সেই মেয়েটি

মায়ের বডিগার্ড হয়ে কোন এক আত্নীয়ের বিয়ে বাড়িতে এসেছি। মনে মনে প্লান করে রেখেছি ওখানে মাকে নিয়ে পৌঁছালেই লুকিয়ে চলে আসব। যেই কথা সেই কাজ।
যখনই বিয়ে বাড়িটার গেটের সামনে এসে পৌঁছালাম ওমনি কেউ একজন আমার হাত ধরে বলল–
— ও আঙ্কেল আঙ্কেল আমাকে বাঁচাও! দেখ আমার মা আমাকে মারতে আসছে!
আমি পিছু ফিরে তাকাতেই দেখলাম একটা ৪ বছরের মেয়ে আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি কিছু না ভেবেই মেয়েটাকে কোলে তুলে নিলাম। কত্ত কিউট একটা চেহারা। দেখলেই মায়া লেগে যাবে।
আমি ওকে মিষ্টি করে বললাম-
— তোমাকে কেউ মারবে না মামনি আমি আছি না।
ছোট বাচ্চারা সবসময় চকলেট পছন্দ করে। আমি আমার পকেট থেকে একটা চকলেট বের করে মেয়েটার হাতে দিলাম। আমার পকেটে সচরাচর চকলেট থাকে। চকলেট থাকার কারন হল পড়াশোনায় মন বসানো। পড়ার সময় মুখে চকলেট রেখে পড়ি যাতে ঘুম না আসে।
চকলেট পেয়ে মেয়েটা খুব খুশি হল। আমার গলা জড়িয়ে ধরে আমার কপালে একটা চুমু এঁকে দিল। নিজেকে একজন বাবা হিসেবে কল্পনা করলাম। আমিও তো একদিন বাবা হব। তখন হয়ত এভাবেই আমার মেয়েটা আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাব। আমিও মেয়েটার কপালে চুমু খেলাম।লক্ষ্য করলাম কেউ একজন আমার দিকে তেড়ে আসছে। এটাই বোধ হয় মেয়েটার মা হবে। যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই। তার মেয়েকে আমার কোলে দেখে কিছুটা ঘাবরে গিয়ে মেয়েটাকে বলতে লাগল–
,– এই দুষ্টু কি হচ্ছে কি? কোল থেকে নাম বলছি। বলেছিনা কোন অচেনা লোকের কাছে যাবি না! মেয়েটা আমাকে আরো শক্ত করে আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলল-
— কে বলেছে অচেনা মানুষ? এটা আমার নিউ আঙ্কেল। দেখেছ আমাকে কত্ত সুন্দর করে কোলে নিয়েছে। তুমি তো কখনো আমাকে এভাবে কোলে নাও না।
মেয়েটার এমন পাকা পাকা কথায় প্রানটা জুড়িয়ে গেল। কত্ত আদরের সাথেই না আমার গলাটা জড়িয়ে ধরে আছে। এর মধ্যে মা এসে হাজির।
— এই কই ছিলি? আমি তোকে সারা বাড়ি খুজছি। আর তুই ফোন ধরিস না কেন?
— নাহ ইয়ে মানে..!
— ইয়ে মানে কি হ্যা? আমার পার্স আমাকে দিস নি কেন? আর এদিকে তোর বন্ধু আশিক আমাকে ফোন করে জ্বালিয়ে মারছে তুই নাকি ওর টাকা ফেরত দিচ্ছিস না..?
আমি চোখ বড় বড় করে মাকে ইশারা দিয়ে বললাম “কি হচ্ছে কি এসব? চুপ কর”
তখন পাশে থাকা মেয়েটির মা তাড়াতাড়ি করে আমার কোন থেকে মেয়েটাকে নামিয়ে নিয়ে গেল। মেয়েটা কিছুতেই আমার কোল থেকে নামতে চাচ্ছিল না। কিন্তু ওর ছোট্ট ছোট্ট হাতের শক্তি ওর মায়ের সাথে পেরে উঠেনি।
নেহাত আমি এখানে অচেনা মানুষ নয়ত ওকে আমার কোলেই রেখে দিতাম। মেয়েটা খুব আল্লাদের সাথে বলছে–
— মা মা আমি আঙ্কেলের কাছে থাকব আমি যাব না!
মেয়েটার মা মেয়েটার কথায় কান না দিয়ে ওকে নিয়ে চলে গেল। যাওয়ার সময় ওর হাতের চকলেট টা মাটিতে ছুড়ে ফেলে দিল। আমি এখানে শুধু নীরব দর্শক। কিছুক্ষন পর মাটি থেকে চকলেটটা কুঁড়িয়ে পকেটে পুরে রাখলাম। লুকিয়ে বাড়ি চলে যাওয়ার ইচ্ছাটা কেন জানিনা আর হচ্ছিল না। মেয়েটার স্পর্শ আমাকে অবাক করে দিয়েছে। ওর ছোট্ট হাত যখন আমার গলা জড়িয়ে ধরেছিল তখন আমি ওর মায়ায় জড়িয়ে গেছিলাম। কত্ত কিউট একটা চেহারা।
,
অন্য দিকে মায়ের সামনে পরে যাওয়াই আর বাড়ি ফেরা হল না। কাছে কোথাও ধুম ধাম সাউন্ড বক্স বাজছে। কত্ত লোক রে বাবা। নাহ এখানে থাকা যাবে না। এই মুহুর্তে আমার ছাদে যাওয়াই শ্রেয়। আর এমনিতেও ছাদে উঠলে পুরো আকাশটা মাথার উপর পাওয়া যায়। এত লোকজন আমার ভাল লাগে না। আমি যথা রীতি ছাদে গিয়ে পৌঁছালাম। বাহ্ ছাদটাও বেশ সুন্দর করে সাজিয়েছে তো! আমি ছাদের এক কোনে গিয়ে দাড়ালাম। এখানে একা একা বেশ দারুন লাগছে। নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলাম রঙিন পোকাশ পড়া লোকগুলো বড় বড় গিফট্ হাতে করে ঢুকছে শুধু ঢুকতে পারছে না পথের ধারে থাকা ময়লা জামা পড়া একটা বৃদ্ধ লোক। গেটে যারা পাহারায় ছিল তারা ঢুকতে দিচ্ছে না। অনেক কাকুতি মিনতির পরেও যখন ব্যার্থ হল তখন রাস্তার ধারের ওদিকটাই বসে পড়ল। এর মধ্যে কোথা থেকে একদল মেয়ে এসে হাজির হল।
আমাকে দেখেই বলতে লাগল,,
,– এই যে মিষ্টার কে আপনি? আমি ঘুরে তাকালাম। ঘুরে তাকাতেই আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। দেখলাম, ৪-৫ টা রমনী ঘটা করে সেজে গুজে সেল্ফি স্টিক হাতে এসেছে! ছবি তুলবে বোধ হয়। আমি গম্ভির গলায় বললাম–
–জ্বি আমি নিলাদ্রি!
— বর পক্ষের না কনে পক্ষের?
–জ্বি কনে পক্ষের।
— তো ছাদে কি আপনার?
তখন পাশ থেকে আর একজন রমনী বেশ ভাবের সাথে বলল–
— আরে বুঝিস না? লুকিয়ে লুকিয়ে আমাদের মেয়েদের দেখতে এসেছে! এখান থেকে তো ভাল দেখা যায় তাই!
আমি চোখ বড় বড় করে মেয়েটার দিকে তাকালাম।? এই মেয়ে কি সব বলছিস তুই? তোদের লুকিয়ে দেখার কি আছে? দেখলে সামনে থেকে দেখব। সব ছেলেকে কি এক মনে করিস? তোরাই তো বাপের টাকাই মেকাপ করিস আর ছেলেদের ফ্রিতে দেখিয়ে বেড়াস।
আমাদের কি দোষ?
ভাগ্যিস এ কথা গুলো মনে মনে বলছিলাম নয়ত মেয়েদের গনপিটুর মাইর একটাও মাটিতে পড়ত না।
আমি সহজে মাথা গরম করি না। কিন্তু মেয়েদের উপর অল্পতেই চটে যায়। কিন্তু যা বলি সব মনে বলি। সামনে বলার সাহস নাই।
— আপনি ভুল ভাবছেন। আমি ঘুরতে ঘুরতে এখানে এসে পরেছি। এক্সকিউজ মি!
এই বলে মাথা নিচু করে ওখান থেকে চলে আসলাম। আমার যাওয়া দেখে মেয়েগুলো হাহাহা করে হেসে উঠল। আমি নিচে নেমে এলাম। তখন দেখি সেই ছোট্ট মেয়েটা চেয়ারে বসে আছে৷ আমাকে দেখেই দৌড়ে এল। আমি ওকে কোলে তুলে নিলাম। পকেট সেই চকলেট টা ওর হাতে দিলাম। এরপর আমি ওর নাম জিজ্ঞেস করলাম।
— মামনি তোমার নাম কি?
মেয়েটা বলল নির্ঝরা।
— বাহ খুব সুন্দর নাম তো! কে রেখেছে?
— আমার আপু রেখেছে!
— তোমার আপুর নাম কি?
তখন পিছন থেকে একটা রমনি এসে বলল–
— কেন আপুর নাম জেনে কি হবে?
তাকিয়ে দেখি সব থেকে সুন্দরি সেই মেয়েটা। বোধ হয় আমার পিছু করতে করতে এখানে চলে এসেছে।
আমি কিছু বললাম না। মেয়েটা নির্ঝরাকে ধকক দিয়ে দিয়ে বলল–
— এই তুই অচেনা লোকের কোলে উঠে বসেছিস কেন?
আর আপনিই বা কেমন? চেনেন না জানেন না একটা মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে আছেন! ধান্দাটা কি হ্যা…?
আমি মেয়েটার দিকে ভ্রু কুচকিয়ে তাকালাম। আজকালকার মেয়েগুলা যে কি ভেবে বসে থাকে কে জানে!
— আপনার কি কমন সেন্স বলে কিছু নেই? বিয়ে বাড়িতে এসেছি নিমন্ত্রন পেয়ে। আমার ছোট বাচ্চা দের ভাল লাগে। তাই ওকে একটু আদর করে কোলে নিলাম। ভেবেছিলাম আর একটু থাকব কিন্তু না আপনাদের যা ব্যবহার.. !
এরই মধ্যে মা এসে বলল–
— কি রে রাত্রি মা কেমন আছিস?
— আরে আন্টি তুমি কখন আসলা?
ও তাহলে এই রাক্ষসিটার নাম তবে রাত্রি!! রাত্রি না রেখে রাক্ষসি রাখা উচিৎ ছিল।
— এইত একটু আগে। আর কে কে এসেছে তোমার সাথে?
— আমি আর আমার ছেলে এসেছি। — কই তোমার ছেলে?
— এই যে তোর সামনেই। কোথাও আসতে চায় না জানিস? আমি কি একা একা কি আর আসতে পারি? তাই ওকে নিয়ে এসেছি।
আমার পরিচয় পেয়ে মেয়েটা লজ্জার সাথে মাথা নিচু করে ফেলল ।
— এই তোরা থাক আমি ওদিকটাই গিয়ে দেখি। (মা)
এই বলে চলে গেল। মায়ের যাওয়া মাত্রই মেয়েটা আমাকে ছড়ি বলল।
আমি কিছু না বলে নির্ঝরাকে নিয়ে বিয়ের আসরে এলাম। পাশাপাশি বর বউকে বেশ মানিয়েছে। নির্ঝরাকে কোলে নিয়ে বর বউয়ের সাথে একটা সেল্ফি নিলাম। তারপর হাটতে হাটতে বিয়ে বাড়ির গেটের সামনে চলে আসলাম। নির্ঝরা আমার সাথেই ছিল। দেখলাম সেই বৃদ্ধ লোকটা তখনোও পথের ধারে বসে ছিল। আমি গুটি গুটি পা ফেলে লোকটার পাশে গিয়ে বসলাম। আমাকে দেখেই লোকটা ভয় পেয়ে উঠে দাড়াল। ভেবেছে হয়ত সে এখান থেকে না যাওয়াই আমি তাকে মারতে এসেছি। আমি শান্ত গলায় বললাম —
— চাচা ভয় পাবেন না আমি আপনার ক্ষতি করতে আসি নি! আপনাকে সাহায্য করতে এসেছি।
চলেন আমার সাথে!
লোকটা বিকর্শ গলায় উত্তর দিল
— কোথায় বাপজান?
— বিয়ে বাড়িতে!
— ওরা তো আমাকে ঢুকতে দেয় না!
— এখিন দিবে। আমি আছি না সাথে।
লোকটা কিছুটা ভরসা পেল এবং আমার সাথে যাওয়ার জন্য রাজি হল। ভিতরে নিয়ে গিয়ে বাবুর্চিকে বলে ওনার খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলাম। খাবার পেয়ে লোকটি ঘপাঘপ খেতে শুরু করে দিল।
“” দুই দিন খাই নি বাপজান”” এই ওয়ার্ডটা বার বার বলছিল।
আচ্ছা যখন খুব ক্ষুদা পায় তখন বুঝি এভাবেই মানুষ খায় তাই না?
লোকটা বলছে ২ দিন খাই নি আর
আমরা তো কখনো ক্ষুদার জ্বালা অনুভব ই করি নি। গেটে পাহারা দেওয়া ওই লোকগুলো জানে না ক্ষুদার জ্বালা কি।
আমি আর নির্ঝরা লোকাটার খাওয়া দেখছি । খাওয়া শেষে লোকটা আমার মাথায় হাত রেখে বলল “বাইচা থাক বাপজান আল্লা তোমারে ভাল করুক।
আজ সারাক্ষন নির্ঝরা আমার সাথে। আমি যেখানেই গিয়েছি ও আমার সাথেই ছিল। একসময় নির্ঝরার মা আমার পরিচয় পেয়ে একটু লজ্জিত অনুভব করল।
অতিথিরা খেয়ে দেয়ে চলে গেছে। এবার আমাদের পালা। একটা বড় টেবিলে খাবার আয়োজন করা হয়েছে। ওখানে রাত্রিও উপস্থিত। নির্ঝরা বাইনা ধরেছে আমার সাথে এক প্লেটে খাবে। এত অল্প সময়ে আমার আর নির্ঝরার এত ঘনিষ্টতা দেখে কেউ আর মানা করল না। খাওয়ার সময় সবার চোখ এড়িয়ে মাঝে মাঝে রাত্রি আমাকে বিভিন্ন ইশারা দিচ্ছে আর মুচকি হাসছে।
না পেরে আমিও হেসে দিয়েছি। হয়ত বুঝাতে চেষ্টা করছিল আমি ক্ষমা করে দিয়েছি কি না। আমি বেশ ভাব নিয়ে নির্ঝরাকে নিয়ে ব্যস্ততা দেখালাম। মেয়েটা রাগে ফুসছে। আড়চোখে দেখতে ভালই লাগছে।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ এবার ঘুমানোর পালা। কিন্তু বিয়ে বাড়িতে আসলে যে সমস্যাটা হয় সেটাই হল। শোবার জায়গার অভাব। আমি তৎক্ষনাৎ সবাই কে বললাম –
— আমরা একটা কাজ করতে পারি। আমরা ছেলেরা ছাদে গিয়ে শুয়। আজকে গরম ও পরেছে বেশ । চাঁদ দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে যাওয়া যাবে বেশ। সবাই আমার কথায় রাজি হল। কিন্তু নির্ঝরার আবার বাইনা ধরল আমার সাথে ঘুমবে। সবাই রাজিও হল। আমরা কয়েকজন ছেলেরা মিলে ছাদে গিয়ে শুলাম। নির্ঝরা আমার পাশেই। কখনোও কখনো আমাকে কবিতা শুনাচ্ছে আবার কখনো আমার চুল টেনে দিচ্ছে আবার আমাকে ঘুম পারিয়ে দিচ্ছে। আর বলে উঠছে–
— এই ঘুমাও এখন অনেক রাত হল। আমি কে জানো?
— তুমি তো আমার মামনি।
— না আমি তোমার মা। ঘুমাও নইলে বকা দিব।
ওর পাকা পাকা কথা শুনে থেকে থেকে হেসে উঠি।
লক্ষ্য করলাম আকাশে অনেক তারা উঠেছে। ও হাত দিয়ে সেগুলো গোনার চেষ্টা করছে। ব্যার্থ হয়ে পাশাপাশি দুটি সবথেকে উজ্জ্বল তারা দেখিয়ে বলছে —
,– যাও ওই তারাটা তুমি আর তার পাশের তারাটা আমি।
আমি ওকে আবার বুকে টেনে নিই আর ভাবি মাত্র ৪-৫ ঘন্টার পরিচয়ে ও আমাকে কতটা আপন করে নিয়েছে। কোন স্বার্থ নেই এখানে।
এটা নিঃস্বার্থ ভালবাসা। স্বার্থ ছাড়া তো আজকাল কেউ কাউকে ভালবাসে না। একটা মেয়েকে খুব ভালবাসতাম কিন্তু আসলে ও আমাকে ওর স্বার্থের জন্য ভালবেসেছিল। যখন যা চেয়েছে তাই দিয়েছি।এইত ১০ দিন আগেই ওর বিয়ে হয়ে গেছে। একটা বার জানাইনি পর্যন্ত। ৪-৫ দিন আগেও ওর জন্য পাগল ছিলাম। এখন আমি সুস্থ। ওর কথা আর মনে পড়ছে না। আমার পাশে থাকা পাগলিটা বক বক করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে। চাঁদের আলোয় কি সুন্দর ওর মুখটা জ্বল জ্বল করে উঠছে।
আমি আলতো করে ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ঘুমিয়ে পরলাম। ভোরের আলোয় ঘুম ভাঙ্গল। দেখলাম পাগলিটা এখনো ঘুমাচ্ছে। আমি উঠে বসলাম। চারপাশটা খুব শান্ত লাগছে। আমি ছাদের রেলিং ধরে দাড়ালাম। কত সুন্দর ফুরফুরে হাওয়া। আস্তে আস্তে সকাল হল। একে একে সবাই উঠে পড়ল শুধু উঠল না আমার সেই পাগলীটা। ওকে রেখেই নিচে চলে গেলাম। দেখলাম রাত্রি মোবাইল হাতে নিয়ে সকাল সকাল কার সাথে যেন কথা বলছে। আমি পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছি তিনি ওমনি ফোনটা কেটে দিয়ে আমাকে বলল–
— এই যে শুনুন!
— জ্বি!.
— গুড মনিং
— টু ইউ।
— ঘুম কেমন হল?
— বেশ ভালই আপনার?
— কাল রাতে ঘুম হয় নি!
— কেন?
— আসুন ওদিকটাই যায় তারপর বলছি।
আমি রাত্রির পিছু পিছু হাঁটতে হাঁটতে পুকুর পাড়ে চলে আসলাম।
— আপনি সাঁতার জানেন,?(রাত্রি)
— কেন বলুন তো?
— ভাবছি আপনাকে এখন ধাক্কা দিয়ে পুকুরে ফেলে দিব!
–হাহাহা দিন দিন সমস্যা নাই সকাল সকাল গোছল হয়ে যাবে।
— আপনাকে সত্যি সত্যি ধাক্কা দেওয়ার দরকার। কত্ত বার করে ছড়ি বললাম তাও আপনি কিছু বললেন না। ছড়ি বললে ইটস ওকে বলতে হয় তাও জানেন না…?
— হাহাহাহা। ইটস ওকে!
— এখন বলছেন?
— ছড়ি ফর লেইট। আচ্ছা চলুন বাড়ি ফিরে যায় নয়ত সবাই খোঁজাখুজি শুরু করে দিবে।
— আর একট থাকি না..!
— আর একটু থাকবেন?
— কেন তাড়া আছে?
— না মানে ও দিকে নির্ঝরা ঘুম থেকে ওঠে আমাকে না পেয়ে কাঁদছে হয়ত।
— ওর সাথে বেশ ভাব হয়েছে দেখছি। এমন ভাব যদি কেউ আমার সাথে করত…!.
— জ্বি!
— না কিছু না চলুন।
আমি মেয়েটার কথায় মুচকি হাসি দিলাম। বাসায় এসে যা ভেবেছি ঠিক তাই। আমাকে দেখেই দৌড়ে এসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছে
— তুমি আমাকে ফেলে কই গেছিলা? আপুর সাথে ঘুরতে গেছিলা? আমাকে নিলা না তুমি!! যাও কথা বলব না তুমার সাথে!
এই বলেই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে দিল।
আমি ওকে কোলে তুলে চোখ মুছিয়ে দিতে দিতে বললাম–
— কাঁদে না মামনি। তোমাকে পার্কে বেড়াতে নিয়ে যাব আজ! ওদের কাউকে নিব না।
— সত্যি? আমি আর তুমি যাব খালি আর কেউ না!
— ওকে মামনি!
সকালে খাওয়া শেষ করে আমি ওকে পার্কে নিয়ে আসলাম। ওর মন খুশি করার জন্য সব করতে হচ্ছে৷ ওর খুশি দেখে অনেক ভাল লাগছে।
ক দিন আগেও ভেবেছি বেঁচে থেকে কি লাভ কিন্তু আজ মনে হচ্ছে কিছু কিছু মানুষের খুশির জন্য আমার বেঁচে থাকা দরকার। আমি যদি বাসায় ফিরে যায় তবে আমি আবার একা হয়ে যাব। পাগলিটার সাথে আর দেখা হবে না। মনের মধ্যে কোথাও বাড়ি ফিরে যাওয়ার
ইচ্ছাটা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তাই নানা অজুহাতে দিন দুই দেরি করলাম। যারা অতিথি হয়ে থেকে গিয়েছিল একে একে সবাই চলে গেছে শুধু যাই নি আমরা। শেষ মেষ আমাদের বাডি যাওয়ার সময় হল।
পাগলিটাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। রাত্রির কাছে শুনলাম সে ঘুমুচ্ছে। আমি রাত্রিকে সাথে নিয়ে ওর কাছে গেলাম। ঘুমন্ত অবস্থায় ওকে ছোট্ট পরিদের মত লাগছিল। আমি আলতো করে ওর কপালে একটা চুমু একে দিলাম।
ওকে আর জাগালাম না। আমি চলে যাচ্ছি শুনলে অনেক কাঁদবে। লক্ষ্য করলাম রাত্রির মুখটাও কেমন ভারু হয়ে আছে। আমাকে কিছু বলতে গিয়েও বলছে না। সিএনজি চলে এসেছে। এখন যাবার পালা।
সিনএনজিতে ওঠার সময় সবার নজর এড়িয়ে রাত্রি একটা ছোট কাগজ মুড়িয়ে আমার হাতে গুজে দিল। “”বাড়ি গিয়ে পড়ে দেখবেন”
আকি মুচকি হাসলাম। এরপর সিটে গিয়ে বসলাম। সিনজি ছাড়তেই মন খারাপ হয়ে গেল। কাগজ টা খুলে দেখলাম। সেখানে লেখা ছিল,
,
— এই যে মিষ্টার নিলাদ্রি আমার নাম্বার দিলাম। যদি নির্ঝরার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা হয় তবে ফোন করবেন। সাবধানে যাবেন।
,
সত্যিই পাগলিটাকে খুব মিস করব।
সিএনজির গতিটা ধীরে ধীরে বেড়ে গেল। হয়ত এতক্ষনে আমাকে না দেখতে পেয়ে সাড়া বাড়ি খুঁজে বেড়াচ্ছে। সবাই ওকে মিথ্যে শান্তনা দিয়ে বলছে “” তোর আঙ্কেল কোথাও যায় নি। দ্যাখ ছাদে আছে। হয়তো ও গিয়ে খুঁজবে কিন্তু আমাকে আর পাবে না।