আমার এখন চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। আসবিই যখন আরো আগে কেন নয়? মেহগণি গাছে গলায় দড়ি লাগিয়ে ঝুলে পড়তাম। এখন আমার সাথে রুমির বিয়ে হবার কথা। আর এখন কি-না বর এসে হাজির। আমাকে আত্মহত্যা থেকে বাঁচাতে তখন আসেনি? বাঁচাতে তো আমাকে এখনও পারবে না। এখনি গিয়ে ঝুলে পড়ব আমি।

গোসলখানা থেকে বেরিয়ে দেখি বরপক্ষের আট দশজণ মানুষ। সবাই ভেজা কাপড়ে। মেম্বার তড়িঘড়ি করে শুকনা কাপড় দেয়ার চেষ্টা করছে। তাদের জন্য খাবার আয়োজন করা হচ্ছে। বলাবলি করছে শুধু দুইটা বাচ্চা মানারগেছে। বাকি সবাই বাঁচতে পেরেছে। মাঝ নদীতে নৌকা ট্রলার থাকে। সবাই নাকি সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে। যাক তবুও অনেক বড় বিপদ ছিল। কিন্তু আট দশজন এলো বাকিরা কোথায়? নাকি নদী থেকে উঠে বাড়ি ফিরে গেছে কে জানে? আমার আর এখানে দাঁড়ানো ঠিক হবে না। এই দৃশ্য যতো দেখব ততো আমার ভিতরটা পুঁড়বে। কেউ দেখার আগেই আমাকে যেতে হবে এখান থেকে। হাত পাঁচেক হাঁটার পরই চাচা জানতে চাইলো, শ্রাবণ কই যাস? আমি পেছন ফিরে শুধু বললাম, আছি এখানেই। মেম্বারের চোখে চোখ পড়লো আমার। তিনি ইশারায় বলছেন, বারান্দায় গিয়ে বসতে। কিন্তু আমি পারব না। এখানে থেকে আর কষ্ট পেতে পারব না। মেহগণি গাছ আমাকে ডাকছে।

বাড়িঘর ফসলি জমি থেকে অনেকটা উঁচুতে। যেন বন্যার পানি না উঠে। আমি নিচের দিকে নেমে যাচ্ছি। দুইটা বড় মাঠ পেরুলেই মেহগণি গাছের দেখা পাবো।
হঠাৎ পেছন থেকে কারো ডাকে ফিরে তাকিয়ে দেখি রুমি। হলুদ ওড়না মাথায়, সেলোয়ার কামিজ পরনে। দৌড়ে আসছে আমার দিকে। তার গায়ে এখন বিয়ের শাড়ি থাকার কথা। তাছাড়া বিয়ে রেখে সে এলো কীভাবে? কেউ দেখেনি?
-শ্রাবণ কই যাও তুমি?
-সেটা তোর জানতে হবে কেন?
-কারণ আমাকেও যে সঙ্গে নিতে হবে। চলো পালিয়ে যাই।
-মজা করতে আসছিস? যেদিন বলছি সেদিন তো রাজী হসনি তোর বাবার মান ইজ্জত মাটিতে মিশে যাবে।
-আমাকে যে এখন বাবা পাঠাইছে সেটা তুমি জানো?
আমি এবার সত্যিই অবাক হলাম। আসার পথে মেম্বার আমাকে ইশারায় বারান্দায় বসতে বলেছিল। আমি এসে পড়েছি। তাহলে মেম্বার সত্যিকার অর্থে কী চায়?
-বাবা আমার ঘরে গিয়ে দেখে আমার চোখে পানি। আমার কাছে গিয়ে বলল, তোকে আর কাঁদতে হবে না। শ্রাবণটা এই মাত্র বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে। যা ওকে ধরে নিয়ে আয়। সে মনে করেছে বর-যাত্রী ফিরে এসেছে, তাই শ্রাবণের সাথে তোর বিয়ে দেব না। বিয়ে তোর শ্রাবণের সাথেই হবে। কিন্তু বরপক্ষের একটা দুর্ঘটনা ঘটলো। তাদের ভেজা কাপড়ে না খাইয়ে ফেরত দেই কীভাবে? উজানচরে গিয়ে যেন এই মেম্বারের বদনাম করতে না পারে।

আমার মনের ভেতর সুখের এক পশলা বৃষ্টি হলো। সেই সুখে রুমি’কেও ভিজাতে ইচ্ছে হলো। বললাম, রুমি চল নদীর পাড়ে গিয়ে বসি।
-বাবা খুঁজবে না? তোমাকে নিতে এসে যদি আমিও উধাও হই তাহলে সবাই ভাববে তোমাকে নিয়ে পালিয়েছি। আবার সেই কলঙ্ক রটে যাবে।
-তাহলে বাড়িতেই চল। বিয়ে করে তোকে কলঙ্কমুক্ত করি।
রুমি একগাল হেসে আমার হাত ধরলো। আর বলল, দেখো কাউকে আসতে দেখলে কিন্তু হাত ছেড়ে দিবে।
আমি বললাম, হাত ধরেছোস তুই। আমি ছাড়ব কীভাবে? তোর ইচ্ছে হলে ছেড়ে দিস নয়তো ধরে রাখিস।