৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নিপা। যেদিন নিপা জানতে পারে সে প্রেগন্যান্ট সেদিন নিপা খুঁশিতে দুচোখে পানি গড়িয়ে পরেছিলো। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর নিপা অবশেষে মাতৃত্বের স্বাদ পেতে যাচ্ছে। কিন্তু ঘটনা টা সেদিনেই ঘটে। নিপা তখন ছিলো বাপের বাড়িতে। রাতে তার স্বামী প্রেগন্যাসি রিপোর্ট গুলো এনে নিপার হাতে দিয়ে তার স্বামী বলেছিলো ” কাল আমরা বাড়িতে যাচ্ছি ” নিপা কিছুই বলেনি চুপ করে স্বামীর মুখের দিখে চেয়ে ছিলো। গত ছয় মাস ধরে বাপের বাড়িতে নিপা। একটি বার তার শ্বশুর শাশুড়ি তার কোনো খোঁজ খবর নেয় নি। নিপার স্বামী শহরে চাকরি করতো। প্রতি মাসে তার স্বামী ছুটিতে বাড়িতে আসতো দু’দিন নিজের বাড়িতে আর দু’দিন নিপাদের বাড়িতে থাকতো। নিপার সন্তান হয় না বলে শাশুড়ি নিপাকে উঠতে বসতে নানা ধরনের গোষ্ঠী শুদ্ধো কথা শোনাতো। একদিন বউ শাশুড়ি কথা কাঁটাকাটি নিয়ে প্রচন্ড ঝগড়া বাঁধিয়ে ছিলো নিপার শাশুড়ি। ঝগড়াঝাঁটির পর নিপার শাশুড়ি ছেলেকে ফোন করে শহর থেকে শীঘ্রই বাড়িতে আসতে বলে। নিপার স্বামী বাড়িতে আসতেই নিপার নামে বানিয়ে বানিয়ে অভিযোগ করে তার ছেলের কাছে আর সেদিনেই নিপার স্বামী কাউ কে কোনো কিছু কথা না বলে নিপাকে নিয়ে তার শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে আসে। নিপা সেদিন অশ্রুসিক্ত নয়নে স্বামীর মুখের দিকে চেয়েছিলো। তখন তার স্বামী শুধু একটা কথায় বলেছিলো “যে দিন তুমি মা হতে যাবে সেদিনেই তোমাকে আমি এখান থেকে নিয়ে যাবো আমার বাড়িতে”। তাই গত ছয় মাস ধরে নিপা বাপের বাড়িতে এসে থাকছে। প্রেগন্যান্টের কথা জেনে নিপার স্বামী শহর থেকে সোজা নিপাদের বাড়িতে আসে তাকে নিয়ে যেতে।
সেদিন নিপা মাঝরাতে ঘুমের মধ্যে একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছিলো যা দেখে নিপা ঘুম থেকে চিৎকার দিয়ে ওঠে বলেছিলো “আমি যাবো না, ওরা আমাকে আমার সন্তান কে মেরে ফেলবে “।নিপার মুখে থেকে এসব কথা শুনেও নিপার স্বামী চুপছিলো কিচ্ছু বলেনি বরং নিপাকে আশ্বস্ত করে বলেছিলো ” এগুলো স্বপ্ন, আর স্বপ্ন কখনো বাস্তব হয় না “। নিপাও তার স্বামীর কথা মেনে নিলো। কিন্তু মন তার কু ডাক ডাকছিলো। তার মা প্রায় বলতো শেষ রাতে স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়। যেমনটা নিপা সে মা হতে যাবে এমনটাও স্বপ্নে দেখেছিলো নিপা শেষ রাত্রিবেলাই যা আজ সত্যি হলো কিন্তু এটাও তো শেষ রাত্রিবেলাই স্বপ্নটা দেখেছে এটাও কি সত্যি হবে ? নিপা বাকী রাতটা ঘুমাতে পারেনি প্রতিটা মুহূর্তে সেই স্বপ্নের দেখার কথাটা তাকে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
পরের দিন
নিপা সবার কাছ থেকে বিদায় নেয়। কারণ স্বামী তাকে বলেছিলো সন্তান না হওয়ার পর্যন্ত সে আর বাপের বাড়িতে আর আসতে পারবে না। নিপাও আর কিছু বলেনি পরে স্বামীর সঙ্গে তার শ্বশুর বাড়িতে চলে যায়।
শ্বশুর বাড়িতে পা রাখতেই স্বামীর দুসম্পর্কের কাজিন মিলি ছুটে আসে তার নিপার কাছে।
নিপাও তাকে দেখে খুব অবাক হয় কারণ এক সময় মিলির সঙ্গেই তার স্বামীর বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু পরে কি কারণে বিয়েটা হয়নি পরে
সে এই বাড়ির বউ হয়ে আসে নিপা।
নিপা কিছু না বলে চলে যাই তার রুমে। কিছুক্ষণ পরে নিপার শাশুড়ি নিপার রুমে ঢুকে ছেলের সামনে অনেক কথা শুনাই। শাশুড়ি র অভিযোগ ছিলো-তুমি শ্বশুর শাশুড়ির কোনো খোঁজ খবর নিয়েছো তুমি ? নেওনি তো ? তারা কেমন আছে! আদৌ বেঁচে আছে কিনা মরে গেছে কোনো খবর তুমি রাখেছো ? রাখনি তো…… ছেলেকে আমার জাদুটোনা করে নিজের কাছে বশ করে রেখেছো তুমি ?
নিপা তখন কিচ্ছু বলেনি যেখানে তার স্বামী তাকে আগেই চুপ থাকতে বলেছিলো আসার পথে।
পরে
নিপার দিনকাল এভাবেই যাচ্ছিলো। নিপার শাশুড়ি এখন আর তর্কাতর্কি করে না নিপার বেশ যত্ন নেয়। কিন্তু নিপা তার শাশুড়ির এমন ব্যবহার দেখে যতটা খুশি হয় ঠিক ততটা সন্দেহ হয় তার কারণ মিলি এক মাস পর পর এসে তার শাশুড়ি মার সঙ্গে দরজা বন্ধ করে কি নিয়ে কথা বলতো কিন্তা নিপা কোনো ভাবেই বুঝে উঠতে পারে না তারা কি নিয়ে আলোচনা করছে। তখন নিপার সেই স্বপ্নের কথা মনে পড়ে যায়।
আজ নিপার প্রসব ব্যাথা উঠেছে ভোর রাত্রিবেলাই নিপার স্বামী তখন শহরে। নিপার চিৎকার শুনে শ্বশুর শাশুড়ি ছুটে আসে নিপার ঘরে। মিলিও ছিলো সেদিন। নিপার ব্যাথায় যন্ত্রণায় কাঁতরানো দেখে শাশুড়ি মিলি কে বলে ওষুধটা নিয়ে আসতে।
মিলি পানিতে মিশানো ওষুধটা এনে নিপার শাশুড়ি হাতে দেয়।
নিপা তখন বুঝে উঠতে পারছে না শাশুড়ি কি ওষুধ খাওয়াতে চাইছে ? নিপা ওষুধ খাবে না বলে আর তার শ্বশুর কে বলে তাকে হসপিটালে নিয়ে যেতে। নিপার কথা শুনে তার শাশুড়ি হুংকার করে চেঁচিয়ে অনেক কথা শুনাই। কিন্তু শাশুড়ি তাকে কোনো ছাড়ার পাত্র নয় জোর করে খাইয়ে দেয় নিপা কে ওষুধটা।
ওষুধ খাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর নিপা জোরে জোরে চিৎকার করতে লাগল। পেট যেনো তার জ্বলে যাচ্ছে।
নিপা চোখের পানি গড়িয়ে পরে গাল বেয়ে। ব্যাথায় যন্ত্রণায় নিপা জ্ঞান হারানোর পর ছেলে কে ফোন করে হসপিটালে আসতে বলে। নিপাকে তারা হসপিটালে নিয়ে যাই।
গাইনি ডাক্তার নিপাকে চেকাপ করে ওটিতে নিয়ে যাই। নিপাকে নিয়ে আসা হয় খুব গুরুতরো অবস্থায় যা নিপার বাঁচা মরা মাঝ পথে। নিপার সিরিয়াস অবস্থার কথা জানিয়ে দেয় নিপার স্বামী কে এই কথা বলে ডাক্তার চলে যাই ওটিতে।
দীর্ঘ দেড়ঘন্টার পর ডাক্তার ওটি থেকে বের হয়। নিপার স্বামী ডাক্তারের কাছে গেয়ে স্ত্রীর কথা জিজ্ঞেস করতেই ডাক্তার বলে “স্যরি, আমরা মা সন্তান কে বাঁচাতে পারেনি ”
ডাক্তারের কথা শুনে নিপার স্বামী সেখানেই ধপাস করে বসে পরে। ডুকরে কেঁদে উঠে নিপার স্বামী। ঐ দিকে নিপার শ্বশুর শাশুড়ি আর মিলি মিথ্যে সান্ত্বনা দেয়। মনে মনে এটাই চাইছিলো তারা। অনেক খুশি হয় নিপার মৃত্যুর খবরটা শুনে।
নিপার মৃত্যুর তিন মাস পর মায়ের জোরাজোরিতে নিপার স্বামী আবার বিয়ে করে মায়ের পছন্দের মেয়ে মিলির সাথে।
ফুলশয্যা রাত্রিতে মাঝরাত তখন।
নিপার স্বামী ঘুম ভাঙ্গে কারও করুণ কান্নার আর্তনাদ শুনে।
কান্নার আওয়াজটা অনুসরণ করে দেখে রুমের কর্ণারে মাথা নিচু করে কে যেনে কাঁদছে। কারেন্ট নেই তখন, রুমে আসা চাঁদের আলোতে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে।
ধীর পায়ে এগিয়ে কাছে যেতেই জিজ্ঞেস করে “কে তুমি ”
মাথাটা তুলে তাকাতেই নিপার স্বামী অবাক হয়ে মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসে “নিপা ”
নিপার স্বামী তখন হাউমাউ করে কেঁদে উঠে নিপাকে ধরতে যাবে ঠিক তখনেই চোখের পলকে অদৃশ্য হয়ে যায় নিপা। নিপাকে চোখের সামনে নাই হওয়া দেখে নিপার স্বামীর তখন চেঁচিয়ে নিপা নিপা বলে ডাকতে লাগল।
হঠাৎ পিছনে নিপার ডাক শুনে ঘুরে তাকায় সে। চেয়ে দেখে নিপা কাঁদছে। তার কাছে এগোতে যেতেই নিপা দরজা খুলে বাইরে চলে আসে। নিপার চলে যাওয়ার পথে পিছু পিছু যেতে লাগল নিপার স্বামী।
এদিকে বাচ্চা কান্নার আওয়াজ শুনে মিলির ঘুম ভাঙ্গে। চোখ কেচলিয়ে অবাক চোখে চেয়ে দেখে একটা বাচ্চা তার পাশে শুয়ে আছে আর ভীষণ জোরে চিৎকার করছে। মিলি তখন প্রচন্ড ভয় পেয়ে ওঠে, একে তো তার স্বামী পাশে নেই তার উপর এই শিশু বাচ্চাটা কোথা থেকে এলো বুঝতে পারছে না।
সাদা কাপড়ে ঢাকা শিশুটার চোখ মুখ কিছুই দেখতে পারছে না।
ভয়ে ভয়ে মিলি তখন সাদা কাপড়টা এক ঝটকায় সরিয়ে দিতেই মিলি জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে।
সাত সকালে নিপার শ্বশুর বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যাই। বাড়ি ভর্তি মানুষের মাঝে দুটি লাশ। একটা নিপার স্বামীর যে তাকে বাড়ির পিছনে গভীরজল কূঁপে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় আর মিলিকে পাওয়া যাই তারেই ফুলশয্যার ঘরে রক্তাক্ত মৃত অবস্থায়। মিলির পুরো শরীরের কামড়ানো দাগ আর গলার নিচে স্পষ্ট লেখা “শাস্তি”।
তখন কেউ বুঝতে পারেনি কে বা কারা তাদের কে মেরেছে কিন্তু কেউ না জানলেও নিপার শ্বশুর শাশুড়ি ঠিকেই জানে কে সব করেছে।
নিপাকে ষড়যন্ত্র করে মেরে ফেলার শাস্তি পেয়েছে সবাই কিন্তু নিপার স্বামী বাদে। কারণ নিপার স্বামী নিপার মৃত্যুর কথা নিপার মুখ থেকে সবকিছু জানার পর স্বইচ্ছে নিজেই সুসাইড করে। মিলির নৃশংসয় মৃত্যু আর এদিকে নিপার শাশুড়ি আজ পাগল ঘরে থাকে শিকল দিয়ে বেধে রাখতে হয়। নিপার শ্বশুর এখন মৃত্যু মুখে কঠিন রোগে ভোগছেন তিনি দুঃসম্পর্কের আত্মী তাদের দেখা শোনা করছে। কিন্তু মাঝরাত্রি হলেই শুনতে পাই বাচ্চা কান্নার আওয়াজ তার সঙ্গে নারী পুরুষের কন্ঠস্বর তারা যেনো বাচ্চাটার কান্না থামানো বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে।
তখন নিপার শাশুড়ি চিৎকার করে বলতে থাকে ” আমি ভুল করেছি আমায় ক্ষমা করো বউমা, তোমরা ফিরে আসো “………..