‘ধুর ব্যাটা! এতো বকবক করছিস কেন? তোর মেয়েকে আমি ভালবাসি, বিয়ে দিলে দে নইলে ভাগিয়ে নিয়ে যাবো!’
মনে মনে কথাগুলো বলে আপন মনে হেসে উঠল আদি। তার একটু-আধটু নেশার অভ্যাস আছে। আর এখন তার মনে হচ্ছে সে নেশার ঘোরে আছে।
রাকিব সাহেব কথা বলেই চলেছেন। কি বলছেন তার কিছুই বুঝছে না আদি। শুধু বুঝতে পারছে তার সামনে ভদ্রলোক হাত নেড়ে নেড়ে কি যেন বলছেন। আদির চোখ তখন পাশের জানালার কাচ ভেদ করে চলে গেছে গাছের একটা ডালে। সেই ডালে দুটো কাক বসে আছে! আচ্ছা মানুষ যখন একা হয়ে যায়, ভীষণ দুঃখি থাকে তখন কি তারা শুধু কাকই দেখে? কাক কেন দেখে? এই প্রশ্নটা করতে হবে রূপাকে।
রাকিব সাহেব ধমকের সুরে বললেন…
— এই ছেলে, এভরিথিং ক্লিয়ার? ইজ দেয়ার এনি ডাউট?
রাকিব সাহেব আবার বললেন….
এর পর………।।
— এরপরে যেন আর কখনো আমার মেয়ের পাশে না দেখি। দেখলেই তোকে বুঝাবো আমি কি জিনিস!
‘আচ্ছা, রাকিব সাহেব কি কোন জিনিস? হে হে সে যাই হোক। সিনেমার চৌধুরি সাহেবরা তাদের মেয়েদেরকে ভুলে যাবার জন্য মোটা অংকের টাকা দেন! কিন্তু এই ব্যাটা শুধু হুমকি-ধামকিই দিল। এটা মেনে নেওয়া যায়না। এখান থেকে বের হবার পরেই টাকার দরকার হবে। সাগর ভাই বলেছে, টাকা না দিলে সে আজকে নেশাদ্রব্য দিবে না। ‘
মনে মনে ভাবছিল আদি। রাকিব সাহেব তার ভাব-ভঙ্গি দেখে আরেকবার ধমক দিয়ে বললেন….
— তো এবার উঠে পড়, আর কখনো যেন আমি না দেখি…..
— লাইটার হবে?
— কি?
— একটা সিগারেট খাবো, কিন্তু জ্বালাতে পারছি না।
— না নেই….
— ওহ্! আচ্ছা…বিষন্ন মন নিয়ে এসি করা রুম থেকে বের হল আদি। রূপার বাবার কোন কথাই সে বোঝেনি। শুধু বুঝতে পেরেছে যে, উনি চান না আদি তার মেয়ের সাথে মিশুক! তবে এজন্য আদির মন খারাপ না। তার মন খারাপ পকেটের সিগারেটটা না ধরাতে পারার জন্য। এখন তার ধীরে ধীরে নেশা উঠছে। মাথা ধরতে শুরু করেছে।
বাইরে থেকে সিগারেট জ্বালানোর ব্যবস্থা হলো। আদি কাঠফাটা রোদের ভিতরে সিগারেট টানতে টানতে হেটে চলেছে। তার পায়ে জুতা আছে। সে হিমু না, হিমুর পায়ে জুতা থাকার কথা না। হিমু নেশা করে না। হিমুর অনেক আধ্যাত্মিক শক্তি আছে। আদির কোন আধ্যাত্মিক শক্তি নেই। তবে হিমু গল্পের হিমু চরিত্রের সাথে তার কিছু মিল আছে। আদি হেটে চলেছে। উদ্দেশ্য সাগর ভাইয়ের আস্তানা। আদি মনে করে সাগর ভাই ভালো মানুষ। নরম দিলের মানুষ। লোকটার চেহাড়াও ভীষণ মায়াবী। সে যতই বলুক টাকা ছাড়া আদিকে এক চিমটিও নেশা করতে দেবে না। তারপরেও আদি তার কাছে গেলে সে কখনো না করে না ।
এই মূহুর্তে আদি পড়ে আছে হাসপাতালের বেডে। গতকাল রাতে একটু বেশিই নেশা করে ফেলেছিল সে। তারপরে রাতের দিকে যখন রাস্তা দিয়ে বাসায় ফিরছিল, তখন কিছু ছেলে তাকে খুব মারধর করেছে। আদি বুঝতে পেরেছে এগুলো রাকিব সাহেবের লোক। মানুষটা আদির মাথা নেড়ে স্বীকারোক্তিকে হয়ত মেনে নিতে পারে নি।
আদি শুয়ে আছে। গতকালের নেশার ঘোর তার এখনো যায় নি। ওর মাথার পাশে রূপা বসে আছে। একটা না, কয়েকটা! রূপার চোখে পানি… আদির চোখ মেলে তাকানো দেখে বলল..
— আমি জানি, বাবার এই কাজ! তোমার খুব লেগেছে না?
আদি কোন উত্তর দিতে পারছে না। কেননা তার মনে হচ্ছে রূপা রূপি সেই মেয়েটা আসলে নার্স! নেশার কারণে চোখে ভুলভাল দেখছে। মেয়েটা চোখ মুছতে মুছতে আবারো বলল….
— তুমি কোন চিন্তা কর না। এখানের সব বিল আমি দিয়ে দেব। তুমি সুস্থ হবার পরেই আমরা বিয়ে করে নেব!
এই মেয়েটা তাকে এতো ভালবাসে কেন? আদির ইচ্ছা করছে মেয়েটাকে টেনে একটু কাছে নিয়ে আসতে। তারপরে কপালে একটা চুমু দিতে। কিন্তু সে পারছে না। পারছে না দুটে কারণে, প্রথমত তার সন্দেহ এই মেয়েটা আসলে রূপাই না! আর দ্বিতীয়ত সে দেখতে পারছে তার মাথার পাশে ২-৩ টা রূপা বসে আছে। কোনটাকে টেনে সে কাছে নেবে?
ততক্ষণে রূপাই একটু কাছে এসে মাথাটা নইয়ে আদির কপালে চুমু খেয়ে নিল। তারপরে আবারো চোখ মুছতে মুছতে বলল…..
— তোমার কিছু হবে না। আমি থাকতে তোমার কিছুই হতে দেব না….
তারপর রূপাই আদিকে …..