সকাল সকাল বালিশে রক্ত দেখে রীতিমত ঘাবড়ে গেলো রাজু।কানের কাছে হাত দিয়ে দেখে আজও ব্লিডিং হচ্ছে।পাশেই তানিশা ঘুমোচ্ছে।তাড়াহুড়ো করে বাথরুমে চলে গেলো।
বালিশে লেগে থাকা রক্তগুলো পরিষ্কার করে নিলো।কিছু সময়পর সে ও নিজে ফ্রেশ হয়ে আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে রুমে আসলো।
.
“তোমাকে না জরুরি কিছু কথা বলার ছিলো।”
তানিশা অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলো,তখনই কথাটা বললো,রাজু।
:-তুমি কি দেখতেছো না,আমার যে তাড়া আছে।(বিরক্তি নিয়ে বললো,তানিশা)
:-কথাগুলো তোমাকে বলা দরকার,,,
:-পরে বলিও,এমনিতে অফিসের অনেক দেরী হয়ে গেছে।
:-ঠিকাছে,সাবধানে যেও।
:-আচ্চা,তুমি কি অফিসে যাবে না?নাকি আজকেও সেই একই অজুহাত?
:-সত্যি বলতে আমার শরীরটা আজও খুব খারাপ,তাই আজকেও যেতে পারবো না।
:-ঠিকাছে,তাহলে আর কি,তুমি নাস্তা করে নিয়ে বাসায় থাকো।আমি তাহলে আসি।
এই বলে তানিশা তাড়াহুড়ো করে অফিসের উর্দেশ্য বাহির হয়ে গেলো।রাজু,তানিশা চলে যাওয়ার পথে কিছু সময় তাকিয়ে থাকলো।এরপর নাস্তা না করে রুমে এসে তার ড্রয়ার থেকে কাগজপত্র আর রিপোর্ট গুলো সব গুছিয়ে নিয়ে বাসা থেকে বাহির হয়ে হাসপাতালের উর্দেশ্যে রওয়ানা দিলো।
রাজুর আর তানিশার পারিবারিক ভাবেই বিয়ে হয়েছে,আজ ৮মাস হলো।দুজনেই চাকরি করে,সেই সুবাদে শহরে আলাদা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকে।বিয়ের প্রথম কয়েক মাস খুব ভালোই ছিলো তাদের সম্পর্কটা।ভালোবাসার কোন কমতিই ছিলো না।কিন্তু গত দুইমাস যাবৎ তাদের সম্পর্ক টা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না,সম্পর্কের মাঝে কেমন যেন দুরত্ব তৈরি হয়ে যাচ্ছে।না,ওদের মাঝে কোনরকম ঝগড়া বা ঝামেলা কিছুই হয়নি।শুধু ব্যস্ততাটা তাদের ঘিরে নিয়েছে।
আজ তানিশা অনেক খুশী,কারণ তার প্রমোশন হতে চলেছে।তার অক্লান্ত পরিশ্রমের সুফল টা পেতে যাচ্ছে,খুশী ধরে রাখে কে?যাইহোক,খুশী মনে বাসায় ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।বাসায় এসে তানিশার মন-মেজাজ পুরোই খারাপ হয়ে গেলো।রুমে গিয়ে দেখে রাজু পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে।
:-এই,কি ব্যাপার,তুমি এই অসময়ে ঘুমাচ্ছো কেন?
হালকা চিৎকারের সুরে কথাটা বললো তানিশা।
:-ওহ্,তুমি এসে গেছো?
তানিশার ডাকে ঘুম ভেংগে গেলে,সোজা হয়ে উঠে বসে কথাটা বললো রাজু।
:-হুম দেখতেই তো পাচ্ছো।তা সারাদিন তো বাসায় পড়ে ছিলে,রান্নাটা তো অন্তত করতে পারতে।কেন কর নাই?
:-সরি,শরীরটা খুব খারাপ লাগছিলো,তাই আর কি একটু ঘুমিয়ে পড়ছিলাম।
:-শরীর খারাপ,শরীর খারাপ,কথাটা আমাকে না বলে গিয়ে ডাক্তার দেখাতে পারনি?
:-হুম গিয়েছিলাম।
:-ভালোই করছো,যদি রান্নাটা করে নিতে তাহলে কতই না ভালো হতো।সারাদিন অফিস করে আসার পর ক্লান্ত শরীরে আর রান্না করতে ইচ্ছে হয় না।এখন আবার গিয়ে রান্না করতে হবে।
এই বলে বিরক্তিমাখা মুখ নিয়ে রুম থেকে বাহির হয়ে গেলো।
“তোমাকে তো একটা কথা বলাই হয়নি”
খাওয়া-দাওয়ার মাঝেই রাজুর উর্দেশ্যে কথাটা বললো তানিশা।
:-হুম,বলো,,(রাজু)
:-আমার প্রমোশন হতে যাচ্ছে।(তানিশা)
:-হুম,ভালোই তো।
স্বাভাবিক ভাবেই বললো রাজু।
:-তুমি খুশী হওনি?
:-আরে খুশী না হওয়ার কি আছে।হুম,খুব খুশীই হয়েছি।
:-না,তুমি খুশী হও নাই।খুশী হবে কি করে,আমার প্রমোশন হতে যাচ্ছে সেটা শুনে তোমার গা জ্বলতেছে।
:-মানে কি?কি বলতেছো?গা জ্বলতে যাবে কেন আমার?
:-খুশী হলে ওইরকম মন খারাপ করে কথাটা বলতে না।তুমি তো মনোযোগ সহকারে কাজ করো না,আর অফিস মিস দাও।যদি তুমি কাজকে গুরুত্ব দিতে আর কাজে সময়টা একটু বেশী দিতে তাহলে অনেক আগেই তোমার প্রমোশন হতো।
.
“একজন আরেকজনকে সময় দিতে পারে না,সারাদিন ব্যস্ততা নিয়ে থাকতে হয়,কি দরকার এমন চাকরির আর প্রমোশনের?”
বিড়-বিড় করে কথাটা বললো,রাজু।
:-কি বললে তুমি?(তানিশা)
:-না,কিছু না।তুমি খাও তো।(রাজু)
:-হুম,আচ্ছা,তোমার না আমাকে কি কথা বলার ছিলো?
:-কই না তো,কিছু বলার ছিলো না।
এই বলে রাজু তানিশার কথাটা এড়িয়ে গেলো।
রাজুর চেহারাটা দিন দিন কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে,সেটা হয়তো তানিশার চোখেই পড়তেছে।রাজুর তানিশাকে কিছু যেন বলতে চাইছিলো।কিন্তু কি যেন ভেবে,সে তা এড়িয়ে গেলো।
কি সমস্যা?এমন করতেছো কেন?একটু শান্তিতে ঘুমাতেও পারবো না নাকি?”
রাজু বিছানায় এপাশ-ওপাশ করায় বিরক্তি নিয়ে কথাটা বললো তানিশা।
:-সরি,মাথার পেছনটায় কেমন যেন ব্যথা করতেছে,তাই আরকি,,(রাজু)
:-তো গিয়ে একটা ব্যথার ঔষধ খেয়ে নাও না।আর ডাক্তার কি তোমাকে কোন ঔষধ দেয়নি?
রাজুর কথা শেষ হওয়ার আগেই ওকে থামিয়ে দিয়ে কথাটা বললো তানিশা।
:-হুম,খেয়েছি।
:-প্লিজ,একটু নিরিবিলি ঘুমিয়ে নাও,তাহলে ব্যথাটাও চলে যাবে।আর আমাকেও শান্তিতে ঘুমোতে দাও।
:-হুম,তুমি ঘুমাও।
এই বলে রাজু বিছানা থেকে উঠে গেলো।
:-কি হলো?কোথায় যাচ্ছো তুমি?
রাজু যেই অন্য রুমের দিকে পা বাড়ালো,তখনই কথাটা বললো তানিশা।
:-সারাটাদিন অফিস করে,বাসায় এসে রান্না-বান্না করে তুমি খুব ক্লান্ত হয়ে গেছো।তোমার একটু ঘুমের দরকার।(রাজু)
:-তো,তুমি কেন উঠে গেছো?
(অবাক হয়ে বললো তানিশা)
:-আমার মাথা ব্যথাটা যাবে না,হয়তো সারা রাত ও থাকতে পারে।আমার কারণে যদি তোমার ঘুমের ব্যঘাত ঘটে,তাই আমি ওই রুমে ঘুমাতে যাচ্ছি।
:-তোমার যা মর্জি হয়,করো।
:-হুম,তুমি ঘুমিয়ে পড়ো আর কি।
এই বলে রাজু রুম থেকে বাহির হয়ে,অন্য রুমটায় চলে আসলো।
এরপর কিছু সময় বিছানায় শুয়ে থাকলো।কিন্তু পারছে না আর শুয়ে থাকতে,চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরতেছে।মাথার ব্যথাটাও ক্রমশ বেড়েই চলেছে।শুয়ে থাকতে না পেরে কি যেন ভেবে উঠে পড়লো।পুরো শরীর ঘামতেছে।ঘাড়ে হাত দিয়ে দেখে যে রক্তও বেয়ে পড়তেছে।আর কিছু না ভেবে বাথরুমে চলে আসলো।শুধু কান দিয়ে না,নাক দিয়েও রক্ত ঝরতেছে।নিজেকে সামলে নেওয়ার চেওয়ার চেষ্টা করলো সে।কিছু একটা চিন্তা করে নিজেকে সামলে নিয়ে আবারও রুমে আসলো।
পরেরদিন,,,
তানিশা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে নাস্তা তৈরি করার কাজে ব্যস্ত থাকলো।রাজুকে আবশ্যক অফিসে যাওয়ার জন্য ডাক দিলো।কিন্তু কোন সাড়া পেল না।তাই রুমের দিকে গেলো,দেখলো ভেতর থেকে দরজাটা লাগানো।হয়তো মাথা ব্যথার কারণে সারারাত ঘুম হয়নি,এখন একটু ঘুমাচ্ছে যেহেতু,ডেকে বিরক্ত করে কি লাভ।এটা ভেবে রাজুকে আর না ডেকে,নাস্তা প্রস্তুত করে টেবিলে সাজিয়ে রেখে,নিজে প্রস্তুত হয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য বাহির হয়ে পড়লো।
এখনো প্রমোশন লেটার হাতেই পায়নি,অথচ অফিসে আসা মাত্রই সবাই তানিশাকে শুভেচ্ছো,অভিনন্দন জানাতে লাগলো।তানিশা ও খুব খুশী।অফিসের মেয়ে কলিগ গুলো তানিশার জন্য একটা সেলিব্রেশন পার্টি অ্যারেঞ্জ করতে চাইলে তানিশা বারণ করে দেয়।কিন্তু অফিসের সবাই জোর করায়,তানিশা আর বারণ করতে পারেনি।এই পার্টির কারণে আজ অফিস লাঞ্চ টাইমে ছুটি হবে,আর পার্টির আয়োজন চলবে।
তানিশা ভাবলো রাজুকে ফোন দিয়ে আসতে বলবে,যদি আসতে না পারে তাহলে বলবে আজ ওর আসতে একটু দেরী হবে।যেই ভাবা,সেই কাজ।ফোনে রিং হয়েই চলেছে,কিন্তু রিসিব করতেছে না।তানিশার মন-মেজাজ খুব খারাপ হয়ে গেলো।তাই ও নিজেই নিজের ফোন সাইলেন্ট করে রাখলো।এরপর পার্টিতে অংশগ্রহন করলো।
প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান সহ সবাই উপস্থিত হয়েছে,পার্টিতে।এক এক করে সকলেই তাদের আলোচনা রাখলো।সবাই তানিশার সুনাম করলো,খুব কর্মঠ ও পরিশ্রমী,কাজকে অনেক গুরুত্ব দেয়,ইত্যাদি,ইত্যাদি।তানিশা ও সকলের উর্দেশ্যে কিছু কথা বললো।সবশেষে,প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান তানিশার হাতে প্রমোশন লেটার তুলে দিলেন।তানিশা কল্পনাও করেনি যে এত আয়োজনের মাঝে তার হাতে প্রমোশন লেটার তুলে দিবে।
এতসবের মাঝে তানিশা সকলের মাঝে রাজুকে খুঁজতে লাগলো,কিন্তু ওর কোন দেখাই পেলো না।তানিশা ভাবলো তার মোবাইল যেহেতু সাইলেন্ট মুড এ আছে,রাজু হয়তো ফোন দিতে দিতে বিরক্ত হয়ে যাবে,আর ওর জন্য চিন্তা করতে করতে একসময় অফিসেই চলে আসবে।কারণ,তানিশার কখনো বাসায় ফিরতে দেরী হলে রাজু ফোন দিতে দিতে বিরক্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত অফিসে চলে আসে।কিন্তু আজ এমনটা হলো না,তানিশা খুবই অবাক হলো।মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো রাজু কল দিলো কিনা।কিন্তু না,রাজুর কোন কলও নেই।নিমিশেই তানিশার খুশী আর আনন্দটা উধাও হয়ে গেলো।রাজু যে এমন করবে সেটা ও ভাবেনি।খুব রাগ ও অভিমান নিয়ে বাসার দিকে রওয়ানা দিলো তানিশা।
.
বাসায় এসে পৌঁছাতে প্রায় সাড়ে সাতটা বেজে গেলো।
তানিশার রাজুর উপর রাগটা আরো বাড়তেছে।
বাসাটা পুরো অন্ধকার,নিস্তব্ধ,মনে হয় ভেতরে কেউই নেই,এমন একটা পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে।বাসার ভেতরে ডুকার পর টেবিলের উপর চোখ গেলো,সকালে সাজিয়ে রাখা নাস্তা ঠিক আগের মতই আছে।তানিশা অবাক হয়ে গেলো।কি যেন ভেবে রাজু যে রুমে শুইছিলো,ওই রুমের দিকে দৌড়ে আসলো।এসেই চোখ ছানা-বড়া হয়ে গেলো আর মনে ভয় কাজ শুরু করলো।কারণ দরজাটা ঠিক সকালের মতই ভেতর থেকে বন্ধ।রাজুকে ডাকতে লাগলো,চিৎকার করে করে ডাকতে লাগলো।কিন্তু ভেতর থেকে কোন সাড়া আসতেছে না।ইতিমধ্য তানিশার মনে ভয় এবং মাথা কাজ করা কেমন যেন বন্ধ হয়ে আসছে।কিছুসময় ধরে দরজায় ধাক্কা দিতে লাগলো।কিন্তু খুলতেছে না।তানিশা দৌড়ে বাসা থেকে বাহিরে এসে কিছু লোক-জন ডেকে এনে দরজা ভাঙ্গালো।দরজা ভেংগে ভেতরে তাকাতেই তানিশার মাথায় যেন আকাশ ভেংগে পড়লো।
যতই এক পা এগুচ্ছে,ততই তানিশার হার্টবিট বাড়তে শুরু করেছে,আর পুরো শরীর কাঁপতেছে।রাজুর হাত ধরলো,খুব ঠান্ডা হয়ে জমে গেছে।ফ্লোরে পড়ে থাকা রাজুর মাথাটাকে কোলে তুলে নিলো,চুলের মাঝে লেগে থাকা রক্তগুলোও শুকিয়ে গেছে।তানিশার আর বুঝতে বাকি রইলো না,রাজু যে আর নেই।রাজুর শরীরটাকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে চিৎকার দিয়ে উঠলো তানিশা।হুম,তানিশা খুব কাঁদতেছে।খুব বেশীই কাঁন্না করতেছে।চোখের পানি ঝরে পড়তে লাগলো রাজুর মুখের উপর।তানিশার চোখ গেলো টেবিলের উপর পড়ে থাকা রক্ত মাখা কাগজটার উপর।হুম,কাগজটায় কিছু লেখা আছে,তানিশা কাগজটা হাতে নিয়ে,চোখের পানি মুছে পড়তে শুরু করলো,,,
“জানো তানিশা,যত একটা সেকেন্ড পার হচ্ছে,আমি ততই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।হুম,আমি প্রতিনিয়ত মৃত্যুর প্রহর গুনতেছি।মনে পড়ে গত কয়েকদিন আগে তোমার ওড়না চাকায় পেঁছিয়ে হওয়া বাইক অ্যাক্সিডেন্টের কথা?পেছন থেকে আমি একটা ইটের মাঝে পড়ে মাথার পেছনটা আঘাত পেয়েছিলাম।মুহূর্তের জন্য আমি সবকিছু অন্ধকার দেখতে পেয়েছিলাম।যখন সবকিছু স্বাভাবিক হয়েছিলো,তখন দেখি তুমি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলে।জানো,খুব ভয় পেয়েছিলাম,তোমাকে ওভাবে পড়ে থাকতে দেখে।তাড়াহুড়ো করে তোমাকে হাসপাতালে নিয়েও যাই।তোমাকে নিয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে,আমি আমার মাথায় পাওয়া আঘাতটার কথা ভুলে গিয়ে সাধারণ ট্রিটমেন্ট নিয়েছিলাম।গত কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড মাথা ব্যথার কারণে অফিস করতে পারছিলাম না।গত তিনদিন আগে থেকে আমার কান দিয়ে রক্ত ঝরছিলো।তাই,ডাক্তারকে সবকিছু বলার পর আমার চেকআপ করায়।রিপোর্টে যা এসেছে তা দেখে ডাক্তার নিজেও বুঝে গেছেন যে আমি আর বেশীদিন বাঁচবো না।হুম,আঘাতটা গুরুতর হওয়ায় আমার মস্তিষ্কের শিরা গুলো ছিড়ে গিয়ে ওখানটায় রক্ত আর পানি জমে যায়,আর এখন সেইগুলো কান দিয়ে বাহির হয়ে আসতে লাগলো।বাঁচার আশাটা কার না থাকে,কিন্তু আমার এখন সেই আশা বা চাওয়াও নেই।আমি মারা যাবো,সেটা নিয়ে আমার খুব একটা আফসুসও নেই,কারণ ইতিমধ্যে তোমার আর আমার মাঝে থাকা ভালোবাসাটা ব্যস্ততার মাঝে আড়াল হয়ে গেছে।তুমি এতটাই ব্যস্ত থাকো যে,আমি কখন খাই,কখন ঘুমাই সেটা বুঝতেও পারতে না।এই কয়েকটা দিনে আমার চেহারাটা দেখেও তুমি কিছু বুঝতে পারনি।অনেকবার করে তোমাকে বিষয়টা বলতে চেয়েছি,কিন্তু তোমার ব্যস্ততার কারণে বলার সুযোগ হয়নি।জানো খুব মাথা ব্যথা করতেছে,কান দিয়ে রক্ত ঝরতেছে,আর নাক দিয়েও।তোমাকে ছেড়ে যাবো সেটা ভাবতে কিন্তু আমার মোটেই কষ্ট হচ্ছে না।তবে লিখতে হাতটা খুব কাঁপতেছে,আর চোখের পানিটাও অনবরত ঝরতেছে।তোমাকে অনেক কিছু বলার ছিলো।কিন্তু সাহস করে উঠতে পারলাম না।তোমার রুমে গেলাম,ভাবলাম এখনই সব বলে দিবো।কিন্তু তুমি গভীর ঘুমে আছো।অনেকক্ষন তোমার মায়াবী চেহারাটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।ভাবলাম,তোমাকে কিছু বলতে পারি আর না পারি,কিছু লিখে যেতে তো অবশ্যই পারি।জানো,আমার খুব কষ্ট হচ্ছে,মাথা ব্যথাটা ক্রমশ বাড়তে চলেছে,নাক আর কান দিয়ে রক্ত বাহির হয়েই চলেছে।কালকে সকাল পর্যন্ত আমি বাঁচবো কিনা,তারও কোন নিশ্চয়তা নেই।তাই লেখাটা রেখে যাচ্ছি তোমার জন্য।আর হ্যাঁ,আমাকে নিয়ে ভেবে তোমার কষ্ট পাওয়ার ও কোন মানে নেই।যদি আমার কিছু হয়ে যায়,তাহলে ভালোবাসার মতো আমাকেও তোমার জীবন থেকে আড়াল করে দিয়ে ব্যস্ততাকে নিজের করে নিও।আর কিছু পারছি না লিখতে।ব্যথাটাও সহ্য করতে পারতেছি না।ভালো থেকো,নিজের খেয়ালও রেখো।আমি তো তোমার থেকে আড়াল হয়েই যাবো,তুমিও রাজু নামক ছেলেটাকে নিজের জীবন থেকে আড়াল করে দিও।”
লেখাটা পড়ে কান্না করতে করতে তানিশা চিৎকার দিয়ে রাজুকে ফিরে আসতে বলতেছে।কিন্তু রাজু যে আর ফেরার নয়।সকলের ন্যায়,সে ও ব্যস্ত পৃথিবী থেকে আড়াল হয়ে গিয়েছে।যত যাই হোক,কাছের মানুষগুলোকে একটু চোখের সামনে সামনে রাখা উচিত,সে কি বলতে চায়,তার আকুতি-মিনতি শুনে আর বুঝে নেওয়া উচিত।নয়তো রাজুর মতো তাকেও হঠাৎ করে আড়াল হয়ে যেতে দেখবে।তখন কিছুই করার থাকবে না,যেমনটা এখন তানিশারও নেই।