আট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্ট টা দেখে ২০ বছর বয়সী ঝুমঝুমকে ডাক্তার সরাসরিই বলে দিলো আপনার ফিজিক্যাল রিলেশন করতে হবে।এটাই একমাত্র ইজি Solution.
ঝুমঝুম ডাক্তার রেহানার কথা শুনে চমকে গেলো।
ঝুমঝুম-কি লিখা আছে এই রিপোর্টে?
ডাক্তার রেহানা-আপনার জরায়ুতে সিস্ট আছে।যদিও এটা তরল পানি জাতীয় ঠোসার মত।কিন্তু অনেক দিন হয়ে যাওয়ায় এগুলো বড় আকার ধারণ করেছে।এই জন্যই আপনার তল পেটে ব্যথা হয়,আর পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত ব্লিডিং হয়।
ঝুমঝুম-এখন আমি কি করবো ডাক্তার?
ডাক্তার রেহানা-ওই যে বললাম,আপনার ফিজিক্যাল রিলেশন করতে হবে।ফিজিক্যাল রিলেশনের পর যদি এই ঠোসা গুলো আপনি আপনি গলে যায় তবে আর কোন সমস্যা নেই আপনার।
আমরা মেডিসিন দিবো,নিয়মিত খেলে ঠিক হয়ে যাবে।

কিন্তু যদি এই ঠোসা না গলে,তবে অপারেশন করতে হবে।
আর এই অপারেশনে প্রচুর রিস্ক আছে।যদি কোন রকম প্রবলেম হয় তবে আপনি আর কোন দিন মা হতে পারবেন না।কিংবা আপনি মারাও যেতে পারেন।
তাই এই সিস্ট থেকে মুক্তি পাবার সব থেকে সহজ উপায় হচ্ছে ফিজিক্যাল রিলেশন।শুনলাম আপনি এংগেইজড,তো তাকে যত দ্রুত সম্ভব দেশে এসে বিয়ে করে নিতে বলুন।

ডাক্তারের কথা শুনে ভার্সিটিতে পড়ুয়া ঝুমঝুম আর ওর বান্ধবী ঝুমুর বাসায় ফিরে এলো।
ঝুমঝুম বাসায় গিয়ে ওর মাকে সব খুলে বল্লো।ছোট বেলা থেকেই ঝুমঝুম ওর মায়ের সাথে খুব ফ্রী।তাই কথা গুলো বলতে ওর তেমন কষ্ট বা লজ্জা হয়নি।আর পৃথিবীতে সব থেকে বড় বন্ধুই তো মা।তাই মায়ের কাছে বলতে লজ্জাই বা কিসের।

ঝুমঝুমের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে ওরই বাবার বন্ধুর ছেলে জিহানের সাথে।এংগেজমেন্টও হয়ে আছে।ছেলে প্রবাসী।ছেলে দেশে আসলেই বিয়ে।ছেলে গ্রীণ কার্ড পাচ্ছেনা বলে দেশেও আসতে পারছেনা।
ঝুমঝুমের মা ঝুমঝুমের সব কথা শুনে জিহানকে ফোন দিলো।ফোন দিয়ে সব কিছু খুলে বল্লো।আর বল্লো,বাবা তুমি তাড়াতাড়ি দেশে চলে আসো।এসে বিয়েটা করে নাও।

জিহানঃদেখুন আন্টি!আমি এখন আসতে পারবোনা।তাছাড়া আমার প্রোমোশনের কথাও চলছে।এই অবস্থাতে কোনমতেই আমার আসা সম্ভব না।
ঝুমঝুমের মাঃতাহলে আমরা কি করবো বাবা?ঝুমঝুম যে দিন দিন অসুস্থ হচ্ছে।
জিহানঃতা আমি কি করে বলবো?আমি কি ডাক্তার নাকি!ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।

ঝুমঝুমের মা ডাক্তারের সাথে গিয়ে কথা বল্লো।ডাক্তারও সেই আগের কথা গুলোই ঝুমঝুমের মাকে বল্লো।
ঝুমঝুমের মা কিছুই বুঝতে পারছেনা কি করবে।

রাতে হঠাৎ ঝুমঝুমের মোবাইলে রিং বেজে উঠলো।রনক ফোন দিচ্ছে আর ঝুমঝুম বার বার লাইন কেটে দিচ্ছে।
অনেক বার লাইন কেটে দেয়ার পর রনকের মেসেজ দেখে রিসিভ করে।
ঝুমঝুমের ভয়েজ শুনেই রনক বুঝে যায় ঝুমঝুমের মন খুব খারাপ।
রনক ঝুমঝুমকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে।
ঝুমঝুম বলেনা।রনকের অনেক জেদের পর ঝুমঝুম রনককে মেসেজে লিখে পাঠায় ডাক্তার যা বলেছে,আর জিহান যা বলেছে।
ঝুমঝুম কাঁদছে।রনক কিছুতেই ঝুমঝুমের কান্না থামাতে পারছেনা।রাতে দুজনের কথা শেষে দুজন ঘুমিয়ে পড়লো।

রনক হচ্ছে ঝুমঝুমের বন্ধু,শুভাকাঙ্ক্ষী,ভালবাসা।
ঝুমঝুম আর রনকের পরিচয় প্রায় ৭ মাস।বন্ধুত্ব,তারপর একে অপরকে মনের অজান্তেই ভালবেসে ফেলে।
দুজনের পরিচয় ফেসবুকের মাধ্যমে।দুজন দুজনকে ভালবাসা সত্বেও ঝুমঝুম বাবার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করতে যাচ্ছে।কারণ ওর বাবা ওকে সরাসরি বলে দিয়েছে,জিহানকে বিয়ে না করলে সে এ মুখ আর কাউকে দেখাবেন না।
রনকও প্রবাসী।ওদের দুজনের সামনা সামনি এখনো দেখা হয়নি।
ঝুমঝুমকে রনক বলেছে ও ঝুমঝুমের শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে বা বন্ধু হয়ে থাকতে চায় ওর জীবনে।তবুও ওকে হারাতে চায়না।
তাই ওদের যোগাযোগটা এখনো আছে।

পরের দিন ঝুমঝুম ফেসবুকে ঢুকতেই দেখে রনকের আইডি ডিএকটিভ।নাম্বারও বন্ধ।
মনে মনে খুব কষ্ট পেলো।নিজের মনকে সান্ত্বনা দিলো,যেখানে জিহানেরই কোন গুরুত্ব নেই ওর অসুখে।সেখানে রনকই বা কি গুরুত্ব দিবে।

ঝুমঝুম দিনকে দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।পেটে অসহ্য ব্যথা।চুল পড়ে যাচ্ছে।কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা।ঠোসা না গলে যাওয়া অব্ধি কোন কিছুতেই সুস্থ হওয়া সম্ভব না ওর।
তিন দিন পর হঠাৎ করেই একটা আননোন নাম্বার থেকে কল।ঝুমঝুম রিসিভ করছেনা।কিছু ক্ষণ পর একটা মেসেজ আসলো,

“ঝুমঝুম আমি রনক,রিসিভ করো”

ঝুমঝুম মেসেজ দেখে আঁতকে উঠলো,এটা তো বাংলাদেশের নাম্বার।তাহলে কি রনক এখন বাংলাদেশে?ভাবতে ভাবতেই ঝুমঝুম ফোন রিসিভ করে।
-হ্যালো।
-এত বার ফোন দিচ্ছি রিসিভ করছো না কেন?
-তুমি জানোনা আমি আন নোন নাম্বার রিসিভ করিনা?আর তুমি আইডি নাম্বার সব অফ করে রেখেছো কেন?
-এই যে তুমি যে রিসিভ করোনা,কখনো প্রয়োজনীয় কলও তো আসতে পারে।আচ্ছা বাদ দাও, ওমুক জায়গায় যেই নদীটা আছে সেখানে চলে আসো।আর এক্ষনি চলে আসবে।
-মানে কি?নদীতে কি?ওখানে আসবো কেন?
-নদীতে মাছ!মাছ ধরবো।তাই আসবে।তাড়াতাড়ি এসো।
-তুমি মাছ ধরবে মানে?তুমি কি নদীর ধারে নাকি?দেশে আসলে কবে?
-আরে বাবা এত কথা না বলে এসো তো তাড়াতাড়ি।না আসলে কিন্তু আমি সারাদিন সারা রাত এখানে অপেক্ষা করবো।সো তাড়াতাড়ি আসো।বাই।

এই কথা বলে রনক ফোন রেখে দিলো।
ঝুমঝুম তাড়াতাড়ি করে একটা নীল শাড়ী পরে নিলো ওর এক ভাবীর কাছে গিয়ে।হাতে নীল চুড়ি,কপালে ছোট্ট একটা নীল টিপ।নীল রনকের প্রিয় রঙ।রেডি হয়ে চলে গেলো নদীর ধারে।
গিয়ে দেখে পেছন ফিরে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।কাঁধে একটা ব্যাগ ঝুলানো।ঝুমঝুম কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই রনক ঘুরে দাঁড়ালো।ঝুমঝুমের দিকে তাকাতেই রনক যেন সেন্সলেস হবে,এমন উপক্রম।অপলক চেয়েই আছে রনক,ঝুমঝুমের দিকে।
ঝুমঝুম হাল্কা একটা কাঁশি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,কেমন আছো?
-এইতো আছি।তুমি?
-এইতো বেঁচে আছি।
-নীল শাড়ীতে তোমায় অনেক সুন্দর লাগছে।ঠিক যেন অপ্সরী।
-থাক আর ফোলাতে হবেনা,এমনিতেই দিন দিন ফুলে যাচ্ছি।তুমি দেশে যে?তুমি না দেশে চলে আসলে আর যেতে পারবেনা ওখানে?দু বছর পর না আসতে চাইলে?তবে হুট করে চলে আসলে যে?
-এমনিই,তোমাকে কাছ থেকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো তাই তোমাকে দেখতে আর সারপ্রাইজ দিতে চলে আসলাম।

ঝুমঝুম মনে মনে ভাবছে,রনক আমার জন্য নিজের জব ফেলে দেশে চলে আসলো।যেখানে ও জানে যে একবার চলে আসলে ২য় বার আর যেতে পারবেনা।আর জিহান?ওর তো হবু বউ আমি।ও আমার জীবনের পরোয়াও করলোনা।ওর কাছে প্রমোশনটাই বড় হয়ে গেলো!

ভাবতে ভাবতে চোখ বেয়ে দু ফোটা অশ্রু ঝরে পড়লো ঝুমঝুমের চোখ থেকে।
-এই ঝুমঝুম,কি হয়েছে?
-কিছুনা।
-চলো আজ আমরা সারাদিন ঘুরবো।
-না আমি বাসায় যাবো।সবাই চিন্তা করবে।
-তুমি আজ আমার সাথে ঘুরবে।কোত্থাও যাবেনা তুমি।তোমার মনে আছে?আমি তোমার জীবন থেকে একটা দিন তোমার কাছে আবদার করেছিলাম?বলেছিলাম একটা দিন তুমি আমাকে দিবে।সেই দিন টা শুধুই আমার হবে আমার।সেই দিন্টার উপর তোমার কোন দাবী থাকবেনা।আজকে দিন টা তোমার কাছে চেয়ে নিচ্ছি।ফিরিয়ে দিওনা।

ঝুমঝুম রনকের মিনতিতে রাজী হলো।রাজী হলো সারাটা দিন রনকের সাথে ঘুরতে।হয়তো আজই ওদের শেষ দেখা আর আজই শেষ ঘুরা।

ঝুমঝুম আর রনক জায়গায় জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।দেখার মত সুন্দর সুন্দর জায়গা গুলোতে।পা বাড়িয়েছে অজানা গন্তব্যে।যেখানে মন চায় ছুটে বেড়াচ্ছে।
ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ করেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।সাথে তো বিদ্যুৎ চমকানো আছেই।দৌড়ে ওরা একটা বাসায় ঢুকলো।দরজা নক করতেই এক বৃদ্ধা মহিলা এসে দরজা খুলে দিলো।
-কারা তোমরা?কাকে চাও?
রনক-বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে আর বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে তাই একটু আশ্রয়ের জন্য এসেছি।বৃষ্টি কমলেই আমরা চলে যাবো।
-কি হও তোমরা?

ঝুমঝুম মাত্রই বলতে যাবে আমরা বন্ধু।
রনক ঝুমঝুমকে থামিয়ে দিয়ে বল্লো,আমরা সদ্য বিবাহিত স্বামী-স্ত্রী।
বুড়ি মা ওদের ঘরে ঢুকতে বল্লো।
বাসায় বুড়ি মা আর তার বর থাকেন।বর বাজারে গিয়েছে।বৃষ্টির জন্য ওখানেই আটকা পড়েছে।আর তাদের সন্তানেরা সবাই প্রবাসী।তারা দেশের বাইরে থাকে।

বুড়ি মা ওদের শরীর মোছার জন্য তোয়ালে বের করে দিলো।আর ঝুমঝুমকে তার জুয়ান কালের একটা লাল রঙের শাড়ী বের করে দিলো।রনককে দিলো তার বরের একটা পাঞ্জাবী আর লু্ঙ্গী।হাতে একটা জ্বলন্ত মোমবাতি দিয়ে বল্লো তোমরা ওই রুমটাতে যাও।ওটা আমার ছেলের আর বউ এর রুম।ওখানে গিয়ে তোমরা কাপড় চেঞ্জ করে নাও।অনেক টা ভিজে গেছো।দুজন কোন কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো রুমটাতে।
রুমে ঢুকে দুজন দু দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে।কারো মুখে কোন কথা নেই।হয়তো লজ্জায় নয়তো সংকোচে।

কিছু ক্ষণ পর রনক-শাড়ীটা চেঞ্জ করে নাও জ্বর এসে যাবে।ঠান্ডা লেগে যাবে।
ঝুমঝুম-লাগুক।
রনক-প্লিজ এমন করেনা।পরে নাও শাড়ীটা।বৃষ্টি কমলেই আমরা চলে যাবো।রাগ করোনা প্লিজ,আমি আমাদের পরিচয় স্বামী-স্ত্রী দিয়েছি বলে।
অন্য কিছু বললে উনারা মাইন্ড করতো।হয়তো রুমেও ঢুকতে দিতোনা।
ঝুমঝুম-আমি রাগ করিনি।ইটস ওকে।
রনক-তাহলে শাড়ীটা পরছোনা কেন?
ঝুমঝুম-আমি যে শাড়ী পরতে পারিনা তুমি জানোনা?আসার সময় ভাবী পরিয়ে দিয়েছে।
রনক-আমি পরিয়ে দেবো?না মানে চোখ বন্ধ করে রাখবো।আমার বউ তো আর হবেনা তুমি যে নিজ হাতে সাজাবো,শাড়ী পরাবো,খোঁপায় বেলী ফুলের মালা পরাবো,যখন ইচ্ছে হয় তখন।(রনকের চোখে জল) হবেনাতো আমার সন্তানের মা তুমি।শুনতে পারবোনাতো তোমার সন্তানের মুখ থেকে বাবা ডাক আমি।হায়রে জীবন।কতই না স্বপ্ন ছিলো।আমার স্বপ্ন দেখাও পাপ।

ঝুমঝুম-এই নাও শাড়ী।পরিয়ে দাও।(ঝুম ঝুমের চোখ ছলছল করছে)

রনক ইউটিউব দেখে শাড়ী পরানো টা শিখে ছিলো।কারণ ঝুমঝুম একদিন রনককে বলেছিলো,
এই যে শোনেন!বিয়ের পর আপনিই কিন্তু প্রতিদিন আমাকে শাড়ী পরিয়ে দিবেন।
রনক সম্মতি জানিয়েছিলো।

আজ সেই ঝুমঝুমকেই রনক শাড়ী পরিয়ে দিচ্ছে।
হঠাৎ করেই খুব জোরে বিদ্যুৎ চমকে উঠলো।ঝুমঝুম ভয়ে অর্ধ শাড়ী পরা অবস্থাতেই রনককে জরিয়ে ধরলো।
রনক ঝুমঝুমকে ধরতে চেয়েও ধরছেনা।
কিছু ক্ষণ পর বিবেক আর ভালবাসার মধ্যে হাড্ডা হাড্ডি লড়াই এর পর রনকও ঝুমঝুমকে জড়িয়ে ধরলো।
ঝুমঝুমের কপালে রনক তার কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে ভালবাসার টিপ পরিয়ে দিলো।
রুমের বাতিটা নিভে গেলো।দুজন পরিপূর্ণ হলো দুজনায়,দুজনের ভালবাসায়।

কিছু ক্ষণ পর বুড়ি মা দরজায় নক করে বল্লো,ফ্রেশ হয়ে এসো তোমরা।আমি খাবার বাড়ছি।
দুজনি গোসল করে ফ্রেস হয়ে বুড়ি মার রুমে আসলো।
তত ক্ষণে বুড়োও এসে গেছেন।বুড়োর সাথে বুড়ি মা ওদের পরিচয় করিয়ে দিলো।চার জন খাওয়া দাওয়া শেষে কিছু ক্ষণ গল্প করলো।
তারপর ঝুমঝুম বল্লো,এবার আমরা উঠি বুড়ি মা।বৃষ্টি কমে গেছে।তাছাড়া বাসায় সবাই অপেক্ষা করছে।চিন্তাও করবে।
বুড়োর আর বুড়ি মার মন খারাপ হয়ে গেলো।এত ক্ষণ তাদের ভালোই লাগছিলো।কিন্তু একটু পরই আবার বাড়ীটা ফাঁকা হয়ে যাবে।

রনক-এই এই মন খারাপ করেনা।একদম মন খারাপ করেনা।আমরা আবার আসবো।দুজনের সাথে গল্প করতে।

বুড়ো-বুড়ির মুখে হাসি ফোটে।
ঝুমঝুম রনকের দিকে নিশ্চুপ তাকিয়ে আছে।
ঝুমঝুম আর রনক দুজনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রাস্তায় বের হলো।কেউ কারো সাথে কোন কথা বলছেনা।
ঝুমঝুম বাড়ীর কাছাকাছি চলে এসেছে।
রনক-থেকে গেলে হয়না পাগল টার জীবনে?
ঝুমঝুম-আজই আমাদের শেষ কথা,শেষ দেখা।ভালো থেকো।

এই কথা বলে ঝুমঝুম দৌড়ে বাসায় চলে যায়।
দুদিন পর খেয়াল করে ঝুমঝুমের আর পেটে ব্যথা করছেনা।
ডাক্তার রেহানার কাছে যায় ঝুমঝুম।
ডাক্তার রেহানা আলট্রাসাউন্ড করে দেখেন,ঝুমঝুমের সিস্ট গুলো গলে গেছে।সে অবাক হয়।মিরাকল ভেবে ঝুমঝুমকে বলে,তুমি বেঁচে গেছো,তোমার সিস্ট গুলো গলে গেছে।
ঝুমঝুম চমকে গিয়ে সেই বৃষ্টির কথা মনে করে।মনে করে রনকের কথা।

ডাক্তার কিছু মেডিসিন দিয়ে দেন আর বলেন,এখন আর তোমার কোন সমস্যা নেই।এক মাস এই মেডিসিন গুলো খাও।তারপর আমার সাথে দেখা করবে।
ঝুমঝুম বাসায় চলে আসে।ওর মাকে এসে বলে,সিস্ট গুলো গলে গেছে।চিন্তা করো না আর আমার জন্য।ওর মা খুশিতে আত্মহারা।জিহানকে ফোন দিয়ে জানায়।

কেটে যায় অনেক গুলো দিন।ঝুমঝুম ওর আইডি ডি এক্টিভ করে দিয়েছে সেদিন বাসায় এসে।আর নাম্বারও চেঞ্জ করে ফেলেছে তাই রনক আর সেদিনের পর ঝুমঝুমের সাথে কোন রকম যোগাযোগ করতে পারেনি।
জিহান গ্রীণ কার্ড পেয়ে গেছে।আজ সে দেশে আসছে।
আগামী পরশু ঝুমঝুমের গায়ে হলুদ।আর তারপরের দিন বিয়ে।
আইডি লগিন করে ঝুমঝুম রনক কে একটা মেসেজ লিখে,

”আমার জীবন বাঁচানোর জন্য ধন্যবাদ।
শুক্রবারে আমার বিয়ে।জীবন টাকে নতুন ভাবে সাজিয়ে নিও।আমাদের স্বপ্ন গুলোকে অন্য কারো সাথে পূরণ করো।ভালবাসি”

মেসেজ টা দিয়েই ঝুমঝুম আইডি ডিএক্টিভ করে দেয়।

আজ ঝুমঝুমের গায়ে হলুদ।সবাই ঝুমঝুমকে হলুদ দিয়ে গেছে।সবার সাথে জিহানও এসেছিলো ঝুমঝুমকে হলুদ দিতে।জিহানের মুখে কি সুন্দর হাসি।
কিন্তু ঝুমঝুম এই হাসিটাকে সহ্য করতে পারছেনা।কারণ যার কাছে ঝুমঝুমের জীবনের কোন মূল্যই নেই।তার হাসি তো বিষাক্ত মনে হবেই।
ঝুমঝুম মনে মনে ভাবছে,এই মানুষটার সাথে আমি সারাজীবন সংসার করবো কি করে!
ছেলে পক্ষ হলুদ দিয়ে চলে গেছে।
মেয়ে পক্ষ হলুদ দেয়া শুরু করেছে,হঠাৎ ঝুমঝুম স্টেজ থেকে দৌড়ে চলে গেলো।
বেসিনে গিয়ে বমি করতে শুরু করলো।
ঝুমঝুম বুঝতে পারছেনা কেন এমন হচ্ছে।
আজ ঝুমঝুমের বিয়ে,সকাল থেকেই হঠাৎ করেই মাথাটা ঘুরছে।আবার বমি বমি লাগছে।ফ্রিজ থেকে আচার বের করে আচার খাচ্ছে ঝুমঝুম।
হঠাৎ এক দাদী এসে ঝুমঝুমকে বল্লো,
এখন এত আচার খাওয়া লাগবেনা।আর কয় দিন পর এমনিই আচার খাবা।

ঝুমঝুম হঠাৎ করে আঁতকে উঠলো।খেয়াল করলো,এ মাসে এখনো তার পিরিয়ড হয়নি।ডেইটের অনেক দিন পাড় হয়ে গেছে।আবার মাথা ঘুরছে,বমি বমি লাগছে।তবে কি ঝুমঝুম……..

২য় পর্ব।

ঝুমঝুম হঠাৎ করে আঁতকে উঠলো।খেয়াল করলো,এ মাসে এখনো তার পিরিয়ড হয়নি।ডেইটের অনেক দিন পাড় হয়ে গেছে।আবার মাথা ঘুরছে,বমি বমি লাগছে।তবে কি….
এসব ভাবতে ভাবতে ঝুমঝুম ওর এক বান্ধবীকে ফোন দিয়ে বল্লো, একটা প্রেগন্যানসি টেস্ট কাঠি নিয়ে আসিস তো।
আমার এক ভাবীর লাগবে।তাড়াতাড়ি নিয়ে আসিস।

দুপুর হয়ে গেছে।
ঝুমঝুমকে বিয়ের সাজে সাজানো হচ্ছে।কনের সাজে ঝুমঝুমকে অপূর্ব লাগছে।এমনিতেই ঝুমঝুম দেখতে খুব সুন্দরী,তার উপর বিয়ের সাজ,বিয়ের সাজে মেয়েদের সৌন্দর্য এমনিতেই আরো বেড়ে যায়।

ঝুমঝুমের বান্ধবী পার্লার থেকে সেজে কেজে তারপর প্রেগন্যান্সি টেস্টের কাঠি নিয়ে হাজির হয়।
ঝুমঝুম কাঠিটা নিয়ে সোজা বাথরুমে ঢুকে।
টেস্ট করতেই ঝুমঝুম লাল বর্ণের দুটো স্পষ্ট রেখা দেখতে পায়।

ঝুমঝুমের আর বুঝতে বাকি রইলোনা,ঝুমঝুম প্রেগন্যান্ট।ও রনকের সন্তানের মা হতে চলেছে।
কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলোনা।
দিশাহারা হয়ে রনক কে ফোন দিতে লাগলো।রনকের মোবাইল বন্ধ,কল যাচ্ছেনা।বার বার ট্রাই করে যাচ্ছে।
কিন্তু রনকের মোবাইলে কল যাচ্ছেনা।

যাবেই বা কি করে,ঝুমঝুমের সেদিনের মেসেজ টা দেখা মাত্রই রনক কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মোবাইল টা আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলে।

এদিকে বর পক্ষ এসে গেছে।
ঝুমঝুম বাবা মায়ের উদ্দেশ্যে ছোট্ট একটা চিঠি লিখে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়,

”মা এবং বাবা,আমাকে তোমরা ক্ষমা করো।আমার পক্ষে এই বিয়ে করা সম্ভব না।তাই আমি চলে যাচ্ছি,ভেবোনা।
আমি কারো হাত ধরে পালাচ্ছিনা।আমি একাই অজানা পথে পা বাড়ালাম,তোমরা ভালো থেকো,ইতি তোমাদের মেয়ে”

কেটে যায় ৫টা বছর।
যে যার মত যার যার জীবন নিয়ে ব্যস্ত।জিহান বিয়ে করে বউ নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে।বাবা মা তাদের অন্য সন্তান বুকে নিয়ে বেঁচে আছে।ঝুমঝুম বিয়ে করে স্বামী নিয়ে ভালো আছে,এই চিন্তা করে রনক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভালো আছে।

কিন্তু ঝুমঝুম?ঝুমঝুম কোথায়?ও কি ভালো আছে?ওর পেটের সন্তান টা কেমন আছে?সন্তানটা কি পৃথিবীর মুখ দেখেছে?
নাকি দেখেনি?নাকি সন্তান্টাকে পেটে নিয়েই ঝুমঝুম এই পৃথিবীর মানুষের কটু কথা থেকে বাঁচতে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে?
কারো জানা আছে?কারো জানা নেই।

রনকের মা খুব অসুস্থ,তাই ডাক্তার রনককে তার মাকে নিয়ে ঢাকা গিয়ে ভালো কোন ডাক্তার দেখাতে বলেছে।তাই রনক আজ ঢাকার একটি হসপিটালে তার মাকে নিয়ে এসেছে।সিরিয়াল লিখিয়ে,মা কে নিয়ে বসে আছে।ডাক পড়লেই মা কে নিয়ে ডাক্তারের রুমে ঢুকবে।

হঠাৎ করেই রনকের চোখ পড়ে একটা মেয়ের উপর।মেয়েটা পুতুলের মত সুন্দর।
বসে আছে একটা চেয়ারে।আনুমানিক চার বছর হবে মেয়েটার।

মেয়েটার হাতের পুতুল টা নিচে পড়ে গেছে,তাই ওটা উঠানোর চেষ্টা করছে মেয়েটা।রনক দৌড়ে গিয়ে পুতুল টা তুলে মেয়েটার হাতে দেয়।মেয়েটা মুচকি একটা হাসি দিয়ে রনককে ইশারায় ধন্যবাদ জানায়।

রনক চমকে উঠে মেয়েটার হাসি দেখে,মেয়েটার হাসিটা ঠিক ঝুমঝুমের মত।আর চোখ দুটো একদম রনকের মত।
রনক মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করে,তুমি এখানে কেন?
মেয়েটা ডাক্তারের চেম্বার দেখিয়ে দেয় আঙুল দিয়ে।
রনক জিজ্ঞেস করে,তোমার সাথে আর কেউ আসেনি?
মেয়েটা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে।

রনক জিজ্ঞেস করে কোথায় সে?
মেয়েটা রাস্তা দেখিয়ে দেয়।

রনক মনে মনে ভাবে,এত সুন্দর নিষ্পাপ মেয়েটা।অথচ কথা বলতে পারেনা।আল্লাহ্‌ লিলা বোঝা বড় দায়।
মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,তুমি এখানেই বসে থাকো কোথাও যেওনা।
মেয়েটা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে।

আর রনক চলে যায় ওর মায়ের কাছে।
মাকে মেয়েটাকে দেখিয়ে বলতে থাকে আর আফসোস করতে থাকে যে,মেয়েটা কথা বলতে পারেনা।

হঠাৎ করেই রনক দেখে মেয়েটা কোথায় যেন দৌড়ে যাচ্ছে।
আর রনকও ওর মাকে বসিয়ে রেখে মেয়েটার পেছনে ছুটছে।কিছু দূর যেতেই রনকের বুকের ভেতর ধক করে উঠে।

মেয়েটা সাদা আর কালো রঙের থ্রী পিচ পরা একটা মেয়েকে আম্মু বলে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।
রনকের বুঝতে আর বাকি নেই সাদা কালো থ্রি পীচ পরা জরিয়ে ধরা মেয়েটা যে পিচ্চি মেয়েটার মা।

আর মেয়ের মা টা যে রনকের চির চেনা ভালবাসা।তারই ঝুমঝুম।ঝুমঝুম ওর মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করছে,চুমু খাচ্ছে।

হঠাৎ করেই ঝুমঝুম এর চোখ পড়ে রনকের দিকে।হাসি ভরা মুখটা নিমিষেই মলিন হয়ে যায়।চোখ দুটো জলে ভরে যায়।
দুজনই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।চোখ ভিজে যাচ্ছে দুজনেরই।কতটা দিন পর দেখা তাদের।ঠোঁট দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছেনা কারোই।

অথচ মনে মনে বলছে ঠিকই।
-খুব ভালো আছো তাইনা?স্বামী সংসার নিয়ে।মেয়ের মাও হয়েছো।

-খুব ভালো আছি।তুমিও কত স্মার্ট হয়েছো।বিয়ে করে বউ নিয়ে ভালোই আছো বোঝা যাচ্ছে।
কিন্তু কেউ কারো কোন কথা শুনতে পারছেনা।কারণ মনে মনে বলা কথা গুলো বাইরে থেকে যে শোনা যায়না।

পুতুল মেয়েটার ডাকে দুজনের নীরবতা ভাঙে।
আম্মু আম্মু আমার আইসক্রিম দাও।
এই যে মা তোমার আইসক্রিম।এই নাও।

রনক-তুমি কথা বলতে পারো?
ঝুমঝুম-পারবেনা কেন?
রনক-না মানে,ওর সাথে আমি একটু আগে কথা বলেছি।ও মুখে কিছু বলেনি।ইশারায় সব বলেছে।তাই ভাবলাম…

ঝুমঝুম-মুখে কিছু বলোনি কেন মা?
-তুমিই না বলেছো অপরিচিত কারো সাথে কথা বলবেনা।অপরিচিত কেউ কিছু দিলে নিবেনা।তাই আমি ইশারায় বলেছি।কথা বলিনি।

ঝুমঝুমঃপাগলী মেয়ে আমার।
-আম্মু জানো,আংকেল টা খুব ভালো।আমার পুতুল পড়ে গিয়েছিলো,সে তুলে দিয়েছেন।

এদিকে এক নার্স এসে রনক কে ডাকে,আপনার মা আপনাকে খুঁজছে।আপনার মায়ের সিরিয়াল এসেছে চলুন।
আসি,ভালো থেকো,সুখী হও বলে,আর মেয়েটার গালে একটা চুমু দিয়ে রনক ওর মায়ের কাছে চলে যায়।
ঝুমঝুমও ওর মেয়েকে নিয়ে যেই ডাক্তারকে দেখাবে সেই ডাক্তারের চেম্বারের সামনে চলে যায়।ঝুমঝুমের মেয়ের সকাল থেকে হঠাৎ পেটে ব্যথা তাই ঝুমঝুম ওর মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে এসেছে।

দুজনের ডাক্তার দেখানোই শেষ।
বাসায় ফিরে যাবার সময় ঝুমঝুমের মেয়েটা ঝুমঝুমকে বলে-আম্মু।
ঝুমঝুম-কি মা?
-ওই যে দেখো আংকেল টা।আমি আংকেল টাকে একটা চুমু দিয়ে আসি?তুমি আমাকে চুমু দিয়ে না বলো,চুমু দিলে চুমু দিতে হয়?আংকেল তো আমাকে চুমু দিয়েছে,আমিতো দেইনি।আমি একটা চুমু দিয়ে আসি?

ঝুমঝুম-আচ্ছা যাও।কিন্তু চুমু দিয়ে বাই বলেই চলে আসবে।দেরি করবেনা কেমন?
-আচ্ছা আম্মু।উম্মাহ।
-উম্মাহ্ বাবুই।

-আংকেললল,
-এই যে মামুনি,তোমরা এখনো যাওনি?
-উঁহু যাইনি,এখনি চলে যাবো।ইনি কে?
-ইনি আমার মা।
-ও আচ্ছা,কেমন আছো দাদুভাই?
-ভালো আছি দাদু ভাই,তুমি কেমন আছো?
-আমিও ভালো আছি।আচ্ছা আমার বেশি সময় নেই,আংকেল তাড়াতাড়ি একটু বসো তো।

-বসবো কেন?
-আরে বসোই না।
-আচ্ছা বসলাম।
-উম্মাহ! আসি টা টা।
-এই দাঁড়াও দাঁড়াও!তোমার নাম টাই তো জানা হলোনা।
-আমার নাম?
আমার নাম….

 

আংকেল তাড়াতাড়ি একটু বসো তো।
-বসবো কেন?
-আরে বসোই না।
-আচ্ছা বসলাম।
-উম্মাহ! আসি টা টা।
-এই দাঁড়াও দাঁড়াও!তোমার নাম টাই তো জানা হলোনা।
-আমার নাম?
আমার নাম রিমঝিম খান।
বাবা-রনক খান।
মা-ঝুমঝুম খান।
বাসা ঢাকা।

রিমঝিমকে কেউ ওর নাম জিজ্ঞেস করলে ও নামের সাথে এক গড়া এই উত্তর গুলো এক সাথে দিয়ে দেয়।কারণ ওর মা ওকে এই কথা গুলোই বার বার ওকে শিখিয়েছে।

রনকের বুকের ভেতর ঝড় বয়ে গেলো।রনকের মাও অবাক হয়ে গেলো।এ দেখি তার ছেলের নাম বলছে।
রনক-মা তোমার বাবার নাম কি বললে?
-রনক খান।
-তোমার বাবা কোথায়?তোমার বাবা তোমাদের সাথে থাকেনা?
-আমার বাবা আমার জন্য তারা আনতে গেছে।ওই যে আকাশে জ্বল জ্বল করে কত তারা জ্বলে না?ওগুলো আনতে গেছে।আমি আরেকটু বড় হলে বাবা তারা গুলো নিয়ে একেবারে চলে আসবে আমাদের কাছে।
-তুমি তোমার বাবাকে কখনো দেখোনি?
-দেখেছিতো।ওই যে আকাশে সব থেকে যেই বড় তারা টা দেখা যায়,ওটাই আমার বাবা।

রনক রিমিঝিম কে কোলে নিয়ে চুমু খেতে থাকে।
আর ঝুমঝুম রিমঝিমের দেরি দেখে ওখানে এসে হাজির হয়।
রনক-ঝুমঝুম!রিমঝিম কি বলছে?
ঝুমঝুম-কি বলছে ও?
রনক-ওর বাবার নাম নাকি রনক খান।
ঝুমঝুম রিমঝিমের হাত ধরে বলে চলো মা।অনেক দেরি হয়ে গেছে।
রনক ঝুমঝুমের হাত টেনে ধরে,আমি আমার প্রশ্নের উত্তর চাই।
রিমঝিম নাম টা আমি আমাদের মেয়ের নাম রাখতে চেয়েছিলাম।আর ওর নাম তুমি রিমঝিম রেখেছো,আবার ওর চোখ ঠিক আমার মত।ও বলছে ওর বাবার নামও রনক।
তবে কি ও….
চুপ করে থেকোনা জবাব দাও।

-হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ।রিমঝিম তোমার মেয়ে।রিমঝিম আমাদের মেয়ে।ওই বৃষ্টির দিনেই ও আমার গর্ভে আসে।মনে আছে বুড়ি মার কথা?বুড়োটার কথা?বৃষ্টি? মনে আছে?
-আমার সব মনে আছে কলিজা।সব মনে আছে।তুমি আমায় জানাওনি কেন?
আর তোমার না বিয়ের কথা ছিলো?

-কিভাবে জানাতাম?অনেক ট্রাই করেছি তোমার ফোনে,কল যায়নি।আর বিয়ের দিনই আমি জানতে পারি আমি প্রেগন্যান্ট।তোমার সন্তান আমার গর্ভে।তাই আমি বাসা থেকে পালিয়ে যাই।ঢাকা চলে আসি এক বান্ধবীর বাসায়।ওখানে থেকেই একটা চাকুরী খুঁজে নেই।জব করি,ওকে জন্ম দেই।তোমার পরিচয়ে বড় করি।এই তো চলছে জীবন।আমি আমার মেয়েকে নিয়ে ভালোই আছি।জানিনা কে কেমন আছে।তুমিও হয়তো বউ,বাচ্চা সংসার নিয়ে ভালোই আছো।দোয়া করি ভালো থাকো।

রনকের মা রিমঝিম কে কোলে তুলে নেয়।চুমু খেতে খেতে বলে আমার দাদু ভাই।আমার দাদু ভাই।

রনক-ভালোই বলেছো।হ্যাঁ ভালো আছি আমি।খুব ভালো আছি আমার মাকে নিয়ে।আমার জীবনে আর কারো জায়গা হয়নি।কারণ আমি তোমার স্মৃতি নিয়েই সারাজীবন বেঁচে থাকবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আগেও বলেছিলাম,তোমার পরে আমার জীবনে আর কেউ আসবেনা।তুমি হয়তো কথাটা সিরিয়াস ভাবে নাওনি।কিন্তু আমি সিরিয়াস ভাবেই বলেছিলাম।

ঝুমঝুম-তুমি বিয়ে করোনি?
রনক-বিয়ে মানুষ কয়বার করে?মনে আছে?আমি বিদেশ থাকাকালীন তুমি আর আমি তিন কবুল পড়ে আল্লাহ কে সাক্ষী রেখে বিয়ে করেছিলাম?বলেছিলাম আজ থেকে তুমি আমার বউ।তুমিও মেনে নিয়েছিলে।কিন্তু পরে তোমার বাবা মায়ের ডিসিশনে সব চেঞ্জ হয়ে গেলো।তুমি ভুলে গেলেও আমি ভুলিনি সেদিনের কথা।আর সেদিন থেকেই আমি তোমায় আমার বউ বলে আর নিজেকে তোমার স্বামী বলে স্বীকার করে নিয়েছিলাম।আর বৃষ্টির দিনটাকে আমি আমার স্ত্রীর আর আমার পবিত্র বাসর হিসেবে মনে প্রাণে গ্রহণ করেছি।তাই আর আমার জীবনে কেউ আসেনি।আর আসবেও না কোন দিন।

রনকের মাঃ অনেক হয়েছে।এখন দুজনি থাম।বাকি কথা তোরা পরে বলিস।এবার বাসায় ফিরে চল।আমি তোদের দুজনের আবার বিয়ে দিবো।এক করে দিবো আবার দুজনের হাত।তোরা দুজন এক সাথে থাকবি।আমরা সবাই এক সাথে থাকবো আর আমি আমার দাদু ভাইকে নিয়ে বাকি দিন গুলো কাটিয়ে দিতে চাই।

রনক আর ঝুমঝুম দুজনি মাকে জরিয়ে ধরে।
ফিরে আসে তাদের রাজশাহী।
রাজশাহী এসে রনকের মা বিয়ের আয়োজন করে।ফোন দেয় ঝুমঝুমের বাসায়,আর বলে ঝুমঝুমকে আমরা খুঁজে পেয়েছি।ঝুমঝুম আমাদের বাসায় আছে।যদি ওকে দেখতে চান তবে আপনারা আমাদের বাসায় চলে আসুন।ঠিকানা এই।

ঝুমঝুমের পরিবারের সবাই ফোন পাওয়ার পরই ঠিকানা অনুযায়ী রওনা দেয়।
রনকের বাসায় এসে দেখে বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে।পুরো বাড়ী সাজানো।
রনকের মা তাদেরকে ভেতরে আসতে বলেন।
সবাইকে বসতে বলেন,কিছু ক্ষণ পর ওর পরিবারের সবাই ঝুমঝুমকে দেখতে পায় কনের বেশে।সবার চোখে জল।এটা দুঃখের জল নয়।সুখের অশ্রু।মেয়েকে এত দিন পর খুঁজে পাওয়ার খুশি।
রনকের মা ঝুমঝুমের বাবা মাকে সব কিছু খুলে বলেন।ঝুমঝুমকে সবাই জরিয়ে ধরে।ঝুমঝুম সবার কাছে ক্ষমা চায়।

এর মধ্যে রনক রিমঝিমকে কোলে নিয়ে হাজির হয়।
-এরা কারা বাবা?
-এরা হচ্ছেন তোমার নানাভাই,নানু ভাই।
-উনারা দেখি আম্মুকে আদর করছে।আমাকে দেখি করেনা।
-অনেক দিন পর তারা তাদের মেয়েকে পেয়েছেন তো তাই আদর করছে।আমি যেমন তোমাকে পেয়ে অনেক খুশি হয়েছি আদর করেছি।তারাও তাই করছেন।
-তুমি তো ★তারা নিয়ে আসোনি।তারাও কি তাদের মেয়ের জন্য ★তারা আনেনি?

রনক এবার মাথায় হাত দিয়ে চাপড়াচ্ছে।
ঝুমঝুমের মা বাবা রিমঝিমকে কোলে তুলে নিলো।আদর করলো।
সবাই মিলে একত্র হলো,
বিয়ে হলো ঝুমঝুম আর রনকের।
রাতে রিমঝিম ওর মা বাবাকে বল্লো,আজ আমি দাদু ভাই,নানু ভাই এর কাছে থাকবো।তোমরা ঘুমিয়ে যেও।

ঝুমঝুম আর রনকের জন্য বাসর ঘর সাজানো হয়েছে।
ঝুমঝুম ফুলের বিছানায় বসে আছে।রনক এসে পাশে বসতেই ঝুমঝুম কেঁদে দিলো।রনক ভয় পেয়ে গেলো,
-কি হয়েছে কলিজা?তুমি কাঁদছো কেন?আমি কি কোন ভুল করেছি?বলো আমায়?
-আরে বুদ্ধু!আমি খুশিতে কাঁদছি।
-তাই বলো।আমি তো ভয় পেয়ে গেছি।
আচ্ছা শোনো এবার ওয়াদা করো,আমাকে ছেড়ে কোন দিনও যাবেনা।
-কোন দিন যাবোনা।কক্ষনো না।
-ওয়াদা?
-ওয়াদা।
-হানিমুনে কোথায় যাবে বলো?
-নিয়ে যাবেতো?
-হুম নিয়ে যাবো,কোথায় বলো?
-বুড়ী মার বাড়ী।
-অবশ্যই যাবো।কালই যাবো,আর সাথে আমাদের রিমঝিমকেও নিয়ে যাবো।
-তাহলে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে।চলো চলো ঘুমাবো।
-শোনো,
-বলো,এবার কিন্তু আমার একটা ছেলে লাগবে।
-হুম আমারো।
-লাভ ইউ।
-ভালবাসি।

পরের দিন সকালে রনক ঝুমঝুম আর ঝুমঝুমের বাবা মা ঝুমঝুমদের বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
পথিমধ্যে রনক ঝুমঝুমের বাবা মাকে বলে,আপনারা বাসায় যান।
আমি ঝুমঝুম আর রিমঝিমকে নিয়ে একটু পরে আসছি।
ঝুমঝুমের বাবা মা চলে যায়।রনক ঝুমঝুম আর রিমঝিমকে নিয়ে বুড়ি মার বাসায় যায়,
গিয়ে দেখে সারা বাড়ী মানুষে থৈ থৈ করছে।
রনক আর ঝুমঝুমের বুকের ভেতর অদ্ভুত এক ব্যথা অনুভব হয়।আচমকা এক ভয় ভীড় করে ওদের মনে।
বুড়ী মা আর বুড়োর কিছু হয়নিতো?
ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখে বুড়ি মা আর বুড়ো হাসছে।
রনক আর ঝুমঝুম যেন প্রাণ ফিরে পেলো।
বুড়ী মার ছেলেরা আজ বিদেশ ছেড়ে বউ বাচ্চা নিয়ে মা বাবার কাছে একেবারে চলে এসেছে।ফিরে এসেছে তাদের স্বদেশে।মাতৃভূমিতে।তাই প্রতিবেশীরা তাদের দেখতে এসেছে।

রনক আর ঝুমঝুম বুড়ি মা আর বুড়োর কাছে গেলো।বুড়ো না চিনতে পারলেও।
বুড়ি মা ঠিকই ওদের চিনে নিলো।আর মুখ ভাড় করে ফেল্লো।
দুজনই কানে ধরে সরি বল্লো,আর বল্লো আমরা খুব খারাপ অবস্থায় ছিলাম তাই আসতে পারিনি দেখা করতে।সরিইইই।
রিমঝিমের হাত টা বুড়ি মার হাতে দিয়ে বল্লো,এই যে তোমাদের নাত্নী।
বুড়ি মা খিল খিল করে হেসে দিলো।বুড়োও ওদের চিনে নিলো।
রনক আর ঝুমঝুমকে দুজন জরিয়ে ধরলো।দোয়া করে দিলো,সুখী হও।

রনক আর ঝুমঝুমও তাদের এই বলে বিদায় নিলো যে,
তোমরাও ভালো থাকো খুব,পরিবারের সবাইকে নিয়ে।
আর আমরা চির কৃতজ্ঞ থাকবো তোমাদের কাছে।