মেয়েটি প্রতিদিনের মত আজও আছে
দাঁড়িয়ে জানালার গ্রিল ধরে! কখনো মনে
হয় কোন এক নিসংগ রমনী,দক্ষিণা হাওয়ায়
এলো চুলে রয়েছে কারও প্রতিক্ষায়।
,
আমি দূর থেকে দেখি ওকে। কখনও ও
আমাকে খেয়াল করেছে কিনা তা অবশ্য
বলতে পারব না। তবে যতটা সম্ভব সন্দেহ
যাতে না জাগে সেই চেষ্টাটা করি।
,
কিন্তু কোনদিন ওকে না
দেখলে সারাটি দিনই কেমন যেন পানসে
হয়ে যায়। মনটা সারাক্ষণই খোঁচাতে
থাকে।
,
মেয়েটির প্রতি এই অতি আগ্রহ আমাকে
বেশ চিন্তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। কখন
না জানি আবার কোন বিব্রতকর
পরিস্থিতিতে পড়তে হয়!
,
কিন্তু তার চেয়েও যে বিষয়টি
আমাকে বেশি বিব্রত করছে তা হলো, আমি
কি ওকে ভালোবাসতে শুরু করেছি?
,
কই কখনও তো ওর সাথে
আমার কথা বলতে ইচ্ছে হয় নি! এমনকি
আমি ওর নামটা পর্যন্ত জানি না! জানতেও
চাই নি কখনও।
,
তারপরও ওকে না দেখলে এরকম লাগে কেন?
ওর চেয়েও তো ঢের সুন্দরী মেয়ে দেখেছি!
কই আর কোন মেয়েকে তো দ্বিতীয় বার
দেখার আকুতি মনে জাগে নি!
,
তাহলে ওর বেলায় কেন এমন হচ্ছে? নাহ্! আর
ভাবতে পারছি না। যে করেই হোক
মনোযোগটা অন্য কোন দিকে ঘুরিয়ে
ফেলতে হবে।
,
যদি অফিসের কাজের মধ্যে ডুবে যাই
তাহলে হয় তো বিষয়টা ভুলে যাব। বা
আগ্রহটা
কমে আসবে। দেখা যাক কোন ঘাটের জল
কোন ঘাটে গিয়ে গড়ায়!
,
বিকেল ৫টা অফিস আওয়ার শেষ, দেরী না
করে বাসার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরলাম।
যেই না মেইন রোডে পা দিয়েছি! অমনি
আকাশে মেঘ করে
মূহুর্তের ভেতর ঝুমঝুমিয়ে মুষলধারে বৃষ্টি।
,
সবাই বৃষ্টি থেকে একটু
আড়াল হবার চেষ্টা করছে। আমি দাঁড়িয়ে
দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছি। অনেকেই আমার
দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছে যেন বৃষ্টিতে
ভেজা একটা অপরাধ।
,
একটু পর মাথা নিচু করে হাটতেছি। কিছু দূর
যেতেই মাথা তুলে তাকালাম। একটি
মেয়ে। কৌতূহল নিয়ে তাকালাম তার
দিকে। অদ্ভুত
ভঙ্গীতে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে
আছে।
,
আমি অদ্ভুত ছাড়া অন্য
কোন শব্দ খুজে পাচ্ছিনা। মেয়েটাকে
কেমন জানি খাপছাড়া আর বিষণ্ণ মনে
হচ্ছে। আচ্ছা, আমি এভাবে ভাবছি কেন?
হয়ত সে তার মতোই দাঁড়িয়ে আছে।
,
মেয়েটির কাছে এগিয়ে
জিজ্ঞাসা করলাম। এই যে শুনছেন?
(মেয়েটি আমার দিকে ঘাড় ঘুরাতেই আমি
নিজেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম! আরে
এই তো সেই রাজকুমারী, যার মেঘ কালো
চুল,টানা টানা হরিণীর মত চোখ। দুধে
আলতা গায়ের বরণ না হলেও মায়াময় অদ্ভুত
সুন্দর মুখ)
,
তারপর মেয়েটি বলল,
জ্বী, আমাকে
বলছেন?
,
নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম!
এখানে আপনি ছাড়া আর
কেউ আছে নাকি?
,
না, না। আর কেউ
নেই তো আপনি আর আমি ছাড়া।
,
জ্বী, তাহলে আপনাকেই বলছি?
,
কেন? বলুন তো?
,
এভাবে বৃষ্টিতে ভিজতেছেন কেন?
,
এবার মেয়েটির দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বেড়িয়ে
এলো ভয়ঙ্কর এক হাঁচি!
(হাঁআআআচ্চো)
তারপর বলল? কী বলতে চান সরাসরি বলতে
পারেন
না?
,
নাহ্ মানে! কতক্ষন থেকে বৃষ্টিতে
ভিজছেন?
,
এবারে যেন তার তার
চোখে মুখে একটু বিরক্তির আভা দেখতে
পেলাম। দেখতে পেলাম বললে ভুল হবে,
ঝাপসা চশমার ভেতর
থেকে ঝাপসা অনুভব করলাম।
আমিও যথাসম্ভব করুণ মুখে দিলাম অভিনব
এক হাঁচি। হাঁচি আটকাতে যেয়েই এই
অভিনব হাঁচির জন্ম।
,
মেয়েটি বলল,
আচ্ছা আমায় লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেও কী
আপনার মন ভরে নি! এখানেও জ্বালাতে
এসেছেন? লজ্জা করে না আপনার।
,
এই সেরেছে রে? ধরা বুঝি পড়েই গেলাম।
তবুও বুকে ১মন সাহস নিয়ে বললাম! লজ্জা হল
নারীর ভূষণ, ছেলেদের লজ্জা পেতে নেই।
,
মেয়েটি বলল,
কী বেশরম ছেলেরে বাবা! আপনার মত আর
একজন কে দেখতে পাবো কিনা সন্দেহ
আছে।
,
এই যাহ্, সেই কখন থেকে শুধু ঝগড়া করেই
যাচ্ছি। অথচ আপনার নামটিই জানা হল না!
কষ্ট করে যদি একটু বলতেন?
,
জ্বী আমার নাম জান্নাতুল ফেরদৌস ইভা । আপনার?
,
মাহিদ হাসান (কুতুব) বাট আপনার
নামটি অনেক মিষ্টি।
,
ইভা বলল,
ও ও ও, তাই বুঝি! তবে আপনার নামটিও
কিন্তু অনেক সুইট।
,
আমি বললাম,
এটাই বুঝাতে চাচ্ছি সেই কখন থেকে। এমন
সুইট ছেলে সবার ভাগ্যে জুটে না। তাই
বলছি আজীবন পাশে থাকার একটু সুযোগ
দিতে।
,
আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন, আমি ভালো
করেই জানি কিন্তু আমার জগত্ অনেক
আগেই থমকে গেছে। নতুন করে
ভালোবাসতে ভয় হয় যদি সে ও দুঃখ দেয়।
,
কথা গুলো শুনে একটা শব্দও উচ্চারন করার
ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি। তবুও আমায়
বলতে হবে, কারণ! আমি হাল ছাড়ার মত
পাত্র নই, পরাজয় কী সেটা জানিনা।
.
তারপর বলেই ফেললাম,
প্রথিবীতে সব জিনিসই খুব সহজে পাওয়া
যায় না! কিন্তু হারিয়ে যাওয়ার বেলায়
সেটা খুব সহজেই হয়ে যায়। এমনই একটি
বিষয় হচ্ছে প্রেম-ভালোবাসা। তাই বলে
ভালোবাসতে ভুলে যাবেন! আপনিও নতুন
করে ভালোবাসতে শিখুন, কেননা
ভালোবাসা যখন আসে তখন নতুন রুপেই
আসে হোক সে প্রথম বা দ্বিতীয়।
,
আমি পৃথিবীর কাউকে বিশ্বাস করি না,
আজ আপনি আমায় এসব বলে সান্ত্বনা
দিচ্ছেন! আগামীকাল হলেই ভুলে যাবেন।
,
দেখুন হাতের পাঁচটি আঙুল যেমন সমান নয়!
তেমনি সব মানুষই এক নয়। আপনাকে কথা
দিলাম হাসি মুখে আপনাকে আমি আপন
করে নেবো। নতুন করে বাঁচাতে শিখাবো
আমি। আপনাকে আপনার মতো করে
ভালোবেসে যাব। যেভাবে আপনি
সত্যিকারের সুখ খুঁজে পাবেন।
,
(ইভা ভাবতেছে এই ছেলেটাকে বিশ্বাস
করা যায়। যার এতো সুন্দর মন আছে, সে
কখনো খারাপ হতে পারে না। দেখিই না
আর একবার নতুন কাউকে ভালোবেসে। সবাই
তো এক না কষ্ট দিয়ে চলে যাবে।) অনেক
ভেবে চিন্তে ইভা বলল,
আপনি সত্যিই আমাকে ভালোবাসেন?
,
আমি আশ্চার্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,
কেন কোনো সন্দেহ আছে?
,
ইভা বলল
যদি সত্যিই ভালোবেসে থাকেন, তাহলে
আপনি আপনি করতেছেন কেন? তুমি করে
বলতে পারেন না।
,
স্যরি, ভুল হয়ে গেছে এমনটা আর হবে না।
প্লিজ এবারের মত তুমি মাফ করে দাও।
,
মাফ করতে পারি এক শর্তে! আমার সাথে
বৃষ্টিতে ভিজতে হবে।
,
আমি মনে মনে ভাবতেছি! শাস্তিটা মন্দ
নয়। বৃষ্টিতে এতদিন একাই ভিজেছি! আজ
না হয় ভালোবাসার মানুষটির সাথে বৃষ্টি
বিলাস করলাম। তারপর ইভার হাতে হাত
রেখে এগিয়ে চললাম অচেনা এক উদ্দেশ্যে।