কলেজে যাওয়ার জন্য রেড়ি হচ্ছি এমন সময় আম্মু এসে বললো….

আম্মুঃ আজকে একটু তাড়াতাড়ি আসিস।

আমিঃ কেন?

আম্মুঃ তোকে নিয়ে আমার বান্ধবীর বাসায় যাবো।

আমিঃ তোমার বান্ধবীর বাসায় তুমি যাও। আমি গিয়ে কি করবো.?

আম্মুঃ আরে যাবো তো তোর জন্য। রাবেয়া (আম্মুর বান্ধবী) তোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছে।

আমিঃ আমার জন্য যাবে মানে?

আম্মুঃ হুম, তোর জন্য মেয়ে দেখতে যাবো।

আমিঃ তুমি কি পাগল হইছো, মেয়ে দেখবা মানে?

আম্মুঃ হুম, আমি আর রাবেয়া একে অপরকে কথা দিয়েছিলাম, আমাদের ছেলে মেয়েকে একসাথে বিয়ে দিয়ে আমাদের সম্পর্কটা আরো গভীর করবো।

আমিঃ বাহ! নিজেদের জন্য আমাকে কেন বলি দিচ্ছো?

আম্মুঃ তুই ছাড়া আমার আর কোনো ছেলে আছে নাকি? থাকলে তো তাকেই দিতাম।

আমিঃ কিন্তু এটা কেমনে সম্ভব? আমি এখনো তোমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে পকেট চালাই। বৌকে কি খাওয়াবো?

আম্মুঃ তুই যে কি রোজগার করে খাওয়াবি সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি। খাওয়ার চিন্তা তোর করা লাগবে না। কিন্তু….

আমিঃ কিন্তু কি?

আম্মুঃ মেয়ে তোর থেকে ১ বছরের বড়।

আমিঃ কিহ! বড় মানে?

আম্মুঃ হুম বড়।

আমিঃ এই আম্মু তোমার মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে? এমনিতে আমাকে না জানিয়ে বিয়ে ঠিক করছো, এখন আবার বলো মেয়ে আমার থেকে সিনিয়র।

আম্মুঃ তো সমস্যা কি?

আমিঃ সমস্যা কি মানে? আরে ছেলেরা সব সময় তাদের থেকে জুনিয়র মেয়ে বিয়ে করে, এটাই সমাজের নিয়ম।

আম্মুঃ কোনো হাদিসে লেখা আছে যে সিনিয়র মেয়ে বিয়ে করা যাবে না?

আমিঃ দেখো আম্মু এটা পসিবল না। আজকে যদি মেয়ে আমার থেকে ছোট হতো তাহলে বিয়ের কথা চিন্তা করতাম।

আম্মুঃ আরে আমরা তো মনে করছিলাম আমার মেয়ে হবে আর রাবেয়ার ছেলে হবে। কিন্তু উলটো হয়ে গেলো। রাবেয়ার আগে মেয়ে হয়ে গেলো। তারপর তুই জন্ম নিলি। যদি রাবেয়ার ছোট কোনো মেয়ে থাকতো তাহলে তার সাথেই তোর বিয়ে দিতাম। কিন্তু এখন তো রাবেয়ার একটাই মেয়ে। তাই তোকে তাকেই বিয়ে করতে হবে।

আমিঃ এই আম্মু তুমি মানুষ? নিজের ছেলের সাথে কেউ এমন করে?

আম্মুঃ মেয়েটা অনেক ভালো। দেখতেও মাশাল্লা, তুই একবার তাকিয়ে আর চোখ ফিরাইতে পারবি না। অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ে.

আমিঃ কিহ! ৩য় বর্ষ মানে???

আম্মুঃ হুম। ৩য় বর্ষে পড়ে।

আমিঃ এই আম্মু তুমি কি মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে গেছো? মেয়েটা আমার থেকে ২ ক্লাস সিনিয়র আর বয়সে ১ বছরের সিনিয়র। এটা কেমনে সম্ভব? লোকজন আমাকে কি বলবে?

আম্মুঃ যার যেটা ইচ্ছা সেটা বলুক। তুই আজকে তাড়াতাড়ি বাসায় আসবি।

আমিঃ কিন্তু আম্মু…. (পুরোটা না শোনার আগেই চলে গেলো)

ধুর শালা, মেজাজটাই খারাপ করে দিলো। হায়রে বন্ধুরা আমাকে কি বলবে?

বলবে যে আমি একটা বুড়িকে বিয়ে করছি। হায় আল্লাহ উঠায় নাও আমারে।

চলেন কলেজে যেতে যেতে আপনাদের পরিচয় টা দিয়ে দিই। আমি জুয়েল, আপাতত স্টুডেন্ট। বাকীটা গল্প পড়তে পড়তে জেনে যাবেন।

কলেজে গিয়ে মনমরা হয়ে বসে আছি, এমন সময় আসলো ২ হারামি…

আয়মানঃ কিরে ফকিন্নি! একা একা বসে আছিস কেন?

সানিঃ কি মামা চ্যাকা খাইলি নাকি?

আমিঃ এই হারামীর দল, চুপ থাক। এমনিতেই টেনশনে আছি।

আয়মানঃ কেন, কি হইছে?

আমিঃ আম্মু বিয়া ঠিক করছে, বিকালে মেয়ে দেখতে যাবে।

সানিঃ আরে মামা তোর লাক অনেক ভালো, প্রেমটেম ছাড়া ডাইরেক্ট বিয়ে! ট্রিট দিস দোস্ত।

আমিঃ তোর বা* দিমু শালা। মেয়েটা আমার থেকে সিনিয়র।

আয়মানঃ বাহ! সব কিছুতো ভালোই হচ্ছে। তুই তো সিনিয়র মেয়ে বেশি পছন্দ করিস। তোর জন্য ভালো হবে।

আমিঃ আরে হারামখোর সিনিয়র পছন্দ করি ঠিক আছে, তারমানে এই নয় যে সিনিয়র কাওকে বিয়ে করবো।

সানিঃ হালারপুত তামান্না আপুর পিছনে পিছনে ঘুরতি যে ভুলে গেলি? উনি সিনিয়র না.??

আমিঃ ধুর তামান্নার সাথে অন্য কাওকে মিলাবি না। তামান্না হলে তো কথাই ছিলো না।

আয়মানঃ কেন? তামান্নার মধ্যে কি আছে?

আমিঃ চুপ কর শালা, এখন একটা বুদ্ধি দে। কি করে বিয়েটা বন্ধ করা যায়।

সানিঃ মেয়েটা কেমন?

আমিঃ দেখিনি এখনো।

আয়মানঃ আগে দেখে আয়, মেয়েটা দেখ। তোর পছন্দ হলে করিস নাহলে করিস না।

আমিঃ কিন্তু আম্মু তো ওর সাথেই বিয়ে দিবে!

সানিঃ আরে তুই আগে দেখে আয়, সুন্দর হলে আমাকে বলিস। আমি নিজেই করবো, আমারও অনেক ইচ্ছা সিনিয়র কাওকে আদর করা।

আমিঃ এই তুই মানুষ? সালা আমি আছি আমার টেনশনে আর তুই মজা নিচ্ছিস?

সানিঃ মজা না সত্যি। আগে দেখে আয়, বাকীটা পরে দেখা যাবে।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে দেখি কি করা যায়।

এরপর ৩ জনে মিলে একসাথে ক্লাসে চলে গেলাম। আমি ২ টা ক্লাস করে বাসায় আসলাম।

দেখি আম্মু কার সাথে হেসেহেসে কথা বলছে, আমাকে দেখে বললো….

আম্মুঃ ওই তাড়াতাড়ি কর, তোর হবু শাশুড়ি কল দিয়েছে।

বুঝতে আর দেরি হলো না আম্মু কার সাথে কথা বলছে। এদিকে রাগে আমার পুরো শরীর জ্বলে যাচ্ছে।

যাইহোক খাওয়া দাওয়া করে রেড়ি হয়ে একটা CNG করে রাবেয়া আন্টিদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

১ ঘন্টা পর একটা বাসার সামনে গিয়ে গাড়ি থামলো, আমি আর আম্মু ভিতরে গেলাম। আম্মুকে দেখে একটা মহিলা এসে জড়িয়ে ধরে মরা কান্না কাঁদতে শুরু করলো, এদিকে রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে।

মহিলাদের এতো আবেগ কোথায় থেকে আসে কে জানে, এই দেখলাম ভালো, এখন দেখি আবার কান্না করছে। আমাকে তো শালা বোমা মারলেও কান্না আসবে না।

যাইহোক একটু পর রাবেয়া আন্টি আমার দিকে তাকালো, আম্মু ইশারায় আমাকে সালাম দিতে বললো। আমি সালাম দিলাম। আমার কাছে এসে বললো…

আন্টিঃ এই সুফিয়া (আম্মুর নাম) এটা তোর ছেলে নাকি?

আম্মুঃ হুম, তোর হবু জামাই।

আন্টিঃ আল্লাহ কতো বড় হয়ে গেছে। জানো বাবা তোমাকে সেই ছোট্ট বেলায় দেখেছি। কতো হিসু করছো আমার কোলে তার কোনো হিসাব নাই।

যাহ! কথা বলছি এখানে আর উনি চলেন গেলেন কোথায় হিসু করছি, কোথায় হাগু করছি। হায়রে আল্লাহ উঠায় নাও আমারে।

যাইহোক আমি সোফা রুমে গিয়ে বসলাম, আম্মু আর রাবেয়া আন্টি কথা বলতে বলতে উপরে চলে গেলো।

একটু পর আম্মু নিচে আসলো, এসে আমাকে বললো…

আম্মুঃ এই মুখ এমন করে রাখছিস কেন? একটু হাসিখুশি থাক।

আমিঃ হায়রে আম্মু বুঝলানা তুমি, আমার কান্না আসছে।

আম্মুঃ চুপ কর। একটু পর বৌ আসবে তোর সামনে।

প্রায় ৪৫ মিনিট বসে আছি, মহারানীর আসার কোনো খবর নাই।

অবশেষে আসলো, মহারানীকে দেখেই……

অবশেষে আসলো, মহারানীকে দেখেই আমি তো পুরা টাস্কি খেয়ে গেলাম। আরে এটাতো তামান্না আপু।

যার পিছনে পিছনে আমি এতোদিন ঘুরাঘুরি করেছি। তারমানে তামান্নাই রাবেয়া আন্টির মেয়ে। আহ! তামান্না আমার বউ হবে। এ যেন মেঘ না চাইতে বৃষ্টি পাওয়ার মতো।

যাইহোক তামান্না একটা শাড়ী পড়ে এসেছে, দেখেই আমি হা করে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।

আমার এমন হা করে তাকিয়ে থাকা দেখে আম্মু আমাকে একটা টোকা দিলো, তারপর বাস্তবে ফিরে আসলাম।

তামান্না এসে আমাকে চা দিলো, আমার মনের ভিতর তো তখন লাড্ডু ফুটছে। বিদ্যা বালানের গানটা মনের ভিতর বাজতেছে

“উলালা উলালা তুহি মেরেই ফ্যান্টাসি “”

তামান্না এসে আম্মু সালাম দিয়ে ভিতরে চলে গেলো। আমিও সোফায় বসে রইলাম।

আম্মু অনেকক্ষণ রাবেয়া আন্টির সাথে বসে বসে গল্প করলো। তারপর বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে বাসায় চলে আসলাম।

বাসায় এসে আমি সানি আর আয়মানকে গ্রুপ কল দিলাম….

আমিঃ এই হারামীর দল কোথায় তোরা?

আয়মানঃ কেন কি হইছে?

আমিঃ সেটা পরে বলবো, তাড়াতাড়ি রেস্টুরেন্টে আয়, তোদের ট্রিট দিবো।

ট্রিটের কথা শুনে দুজনেই লেজ উঠিয়ে চলে আসলো। সন্ধ্যায় ওদের সাথে রেস্টুরেন্ট এ গেলাম।

সানিঃ মামা ঘটনা কি হঠাৎ করে ট্রিট!

আমিঃ দোস্ত কাম তো হয়ে গেছে।

আয়মানঃ কি মেয়ে পছন্দ হইছে নাকি?

আমিঃ হুম, ঠিক বলছিস।

সানিঃ তুই না বললি এই বিয়েটা তুই করবি না।

আমিঃ আরে সেটাতো আগে বলেছিলাম। কিন্তু পাত্রিক দেখার পর সব ঠিক হয়ে গেছে।

আয়মানঃ তা পাত্রী টা কে?

আমিঃ তোদের তামান্না আপু!

সানিঃ আমাকে ক্যাম্পাসের তামান্না আপু নাকি? যার জন্য তুই কুত্তার মতো পিছন পিছন হাটতি।

আমিঃ এই সালারপুর চুপ কর, আমি কারো পিছনে ঘুরি নাই। আর হে সেই তামান্নাই আম্মুর বান্ধবীর মেয়ে।

আয়মানঃ সিরিয়াসলি! দোস্ত এই তো মেঘ না চাইতে বৃষ্টি আসার মতো।

আমিঃ হুম, আজকে যা ইচ্ছা খেয়ে নে। টাকা আমি দিমু।

সানিঃ তো বিয়ে কখন?

আমিঃ আগামী শুক্রবার। কালকে থেকে কেনাকাটা শুরু, তোরা কেউ আর ক্লাসে যাস না এই সপ্তাহ। কাজ আছে,,

এরপর ওদের ট্রিট দিয়ে বাসায় চলে আসলাম। কিছুতেই ঘুম আসছে না, ভাবছি তামান্নাকে কল দিয়ে কিছুক্ষণ প্রেম করবো।

না থাক বিয়ের পর চুটিয়ে প্রেম করা যাবে, এই কয়েকদিন একটু পার্ট নিয়ে থাকি।

পরের দিন সবাই মিলে কেনাকাটা শেষ করলাম। আস্তে আস্তে বাসায় মেহমান আসতে শুরু করছে। আম্মু সবাইকে ইনভাইট করে দিছে।

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসলো, সবাই অনেজ ব্যস্ত। আমিও মোটামুটি ব্যস্ত ছিলাম।

অবশেষেঃ বিয়েটা হয়ে গেলো, আমি সানি আর আয়মান ছাদে বসে বসে গল্প করছি। এদিকে তামান্না বাসরঘরে বসে আমার জন্য ওয়েট করছে।

আমার তো আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছা করছে না, কিন্তু ২ হারামী আমাকে যেতে দিচ্ছে না।

রাত প্রায় ১২.০০ টা, আমি তখনও ছাদে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছি এমন সময় আম্মু আসলো….

আম্মুঃ কিরে তুই এখনো বসে আছিস যে?

আমিঃ তো কি করবো?

আম্মুঃ কি করবি মানে? যা ঘরে যা। মেয়েটা সেই কখন থেকে একা একা বসে আছে।

সানিঃ আন্টি আমরা ও কে অনেক বার বলেছি কিন্তু ও আমাদের কথা শুনছে না। (পুরোটা মিথ্যা)

আমি সানির কথা শুনে ওর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম, তখন আম্মু বললো…

আম্মুঃ যা তাড়াতাড়ি ঘরে যা।

আমিঃ ঠিক আছে যাচ্ছি। তুমি নিচে যাও।

একটুপর আম্মু চলে গেলো, আমি সানিকে একটা লাথি দিয়ে বললাম….

আমিঃ এই হারামখোর তুই আমাকে অনেক যেতে বলেছিস? শালা তোর জন্য আমি যেতে পারছিনা আর তুই বলছিস আমাকে যেতে বলেছিস।

সানিঃ আরে মামা রাগ করস কেন? আন্টি একটু পাম দিলাম আরকি।

আয়মানঃ আচ্ছা ঠিক আছে তুই যা।

আমিঃ ওকে যাচ্ছি। দোয়া করিস।

সানিঃ এই শোন,,,

আমিঃ হুম বল।

সানিঃ মনে বিড়াল মারিস, তোর ক্ষমতা দেখিয়ে দিবি। নাহলে পুরুষ জাতি তোরে ধিক্কার দিবে।

আমিঃ চুপ কর, আমি যাচ্ছি।

সানিঃ আচ্ছা ঠিক আছে যা। যদি বেঁচে থাকিস তাহলে কাল দেখা হবে।

আমি একটা হাসি দিয়ে নিচে চলে আসলাম।

বাসরঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, কেমন জানি ভয় লাগছে আবার লজ্জাও। আহারে নিজের ঘরে নিজে যাবো আর সেখানেই ভয় লাগছে।

১ কেজি সাহস নিয়ে দরজাটা খুললাম, ভিতরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম।

দেখলাম তামান্না মোবাইলে কার সাথে কথা বলছে, আমাকে দেখেই মোবাইলটা রেখে দিয়ে চোরের মতো হয়ে গেলো। মোবাইলটা রেখে দিলো।

আমি গিয়ে সামনে দাঁড়ালাম, ভাবছি সে হয়তো সালাম করবে, অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর দেখলাম সে এখনো বসে আছে।

আমি মনে করছি আমি তার জুনিয়র তাই হয়তো সালাম করতে লজ্জা লাগছে বা করবে না।

থাক করা লাগবে না, একটা সালাম আর কিছু যায় আসেনা।

আমি গিয়ে খাটের উপর বসলাম, তখন তামান্না বললো….

তামান্নাঃ তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।

বাহ! শুরুতেই তুই। আমি বললাম…

আমিঃ কি কথা বলেন।

তামান্নাঃ আমি তোকে স্বামী হিসেবে মানতে পারবো না।

মুহূর্তেই যেন আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যেতে লাগলো, নিজেকে শক্ত করে বললাম….

আমিঃ কেন পারবেন না? আর সে কথা বিয়ের আগে বলেন নি কেন?

তামান্নাঃ বলিনি কারণ আম্মুর কথার উপর আমি কোনো কথা বলতে পারবো না, তাছাড়া বাবা অসুস্থ, এখন যদি আমি বিয়েতে না করি তাহলে বাবা হয়তো আরো বেশি অসুস্থ হয়ে যাবে।

আমিঃ আপনার বাবা মায়ের কথা চিন্তা করে আপনি আমার লাইফটা নষ্ট করে দিলেন কেন? আপনার যদি বিয়েতে মত না থাকতো আপনার বাবা মাকে বলতেন।

তামান্নাঃ বলে কোনো লাভ হবে না, ওরা কিছুতেই আমার কথা শুনবে না।

আমিঃ আমাকে বলতেন, আমি আম্মুকে বলে দিতাম যে আপনাকে আমার পছন্দ হয়নি।

তামান্নাঃ আমি রাসেদকেও অনেক বার বলেছি পালিয়ে যাওয়ার জন্য কিন্তু ও এখন নাকি কিছু করতে পারবে না। কিছুদিন সময় লাগবে।

আমিঃ রাসেদ কে?

তামান্নাঃ আমার বয়ফ্রেন্ড (মাথা নিচু করে)

আমিঃ তো এখন আপনি কি চান?

তামান্নাঃ ডিভোর্স।

কথাটা শুনে বুকের ভিতরটা কেমন জেন কেঁদে উঠলো।

আমিঃ ডিভোর্স তো আর বললেই হয়ে যাবে না, কমপক্ষে ৬ মাস একসাথে থাকতে হবে।

তামান্নাঃ কিহ ৬ মাস! তোকে তো আমার ১ সেকেন্ডও সহ্য হয়না।

আমিঃ ডিভোর্স পেতে হলে ৬ মাস সহ্য করতে হবে।

তামান্নাঃ আচ্ছা ঠিক আছে। আর হে আরেকটা কথা…

আমিঃ কি?

তামান্নাঃ এই ৬ মাস কোনো ভাবেই আমার উপর স্বামীর অধিকার খাটাতে আসবি না।

আমিঃ ওকে। এই ৬ মাস সবার সামনে অন্তত বউ এর মতো থাকবেন। মা যদি জানতে পারে অনেক কষ্ট পাবে। আর আমি মায়ের কষ্ট সহ্য করতে পারি না।

তামান্নাঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

তারপর আমি রুম থেকে চলে যাচ্ছি এমন সময় তামান্না আবার ডাক দিলো….

তামান্নাঃ এই কই যাস?

আমিঃ বাইরে। এখানে থেকে কি করবো?

তামান্নাঃ না তুই বাইরে যাবি না।

আমিঃ কেন?

তামান্না; বাইরে গেলে সবাই সব কিছু বুঝে যাবে।

বাহ বুদ্ধি আছে। এরপর আমি খাটে ঘুমাতে যাবো এমন সময় তামান্না আবারো চিৎকার দিয়ে ডাক দিলো।

তামান্নাঃ এই কি করছিস?

আমিঃ কেন ঘুমাবো!

তামান্নাঃ তো খাটে কেন?

আমিঃ তাহলে কোথায় ঘুমাবো?

তামান্নাঃ তুই খাটে ঘুমাতে পারবি না। সোফায় ঘুমা,,,

আমিঃ কেন খাটে ঘুমালে সমস্যা কি?

তামান্নাঃ বললাম না, তোকে স্বামিনী হিসেবে মানি না, তাহলে খাটে ঘুমাবি কেন?

আমি আর কিছু না বলে একটা বালিস সোফায় রেখে বারান্দায় চলে গেলাম।

ভাবতে লাগলাম, কোন অপরাধের কারনে আল্লাহ এতো শাস্তি দিচ্ছে আমাকে। বাইরে তাকিয়ে দেখি সবাই ব্যস্ত। বাবুর্চিরা এদিক ওদিক ঘুরছে। আম্মুও সবার সাথে বসে বসে গল্প করছে।

কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে আবার রুমে চলে আসলাম। দেখি তামান্না কার সাথে মোবাইলে কথা বলছে।

আমাকে দেখে আবার মোবাইল রেখে দিলো। আমি লাইট বন্ধ করে ঘুমাতে যাবো এমন সময় তামান্না আবারো ডাক দিলো…

তামান্নাঃ কিরে লাইট কেন অফ করছিস?

আমিঃ তো লাইট জ্বালিয়ে কেউ ঘুমায় নাকি?

তামান্নাঃ আমি তোকে বিশ্বাস করতে পারছি না। তুই লাইট দে।

ধুর এই রুমেই থাকবো না।

তামান্নাঃ এই কই যাস?

আমিঃ জাহান্নামে! আপনি তো আমাকে বিশ্বাস করছেন না। এখানে থেকে কি করবো?

তামান্নাঃ আচ্ছা ড্রিম লাইটটা জ্বালিয়ে রাখ।

আমি আর কিছু না বলে ড্রিম লাইট টা জ্বালিয়ে সোফায় ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে ঘুম ভাঙ্গলো তামান্নার মায়াবী মুখটা দেখে। আহ! কি সুন্দর লাগছে।

দেখে মনে হচ্ছে নিষ্পাপ একটা শিশু ঘুমিয়ে আছে। হুমায়ন আহমেদ বলেছিলো যে মেয়েকে ঘুমন্ত অবস্থায় সুন্দর দেখায় সেই প্রকৃত সুন্দর।

তামান্নাও সেই হুমায়ন আহমেদের অজানা সুন্দীয় নারী।

কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর ওর ঘুমটা ভেঙ্গে যায়।

তারপরেই…..

কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর ওর ঘুমটা ভেঙ্গে যায়, আমাকে দেখার আগেই আমি আবার ঘুমের ভাব ধরে সোফায় শুয়ে রইলাম। তামান্না উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

আমিও উঠে নাস্তা করে বাইরে চলে গেলাম, সানি আর আয়মানকে গত কাল রাতের ঘটনা গুলো খুলে বললাম…

সানিঃ সত্যিই তামান্না তোর কাছে ডিভোর্স চাইছে?

আমিঃ তো আমি কি মিথ্যা বলছি?

আয়মানঃ তো এখন কি করবি?

আমিঃ দেখা যাক, ডিভোর্স দেওয়া ছাড়া আর কোনো অপশন নাই। তোদের কোনো উকিল পরিচিত আছে?

সানিঃ হুম আমার কাকা আছে।

আমিঃ আচ্ছা আমি তোকে সব কাগজ পত্র দিবো, তুই তোর কাকার সাথে কথা বলে রাখিস।

সানিঃ ওকে, চল এখন মন খারাপ করে বসে থেকে লাভ নাই। একটু ঘুরে আসি।

আয়মানঃ হুম ও ঠিক বলছে।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে চল।

সারাদিন ওদের সাথে ঘুরাঘুরি করে রাত ৯.০০ টায় বাসায় ফিরলাম। দেখি আব্বু আম্মু সবাই রেগে আগুন হয়ে আছে।

বাবাঃ কিরে তুই সারা দিন কোথায় ছিলি?

আমিঃ এই তো সানি আর আয়মানের সাথে।

আম্মুঃ মোবাইল ধরিস নি কেন?

আমিঃ সাইলেন্স ছিলো।

বাবাঃ তোর মধ্যে কি কোনো সেন্স নাই, বাসায় নতুন বউ রেখে বাইরে ঘুরতে লজ্জা করে না?

আমিঃ এমন বউ দিয়েছো যে আমার লাইফটাই শেষ করে দিলো (আস্তে বললাম)

বাবাঃ কি বললি?

আমিঃ কিছুনা।

আম্মুঃ খেতে আয়।

আমিঃ খাবো না, বাইরে থেকে খেয়ে আসছি।

আর কোনো কথা না বলে সোজা রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি তামান্না কার সাথে মোবাইলে কথা বলছে, আমাকে দেখে মোবাইলটা রেখে দিলো,, ওর এসব কান্ড দেখে মাথায় পুরো রক্ত উঠে গেলো, আমাকে বললো…

তামান্নাঃ এই ডিভোর্স এর ব্যাপারে কিছু করেছিস?

আমিঃ উকিলের সাথে কথা হইছে, অন্তত ৬ মাস একসাথে থাকতে হবে।

তামান্নাঃ তোরে তো আমার ১ সেকেন্ডও সহ্য হয় না।

আমিঃ না হলে এখানে আছেন কেন? চলে যান এখান থেকে। এতোই যখন তাড়া বিয়ে কেন করেছেন?

তামান্নাঃ তোকে বিয়ে করতে তো আমার বয়েই গেছে, নিজেকে কখনো আয়নায় দেখেছিস? তোর সাথে আমার যায়?

আমিঃ ভদ্র ভাবে কথা বলুন, এটা আমার বাসা আপনার নয়।

তামান্নাঃ তোর বাসা দেখে আমাকে ধমকাচ্ছিস? লজ্জা হওয়া উচিত তোর।

ধুর ভালো লাগে না, কেন যে এই ফালতু মেয়েকে বিয়ে করতে গেলাম কে জানে। রুম থেকে বের হয়ে সোজা ছাদে চলে গেলাম।

ছাদে অনেকক্ষণ বসে থাকার পর রুমে আসলাম, তখনও দেখলাম তামান্না কার সাথে যেন কথা বলছে। আমাকে দেখে আরো হেসে কথা বলছে,,,

কিছু না বলে বালিশ নিয়ে সোফায় ঘুমিয়ে পড়লাম, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি তামান্না বিছানায় নেই, মনে হয় ওয়াশরুমে গেছে। মোবাইলটা টেবিলের উপর রাখা।

আমি তাড়াতাড়ি উঠে মোবাইলটা নিলাম, বাহ! লক করা নেই। সাথে সাথে মেসেজ গুলো দেখতে লাগলাম, মেসেজ দেখে আমার পুরো মাথা খারাপ হয়ে আছে।

আমি নাম্বারটা নিয়ে নিলাম, দরজার আওয়াজ শুনলাম মনে তামান্না আসছে আমি মোবাইলটা রেখে তাড়াতাড়ি বাইরে চলে গেলাম।

এভাবেই তামান্না আর আমার দিন গুলো চলতে লাগলো, আমি কলেজে যাওয়া শুরু করলাম।

পরেরদিন থেকে তামান্নাও যায়, আম্মু বলছে দুজনকে একসাথে যাওয়ার জন্য, কিন্তু তামান্না আমাকে পার্সোনালি নিষেধ করে দিয়েছে। সে আমার সাথে যাবে না।

সেদিন ক্লাস শেষ করে আমি বাইরে এসে দেখি তামান্না তার বন্ধুদের সাথে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে আর হাসাহাসি করছে, দেখেই রাগ হতে শুরু করলো, আমি কাছে গেলাম…

আমিঃ চলেন…

তামান্নাঃ কোথায়?

আমিঃ বাসায়।

তামান্নাঃ আমি তোর সাথে যাবো না, তুই যা।

তুই বলার কারনে সবাই হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমিঃ আম্মু বলেছে আপনাকে সাথে করে নিয়ে যেতে।

তামান্নাঃ ওই কুত্তা তোরে না বলছি আমার উপর স্বামীর অধিকার খাটাতে আসবি না। যাহ তুই তোর মাকে নিয়ে থাক।

আমিঃ মাকে নিয়ে কোনো বাজে কথা বলবেন না।

তামান্নাঃ বললে কি করবি?

আমিঃ আপনি বাসায় চলুন।

এ কথা বলে আমি ওর হাতটা ধরে টানতে চাইছি, এমন সময় ঠাসসস,,,
আমার গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো,,,,,,,,,,

তামান্নাঃ তোর সাহস কি করে হয় আমার হাত ধরার? বেহায়া কোথাকার।

এ কথা বলে তামান্না উঠে চলে গেলো, আমি গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। পুরো ক্যাম্পাসের ছাত্র/ছাত্রী আমার দিকে তাকিয়ে আছে। লজ্জায় মাথা কাটা গেলো।

আমি আর দাঁড়িয়ে না থেকে একটা পার্কের পাশে এসে বসে রইলাম, এমন সময় তামান্নার মোবাইকে থেকে নেওয়া নাম্বারটার কথা মনে হলো,

চিন্তা করলাম কল দিবো, কিন্তু না দিলাম না। নাম্বার টা save করে নিলাম, ইমোতে কানেক্ট হওয়ার পর প্রোপাইলের ছবি টা দেখলাম।

একটুয়া সুন্দর হ্যান্ডসাম ছেলে বাইকের উপর বসে আছে, মনে হয় এই ছেলের সাথেই তামান্নার রিলেশন চলছে।

ছেলেটাকে দেখে কেমন যেন মনে হলো play boy. আমি ছবি টা নিয়ে আমাদের বন্ধুদের গ্রুপে দিলাম আর বললাম ” এই ছেলেকে দেখার সাথে সাথেই আমাকে কল দিতে”

তারপর ওখানে আরো কিছুক্ষণ থেকে বাসায় চলে গেলাম। বাসায় যাওয়ার সাথে সাথেই আম্মু এসে ঠাসস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো, আমি আবুলের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম।

আমিঃ মারলে কেন?

আম্মুঃ বেশ করেছি, তোকে আরো মারা উচিত।

আমিঃ কেন কি করেছি আমি?

আম্মুঃ লজ্জা করে না তোর বাসায় বউ রেখে অন্য মেয়ে নিয়ে পার্কে ঘুরতে?

আমিঃ মানে! কে বলেছে এসব?

আম্মুঃ তামান্না তোকে আর একটা মেয়েকে একসাথে দেখেনি? তোকে নিষেধ করার কারণে তুই তামান্নাকে সবার সামনে মেরেছিস?

শুনেই আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো,,,

আমিঃ আম্মু আমার কথাটা শুনো,,

আম্মুঃ চুপ কর, আমাকে আম্মু বলবি না। আমি কোনো দিন চিন্তাও করিনি তুই এতো খারাপ হয়ে যাবি।

আমিঃ আম্মু সব কিছু মিথ্যা।

আম্মুঃ আমি জানি, তুই যা আমার চোখের সামনে থেকে। তোকে যেন আর না দেখি।

ধুর কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠলাম কে জানে, অপরাধ না করেই অপরাধী হয়ে গেলাম। নিজেও মা ও বিশ্বাস করছে না।

ব্যাগটা নিয়ে বাইরে চলে গেলাম, অনেকক্ষন বসে থাকার পর দেখলাম রাত অনেক বেশি হয়ে গেছে। বাসায় না গিয়ে সানির বাসায় চলে গেলাম….

সানিঃ কিরে রাতের বেলা তুই এখানে?

আমিঃ কেন সমস্যা হচ্ছে নাকি? হলে বল চলে যাচ্ছি।

সানিঃ আরে পাগল নাকি কিসের সমস্যা, তোকে তো জোর করেও নিয়ে আসা যায়। কিন্তু নিজে থেকে আসলি তাও রাতের বেলায় তাই জিজ্ঞেস করলাম। আচ্ছা বাদ দে ভিতরে আয়।

ভিতরে যাওয়ার পর ওর আব্বু আম্মুকে সালাম ওর রুমে চলে গেলাম, ফ্রেশ হয়ে আসলাম দেখি আব্বু বার বার কল দিচ্ছে। আমি কেটে দিয়ে সুইচ অফ করে দিলাম।

সানির আম্মু এসে খাওয়ার জন্য ডাকতে লাগলো, দুজনে গিয়ে খেয়ে আসলাম, সানি বললো…

সানিঃ এবার বল কাহিনী কি?

আমি পুরো ঘটনাটা সানির সাথে শেয়ার করলাম, সানি বললো…

সানিঃ তাহলে এই ব্যাপার।

আমিঃ আচ্ছা তোর কাকার সাথে ডিভোর্স এর ব্যাপারে কথা বলেছিস?

সানিঃ হুম, কিছু দিনের মধ্যে ডিভোর্স পেপার চলে আসবে।

আমিঃ তুই একটু বলিস যেন তাড়াতাড়ি দিয়ে দেয়।

সানিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

তারপর সানির সাথে ঘুমিয়ে পড়লাম।

পরের দিন সানিদের বাসা থেকে সরাসরি কলেজে চলে গেলাম। ক্লাস করতে ভালো লাগছে না।

তাই বাইরে এসে আমি সানি আর আয়মান গাছ তলায় বসে আছি। দেখলাম তামান্না একটা ছেলের সাথে বাইকে করে কলেজে আসছে। বাইক থেকে নেমে ছেলেটার হাত ধরে উপরে যেতে লাগলো।

দেখেই আমার মাথা খারাপ হয়ে গেলো, আরে সেতো এখনো আমার বউ, ডিভোর্স হওয়ার পর সে যা ইচ্ছা করুক কিন্তু এখন কেন? রাগে আমার লোম দাঁড়িয়ে গেলো।

তারপর আমি উঠে তামান্নার কাছে যেতে লাগলাম…

সানিঃ কিরে কই যাস?

আমিঃ তোরা দাঁড়া, আমি আসছি।

আয়মানঃ দাঁড়া আমরাও আসছি।

তারপর ৩ জনে মিলে তামান্নার সামনে গেলাম। তারপরেই…..

তারপর ৩ জনে মিলে তামান্নার সামনে গেলাম,,,

আমিঃ আপনি এই ছেলেটার হাত ধরেছেন কেন?

তামান্নাঃ সেটা কি তোকে বলতে হবে?

আমিঃ অবশ্যই, ভুলে যাবেন না আমি আপনার স্বামী।

তামান্নাঃ তোকে আমি স্বামী হিসেবে মানি না। তোকে না বলেছি আমার উপর অধিকার খাটাতে আসবি না।

আমিঃ আপনি না মানলে কিছু করার নাই, আপনি এখনো আমার স্ত্রী। আমাদের এখনো ডিভোর্স হয়নি। সো আপনাকে আমার কথা মতো চলতে হবে।

তামান্নাঃ যদি না চলি? কি করবি?

আমিঃ দেখবেন কি করবো?

তামান্নাঃ কি করবি তুই দেখা।

আমি আস্তে আস্তে তামান্নার কাছে যেতে লাগলাম আর সে পিছাতে লাগলো, আমি তামান্নার সামনে গিয়ে তামান্নার পাশে থাকা ছেলেটা একটা ঘুষি মারি।

আমার কর্মকাণ্ড দেখে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। ছেলেটার কলার ছেপে ধরলাম…

আমিঃ এই হালারপুত কি নাম তোর? লজ্জা করেনা অন্যের বউয়ের সাথে প্রেম করতে?

ছেলেঃ তুই জানিস আমি কে?

আমিঃ তুই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হলেও আমার দেখার টাইম নাই, তোকে যদি তামান্নার সাথে দেখি তোর খবর আছে।

ছেলেঃ দেখ তোর কি হাল করি।

সাথে সাথে মোবাইলটা বের করে কাকে যেন কল দিতে চাইছিলো, আমি মোবাইলটা নিয়ে আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেললাম তারপর ছেলেটাকে আরো একটা ঘুষি দিলাম। ঠোট কেটে রক্ত বের হচ্ছে।

সানি আর আয়মান এসে আমাকে টেনে নিয়ে গেলো। তামান্না আর রেগে যাওয়া দেখে ভয়ে কাঁপতে লাগলো।

সানি আর আয়মানের সাথে নিচে চলে আসলাম। কলেজের পেছনে গিয়ে অনেকক্ষণ বসে রইলাম। কিছুই ভালো লাগছে না।

কলেজ ছুটি হয়ে গেছে। সানি আমি আর আয়মান বসে রইলাম।। অনেকক্ষণ পর আমরাও উঠে হাটা দিলাম। পরে সানি আর আয়মানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম। ওরাও ওদের বাসায় চলে গেলো।

দুপুরবেলা রাস্তায় মানুষ জন খুব একটা বেশি নাই, একেবারে নেই বললেই চলে।

খেয়াল করে দেখলাম ২ ছেলে সিগারেট টানতে টানতে আমার পিছনে আস্তে লাগলো, আরেকটু যাওয়া পর আর ৪ জন একটা গলি থেকে বের হয়ে আসলো।

দেখতে মাস্তান টাইপের, আমার পিছু পিছু আস্তে লাগলো।

হঠাৎ করে একটা ছেলে পেছন থেকে আমার ঘাড়ের উপর হাত দিয়ে চাপ দেয়, আমি পেছনে তাকাই….

আমিঃ কি সমস্যা? ঘাড়ে কেন হাত দিলেন?

ছেলেঃ আগুন আছে? সিগারেট ধরাবো।

আমিঃ না আমি ওসব খাই না।

অন্য একটা ছেলেঃ আইছে আমার লক্ষি ছেলে ওসব খায় না।

আমিঃ কি ব্যাপার আপনাদের সমস্যা কি?

আমার কোনো কথার উত্তর না দিয়ে একটা ছেলে এসে আমার মুখ চেপে বাকি গুলো এসে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। একা ওদের সাথে ফেরে উঠতে পারছি। ওরা অনেক বাজে ভাবে আমাকে মারে।

দুইজনে আমার হাত ধরে রাখে বাকি গুলো মুখে আর বুকে ঘুষাতে লাগে। মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে। আমি দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে শুয়ে গেলাম। দেখলাম তামান্না আর ওই ছেলেটা বাইক নিয়ে আসলো। ছেলেটা সবাইকে বললো ” মরে গেলে নদীতে নিয়ে গিয়ে ফেলে দিস” তামান্না ওর কথা শুনে হাসছে।

তারপর দুজনে বাইক নিয়ে চলে গেলো, একটা ছেলে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে। তারপর আর কিছু মনে নেই।

যখন জ্ঞান আসলো নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করলাম। দেখলাম আয়মান আর সানি পাশে বসে আছে।

সানিঃ এখন কেমন লাগছে?

আমিঃ মোটামুটি, আম্মু কই?

আয়মানঃ এতোক্ষন ছিলো, আমরা তাকে বাসায় পাঠাই দিছি। এই ২ দিন এখানে থেকে তিনিও অসুস্থ হয়ে গেছে।

তারমানে ২ দিন পর জ্ঞান আসলো, শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গ ব্যথা করছে। অনেক কষ্টে উঠে বসলাম। তারপর ওদের বললাম….

আমিঃ তামান্না আসছিলো?

আয়মানঃ একবার আসছিলো, ওর বাবা নাকি অসুস্থ, সেখানে চলে গেছে।

আমিঃ ও আচ্ছা।

সানিঃ তোর এই অবস্থা কি করে হলো?

আয়মানঃ এই তুই পাগল হইছিস। ও ঠিক মতো কথাই বলতে পারছে না আর তুই ঘটনা জিজ্ঞেস করতেছিস।

আমিঃ আচ্ছা বাসায় চল, ওখানে বলবো।

সানিঃ এখন বাসায় যাওয়া যাবে না। তোর আরো ২ দিন থাকতে হবে।

আমিঃ এখানে থাকতে ভালো লাগছে না, আম্মুকে একটা কল দে। আজকেই চলে যাবো।

তারপর আম্মু আসলো, এসে আমাকে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে দিলো। ডাক্তারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বাসায় চলে গেলাম।

সেদিন রাতে সানি আর আয়মান আমার সাথেই ছিলো, তাদের সব ঘটনা খুলে বলি।

সানিকে বললাম তাড়াতাড়ি ডিভোর্স পেপার টা যেন রেড়ি করে।

সেদিন ৩ জন একসাথে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরেরদিন দেখি তামান্না ওর বাবার বাড়ি থেকে চলে আসছে। আমাকে দেখে বললো,,,, কিরে বেঁচে আছিস? আমি তো ভাবছি মারা গেছিস।

রাগে আমার রক্ত গরম হয়ে গেলো। সানি আর আয়মান সব কিছু শুনে ফেলেছে। ওদের কে দেখে তামান্না চোরের মতো রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

সেদিন থেকে ওর সাথে কথা বলি না। এমনকি নিজের রুমেও যাই না।
অসুস্থতার জন্য কলেজে যেতে পারছি না। তামান্না ঠিকই যাচ্ছে, কলেজে গিয়ে যে কি করে সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।

এভাবে আরো ১ সপ্তাহ কেটে গেলো, তামান্নার ব্যবহার আরো খারাপ হতে লাগলো।

একদিন সকালবেলা ঘুরতে বের হইছি, এমন সময় ফাহাদের কল আসলো…

আমিঃ কিরে কি অবস্থা?

ফাহাদঃ এইতো মোটামুটি। তোর কি অবস্থা?

আমিঃ আছি আগের মতো।

ফাহাদঃ বন্ধু তুই যে একটা ছেলের ছবি দিয়েছিলি মনে আছে?

আমিঃ হুম, কি হইছে এখন?

ফাহাদঃ ওই ছেলেটা একটা মেয়ের সাথে পার্কে বসে আছে।

আমিঃ আরে কি বলিস কোন পার্ক?

ফাহাদঃ…… (ঠিকানা দিলো)

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১১.০০ টা বাজে, তামান্না কি কলেজের নাম দিয়ে ছেলেটার সাথে পার্কে গেছে? কেমন জানি খারাপ লাগছে, বিয়ের পরও এসব করে? আর ছেলেটাই বা কেমন,

অথচ মা তামান্নার কথা শুনে আমাকেই অবিশ্বাস করে। না এতো কিছু ভেবে লাভ নেই আগে পার্কে যাই, দুজনের একসাথে কয়েকটা ছবি নিই, তারপর আম্মুকে দেখাবো সহজেই ডিভোর্স টা হয়ে যাবে।

তাড়াতাড়ি পার্কে গেলাম, ফাহাদও সেখানে দাঁড়িয়ে আছে, দুজনে ভিতরে গেলাম। দেখলাম সেই ছেলেটা যে লোক পাঠিয়ে আমাকে মেরেছে তামান্নাকে বাইকে উঠিয়ে ঘুরা ফেরা করে।

ছেলেটাকে স্পর্শ দেখা যাচ্ছে কিন্তু মেয়েটাকে দেখা যাচ্ছে না। আমার কেমন যেন মনে হচ্ছে এই মেয়েটা তামান্না নয়, উলটো পথে গিয়ে দেখি আসলেই মেয়েটা তামান্না নয়, তারমানে ছেলেটা এই রকম আরো অনেক মেয়ের সাথেই প্রেমের অভিনয় করে। সালারে দেখলেই মনে হয় একটা play boy.

কোনো কিছু না ভেবে ভিডিও করা শুরু করলাম, বাহ! কি সুন্দর একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে আছে। হাতে হাতে রেখে হাসা হাসি করছে।

ফাহাদকে বললাম তুই ভিডিও করতে থাক, আমি যেটুকু করেছি সেটা তামান্নাকে পাঠাই।

সাথে সাথেই তামান্নাকে পাঠিয়ে দিলাম, তামান্না ভিডিও টা দেখে আমাকে কল দেওয়া শুরু করলো, আমি ধরলাম না। তারপর সে আমাকে একটা sms দিলো জায়গাটা কোথায় সেটা বলার জন্য।

আমি পার্কের নাম সেন্ড করে দিলাম। ১০ মিনিটের মধ্যেই তামান্না সেখানে এসে হাজির, আমি আর ফাহাদ লুকিয়ে গেলাম, তামান্না পাগলের মতো ছেলেটাকে খুঁজতে লাগলো, তারপর ছেলেটাকে দেখে ফেলে।

ছেলেটার সামনে গিয়েই……

আম্মুঃ না মানে তুই যদি দিয়ে আসতি তাহলে ভালো হতো।

আমিঃ আমি কিভাবে দিয়ে আসবো, অফিসের দেরি হয়ে যাবে।

আম্মুঃ হবে না, তামান্না রেড়ি আছে। প্লিজ বাবা না করিস না।

কি আর করা, আম্মুর কথা মতো তামান্নাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হলাম। একটা CNG নিলাম, তামান্নার পাশাপাশি বসে আছি কিন্তু কোনো কথা বলছি না। তামান্না কি যেন বলবে, মুখ দেখে বুঝলাম, তারপর জিজ্ঞেস করলাম….

আমিঃ কি বলবেন?

তামান্নাঃ তোমার অফিস কখন শেষ হবে?

আমিঃ ৪.০০ টায়। কাজের চাপ থাকলে দেরি হতে পারে।

তামান্নাঃ ও আচ্ছা। একটা কথা বলতাম,,,,

আমিঃ হুম বলেন।

তামান্নাঃ তোমার অফিসে মেয়ে কলিগ আছে?

আমিঃ হুম আছে, ৫ জন আছে। ২ জন আমার পাশেই বসে।

তামান্নাঃ ও আচ্ছা। (মন খারাপ করে)

কথা বলতে বলতে তামান্নাদের বাসার সামনে চলে আসলাম, তামান্নাকে নামিয়ে দিয়ে চলে আসতে যাবো এমন সময়….

তামান্নাঃ বাসায় যাবে না?

আমিঃ না, আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।

তামান্নাঃ অফিস শেষে আসবে?

আমিঃ না, আর কারো আপমান সহ্য করবো না, এমনিতেই অনেক অপমানিত হইছি। কলেজে যাওয়াও বন্ধ করে দিছি। আপনি বাসায় চলে যান।

তামান্না কিছু একটা বলতে চাইছিলো সেদিকে না তাকিয়ে ড্রাইভারকে বললাম গাড়ি টান দিতে। তারপর সেখান থেকে সোজা অফিসে চলে গেলাম।

সারাদিন অফিস করে বিকালে আড্ডা দিয়ে বাসায় গেলাম।

আম্মুঃ কিরে তুই এখানে কেন?

আমিঃ তো কোথায় যাবো?

আম্মুঃ তুই তামান্নাদের বাসায় যাসনি?

আমিঃ আমারে কি পাগলা কত্তায় কামড়াইছে? খাবার দাও তো, এগুলো ভালো লাগছে না। তোমার কথা রাখতে গিয়ে আজকে আমার জীবনটা তেজপাতা হয়ে গেলো।

আম্মিঃ কিহ!

আমিঃ কিছু না, খাবার দাও। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

আম্মুঃ আচ্ছা আয়।

খাওয়া দাওয়া করে রুমে গিয়ে খাটে শুয়ে পড়লাম, আহ কি শান্তি। আজকে কতোদিন পর শান্তিতে ঘুমাবো। এতো দিন এই ফকিন্নির জন্য খাটে ঘুমাতে পারিনি। মনে হচ্ছে ২০ বছর খাটে ঘুমাই না।

শুয়ে শুয়ে গান শুনছি এমন সময় একটা নতুন নাম্বার থেকে কল আসে।

আমিঃ হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম! কে বলছেন?

ওপাশ থেকেঃ আমি!

আমিঃ আরে আমিটা কে?

ওপাশ থেকেঃ আমি তামান্না বলছি।

আমিঃ ও আচ্ছা, এটা কার নাম্বার?

তামান্নাঃ কাজিন একটার। তুমি ঠিক মতো খাইছো?

আমিঃ হুম, আপনি খাইছেন?

তামান্নাঃ হুম।

আমিঃ আপনার আম্মু কেমন আছে?

তামান্নাঃ জ্বি ভালো।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে রাখি, ঘুমাবো।

তামান্নাঃ ওকে।

কল কেটে দিয়ে ভাবছি হঠাৎ এতো কেয়ার নিতেছে কেন? মাইয়া মানুষের বিশ্বাস নাই। এদের মনে কখন কি চলে এরা নিজেরাই জানে না।

যাই করুক তামান্না যে আমাকে আস্তে আস্তে ভালোবেসে ফেলেছে সেটা আমি ঠিকই বুঝতে পেরেছি।

এভাবে ১ সপ্তাহ চলে গেলো, আমিও আরামে ঘুমাই, খায়দাই আর অফিস করি। তামান্নার সাথে কথা হয়না। যদি সে কল দে তাহলে জাস্ট হাই/হ্যালো ছাড়া তেমন কোনো কথা হয় না।

সেদিন অফিসে কাজ করছি এমন সময় সানি কল দিলো…

সানিঃ কিরে কি অবস্থা?

আমিঃ এই তো মোটামুটি। তোর?

সানিঃ আছি বেকার মানুষের আর কিসের অবস্থা। আচ্ছা শোন যে জন্য কল করেছিলাম।

আমিঃ হুম বল।

সানিঃ তোর ডিভোর্স পেপার রেড়ি হয়ে গেছে। আমি বিকালে নিয়ে আসবো, তুই দিঘীর পাড়ে আসিস।

আমিঃ thanks dost.

সানিঃ ধন্যবাদ দিয়ে হবে না, ট্রিট দিতে হবে।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে। আয়মানকে বলে দিস।

সানিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

যাক অবশেষে, পেপারটা রেড়ি হলো, এটা নিয়ে এতো দিন কি যে প্যারায় ছিলাম তা বলে বুঝানো যাবেনা।

বিকালে অফিস শেষ করে দিঘীর ওখানে গেলাম, সানি আর আয়মান বসে আছে।

ওদের সাথে অনেকক্ষন আড্ডা দিলাম, তারপর বাসায় আসলাম। এসে দেখি আম্মু রেগে আছে,,,

আমিঃ কি হইছে? এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

আম্মুঃ তোর মোবাইল কই?

আমিঃ আছে তো। (পকেটে হাত দিয়ে)

যাহ শালা! মোবাইলতো বন্ধ হয়ে আছে।

আম্মুঃ তোরে কল দিলে কল যায় না কেন?

আমিঃ আম্মু চার্জ নেই, শেষ হয়ে গেছে।

আম্মুঃ টিপতে ভালো লাগে, চার্জ দিতে ভালো লাগে না???

আমিঃ আচ্ছা বাদ দাও। কেন কল দিছো।

আম্মুঃ তামান্নাকে নিয়ে আসার জন্য।

আমিঃ তো ও নিজে আসুক। আমি ওর বডিগার্ড নাকি?

আম্মুঃ এ কেমন কথা। মেয়েটা একা একা আসবে কি করে? যা নিয়ে আয়।

আমিঃ নিয়ে আসবো মানে?

আম্মুঃ হুম যা, এখন নিয়ে আয়। না হলে ঘরে জায়গা নেই তোর।

কি করা আবারও তামান্নাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

ওখান এসে দেখি ৮.৩০ বাজে। কলিং বেল বাজালাম। অনেকক্ষণ পর তামান্নার আম্মু এসে দরজা খুলে দিলো।

আমিঃ আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন?

শাশুড়িঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো বাবা?

আমিঃ জ্বি আমিও ভালো আছি।

শাশুড়িঃ তামান্না উপরে আছে যাও।

ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও যাওয়া লাগলো, গিয়ে দেখি তামান্না রেড়ি হয়ে বসে আছে, আমি বললাম….

আমিঃ রেড়ি হয়েছেন?

তামান্নাঃ হুম রেড়ি। আম্মা কল করেছিলো,, তুমি এতো দেরি করলে যে?

আমিঃ অফিস থেকে আসতে একটু দেরি হয়ে গেছে। আচ্ছা চলুন।

তামান্নাঃ এখন না, খাওয়া দাওয়া করে যাবো।

আমিঃ বাসায় গিয়ে খাবো।

তামান্নাঃ না, এখান থেকে খেয়ে যাবো। আম্মু সব রান্না করে বসে আছে।

কি আর করা, খাওয়াদাওয়া করে তারপর বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। CNG তে আর কোনো কথা হয়নি। ভিতরে ভিতরে টেনশনে আছি আজ থেকে আবার শান্তি মতো ঘুমাতে পারবো না।

একটু পর বাসায় চলে আসলাম, এসে দেখি বাসার লাইট সব বন্ধ। দরজা টোকা দেওয়ার আগেই খুলে গেলো, পুরো বাসা অন্ধকার। আমি আম্মুকে কয়েকবার ডাকলাম, কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নাই। খুব ভয় পেয়ে গেছি। কোনো অঘটন ঘটলো না তো? তামান্না ভয়ে আমার হাত ছেপে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো। বুঝলাম ওর হাত কাঁপতেছে।

আমি পকেট থেকে মোবাইলটা বের করবো এমন সময় আমাদের দুজনকে অবাক করে দিয়ে অনেক গুলো লাইট একসাথে জ্বালিয়ে দিয়ে সানি, আয়মান, আম্মু সবাই একসাথে বলে উঠলো,,,, Happy birthday, Happy Birthday Dear Tamanna. many many returns of day.

আমি তো পুরা টাসকি খেয়ে গেলাম, এগুলো কে করলো? কখন করলো, কিভাবে করলো? আমি তো এই ২ ঘন্টা আগেই বাসায় ছিলাম, তখন তো তেমন কিছুই ছিলো না।

আমি ভাবছি আর তামান্না আম্মুকে বললো….

তামান্নাঃ আম্মু আপনি কি করে জানলেন আজকে আমার জন্মদিন? আর এতো কিছু কে করেছে?

সবাই একসাথে আমাকে দেখিয়ে দিলো, আমি আরো একটা টাস্কি খেলাম।

যাইহোক সবাই মিলে কেক কাটলাম, তামান্না প্রথমে আমাকে খাইয়ে দিলো, আমিও খাইয়ে দিলাম। একে একে সবাই খাওয়া দাওয়া করে অনেক মঝা করলাম। সানি আর আয়মান তামান্নাকে অনেক গুলো গিফট দিলো, আম্মু একটা রিং দিলো। বাকী শুধু আমি আছি। সানি হঠাৎ করে বললো,,, জুয়েল তার গিফট কালকে সকালে দিবে। আমি নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

পরে আমি সানি আর আয়মান ছাদে চলে গেলাম।

আমিঃ কিরে তোরা এতো কিছু কি করে জানিস?

আয়মানঃ আমরা জানতাম না, আন্টি (আম্মু) আমাদের বলেছে। আর তোকে কিছু বলতে নিষেধ করেছে।

আমিঃ ও আচ্ছা। এই সানি তুই যে বললি সকালে গিফট দিবো? কি গিফট দিবো?

সানিঃ আরে ব্যাটা তামান্না তোর কাছে ডিভোর্স চাইছে না? ডিভোর্স পেপার তো রেড়ি। সকালে দিয়ে দিবি আর এটা হবে তামান্নার জন্য সবচেয়ে বড় উপহার।

আমিঃ হুম ঠিক, চল অনেক রাত হইছে ঘুমিয়ে যাই।

আয়মানঃ হুম চল।

এরপর বাসায় চলে আসলাম, সানি আর আয়মানকে রুম দেখিয়ে দিয়ে আমি আমার রুমে গেলাম। দেখলাম তামান্না বসে বসে মোবাইল টিপতেছে। আমি যাওয়ার পর,,,,

তামান্নাঃ Thanks!

আমিঃ কেন?

তামান্নাঃ এতো বড় সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য।

আমিঃ ঘুমিয়ে যান, অনেক রাত হইছে।

তারপর বিছানা থেকে বালিশ নিয়ে সোফায় যাচ্ছি এমন সময় তামান্না বললো…

তামান্নাঃ আমার গিফট?

আমিঃ কালকে অফিসে যাওয়ার আগে টেবিলের উপর রেখে যাবো।

তামান্নাঃ ওকে, একটা কথা বলার ছিলো।

আমিঃ হুম বলেন!

তামান্নাঃ সোফায় না ঘুমালে হয় না?

আমিঃ তো কোথায় ঘুমাবো?

তামান্নাঃ খাটে ঘুমাও।

আমিঃ No Thanks. আপনি ঘুমিয়ে যান।

আর কোনো কথা না বলে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে উঠে দেখি তামান্না আমার আগেই উঠে গেছে। আমি ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখি আম্মু রান্না করছে আর তামান্না সেগুলো টেবিলের উপর সাজিয়ে দিচ্ছে।

তারপর নাস্তা করে রেড়ি হয়ে, ডিভোর্স পেপারটা হাতে নিলাম। অনেক কষ্ট হচ্ছে সাইন করতে, অনেক ভালোবেসে ফেলেছি মেয়েটাকে। কিন্তু কিছু করার নাই, হয়তো সে অন্য কারো কাছে আমার থেকেও বেশি ভালো থাকবে। আমি চাই সে সব সময় ভালো থাকুক। মনকে শক্ত করে সাইনটা করে দিলাম। আরো ছোট একটা চিরকুট লিখলাম।

“” আজকে আপনাকে মুক্ত করে দিলাম, আপনার জন্মদিনে আপনার বেস্ট চাওয়াটাই আমি পূরণ করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি সাইনটা করে দিবেন। অনেক বেশি ভালো থাকবেন। আল্লাহ যেন আপনাকে অনেক ভালো রাখে সেই দোয়াই রইলো””

চিরকুট আর ডিভোর্স পেপার টেবিলের উপর রেখে চলে গেলাম।
তারপরেই…..

চিরকুট আর ডিভোর্স পেপার টেবিলের উপর রেখে চলে গেলাম অফিসে। যাত্রাপথে হাকিমের সাথে দেখা। কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে অফিসে গেলাম। ২০ মিনিট দেরি হওয়ায় বস ইচ্ছা মতো ঝাড়ি দিলো। রাগে মোবাইল silent mode করে রেখে দিয়ে কাজ করতে শুরু করি।

অন্য দিনের তুলনায় আজকে একটু কাজের চাপ বেশিই ছিলো। কিন্তু কিছু করার নাই, বেশি বাড়াবাড়ি করলে চাকরিটাই চলে যাবে।

বিকালবেলা অফিস থেকে মোবাইলটা বের করে তো মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো, আম্মু ১২২ টা কল দিছে, তামান্নার আম্মুও অনেক গুলো কল দিছে। সানি আর আয়মানের কল ও মেসেজ দেখে মাথা নষ্ট।

এতো কল এতো মেসেজ অথচ আমি টেরই পেলাম না! মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি তামান্নার আম্মু আবার কল দিছে….

আমিঃ হ্যালো!

শাশুড়িঃ…… ( কোনো কথা বলছে না, শুধু কান্না করতেছে)

আমি কল কেটে দিয়ে আম্মুকে কল দিলাম, আম্মুও কল ধরছে না। এরপর আয়মানকে কল দিলাম…

আমিঃ হ্যালো দোস্ত কি অবস্থা?

আয়মানঃ কিরে তুই কল ধরিস না কেন?

আমিঃ আসলে অফিসে কাজের চাপ বেশি ছিলো তাই।

আয়মানঃ এখন কই আছস?

আমিঃ এইতো ট্রাংক রোড়।

আয়মানঃ তাড়াতাড়ি মানারাত হাসপাতালে আয়।

আমিঃ কেন কি হইছে?

আয়মানঃ তামান্না সুইসাইড করতে চাইছিলো, পরে আমরা সবাই মিলে হাসপাতালে নিয়ে আসছি।

আমিঃ কিহ! সুইসাইড করতে চাইছিলো মানে? দাঁড়া আমি এক্ষুনি আসছি।

আয়মানঃ তাড়াতাড়ি আয়।

কল কেটে দিয়ে হাসপাতালে উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কেমন জানি খুব টেনশন হচ্ছে। তামান্না হঠ্যাৎ করে সুইসাইড করবে কেন?

সেখানে গিয়ে দেখি আম্মু, সানি, আয়মান আর তামান্নার আম্মু বাইরে বসে আছে। আমাকে দেখে সবাই উঠে দাঁড়ালো। আম্মুকে এসেই ঠাসস করে আমার গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো। আমি আবুলের মতো গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

শাশুড়িঃ বাবা তোমার সাথে কি তামান্নার কিছু হইছে?

আমিঃ জ্বি না, আমার সাথে তো কিছু হয়নি।(মিথ্যা বললাম)

শাশুড়িঃ তাহলে সে সুইসাইড করতে গেলো কেন?

আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। আম্মু এসে বললো…

আম্মুঃ তুই কল ধরিস নি কেন?

আমিঃ অফিসে ছিলাম তাই silent mode করা ছিলো।

আম্মুঃ লাগবে না তোর চাকরি করা। আজ থেকে চাকরি ছেড়ে দিবি। আর তুই আমার সাথে মিথ্যা বলেছিস কেন?

আমিঃ কি মিথ্যা?

আম্মুঃ তামান্না এতো দিন তোর সাথে যা যা করেছে সেগুলো আমাকে বলিস নি কেন?

আমিঃ তোমাকে এগুলো কে বলেছে?

আম্মু সানি আর আয়মানের দিকে তাকালো, আমি বুঝে গেলাম ওরাই আম্মুকে স্পব ঘটনা বলে দিছে। সানি আর আয়মানের দিকে আমি রাগি দৃষ্টিতে তাকালাম, ওরা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

এমন সময় ডাক্তার এসে বললো তামান্না জ্ঞান ফিরেছে, আম্মু আর শাশুড়ি ভিতরে গেলো। সানি আর আয়মান ভিতরে যেতে চাচ্ছিলো, আমি বললাম…

আমিঃ এই তোরা দাঁড়া।

সানিঃ কিছু বলবি?

আমিঃ আম্মুকে কথা গুলো কে বলেছে?

একজন অন্যজনের দিকে তাকিয়ে আছে।

আমিঃ কিরে কথা বলিস না কেন?

আয়মানঃ আমরা দুজনেই বলেছি।

আমিঃ কেন বলেছিস? জানিস আম্মু কতো কষ্ট পাবে? কারণ তামান্নাকে আম্মুই পছন্দ করেছে।

সানিঃ আন্টিকে না বলে কোনো উপায় ছিলো না। তিনি আমাদের যেভাবে চাপের মুখে ফেলেছে না বলে থাকতে পারি নি।

আয়মানঃ সরি দোস্ত!

সানিঃ বন্ধু একটা কথা বলতাম….

আমিঃ কি?

সানিঃ আমার মনে হয় ডিভোর্স টা না দিলেই ভালো হয়?

আমিঃ কেন? হঠ্যাৎ এটা মনে হলো কেন?

আয়মানঃ দেখ তামান্না তোকে আগে ইগনোর করতো সেটা আমরা সবাই জানি, কিন্তু এখন সে তোকে অনেক ভালোবাসে, দেখছিস না ডিভোর্স পেপার পাওয়ার সাথে সাথে সে সুইসাইড করতে চাচ্ছিলো।

সানিঃ হুম দোস্ত ডিভোর্স দিস না, সব কিছু আবার নতুন করে শুরু কর।

এই সব কিছুই আমার মনে মনে ছিলো, আসলে তামান্নাকে বোঝাতে হবে ভালোবাসার মানুষ কষ্ট দিলে কেমন লাগে, তাই তাকে আরো কিছু শাস্তি দিতে হবে।

আমিঃ আচ্ছা দেখা যাবে! শোন তামান্নাকে আরো কিছু শাস্তি দিতে হবে, আমার সাথে যেগুলো করেছে সেগুলোর ফল ওকেও ভোগ করতে হবে।

আয়মানঃ তুই এই অবস্থায়ও শাস্তি দিতে চাইছিস?

সানিঃ কিভাবে দিবি?

আমিঃ সময় হলে দেখবি। এখন এগুলো না বললেই ভালো হবে।

এমন সময় আম্মু আবার বাইরে আসলো….

আম্মুঃ এই হারামজাদা! তোর কাছে একটুও দয়ামায়া নেই? মেয়েটা কেমন আছে একটুও দেখতে ইচ্ছা করে না? আয় ভিতরে আয়, সে তোকে ডাকছে।

তারপর সানি আর আয়মানকে সাথে নিয়ে ভিতরে গেলাম। আমি গিয়ে ওর মাথার পাশে বসলাম, আমাকে দেখে অন্যদিকে মাথা ঘুরিয়ে শুয়ে আছে। আম্মু সবাইকে ইশারা করলো বাইরে চলে যেতে।

সবাই বাইরে চলে গেলো, অনেকক্ষণ বসে থাকার পর নীরবতা ভেঙ্গে আমি বললাম…

আমিঃ এখন কেমন আছেন?

তামান্নাঃ সেটা তোর না জানলেও চলবে।

বুঝে গেলাম রেগে আছে, সমস্যা নাই বালিকা, তোমার জন্য যে এখনো কি কি ওয়েট করতেছে সেটা নিজেও জানি না। আবার বললাম…

আমিঃ রাগ করছেন নাকি?

তামান্নাঃ রাগ করার মানুষ থাকলেই তো রাগ করবো।

আমিঃ আচ্ছা বাদ দেন, এবার বলেন এই কাজটা কেন করতে গেলেন?

তামান্নাঃ তুই কিছু বুঝিস না?

আমিঃ আপনি কেন সুইসাইড করতেছেন সেটা আমি কি করে বুঝবো?

তামান্নাঃ যা তোর বুঝা লাগবে না। এখানে কেন এসেছিস? আমি মরলে তো তুই খুশিই হতি।

আমিঃ সবাই বলেছে আপনাকে দেখতে তাই আসলাম,, (ক্ষেপানোর জন্য)

তামান্নাঃ কিহ! সবাই বলেছে সেজন্য তুই আমাকে দেখতে এসেছিস? তারমানে তুই মন থেকে আমাকে দেখতে আসিস নি।

আমিঃ আচ্ছা বাদ দেন, এবার বলেন জন্মদিনের গিফট পেয়ে খুশি হয়েছেন?

তামান্নাঃ হুম না হওয়ার কি আছে, খুশি ঠ্যালায় নিজের জীবনটাই শেষ করে দিতে চাইছিলাম কিন্তু পারলাম না।

আমিঃ খুশি হন নি কেন? আজ থেকে তো আপনি মুক্ত, নিজের ইচ্ছা মতো চলতে পারবেন। প্রেম করতে পারবেন।

তামান্নাঃ তোর কি একটুও বুক কাঁপলো না?

আমিঃ নাহ! আমি জাস্ট আপনার ইচ্ছাটাই পূরণ করতে চাইছিলাম।

তামান্নাঃ তুই জীবনেও বুঝবি না।

আমিঃ না বুঝাই ভালো।

আম্মু এসে বললো….

আম্মুঃ এই তোদের কথা শেষ হয়েছে?

আমিঃ আমরা তো কথাই বলিনি। শুরুও নাই শেষও নাই।

আমি কিছু না বলে রাগি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। শাশুড়ি এসে আম্মুকে বললো…

শাশুড়িঃ সুফিয়া তামান্নাকে আমার বাসায় নিয়ে যাই। কয়েকদিন ওখানে থেকে তারপর পাঠিয়ে দিবো।

আম্মুঃ তুই যেটা ভালো মনে করিস।

বাহ! দুজনের ফ্রেন্ডশিপ রক্ষা করার জন্য আমাকেই বলি দিলো। আমি বের হয়ে যাচ্ছি এমন সময় আম্মু বললো….

আম্মুঃ কিরে তুই কই যাস?

আমিঃ বাসায়, এখানে থেকে কি করবো?

আমিঃ যা তামান্নাকে ওদের বাসায় দিয়ে আয়।

কিছু না বলে দাঁড়িয়ে আছি, আম্মু আবার বললো…

আম্মুঃ কিরে কথা কানে যায় না? (ধমকের সুরে)

আমিঃ আরে দিয়ে আসবো তো। এমন করো কেন?

আম্মুঃ যা CNG নিয়ে আয়।

তারপর একটা CNG নিলাম, আমি তামান্না আর তামান্নার আম্মু গাড়িয়ে উঠে তামান্নাদের বাসার দিকে রওনা দিলাম। সানি আর আয়মানকে বললাম আম্মুকে ঠিক মতো বাসায় দিয়ে আসতে।

গাড়িতে কোনো কথা হয়নি। বাসার সামনে নেমে, তামান্নাকে ধরে ধরে বাসায় নিয়ে যাচ্ছি কিন্তু ফকিন্নি হাটতে পারছে না, ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও কোলে নিলাম, কোলে নিয়ে বাসায় দিয়ে আসলাম, বাহ! ফকিন্নির ভিতরে ভিতরে লাড্ডু ফুটতেছে। আমিও খুশি কখনো এভাবে আগে স্পর্শ করিনি। কিন্তু জানু তুমি তো জানো না তোমার জন্য আমি কি পরিমাণ বাঁশ রেড়ি করতেছি।

বাঁশ থেরাপি দিয়েই তোমার অহংকার আমি মাটিতে লুটাবো, টেরও পাবেনা জুয়েল কি জিনিষ। যাইহোক বাসার ভিতরে নিয়ে তামান্নাকে খাটে রাখলাম।

ওরে আল্লাহ মেয়ে মানুষ এতো ওজন, দেখলে মনে হয় ফুঁ দিলেই উড়ে যাবে, কিন্তু ভিতরে ভিতরে এতো ওজন জানা ছিলো না। তামান্নাকে খাটে রেখে আমি হাপাতে লাগলাম। সে আমার কর্মকাণ্ড দেখে হাসতে লাগলো।

ও কে রেখে চলে আসবো এমন সময় পেছন থেকে ডাক দিলো….

তামান্নাঃ জুয়েল!

আমিঃ হুম, কিছু বলবেন?

তামান্নাঃ আজকে না গেলে হয়না?

আমিঃ না, আমি এখনো বাসায় যায়নি, অফিসের পোশাকে রয়ে গেছি।

তামান্নাঃ কিছু খাইছো?

আমিঃ না, সময় পাইনি। বাসায় গিয়ে খাবো।

তামান্নাঃ এখানে খেয়ে যাও!

আমিঃ No thanks.

আর কিছু না বলে সোজা হাটা দিলাম তামান্নার আম্মুও অনেকবার বললো থেকে যেতে, কিন্তু না করে দিয়েছি। বিদায় নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।

এসে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে শুয়ে পড়লাম, এভাবে কিছুদিন চলে গেলো, তামান্নার সাথে আর কোনো যোগাযোগ করিনি। মাঝে মাঝে সে কল দিতো বাট আমি ধরতাম না।

কয়েকদিন পর সকালবেলা অফিসে যাওয়ার জন্য রেড়ি হচ্ছি এমন সময় আম্মু আসলো…

আমিঃ কিছু বলবে?

আম্মুঃ অফিস কয়টায় ছুটি হবে?

আমিঃ ৪.০০ টায়, কাজ বেশি থাকলে দেরি হতে পারে। কেন?

আম্মুঃ না বলছিলাম অনেক দিন হলো মেয়েটাকে দেখছিনা। তুই যদি তামান্নাকে নিয়ে আসতি।

আমিঃ সরি আম্মু, আমি পারবো না। যার দরকার সে নিজেই আসবে।

আম্মুঃ এ কেমন কথা? একা একটা মেয়ে নিজে থেকে কি করে আসবে?

আমিঃ যেভাবেই আসুক না কেন আমি নিয়ে আস্তে পারবো না। বেশি দরকার হলে তুমি যাও।

আম্মুঃ যা তোর যাওয়া লাগবে না, আমার মেয়েকে আমিই নিয়ে আসবো।

আমিঃ যা ইচ্ছা করো।

আর কোনো কথা না বলে অফিসে চলে গেলাম, বিকালে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। একটু রাত করে বাসায় আসলাম। এসে দেখি তামান্না চলে এসেছে। কিছু না বলে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে আছি। তামান্না এসে বললো…

তামান্নাঃ ভুলেই গেছো, একটা বার জিজ্ঞেসও করলে না কেমন আছি?

আমিঃ মনে রাখার জন্য কোনো চুক্তিপত্র হইছে নাকি যে আপনাকে মনে রাখতে হবে?

তামান্না মন খারাপ করে বললো…

তামান্নাঃ খেতে আসো।

আমিঃ আমি খাবো না, বাইরে থেকে খেয়ে আসছি। আপনারা খেয়ে নিন।

তামান্না কিছু না বলে চলে গেলো, আমি শুয়ে শুয়ে ফেসবুকিং করছি।

একটু পর সে আসলো, মনে হয় খাওয়া শেষ, আমার সামনে এসে ঘুরঘুর করতেছে,,,,

আমিঃ আপনি কেন এসেছেন?

তামান্নাঃ মানে? (অবাক হয়ে)

আমিঃ মানে আপনি এই বাসায় কেন এসেছেন? আপনার চাওয়া তো আমি পূরণ করে দিয়েছি আবার কি?

তামান্নাঃ তুমি এভাবে কথা বলছো কেন? বললাম তো আগের ঘটনা গুলোর জন্য সরি।

আমিঃ এসব সরি টরি বলে লাভ নেই, ডিভোর্স চাইছেন দিয়ে দিয়েছি। এবার থেকে আপনি আপনার মতো আর আমি আমার মতো।

তামান্নাঃ আমি এসব মানি না, আমি আম্মুকে ছাড়া থাকতে পারবো না। যেদিন আম্মু বলবে সেদিন চলে যাবো।

আমি আর কিছু না বলে শুয়ে শুয়ে মোবাইল টিপতেছি, তামান্না এসে বিছানায় উঠতে লাগলো,,,,

আমিঃ এই আপনি কি করছেন?

তামান্নাঃ কেন ঘুমাবো না?

আমিঃ আপনি হয়তো ভুলে গেছেন এটা আমার রুম, আমার বিছানা। সো আপনি আমার বিছানায় শুতে পারবেন না।

তামান্নাঃ তাহলে কোথায় ঘুমাবো?

আমিঃ যেখানে খুশি ঘুমান, বাট বিছানায় পারবেন না।

তারপর একটা বালিশ ওর হাতে দিয়ে দিলাম, তারপরেই…….

তারপর একটা বালিশ ওর হাতে দিয়ে দিলাম, বালিশ হাতে নিয়ে মন খারাপ করে সোফায় চলে গেলো, এবার বুঝো কেমন লাগে। এতো দিন আমাকে জ্বালাইছো।

আমি অন্যদিকে পাশ কাটিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম, মধ্যরাতে কিছু একটার আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেলো, চোখ খুলে দেখি তামান্না নাক টেনে টেনে কান্না করতেছে। আমি বললাম…

আমিঃ এই আপনার সমস্যা কি?

তামান্নাঃ……… (কোনো কথা নাই)

আমিঃ এসব ন্যাকা কান্না করার মানে কি?

তামান্নাঃ তোমার এতো কিছু জানতে হবে না।

আমিঃ জানার দরকারও নেই, অন্য কোথাও গিয়ে কাঁদেন। এখানে ঘুমের ডিস্টার্ব হচ্ছে। সকালে আমার অফিস আছে,,,

তামান্না তারপরও কান্না করতেছে,,,

আমিঃ আরেকবার নাক টানা শুনলে লাথি দিয়ে রুম থেকে বের করবো। যত্তসব আজাইরা,,,

দেখলাম তামান্না কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো, আমি মনে মনে ভাবছি এবার ঠ্যালা বুঝো জানু, আমিও অনেক কষ্ট পাইছি।

ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি মনে নেই। ঘুম থেকে উঠে দেখি তামান্না আমার আগেই উঠে গেছে, আমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে অফিসে চলে গেলাম।

অফিস করে বাসায় আসার সময় সানি আর আয়মানকে কল দিয়ে আসতে বললাম, ওরা আমার আগেই বসে আছে।

আমিঃ কিরে কি অবস্থা তোদের?

সানিঃ এইতো, তোর মতো আর টাকা ইনকাম করতে পারছিনা। বেকার মানুষের অবস্থা তো ভালো করেই জানিস।

আয়মানঃ আচ্ছা আয় ওদিকে গিয়ে বসি।

আমিঃ হুম চল!

সানিঃ তামান্না কেমন আছেরে?

আমিঃ ভালোই, কিন্তু একটা জিনিষ আমার মাথায় আসছে না?

আয়মানঃ কি!

আমিঃ তামান্নাকে ডিভোর্স পেপার দিলাম, সেটারও কোনো খবর নাই, সে এখান থেকেও যাচ্ছে না।

সানিঃ আরে বোকা যাবে কি করে? সে এখন ফিদা হয়ে গেছে।

আয়মানঃ দোস্ত যা হইছে সব ভুলে যা, এখন সব কিছু ঠিক করে নে। এটাই ভালো হবে।

সানিঃ আরে নাহ! তামান্নাকে আরো কিছু শাস্তি দিতে হবে। এই জুয়েল!

আমিঃ হুম, বল।

সানিঃ তামান্না তোকেকে কলেজের সকলের সামনে অপমান করছে না, তুইও করবি?

আমিঃ কি করে?

সানিঃ……. (বিশাল একটা বুদ্ধি দিলো)

কিহ আপনারা বুঝছেন না তো, গল্প পড়তে থাকেন, আপনারাও বুঝে যাবেন। তারপর সানিকে বললাম…

আমিঃ ধুর ব্যাটা, এটা করা উচিত হবে না। যাইহোক সে আমার স্ত্রী।

সানিঃ আরে ব্যাটা সমস্যা নাই, পরে আদর করে দিস। সব ঠিক হয়ে যাবে।

আমিঃ হা হা হা হারামী তুই আর মানুষ হলি না।

আয়মানঃ তুই চাকরি করবি নাকি কলেজে যাবি।

আমিঃ দুটাই, বসকে বলবো ছুটি দিতে। দিয়ে দিবে।

আয়মানঃ তাহলে ঠিক আছে।

এরপর আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে গেলাম।

ফ্রেশ হয়ে এসে রুমে সুয়ে রইলাম, সানির বুদ্ধি মোতাবেক মোবাইলটা silent mode করে কানে লাগিয়ে কথা বলতে লাগলাম। পাশে তামান্না ছিলো, প্রেম করলে যই রকম রোমান্টিক কথাবার্তা বলে আমিও সেম ভাবে বলতে লাগলাম।

তামান্না রাগে ফুলতে লাগলো, আমি অনেক জোরে হেসে হেসে কথা বলছি। অনেক বকাবকি করার পর মোবাইল টা রেখে দিলাম আসলে কোনো প্রেম করিনি, তাই কথাও খুঁজে পাচ্ছি না। আমি তামান্নাকে দেখিয়ে মোবাইলে একটা কিস দিলাম।

তামান্না আমার সামনে এসে দাঁড়ালো….

আমিঃ কিছু বলবেন?

তামান্নাঃ মেয়েটা কে?

আমিঃ তা দিয়ে আপনার কাজ কি?

তামান্নাঃ অনেক কাজ, আগে বলো মেয়েটা কে?

আমিঃ আমার ভবিষ্যৎ বউ।

তামান্নাঃ বাসায় বউ রেখে অন্য মেয়ের সাথে কথা বলতে লজ্জা করে না?

আমিঃ বউ মানে? কোথায় বউ? কে বউ????

তামান্নাঃ তাহলে আমি কে?

আমিঃ ভুলে যাবেন না আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিছি, সো আপনি আমার কেউ নন।

তামান্নাঃ মানে কি বলছো এসব?

আমিঃ যা শুনেছেন তাই। আর হে, আমার কোনো পার্সোনাল ব্যাপারে আপনি নাক গলাতে আসবেন না। আমি আম্মুর সাথে কথা বলে আপনাকে আপনাদের বাসায় পাঠানোর ব্যবস্থা করছি

তামান্নাঃ জুয়েল! প্লিজ এমন করো না, আগের ব্যবহারের জন্য সত্যিই আমি অনেক লজ্জিত, সরি বললাম তো। (আমার হাত ধরে)

আমি একটা টান দিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম। রাগ দেখিয়ে ছাদে চলে গেলাম। ছাদের দরজাটা বন্ধ করে কিছুক্ষণ লুঙ্গি ড্যান্স দিলাম। ফকিন্নি যখন আমি তোর পিছে পিছে ঘুরতাম, তোর কেয়ার করতাম তখন আমাকে ২ টাকার দামও দিতি না। এবার বুঝো কেমন লাগে।

ছাদ থেকে নিচে এসে খাওয়াদাওয়া করে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম, তামান্না যথারীতি বালিশ নিয়ে সোফায় চলে গেলো।

রাতের বেলা ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো, তামান্নার দিকে তাকাতেই দেখি গুটিমেরে শুয়ে আছে, চেহারাটা দেখে আবারবার ক্রাশ খেলাম, ঘুমন্ত অবস্থায় মানুষকে আসলেই অনেক নিষ্পাপ মনে হয়।

হুমায়ন আহমেদ বলেছিলেন যে নারীকে ঘুমন্ত অবস্থায় সুন্দর দেখায়, সেই প্রকৃত সুন্দর। তামান্নাও হুমায়ন আহমেদের ঘুমন্ত নারী।

কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বুঝলাম, তামান্না ঠান্ডায় কাঁপছে, নিজের কাছেই খারাপ লাগছে, উঠে গিয়ে কম্বলটা ওর গায়ে জড়িয়ে দিলাম।

মোবাইলে টাইম দেখলাম, একটু পর ফজরের আজান দিবে, আর ঘুমালাম না, উঠে ওজু করে নামাজ পড়ে বাইরে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করলাম।

বাসায় এসে দেখি তামান্না মুখ টিপে টিপে হাসছে, মনে হয় কম্বল দেওয়ার কারণে। বালিকা এতো খুশি হওয়ার কিছু নেই। জুয়েল কি জিনিষ হাড়ে হাড়ে টের পাবা।

নাস্তা করে বসে বসে মোবাইল টিপতেছি, এমন সময় আম্মু এসে বললো….

আম্মুঃ কিরে আজকে অফিসে যাবি না?

আমিঃ না, ছুটি নিয়েছি।

আম্মুঃ কেন, শরীর খারাপ নাকি?

আমিঃ আরে নাহ! অনেক দিন কলেজে যাই না। আজকে যাবো। আর আমার একটু কাজ আছে,,,

তামান্নাও পাশে ছিলো, তামান্না আম্মুকে বললো….

তামান্নাঃ আম্মু বলছিলাম কি আমিও তো অনেক দিন কলেজে যাই না, লেখাপড়াটাও ভালো ভাবে হচ্ছে না। আজকে গেলে কোনো সমস্যা হবে?

আম্মুঃ আরে নাহ, কিসের সমস্যা। যা তুইও কলেজে যা।

তামান্নাঃ ধন্যবাদ আম্মু।

আম্মুঃ এই জুয়েল!

আমিঃ হুম বলো।

আম্মুঃ তামান্নাকে সাথে কিরে নিয়ে যা।

আমিঃ সরি, আমি পারবো না। যে যার মতো যাবে।

আম্মুঃ পারবি না মানে? মেয়েটা একা একা কি করে যাবে?

আমিঃ যেভাবে খুশি যাক, বাট আমি নিয়ে যেতে পারবো না।

আম্মুকে আর কোনো কিছু বলতে না দিয়ে আমি রুমে চলে গেলাম, গিয়ে রেড়ি হয়ে তামান্নার আগে চলে গেছি। আমি সানি, আয়মান আর ইতু (সানির কাজিন) বসে আছি।

তামান্না আসছে দেখে সানি বললো….

সানিঃ এই মামা আসছে শুরু কর।

আমিঃ কে আসছে?

সানিঃ আরে ব্যাটা তোর সিনিয়র বউ আসছে। শুরু কর,

আমি এবার ইতুর হাতটা ধরে বসে হেসে হেসে কথা বলছি, ইতুও প্ল্যান মোতাবেক আমার হাত ধরে আছে।

তামান্না এটা দেখে তো রাগে লাল হয়ে গেলো, আমার দিকে আর না তাকিয়ে উপরের তলায় চলে গেলো। আমরা সবাই হাসতে হাসতে শেষ।

ক্লাস করিনি, ওখানে বসে আছি। দেখলাম তামান্না উপর থেকে বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে, আমিও খুব সুন্দর করে অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছি।

২ ঘন্টা চলে যাওয়ার পরে তামান্না আর ওর কয়েকটা বান্ধবী মিলে আমাদের কাছে আসলো।

সানি আর আয়মান একসাথে গান গাইতেছে,,,, “আমার এই বাজে স্বভাব কোনো দিন যাবে না”

একটা সিনিয়র মেয়ে এসে বললো….

মেয়েঃ কানের নিচে যখন কয়েকটা পড়বে তখন সব রকমের বাজে স্বভাব চলে যাবে।

সানিঃ আপু স্লামালাইকুম, ভালো আছেন?

মেয়েঃ হুম, ক্লাস না করে এখানে কি?

সানিঃ পাখি দেখি।

মেয়েঃ বাঁদরামি করস, এখানে পাখি আসবে কোত্থেকে?

সানিঃ আসে আসে, আমার পাশে বসেন, আপনিও দেখতে পাবেন।

আমি তখনো ইতুর হাত ধরে আছি, তামান্না আমাকে বললো…

তামান্নাঃ ছি! লজ্জা করেনা তোমার?

আমিঃ কেন আমি কি ল্যাংটা হয়ে আছি নাকি?

তামান্নাঃ তার ছেয়েও খারাপ। বাসায় বউ রেখে এখানে অন্য মেয়ের সাথে ছিহ!

আমিঃ ওয়েট ওয়েট, বউ মানে? কার কথা বলছেন?

তামান্নাঃ কার কথা বুঝো না? আমার কথা।

আমিঃ আপনি কে? আপনাকে তো আমি ছিনিই না।

তামান্নাঃ চেনো না মানে? তুমি এতো খারাপ ভাবতেও আমার ঘৃণা হয়।

আমিঃ আপনার লজ্জা করে না, একটা জুনিয়র ছেলের পেছন পেছন ঘুরঘুর করতে? পাত্তা দিই না, তবুও কেন আসেন?

এতক্ষণে পুরো ক্যাম্পাসের সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তামান্না লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো, দেখলাম ওর চোখের কোনে পানি। কান্না করতে করতে ক্যাম্পাসের বাইরে চলে গেলো।

আমার নিজেরও খারাপ লাগছে, ব্যাপারটা আসলে ব্যাপার টা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে।

পরে আমি, সানি আর আয়মান বের হয়ে গেলাম। ইতুকে ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় দিয়ে দিলাম। আমরা বাইরে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম।

এরপর বাসায় চলে গেলাম। গিয়ে দেখি তামান্না সব কিছু রেড়ি করে বাসা থেকে চলে যাচ্ছে। আম্মু ওকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু সে শুধু কান্নাই করতেছে।

চলে গেলো, আম্মু এসে ঠাসস করে আমার গালে একটা বসিয়ে দিলো, আর বললো কুলাঙ্গার কোথাকার, তোর জন্য আমার মেয়েটা চলে গেলো। ওর যদি কিছু হয়, তোর খবর আছে।

তারপরেই…..

তারপর একটা বালিশ ওর হাতে দিয়ে দিলাম, বালিশ হাতে নিয়ে মন খারাপ করে সোফায় চলে গেলো, এবার বুঝো কেমন লাগে। এতো দিন আমাকে জ্বালাইছো।

আমি অন্যদিকে পাশ কাটিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম, মধ্যরাতে কিছু একটার আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেলো, চোখ খুলে দেখি তামান্না নাক টেনে টেনে কান্না করতেছে। আমি বললাম…

আমিঃ এই আপনার সমস্যা কি?

তামান্নাঃ……… (কোনো কথা নাই)

আমিঃ এসব ন্যাকা কান্না করার মানে কি?

তামান্নাঃ তোমার এতো কিছু জানতে হবে না।

আমিঃ জানার দরকারও নেই, অন্য কোথাও গিয়ে কাঁদেন। এখানে ঘুমের ডিস্টার্ব হচ্ছে। সকালে আমার অফিস আছে,,,

তামান্না তারপরও কান্না করতেছে,,,

আমিঃ আরেকবার নাক টানা শুনলে লাথি দিয়ে রুম থেকে বের করবো। যত্তসব আজাইরা,,,

দেখলাম তামান্না কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো, আমি মনে মনে ভাবছি এবার ঠ্যালা বুঝো জানু, আমিও অনেক কষ্ট পাইছি।

ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি মনে নেই। ঘুম থেকে উঠে দেখি তামান্না আমার আগেই উঠে গেছে, আমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে অফিসে চলে গেলাম।

অফিস করে বাসায় আসার সময় সানি আর আয়মানকে কল দিয়ে আসতে বললাম, ওরা আমার আগেই বসে আছে।

আমিঃ কিরে কি অবস্থা তোদের?

সানিঃ এইতো, তোর মতো আর টাকা ইনকাম করতে পারছিনা। বেকার মানুষের অবস্থা তো ভালো করেই জানিস।

আয়মানঃ আচ্ছা আয় ওদিকে গিয়ে বসি।

আমিঃ হুম চল!

সানিঃ তামান্না কেমন আছেরে?

আমিঃ ভালোই, কিন্তু একটা জিনিষ আমার মাথায় আসছে না?

আয়মানঃ কি!

আমিঃ তামান্নাকে ডিভোর্স পেপার দিলাম, সেটারও কোনো খবর নাই, সে এখান থেকেও যাচ্ছে না।

সানিঃ আরে বোকা যাবে কি করে? সে এখন ফিদা হয়ে গেছে।

আয়মানঃ দোস্ত যা হইছে সব ভুলে যা, এখন সব কিছু ঠিক করে নে। এটাই ভালো হবে।

সানিঃ আরে নাহ! তামান্নাকে আরো কিছু শাস্তি দিতে হবে। এই জুয়েল!

আমিঃ হুম, বল।

সানিঃ তামান্না তোকেকে কলেজের সকলের সামনে অপমান করছে না, তুইও করবি?

আমিঃ কি করে?

সানিঃ……. (বিশাল একটা বুদ্ধি দিলো)

কিহ আপনারা বুঝছেন না তো, গল্প পড়তে থাকেন, আপনারাও বুঝে যাবেন। তারপর সানিকে বললাম…

আমিঃ ধুর ব্যাটা, এটা করা উচিত হবে না। যাইহোক সে আমার স্ত্রী।

সানিঃ আরে ব্যাটা সমস্যা নাই, পরে আদর করে দিস। সব ঠিক হয়ে যাবে।

আমিঃ হা হা হা হারামী তুই আর মানুষ হলি না।

আয়মানঃ তুই চাকরি করবি নাকি কলেজে যাবি।

আমিঃ দুটাই, বসকে বলবো ছুটি দিতে। দিয়ে দিবে।

আয়মানঃ তাহলে ঠিক আছে।

এরপর আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে গেলাম।

ফ্রেশ হয়ে এসে রুমে সুয়ে রইলাম, সানির বুদ্ধি মোতাবেক মোবাইলটা silent mode করে কানে লাগিয়ে কথা বলতে লাগলাম। পাশে তামান্না ছিলো, প্রেম করলে যই রকম রোমান্টিক কথাবার্তা বলে আমিও সেম ভাবে বলতে লাগলাম।

তামান্না রাগে ফুলতে লাগলো, আমি অনেক জোরে হেসে হেসে কথা বলছি। অনেক বকাবকি করার পর মোবাইল টা রেখে দিলাম আসলে কোনো প্রেম করিনি, তাই কথাও খুঁজে পাচ্ছি না। আমি তামান্নাকে দেখিয়ে মোবাইলে একটা কিস দিলাম।

তামান্না আমার সামনে এসে দাঁড়ালো….

আমিঃ কিছু বলবেন?

তামান্নাঃ মেয়েটা কে?

আমিঃ তা দিয়ে আপনার কাজ কি?

তামান্নাঃ অনেক কাজ, আগে বলো মেয়েটা কে?

আমিঃ আমার ভবিষ্যৎ বউ।

তামান্নাঃ বাসায় বউ রেখে অন্য মেয়ের সাথে কথা বলতে লজ্জা করে না?

আমিঃ বউ মানে? কোথায় বউ? কে বউ????

তামান্নাঃ তাহলে আমি কে?

আমিঃ ভুলে যাবেন না আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিছি, সো আপনি আমার কেউ নন।

তামান্নাঃ মানে কি বলছো এসব?

আমিঃ যা শুনেছেন তাই। আর হে, আমার কোনো পার্সোনাল ব্যাপারে আপনি নাক গলাতে আসবেন না। আমি আম্মুর সাথে কথা বলে আপনাকে আপনাদের বাসায় পাঠানোর ব্যবস্থা করছি

তামান্নাঃ জুয়েল! প্লিজ এমন করো না, আগের ব্যবহারের জন্য সত্যিই আমি অনেক লজ্জিত, সরি বললাম তো। (আমার হাত ধরে)

আমি একটা টান দিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম। রাগ দেখিয়ে ছাদে চলে গেলাম। ছাদের দরজাটা বন্ধ করে কিছুক্ষণ লুঙ্গি ড্যান্স দিলাম। ফকিন্নি যখন আমি তোর পিছে পিছে ঘুরতাম, তোর কেয়ার করতাম তখন আমাকে ২ টাকার দামও দিতি না। এবার বুঝো কেমন লাগে।

ছাদ থেকে নিচে এসে খাওয়াদাওয়া করে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম, তামান্না যথারীতি বালিশ নিয়ে সোফায় চলে গেলো।

রাতের বেলা ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো, তামান্নার দিকে তাকাতেই দেখি গুটিমেরে শুয়ে আছে, চেহারাটা দেখে আবারবার ক্রাশ খেলাম, ঘুমন্ত অবস্থায় মানুষকে আসলেই অনেক নিষ্পাপ মনে হয়।

হুমায়ন আহমেদ বলেছিলেন যে নারীকে ঘুমন্ত অবস্থায় সুন্দর দেখায়, সেই প্রকৃত সুন্দর। তামান্নাও হুমায়ন আহমেদের ঘুমন্ত নারী।

কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বুঝলাম, তামান্না ঠান্ডায় কাঁপছে, নিজের কাছেই খারাপ লাগছে, উঠে গিয়ে কম্বলটা ওর গায়ে জড়িয়ে দিলাম।

মোবাইলে টাইম দেখলাম, একটু পর ফজরের আজান দিবে, আর ঘুমালাম না, উঠে ওজু করে নামাজ পড়ে বাইরে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করলাম।

বাসায় এসে দেখি তামান্না মুখ টিপে টিপে হাসছে, মনে হয় কম্বল দেওয়ার কারণে। বালিকা এতো খুশি হওয়ার কিছু নেই। জুয়েল কি জিনিষ হাড়ে হাড়ে টের পাবা।

নাস্তা করে বসে বসে মোবাইল টিপতেছি, এমন সময় আম্মু এসে বললো….

আম্মুঃ কিরে আজকে অফিসে যাবি না?

আমিঃ না, ছুটি নিয়েছি।

আম্মুঃ কেন, শরীর খারাপ নাকি?

আমিঃ আরে নাহ! অনেক দিন কলেজে যাই না। আজকে যাবো। আর আমার একটু কাজ আছে,,,

তামান্নাও পাশে ছিলো, তামান্না আম্মুকে বললো….

তামান্নাঃ আম্মু বলছিলাম কি আমিও তো অনেক দিন কলেজে যাই না, লেখাপড়াটাও ভালো ভাবে হচ্ছে না। আজকে গেলে কোনো সমস্যা হবে?

আম্মুঃ আরে নাহ, কিসের সমস্যা। যা তুইও কলেজে যা।

তামান্নাঃ ধন্যবাদ আম্মু।

আম্মুঃ এই জুয়েল!

আমিঃ হুম বলো।

আম্মুঃ তামান্নাকে সাথে কিরে নিয়ে যা।

আমিঃ সরি, আমি পারবো না। যে যার মতো যাবে।

আম্মুঃ পারবি না মানে? মেয়েটা একা একা কি করে যাবে?

আমিঃ যেভাবে খুশি যাক, বাট আমি নিয়ে যেতে পারবো না।

আম্মুকে আর কোনো কিছু বলতে না দিয়ে আমি রুমে চলে গেলাম, গিয়ে রেড়ি হয়ে তামান্নার আগে চলে গেছি। আমি সানি, আয়মান আর ইতু (সানির কাজিন) বসে আছি।

তামান্না আসছে দেখে সানি বললো….

সানিঃ এই মামা আসছে শুরু কর।

আমিঃ কে আসছে?

সানিঃ আরে ব্যাটা তোর সিনিয়র বউ আসছে। শুরু কর,

আমি এবার ইতুর হাতটা ধরে বসে হেসে হেসে কথা বলছি, ইতুও প্ল্যান মোতাবেক আমার হাত ধরে আছে।

তামান্না এটা দেখে তো রাগে লাল হয়ে গেলো, আমার দিকে আর না তাকিয়ে উপরের তলায় চলে গেলো। আমরা সবাই হাসতে হাসতে শেষ।

ক্লাস করিনি, ওখানে বসে আছি। দেখলাম তামান্না উপর থেকে বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে, আমিও খুব সুন্দর করে অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছি।

২ ঘন্টা চলে যাওয়ার পরে তামান্না আর ওর কয়েকটা বান্ধবী মিলে আমাদের কাছে আসলো।

সানি আর আয়মান একসাথে গান গাইতেছে,,,, “আমার এই বাজে স্বভাব কোনো দিন যাবে না”

একটা সিনিয়র মেয়ে এসে বললো….

মেয়েঃ কানের নিচে যখন কয়েকটা পড়বে তখন সব রকমের বাজে স্বভাব চলে যাবে।

সানিঃ আপু স্লামালাইকুম, ভালো আছেন?

মেয়েঃ হুম, ক্লাস না করে এখানে কি?

সানিঃ পাখি দেখি।

মেয়েঃ বাঁদরামি করস, এখানে পাখি আসবে কোত্থেকে?

সানিঃ আসে আসে, আমার পাশে বসেন, আপনিও দেখতে পাবেন।

আমি তখনো ইতুর হাত ধরে আছি, তামান্না আমাকে বললো…

তামান্নাঃ ছি! লজ্জা করেনা তোমার?

আমিঃ কেন আমি কি ল্যাংটা হয়ে আছি নাকি?

তামান্নাঃ তার ছেয়েও খারাপ। বাসায় বউ রেখে এখানে অন্য মেয়ের সাথে ছিহ!

আমিঃ ওয়েট ওয়েট, বউ মানে? কার কথা বলছেন?

তামান্নাঃ কার কথা বুঝো না? আমার কথা।

আমিঃ আপনি কে? আপনাকে তো আমি ছিনিই না।

তামান্নাঃ চেনো না মানে? তুমি এতো খারাপ ভাবতেও আমার ঘৃণা হয়।

আমিঃ আপনার লজ্জা করে না, একটা জুনিয়র ছেলের পেছন পেছন ঘুরঘুর করতে? পাত্তা দিই না, তবুও কেন আসেন?

এতক্ষণে পুরো ক্যাম্পাসের সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তামান্না লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো, দেখলাম ওর চোখের কোনে পানি। কান্না করতে করতে ক্যাম্পাসের বাইরে চলে গেলো।

আমার নিজেরও খারাপ লাগছে, ব্যাপারটা আসলে ব্যাপার টা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে।

পরে আমি, সানি আর আয়মান বের হয়ে গেলাম। ইতুকে ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় দিয়ে দিলাম। আমরা বাইরে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম।

এরপর বাসায় চলে গেলাম। গিয়ে দেখি তামান্না সব কিছু রেড়ি করে বাসা থেকে চলে যাচ্ছে। আম্মু ওকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু সে শুধু কান্নাই করতেছে।

চলে গেলো, আম্মু এসে ঠাসস করে আমার গালে একটা বসিয়ে দিলো, আর বললো কুলাঙ্গার কোথাকার, তোর জন্য আমার মেয়েটা চলে গেলো। ওর যদি কিছু হয়, তোর খবর আছে।

তারপরেই…..

আম্মুর কথা শুনে মাথাটাই খারাপ হয়ে গেলো, নিজের ছেলের কোনো খবর নাই, তিনি ছেলের বউ নিয়ে পড়ে আছে।

আম্মুর সাথে রাগারাগি করে ছাদে চলে গেলাম। আসলে তামান্নার জন্য আমারও খারাপ লাগছে, কিন্তু কি করবো? ও যেগুলো আমার সাথে করেছে, সেগুলোর ফল ওকে পেতে হবে। কিন্তু মনে হচ্ছে ওর সাথে বেশি করে ফেলছি।

কি করবো বুঝতে পারছি না। সানিকে কল দিলাম….

আমিঃ কিরে কই তুই?

সানিঃ বাসায়, এ অসময় কল দিছস! কোনো সমস্যা?

আমিঃ হুম, সমস্যা একটা হয়েছে।

সানিঃ কি সমস্যা?

আমিঃ মোবাইলে বলা যাবেনা। তুই দিঘীর সামনে আয়। আমি আয়মানকে বলে দিচ্ছি।

সানিঃ আচ্ছা ঠিক আছে। তুই বলা লাগবে না, আমি বলে দিচ্ছি।

আমিঃ হুম দে।

সানিঃ কয়টায় আসবি?

আমিঃ আসরের নামাজ পড়ে আয়।

সানিঃ ওকে।

এরপর কল কেটে দিলাম। নিচে গিয়ে দেখি আম্মু না খেয়ে টেবিলের উপর খাবার রেখে চলে গেছে। আমি আম্মুর রুমে গেলাম….

আমিঃ খাবে না?

আম্মুঃ তোর খাওয়া তুই খা। আমি আমার মেয়েকে ছাড়া খাবো না।

এই মহা যন্ত্রণা, ধুর ভালো লাগে না। আমিও না খেয়ে চলে আসলাম।

রুমে এসে শুয়ে পড়লাম, ঘুমানোর চেষ্টা করলাম ঘুম আসছে না। পরে উঠে বাহিরে চলে গেলাম।

আসরের নামাজ পড়ে দিঘীর সামনে গেলাম। দেখলাম সানি আর আয়মান বসে আছে।

আমিঃ কিরে তোরা আসছিস?

আয়মানঃ হুম, তোর নাম্বার বন্ধ কেন?

মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি সুইচ অফ হয়ে আছে। সানি বললো…

সানিঃ বল কি সমস্যা?

আমি সব গুকী ঘটনা খুলে বললাম।

আয়মানঃ দোস্ত আমার মনে হয় তোর এখন তামান্নাদের বাসায় যাওয়া উচিত!

আমিঃ ধুর আমি ওখানে গিয়ে কি করবো?

আয়মানঃ কি করবি মানে? ওর খাছে ক্ষমা চেয়ে নিবি আর বলবি ডিভোর্স পেপারটা নকল।ছিলো।

আমিঃ আরে না, এটা হয় না।

সানিঃ না হলে তুমি বসে বসে আঙ্গুল চুষো।

আমিঃ তামান্না কি সব কিছু মেনে নিবে?

আয়মানঃ হুম নিবে। দেখলি না সে তোর সাথে অন্য কাওকে সহ্য করতে পারে না।

আমিঃ সেটাতো আগে ছিলো, কিন্তু কলেজে যা করলাম, আমার জন্য এখন ঘৃণা ছাড়া ওর মনে আর কিচ্ছু নাই।

সানিঃ চেষ্টা করতে তো আর কোনো সমস্যা নেই। তোকে তখনও বলেছিলাম সব কিছু চিন্তাভাবনা করে কর।

আমিঃ সালা মিথ্যুক, তোর জন্যই এসব কিছু হইছে। তোর বুদ্ধি না শুনলে কিছুই হতো না।

সানিঃ আরে আমি কি জানতাম নাকি যে তামান্না বাসা ছেড়ে চলে যাবে?

আয়মানঃ আচ্ছা বাদ দে তো, এখন কেমনে কি করবি সেটা চিন্তা কর।

সানিঃ আচ্ছা চল কিছু খেয়ে আসি।

আয়মানঃ তোর তো খাওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নাই।

সানিঃ এই তুই কি আজকে ওদের বাসায় যাবি।

আমিঃ নাহ! গেলেও কালকে।

ওদের সাথে আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে গেলাম।

রাত প্রায় ১০.০০ টা। খেতে বসলাম, আম্মু আসলো না। একা খেতে বসেছি, এমন সময় তামান্নার আম্মু কল দিলো….

আমিঃ হে… (পুরোটা বলার আগেই)

তামান্নার আম্মা কল দিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিলো।

শাশুড়িঃ বাবা তু তুমি কই?

আমিঃ আমি তো বাসায়, আপনি কাঁদছেন কেন? কোনো সমস্যা?

শাশুড়িঃ তামান্না…

কল কেটে দিলো, আমি আবার কল দিলাম কিন্তু ধরতেছে না।

নাহ আর বসে থাকা যায় না। তামান্নার কি হইছে আল্লাই জানে। সানি আর আয়মানকে কল দিয়ে বের হতে বললাম।

বাসা থেকে বের হয়ে একটা CNG নিলাম, মাঝপথে সানি আর আয়মানকে তুলে নিলাম।

সানিঃ কিরে এতো রাতে আবার কি হলো?

আমিঃ তামান্নার আম্মা কল দিয়ে কান্না করতে লাগলো।

আয়মানঃ কেন কি হইছে?

আমিঃ নিজেও জানি না, পুরোটা শুনার আগেই কল কেটে দিলো। তারপর আমি কল দিলাম কিন্তু ধরতেছে না। আল্লাই কি হইছে।

কথা বলতে বলতে ওদের বাসার সামনে চলে আসলাম। অনেকবার কলিং বেল বাজালাম কিন্তু ভিতর থেকে কোনো শব্দ নাই, দরজা ধাক্কা দিলাম তাও কোনো লাভ হলো না।

পরে সানি বললো দরজা ভেঙ্গে ফেলার জন্য ৩ জনে অনেক কষ্ট করে দরজাটা ভাঙ্গলাম।

ভিতরে গিয়েই তো আমার মাথা খারাপ হয়ে গেলো। তামান্নার বাম হাত টা কাটা। পিংকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে, রক্তে পুরো ফ্লোর লাল হয়ে গেছে। অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের জন্য জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে। ওর এই অবস্থা দেখে আমার শরীর কাঁপতে লাগলো।

কিন্তু ওর আম্মু কই গেলো? তামান্নার আম্মুর রুমে গিয়ে দেখি উনি উনার পা উলটে খাটের সাথে আঘাত খেয়ে পড়ে আছে।

মনে হয় তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে পা মোছড় খেয়ে পড়ে যায়, আর মাথা গিয়ে লাগে খাটের সাথে যার কারনে উনিও সেন্সল্যাস হয়ে আছে।

কি করবো কিছুই বুঝতেছি না। আমার শার্ট টা খুলে তামান্নার হাতে বেধে নিলাম যাতে আর রক্ত না বের হয়। পরে ওদের দুজকেই হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। ইমার্জেন্সিতে দিয়ে আমি বাইরে অপেক্ষা করছি, নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি বের হতে শুরু করলো।

আমার জন্যই আজকে এতো কিছু হলো, তামান্নার জ্ঞান ফিরলেই মাফ চেয়ে নিবো।

সানি আর আয়মানকে বললাম বাসায় চলে যেতে, কিন্তু ওরা গেলো না। একটু পর ডাক্তার বাইরে আসলো…

ডাক্তারঃ রুগি আপনার কি হয়?

আমিঃ জি আমার স্ত্রী।

ডাক্তারঃ দেখুন উনার অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ হয়েছে, জরুরী রক্তের ব্যবস্থা করুন।

আমিঃ জ্বি আমরা ৩ জন আছি বলুন কি রক্তের গ্রুপ কি?

ডাক্তারঃ AB+

আমিঃ আমার A+

সানিঃ আমার O+

আয়মানঃ আমারও A+

ডাক্তারঃ আচ্ছা ৩ জনই আসুন।

এরপর ৩ জনে রক্ত দিলাম, শাশুড়ি আম্মার জ্ঞান ফিরেছে উনি ঘুমাচ্ছে আমি তামান্নার কেবিনে গিয়ে তামান্নার পাশে বসলাম, নিশ্চুপ হয়ে ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে আছি

তামান্নার একটা হাত ধরে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই।

সকালে ঘুম ভাঙ্গলো কারো হাতের স্পর্শে, চোখ খুলে দেখি তামান্না আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছে, আমার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া দেখে অন্য দিকে মুখ কালো করে শুয়ে রইলো।

আমিঃ কি ব্যাপার এমন করছিলেন কেন?

তামান্নাঃ সেটা কারো না জানলেও চলবে।

বুঝলাম সে এখনো রেগে আছে।

আমিঃ কেন এটা করলেন?

তামান্নাঃ কি করবো বলো, আমি তো তোমাকে অনেক কষ্ট দিছি, অপমান করছি। তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি। তুমি তো আমার ক্ষমা করবে না।

আমিঃ তাই বলে সুইসাইড করবেন? আগেও এই একই কাজটা করেছেন।

তামান্নাঃ কেন বাঁচালে, আমি মরলে তোমার কি?

ঠাসসসস করে একটা ওর গালে বসিয়ে দিলাম।

তামান্নাঃ তুমি আমাকে মেরেছো?

আমিঃ হুম মেরেছি বেশ করেছি। আমার বউকে আমি মেরেছি তাতে আপনার কি?

তামান্নাঃ বউ! তাহলে সেদিন ডিভোর্স লেটার দিলে কেন?

আমিঃ ওটা ডিভোর্স লেটার ছিলো না। জন্মদিনের একটা কার্ড ছিলো, শুধু মিথ্যা চিঠিটা আমি লিখে ছিলাম।

তামান্নাঃ কালকে কলেজে এগুলো কেন করলে তাহলে?

আমিঃ আমার সাথে করেছিলেন। আপনাকে একটু বুঝাতে চেয়েছিলাম আপনার কেমন লাগে?

তামান্নাঃ অনেক হারামি তুই?

বলেই কান্না করতে করতে জড়িয়ে ধরলো। আমিও ধরলাম, এমন সময় আম্মু এসে কাশি দিতে লাগলো, ধুর শালা আম্মুকে কে খবর দিলো, আম্মু জানলে টেনশন করবে তাই কিছু জানাইনি আমি ভাবছি ওরা সুস্থ হলে তারপর জানাবো।

আম্মুঃ আমি এখানে একটু আসতে পারি?

তামান্নাঃ না, এখানে কারো আসা এখন যাবে না। (জড়িয়ে ধরে কথা গুলো বললো)

আমিঃ এই ছাড়েন, আম্মু দেখতেছে।

তামান্নাঃ দেখলে দেখুক। আমার স্বামীকে আমি জড়িয়ে ধরেছি, তাতে কার কি?

আমিঃ তাই বলে আম্মুর সামনে?

আম্মুঃ এই হাদারাম কিছু শিখ (আমাকে উদ্দেশ্য করে)

আম্মুঃ আচ্ছা তোমরা তাহলে থাকো।

আম্মু গিয়ে শাশুড়ির সাথে কথা বলতে লাগলো, বাইরে গিয়ে দেখি সানি আর আয়মান একটা টুলের উপর একজন অন্যজনের উপর উলটো হয়ে শুয়ে আছে। দেখেই আমার হাসি পাচ্ছে, একটু ভিডিও করে ওদের জাগালাম।

তারপর বাইরে থেকে কিছু খেয়ে আসলাম, তামান্নার জন্যও নিয়ে আসলাম। ডাক্তারের কাছে গেলাম,,,

আমিঃ আমরা কি ওদের বাসায় নিয়ে যেতে পারবো?

ডাক্তারঃ আপনার শাশুড়িকে নিয়ে যেতে পারবেন, উনি সুস্থ আছে। কিন্তু আপনার ওয়াইফকে আরো ২ দিন থাকতে হবে।

আমিঃ আচ্চা ঠিক আছে।

এরপর আম্মুর কাছে গেলাম।

আমিঃ আম্মু!

আম্মুঃ কিছু বলবি?

আমিঃ ডাক্তার বলেছে বাসায় যেতে।

আম্মুঃ তো চল, আর এখানে থেকে কি করবো?

আমিঃ না মানে, তামান্নাকে আরো ২ দিন থাকতে হবে। তাই বলছিলাম তুমি উনাকে (শাশুড়ি) নিয়ে আমাদের বাসায় চলে যাও। কয়েকদিন ওখানে থেকে রেষ্টে থাকুক।

আম্মুঃ তামান্নার কাছে কে থাকবে?

আমিঃ আমি আছি, তোমরা বাসায় চলে যায়। সময় পেলে আবার আসিও, আর নাহলে আসার দরকার নাই।

আম্মুঃ আচ্ছা ঠিক আছে, সব কিছু দেখেশুনে রাখবি।

এরপর সানিকে উনাদের সঙ্গে দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিলাম।

আমি তামান্নার কাছে গেলাম।

আমিঃ এখন কেমন লাগছে?

তামান্নাঃ আগে থেকে ভালো, এই শুনো।

আমিঃ হুম বলেন।

তামান্নাঃ আমি না একজনকে অনেক ভালোবাসি।

আমিঃ কাকে?

তামান্নাঃ আমার এই জুনিয়র বরটাকে (হাত ধরে)

আমি কিছু না বলে অন্যদিকে তাকিয়ে হাসতেছি, সে হঠ্যাৎ করে আমার মুখটা ওর কাছে নিয়ে গিয়ে একটা ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিলো। তারপর বললো,,,

তামান্নাঃ এই আমাদের তো বাসর হয়নি চলো না, আজকে আমাদের বাসরটা করে ফেলি।

আমিঃ ডাক্তার আপনাকে আরো ২ দিন এখানে থাকতে বলেছে। আগে সুস্থ হোন, তারপর দেখা যাবে।

এইভাবে রোমান্টিক ভাবে ২ দিন চলে গেলো, আমি তামান্নাকে নিয়ে বাসায় আসলাম। গাড়ি থেকে নেমে তাকে বললাম বাসায় আসতে, কিন্তু সে না এসে দাঁড়িয়ে আছে।

আমিঃ কি ব্যাপার দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আসুন,,,

তামান্নাঃ কেউ যদি কোলে করে নিয়ে যায় তাহলে যাবো।

বুঝলাম আমাকে বলছে, তাই আর দেরি না করে ওকে কোলে নিলাম, সে আমার গলা জড়িয়ে ধরে আছে। বাসায় নিয়ে গিয়ে রুমে শুয়ে দিলাম, তারপর….

বাসায় নিয়ে গিয়ে রুমে শুয়ে দিলাম। তারপর আমি উঠে চলে যাচ্ছি এমন সময় সে আমার একটা হাত ধরে টান দেয়, আমি নিজেকে স্থির রাখতে না পেরে সোজা ওর গায়ের উপর গিয়ে পড়ি,,,

আমিঃ এটা কি করলেন?

তামান্নাঃ আমার বরকে আমি যা ইচ্ছা তা করবো, তাতে তোর কি?

আমিঃ আমার কি দেখামু?

তামান্নাঃ দেখা।

এই বলে যেই তামান্নার মুখটা ধরবো সেই সময় সানি রুমে চলে আসলো,,,

সানিঃ মামা আদর পরেও করতে পারবা, এখন একটু বাইরে আসো।

আমিঃ সালা তুই আর আসার সময় পাইলি না?

তামান্না লজ্জায় অন্যদিকে তাকিয়ে আছে, এরপর আমি বাহিরে গেলাম।

আমিঃ বল এই অসময় তুই কেন ডেকেছিস?

সানিঃ তোর জানতে হবে না। ৫০০০ টাকা দে।

আমিঃ এতো টাকা দিয়ে কি করবি?

আয়মানঃ তোরে দিতে বলছে, দিয়ে দে এতো কথা বলিস কেন?

আমিঃ কিন্তু আমার কাছে তো এতো টাকা এখন নাই, হাসপাতালে খরচ হয়ে গেছে।

আয়মানঃ আচ্ছা ঠিক আছে, তোর দেওয়া লাগবে না। বিকালবেলা দিঘীর পাড়ে আসিস। আড্ডা দিবো।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে,,,,

এরপর সানি আর আয়মান চলে গেলো, আমি গোসল করে আসলাম। তামান্নাকে খাইয়ে দিলাম, খাওয়া দাওয়া করে সে শুয়ে রইলো,,

বিকালবেলা আমি বাসা থেকে বের হলাম। দিঘীর ওখানে গেলাম, সানি আর আয়মানকে কল দিলাম তারাও আসলো।

এরপর অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা দিলাম, ঘুরলাম, মঝা করলাম। রাত ৯.০০ টার সময় আয়মান বললো,,,

আয়মানঃ দোস্ত আমার জরুরী কাজ আছে। আমাকে যেতে হবে।

সানিঃ আমার অনেক কাজ, আমিও যাই।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে, তোরা তাহলে যা। আমিও চলে যাচ্ছি।

বাসায় গিয়ে দেখলাম আম্মু, তামান্না আর তামান্নার আম্মু বসে বসে tv দেখছে। আমিও গিয়ে ওদের সাথে বসলাম।

তারপর খাওয়াদাওয়া করে রুমে গেলাম, তামান্না আমার আগে গিয়েই বসে আছে।

আমিঃ আমি কি আজকেও সোফায় থাকবো?

তামান্নাঃ মাথা পাঠিয়ে দিবো আর একবার সোফার কথা বললে,,,

আমিঃ তো মহারানী কোথায় থাকবো তাহলে,,,

তামান্নাঃ আমি সাথে, এই শুনো…

আমিঃ হুম বলেন।

তামান্নাঃ ওই বলেন কি? বলবা বলো,,, আজ থেকে আপনি করে বলবা না, তুমি করে বলবে।

আমিঃ ওকে, বলো কি বলবে?

তামান্নাঃ বলছিলাম কি, আমাদের তো বাসর হয়নি। চলো না বাসরঘরটা করে ফেলি,,,

আমিঃ কোনো আয়োজন ছাড়া বাসর হয় নাকি? আজকে ঘুমান। বাসর করা লাগবে না,,

তামান্নাঃ ওই লাগবে না মানে? ১০০ বার লাগবে,,,

তারপর সে উঠে আলমারি খুলে একটা ব্যাগ আমার হাতে দিলো,,

আমিঃ কি এটাতে?

তামান্নাঃ সেরোয়ানী। এটা পড়ে ঠিক ২ ঘন্টা পর রুমে আসবা। আমি বেনারসি পড়তেছি,,,

আমিঃ ২ ঘন্টা পর কেন?

তামান্নাঃ সেটা এলেই বুঝতে পারবে! যাও এখন।

আমিঃ কোথায় যাবো? এখানেই পড়ে নিই।

তামান্নাঃ মার খাবা, নাকি যাবা।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে যাচ্ছি।

তারপর আমি রুম থেকে বের হয়ে ছাদে চলে গেলাম। সানি আর আয়মানকে কল দিলাম, কি করবো তা জিজ্ঞেস করার জন্য। কিন্তু ২ শালা একসাথে মোবাইল অফ করে রাখছে।

ছাদে গিয়ে সেরোয়ানী পড়ে নিলাম, কি রকম জামাই জামাই একটা ভাব চলে আসছে। সেই বিয়ের দিনের মতো,,,

আজকে যেন সময়টা কিছুতেই যাচ্ছে না। ১ ঘন্টা ৪৫ মিনিট ছাদে থাকার পর কেমন যেন বিরক্ত লাগছে। নিচে চলে যাবো এমন সময় সানি আর আয়মান উপরে আসলো,,,

সানিঃ কি মামা এতো তাড়া কিসের, আস্তে ধীরে যাও।

আমিঃ কিরে তোরা এতো রাতে এখানে আসলি কি করে?

আয়মানঃ আর বলিস না, কাজ করতে করতে একেবারে শেষ।

আমিঃ এতো রাতে কি কাজ করছিস তুই?

সানিঃ আরে ব্যাটা তোর বাসর সাজাইছি।

আমিঃ কিহ, এতো কিছু করছস অথচ আমিই জানি না!

আয়মানঃ সব কিছু জানতে হয় না।

আমিঃ তোদের এসব কে করতে বলেছে?

আয়মানঃ কেউ না, আমি সানি আর তোর সিনিয়র বউ মিলে এসব করেছি। এগুলো আরো আগে করার ছিলো, কিন্তু যেই দিন করবো ভাবছিলাম সেই দিন তামান্না বাসা ছেড়ে চলে যায়।

আমিঃ তাই বলে তোরা আমাকে একটি বার জানাবিও না। আচ্ছা বাদ দে, আয় কিছুক্ষণ আড্ডা দিই।

আয়মানঃ আড্ডা সারা জীবন দিয়েছি। পরেও দেওয়া যাবে। তোর সিনিয়র বসে বসে তোর জন্য ওয়েট করছে, যা তাড়াতাড়ি ভিতরে যা

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

সানিঃ এই শোন,,,

আমিঃ হুম বল।

সানিঃ সিনিয়র তো পুরাতন হয়ে গেছে, এতো লজ্জা সরমের কাজ নাই, গিয়েই বিড়াল মেরে ফেলবি। পরে উলটো হয়ে শুয়ে পড়িস।

আমিঃ হা হা হা হারামজাদা তুই আর ঠিক হবি না। আচ্ছা তোর পাশের রুমে গিয়ে ঘুমা। রাত অনেক হয়েছে,,,

আয়মানঃ আচ্ছা ঠিক আছে যা,,,

এরপর রুমের সামনে গেলাম, কেমন যেন ভয় লাগছে সাথে লজ্জাও। কিছুক্ষণ আগেও তো তামান্নার সাথে কথা বলে আসলাম এখন আবার লজ্জা লাগছে কেন?

ধুর যা হওয়ার হবে আগে একবার ভিতরে যাই। এরপর এক কেজি সাহস নিয়ে দরজাটা খুললাম। দেখলাম তামান্না লম্বা একটা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। আমি যাওয়ার পরে উঠে আসলো।

এসে আমার পা ছুঁয়ে সালাম করতে যাবে এমন সময় আমি ওর হাত ধরে ফেললাম।

আমিঃ আরে আরে কি করো?

তামান্নাঃ কি করছি দেখতেছো না? সালাম করতেছি।

আমিঃ আরে জুনিয়রদের সালাম করতে হয় না।

তামান্নাঃ কে বলেছে জুনিয়ার? ১ বছর ওটা কোনো সমস্যা না। আর স্বামী হিসেবে তুমি সব সময় উপরে থাকবে,,,

আমিঃ ওকে মহারানী বুঝলাম, কিন্তু আপনাকে আমার পা ধরতে হবে না, কারন আপনার জায়গা আমার পায়ে নয়, বুকে। বুঝচ্ছেন?

তামান্নাঃ হুম বুঝলাম, এবার চলেন।

আমিঃ কোথায়?

তামান্নাঃ ছাদে।

আমিঃ এতো রাতে ছাদে কেন?

তামান্নাঃ চাঁদ দেখবো, চলো ছাদে চলো।

আমিঃ ওকে চলো।

তামান্নাঃ এভাবে যেতে পারবো না।

আমিঃ তো কিভাবে যাবে?

তামান্নাঃ আমাকে কোলে করে নিয়ে যেতে হবে।

আমিঃ ওরে আল্লাহ কি বলো এসব?

তামান্নাঃ হুম, নিয়ে চলো। না হলে সোফায় থাকতে হবে।

কি আর করা হাতিটাকে কোলে নিয়ে ছাদে গেলাম, ওরে কোল থেকে রেখেই আমি হাপাতে শুরু করলাম,,,

আমিঃ ওরে আল্লাহ একটা মানুষ এতো ওজন হয় কেমনে?

তামান্নাঃ এটুকুতেই এই অবস্থা? আজ থেকে তো প্রতিদিন ভর বহন করতে হবে।

আমিঃ মানে?

তামান্নাঃ সব কথার মানে বলতে হয় না, কিছু মানে বুঝে নিতে হয়। চলো একটু হাটি।

আমিঃ হুম।

কিছুক্ষণ হাটাহাটির পর ছাদের কোনায় গিয়ে বসলাম, তামান্নাও আমার পাশে বসলো, আমি উপরের দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে বসে আছি।

তামান্নাঃ ওই কি ভাবছো,,,,

আমিঃ আল্লাহ আমাকে পরীক্ষা দিয়েছে, সেটার কি আন্স দিবো সেটা ভাবতেছি।

তামান্নাঃ কি পরীক্ষা?

আমিঃ আল্লাহ আমাকে দুইটা চাঁদ দিয়েছে। একটা উপরে জ্বলতেছে আর একটা আমার পাশে। এখন বলতেছে কোন চাঁদটা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

তামান্নাঃ কোনটা?

আমিঃ উপরের টাতো, রাতের আকাশে আমার সাথে থাকবে কিন্তু দিনের বেলায় থাকবে না, কিন্তু পাশের টা সব সময় থাকবে কিন্তু কথা হচ্ছে যদি কখনো পাশে থাকা চাঁদটা চলে যায়? তাই ভাবছি কোন চাঁদটা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

তামান্না আমার একটা হাত ধরে কাঁধে মাথা রেখে বললো,,,

তামান্নাঃ এই তোমার হাত ধরে কসম করছি, পুরো পৃথিবী ছেড়ে দিবো কিন্তু তোমার হাত কখনো ছাড়বো না।

আমিঃ তাই নাকি?

তামান্নাঃ হুম তাই, এই শুনো না,,

আমিঃ হুম বলেন।

তামান্নাঃ আমার না টুইন বেবি অনেক পছন্দ।

আমিঃ তো আমি কি করতে পারি?

তামান্নাঃ আপনাকে কিছু করতে হবে না, আমি নিজেই করবো।

আমিঃ কি করবে?

তামান্নাঃ সময় হলে দেখবা, চলো রুমে যাই।

আমিঃ ওকে চলেন।

তামান্না; ওই এভাবে যাও কেন?

আমিঃ তো কিভাবে যাবো?

তামান্নাঃ আগের মতো কোলে করে নিয়ে যাও।

কি আর করা আবারও কোলে করে নিয়ে গেলাম। খাটে রেখে, আমি ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছি এমন সময় তামান্না আমার শার্টের কলার ছেপে ধরে বললো,,,

তামান্নাঃ এই কই যাস?

আমিঃ একটু আসছি।

তামান্নাঃ টুইন বেবির কথা বলছি যে ভুলে গেছো, হুম?

এ কথা বলেই একটা টান দিয়ে খাটে ফেলে দিলো, হারিয়ে গেলাম অন্য এক জগতে।