-ইশান আজকের বিকালের আড্ডায় আসবি?
ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় উদয় জানতে
চাইল।
-না রে পারবো না। বিকালে স্নেহা দেখা
করতে বলছে। এমনিতেই আজকে
ভার্সিটিতে আসে নাই। জানিস তো ওরে
একদিন না দেখে থাকতে পারি না।
-কিন্তু স্নেহা তো……
উদয় কিছু বলার আগে প্রলয় তাকে থামিয়ে
দেয়।
-উদয়তুই থামবি? ইশান যখন দেখা করতে
বলতেছে করুক দেখা।
-থ্যাংকস রে প্রলয়, একমাত্র তুই আমায়
বুঝতে পারিস।
-দোস্ত না তোর? আমি না বুঝলে কে বুঝবে?
যা এখন বাসায় যা।
আমি চলে আসলাম, পিছনে উদয় কে কিছু
বলতে দেখলাম। প্রলয় কিছু বুঝাচ্ছে উদয়
কে। যাইহোক পাত্তা না দিয়ে বাসায়
আসলাম।
বিকেল ৫টায় দেখা করার কথা। কিন্তু আমি
এখনি বের হবো। স্নেহার অভিযোগ আমি
সবসময় দেরি করে যাই। আসলে কথাটি
সত্যিই। আচ্ছা সত্যি কথাটি মনে করিয়ে
দিলে কি সেটা কে অভিযোগ বলা যায়?
কথাটি মাথায় আসলেও উত্তর খুঁজার জন্য
ব্যস্ত হলাম না, আমি আজকে কমপক্ষে
৩০মিনিট আগে গিয়ে পৌছাবই।
তৈরি হয়ে গেছি,কিন্তু হাত ঘড়ি টা
পাচ্ছিলাম না। সেটাই খুঁজতেছিলাম, তখন
মা রুমে আসে।
-কিরে কোথাও যাচ্ছিস নাকি?
-হুম
-কই যাবি?
আমি এখন মা কে সত্যিটা বলতে পারবো
না। যদি বলি স্নেহার সাথে দেখা করতে
যাচ্ছি তবে কিছুতেই আমায় যেতে
দিবেনা।
এমন নয় যে মা স্নেহাকে পছন্দ করেনা।
স্নেহা প্রায় আমাদের বাসায় আসতো। মা
তাকে অনেক পছন্দ করতো। ছেলের বউ
হিসেবে মেনেই নিয়েছিল বলতে গেলে।
কিন্তু হঠাত করে কি থেকে কি হয়ে গেলো।
এখন স্নেহার কথা বললেই মা কেমন করে
যেন তাকায় আমার দিকে। তাকানো টা
স্বাভাবিক না এটুকু তো বুঝতেই পারি। তাই
এখন মিথ্যে বলতেই হল।
-বন্ধুদের সাথে আড্ডায় যাচ্ছি মা। ওরা
অনেক করে বললো।
মায়ের মুখে হাসি ফোঁটল।
-আচ্ছা যা, তবে সন্ধ্যার আগে ফিরে আসিস
কিন্তু।
-কেন? আমি কি আর সন্ধ্যার পর বাইরে যাই
নি নাকি?
-লক্ষ্মী ছেলে আমার, বুঝার চেষ্টা কর। তুই
এখন অসুস্থ…..
-মা,(রেগে) আমি আগেও বলছি আমার
কোনো অসুখ নেই। আমি স্বাভাবিক আছি।
-ইয়ে… মানে….. হাঁ, তুইতো ঠিকই আছিস।
আমি বলছিলাম তুই বাইরে থাকলে আমি
অসুস্থ হয়ে যাই। মাকে টেনশনে রাখতে
ভালো লাগে বুঝি?
-না মা, একদম না। (এই বলে মায়ের গালে চুমু
দিলাম) আচ্ছা আমি সন্ধ্যার সাথে সাথেই
ফিরবো।
-আমার লক্ষ্মী ছেলে।(মা আমার কপালে
চুমু দিয়ে বলল)
-আরেকটা কথা, মোবাইল টা রেখে গেলাম।
স্নেহা ফোন দিলে বলো আমি আড্ডায়
গেছি।রাতে তাকে ফোন দিবো।
স্নেহার কথা বলতেই আবার মায়ের মুখটা
মলিন হয়ে গেলো।
আমি বেরিয়ে এলাম। সত্যিই মোবাইল টা
রেখে আসছি। যাতে কেউ আমায় বিরক্ত
করতে না পারে।
!
৩০মিনিট আগে গিয়ে হাজির হলাম।
ভাবতেই ভালো লাগছে আজকে আমি আগে
আসতে পারছি। কিন্তু এখন এত সময়
কাটাবো কিভাবে?? হঠাত করেই মাথায়
দারুন আইডিয়া আসলো।
যখন একাকী সময় কাটে না তখন মনের
টিভিতে পুরানো দিনের স্মৃতি চালু করে
দিলেই হল। কিভাবে যে সময় চলে যায়
বুঝাই যায় না। সেটাই করবো এখন…………
,
-ইশানের বাচ্চা……..
রাগে কটমট করছে স্নেহা।
-রেগে আছো কেন?
-তুই আমার সাথে প্রেম করবি আর অন্য
মেয়েদের সাথে কথা বলবি? এটা আমি
মেনে নেবো ভাবছিস? কুত্তা,হারামি,ব
ান্দর।
-আরে আমি আবার কখন কোন মেয়ের সাথে
কথা বললাম?
-ক্লাস শেষে অহনার সাথে কি এত কথা?
-এত কথা কই দেখলে? ও এসে আমার কাছে
নোট চাইলো আমি বললাম ফাহাদের সাথে
যেন যোগাযোগ করে।
-এত ছেলে থাকতে তোর কাছে কেন চাইতে
আসে?
-সেটা আমি কি জানি? এখন একজন এসে যদি
নিজ থেকে আমার সাথে কথা বলে আমি
কি মুড দেখাবো?
-তোর যা ইচ্ছা কর গিয়ে। আমার কি,
আমাকে আর ফোন দিবি না। তোর সাথে
সিরিয়াসলি আর কথা নাই।
কথাটি বলেই চলে যায় স্নেহা।
কিন্তু আমি জানি সে নিজেই কথা না বলে
থাকতে পারবেনা।
রাত ১০টায় ফোন আসে।
-ঐ তুমি আমায় ফোন করলা না কেন?
-ভার্সিটি থেকে ফিরেই বন্ধুদের সাথে
আড্ডায় চলে যাই। সন্ধ্যায় পড়তে বসলাম,
ভাবলাম তুমিও পড়তেছো তাই ডিস্টার্ব
করতে চাইলাম না। খেয়ে এসেই আমি ফোন
দিতাম।
-বুঝিতো আমি। আমি মানা করলাম দেখে
একবারো ফোন দিলে না। তুমি কখনোই
আমার রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করো না।
-সরি বাবুউ, আমার ভুল হয়ে গেছে। এবারের
মতো মাফ করে দাও।
-তুমি এমন করো কেন ইশান? সত্যিই আমার
সহ্য হয়না। প্লিজ বাবুউ আর এমন করো না।
-আচ্ছা আচ্ছা আর এমন হবে না।
হাহাহা….. কথাগুলো মনে করতেই পার্কের
মধ্যেই আপন মনে হেসে উঠলাম। পাগল
একটা। অল্পতেই রেগে যায়। কিন্তু রাগ টা
বেশিক্ষণ থাকেনা। আর এত হিংসুটে,
কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখলেই
রেগে যায়। অবশ্য ভালবাসে বলেই এমন
করে।
হাত ঘড়ি দেখলাম ৫:২০ বাজে। এই প্রথম
স্নেহা দেরি করছে।
মনে পড়ে গেলো আরো একটি দিনের কথা।
সেদিন আমি পুরো ৩০মিনিট দেরি করে
গেছিলাম।
-এখন মহারাজের আসার সময় হল?
-সরি বাবুউ, আসলে……
-একটা মেয়ের পার্কে একা একা বসে
থাকাটা কতটা অস্বস্তিদায়ক সেটা বুঝো?
না কখনো বুঝার চেষ্টা করেছো?
-সরিইইই…..
-সরি বললেই সব শেষ? কত বাজে ছেলেরা
বাজে ইঙ্গিত দেয়। সব সহ্য করে তোমার
সাথে দেখা করতে আসি আর তুমি আসো
দেরি করে।
-আচ্ছা আর করবো না। চলো আইসক্রিম
খাবো।
আমি সবসময় আর করবো না বললেও বারবার
করতাম। জানি অনেক কষ্ট দিতাম তাকে।
কিন্তু পাগলিটা সব সহ্য করে নিতো। শুধু
মাত্র ভালবাসে বলে।
দুনিয়াটা হল বদলার জায়গা। এখানে তুমি
যদি কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকো অবশ্যই
সেটার শাস্তি তুমি দুনিয়াতেই ভোগ করে
যাবে।
আমিও এখন ভোগ করছি।
৬:৩০ বাজে। ছাড়িদিকে অন্ধকার নেমে
আসছে। আর বসে থাকা যাবে না। মাকে
বলেছি সন্ধ্যার সাথে সাথেই ফিরবো।
উঠে দাঁড়ালাম। কেননা আমি জানি
স্নেহা আর কোনো দিন আসবে না।
কয়েকদিন আগে হঠাত করেই স্নেহা
জানালো তার ফ্যামিলি গ্রামের বাড়ি
যাবে। হঠাত করে থার্ড ইয়ার ফাইনাল
এক্সাম সামনে রেখে গ্রামের বাড়ি
যাওয়াটা আমার মতো স্নেহাও মেনে
নিতে পারছিল না। কিন্তু তার বাবার কথা
বিরুদ্ধে কিছু বলতেও পারেনা।তাই রাজি
হয়।
স্নেহার কাছে শুনেছি সেখানে
মোবাইলের নেটওয়ার্ক ভালো না।
কিন্তু সে চলে যাওয়ার পর আমার যেন
কিছুতেই সময় যায়না।অনেক কষ্টে ৫দিন
কাটালাম। একটি বারের জন্যও স্নেহা ফোন
করলো না। এত বাজেই কি ওখানের
নেটওয়ার্ক?
কিন্তু অপেক্ষা করা ছাড়া আমার আর কি
বা করার আছে? দেখতে দেখতে এক্সাম চলে
এলো।আমি আর থাকতে পারলাম না।
এক্সামের আগের দিন ওর বাসায় গেলাম।
এটা দেখতে যে ওরা কি এখনো গ্রামের
বাড়িতে আছে কিনা। দারোয়ান কে
জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম ওর বাবা
মা বাসায় আছে আর স্নেহার নাকি বিয়ে
হয়ে গেছে। ভিতর টা ফেটে যাচ্ছিলো
যদিও দারোয়ান এর কথাটি আমার বিশ্বাস
হচ্ছিলো না। আমার স্নেহা আমার সাথে
এমন করতেই পারে না। চলে এলাম সেখান
থেকে।
পরে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন ভাবে
খুঁজ খবর নিয়ে যা জানতে পারলাম…..
স্নেহার বাবা আমাদের রিলেশনের
ব্যাপারে জেনে গিয়েছিলেন। কিন্তু
স্নেহাকে কিছু বলেননি। স্বাভাবিক
ছিলেন একদম। কিন্তু বসে থাকেন নি।
গোপনে ওর বিয়ে ঠিক ফেলেন।পরে তাকে
নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যান। সেখানে
যাওয়া মাত্র স্নেহার মোবাইল কেড়ে
নেন।
স্নেহার কিছুই করার সুযোগ ছিল না।
এই ঘটনার পর আমি অস্বাভাবিক আচরণ
করতে শুরু করি। সবার সাথে এমন করে কথা
বলি যেন স্নেহা এখনো আমার জীবনে
আছে,হারিয়ে যায়নি। আমার কথাবার্তা ও
আচরণে সবাই ভাবছে যে আমি পাগল হয়ে
গেছে।
আপন মনেই হাসলাম, আমিতো এটাই
চাচ্ছিলাম যে সবাই আমায় পাগল ভাবোক।
আমি সাকসেস।
এটার কারণ একটাই। পড়ালেখা শেষ হলেই
বাবা মা বিয়ে দিতে চাইবে। কিন্তু আমি
স্নেহা ছাড়া অন্য কাউকে কিভাবে বিয়ে
করবো?? তাই এই নাটক, পাগল কে কেউ বিয়ে
করবেনা।
আবারো আপন মনে হাসলাম। এইবার একটু
জুড়েই হেসে ফেলছি। পাশ দিয়ে যাওয়া
লোকটির কাপাল কুঁচকে তাকানো দেখেই
বুঝলাম সেও আমায় অস্বাভাবিক ভাবছে।
স্নেহা আমার থেকে দূরে থাকতে পারে,
কিন্তু আমার কল্পনা থেকে কখনো দূরে
যেতে পারবেনা। কল্পনাতে তাকে রেখে
দেবো সারাজীবনের জন্য।