ডাক্তার,আমি এখন বাচ্চা চাইনা।আপনি Abortion এর ব্যবস্থা করুন।
বরের মুখ থেকে আগত এই কথা টুকুই যথেষ্ট,আনন্দময় হাসি টুকু কান্নায় পরিণত হবার জন্য।
আমার বর আমাকে কখনোই মন থেকে ওর স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারেনি।কারণ আমি তার কাছে গাঁয়ের মেয়ে এবং অশিক্ষিত।গ্রাম থেকে আমি মাত্র এস.এস.সি পাশ করেছি। ওর কাছে আমি গাঁইয়া বউ।
বিয়েটা ও ওর বাবা মায়ের পছন্দে করেছে।আমার বাবা আর ওর বাবা দুজন বন্ধু ছিলেন।পরে ওর বাবা শহরে চলে আসেন।এখানেই থেকে যান।বন্ধুত্বটা পোক্ত করতে আমাদের বিয়ে দেন।
অপূর্ব যে আমাকে পছন্দ করেনি বা তার অমতে যে বিয়ে হয়েছে এসবের কিছুই আমি জানতাম না।
আমি যখন দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে বাসর ঘরে বউ সেজে বসে ছিলাম অপূর্বের অপেক্ষায়।ঠিক তখনি সে আমার স্বপ্ন গুলোকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করে দিয়ে বলে দিয়েছিলো,কোন দিন তুমি আমার কাছে স্ত্রীর অধিকার নিয়ে আসবেনা।আমি তোমায় সেই অধিকার দিতে পারবোনা।ঘুমিয়ে পড়ো।আমি সোফায় ঘুমিয়ে নিবো।
ঢাকার শহরের যানজটের ভীড়ে এসে বন্দি হলাম আমি মুক্ত এক পাখি।
অপূর্বকে চাকুরীর জন্য বাবা মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকতে হয়।এ বাসায় আমি আর অপূর্বই দুজন মানুষ মাত্র।
ও সকালে অফিসে চলে যায়,রাতে আসে।
সারাদিন বন্দি পাখির মত দিন কাটে আমার।সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সাংসারিক কাজের মধ্যে ব্যস্ত থাকি বলে অতটা খারাপ লাগেনা।সব কাজ একাই করি,দুজন মানুষ মাত্র কাজই বা কি?ঘর গোছানো,ঝাড়পোছ,রান্না বান্না,কাপড় চোপর ধোয়া।S.S.C পরীক্ষার পর যেই সময়টায় ছুটি ছিলো,সেই সময়টায় রান্নাটা শিখে নিয়েছি।তাই রান্না করতেও কষ্ট হয়না আমার।ভালোই লাগে তার জন্য রান্না করতে।
বিয়ের পর আমি শাড়ী পরি।শুনেছি বর রা নাকি শাড়ী পরলে খুব খুশি হয়।
তাই আমিও শাড়ী পরা শিখে নিয়েছি।কিন্তু আমার বর তো আমাকে চেয়েও দেখেন না।কি জানি,হয়তো আমাকে তার ভালোই লাগেনা।
আজ তার জন্য আমি খুব সুন্দর করে সেজেছি।
চোখে কাজল দিয়েছি,হাতে রেশমি চুড়ি পরেছি,ঠোঁটে লিপ্সটিক দিয়েছি।
আর তার পছন্দের কালো রঙের শাড়ী পরেছি।
কলিংবেল বাজছে,উনি এসে গেছেন।
দরজা খুলে দিলাম,কিন্তু উনি আমার দিকে না তাকিয়েই রুমে চলে গেলেন।থাক তাতে কি?
আজ আমি তার জন্য তার পছন্দের খাবার ও রান্না করেছি।
হঠাৎ তার ডাক।
~অর্না এই অর্না।
~জ্বী আসছি।
~তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে যেও।আমি আমার বন্ধুদের সাথে বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি।
কেন যেন চোখের কোণে জল এসে গেলো।
~জ্বী আচ্ছা।
না খেয়েই শুয়ে পরলাম।খুব কান্না পাচ্ছে আজ।কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নেই।
সকাল হয়েছে,কিন্তু অপূর্ব আজ উঠেনি কেন?সেতো আরো সকালে উঠে যান।
তবে কি তার শরীর খারাপ?
ভাবতে ভাবতেই তার কাছে গিয়ে কপালে হাত দিলাম,দেখি প্রচুর জ্বর।
হঠাৎ করে এতো জ্বর এলো কি করে?
তাড়াতাড়ি জল পট্টি দেয়া শুরু করলাম।অপূর্ব হঠাৎ চোখ খুলে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো।
~এই মেয়ে এই!কি পেয়েছো কি তুমি?তোমাকে না বলেছি আমার কাছে আসবেনা।
~না মানে আপনার জ্বর।
~চুপ একদম চুপ!আমার জ্বর হোক বা আমি মরে যাই,তাতে তোমার কি?একদম অধিকার ফলাতে আসবেনা।গাঁইয়া কোথাকার।
কথা গুলো শুনে আমার চুপ চাপ চোখে জল নিয়ে সরে যাওয়া ছাড়া আর কি ই বা করার আছে।
নাস্তা রেডি করে টেবিলে রেখেছি।
কিন্তু সে না খেয়েই চলে গেলেন।আমারো আর খাওয়া হলোনা।
সারাটা দিন খুব খারাপ লাগছে আমার।তার কথা মনে হচ্ছে,তার শরীর কেমন লাগছে।এখনো কি খুব বেশি খারাপ লাগছে?ভাবলাম একটা ফোন দেই।
কিন্তু পরে মনে হলো,না।উনি রাগ করবেন।
রাতের অপেক্ষায় আমি।কখন সে ফিরবেন।আর আমি তাকে একটু দেখবো।
কলিংবেল বাজছে।উনি এসে গেছেন।ভিজে একাকার।বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে।
~শরীর মুছে,হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন।খেতে দিচ্ছি।
~আচ্ছা।
খাওয়া দাওয়া শেষে আমরা দুজনি শুয়ে পরলাম।
হঠাৎ জোরে এক শব্দ হয়ে বিদ্যুৎ চমকালো।আমি তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে তার কাছে গেলাম।
~এই কি হয়েছে তোমার?কাঁপছো কেন?
~আমার খুব ভয় হচ্ছে।
আবার বিদ্যুৎ চমকালো,আমি তাকে জড়িয়ে ধরলাম।
সে প্রথমে আমাকে না ধরলেও,কিছু ক্ষণ পর আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন।
আমাকে কোলে করে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিলেন।
দিলেন আমাকে স্ত্রীর অধিকার।
আজকের সকাল টা অন্যরকম মনে হচ্ছে,
স্তব্ধ নগরী আজ প্রাণবন্ত মনে হচ্ছে।
আমি গোসল করে রেডি হয়ে কিচেন রুমে গিয়ে রান্না করছি।
পেছন থেকে সে আসছেন অনুভব করছি।
~অর্না।
~জ্বী।
~কালকের রাতের জন্য আমি সরি।আমি আসলে বুঝে উঠতে পারিনি কিছু।
কি হতে কি হয়ে গেছে।আমাকে ক্ষমা করে দিও।আমি অফিসে যাচ্ছি।খেয়ে নিও।
অথচ আমি ভেবেছিলাম সে এসে আমাকে পেছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলবে ভালবাসি।কিন্তু এ আমি কি শুনলাম?
একই ছাদের নিচে চলছে আমাদের জীবন।কিন্তু দুজন দুজনের খুব যেন অচেনা।পাশাপাশি থেকেও নেই যেন কাছাকাছি।
এভাবে ২ মাস কেটে গেলো,হঠাৎ একদিন রাতে আমি মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম।
আর অপূর্ব দ্রুত ডাক্তারকে ফোন করে আনলেন।
ডাক্তার আমাকে দেখে বল্লেন,
মিঃ অপূর্ব!গুড নিউজ।আপনার স্ত্রী মা হতে চলেছে।
আর আপনি বাবা।
এ কথা শুনে যেন আমার খুশির অন্ত নেই।কিন্তু আমার ঠোঁটের হাসি নিমিষেই মিলিয়ে গেলো যখন অপূর্ব বলে উঠলো,
~ডাক্তার,আমি এখন বাচ্চা চাইনা।আপনি Abortion এর ব্যবস্থা করুন।
আমার ঠোঁটের হাসি নিমিষেই মিলিয়ে গেলো যখন অপূর্ব বলে উঠলো,
~ডাক্তার,আমি এখন বাচ্চা চাইনা।আপনি Abortion এর ব্যবস্থা করুন।
~এ কি বলছেন আপনি?(ডাক্তার)
~জ্বী,আমি এ বাচ্চা এখন চাইনা।(অপূর্ব)
~কিন্তু আমি চাই।(আমি)
আচ্ছা আপনারা দুজনই ভাবুন আপনারা কি করতে চান।তারপর একটা সিদ্ধান্ত নিন।
আমি আসি।(ডাক্তার)
শোনো অর্না,
যেখানে আমাদের সম্পর্কেরই কোন ঠিক নেই সেখানে এই বাচ্চাকে কিভাবে আমরা এই দুনিয়ায় আনি?
~আমি আমার সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাবো।
~আমি তোমাকে আজো আমার স্ত্রী হিসেবে মানতে পারিনি।আমার কাছে তুমি সেই গাঁইয়া বউ ই।
আমি পারবো না এ সন্তানকে এক্সেপ্ট করতে।
যেখানে তোমাকেই আমি এখনো এক্সেপ্ট করতে পারিনি,সেখানে এই সন্তানকে গ্রহণ করা আমার পক্ষে কোন ভাবেই সম্ভব না।
~তাহলে আপনি কি চান?
~আমি চাই তুমি বাচ্চাটাকে Abortion করে ফেলো।আমি যদি কোন দিন তোমাকে স্ত্রী হিসেবে মনে জায়গা দিতে পারি তবে তখন বাচ্চার চিন্তা করা যাবে।এখন নয়।
~এটাই আপনার শেষ কথা?
~হ্যাঁ এটাই আমার শেষ কথা।আমার সাথে থাকতে হলে এই সন্তান তুমি রাখতে পারবেনা।ভেবে দেখো এখন তুমি কি করবে।
সারা রাত ভাবলাম আমি কি করবো?স্বামীর সংসার করবো?নাকি করবো আমার সন্তানকে হত্যা?
সকাল হলো,
~অর্না অর্না।কোথায় তুমি?
সারা বাড়ী খুঁজে অপূর্ব শুধু একটা চিঠি পায়।
অপূর্ব
আমি জানি আপনার পক্ষে আমার এই গর্ভের সন্তানকে মেনে নেয়া সম্ভব না।কিন্তু আমি মা হয়ে কি করে আমার সন্তানকে হত্যা করবো বলতে পারেন?
তাই আমি এ সংসার ছেড়ে আমার সন্তানকেই বেছে নিলাম।আপনি ভালো থাকবেন।আর আমার বিশ্বাস একদিন আপনি আপনার ভুল ঠিকই বুঝতে পারবেন।আর আপনি আমার সন্তানকে মেনে নিবেন।আর একটা কথা,জানিনা কখন কিভাবে আমি আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি।খুব বেশি ভালবাসি আপনাকে আমি অপূর্ব।
নিজের খেয়াল রাখবেন।
ইতি
আপনার গাঁইয়া বউ।
কেটে গেলো একটা মাস।অপূর্বের কোন খবর নেই।
আমি আমার বাবার বাড়ীতে চলে আসি,
অপূর্বের মা বাবা আমার খবর নিলেও অপূর্ব আমার কোন খবর নেয়না।
অপূর্বের বাবা মা আমার যথেষ্ট খেয়াল রাখেন,খোঁজ খবর নেন।
এদিকে আমার আম্মু আব্বুও আমার খুব যত্ন নিচ্ছেন।
এখানে একটা স্কুলে আমি বাচ্চাদের পড়াই।বাচ্চারা আমাকে খুব ভালবাসে।ওদের মুখ দেখেই নিজের কষ্ট গুলো কিছুটা ভুলে থাকি।
দিন যাচ্ছে,সময় চলে যাচ্ছে।
আর আমি শুধু অপেক্ষায় আছি অপূর্বের।কবে অপূর্ব আমায় একটা ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস কবে আমি কেমন আছি,
কিন্তু ও আমার কোন খবর নেয়না।
দেখতে দেখতে কত গুলো মাস কেটে যায়,
অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে,
তবুও সে আসেনা।
আমার ডেলিভারি ডেইট চলে আসে।
আজ আমার সিজার হবে,
জানিনা আমি বেঁচে ফিরবো কিনা।
দেখতে পারবো কিনা আমার মেয়ের মুখ।
ও হ্যাঁ, আমার মেয়ে হবে।
কিছু দিন আগে আমার হঠাৎ করেই পেটে ব্যথা হয়।তাই আল্ট্রা করা লাগে,আল্ট্রা করার পর জেনেছিলাম আমি কন্যা সন্তান জন্ম দিবো।
অনেক খুশি হয়েছিলাম আমি।
কিন্তু হঠাৎ করেই মনে হলো,
আমার মেয়ের জীবন টাতো আবার আমার মত হবেনা?
না না,আমার মেয়েকে আমি স্মার্ট করে তুলবো,শিক্ষিত করে তুলবো।কেউ যেন ওর দিকে আঙুল তুলতে না পারে।ওকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন।
মা মেয়ে কত্ত খেলা করবো,ও যখন বড় হবে এক রঙের জামা পরবো।
ছোট্ট ছোট্ট ঝুটিতে কতই না অপূর্ব লাগবে আমার মেয়েটাকে।
ওর হাত ধরে আমি স্কুলে নিয়ে যাবো।
নিজে হাতে ধরে অ আ ই ঈ শিখাবো।
মেয়ে অন্তত আমার দুঃখ বুঝবে।
সব দুঃখ এক চুমুতেই দূর করে দিবে আমার।
ওর মুখের হাসির মাঝে খুঁজে নেবো আমি আমার নতুন আমিকে।
একটু পরেই আমাকে অটিতে নিবে।অপেক্ষা করছিলাম অপূর্বের।ইশ আজ অন্তত ও যদি আমাকে একটু দেখতে আসতো।ওকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
আর আমার মেয়েটাকেও,জানিনা কোলে নিতে পারবো কিনা আমি আমার মেয়েটাকে,
আমি আমার মেয়েটাকে অনেক ভালবাসি।ওর জন্যই তো আমি আমার সব ছেড়ে ওকে নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছি।ওই আমার শেষ অবলম্বন।ওকে নিয়েই আমি বাঁচতে চাই বাকিটা জীবন।
ডায়েরীটায় এই পর্যন্তই লিখা ছিলো।
ছোট্ট একটা মেয়ে সারাবাড়ী দৌড়াচ্ছে।
~অনু ওই অনু!
থাম থাম।আর কত দৌড়াবো তোর পেছনে বলতো?
~ছোট মানুষ,দৌড়াচ্ছে একটু দৌড়াক না।
~আচ্ছা যাও,তুমিও ওর পেছন পেছন দৌড়াও।আমি আর পারবোনা।আমার রান্না বান্না আছে।
~নানু ভাই আমি আসছি তোমার পিছু পিছু।তোমার নানীমা তো বুড়ি হয়ে গেছে তাই আর পারেনা দৌড়াতে।
~কি আমি বুড়ি হয়ে গেছি?নিজের দিকে তাকান।চুল সাদা হতে শুরু করেছে।
~তাতো একটু আকটু হবেই,দুদিন পর নাতনী বিয়ে দেবো।এখনো কি আমাকে ইয়াং থাকতে বলো?
~আচ্ছা আমি যাই রান্না ঘরে,
তুমি তোমার নাতনী সামলাও।
নানু ভাই নানু ভাই,আস্তে।
পড়ে যাবে তো।
~কিচ্ছু হবেনা আমার নানাভাই।ভুউউউউউম!
~এবার ভুম করে আমার কাছে চলে আসো তো।
~ভুউউউউউউম!আমি এসে গেছি নানাভাই।
~এইতো আমার নানাভাই এসে গেছে।এবার চলো ঘরে যাই।নানীমা নইলে বকবে।
~আচ্ছা চলো।
অনু!
অপূর্ব আর অর্নার মেয়ে।
ওর এখন ৬ বছর বয়স।
দেখতে ঠিক মায়ের মত হয়েছে।সেই চোখ,সেই নাক,সেই চুল।শুধু মায়ের মত শান্ত হয়নি।হয়েছে একদম দুরন্ত।
৬ বছর বয়সেই সে পুরো বাড়ী মাথায় করে রাখে।
নানা নানীকে একটু শান্তিমত বসতেও দেয়না।
ঘুমানোর মুহূর্ত ছাড়া সারাক্ষণ সারা বাড়ী চঞ্চলতায় মাতিয়ে রাখে।
এ বছরই স্কুলে ভর্তি হয়েছে অনু।
স্কুলেও সে দূরন্ত।মায়ের ঠিক উলটো।
দাদা দাদু বলেছেন ওর বাবাও নাকি ছোট বেলায় এমন দুরন্ত ছিলো।হয়তো বাবার দুরন্তপনাটা পেয়েছে।
~তুই কি একটুও চুপ করে বসতে পারিসনা?
~তুই কি একটুও চুপ করে বসতে পারিস না?
~দেখো আবার মুখে মুখে তর্ক করে,ভেঙচি কাটে।
~তর্ক কি নানাভাই?নানু কি বলে?
~তর্ক হচ্ছে কথার অপর পিঠে আবার একই কথা বলা।যেটা বড় দের সাথে সাথে বলতে হয়না,বড় দের মুখে মুখে বলতে হয়না।তুমি গুড গার্ল না?
~ইয়েস!
~এইতো আমার লক্ষী নানুভাই।আর কখনো নানীমার মুখে মুখে ভেঙচি কাটবেনা ঠিকাছে?
~আচ্ছা।
নানুভাই,
কি নানু ভাই?
~দেখো কারা এসেছেন।
~ইয়াহু আমার দাদু ভাই আর দাদীমা এসেছে।
~কেমন আছো দাদু ভাই?
~আমি ভালো আছি,তোমরা কেমন আছো?আমাকেতো ভুলেই গেছো।দেখতেই আসোনা।
~না দাদুমনি,ভুলিনি।তোমার দাদাভাই একটু অসুস্থ ছিলেন।তাই আসতে পারিনি।
~দাদা দাদুকে তোমার লেখা দেখাও নানুভাই।
~এই দেখো দাদাভাই,এই দেখো দাদু ভাই,আমি লিখেছি।
~বাহ আমার দাদু মনি কত সুন্দর করে লিখেছে।
~আমি কিন্তু পড়তেও পারি।
~পড়ে শোনাও তো একটু।
~অ আ ই ঈ, A B C D…
~বাহ্ অনেক সুন্দর হয়েছে।
এই দেখো আমরা তোমার জন্য স্কুল ব্যাগ,আর কত কিছু নিয়ে এসেছি।
~থ্যাংক ইউ।
~অনু খুব জ্বালায় আপনাদের তাইনা?
~আরে না!ও আছে বলেই আমরা ভালো আছি।ওর মুখ দেখেইতো বেঁচে আছি।
তারপর বলুন আপনারা কেমন আছেন?
~এইতো ভালো আছি।
~অপূর্ব কেমন আছে?
~অপূর্ব….
হ্যাঁ আছে ভালোই।
অপূর্ব অর্নাকে মেনে নিতে পারেনি আর।ওর কখনোই মনে হয়নি অর্না ওর যোগ্য।
ওর ডেলিভারির দিনও অপূর্ব এসে পৌছায়নি।
অপূর্ব ওর অফিসের মালিকের মেয়েকে বিয়ে করে নিয়েছে।
খুব ভালো আছে ওরা।অপূর্বের বউ মনা দেখতে খুবই সুন্দরী।
স্মার্ট,স্টাইলিশ,
অপূর্বের যেমনটা পছন্দ।
অপূর্বের বউ টপস আর প্লাজো পরে,
যা অপূর্বের খুবই পছন্দ।
অর্নাতো ছিলো গাঁইয়া বউ,
যে কিনা সারাক্ষণ শাড়ী পরেই থাকতো।
খোঁপায় ফুল।
এমনটা কোন ছেলেরই বা পছন্দ হতে পারে।
আর মনার চুল কি সুন্দর স্ট্রেট করা,কালার করা।
দেখলেই শান্তি।
মনা স্টাইলিশ হলেও ওর মন টা ভালো।কখনোই কোন মানুষকে ও ছোট করে দেখেনা।
অপূর্বের বাবা মাকেও মনা খুব সম্মান করে।
প্রায়ই বলে চলে আসুন আমাদের বাসায়।
খালি বাড়ীতে কি করবেন।
কিন্তু অপূর্বের মা বাবা যান না।
কারণ অপূর্ব ওর শশুড় বাড়ীতে থাকে।
যেটা ওর বাবা মায়ের একদমই পছন্দ না।
অপূর্বের কাছে জীবন মানেই হৈহোল্লা,
মাস্তি,ঘুরাঘুরি।ইঞ্জয়।
ওয়াইফকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে ঘুরা,
লং ড্রাইভে যাওয়া।
খিদে পেলে বাইরে থেকে অর্ডার করে কিনে খাওয়া।
শপিং,আড্ডা,ফান।
এভাবেই চলছে অপূর্ব আর মনার জীবন।
দুপুরের খাবার খেয়ে অনু আর অনুর নানা নানু,দাদা দাদু সবাই ঘুরতে বের হয়।
সবাই আজ ঘুরবে।
অনুকে ওর দাদা দাদু,নানা নানু খুব ভালবাসে।
অপূর্বর আদর ভালবাসা না পেলেও অনু ওর দাদা দাদুর যথেষ্ট আদর পেয়েছে।
অনুর নানা নানুর সাথেও ওর দাদা দাদুর খুব ভালো সম্পর্ক।
অনু আর সবাই পার্কে ঘুরছে,
হঠাৎ করেই পার্কে অপূর্বের সাথে দেখা।
অপূর্বের মা সবাইকে দূরে দাঁড় করিয়ে রেখে অপূর্বের সাথে গিয়ে কথা বলে।
~কিরে তুই এখানে?
~হ্যাঁ মনাকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি।
~তুমিও ঘুরতে এসেছো?
~হ্যাঁ তোর বাবা আর অর্নার মা বাবার সাথে।
~কিছু খাবে?
~না,বউ মাকে নিয়ে একদিন সময় করে বাসায় আসিস।
~আচ্ছা আসবো,তোমরাও এসো।
মনা এখনো আসছেনা কেন!
~আরে মা,আপনি এখানে?কেমন আছেন?
~এইতো মা!ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?
~এইতো আলহামদুলিল্লাহ্।
~এত দেরি হলো কেন?
~আর বলোনা,আমিও আইসক্রিম কিনতে গেছি,আর একটা পিচ্চি মেয়েও আইসক্রিম কিনতে গেছে।কত যে কিউট মেয়েটা।
আমি আমাকে আইসক্রিম তাড়াতাড়ি দিতে বলেছি বলে,আমাকে বলে কি।
তুমি তো বড়,তুমি আবার আইসক্রিমও খাও?
মেয়েটাকে দেখেই কোলে তুলে নিলাম।
ওর সাথে কথা বললাম একটু তাই দেরি হয়ে গেলো।
~ও আচ্ছা।
~বউ মা আমি তাহলে আসি।তোমার বাবা ওই দিকে অপেক্ষা করছে।
বাসায় এসো একদিন সময় করে অপূর্বকে নিয়ে।
~আসবো মা।আপনিও বাবাকে নিয়ে আসবেন।
~আচ্ছা আসি।
~দাদু ভাই দাদু ভাই কোথায় গিয়েছিলে তুমি?তুমি জানো আমি আর নানীমা তোমাকে রেখে এখন আইসক্রিম খেয়ে নিয়েছি।
~একা একাই খেলে।আমি রাগ করেছি।
একা একা খাইনিতো,নানীমাকেও দিয়েছি হি হি।
~তোমার দাদাভাই আর নানা ভাই কোথায়?
~উনারা একটু ওই দিকে হাঁটছেন।
আমি আর নানীমা আইসক্রিম কিনতে গিয়েছিলাম।
~ওই তো তোমার নানাভাই আর দাদা ভাই,চলো যাই।
তারপর তারা সবাই মিলে ঘুরে বাসায় চলে যান।অনুর দাদা দাদুও ওখান থেকেই উনাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যান।
বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে অনু ওর নানীমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে।
ওর নানাভাই ওর আঙুল টেনে দিচ্ছে।
~আজ কত মজা হলো তাইনা নানীমা?
~হ্যাঁ খুব মজা হয়েছে।
~আজ যদি আমার আম্মু আমাদের সাথে থাকতো কতই না ভালো লাগতো তাইনা নানা ভাই?আমরা আরো বেশি বেশি মজা করতে পারতাম তাইনা?
অনুর কথা শুনে অনুর নানা ভাই আর অনুর নানীমা চুপ হয়ে গেলেন,
আর অতল এক ভাবনার সাগরে হারিয়ে গেলেন.
আজ যদি আমার আম্মু আমাদের সাথে থাকতো কতই না ভালো লাগতো তাইনা নানা ভাই?আমরা আরো বেশি বেশি মজা করতে পারতাম তাইনা?
অনুর কথা শুনে অনুর নানা ভাই আর অনুর নানীমা চুপ হয়ে গেলেন,
আর অতল এক ভাবনার সাগরে হারিয়ে গেলেন!
দেখতে দেখতে কত গুলো বছর কেটে গেলো।আজ থেকে ছয় বছর আগে অনুর জন্ম হয়।
যেদিন অনুর জন্ম হবে সেদিন অনুর মা অর্না বার বার হসপিটালে বসেও বাইরের দিকে তাকাচ্ছিলো,
শুধু মাত্র একটা বার অপূর্ব আসে কিনা সেই অপেক্ষায়।
অথচ অপূর্ব আসেনা।
অপূর্বের না আছে ওর বউর প্রতি মায়া,না আছে ওর বাচ্চার প্রতি মায়া।
অর্নার ডেলিভারি পেইন উঠার সাথে সাথে ওকে হসপিটালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
আর সেদিনই জন্ম হয় অনুর।
অতিরিক্ত চিন্তার ফলে অর্না অসুস্থ হয়ে পড়লেও কিছু ক্ষণ পর ও সুস্থ হয়ে উঠে।
কোলে তুলে নেয় ওর কলিজার টুকরা অনুকে।
অনুর মুখ দেখে সব দুঃখ কষ্ট ভুলে যায় অর্না।
সবাই অনুকে পেয়ে খুশি।
অর্না ধীরে ধীরে অনুকে লালন পালন করতে থাকে।সাথে ওর মা বাবাও।
অনু বড় হতে থাকে।
আর অর্না এদিকে চালিয়ে যায় ওর পড়াশোনা।
ওর মা বাবার অনুরোধে ও এক্সাম দিতে থাকে।এস.এস.সি পাশ করে সবে মাত্র অর্না কলেজে ভর্তি হয়েছিলো।আর তখনি বিয়ে করে চলে যায় অপূর্বের সাথে শহরে।
কিন্তু যখন অপূর্ব ওর গর্ভের বাচ্চাটার দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে।
ঠিক তখনই ও গ্রামে ফিরে এসে ওর মা বাবার কথায় নিজেও পড়াশোনা চালিয়ে যায় আর বাচ্চাদেরও পড়াতে থাকে।
পেটের মধ্যে বড় করে তুলে নিজের কলিজার টুকরা সন্তান কে।
অনুর জন্মের পর থেকে অর্নার পরিবার আর অনু খুব ভালো আছে।
অনুর দাদা দাদীও এসে অনুর খোঁজ খবর নেন।
অর্না এখন অনার্স ফাইনাল এক্সাম দিচ্ছে।
ইন্টার পাশ গ্রামে করলেও।
অনার্স টা ঢাকায় করতে হয় ওর।
এক্সামের সময় ঢাকায় গিয়ে এক্সাম দিয়ে আসে অর্না।
অর্না আজ নিজে পায়ে দাঁড়িয়েছে।
গ্রামে একটা কোচিং সেন্টার খুলে নিয়েছে।
যেখানে গ্রামের ছেলে মেয়েরা পড়তে আসে ওর কাছে।
ওর মা বাবার সাপোর্টের ফলে ও এত দূর আসতে পেরেছে।
আবার নিজের উপর আস্থাও ছিলো যে আমি পারবো।আমাকে পারতেই হবে।
অন্তত মেয়েটার ভবিষ্যৎ এর জন্য হলেও আমাকে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।
অনুর ডাকে অনুর নানা নানুর ধ্যান ভাঙে।
~ও নানীমা,আম্মু কবে আসবে?আম্মুর পরীক্ষা কি এখনো শেষ হয়নি?
~এইতো নানু ভাই আর একটাই আছে।এরপর তোমার আম্মু তোমার কাছে ফিরে আসবে।
অর্নার মা বাবা অর্নাকে আর বিয়ের জন্য জোর করেনি।কেননা তাদের পছন্দে বিয়ে করেই আজ তাদের মেয়ের এই অবস্থা।
যদি কখনো মেয়ে নিজ ইচ্ছেয় বিয়ে করে তবে করবে।
নয়তো তারা আর কিছু বলবেন না।
দুদিন পর সকালে অনু ঘুমিয়ে আছে।
আর হঠাৎ করেই অনুর চিৎকার।
চিৎকার শোনেই অনুর নানা নানু দৌড়ে রুমে যান,গিয়ে দেখেন অনু অর্নাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।
খুশিতে চিল্লাচ্ছে দুরন্ত অনু।
~আম্মু এসেছে আম্মু এসেছে।
~কিরে তুই কখন এলি?
~এইতো চুপি চুপি চলে এলাম সারপ্রাইজ দিতে।
~ভালো করেছিস।এক্সাম কেমন হলো?
~হয়েছে আব্বু আলহামদুলিল্লাহ্।
~শেষ এক্সাম?
~হ্যাঁ শেষ।
~আর কোথাও যাবেনা তুমি আমাদের ছেড়ে আম্মু।
~উঁহু একটুও যাবোনা।
~জানো আমরা এ কয়দিন কত মজা করেছি।তুমি থাকলে আরো কতই না মজা হতো।
~এইতো আম্মু আমি এসে গেছি,এখন থেকে আমরা সবাই মিলে এক সাথে মজা করবো।ঠিকাছে?
~আচ্ছা ঠিকাছে।
যা এবার মা মেয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।
আমি খাবার দিচ্ছি।
সবাই ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে বসে।
~তারপর?এখন কি করবি ভেবেছিস?
~এইতো বাবা,কয়েকটা অফিসে সিভি জমা দিয়ে রেখেছি।দেখি কি হয়।বলেছে হলে ফোন করবে।
আর রেজাল্ট দিলে আবার ভর্তি হবো,পড়ালেখাটা শেষ করবো।
আর যে পর্যন্ত জব না হয়,এই কোচিং সেন্টারতো আছেই।
~জব টব না করলে হয়নারে মা?এখানেই তো আমরা ভালো আছি সবাই মিলে।
~না মা,আমি আমার মেয়েকে শহরে নিয়ে যাবো।আর সাথে তোমরাও যাবে।
আমার মেয়ের কপালে আমি গাঁইয়া নামক দাগ টা লাগতে দেবোনা।যেই জন্য আমার জীবন টা ধ্বংস হয়ে গেছে।
আমি আমার মেয়ের জীবন টা ধ্বংস হতে দেবোনা।
আর মিঃ অপূর্ব কে বুঝিয়ে দেবো।গাঁইয়ারাও মানুষ।গাঁইয়ারাও সেই সব পারে,যা শহুরেরা পারে।
~আচ্ছা এবার,বাদ দাও তো অর্নার মা।মেয়েটাকে খেতে দাও।
খাওয়া দাওয়া শেষে অর্না বলে আজকের রান্নাটা আমি করবো।
অনুর নানা নানু অনুকে নিয়ে স্কুলে চলে যান।
আর অর্না এদিকে রান্না করে।
অনুকে নিয়ে অনুর নানা নানু বাসায় ফিরলে সবাই গোসল করে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে।
বিকেলে সবাই মিলে ঘুরতে বের হয়।
সবাই অনেক আনন্দ করে।
মজা করে,
সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে আসে সবাই।
খাওয়াদাওয়া শেষে গল্প করে সবাই ঘুমিয়ে পরে।
পরের দিন সকালে হঠাৎ অর্নার মোবাইলে ফোন আসে।
অর্না ফোন হাতে নিতেই দেখে অয়ন ভাইয়ার কল।
~হ্যালো অয়ন ভাইয়া।
~হ্যাঁ কেমন আছো?
~এইতো ভালো আছি।এত সকালে কি মনে করে?
~তুমি এক্সাম দিয়ে বাসায় চলে গেলে অথচ আমাকে একটু বলেও গেলে না।
~সরি অয়ন ভাইয়া,আসলে মেয়েটার জন্য মনটা খুব খারাপ লাগছিলো।তাই কাউকেই তেমন জানানো হয়নি।
~ঠিকাছে শোনো তুমি না জব খুজছিলে?আমি আজ থেকে আমার বাবার অফিস দেখা শোনা করবো।বাবা আমার উপর দায়িত্ব দিয়েছেন।তুমি যদি চাও এখানে জয়েন করতে পারো।তোমার সিভিটা আমাকে পাঠিয়ে দিও।
~আচ্ছা অয়ন ভাইয়া অসংখ্য ধন্যবাদ।
~এত ভাইয়া ভাইয়া করতে হবেনাতো।
এ আর এমন কি ই বা করছি আমি তোমার জন্য।
তুমিতো আমার পুরো জীবন টাই বদলে দিয়েছো।
~আরে না,কি যে বলেন না।
~আচ্ছা তুমি তাহলে তোমার সিভি টা পাঠিয়ে দিও কেমন?
~আচ্ছা ঠিকাছে।
~রাখি তবে আল্লাহ্ হাফেজ!
~আল্লাহ্ হাফেজ!
অয়ন হচ্ছে অর্নার সিনিয়র।
অর্না অনার্সে পড়ে আর অয়ন মাস্টার্সে পড়তো।
হঠাৎ একদিন অর্না দেখে কলেজ মাঠের এক কোনায় একটা ছেলে সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে।
তখনি সবাইকে ডেকে তাড়াহুড়ো করে তাকে হসপিটালে নিয়ে যায় অর্না।
পরে ডাক্তার বলেন,অতিরিক্ত মদ্যপানে এই অবস্থা হয়েছে তার।উনাকে বাঁচাতে হলে এই নেশার জগত থেকে তাকে বের করে নিয়ে আসতে হবে।
পরে সবার কাছ থেকে অর্না শুনতে পায় ছেলেটার নাম অয়ন।
ছেলেটা খুব ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ছিলো।কিন্তু একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে অনেকটা গোল্লায় যেতে থাকে এই অয়ন।
ধনীর ছেলে এই অয়ন।খুব ভালবাসতো লাকী নামের একটা মেয়েকে।কিন্তু পরে জানতে পারে লাকী একাধিক রিলেশনে জড়িত।যেটা অয়ন মানতে পারেনি।
একদিন শোনে লাকী এক ছেলের সাথে কোথায় যেন ধরা পড়েছে।আর সেখানেই ওদের বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়।এর পর থেকে অয়ন পুরোপুরি নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে।
অর্না শপথ করে যেভাবেই হোক অয়নকে ভালো পথে ফিরিয়ে আনবে।
অর্না অয়নকে ওর জীবনের কাহিনী বলে,
আর বলে,
~দেখুন এরপরও আমি ভেঙে পড়িনি।আবার উঠে দাঁড়িয়েছি।আর আপনি কিনা এভাবে ভেঙে যাবেন?
আমার থেকে কি আপনার কষ্ট বেশি?
একটা বার ভাবুন।
এভাবে ধীরে ধীরে অর্না অয়নকে বোঝাতে থাকে,আর অয়ন বুঝতে সক্ষম হয়।
ফিরে আসে নতুন জীবনে।ত্যাগ করে নেশার জগত।
মাস্টার্স পাশ করে।
এখন আবার বাবার অফিসও দেখাশোনা করবে।
ফিরে পায় নতুন একটা জীবন।
ওই ঘটনার পর থেকে অর্না আর অয়নের মধ্যে একটা ভালো সম্পর্ক তৈরী হয়।
অয়ন অর্নার মাঝে মাঝে খোঁজ খবর নেয়।
পড়াশোনা কেমন চলছে,বাবা মা মেয়ে কেমন আছে খোঁজ নেয়।
অর্না অয়নকে সিভি পাঠিয়ে দেয়।
তারপর অয়ন একদিন অর্নাকে ফোন দিয়ে বলে তোমার জব কনফার্ম।
তুমি এবার জয়েন করতে পারো।
অর্না অর্নার বাবা মাকে সু খবর টা জানায়।
আর সবাই মিলে শহরের পথে রওনা দেয়,
নতুন জীবনের সন্ধানে।
অনুর জীবন গড়তে।
আর ওই দিকে অয়ন অপেক্ষায় আছে অর্নাকে স্বাগতম জানাতে।
অর্না অর্নার বাবা মাকে জবের সু খবর টা জানায়।
আর সবাই মিলে শহরের পথে রওনা দেয়,
নতুন জীবনের সন্ধানে।
অনুর জীবন গড়তে।
আর ওই দিকে অয়ন অপেক্ষায় আছে অর্নাকে স্বাগতম জানাতে।
অর্নার কলেজের বান্ধবী অর্নার জন্য বাসা ঠিক করে রাখে।
অর্না সবাইকে নিয়ে ওই বাসায় উঠে।
সেদিন ঘর গোছাতে গোছাতেই সারাদিন লেগে যায়।
পরের দিন অর্না অয়নের সাথে দেখা করে।
অয়ন ওকে অফিসের সব কিছু বুঝিয়ে দেয়।
আর বলে তুমি চাইলে আজ থেকেই জয়েন করতে পারো।
-থ্যাংক ইউ অয়ন ভাইয়া।
-আবার ভাইয়া?এত ভাইয়া ভাইয়া করতে হবেনাতো।আর এত ধন্যবাদও দিতে হবেনা।
তো কোথায় উঠেছো?
-এইতো সামনেই উঠেছি।
-একাই?
-না,মা বাবা আর অনুকেও নিয়ে এসেছি।
-খুব ভালো করেছো।একদিন অনুর সাথে খেলতে যাবোনে।আর শোনো,অনুকে তাহলে এখানে ভালো একটা স্কুলে ভর্তি করে দিও।
-হ্যাঁ সেটাই ভাবছি।
সেদিনের মত অফিস শেষ করে অর্না বাসায় চলে আসে।
পরের দিন সকালে অর্নাকে ফোন দিয়ে অয়ন বাসার ঠিকানা নিয়ে অর্নাদের বাসায় চলে আসে।
এসেই অনুর সাথে কথা বলে,আর বলে চলো আজ তোমাকে স্কুলে ভর্তি করে দেবো।
অয়ন আর অর্না গিয়ে অনুকে স্কুলে ভর্তি করে দেয়।
অর্না অফিস করছে,
অয়নও অর্নাকে সব কিছু বুঝিয়ে দিচ্ছে।
দুজনের মধ্যে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়।
অয়ন এখন মাঝে মাঝে অর্নাকে বাসায় পৌছে দেয়।
যদিও অর্না বারণ করে,তবুও কে শোনে কার কথা।
অয়ন মাঝে মাঝেই অর্নাদের বাসায় যায়।
-আন্টি আমি যে আপনাদের বাসায় মাঝে মাঝে অনুর সাথে খেলা করতে চলে আসি আপনারা তো কিছু মনে করেন না?
-না বাবা,কি মনে করবো।
তুমি এসে ওকে সময় দাও,আমার আর তোমার আংকেলের সাথে গল্প করো,আমাদের বরং ভালোই লাগে।
তুমি এসো মাঝে মাঝে বাবা।কোন সমস্যা নেই।
অয়ন অর্নাদের সবাইকে নিয়ে প্রায়ই ছুটির দিনে ঘুরতে বের হয়।
অর্না রাজি না হলেও,অনু শেষমেস রাজি করিয়েই ফেলে।
-আচ্ছা আন্টি,অর্নাকে আপনারা বিয়ে দেন না কেন?এভাবে কি আর জীবন চলবে?
-কি আর বলবো বাবা,একবার ওর জীবন টা নষ্ট করেছি।তাই আর সাহস পাইনা।তাছাড়া কয়েক বার বলেছি,
ও কোন কথাই বলেনি।তাই ওর উপর ছেড়ে দিয়েছি।
-আচ্ছা।অর্নার আর ওর স্বামীর কি ডিভোর্স হয়ে গেছে?
-হ্যাঁ।তুমি জানোনা?অর্না বলেনি?
-না ডিভোর্স এর কথা কিছু বলেনি।
-অনুর বাবা যখন ২য় বিয়ে করে তখন অর্নাকে ডিভোর্স দেয়।আর অর্নাও পেপারে সই করে দেয়।একটা ঝুলন্ত সম্পর্ক বয়েই বা কি করতো বলো বাবা?
-আচ্ছা আন্টি আপনি কোন চিন্তা করবেন না।অর্নার জীবনে দেখবেন খুব ভালো কেউ একজন আসবে।যে কিনা অর্নার চোখে কোন দিন জল আসতে দিবেনা।
মুখে সব সময় হাসি ফুটিয়ে রাখবে।
-তাই যেন হয় বাবা,তাই যেন হয়।
একদিন সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরার সময় হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি।
বৃষ্টি দেখে অর্না দৌড়ে গিয়ে খোলা রাস্তায় ভিজতে শুরু করে।
আর অয়ন বলতে থাকে,
অর্না ঠান্ডা লেগে যাবে,জ্বর এসে যাবে।ভিজোনা বলছি।
-আরে একবার ভিজেই তো দেখুন।
অয়নও অর্নার সাথে ভিজতে থাকে বৃষ্টিতে।
আর হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকে উঠে,অর্না দৌড়ে গাড়ীতে উঠতে যেতে থাকে।
আর তখনি অয়ন অর্নার হাত টা টেনে ধরে বলে,
আমার সাথে সারাটা জীবন বৃষ্টিতে ভিজবে?
-কি বলছেন এসব?
-বিয়ে করবে আমায়?
-আপনি কি বলছেন আপনি জানেনতো?
-আমি যা বলছি সজ্ঞানে বলছি।আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি।
আর আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি,বিয়ে যদি করতেই হয় তবে তোমাকেই করবো।
-এ হয়না।কোথায় আপনি আর কোথায় আমি।তাছাড়া আমি একজন ডিভোর্সি।আমার একটা মেয়েও আছে।কিভাবে সম্ভব?
-আমি যদি অনুকে ওর বাবার আদর দেই?তাহলেও কি তুমি অমত করবে?
আমি চাই মেয়েটা বাবার আদর, ভালবাসা পাক।
-হাত টা ছাড়ুন প্লিজ।বাসায় যেতে হবে।
-এই হাত আমি আরেক বার ধরার জন্য ছাড়লাম। আবার যখন ধরবো,কোন দিন ছাড়বোনা।ছাড়ার জন্য ধরবোনা।
-আম্মু আম্মু এসেছো?
-হুম মা এসেছি।আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নাও।পুরো ভিজে গেছো বৃষ্টিতে।
পরের দিন সকালে,
-আম্মু একটা কথা বলি?(অনু)
-বলো মা,
-সবার বাবা আছে আমার বাবা নেই কেন আম্মু?মুসকান,পূজা সবাই ওদের আব্বুকে নিয়ে আসে স্কুলে।ওদের আব্বু এসে ওদের স্কুল থেকে বাসায় নিয়ে যায়।
কিন্তু আমার আব্বু কেন নাই?
পাশে দাঁড়ানো অনুর নানা নানু কথা গুলো শোনে অনুকে ডেকে নিয়ে যায়।
অর্না আর সেদিন অফিসে যায়না
তাই অয়নই ওদের বাসায় চলে আসে।
-আন্টি আংকেল আমি আপনাদের একটা কথা বলতে চাই।
-হ্যাঁ বলো বাবা।
-আমি অর্নার আর অনুর দায়িত্ব নিতে চাই।অর্নাকে স্ত্রীর মর্যাদা আর অনুকে বাবার স্নেহ দিতে চাই।এখন আপনারা যদি অনুমতি দেন তবে আমি আমার পরিবারের সবাইকে নিয়ে আপনাদের বাসায় আসবো।
-আমাদের কোন আপত্তি নেই বাবা।শুনছিস রে অনু।তুই না বলেছিলি তোর বাবা নেই কেন?তোর আব্বু নেই কেন?এই তো তোর বাবা।
-সত্যিই তুমি আমার বাবা?
-হ্যাঁ আম্মু আমিই তোমার বাবা।
-মারে তুই আর অমত করিস না।
দেখ অনু অয়নকে কিভাবে আপন করে নিয়েছে,আর অয়নও কিভাবে অনুকে আপন করে নিয়েছে।
-ঠিকাছে,তোমরা যা ভালো মনে করো।
সবাই অনেক খুশি হয়।
অয়নের মা নেই।বাবাকে আর বোনকে জানায় ও একটা মেয়েকে ভালবাসে।আর ওকেই বিয়ে করতে চায়।
ওর বাবা অসুস্থ তাই দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য গেছেন অয়নকে অফিসের দায়িত্ব দিয়ে।সাথে ওর বোনও গেছে।
অয়নের বাবা আর বোন তো খুশিতে দিশেহারা।যেই ছেলে বলেছে জীবনে বিয়ে করবেনা,সেই ছেলে নিজে বিয়ে করতে চাইছে।
তাই অয়নের বাবা অয়নকে বলে দেয়,তুমি বিয়ের আয়োজন করো আমরা পৌছে যাবো বিয়ের দিন।
অয়নের বাবা ভাবেন,যদি ছেলের মত আবার পালটে যায়,তাই বিয়ের আয়োজন করতে বলে দেয়।
বিয়ের আয়োজন করা হয়।
কিন্তু অয়নের বোন বাবা বিয়ের সময় এসে পৌছতে পারেনা,অর্নার বাসায়।
তাই অয়নকে ওর বাবা বলে দেন তুমি বউ নিয়ে বাসায় চলে এসো আমরা বাসায় অপেক্ষা করছি তোমাদের জন্য।
অনু ওর মায়ের থেকে নানীমার জন্য বেশি পাগল।সেই জন্য অনু ওর নানীমায়ের কাছেই আজ থেকে যায়।আর বলে সকালে নানীমা আর নানাভাইকে নিয়ে তোমাকে আর বাবাকে আনতে যাবো।
অর্না বিদায় নিয়ে অয়নের সাথে ওদের বাসায় চলে যায়।
বাসায় গিয়ে দাঁড়াতেই অয়নের বোন এসে গেইট খোলে।
আর অর্নাকে দেখেই একটা হাসি দেয়।
আর হঠাৎ ই একটা গ্লাস ভাঙার শব্দ হয়।
অর্না তাকায় সেদিকে,আর অয়ন তাকিয়ে দেখে ওর বোন জামাইর হাত থেকে পানির গ্লাস টা ফ্লোরে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
অর্না বিদায় নিয়ে অয়নের সাথে অয়নদের বাসায় চলে যায়।
বাসায় গিয়ে দাঁড়াতেই অয়নের বোন এসে গেইট খোলে।
আর অর্নাকে দেখেই একটা হাসি দেয়।
আর হঠাৎ ই একটা গ্লাস ভাঙার শব্দ হয়।
অর্না তাকায় সেদিকে,আর অয়ন তাকিয়ে দেখে ওর বোন জামাইর হাত থেকে পানির গ্লাস টা ফ্লোরে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
-কি হলো ভাই?লাগেনি তো।(অয়ন)
-আরে না।আমি ঠিক আছি।
-আয় আয় বউ নিয়ে ভেতরে আয়(মনা)
চলো অর্না।
-অর্না এটা আমার বাবা,তোমার শশুড় মসাই।
অর্না অয়নের বাবাকে সালাম করে।
-আর এটা হচ্ছে আমার এক মাত্র বোন মনা।
মনা অর্নাকে জড়িয়ে ধরে।
আর এই হচ্ছেন আমার বোন জামাই,মিঃ অপূর্ব।
-আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
আর এই হচ্ছে আমার অর্না।আমার ভালবাসা।
-হুম তোর পছন্দ আছে বটে।
কি মিষ্টি দেখতে আমাদের অর্না।(মনা)
-দেখতে হবেনা কার পছন্দ (অয়ন)
অর্না এত ক্ষণে অপূর্বকে দেখে সেন্সলেস হয়ে যাওয়ার কথা।কিন্তু ও শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কেননা অপূর্বের আঘাতের কাছে এই শক কিছুই না।
যা অয়ন বউ মাকে ভেতরে নিয়ে যা।(বাবা)
এত ক্ষণে অপূর্বের বুকের ভেতর দাউদাউ করে যেন আগুন জ্বলছে।
এ কি দেখছে ও।অর্না কি করে অয়নের বউ হয়?এ কি করে সম্ভব?
এ কিছুতেই হতে পারেনা।
আমি হয়তো ভুল দেখছি।
না না ভুল দেখবো কি করে?ও যে আমার চিরচেনা।
অয়ন অর্নার হাত ধরে অয়নের রুমে নিয়ে যায়। অয়নের রুমটা রজনী গোলাপ গাদা ফুলে সাজানো হয়েছে।
মনা আর অপূর্ব মিলেই তাড়াতাড়ি করে এসেই রুমটা সাজিয়েছে।
অয়ন রুমে ঢুকতেই ফুলে সাজানো রুমটা দেখে অনেক টা খুশি হয়।
অর্নাকে খাটে বসিয়ে ওর হাত ধরে বলে,
-তুমি খুশি তো?
-হুম।
-জানো আজ আমি অনেক খুশি।তোমাকে যে আজ আমি আমার করে পেয়েছি।
আজ থেকে আমরা নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছি।তোমার কিছু বলার থাকলে বলতে পারো।
-আপনি খুব ভালো।
-এইটাই কথা?
-হুম।
-আমার বাবা বোন ওদের,নিজের বাবা বোনের মত দেখো।আগলে রেখো এ সংসারটাকে।
-আপনার কোন চিন্তা করতে হবেনা।
-হ্যাঁ সেটা আমি জানি।আমার বউ যে খুব লক্ষী।ও নিজে থেকেই সব কিছু বুঝে।
-হয়েছে।
-আগামীকালই আমরা অনুকে নিয়ে আসবো ঠিকাছে?
-আচ্ছা।
-ওর জন্য মন খারাপ লাগছে?
-হুম।
-কালই নিয়ে আসবো ওকে।মন খারাপ করোনা।এবার চোখ বন্ধ করো।
-কেন?
-করোই না।
-আচ্ছা করলাম।
চোখ বন্ধ করার পর অয়ন অর্নাকে একটা চেইন আর আংটি পরিয়ে দেয়।
-কি এগুলো?
-তোমার বাসর ঘরের গিফট।
-পছন্দ হয়েছে?
-হুম খুব।
-অনেক রাত হয়েছে তাইনা?
-হুম।
-আমি কি আমার বউকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে পারি?
-যান এখান থেকে।
-লজ্জা পেয়েছে রে আমার বউটা।
-এসো লজ্জা ভাঙিয়ে দেই।
এই বলে অয়ন অর্নার কপালে চুমু খায় ওকে ভালবেসে কাছে টেনে নেয়।
সকাল বেলা অর্না গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নীল রঙের একটা শাড়ী পরে।চোখে হালকা কাজল দেয়।হাতে নীল রঙের চুড়ি পরে।
অপূর্ব লাগছে অর্নাকে।
অর্না যখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ওর ভেজা চুল গুলো আচড়াচ্ছে ঠিক তখনই অয়ন ঘুম থেকে জেগেই অর্নাকে পেছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।
-যান গোসল করে নিন।
-করবো,আগে আমার সুন্দরী বউটাকে একটু দেখি।নীল শাড়ীতে আমার বউটাকে নীল পরী লাগছে।
-একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছেনা?
-উঁহু একটু কম কম হয়ে যাচ্ছে।
-যান এবার গোসলে।
-যাচ্ছি আমার বউটা।
অয়ন ফ্রেশ হয়ে বের হলে মনা ওদের ডাকতে আসে।
-কিরে উঠেছিস তোরা?
-হ্যাঁ আপু।আপনার ভাই রেডি হচ্ছে।
-তাড়াতাড়ি চলে এসো ওকে নিয়ে।
সবাই এক সাথে নাস্তা করবো।
অর্নাকে নিয়ে অয়ন নাস্তার টেবিলে যায়।
অপূর্ব অর্নার দিকে তাকিয়ে আছে।
অর্না ওর তাকানো দেখে অয়নের হাত ধরে ফেলে।
অপূর্ব চোখ নিচে নামিয়ে ফেলে।
-আমি সবাইকে বেড়ে দিচ্ছি আপু।
-উঁহু,তুমি নতুন বউ।তোমার কিছু করতে হবেনা।তুমি শুধু এখন আমার ভাইকে সময় দিবে।
সংসার সামলানোর জন্য তো সারাজীবনই পড়ে থাকবে।
-মনা ঠিক বলেছে মা,তুমি আমার পাগল ছেলেটাকে দেখে রেখো।
-আচ্ছা শোন,হানিমুনে কোথায় যাবি কোন প্ল্যান করেছিস?
-না করিনিতো,ভেবে দেখ কোথায় যাবি।টিকেট করে ফেল।
-দেখি,নাস্তা করে অর্নাদের বাসায় যাবো একটু।
-এখন কেন যাবি?বিকেলেতো উনারাই আসবেন।
-নারে এখনই যেতে হবে,অর্নার খারাপ লাগছে অনুর জন্য।আর অনুও সকালেই ফোন করেছিলো।আমাকে আর অর্নাকে খুব মিস করছে।গিয়ে ওকে নিয়ে আসি।
-অনু কে?কি হয় অর্নার?
-তোদের তো বলা হয়নি,আমাদের একটা মেয়েও আছে।ওর নাম অনু।
-মেয়ে আছে মানে?
-আচ্ছা সবাইকে আমি ক্লিয়ারলিই বলি।
অর্নার আগে একটা বিয়ে হয়েছিলো,ওর ডিভোর্স হয়ে গেছে।আর ওর একটা মেয়ে আছে।যেটা এখন আমার মেয়ে।এ বাড়ীর মেয়ে।
এ কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেছে।
-আমার কোন প্রবলেম নেই এতে,তোমাদের কোন প্রবলেম আছে?আমি চাই অনু আমাদের সাথে থাকুক।
-আমাদের কি প্রবলেম থাকবে?তুই যেই ডিসিশন নিবি আমরা তাতেই খুশি।
তো,ওদের ডিভোর্স টা কেন হয়েছিলো?(বাবা)
-কারণ ও গ্রামের এক সাধারণ মেয়ে।গাঁইয়া বউ অই অমানুষ টার পছন্দ ছিলোনা।বাবা মায়ের চাপে বিয়ে করেছিলো।আর তাই ওর সন্তানটাকেও ও পরিচয় দেয়নি।
পরে শহুরে এক স্মার্ট মেয়েকে সে বিয়ে করে নেয়।আর এভাবেই ওদের ডিভোর্স হয়ে যায়।
-খুব ভালো করেছো অমানুষটাকে ছেড়ে দিয়ে।নইলে সারাজীবন জ্বলতে হতো বোন।
কথা গুলো শুনে অপূর্বের কাশি উঠে যায়।
-আপু উনাকে পানি দিন (অর্না)
-এই নাও পানি।তোমার আবার কি হলো?
-না কিছুনা।
-নাস্তা করে যা তাহলে দাদুভাইকে নিয়ে আয়।
-হ্যাঁ বাবা যাচ্ছি।
অপূর্ব অর্ধেক নাস্তা করেই উঠে চলে যায়।
-কি হলো চলে যাচ্ছো যে?
-খেতে ইচ্ছে করছেনা।
-আর বলোনা,মানুষটা একটু অন্য রকমই যখন যা ইচ্ছে তাই করে।তোমরা খাও আমি আসছি।দেখি ওর কিছু লাগবে কিনা।
-কি হলো?চলে এলে যে?
-এমনিই ভালো লাগছেনা।
-দেখেছো দুনিয়ায় মানুষ কত রকমের হয়।তুমি আমি একটা বাচ্চার জন্য কত হাহাকার করছি।
আর ওদিকে ওই অমানুষ টা কিভাবে একটা বাচ্চা সহ এত লক্ষী একটা মেয়ের সোনার সংসার টা ভেঙে চলে গেছে।
-বাদ দাও ওসব কথা।
মেডিসিন নিয়েছো?ডাক্তার যেই মেডিসিন গুলো খেতে দিয়েছে?
-হুম নিবো এখন।
-মেডিসিন গুলো ঠিক মত নাও।
দেখো কি হয়।
-হুম আল্লাহ্ ভরসা।
অয়ন আর অর্না অনুকে আনতে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হবে আর অনুর ডাক।
-বাবা,আমি এসে গেছি।
অয়ন,অপূর্ব,মনা,অর্না,আর অয়নের বাবা সবাই এক সাথে দাঁড়ানো।
অনু দৌড়ে গিয়ে অয়নকে জড়িয়ে ধরে।
আমি এসে গেছি বাবা।
আমি এসে গেছি আম্মু।
-আমরা এক্ষুণি তোমায় আনতে যাচ্ছিলাম মা।
-জানো আমি তোমাদের খুব মিস করছিলাম।
-আমরাও তোমাকে খুব মিস করছিলাম আম্মু।
এই যে দেখো এটা কে।
এটা হচ্ছে তোমার দাদাভাই।
-আমার তো দাদা ভাই আছে।
-এটা তোমার আরেকটা দাদা ভাই।
-আচ্ছা,কেমন আছো দাদা ভাই?
-এইতো ভালো আছি আপু।তুমি কেমন আছো?
-আমিও ভালো আছি।
-আর এটা হচ্ছে তোমার ফুফুমা।
-এসো এসো কোলে এসো একটু।
-কেমন আছো ফুফু মা?
-আমি ভালো আছি মা।
-আর এই হচ্ছে তোমার,
-বাবা। আই মিন ফুফা বাবা।(অর্নব)
-ফুফা বাবা আবার হয় নাকি?(অয়ন)
-ফুফুমা হলে ফুফা বাবা হবেনা কেন?
-হি হি হি আচ্ছা তুমি আমার ফুফা বাবা।ভালো আছো?
-হ্যাঁ ভালো আছি।একটু কোলে আসবে আমার?
-না আমি এখন আম্মুর কোলে যাবো।
এদিকে অনুর নানা নানু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন অপূর্বের দিকে।
আর মনে মনে ভাবছেন।
যেই অশান্তি থেকে আমাদের মেয়ে মুক্ত হয়ে নতুন জীবনে পা রাখলো।
সেই অশান্তিতো আমাদের মেয়ের পিছু ছাড়লোনা।
তবে কি অর্না আবারো আঘাত পাবে?
অনুর নানা নানু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন অপূর্বের দিকে।
আর মনে মনে ভাবছেন।
যেই অশান্তি থেকে আমাদের মেয়ে মুক্ত হয়ে নতুন জীবনে পা রাখলো।
সেই অশান্তিতো আমাদের মেয়ের পিছু ছাড়লোনা।
তবে কি অর্না আবার আঘাত পাবে?
তাদের ধ্যানের ব্যাঘাত ঘটিয়ে অয়নের ডাক।
-মা,বাবা ওখানে দাঁড়িয়ে কেন?এখানে আসুন।
অর্নার বাবা মা এগিয়ে সবার সামনে গেলেন।
-মা বাবা,পরিচয় করিয়ে দেই।ইনি হচ্ছেন আমার বাবা।এটা আমার বোন,আর ইনি আমার বোন জামাই।
-আসসালামু আলাইকুম।সবাই ভালো আছেন?
-জ্বী ভালো।আপনারা কেমন আছেন?
-আলহামদুলিল্লাহ্ আমরাও ভালো আছি।
-বিয়েতে আমরা উপস্থিত থাকতে পারিনি,কিছু মনে করেন নি তো আপনারা?
-কি যে বলেন ভাই,আপনাদেরই তো আরো মন খারাপ হবার কথা।আপনাদের ছেলের বিয়েটায় উপস্থিত থাকতে পারলেন না।
-আমার মনে কোন আফসোস নেই।যে লক্ষীর মত বউমা পেয়েছি।
-দোয়া করবেন ভাই ওদের জন্য।আর আমাদের মেয়েটাকে দেখে রাখবেন।
জীবনে অনেক কষ্ট পাড় করেছে আমার এই মেয়ে।
-আপনারা কোন চিন্তা করবেন না।এখন থেকে অর্না আমাদের মেয়ে।ওকে দেখে রাখার দায়িত্ব আমাদের।আপনারা এখন চিন্তামুক্ত।
-শুনে ভালো লাগলো ভাই।নিশ্চিন্ত হলাম।
-যাও মা তোমার বাবা মাকে নাস্তা দাও।
-না না আমরা নাস্তা করেই এসেছি মাত্র।
-কিছু তো খেতেই হবে, এই প্রথম আমাদের বাড়ীতে আসলেন আপনারা।
-না না সমস্যা নেই,আরো কত সময়ই তো আছে, এখনি তো আর চলে যাচ্ছিনা।
-আচ্ছা তবে বসুন আমরা গল্প করি।
অপূর্বর যেন এসব একদমই ভালো লাগছেনা।
অপূর্ব ওখান থেকে ওর রুমে চলে গেলো।
-শোনো মনা,আজ তুমি একটু শাড়ী পরোতো।
-আজ হঠাৎ শাড়ী পরতে বলছো যে?
-তুমি না শাড়ী পছন্দ করোনা।
-আরে এত কথা বলছো কেন?পরতে বলেছি পরবে।
-আমার কোন ভালো শাড়ী নেই।শাড়ীতো পরাই হয়না,তাই কেনাও হয়না।আর তুমিও পছন্দ করোনা।তাই আরো কিনিনা।
-আচ্ছা ঠিকাছে আমি নিয়ে আসছি।
এই বলে অপূর্ব মনার জন্য শাড়ী কিনতে চলে যায়।
বার বার অর্নার মুখ টা চোখের সামনে ভেসে উঠছে অপূর্বের।
আর অনুকে তো ও কিছুতেই ভুলতে পারছেনা।ওর মেয়ে ওরই চোখের সামনে,কিন্তু একটু কোলেও নিতে পারছেনা।
এর চেয়ে বড় কষ্ট আর কি হতে পারে।
অপূর্ব শাড়ী কিনে নিয়ে বাসায় পৌছে।
-মনা,এই মনা কই তুমি।
-এই তো।
-এই নাও শাড়ী,এখানে দুটো শাড়ী আছে,একটা তোমার আরেক টা অর্নাকে দিও।
-বাহ্ ভাই বউর জন্য এত টান।ভালোই করেছো।আমি এখনি দিয়ে আসছি ওকে।
মনা অর্নাকে গিয়ে শাড়ীটা দেয়,অর্নার মন না চাইলেও অয়নের জন্য শাড়ীটা রাখা লাগে।
দুপুরে সবাই এক সাথে খেতে বসেছে।
-বাবা বাবা তুমি আর আমি এক সাথে বসবো।
অয়ন অনুকে চুমু দিয়ে ওর কাছে বসে।
অপূর্বের কেমন যেন এক কষ্টময় অনুভূতি হয়।
সবার খাওয়া দাওয়া শেষে অর্নার বাবা মা চলে যায়।
আর অয়নকে বলে যায়,
আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো।ওকে কোন দিন কষ্ট পেতে দিওনা বাবা।
-অর্না এখন আমার স্ত্রী।আপনারা কোন চিন্তা করবেন না।
মনা অর্নাকে বলে তোমরা এবার হানিমুনে গিয়ে ঘুরে আসো।
-জ্বী আপু দেখি অয়ন কি বলে।
-আমি আবার কি বলবো?আমরা আগামী পরশুই যাচ্ছি হানিমুনে।
-আচ্ছা তোরা কথা বল আমি আসছি।
-এই যে বউটা,আপনি কি জানেন আপনাকে যে শাড়ীতে অনেক সুন্দর লাগে?
-ও তার মানে অন্য কিছুতে আমাকে পঁচা লাগে?
-আমি কি সেটা বলেছি?
-শাড়ীতে আমার বউ টাকে অনেক অনেক বেশি সুন্দর লাগে।
-আচ্ছা আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
-আমার তো ধন্যবাদ লাগবেনা।
-তাহলে?
-চুমু লাগবে চুমু দেন।
-ইশ শখ কত।
-আচ্ছা দিবেন নাতো?ওকে আমিই দিচ্ছি।
-এই না না অনু এসে যাবে।
-আচ্ছা অনু কই?
-অনু ওর দাদা ভাই এর সাথে গল্প করছে।
-ও আচ্ছা।
-শুনুন,
-না শুনবোনা।
-শুনবোনা মানে?
-ওই মেয়ে আমি কি দূরের কেউ যে আমাকে আপনি করে বলো?
-না মানে।
-না মানে কি?তুমি করে না বললে আমি কিছুই শুনবোনা।
-প্লিজ এমন করেনা,শুনুন না।
-উঁহু শুনবোনা।
-শুনুন না,
-আচ্ছা বলুন।
-বলুন?
-জ্বী বলুন।আপনি যেই পর্যন্ত আমাকে তুমি করে না বলবেন,আমিও সেই পর্যন্ত আপনাকে আর তুমি করে বলবোনা।
-উফ!
-উফফ!
-আচ্ছা শুনুন না, আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার মেয়েটাকে একটা পরিবার দেয়ার জন্য।বাবার আদর দেয়ার জন্য।
-বাহ্ রে,মেয়েটা কি আপনার একার নাকি?
মেয়েটা আমারো,ওকে বাবার আদর দেবোনাতো কাকে দেবো?
-উম্মাহ্!
-আল্লাহ্ আমার বউ আমাকে আদর দিছে রে।
অর্না লজ্জা পেয়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছিলো আর অয়ন ওর হাত টেনে ধরে বুকে জড়িয়ে নেয়।
-লাভ ইউ বউ পাখি।
-হুম,এখন ছাড়ুন,আমি একটু বাবা আর আপুর ওখানে যাই।
-আচ্ছা যাও।
অপূর্ব সিগারেট খাচ্ছে।
-তুমি সিগারেট খাচ্ছো?কি হয়েছে তোমার?তুমি তো সিগারেট খাওনা।
-খাইনা তাতে কি?তাই বলে কি খাওয়া যাবেনা?কিছু হয়নি।যাও তো এখান থেকে।
-কি হয়েছে তোমার?কোন সমস্যা?বলো আমাকে।
-বললাম না কিছুনা,যাও এখান থেকে,আমাকে একটু একা থাকতে দাও।এত ঘ্যান ঘ্যান করোনা।(ধমক দিয়ে)
অর্না ওর শশুড় মসাইর রুমে এসেছে।
-কি করে দাদা নাতিন?
-এইতো আম্মু আমরা গল্প করছি।
-দাদাভাইকে বিরক্ত করছো নাতো?
-কি যে বলোনা বউমা,ও এসেছে পরে আমার মনে হচ্ছে অর্ধেক রোগ ই ভালো হয়ে গেছে।আমার দাদু ভাই এখন থেকে আমার সাথেই থাকবে।
তাইনা দাদু ভাই?
-হ্যাঁ দাদা ভাই।
-বউ মা,
-জ্বী বাবা।
-এখন থেকে এই সংসারটা তোমার।নিজের মত করে সংসারটাকে সাজিয়ে নিবে।এই সংসারের দায়িত্ব এখন থেকে তোমার হাতে।
-জ্বী বাবা।
-আর একটা কথা,তুমি আমার পাগল ছেলেটাকে আগলে রেখো।কখনো ওকে কষ্ট দিওনা।ছোট বেলা থেকে ওকে আর মনাকে আমি নিজে হাতে মানুষ করেছি।
ছোট বেলায়ই ওদের মা মারা যায়।
ওদের যদি ওদের সৎ মা দেখতে না পারে,তাই আমি আর ২য় বিয়েও করিনি।
ভেবেছি বাকি জীবন টা ওদের মুখ দেখেই কাটিয়ে দেবো।
-না বাবা,আমি অয়নকে কখনোই কষ্ট পেতে দেবোনা।আপনি চিন্তা করবেন না।
আমি এ সংসার আর সংসারের সবাইকে আগলে রাখবো।
-আচ্ছা বাবা আপনারা গল্প করুন আমি আসি।
-আচ্ছা এসো মা।
মনা মন খারাপ করে ড্রইংরুমে বসে আছে।
-আপু?
-আপু।
-হুম,আমি খেয়াল করিনি।কিছু বলবে?
-কি হয়েছে আপনার?কোন সমস্যা?
-আরে না,কিছু হয়নি।
-আপনার মুখ দেখে কিন্তু তা মনে হচ্ছেনা।
কিছু তো একটা হয়েছে।বলা যাবে আমাকে?
মনা অর্নাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে।
-কি হয়েছে আপু?বলুন আমাকে।বলুন।
-জানো,অর্নব কে আমি বিয়ের পর থেকে কোন দিনও সিগারেট খেতে দেখিনি।কিন্তু আজ ও সিগারেট খাচ্ছে,এই প্রথম দেখলাম ওকে সিগারেট খেতে।
ওকে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করায় ও আমাকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু আজকের আগে ও কোন দিন আমার সাথে এমন ব্যবহার করেনি।
খুব খারাপ লাগছে।
-আরে আপু ও কিছুনা।ছেলে মানুষ।
হয়তো কোন বিষয় নিয়ে চিন্তিত।তাই একটু জোড়ে কথা বলে ফেলেছে।
আপনি কোন অশুভ কথা চিন্তা করবেন না তো।
এবার হাসুন,হাসুন একটু।
এইতো লক্ষী আপু আমার।
আর এক্ষুনি গিয়ে তার দেয়া শাড়ীটা পরে ফেলুন।
সন্ধ্যা হয়ে আসছে।শাড়ীটা পরে একটু সাজুগুজু করুন।
দেখবেন তার রাগ কোথায় পালিয়েছে।
-পরতে পারি এক শর্তে,
-কি শর্ত আপু?
-তোমাকেও এখন ওই শাড়ীটা পরতে হবে,যেটা অর্নব এনে দিয়েছে।আর আমরা দুজন শাড়ী পরে এক সাথে ছবি তুলবো।
-আপু আমি অন্য দিন পরবো ওটা।আজ না।
আজ আপনি পরুন।
-তুমি না পরলে আমিও কিন্তু পরবোনা,এবার ভেবে দেখো তুমি কি করবে।
-আচ্ছা ঠিকাছে,আমিও গিয়ে পরছি।
আপনিও পরে রেডি হোন,তারপর আমরা পিক তুলবো।
-আচ্ছা ঠিকাছে।
মনা গিয়ে শাড়ীটা পরে নেয়।
অপূর্ব ঘুমিয়ে আছে।
অর্নাও রুমে গিয়ে অপূর্বের দেয়া শাড়ীটা পরতে বাধ্য হয়।কারণ মনা নাহলে পরবেনা শাড়ী।
শাড়ী পরা শেষে অর্না অয়নের জন্য চা বানাতে কিচেন রুমে যায়।
আর এদিকে অনু আর অয়ন গল্প করতে থাকে।
অর্না চা বানাচ্ছে,
আর পেছন থেকে শুনতে পাচ্ছে,
-আসলে আমার মাথা ঠিক ছিলোনা।কেন যেন দিন কাল খারাপ যাচ্ছে,কোন কিছুতেই মন বসাতে পারছিনা।
ডিপ্রেশন কাজ করছে।
তাই তোমার সাথে ওভাবে কথা বলে ফেলেছি।
সরি,আমাকে মাফ করে দাও।
আর কখনো এমনটা হবেনা,
এই বলে পেছন থেকে অর্নব অর্নাকে জড়িয়ে ধরে।
-লাভ ইউ মনা এন্ড সরি অসলো।
-কি করছেন এসব?ছাড়ুন আমাকে ছাড়ুন,(এই বলে অর্না অপূর্বকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়)
-আমি আপনার মনা না,আমি অয়নের অর্না, মিসেস অয়ন।সো দূরত্ব বজায় রাখুন।
(অর্নার আর মনার শাড়ী একই ডিজাইন আর একই রঙের,সেই জন্য অপূর্ব অর্নাকে মনা ভেবে জড়িয়ে ধরে আর কথা গুলো বলে)
-কি করছেন এসব?ছাড়ুন আমাকে ছাড়ুন,(এই বলে অর্না অপূর্বকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়)
-আমি আপনার মনা না,আমি অয়নের অর্না, মিসেস অয়ন।সো দূরত্ব বজায় রাখুন।
(অর্নার আর মনার শাড়ী একই ডিজাইন আর একই রঙের,সেই জন্য অপূর্ব অর্নাকে মনা ভেবে জড়িয়ে ধরে আর কথা গুলো বলে)
-সরি সরি সরি।আমি আসলে বুঝতে পারিনি।তাছাড়া এভাবে চিল্লাচ্ছো কেন?আমিতো কোন বাঘ ভাল্লুক নই যে তোমাকে খেয়ে ফেলবো।
আর আমরা অপরিচিতও নই যে আমাকে তুমি ভয় পাবে।
-হা হা হা,হাসালেন মিঃঅপূর্ব
আপনি তো বাঘের চেয়েও ভয়ংকর।
তাছাড়া আপনার কি করে মনে হয় আমরা পরিচিত?আমিতো আপনাকে চিনিনা।
-অর্না প্লিজ,এসব ভালো লাগছেনা।
-কিসব?
-তুমি কি দুনিয়াতে আর কোন ছেলে পাওনি?যে অয়নকেই তোমার বিয়ে করতে হলো?
-অয়নের মত কেউ যে আর এত ভালবাসেনি।তাই ওকে ছাড়া অন্য কাউকে করার চিন্তাও করিনি।
-জাস্ট অসহ্য লাগে আমার এসব।একটা মুহূর্ত শান্তি পাচ্ছিনা আমি।
-আজব তো,কেন পাচ্ছেন না শান্তি আপনি?
-আজব না?আমার মেয়ে আমার সামনে আরেকজন কে বাবা ডাকে,এটা কিভাবে সইবো আমি?আমার কেমন লাগে বোঝ তুমি?
-আমার এক্স ওয়াইফ আমার সামনে আমারই বউ এর ভাইয়ের সাথে সংসার সাজাচ্ছে।কেমন লাগে আমার এসব দেখলে?
-কই আমারতো কিছুই লাগেনা।
বরং আমি বলবো মনা আপুকে কখনো কষ্ট দিয়েন না।মেয়েটা খুব ভালো।যদি কখনো আপনার আসল রুপের কথা জানতে পারে তবে খুব কষ্ট পাবে।আমি চাইনা সে আপনার আসল রুপ টা কেমন তা জানুক।
-অর্না।
-চিল্লাবেন না, চা হয়ে গেছে,আমি অয়নের জন্য নিয়ে যাচ্ছি।অয়ন অপেক্ষা করছে।
অপূর্ব রাগে দেয়ালের মধ্যে সজোরে একটা ঘুষি মারে।
-এই নিন আপনার চা।
-আম্মু আমার টা কই?
-এইতো আম্মু এটা তোমার।
-বাহ্ দারুণ চা বানাওতো তুমি।
-থ্যাংক ইউ।
-কি হয়েছে?মন খারাপ?
-নাতো, আচ্ছা শুনুন।আমরা যদি পরশু না গিয়ে কালই হানিমুনের উদ্দেশ্যে রওনা হই তাহলে কি সমস্যা আছে?
-নাতো,কোন সমস্যা নেই।
তাহলে ডিনার করে সব কিছু গুছিয়ে রেখো।আর অনুকে যাবার সময় শপিং করে দেয়া যাবে।আর আমরাও কিনে নেবোনে যা যা প্রয়োজন।
-আচ্ছা ঠিকাছে।
রাতে খাবার টেবিলে বসে অয়ন সবাইকে জানায় ওরা হানিমুনে যাচ্ছে।
সবাই খুশি হয়,শুধু অপূর্ব ছাড়া।
খাওয়া দাওয়া শেষে অপূর্ব অপূর্বের রুমে যায়।
-মনা,
-হুম।আজ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।
-তাই বুঝি?
-হ্যাঁ।আর তখনকার জন্য সরি।মন টা কেন যেন ভালো ছিলোনা তাই ওভাবে কথা বলে ফেলেছি।
-ইটস ওকে ইয়ার,সমস্যা নেই।
আমি বুঝিতো একটা বাচ্চার জন্য হয়তো তোমার মন খারাপ থাকে।
আর আমিতো তোমাকে এই সুখ টাই দিতে পারছিনা।কতটা অভাগী আমি।
অপূর্ব মনাকে জড়িয়ে ধরে,
আর বলে,কোন দিন আমাকে ছেড়ে যেওনা।
-কক্ষনো যাবোনা আমি অপূর্ব,শুধু তুমি আমাকে আগলে রেখো।
-রাখবো।
পরের দিন অয়ন,অর্না অনুকে নিয়ে হানিমুনের উদ্দেশ্যে বের হয়।
অর্না চেয়েছিলো কিছুটা মুহূর্ত অপূর্বের কাছ থেকে দূরে থাকতে।
কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস,সারাজীবন ওদের এক সাথেই থাকতে হবে।
এ কথা ভাবতেই অর্নার গা শিউরে উঠে।
অনেক ক্ষণ জার্নির পর ওরা ওদের গন্তব্যে পৌছায়।
হোটেলে উঠে এবং ওখানে রেস্ট নেয়।
তার কিছু ক্ষণ পরই অপূর্বের মা ফোন দেয় অর্নার মোবাইলে।
-হ্যালো মা আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম সালাম।কেমন আছো মা?
-এইতো ভালো আছি মা,
-অনু কেমন আছে?কি করছো তোমরা?
-এইতো মা এখন একটু ঘুমাচ্ছে,
আমি অয়ন আর অর্না বেড়াতে এসেছিতো,কিছু ক্ষণ হয় পৌছালাম।
-তুমি ভালো আছো তো?অয়ন কেমন?
-ও অনেক ভালো মা,আমি ভালো আছি।
দোয়া করবেন।
-তা কি আর বলতে হয়?আচ্ছা তোমরা এখন তাহলে রেস্ট নাও।
ওরা কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেয়।
ঘুম থেকে উঠে খাবার অর্ডার করে।
খাওয়া দাওয়া করে ঘুরতে বের হয়।
অর্না অয়ন আর অনু মিলে অনেক আনন্দ করে।মজা করে।
-বাবা,তুমি আর মা একসাথে দাঁড়াও আমি তোমাদের ছবি তুলে দেই।
-আচ্ছা মা দাঁড়াচ্ছি।
রাতে ওরা ওদের রুমে চলে যায়।
খাওয়া দাওয়া করে নেয়।
অপূর্ব আজ অফিসে গিয়েছে।
কিছুতেই অফিসে মন বসাতে পারছেনা।
তাই অল্প সময় থেকেই আবার বাসায় চলে যায়।
-আচ্ছা মনা,তোমার কাছে আমি মানুষ টা কেমন বলোতো?
-আমার কাছে তুমি পৃথিবীর সব চেয়ে ভালো একটা মানুষ।
-যদি কখনো জানতে পারো এই ভালো মানুষীর পেছনে একটা নোংরা মানুষও লুকিয়ে আছে,তখন কি করবে?
-শোনো অর্নব,প্রতিটা মানুষেরই দুটো দিক থাকে।একটা ভালো দিক,একটা মন্দ দিক।
তোমারও থাকতে পারে,অস্বাভাবিক তো কিছুনা।কারণ তুমি মানুষ।
-আচ্ছা চলো ঘুমিয়ে পরি।
-আজ হঠাৎ এসব কথা কেন?
-না এমনিই,তেমন কিছুনা।
মনা খেয়াল করছে,অয়নের বিয়ের পর থেকেই অপূর্ব যেন কেমন হয়ে যাচ্ছে দিন দিন।
সকাল বেলা অর্না অয়ন আর অনু ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নেয়।
আশেপাশে একটু ঘুরে নেয়।
এর ফাঁকে অর্না ওর মা বাবার সাথে,আর অয়নের বাবার সাথে একবার কথা বলে নেয় ফোনে।
-অয়ন,
-হুম।
-জানেন,প্রতিটা মেয়েই চায় ওর একটা এমন বর হোক,যে কিনা ওকে খুব ভালবাসবে,যত্ন নিবে,আগলে রাখবে।
আমিও তাই চেয়েছিলাম,
যা কিনা দেরিতে হলেও আল্লাহ্ আমাকে মিলিয়ে দিয়েছেন।
-সারাটি জীবন এমনই থাকবেন প্লিজ।
চেঞ্জ হলে আমি পাগল হয়ে যাবো।
-ধুর পাগলী,এত ভালবেসে বিয়ে করেছি কি আমার বউটাকে কষ্ট দিতে?
-লাভ ইউ অয়ন।
-আই লাভ ইউ টু অর্না।
-বাবা ও বাবা,
-কি মা?
-আমরা ঘুরতে বের হবোনা?
-এইতো দুপুরের খাবার খেয়েই ঘুরতে বের হবো।
-আচ্ছা ঠিকাছে।
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে বিকেলের দিকে যখন অর্নারা ঘুরতে বের হয়,তখন দূর থেকে কাকে যেন দেখে অর্নার বুক কেঁপে উঠে।
-অয়ন,এই অয়ন।
ধুর অনুকে নিয়ে পেছন থেকে অয়ন কই গেলো?
-হাই!
-হাই,
-কেমন আছেন ভাবী?ও নো নো নো।আপনি তো এখন আর ভাবী নন,আপনি তো এখন আমার বন্ধুর এক্স।কেন ডিভোর্স হলো আপনাদের ভাবী?
-ও কি আপনাকে খুশি করতে পারতোনা?
নাকি আপনি তাকে খুশি করতে পারতেন না?
আর সাথে সাথে লোক টাকে টান দিয়ে সামনে ঘুরিয়ে ঠাস ঠাস থাপ্পড় বসিয়ে দেয় অপূর্ব।
-দোস্ত তুই?
-চুপ,কিসের দোস্ত?সেদিনই আমাদের বন্ধুত্ব শেষ হয়ে গিয়েছিলো যেদিন তুই আমাদের বাসায় এসে অর্নাকে বাজে কমেন্ট করেছিলি।
-হ্যাঁ,সেদিনের থাপ্পড় টা আমি এখনো ভুলিনি,
কিন্তু সেদিনতো তোর ওর উপর অধিকার ছিলো।কিন্তু আজ তো নেই।
তবে আজ কোন অধিকারে মারলি আমায়?
-কারণ এখন সে আমার সম্পর্কে ভাইয়া হোন,বড় ভাইয়া।ক্লিয়ার?
-কিছুই বুঝতে হবেনা তোর।তুই যা এখান থেকে।নয়তো তোর বউকে সব খুলে বলবো এখন আমি,অবশ্যই বউকে নিয়েই ঘুরতে এসেছিস।
-যাচ্ছি আমি,তবে শোন অর্নাকে ডিভোর্স দিয়ে সারাজীবনের জন্য ঠকেছিস কিন্তু তুই।আর এই ভুলের মাশুল তোর সারাজীবন দিতে হবে।
কথা টা মনে রাখিস।
-আপনি এখানে?এখানেও এসে গেছেন?
-বাসায় বোর হচ্ছিলাম,তাই ভাবলাম মনাকে নিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে আসি।
আর মনা বল্লো,এখানেই আসবে,তোমাদের এখানে।
তাই এখানেই নিয়ে এলাম।
মনা,অয়ন আর অনুর সাথে ওদিকে আছে।
চলো যাই।
আর তুমি কিছু মনে করোনা ওই লম্পট টার কথায়।
-লম্পট হলেও কথা তো আর মিথ্যে বলেনি,
আমি আপনাকে সুখী করতে পারিনি।তাইতো ছেড়ে গিয়েছিলেন আমায়।তাইনা?
-অর্না প্লিজ,আর শাস্তি দিওনা,আমি অনেক পস্তাচ্ছি এখন।
ভোগ করছি আমার পাপের শাস্তি।
-আমিও অনেক কষ্ট করেছি জীবনে।দয়া করে আমার সুখ টুকু কেড়ে নিতে আসবেন না।অনুরোধ করে গেলাম।
-অর্না দাঁড়াও,দাঁড়াও প্লিজ।
আমাকে ক্ষমা করে দাও,আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।আমি জানি আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছি,আর এ অন্যায়ের শাস্তি আমি সারাজীবন ভোগ করবো।শুধু তুমি আমাকে একটা বার ক্ষমা করে দাও।আমি আর এ ছাড়া তোমার কাছে কিছুই চাইনা।
প্লিজ অর্না প্লিজ (কেঁদে কেঁদে)
-কাঁদবেন না প্লিজ,আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।
-সত্যি দিয়েছো?
-হ্যাঁ সত্যি।
-থ্যাংক ইউ,থ্যাংক ইউ সো মাচ।
-এবার চলুন ওদিকে যাই,মনা আপু আর অয়নের ওখানে।
-চলো।
-হেই আপু,কেমন আছেন?
-এইতো ভালো,তোমাদের ছাড়া ভালো লাগছিলোনা,তাই চলে এলাম।
-খুব ভালো হয়েছে আপু।এবার আমরা এক সাথে মজা করতে পারবো।
-ইয়াহু,ফুফু মা আর ফুফাবাবাও এখন আমাদের সাথে মজা করবে।
তাইনা বাবা?
-হ্যাঁ মা,
অনুর অয়নকে বাবা বলে ডাকা শব্দ টা অপূর্বের যেন কলিজা ভেদ করে যায়।
কিন্তু কি আর করার,
ভুলতো ও ই করেছে,
এখানেতো আর অর্না বা অনুর কারোই দোষ নেই।
৭ দিন ওরা ঘুরাঘুরি করে,অনেক আনন্দ করে।হানিমুন টা ইঞ্জয় করে।
এবং ৮ম দিনের দিন সবাই মিলে এক সাথে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
আর পথেই একটা ট্রাকের সাথে ধাক্কা লেগে ওদের বাসটা এক্সিডেন্ট করে।
আর বাসের অনেকেই আহত এবং নিহত হয়।
অনু,অর্না,অয়ন,মনা,অপূর্ব ওরা সবাই ঠিক আছেতো?
নাকি এদের মধ্যে কেউ আবার এই পৃথিবী মায়া ত্যাগ করে বিদায় নিলো?
সুখ কি সইবে ওদের কপালে?
৭ দিন ওরা ঘুরাঘুরি করে,অনেক আনন্দ করে।হানিমুন টা ইঞ্জয় করে।
এবং ৮ম দিনের দিন সবাই মিলে এক সাথে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
আর পথেই একটা ট্রাকের সাথে ধাক্কা লেগে ওদের বাসটা এক্সিডেন্ট করে।
আর বাসের অনেকেই আহত এবং নিহত হয়।
আর সেই এক্সিডেন্টে অপূর্ব মনা আর অয়ন হালকা ব্যথা পেলেও গুরতর আহত হয় অর্না।
অনু অয়নের কোলে থাকে বলে ও বেঁচে যায়।
অর্নার অবস্থা দেখে অপূর্ব চিৎকার দিয়ে উঠে।
-অর্না, এ কি হয়ে গেলো।অর্না,এই অর্না কথা বলো।(অপূর্ব)
অনু খুব ভয় পেয়ে গেছে অনু কাঁদছে,অনু অয়নের কোলে।
অয়নও হাউমাউ করে কাঁদছে।
-অনু,তুমি ফুফাবাবার কোলে যাও।আম্মুকে বাঁচাতে হবে, আম্মুকে হসপিটালে নিতে হবে।
এই বলে অয়ন অর্নাকে কোলে করে পাশের একটা হসপিটালে নিয়ে যায়।
অর্নার শরীর থেকে প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়।
ডাক্তার রা বলেন প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়েছে,
রক্তের প্রয়োজন।
-যত রক্ত লাগে আমার শরীর থেকে নিন ডাক্তার,তবুও অর্নাকে ভালো করে দিন।(অপূর্ব)
-জ্বী তাহলে আপনার রক্তের গ্রুপ জানতে হবে,এবং দুজনের রক্তের গ্রুপ মিলতে হবে।
-আমাদের দুজনের রক্তের গ্রুপই
A+ ডাক্তার।আপনি রক্ত নেয়ার ব্যবস্থা করুন।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
এদিকে মনা আর অয়ন বিস্ময়ের সাথে অপূর্বের দিকে তাকিয়ে আছে।
ওদের মনে হাজারো প্রশ্ন,
কিন্তু এই মুহূর্তে প্রশ্ন করার মত পরিস্থিতি নেই।অর্নার বাঁচা মরা অবস্থা এখন।
ডাক্তার অপূর্বের শরীর থেকে রক্ত নিয়ে অর্নার শরীরে দিচ্ছে।
এদিকে মনা বাসায় ওর বাবাকে ফোন করে জানিয়ে দেয়।
ওর বাবা অর্নার মা বাবাকে জানান,আর অর্নার নানু আবার অপূর্বের বাবা মাকে জানান যে অর্নার অবস্থা খুব খারাপ ও এক্সিডেন্ট করেছে।
মনার বাবা আর অর্নার বাবা মা এক সাথে রওনা দেন হসপিটালের উদ্দেশ্যে।
এদিকে অর্নার ট্রিটমেন্ট চলছে।
অয়ন পাগলের মত কাঁদছে আর বার বার বলছে,তোমার কিচ্ছু হবেনা অর্না,
কিচ্ছু হবেনা তোমার।
এখন তো তোমার সুখের সময়।
এই দেখোনা অনু কত কাঁদছে তোমার জন্য।আমরা না নতুন ভাবে জীবন শুরু করবো?তবে কেন তুমি মাঝ পথে এসে আমাদের ছেড়ে যেতে চাচ্ছো?
আমাকে আর অনুকে কে দেখবে অর্না?তাড়াতাড়ি ফিরে এসো আমাদের মাঝে প্লিজ।আমি আর অনু বাঁচতে পারবোনা তোমাকে ছাড়া।
মনা অয়নকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।
-কিচ্ছু হবেনা ভাই,কিচ্ছু হবেনা অর্নার।
ও সুস্থ হয়ে যাবে দেখিস।তুই এভাবে কাঁদিস না।
-ওই দিকে অপূর্বও ডুকরে ডুকরে কাঁদছে।
মনা আর অয়নের মনে যেন প্রশ্ন গুলো ঘুরপাক খাচ্ছে বারবার।
অপূর্ব কেন অর্নার জন্য এভাবে কাঁদছে?
আর ও কি করে জানলো অর্নার রক্তের গ্রুপও A+.
কয়েক ঘন্টা হয়ে গেছে কিন্তু অর্নার জ্ঞান ফেরার কোন খবর নেই।
এদিকে অয়নের বাবা আর অর্নার বাবা মা হসপিটালে এসে পৌছে।
-কোথায় অর্না?কোথায়?
-কোথায় আমার বউমা?
অয়ন ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে।
-কিছু হবেনা বউ মার,তুই চিন্তা করিস না।
অনু ওর নানা নানুর কোলে গিয়ে কাঁদতে থাকে।
অর্নার বাবা মাকে ধরে অয়ন কান্নায় ভেঙে পরে।
-কি হতে কি হয়ে গেলো মা?আমিতো ওর দুঃখ গুলো মুছে দেয়ার জন্য ওর হাত ধরেছি।আর ও কিনা আমার হাত ছেড়ে দিতে চাচ্ছে?
আমি বাঁচবোনা মা আমার অর্নাকে ছাড়া।
-কিছু হবেনা বাবা,কিছু হবেনা তোমার অর্নার।তোমার জন্য অনুর জন্য ওকে বাঁচতে হবে।
হ্যাঁ বাঁচতে হবে।
এদিকে অপূর্ব হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে বলছে,
সব দোষ আমার,
আমার কালো ছায়া যত দিন ওর উপর আছে তত দিন ও ভালো থাকতে পারবেনা।
শান্তিতে থাকতে পারবেনা ও।
এই বলে আমার কাঁদতে থাকে।
এই কথা শোনে সবাই অপূর্বের দিকে তাকিয়ে থাকে।
অর্নার মা অপূর্বের কাছে ধীরেধীরে হেঁটে যেতেই অপূর্ব অর্নার মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
সব দোষ আমার মা,আমার জন্য আজ আপনার মেয়ের এই অবস্থা।
আগেও ওকে শান্তি দেইনি আমি,আর যখন ও অয়নকে নিয়ে আবার শান্তির সন্ধানে পা বাড়ালো,তখন
আমার অশুভ ছায়া ওর জীবন টা শেষ করে দিচ্ছে।
আমাকে ক্ষমা করে দিন মা।আমাকে ক্ষমা করে দিন।আমার জন্যই আজ ওর এই অবস্থা।
-তোমার কোন দোষ নেই বাবা,নিজেকে দোষ দিওনা।সব দোষ ওর কপালের।
কপালের লিখন কি আর বদলানো যায় বলো?কেঁদোনা।কিচ্ছু হবেনা অর্নার।
আর সেই মুহূর্তেই এসে হাজির হয় অপূর্বের বাবা মা।
আর অনু ওর নানা ভাই এর কোল থেকে নেমে গিয়ে দৌড়ে ওর দাদীকে জড়িয়ে ধরে।
-দাদীমা দাদীমা,আমার আম্মু চোখ খোলেনা।এত এত রক্ত বের হয়েছে আমার আম্মুর শরীর থেকে দাদীমা।
-দাদুভাই দাদু ভাই আমার আম্মুর কিছু হবেনাতো?
আম্মু কেন কথা বলেনা?ডাক্তার আংকেল রা আম্মুকে কেন দেখতে দেয়না?
-কিচ্ছু হবেনা তোমার আম্মুর দাদুমনি,কিচ্ছু হবেনা,ঠিক হয়ে যাবে তোমার আম্মু।তুমি কেঁদোনা।
এই দৃশ্য দেখে অয়ন মনা আর অয়নের বাবার আর বুঝতে বাকি নেই অপূর্বই যে অর্নার আগের স্বামী।আর অনু অপূর্বেরই সন্তান।তাইতো অনু ওর দাদা দাদীকে দেখে এভাবে দৌড়ে এগিয়ে গেলো।
তাছাড়া অর্নার মাকে জড়িয়ে ধরে অপূর্বের বলা কথা গুলো স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে অর্নার সাথে অপূর্বের আগের সম্পর্কের কথা।
আর সেই জন্যই অপূর্ব ওর রক্তের গ্রুপ জানে।
আর নিজের ভুল বুঝতে পেরে এইভাবে কান্নাকাটি করছে আর নিজেকে দোষী ভাবছে।
কিছু ক্ষণ পর ডাক্তার এসে বলে পেশেন্টের জ্ঞান ফিরেছে।
আপাতত চিন্তার কোন কারণ নেই,চার পাঁচ দিন থাকতে হবে এখানে।
অয়ন সবাইকে বাসায় চলে যেতে বলে।
-আপনারা সবাই বাসায় চলে যান,আমি আছি অর্নার সাথে।
-বাবা আমিও থাকি, (অর্নার মা)
-না মা,আপনিও বাসায় চলে যান অনুকে নিয়ে যান।ওকে দেখে রাখবেন।
-আচ্ছা ঠিকাছে বাবা,তুমি যা ভালো মনে করো।
-অপূর্ব ভাইয়াকে নিয়ে বাসায় চলে যা,বাবার খেয়াল রাখিস।
-তুই একা থাকবি এখানে?
-হুম সবাইকে নিয়ে বাসায় চলে যা,আমি একাই আমার বউ এর কাছে থাকবো।
সবাই অর্নার সাথে দেখা করে বাসায় চলে যায়।
-আম্মু তুমি সুস্থ হয়ে বাসায় চলে এসো ঠিকাছে?
-আচ্ছা মা।
-বাবা আমাকে নানীমার সাথে চলে যেতে বলেছেন,তাই আমি চলে যাচ্ছি।তুমি কিন্তু নিজের খেয়াল রেখো।
-আচ্ছা।তুমিও নিজের খেয়াল রেখো।
সবাই চলে যায়।
রাতে মনা অপূর্বকে জিজ্ঞেস করে,
-কেন লুকিয়েছো আমার কাছে এসব?তুমি বিবাহিত ছিলে আমাকে কেন জানাও নি?আর তুমি ই কি সেই অপূর্ব?যে কিনা অর্নাকে ত্যাগ করেছে শুধু মাত্র ও গাঁয়ের মেয়ে বলে।আর অনু?অনু কি দোষ করেছিলো?ছিঃ ছিঃ আমার ভাবতেও অবাক লাগছে।আমার অপূর্ব কিনা এত ছোট মনের।
-প্লিজ মনা,আমি মানছি আমি ভুল ছিলাম,কিন্তু এখন আমি অনুতপ্ত।আমাকে ক্ষমা করে দাও।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।
-তুমি আমার স্বামী,এভাবে বলোনা।
যাও শুয়ে পরো,অনেক রাত হয়েছে।
৪দিন কেটে যায়।
আজ অর্নাকে রিলিজ দেয়া হবে।
সকালে অয়ন অর্নার হাত ধরে বসে আছে।
কিছুক্ষণ পর অর্নার ঘুম ভাঙে।
-এখন কি ভালো লাগছে?
-হুম।
-চিন্তা করোনা আজই আমরা বাসায় ফিরবো।
-হুম।
-একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
-করো।
-কেন লুকিয়েছো আমার কাছে এসব?কেন বলোনি অপূর্বই তোমার…
-কি বলতাম বলো?কি ই বা বলার ছিলো।চাইনি মনা আপু আর তুমি কষ্ট পাও,কিংবা তাকে খারাপ ভাবো।
সংসার টা এলোমেলো হয়ে যাক।
আমি যেদিন প্রথম তোমার বউ হয়ে তোমার ঘরে আসি।সেদিনই আমি অবাক হয়েছি তাকে দেখে।
কিন্তু কি বলবো বুঝতে পারিনি।
তাই আর কাউকে কিছু বলিও নি।
তুমি আমাকে ভুল বুঝোনা প্লিজ।
-ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে রেডি হতে হবে।কিছু ক্ষণ পরেই আমরা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেবো।
এই বলে অয়ন অর্নার হাত টা ছেড়ে কেবিনের দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়।
-ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে রেডি হতে হবে।কিছু ক্ষণ পরেই আমরা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেবো।
এই বলে অয়ন অর্নার হাত টা ছেড়ে কেবিনের দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়।
অর্না অয়নের চলে যাওয়া দেখতে থাকে।
আর ভাবতে থাকে,অয়ন আমাকে ভুল বুঝলো?
ভাবতে ভাবতে অর্নার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
আর ঠিক সেই মুহূর্তে অয়ন এসে হাজির হয়।
-এই এই এই কি হয়েছে?কি হয়েছে?
খারাপ লাগছে অর্না?কি হয়েছে?ডাক্তার ডাকবো?ডাক্তার..
-কিছু হয়নি,তুমি আমাকে ভুল বুঝেছো তাইনা?
-আরে না পাগলী,একটুও ভুল বুঝিনি।
-তাহলে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বাইরে চলে গেলে যে।
-নাস্তা আনতে গিয়েছিলাম,এই যে দেখো নাস্তা।নাস্তা আনতে সাথে করে আমার অসুস্থ বউটাকে নিয়ে যেতাম আমি?
-সরি!আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে ভুল বুঝেছো।রাগ করেছো আমার সাথে।
-ধুর কি যে বলোনা।আমি তোমাকে বাসর রাতে কি বলেছিলাম?অতীত ভুলে নতুন করে আমরা জীবন শুরু করবো।
তাহলে অতীত নিয়ে কেন আমি রাগ করবো বলো?পাস্ট ইজ পাস্ট ওকে?
এই বিষয়ে আর কোন কথা হবেনা।
তুমি আমার স্ত্রী,অনু আমার সন্তান।আর এটাই তোমাদের পরিচয়,ঠিকাছে?
আমি আর এ বিষয় নিয়ে কোন কথা শুনতে চাইনা।
-লাভ ইউ অয়ন।
-লাভ ইউ টু বউ পাখি।
হসপিটাল থেকে রিলিজ নিয়ে অয়ন আর অর্না বাসায় চলে আসে।
ওরা আজ বাসায় আসবে বলে অর্নার মা বাবা আর অনুও অয়ন দের বাসায় আসেন,আর অপূর্বের বাবা মাও আসেন।
মনা অর্নাকে ধরে নিয়ে সোফায় বসায়।
সবাই হল রুমে বসে আছেন।
-আম্মু,তুমি এসে গেছো?
-হ্যাঁ মা আমি এসে গেছি।
-কেমন আছিস এখন মা?
-ভালো আছি মা,
-বউমা,আসার সময় কোন কষ্ট হয়নিতো?
-না বাবা কোন কষ্ট হয়নি।
এক এক করে সবাই অর্নার সাথে কথা বলছে।
কিন্তু অর্নব কোন কথা বলার সাহস পাচ্ছেনা।
-তুমি জিজ্ঞেস করবেনা অর্না কেমন আছে?(মনা)
-না মানে,সবাইতো জিজ্ঞেস করছোই।সমস্যা নেই।
-আগে কি সম্পর্ক ছিলো তোমাদের,সেটা কোন বিষয় না আমার কাছে।
এখন তুমি আমার স্বামী এটাই তোমার বড় পরিচয়।আর আমার স্বামীর উপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে।
-থ্যাংক ইউ মনা।
-যাও জিজ্ঞেস করো,কথা বলো অর্নার সাথে।
-হুম।
-এখন কেমন আছো অর্না?
-জ্বী আলহামদুলিল্লাহ্।
-এখন কোন সমস্যা নেইতো?
-না তেমন কোন সমস্যা নেই।
ডাক্তার বলেছেন একটু রেস্টে থাকলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
-খুব ভালো।
-আচ্ছা শুনুন,
-হ্যাঁ বলো,
-অয়ন বল্লো আপনি নাকি আমাকে রক্ত দিয়েছেন। ধন্যবাদ।
-আরে না,ধন্যবাদ দিতে হবেনা।তুমি ঠিক আছো এটাই অনেক।
-আচ্ছা সবাই তাহলে ফ্রেশ হয়ে নিন,আমি খাবার দিচ্ছি।
সবাই খেয়ে নেই।(মনা)
সবাই ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে নিলো।
অয়নের অফিস থেকে একটা ফোন এসেছে বলে অয়ন বারান্দায় গিয়ে ফোনে কথা বলে।
আর সেই সময় অপূর্ব অয়নের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়।
-অয়ন,
-জ্বী ভাইয়া এক মিনিট।
হ্যাঁ ভাইয়া বলুন।
-অয়ন,কিভাবে কি বলবো তোমাকে বুঝতে পারছিনা।কিন্তু এই টুকু বলতে পারি অর্নার কোন দোষ ছিলোনা,আর ও খুব ভালো মেয়ে।দোষ ছিলো আমার।
-ভাইয়া প্লিজ, আমি এ টপিক টা ভুলে যেতে চাই।আর অর্নাকেও বলেছি এ টপিক টা ওর অতীত,অতীত যেন আমাদের সামনে আর কোন দিন না আসে।আর অর্না কেমন মেয়ে সেটা আমি ভালো করেই জানি,কারণ অর্না আমার বিবাহিতা স্ত্রী।আমার থেকে ভালো আর ওকে কেউ চিনেনা বা জানেনা।
-আমাকে তুমি ক্ষমা করেছো তো?
-কি যে বলেন ভাইয়া,আমার কাছে আপনি কোন দোষ করেন নি।যে আমি আপনাকে ক্ষমা করবো।
-আমি মনা,বাবা,আর অর্নার কাছেও ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি।ওরা আমাকে মাফ করে দিয়েছে।
-তাহলে আর কি!ইঞ্জয় ইউর লাইফ।
পুরনো সব ভুলে নতুন ভাবে জীবন শুরু করুন মনাকে নিয়ে।
আর চিন্তা করবেন না,অর্নার হাত যখন ধরেছি।
মরণের আগ পর্যন্ত এ হাত ছাড়বোনা।
যত ঝড় তুফান আছে সব থেকে আগলে রাখবো আমি আমার বউকে।
আশা করি আপনিও মনাকে ঠিক এই ভাবেই আগলে রাখবেন।
-অবশ্যই,কেননা মনাই আমার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ।
-ধন্যবাদ ভাইয়া।
তারপর দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে।
-চলো সবাই অপেক্ষা করছে ওখানে যাই।
-চলুন।
সবাই এক সাথে বসে গল্প করছে।
আর একটা সময় মনা হঠাৎ করে অপূর্বের মায়ের কাছে গিয়ে হাত ধরে বলে,
-মা,আমি আপনার ঘরের লক্ষী না?
-হ্যাঁ মা।তুমিই তো এখন আমার ঘরের লক্ষী।
-তাহলে আপনাদের সাথে আপনাদের এই ঘরের লক্ষীকে নিয়ে চলুন মা।নিয়ে চলুন আপনাদের সাথে আপনাদের ছেলের বউ কে।
আমি আমার শশুড় শাশুড়ির সাথে থাকতে চাই।
-সত্যি বলছো বউমা? (অপূর্বের বাবা)
-হ্যাঁ বাবা,আমি এখন থেকে আপনাদের সাথেই থাকবো।বাবাকে দেখার জন্যতো এখন অর্নাই আছে।আমার আর কোন চিন্তা নেই।
-হ্যাঁ ভাই সাহেব,আমার ঘরের লক্ষীতো এখন এসেই গেছে,আপনি আপনার ঘরের লক্ষীকে এবার আপনাদের সাথে নিয়ে যান।
-চলো বউমা,রেডি হও তাহলে।চলো আমাদের সাথে।
-তুমি কি যাবে বাবা মায়ের সাথে?নাকি থাকবে এখানে?(মনা)
-আমাকে মাফ করে দাও বাবা,আমাকে মাফ করে দাও মা।আমাকেও তোমাদের সাথে নিয়ে চলো।
-ধুর পাগল ছেলে,মা বাবার কাছে সন্তানের মাফ চাইতে হয়না।
মা বাবা সন্তানকে এমনিতেই মাফ করে দেন।যা বউমা আর তুই রেডি হয়ে আয়,
আমরা তারপর বেরুবো।
মনা রেডি হতে ওর রুমে যায়।
-আপু,আপনি কি আমার জন্য এ বাড়ী ছেড়ে চলে যাচ্ছেন?
-আরে না রে পাগলী।এ ঘর তোমার।এ সংসার তোমার।আর বাবাকে দেখার জন্য এখন তুমি আছো।আর তাই আমি নিশ্চিন্তে আমার ঘরে ফিরে যেতে পারি।
যেটা আমার নিজের ঘর।নিজের সংসার,যেখানে আছে আমার শশুড় শাশুড়ি,যেখানে আছে আমার পরিবার।আমি সেখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে চাই।
তুমি বাবার খেয়াল রেখো।আর আমার ভাইটাকে আগলে রেখো।ও তোমায় বড্ড ভালবাসে।
-দোয়া করবেন আপু।আমিও আপনাদের জন্য দোয়া করি,আর অপূর্বও আপনাকে খুব ভালবাসে আপু।
-হ্যাঁ আমি জানি সেটা।আর আমিও ওকে খুব ভালবাসি।
-দোয়া করি আপু,আপনারা খুব খুব ভালো থাকুন।
-তোমরাও ভালো থেকো।
অপূর্ব আর মনা সবার সাথে দেখা করে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অপূর্বের নিজ বাড়ী চলে যায়।
অয়ন আর অর্না দুজনকে মাঝে মাঝে বেড়াতে আসতে বলে।
অর্নার নানা নানুও তাদের বাড়ীতে চলে যান।
অর্না,অয়ন,অনু আর অয়নের বাবা মিলে শুরু করেন নতুন এক জীবন।
ওদিকে মনাও তার শশুড় শাশুড়ি এবং স্বামীকে নিয়ে শুরু করে নতুন এক সংসার।
সবাই ভালো আছে ওরা।
দেখতে দেখতে অনেক গুলো মাস কেটে যায়।
হঠাৎ একদিন রাতে টেবিলে সবার জন্য খাবার বাড়তে বাড়তে অর্না মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়,
আর অয়ন সাথে সাথে অর্নাকে কোলে করে নিয়ে বিছানায় শোয়ায়।আর ডাক্তারকে ফোন করে।
এদিকে অয়ন,অনু আর অয়নের বাবা খুব ভয় পেয়ে যায়।
ডাক্তার এসে অর্নাকে দেখে বলেন,
-কংগ্রাচুলেশনস মিঃঅয়ন, আপনি বাবা হতে চলেছেন।
-সত্যি বলছেন ডাক্তার?আমি বাবা হতে চলেছি?বাবা শুনছো ডাক্তার সাহেব কি বলছেন?তুমি দাদা হতে চলেছো।
-হ্যাঁ সত্যি বলছি।এখন থেকে আপনারা উনার খেয়াল রাখবেন।এই সময় একটু আকটু এমন হয়,চিন্তার কোন কারণ নেই।
আমি এখন আসি।
-থ্যাংক ইউ ডাক্তার,থ্যাংক ইউ সো মাচ।
অয়ন খুশিতে ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে।
অর্না বিছানা থেকে উঠে অয়নের বাবাকে সালাম করে।
অয়নের বাবা দুজনকে জড়িয়ে ধরে দোয়া করেন।
-শুনেছিস দাদু ভাই তুই বোন হবি।আপু হবি তুই।তোর ছোট্ট একটা ভাই বা বোন আসছে।
-সত্যি দাদা ভাই?আমার পিচ্চি একটা ভাই,বোন হবে?আমাকে আপু ডাকবে?
ইয়াহু!আমি বড় আপু হবো।আমার একটা পিচ্চি ভাই,বোন হবে।
-চলো দাদু ভাই আমরা আমাদের রুমে যাই।তোমার আম্মু একটু রেস্ট নিক।
-আচ্ছা চলো।
-থ্যাংক ইউ অর্না।আমাকে ২য় বারের মত বাবা ডাক শোনার সৌভাগ্য করে দেয়ার জন্য।আরেকটা ছোট্ট মানুষকে আমাদের পরিবারে আনার জন্য।
-থ্যাংক ইউ টু,আমাকে আরেকটা প্রাণ থেকে মা ডাক শোনার সৌভাগ্য করে দেয়ার জন্য।
আমার গর্ভে প্রাণ টাকে এনে দেয়ার জন্য।
আর আল্লাহ্র কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া।
তিনি আমাদের দুজনের কোল ভরিয়ে দিয়েছেন বলে।
-ভালবাসি বউ পাখিটা উম্মাহ।
-লাভ ইউ বরটা।
-আচ্ছা মনাকে জানিয়ে দেই ও শুনলে খুব খুশি হবে।
-আচ্ছা।
-হ্যালো মনা,
-না আমি অর্নব।
-ও ভাইয়া, কেমন আছেন?
-এই তো ভালো আছি,তোমরা কেমন আছো?
-এই তো আলহামদুলিল্লাহ্।মনা কই?
-মনাকে নিয়ে একটু ডাক্তারের কাছে এসেছি।ও ডাক্তারের সাথে কথা বলছে।
-কেন কোন সমস্যা?
-না তেমন কিছুনা, এইযে তোমার বোন বেরিয়ে এসেছে নাও কথা বলো।
-অর্নব,আল্লাহ্ আমাদের দিকে মুখ তুলে চেয়েছেন।তুমি বাবা হতে চলেছো।
-সত্যি?
-হুম সত্যি।আল্লাহ্র কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া।
এই নাও তোমার ভাই লাইনে আছে কথা বলো।
-হ্যালো ভাই,একটা গুড নিউজ শোন,তুই মামা হতে চলেছিস।
-সত্যি বলছিস?আল্লাহ্।
এবার তুইও একটা গুড নিউজ শোন,তুইও ফুফু মা হতে চলেছিস।
অর্না মা হতে চলেছে।আর আমি এই নিউজ দিতেই তোকে ফোন করেছিলাম।
-আল্লাহ্ আমাদের দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছেন রে ভাই।
-হ্যাঁ রে। আচ্ছা খুব সাবধানে চলিস।আর নিজের খেয়াল রাখিস।
হ্যাঁ তুইও অর্নাকে দেখে রাখিস।এই চিন্তা তোর করতে হবে নারে।
আচ্ছা ভাইয়াকে দে।
-হ্যাঁ অয়ন বলো।
-মিষ্টি নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে আসুন।আর আমার বোন কে দেখে রাখবেন।খেয়াল রাখবেন ওর।
-সেই চিন্তা তোমার করতে হবেনা,বুঝলে?
তুমি তোমার টার খেয়াল রাখো।
-হা হা হা,আচ্ছা রাখি তাহলে।আল্লাহ্ হাফেজ।
-আচ্ছা আল্লাহ্ হাফেজ।
দেখতে দেখতে মনার আর অর্নার ডেলিভারির ডেইট চলে আসে।
দুজনকেই একদিনে হসপিটালে ভর্তি করা হয়।
অয়ন আর অর্নব দুজনই বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে।
কিছু ক্ষণ পর নার্স এসে বলে,
অর্নার ছেলে হয়েছে।
অয়ন খুশিতে আত্মহারা,মেয়েতো আছেই।একটা ছেলের অভাব ছিলো।সেটাও আজ পেয়ে গেলো।সংসার পরিপূর্ণ হলো।
এবার অপূর্ব কে নার্স এসে বলে মনার মেয়ে হয়েছে।
অপূর্ব মনে মনে বলে ও যেন অর্নাকে পেয়ে গেলো।
আল্লাহ্ যেন অর্নাকেই ওদের কোলে পাঠালো।
দুই পরিবার পূর্ণ হয়ে গেলো।
অয়ন অপূর্ব দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরলো খুশিতে।
মনা এবং অর্না দুজনই সুস্থ আছে।
চার দিন পর ওদের রিলিজ দিয়ে দিলো।
মনা চলে গেলো অপূর্বের সাথে মনার শশুড় বাড়ী।
আর অর্না চলে গেলো অয়নের সাথে অর্নার শশুড় বাড়ী।
সুখে শান্তিতে চলতে লাগলো মনা অপূর্বের,
আর অয়ন অর্নার জীবন।
মনা অপূর্বের মধ্যে কোন ঝগড়াঝাঁটি না হলেও।
অয়ন আর অর্নার মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকে।
অর্না কেন ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলো,
অর্না কেন টাইম মত খেলোনা।অর্না কেন এখন বাচ্চাদেরই বেশি সময় দেয়,কেন অয়নকে বেশি সময় দেয়না।
অর্না কেন এখন নিজের খেয়াল রাখেনা।শুধু কি বাচ্চাদের খেয়াল রাখলেই হবে,নিজের খেয়ালও তো রাখতে হবে।
এই গুলোই অয়নের চোখে অর্নার দোষ।
আর এই টুকটাক কথা নিয়েই চলতে থাকে তাদের মধ্যে মিষ্টি যুদ্ধ।
-অর্না,
-হুম।
-একটা কথা বলবো?
-হুম বলো,
-তুমি এখন আমাকে একটুও ভালবাসোনা তাইনা?শুধু বাচ্চাদেরই ভালবাসো।
-কে বলেছে এই কথা হ্যাঁ?
-আমি বুঝিতো।
-আপনি কিচ্ছু বুঝেন না সাহেব,
এইযে এই দিকে আসেন।
-হুম আসলাম।
-উম্মাহ।আমি আপনাকে খুব ভালবাসি,আর ওদেরও অনেক ভালবাসি।
কারো থেকেই কাউকে কম না।
শুধু সমস্যা হচ্ছে এই,
আমি আগে আপনাকে বেশি সময় দিতাম।
আর এখন ওদের বেশি সময় দেই।
অর্নক(ছেলে) একটু বড় হোক তখন ওকে ওর দাদা ভাই আর বোনের কাছে দিয়ে আমি আপনাকে সময় দেবো।
ঠিকাছে?
-সত্যি তো?
-হ্যাঁ একদম সত্যি।
-আচ্ছা লাভ ইউ আমার গাঁইয়া বউটা।
-উম্মাহ,ভালবাসি আমার শহুরে বরটা।
এইভাবেই সুখে শান্তিতে কেটে যাচ্ছে অয়ন আর অর্নার জীবন।
সবাই দোয়া করবেন,ওরা যেন সারাজীবন এমন সুখে শান্তিতেই থাকতে পারে।