লেখক:-মো.নীল চৌধুরী

পর্ব:-১-২

-দাড়াও তোমার বাবার কাছে বিচার দিচ্ছি (জয়)
-বিচার তো আমি দিবো(রিহা)
-কিহহহ
-হ্যা, বলে রিহা জয়ের গালে ঠোটের স্পর্শ দিয়ে দেয়।
-আরে এসব কি শুরু করছো
-করবোই তো
-তোমার বাবার কাছে কিন্তু সত্যি সত্যি বলে দিবো
-আমি আমার ভাইয়াকে যা বলি সব বিশ্বাস করে
-তো
-আপনি কি বোকা নাকি? আমি যদি ভাইয়া কে বলি যে আপনি আমার সাথে উল্টা পাল্টা করছেন তাহলে কি হবে বুঝতে পারছেন তো?
-আমি তো উল্টা পাল্টা করি নাই
-হুম কিন্তু বলে দিলে আপনার চাকরি টা চলে যেতে পারে আর চাকরি না গেলেও ট্রান্সফার করে বান্দরবনের কোনো কলেজ পাঠানোর ব্যবস্থা করবো।
-আমার কাছ থেকে কি চাও সেটা বলো
-আমি আপনার সাথে যা মন চাই করবো আপনি কোনো কিছু বলতে পারবেন না
-আমি একটা ছেলে, তুমি আমার সাথে যা মন চাই তা কেনো করবা?
-ভালোবাসি বলে
-ফাইজলামি করতাছো?
-ফাইজলামি করবো কেনো?
-আমি এখন গেলাম বলে জয় রুম থেকে বের হয়ে যায়
-এই স্যার কোথায় যাচ্ছেন? আচ্ছা যান কালকে ক্লাসে দেখা হবে বলে মুচকি হাসি দেয়।
পরেরদিন জয় ক্লাস করাচ্ছে তখন রিহার চোখে চোখ পড়ার সাথে সাথে চোখ টিপ মারে, তখন জয় গাবরে যায়।জয় ভাবে এখানে কিছু বলা যাবে না তাহলে আমার মান সম্মান যাবে সাথে চাকরি টা ও,আর এখন চাকরি পাওয়া মুখের কথা নয়। তাই কিছু মুখ বুজে সহ্য করে নিতে হবে। রিহা আবার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে সবার আড়ালে ফ্লাইয়িং কিছ করে। জয় তখন রেগে গিয়ে এই মেয়ে দাড়াও
-আমি?
-হ্যা
-বলো এতক্ষণ কি পড়াইছি?
-রিহা তখন চুপ হয়ে আছে
-বলো কি পড়াইছি
-মনে নাই
-মনে থাকবে কেনো? মন তো অন্য জায়গায় দিয়ে রাখো, বেঞ্চে উঠে কানে ধরে দাড়াও।তখন সবাই জয়ের দিকে আর রিহার দিকে অবাক হয়ে তাকাই কেননা এখন পর্যন্ত কোনো স্যার কোনো ছাত্র/ছাত্রীকে এভাবে শাস্তি দেয় নাই।রিহার তখন নাক মুখ লাল হয়ে যায়।
-বলছিনা দাড়াতে ধমক দিয়ে
-তখন রিহা আস্তে আস্তে লো বেঞ্চে উঠে দাড়ায়
-কানে ধরো
-তখন রিহা কান্না করে দেয়
-কানে ধরো বলছি
-রিহা কানে ধরে শব্দ করে ঠোট ভেঙ্গিয়ে কান্না করে দেয়।
এভাবে কতক্ষণ রাখার পরে বসায়। ক্লাস শেষ হওয়ার পর রিহার বান্ধবীরা ছাড়া সবাই ক্লাস রুম ত্যাগ করে।
-রিহা মন খারাপ করিস না(স্নিগ্ধা)
-দোস্ত জয় স্যার একটু তুই ও জানিস, আর জেনেও ক্লাসে মনোযোগ দিস নাই,গতকাল ও তো আরেকজন কে কানে ধরিয়ে দাড়া করিয়ে রাখছে(নিলীমা)
-আয় বাসায় চল(স্নিগ্ধা)
-আমার ভালো লাগছে না (রিহা)
-আরে চল তো বলে রিহাকে জোর করে ক্লাস রুম থেকে বাহির করে নিয়ে যায়।
বাসায় যাওয়ার পরে…
রিহা ভাবতাছে যে এখন থেকে আমি ওরে মজা বুঝাবো,ও তো এসব পছন্দ করে না, দেখবো এখন থেকে কতটুকু সহ্য করতে পারে।
রাতে রিহাদের বাসায় আসতে একটু দেরি হলো
-এত দেরি করে আসলেন কেনো?(রিহা)
-জ্যাম ছিলো
-জ্যাম নাকি ফাকি দেওয়ার চিন্তা ভাবনা
-জ্যাম ছিলো বলছিনা
-কিভাবে বিশ্বাস করবো?
-এটা তুমি জানো
-হুম এর পর থেকে যেনো দেরি না হয়, বলে রিহা রিহার রুমে নিয়ে যায়।
পড়ানোর সময়…
-কাজগুলো করছো(জয়)
-হ্যা
-দেখি
-এই যে এখানে সব করছি
-খাতা দেখার পর গুড।তখন জয় নতুন অধ্যায় নিয়ে পড়ানো শুরু করছে আর রিহা টেবিলের নিচ দিয়ে দুই পা দিয়ে জয়ের পায়ের উপর পা ফেলে রাখছে
-পা সরাও
-আমার শীত লাগে
-তাহলে আমি কি করবো?
-ফ্লোরের চেয়ে আপনার পা টা বেশ গড়ম
-কিহহ
-হ্যা বলে আবার চোখ টিপ মারে
-এই ভালো হচ্ছে না কিন্তু
-কি ভালো হচ্ছে না
-আজ ক্লাসের কথা কি এত তারাতারি ভুলে গেছো?
-হুমম আমি অতীত বেশি মনে রাখি না
-ওহহ
-হুমম
জয় তখন পা গুলো সরিয়ে নেওয়ার সাথে সাথে রিহা বসা থেকে হালকা উঠে জয়ের ঠোটে চুমু দিয়ে দেয়।
-এই মেয়ে এসব কি হচ্ছে?
-যা হওয়ার তো হচ্ছেই
-একটা মেয়ে এত বেহাইয়া হয় কিভাবে?
-এমনি তে
-জানা ছিলো না
-এখন জেনে নিন
-এই অংক গুলো কালকে সমাধান করে রাখবে
-এত সকাল সকাল কেনো চলে যাচ্ছেন
-আজ একটু কাজ আছে
-কি কাজ
-রেস্টুরেন্টে কেউ একজনের সাথে দেখা করবো
-সেটা কে?
-তোমাকে বলতে হবে না
-বলতে হবে
-না বলবো না
-ছেলে নাকি মেয়ে?
-ছেলে ও হতে পারে মেয়েও হতে পারে
-মেয়ে হলে………………চলবে

পর্ব-৩

-ছেলে নাকি মেয়ে?(রিহা)
-ছেলে ও হতে পারে মেয়ে ও হতে পারে।(জয়)
-মেয়ে হলে খুব খারাপ হবে
-কি হবে?
-হাত পা ভেঙ্গে রুমে বসিয়ে রাখবো
-হি হি হি
-মুখ বন্ধ করেন, দুর্গন্ধ আসছে
-কিহহহ
-হ্যা আর শুনোন যদি মেয়ে হয় না? তাহলে সত্যি সত্যি খারাপ হবে। তখন জয় রেগে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
জয়ের মুখে কোনো দুর্গন্ধ নাই,কিন্তু এমন হাসি দেখলে রিহাকে বেশি আকর্ষন করতে পারে তাই রিহা মুখ বন্ধ করতে বলে।
আর জয় রেস্টোরেন্টে দেখা করবে তার স্কুল জীবনের বেস্ট ফ্রেন্ড শুভর সাথে।জয় রুম থেকে বের হয়ে ভাবতে থাকে যে একটা মেয়ে কেমন পাগল হলে এমন করতে পারে?
ওর ব্যাবহার গুলো জয়ের কাছে পুরুষের মতো মনে হয়ছে কেননা যেভাবে কথায় কথায় কিছ করে তাতে জয় বাধা না দিলে জয়ের ও প্রবলেম হতে পারে।
রিহা রাতে খেয়ে শুয়ে শুয়ে টেডিবিয়ারকে জড়িয়ে ধরে ভাবছে যে যদি জয় আমার পাশে থাকতো তাহলে কতোই না ভালো হতো,জয় থাকলে এখন অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরতাম আর তার উপরে উঠে ঠোটে ঠোট মিলিয়ে রাখতাম। কিছ করতে করতে তাকে মাতাল করে দিতাম এসব ভাবতে ভাবতে একসময় রিহার শরীর শিহরিত হয়ে উঠে
তখন রিহা টেডিবিয়ার টাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমের রাজ্যে ভ্রমন করে।জয় অনেকদিন পরে পুরোনো বন্ধুকে পেয়ে অনেক খুশি
-দোস্ত এখন কি প্রেম করবি নাকি সারাজীবন সিংগেল লাইফ কাটাবি?(শুভ)
-জানিনা,ভাবছিলাম পড়ালেখার পরে প্রেম করে একটা লক্ষি মেয়ে ঘরে উঠাবো কিন্তু তার আর পারবো কই?
-কেন দোস্ত?
-আরে একটা ছাত্রী আমাকে খুব প্যারা দিচ্ছে
-কেমন প্যারা?
-এখন পর্যন্ত ৮-১০ টা কিছ করে ফেলছে
-তাহলে তো হয়ে গেছে
-কি?
-ভাবি
-মানে?
-মানে আমরা ভাবি পেয়ে গেলাম
-ঐ শালা চুপ থাক
-ওকে মেয়ে টা কিন্তু খারাপ হবে না
-আবার?
-আচ্ছা আচ্ছা স্যরি।
শুভর সাথে আজকে অনেকদিন পরে দেখা হলো।অনেক ভালো লাগলো আজকে।জয় রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমিয়ে পরে।
সকাল দশটায় কলেজ রাস্তায় রিহার পাশে হয় হাটতেছে।
-স্যার কেমন আছেন?
-হুমম ভালো এটা বলার পর রিহা জয়কে চোখ টিপ দিয়ে হাসি দিয়ে ক্লাসরুমে ডুকে যায়।
জয় ক্লাসে প্রবেশ করার পর সবার বাড়ির কাজ দেখে। যখন রিহার কাছে যায় তখন রিহা দাড়িয়ে খাতাটা জয়ের দিকে এগিয়ে দেয় আর আস্তে আস্তে বলে বাসায় যেয়ে নাও তারপর মজা দেখাবো।জয়ের রাগ হয়ছে খুব কিন্তু পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে কিছু বলতে পারতাছে না।
জয় ক্লাস শেষ করে ক্লাস থেকে বের হয়ে যায়।রিহা কলেজ শেষ করার পর বাসায় যায়।খাওয়া-দাওয়া করার পর….
-মা পড়ালেখা এখন কেমন চলছে?(বাবা)
-হ্যা বাবা ভালো
-হুম মন দিয়ে পড়ো, আর কোনো কিছু প্রয়োজন হলে আমার কাছে বলবা।
-ওকে
জয় আসার পর
-কালকে তো খুব মজা করলেন
-মানে(জয়)
-বুঝেননা?
-কি?
-কালকে কোন মেয়ের সাথে দেখা করছেন?
-ছেলের সাথে দেখা করছি
-মিথ্যা
-মিথ্যা হলে মিথ্যা এখন অংকের সমাধান দেখাও
-পারবো না
-তোমার আব্বুর কাছে বিচার দিবো?
-আমিও দিবো
-আমি কি করলাম?
-কিছু করো নাই কিন্তু আবার অনেক কিছু করছো
-এসব কথার মানে কি?
-মানে অনেক কিছু তোমার মতো দুধের বাচ্চা এসব বুঝবেনা
তখন জয় এসব কথা শুনে হেসে দেয়।
-হাসো কেনো?
-দুধের বাচ্চা আমি নাকি তুমি?(জয়)
-তোমি?
-ওও তাহলে তুমি এখনো মেয়ের পেটেই আছো
-নাহ নাহ আমি আমার বরের সামনে আছি
-বর কে?
-তুমি
-আমার জি এফ আছে(জয় মিথ্যা কথা বলে)
-সব মিথ্যা
-তখন জয় তার মোবাইল থেকে তার ছোট বোনের বান্ধবীর পিক দেখিয়ে বলে দেখো এটা আমার জি এফ এবং ওর সাথে আমার বিয়ে পাকা হয়ে আছে।তখন রিহা জয়কে অনেক শক্ত জড়িয়ে ধরে
-এই এই ছারো
-না ছারবোনা
-আমি অন্যের স্বামী
-রিহা জয়ের ঠোটে ঠোট মিলিয়ে দেয়। কিছ করার পর, এই শরীরে আমি ছাড়া কেউ যদি ভাগ বসাতে আসে তাহলে খুব খারাপ হবে
-কি খারাপ করবে তুমি।
-ঐ মেয়েকে মেরে ফেলবো বলে জয়কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তখন ওর বাবা রুমে ডুকে এসব কান্ড কারখানা দেখে রিহার বাবার মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার কথা।
-জয় এসব কি?(রিহা)
-আংকেল এটা আপনার মেয়েকে জিঙ্গাসা করেন
-রিহা এসব কি হচ্ছে?
-বাবা আমি জয়কে ভালোবাসি
-জয় তোমার কি লাগে?
-স্যার
-তাহলে স্যারকে তুমি করে বলার সাহস কে দিয়েছে?
-রিহা চুপ হয়ে আছে
তখন রিহার বাবা জয়কে বলে,জয় এখন তুমি বাসায় যাও
তখন জয় রুম থেকে বের হয়ে যায়।
-রিহা আমি তোমাকে দিয়ে এসব আশা করি নাই
-বাবা আমি ওকে ছাড়া বাচবোনা
-চুপ করো, আদর করি বলে কি মনে করো শাসন করতে পারি না? রুম থেকে কিন্তু বের হতে দিবো না।
-বাবা আমি জয়কে….
কথা শেষ না হতেই রিহার বাবা রিহার গালে………….
চলবে

পর্ব-৪

বাবা আমি জয়কে…… কথা শেষ না হতেই রিহার বাবা রিহার গালে ঠাস ঠাস করে থাপ্পর দেয়।
রিহা এমনটা আশা করে নাই যে তার বাবা তাকে থাপ্পর দিবে।থাপ্পর দেওয়ার পর রিহার বাবা রাগ দেখিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। রিহার বাবা রুম থেকে বের হওয়ার পর রিহা একটু শব্দ করে কান্না করে দেয়।
সকালে কলেজে যাওয়ার মুড নাই কিন্তু তখন রিহার বাবা রিহার রুমে আসে।রিহা রিহার বাবাকে দেখে অপর পাশ হয়ে শুয়ে পরে।
-মা আমি জানি আমি তুই খুব রাগ করছিস, কিন্তু কি করবো বল? একটা বাবা যদি দেখে একটা মেয়ে একটা ছেলের সাথে এমন করতাছে তাহলে কি সে কন্ট্রোল থাকতে পারবে রে?
-বাবা আমার ভালো লাগছে না এখন যাও
-রাগ করেছিস?
-নাহ, মা মরার পর থেকে রাগ অভিমান সব ভুলে গেছি
-এসব কি বলছিস?
-হ্যা ঠিকই বলছি
এই কথা শুনে রিহার বাবার চোখ ভিজে যায়।
রিহার বাবার কথা শুনে রিহা বুঝতে পারে ওর বাবা কান্না করতাছে তখন রিহা শুয়া থেকে উঠে ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে।
রিহার বাবা রিহাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে কলেজে পাঠায়।
কলেজে গিয়ে দেখে রিহা ক্লাসে বসে আছে।
-ঐ তোর মন খারাপ নাকি?(স্নিগ্ধা)
-না
-তাহলে এভাবে গাল ফুলিয়ে বসে আছিস কেনো?
-এমনি
-বল কি কারনে মন খারাপ?
-আরে কিছুনা তো
-আংকেল কিছু বলছে
-না
-তাহলে এভাবে মুখ ফুলিয়ে রাখছিস কেনো?
-ঐ দেখ ক্লাসে স্যার আসছে এখন চুপ কর না হলে কানে ধরে দাড় করিয়ে রাখবে।
জয় ক্লাসে প্রবেশ করার পর জয় ক্লাসে সবার চোখ ফাকি দিয়ে রিহাকে চোখের ভাষায় প্রশ্ন করে।
রিহা তখন ভাবে শালা তোরে আমি মজা দেখামু। আমাকে থাপ্পর মারিয়ে এখন চোখ দিয়ে ইশারা দিস? এখন থেকে বুঝামু তোরে আমি কেমন জিনিস।
-সবাই সবার কাজ বের করো(জয়)
-সবাই আনছে কিন্তু রিহা বাড়ির কাজ করতে পারে নাই তখন জয় এসে দাড়া করিয়ে , কেনো করো নাই
-শরীর অসুস্থ ছিলো
-দুইটা অংক করতে তেমন বেশি কষ্ট করতে হয় না এই বলে জয় বলে যে ১০ মিনিট এভাবে দাড়িয়ে থাকো।রিহা কেনো কিছু না বলে দাড়িয়ে থাকে।ক্লাস শেষ হওয়ার পরে বাসায় যায়।
আজকে বাসায় বাবা নেই। দেখবো জয় আজ কি করে সহ্য করতে পারে।
একটু পরে জয় রিহাদের বাসায় নক করে। রিহা দরজা খুলে রুমে নিয়ে আসে।রুমে নিয়ে এসে জয়কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
-এই মেয়ে এসব কি করছো?
-কি করছি?
-জড়িয়ে ধরছো কেনো?
-মন চাইছে তাই
-মন চাইলেই কি ধরতে হবে নাকি?
-হুমম মনের চাওয়া গুলে পূরন করতে হয় না হলে মন টা বদ দোয়া দেয়।
-কিহহহ
-হ্যা
-এই কথা আমি জীবনেও শুনি নাই
-শুনো নাই এখন শুনো
-ওয়ার্ল্ডে তোমার মতো জিনিস একটাই আছে মনে হয় এর বেশি বানাই নায়।
-এই কথা বলছো কেনো?
-কালকে এতবড় একটা থাপ্পর খাইছো আর আজকেই আবার শুরু করছো?
-থাপ্পর তো আমার বাবা দিছে পারলে তুমি দেও এখনি বিয়ে করে বাসায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবো
-জয় মনে মনে বলে এটা আমি ভালো করে জানি, না হলে তোরে এতক্ষণে থাপড়িয়ে দাতগুলো ফেলে দিতাম)
-কি হলো? মেয়েদের মতো দাড়িয়ে আছেন কেনো?
এটা বলাতে জয় আবারো জ্ঞান শূন্যের মতো হয়ে যায়।
-স্যার
-কিহ
– লাভ ইউ আমার লক্ষি স্যার বলে ঠোটে কিছ করে
-ভালো হচ্ছে না কিন্তু
-আমার কাছে অনেক ভালো মনে হচ্ছে
-এমন করলে আমি আর আসবো না
-না আসলে চাকরী টা খেয়ে দিবো
-জয়ের পরিস্থিতি খারাপ তাই কিছু বলতে পারতাছে না
-এই শুনো আমরা হানিমুন কোথায় করবো?
-ওগান্ডা তে
-কি?
-হুম
-তোমার রুচি এত খারাপ?
-আরে রুচি খারাপ না
-তাহলে এসব বলো কেনো?(রিহা)
-কি বলি?
-উগান্ডার কথা বললা কেনো?
-ভালো লাগছে তাই
-ভালো লাগছে তাই না? এই বলে রিহা জয়ের শার্টের কলারে ধরে কাছো এনে ঠোটে চুমু খায়। চুমু খাওয়া মাত্র দরজায় নক করার আওয়াজ আসে।
-এই এই বাবা…….
চলবে

পর্ব-৫

-ভালো লাগছেনা তাই না? এই বলে রিহা জয়ের শার্টের কলারে ধরে কাছে এনে ঠোটে চুমু খায়। চুমু খাওয়াা মাত্র দরজায় নক করার আওয়াজ আসে, তখন রিহা অনুমান করতে পারে যে তার বাবা আসছে।
-এই এই বাবা আসছে বলে দৌড় দিয়ে দরজা খুলে দেয়।
-জয় আসছে?
-হ্যা
-ওকে পড়ানোর পরে বলিস আমাদের সাথে ডিনার করে যেতে
-ওকে বাবা
-আজকে তোমার বৌয়ের হাতের রান্না খেয়ে যাবা(জয়)
-মানে?
-হুম আমি রান্না করছি তো তাই
-তো বৌ কোথা থেকে আসলো
-বৌ কোথায় থেকে আসলো মানে? এই আমি তোমার কে?
-তুমি আমার ছাত্রী
-ছাত্রী আবার বৌ ও
-না
-হ্যা যদি না স্বীকার করো তাহলে খারাপ হবে
-কি খারাপ করবা?
-নারী নির্যাতন মামলা দিয়ে আমাদের বাড়িতে ঘরজামাই হিসাবে নিয়ে আসবো
-হি হি হি
-রিহা তখন উঠা থেকে জয়ের কোলে গিয়ে নাকে নাক লাগিয়ে, এই তুমি এভাবে হাসো কেনো? জানোনা এভাবে হাসলে আমি ঠিক থাকতে পারিনা তবুও হাসো বলে ঠোটে কিছ করে।
-রিহা তুমি একটা মেয়ে,তোমার ইজ্জতের অনেক দাম সেটা কেনো তুমি বুঝতো চাও না?
-কি বুঝবো?
-বিয়ের আগে এসব ভালো না
-তাহলে আমাকে বিয়ে করে নাও
-না আমি এখন বিয়া করতে পারবো না
-বিয়ে করে নাও না। জয় আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি, তোমাকে আমি আমার পাশে চাই, প্লিজ জয় আমাকে বিয়ে করে নাও নাহহ
-রিহা আমি যাচ্ছি বলে রিহাকে কোল থেকে জোর করে উঠিয়ে বসা থেকে উঠে টেবিল থেকে মোবাইল নিয়ে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়।
-তোমাকে ডাকছে(রিহা)
-কে?
-বাবা
-কেনো?
-তোমার শশুড় বলবে যে তোমার বৌয়ের হাতের রান্না খেয়ে যেতে বলে মুচকি হাসি দেয়।
-আবার?
-হুমমম যাও বাবা বসে আছে তোমার জন্য।
৯টার দিকে জয়কে নিয়ে রিহা আর রিহার বাবা ডিনার করে। খাবার খাওয়ার পরে…
-জয় কলেজের কি অবস্থা?
-জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো
-হুমম, আর রিহার?
-হ্যা আগের থেকে ভালো আশা করি এবার ম্যাথে ভালো করবে।
-আচ্ছা শুনো তুমি কি রুম ভাড়া করে থাকো?
-হ্যা
-তুমি কয়টা টিউশনি করাও?
-দুইটা
-ওহ, ওইটা ছেড়ে দাও আর আমাদের বাসায় এসে পরো।কারন রিহাকে এক সাবজেক্ট পাশ করালে হবে না, সব বিষয় ভালো করতে হবে
-কিন্ত
-কোনো কিন্তু নয়, টাকার কোনো সমস্যা নাই, বাড়িতে থেকে কলেজ করবা আর রিহার পড়াগুলো দেখিয়ে দিবা
-ওকে আংকেল
-ওকে, তাহলে আজকে আসো,সাবধানে যাইয়ো।
-ওকে
-আড়াল থেকে এসব শুনে তো রিহা আরো খুশি হয়ে যায়। রিহা ভাবে শালারে এখন থেকে সামনে পাবো সবসময়, আহহ কত্তো ভালো হয়ছে, বাবা তোমাকে অনেক অনেক থ্যাংকস।
এসব ভাবতে ভাবতে রিহার বাবা ডাক দিয়ে বলে দরজাটা আটকিয়ে দিতে। তখন রিহা দরজা আটকিয়ে দিতে গিয়ে সিরির কাছে গিয়ে উকি মেরে জয়কে আরেকবার দেখে নেয়।
দুই দিন পরে জয় বাসা চেন্জ করে রিহাদের বাসায় উঠে। রিহা জয়কে সবসময় কাছে থেকে দেখতে পারবে এটা ভেবে রিহার মুখে হাসি ফুটে উঠে।
জয় সবকিছু নিয়ে আসার সময় রিহা ছাড়া বাসায় কেউ নেই।
এই তুমি নিচ থেকে সবকিছু এনে রাখো আমি ঘুচিয়ে দিচ্ছি।
-তোমার কাজ করতে হবে না
-স্বামীর কাজ বৌ না করলে কে করবে শুনি?
-আরে সবসময় এটা কেনো বলো?
-হাজার বার বলবো এখন নিচ থেকে বাকি গুলো নিয়ে আসো ।
দুজন রুমটা কে অল্প সময়ে ঘুচিয়ে ঠিকঠাক করে নেয়।
-থ্যাংকস(জয়)
-কেনো
-এতক্ষণ কাজ করার জন্য
-আমি কি কাজের মহিলা নাকি যে থ্যাংকস দিতে হবে?
-তা না
-তাহলে?
-আচ্ছা এখন যাও আমি ফ্রেশ হবো
-ওকে
দুপুরের দিকে রিহার বাবা বাসায় এসে জয়কে দেখতে পেয়ে অনেক খুশি হয়। তিনজনে দুপুরের খাবার খেয়ে কতক্ষণ কথা বলে যে যার রুমে চলে যায়।
রিহা কতক্ষণ পরে জয়ের রুমে গিয়ে দেখে জয় চোখ বুজে আছে, তখন রিহা আস্তে করে জয়ের কপালে রিহা একটা চুমু দেয়। রিহা বুঝতে পারে জয় ঘুমিয়ে গেছে তাই ঠোটে একটা চুমু খেয়ে এসে পরে।
জয় সন্ধ্যার দিকে ছাদে যায়। ছাদে গিয়ে জয় তো অবাক হয়ে যায় যে এত সুন্দর সুন্দর ফুল এখানে কিভাবে হলো?
জয় তখন খুব সহজে বুঝতে পারে এগুলো রিহার যত্নে গড়া।মেয়েটা আসলেই সব দিকে সুন্দর।ঠিক ওর মতোই ফুলগুলো ও ফুটে আছে।রিহা যখন হাসে তখন গালে টুল পরে আর থুতুনির নিচের তিলটা যেনো হাসিটার সাথে মিশে যায়। ওরে দেখলে যেকোনো ছেলেই প্রেমে পরে যাবে।
এমন সময় জয়ের ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে রিহা ছাদে আসে। রিহা এসে জয়ের পিছন থেকে………….
চলবে

পর্ব-৬

রিহা এসে জয়ের পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
-এই জড়িয়ে ধরলে কেনো?(জয়)
-স্বামী কে না ধরলে কাকে ধরবো?
-আমি তোমার স্বামী না, ছারো
-চিল্লানি দিলে ভালো হবে?
-কি??
-হ্যা মনে করো এখন চিল্লানি দিলাম তারপর বাবা সহ আশেপাশের মানুষ আসবে তারপর বলবো তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরছো, এরপর মানুষ কি করবে জানো তো?
-কি করবে?
-ওলে আমার বাবুটা কিচ্ছু বুঝেনা , ওরা এসে তোমাকে মারবে তারপর আমার সাথে বিয়ে হয়ে যাবে হি হি হি
-চুপ করো বলে জোর করে রিহাকে ছাড়িয়ে নিচে নেমে যায়।
রিহা এসব দেখে হেসে দেয়। রিহা আরো কতক্ষণ ছাদে দাড়িয়ে থেকে নিচে নেমে আসে।
জয় রুমে গিয়ে ভাবতে থাকে এটা কি ঠিক হচ্ছে? রিহা আমাকে ভালোবাসে কিন্তু এটা কি আদৌ সম্ভব হবে?
এমন প্রশ্ন নিজকে নিজে করতে থাকে, তখন রিহা বই খাতা নিয়ে জয়ের রুমে আসে।জয় তখন বিছানা থেকে উঠে বসে। রিহা মুচকি হাসি হেসে চোখ দিয়ে ইশারা দেয়।
-অংকগুলো করছো?(জয়)
-না (রিহা)
-করো নাই কেনো?
-এমনি
-কানে ধরো
-এই নেন সবগুলো করে আনছি
-তাহলে প্রথম যে না বললা?
-তোমার রাগি চেহারাটা ভীষন সুন্দর (রিহা)
-আল্লাহ জানে
-কি?
-তুমি ছেলে না মেয়ে?
-তোমার কি মনে হয়?
-আল্লাহ জানে আর তুমি জানো
-চুপ করো নাহলে কিন্তু এখনি বাংলা মুভির মতো “বাচাও” বলে চিল্লানি দিমু।
পড়া শেষে খাতা ভাজানোর সময় রিহা মাথা উঠিয়ে জয়কে কিছ করে,আজকে একটা দিলাম মাত্র, আরো বাকি আছে বলে হাসি দিয়ে রুম ত্যাগ করে।
পরেরদিন কলেজে……
-দোস্ত কেমন আছিস?(স্নিগ্ধা)
-হুম ভালো, তুই কেমন আছিস?(রিহা)
-হুমম ভালো,তো জয় স্যার নাকি তোদের বাসায় উঠছে?
-হুমম
-তাহলে তো তোর জন্য অনেক সুবিধা রে
-কেনো?
-সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখবি
-হুম কিন্তু শালা একদম আনরোমান্টিক
-কেনো?
-ওরে এতো জড়িয়ে ধরি, কিছ করি কিন্তু কোনো রিপ্লাই দেয় না
-তুই কিছ ও করিস?(অবাক হয়ে)
-হ্যা কেনো করবোনা? ও আমার স্বপ্ন
-দোস্ত আমিও জয় স্যারের কাছে প্রাইবেট পড়বো
-তাহলে তোর খবর আছে
-আরে তোরে রাগানোর জন্য বলছি
-হুমম এখন চল
ক্লাসে জয় প্রবেশ করার পর রিহা প্রথমই ফ্লায়িং কিছ করে।জয় এটা দেখে রেগে যায়।
জয় রিহাকে দাড় করিয়ে সবার সামনে নিয়ে কানে ধরতে বলে।কিন্তু রিহা অন্য সবার মতো এখানে লজ্জাবোধ করতাছে তাই রিহা কানে ধরতাছে না।
-রুম থেকে বের হও (জয়)
-স্যরি স্যার
-বলছি বের হতে না হলে প্রিন্সিপাল স্যারকে জানাতে বাধ্য হবো।তখম রিহা কান্না চোখে কলেজ ব্যাগ নিয়ে ক্লাস থেকে বাহির হয়ে যায়।
কলেজ শেষে জয় বাসায় যায়। বাসায় গিয়ে কলিংবেল বাজানোর পরে রিহা দরজা খুলে দেয়। অন্য সময় রিহা দরজা খুলে আশেপাশে কেউ না থাকলে জড়িয়ে ধরে কিন্তু আজ জয়ের সাথে কোনোরকম কথা না বলে দরজা খুলে চলে যায়। জয় দরজা লাগিয়ে রুমে চলে আসে।
দুপুরে খাবারের সময়….
– স্যার আপনাকে ডাকে(রিহা)
-জয় রিহার মুখ থেকে স্যার ডাক শুনে অবাক হয়ে কারন কলেজে ছাড়া রিহা জয়কে কখনো স্যার বলে ডাকে নাই।
-যাও আমি আসছি।
জয় তখন খাবার খেয়ে আবার রুমে চলে আসে।রিহা অন্যদিন খাওয়ার টেবিলে পা দিয়ে পায়ে খোচা দেয় কিন্তু আজকে রিহা টেবিলের অপর প্রান্তে বসে খাবার খেয়ে রুমে চলে যায়।
রাতে রিহা জয়ের রুমে গিয়ে কাজগুলো খাতায় লিখে টেবিলের সামনে খুলে রাখছে।
-সবগুলো করছো?
-জি স্যার
জয় রিহার হঠাৎ এমন পরিবর্তন দেখে বার বার অবাক হয়ে যায়। জয় জানে আজকে যা করছে তা একটু বেশি করে ফেলছে কারন ওর তো একটা সম্মান আছে আবার ওর বাবা কলেজের সভাপতি তাই হয়তো খুব খারাপ লাগছে।খারাপ লাগলে লাগুক এতে ওর শিক্ষা হবে। আর কখনো এসব করার সাহস পাবে না।
কয়েকদিন পরে
রিহা এখন আর জয়কে ডিস্টার্ব করে না। সবসময় আপনি আপনি বলে সমোন্ধন করে।
রিহা এইচএসসির টেস্টে খুব ভালো রেজাল্ট করে।
ফাইনাল পরীক্ষা সামনে তাই রিহা ও পড়ালেখায় মন দিয়ে করছে। জয় যেভাবে বলে ঠিক সেভাবেই পড়ালেখা করে যাচ্ছে। এখন আর জয়ের সাথে প্রয়োজন ছাড়া বেশি কথা বলে না। রিহা এখন আর আগের মতো হাসিখুশি থাকে না।
ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার পর…
আজকে রেজাল্ট দিবে আল্লাহ ই জানে কি হয়। একদিকে জয়ের ও এসব নিয়ে চিন্তা হচ্ছে অন্যদিকে রিহার ও।
রেজাল্ট দেওয়ার পরে সবার আগে জয় ই প্রথম রেজাল্ট টা বের করে দেখে রিহা গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে পাশ করেছে। তখন জয়ের মুখে হাসি ফুটে উঠে। সাথে সাথে জয় রিহার বাবাকে ফোন দিয়ে রেজাল্টের কথা জানায়। রিহার বাবা রেজাল্টের কথা শুনে অনেক খুশি হয়।
রাতে এসে সবাই একসাথে হওয়ার পরে……
-কিরে মা আজ তো খুশির একটা দিন কিন্তু এভাবে মন খারাপ করে রাখছিস কেনো?
-না তো বাবা এমনি
-জয় একমাত্র তোমার জন্য রিহার এমন একটা রেজাল্ট পেয়েছে। থ্যাংকস তোমাকে।
-আংকেল একটা কথা বলার ছিলো, আমি………….
চলবে