– hi. রসায়ন
-এক্সকিউজ মি। আমার নাম রসায়ন না।
—তাহলে আপনার নাম কি?
—সিহাব। রিয়াদ আহমেদ সিহাব।
—ঐ হলো, রিয়াদ আর রসায়ন একই।
—না, রিয়াদ আর রসায়ন একই না। আর
তাছাড়া আমাকে কেউ ওই নামে
ডাকে না। সবাই সিহাব বলেই ডাকে।
—আমি রসায়ন বলেই ডাকবো।
—আপনি কি আমার সাথে ঝগড়া করার
জন্য আপনার শরীরের নাইট্রোজেন ক্ষয়
করলেন?
—নাইট্রোজেন ক্ষয় করলাম মানে?
—আপনি এতটা কষ্ট করে সিমেন্ট আর
আয়রন (লোহা) দিয়ে তৈরি ২৪ খানা
সিড়ি ভেঙ্গে উপড়ে আসলেন আপনার
নিশ্চয় কষ্ট হয়েছে। ফলে আপনার শরীর
থেকে ঘাম নির্গত হয়েছে। আর ঘাম
মানেই তো নাইট্রোজেন ঘটিত পদার্থ,
তাই না?
—আচ্ছা আপনার মাথায় কি রসায়ন
ছাড়া আর কিছুই আসে না?
—না আসে না। আপনার কোন সমস্যা?
—না সমস্যা না। আমার সুবিধা।
—আপনার সুবিধা মানে?
—মানে বুঝতে হবে না। আমাকে প্রশমন
বিক্রিয়াটা বুঝাইয়া দেন। তাইলেই
হবে।
—ও এই কথা? বসেন।
—হুম। সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড আর
হাইড্রোক্লোরিক এসিড মিলে
কীভাবে লবন আর পানি তৈরী হয়
কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না।
—আচ্ছা শোনেন……
,
অতঃপর আমি তাকে প্রশমন বিক্রিয়া
বোঝাতে লাগলাম। কিন্তু তার
সেদিকে কোন খেয়ালই নেই। সে
আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি
খালি খালি বক বক করে যাচ্ছি আর
সে ঘোড়ার আন্ডা বুঝে যাচ্ছে।
,
—এই যে মিস। আপনি এখানে রসায়ন
পড়তে এসেছেন নাকি রসায়ন দেখতে
এসেছেন।
—মানে কি?
—মানে হলো আপনি বইয়ের দিকে না
থাকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে
আছেন কেন?
—আপনার দিকে তাকিয়ে আছি
মানে? মানে আপনি ও নিজেকে
মিষ্টার রসায়ন ভাবেন? হি হি কি
মজা। মিষ্টার রসায়ন।
—ওই পিচ্ছি চুপ। একদম কথা বলবেন না।
—কেন মিষ্টার রসায়ন?
—আবারো? যান বেড়িয়ে যান। আমি
আপনাকে পড়াতে পারবো না।
—স্যরি। আর হবে ন।
—যেতে বলছি না যান।
—বললাম তো স্যরি।
—কোন স্যরি টরি নাই। আপনি যান
আমি আর বোঝাতে পারবো না।
—আর এমনটা হবে না। প্লিজ মাফ করে
দেন।
—এবার কিন্তু আমার মেজাজ গরম হয়ে
যাচ্ছে। আপনি যাবেন কিনা বলেন।
,
মাথা নিচু করে, মুখটা কালো করে
বেড়িয়ে গেলো মেয়েটা। মনে হয়
কষ্ট পেয়েছে। পাক। তাতে আমার কি?
সকাল বেলা উঠে টেস্টিউব নিয়ে
কিছু বিক্রিয়া পর্যবেক্ষন করছিলাম।
আর তার মাঝেই উনি এসে মেজাজটা
গরম করে দিলেন। আজাইড়া মেয়ে
একটা। আম্মা যে কেন এই বাড়িটা
ভাড়া নিতে গেলো। উনার বান্ধবীর
বাসা নাকি এটা। আরে বান্ধবীর
বাসা তো ভালো কথা। কিন্তু বাসা
ভাড়া নেয়ার আগে একবার দেখে
নেয়া উচিৎ না, যে বাসায় কোন
মেয়ে মানুষ আছে কিনা?
যেই মেয়েদের দেখলেই আমার গা
জ্বলে যায়। যে মেয়েদের সাথে
আমার আদায়-কাচকলায় সম্পর্ক। সেই
মেয়েই নাকি আমার কাছে রসায়ন
পড়তে এসেছে। এতক্ষন ভদ্রতার
খাতিরে একটু ভালো ব্যাবহার
করছিলাম। কিন্তু উনি? উনি তো
আমাকে নিয়ে ফাজলামো শুরু করছেন।
আসলে মেয়েদের সাথে আমার
বনাবনি হয় না। মেয়েরা যদি এসিড হয়
আমি তাহলে ক্ষারক। এক সাথে হলেই
ধুম ধাম। মেয়েদের আমি চির শত্রু মনে
করি।
যাইহোক মেজাজটা যেহেতু বিগড়ে
গেছে ফলে এখন আর, পরীক্ষা করে লাভ
নেই। এখন সব উল্টাপাল্টা ফলাফল
আসবে। তাই সব গুছিয়ে রেখে আবারো
একটু ঘুমানো দরকার।
ঘুম ভাঙলো আম্মার ডাকে……
,
—এই সিহাব উঠ।
—কেন কি হয়েছে?
—তুই অবুকে কি বলেছিস?
—কোন অবু? কে অবু?
—অবন্তিকা। একটু আগে তোর কাছে
যে পড়তে এসেছিলো।
—ও, ঐ মেয়েটার নাম তাহলে
অবন্তিকা?
—হ্যা। তুই ওকে কি বলেছিস?
—কই আমি কিছু বলিনি তো?
—তাহলে ও কাদতে কাদতে বেড়িয়ে
গেলো কেন?
—আমি কি জানি? ও পড়তে
এসেছিলো। আর আমি পড়াচ্ছিলাম।
কিন্তু সে তো আমার সাথে মস্করা
করছিলো। তাই আমি ধমক দিয়েছি। আর
কিছু বলি নাই তো।
—তুই ধমক দিলি কেন? বুঝিয়ে বললেই
পারতি।
—ধমক দিয়া কি খুব অন্যায় করে ফেলছি
নাকি? আর তুমি ঐ মেয়ের পক্ষে কথা
বলছো কেন?
—আমি কারো পক্ষে কথা বলছি না। তুই
অবন্তিকাকে ধমক দিয়ে অন্যায়
করেছিস। তোকে এর শাস্তি পেতে
হবে।
—কি শাস্তি?
—এখন থেকে রোজ অবন্তিকা তোর
কাছে পড়তে আসবে আর তুই পড়াবি।
—না আমি পারবো না।
—তা না হলে আমাদের আর এই
বাড়িতে থাকা হবে না।
—খুব ভালো। হবে তুমি বাড়ি বদল করে
ফেল। আমি এই বাড়তে আর থাকতে
চাইনা। তুমি জাননা মা। এটা মেয়ে
এটা হচ্ছে এসিড। সক্রিয় এসিড যেমন
হাড্রোক্লোরিক, সালফিউরিক,
নাইট্রিক এসিড। কারো গায়ে পড়লেই
ক্ষত হয়ে যায়।
—ও যদি এসিড হয় তুইও তাহলে ক্ষারক।
আর মাসের মাঝখানে বাসা পাবো
কোথায়। তাছাড়া এখান থেকে তোর
আব্বার অফিস আর তোর ভার্সিটি
দুটোই কাছে। সুতরাং আমরা এখান
থেকে যাচ্ছি না। আর তুই কাল থেকে
অবন্তিকাকে পড়াবি। ব্যাস।
বলেই আম্মা চলে গেলো। আমি আর
কিছু বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আম্মা
না শোনেই চলে গেলো। ধ্যাত্তেরি।
এখন থেকে এই আজাইড়া মেয়েকে
আমার রোজ পড়াতে হবে। কি যেন
নাম? অবন্তিকা। নামটা তো খারাপ
না। তবে মেয়েটা এমন কেন?
যাইহোক অবশেষে আম্মার সিদ্ধান্তই
চুড়ান্ত। অবন্তিকা আমার কাছে রোজ
পড়তে আসবে। এই তো এসে পড়েছে।
—আসতে পারি স্যার?
—আসো। কি ব্যাপার? কালকে তো
আমাকে নামধরে ডাকছিলে। আজ
হঠাত করে স্যার।
—কালকে তো আপনি আমার স্যার
ছিলেন না। তাছাড়া আপনিও তো
আমাকে তুমি করে বলছেন। আর আম্মু
বলেছে গুরুজনদের সম্মান দিয়ে কথা
বলতে।
—হুম ভালো। আচ্ছা তুমি কবার ফেল
করেছো?
—মানে?
—ফেল না করলে তোমার যে বয়স
তোমার তো এখন ভার্সিটি তে পড়ার
কথা।
—আমার বয়স নিয়ে একদম বাজে কথা
বলবেন না। আর এখন আমার কিছু কথা
আছে শোনেন।
—আবার কি?
—আপনি আমাকে পড়ানোর আগে
আমার কিছু প্রশ্ন আছে।
—ওই মেয়ে তুমি আমাকে পড়াবে? না
আমি তোমাকে?
—বেশি প্যাচাল না পাইড়া আমার
কথার জবাব দেন।
—পারবো না।
—তাহলে আমি আম্মুকে ডাকি?
আম্মু……
—আরে না থাক। বলো কি প্রশ্ন?
—আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে।
—ঐ মেয়ে আমাকে এসব প্রশ্ন করার
তুমি কে?
—আম্মু……
—আচ্ছা বলছি।
—হুম বলেন।
—আমার কোন গার্লফ্রেন্ড টালফ্রেন্ড
নেই।
—হুম। গুড। আর শোনেন এখন থেকে কোন
মেয়ের দিকে তাকাবেন না। কোন
মেয়ের সাথে দরকার ছাড়া কথা
বলবেন না। কথা বলতেমন চাইলে
আমাকে ডাক দিবেন।
—এই মেয়ে তোমার সমস্যাটা কি?
তুমি কি আজে বাজে কথা বলছো?
আমি কারো দিকে তাকাই না
তাকাই তাতে তোমার কি?
—আমার অনেক কিছু। আমি বলছি ব্যাস
আপনি তাকাবেন না।
—আমি তাকাবো। কি করবে তুমি।
—আম্মু… আম্মু……
এবার আমি মেয়েটার মুখ চেপে ধরলাম
হাত দিয়ে। মেয়ের চোখ তো
ছানাবড়া। আমি মেয়েটার মুখ চেপে
ধরে আছি। কিন্তু মেয়ে তা ছাড়ানোর
বিন্দুমাত্র চেষ্টা করছে না। মনে হচ্ছে
তার খুব ভালো লাগছে। অবশেষে
লজ্জা পেয়ে আমিই হাত সরিয়ে
নিলাম।
—এটা কি হলো? আপনি আমার গায়ে
দিলেন কেন?
—না… মানে… তুমি চিৎকার
করছিলো তাই।
—কিসের না মানে। আপনি আমার
গায়ে হাত দিলেন কেন? আমি এখনই
আম্মুকে বলবো। আমু… আমু…… দেখে যাও।
মেয়ের চিল্লানি শুনে নিচেরতলা
থেকে মেয়ের মা এসে হাজির। আমি
বাশ খাওয়ার অপেক্ষায় আছি। যেই
মহিলা মেয়েকে ধমকানোর কথা শুনে
ঘরছাড়া করার কথা বলতে পারে। সেই
মহিলা যদি জানতে পারে যে আমি
তার মেয়ে গায়ে হাত দিছি তাহলে
আমাকে দুনিয়া ছাড়া করবে।
—কিরে অবু ডাকছিস কেন?
—মা দেখনা। উনি… উনি…
—কি উনি উনি করছিস? কি করেছে ও।
কি হয়েছে সিহাব?
—ইয়ে…… মানে…… আন্টি?
—উনি পানি খেতে চাইছেন।
যাক বাবা বাচা গেলো। কিছু বলেনি
তাহলে।
—এটা কোন কথা হলো। পানি খেতে
চাচ্ছে তুই পানি এনে দিলেই তো
পারিস।
—না মানে, আমি তো পড়ছিলাম।
তাছাড়া আন্টিও ঘরে নেই। তাই
তোমাকে ডাকলাম।
—আচ্ছা আমি পানি দিচ্ছি।
আন্টি পানি এনে দিলেন। এতসব কান্ড
দেখে আমার গলা সত্যিই শুকিয়ে
গিয়েছিলো। এক দমে পুরো পানিটা
শেষ করলাম। আন্টি এতক্ষনে চলে
গেছেন। পানির গ্লাসটা নামিয়ে
রেখে বললাম……
—তোমার আম্মুকে সত্য কথাটা বললে
না কেন?
—আপনি চান? আমি আম্মুকে সত্য কথা
বলি। তাহলে আবারো আম্মুকে
ডাকছি…
—আরে আমি কি তাই বলেছি নাকি?
আমি তো তোমাকে ধন্যবাদ দিতে
চাচ্ছিলাম। প্লিজ তোমার আম্মুকে
কিছু বলোনা।
—বলবো না একটা শর্তে।
—কি শর্ত?
—কাল বিকালে আমার সাথে
পার্কে দেখা করতে হবে।
—পার্কে কেন?
—যা বলছি তাই করবেন। না হলে আমি
এখনই আম্মুকে সব বলে দেব।
—আচ্ছা ঠিক আছে আসবো। এখন পড়ো।
—না আজ আর পড়বো না। আজ আপনার
ছুটি।
বলেই আমার অনুমতির অপেক্ষা না
করেই বই খাতা নিয়ে চলে গেলো।
আজপর্যন্ত দেখে এসেছি টীচাররা
ছাত্র/ছাত্রীদের ছুটি দেয়। কিন্তু এই
মেয়ে তো ছাত্রী হয়ে আমাকেই ছুটি
দিয়ে গেলো। আজব ক্যারেক্টার
মাইরি।
যাইহোক মেয়ে আর আমি পার্কে একটা
বেঞ্চে বসে আছি। আমার কাছে চরম
অস্বস্থি লাগছে।
—যান ফুচকা নিয়ে আসেন। আমি ফুচকা
খাবো।
—টাকা দাও।
—টাকা? কিসের টাকা?
—বারে ফুচকা খেতে হলে টাকা
লাগবে না? ফুচকাওয়ালা কি আমার
শ্বশুর হয় নাকি যে আমাকে ফ্রিতে
ফুচকা দিবে।
—ঐ মাষ্টার! আমার আব্বুর সম্পর্কে
বাজে কথা বলবেন না একদম।
—যা বাবা। আমি আবার তোমার
আব্বুকে কি বললাম।
—সেটা আপনার বুঝতে হবে না। আপনি
ফুচকা নিয়ে আসেন।
—কিন্তু টাকা?
—আপনার মতো দামড়া একটা পোলা
থাকতে আমি ফুচকার টাকা দিবো
কেন?
—আমি কেন নিজের টাকা দিয়ে
তোমাকে ফুচকা খাওয়াবো?—খাওয়াবেন। না হলে আমি বাড়ি
গিয়ে বলবো যে আপনি আমাকে জোড়
করে এখেনে নিয়ে এসেছেন। আর
আমাকে কিস করেছেন।
—ঐ ঐ। আমি কখন এসব করলাম?
—করেন নাই। তবে যদি না করেও
ফাসতে না চান তাহলে যান ফুচকা
নিয়ে আসেন।
কি আর করা। অগত্যা আমাকেই ফুচকার
টাকা গুনতে হলো।
দুজনেই ফুচকা খাচ্ছি। শান্তিময়
পরিবেশ। কিন্তু সে শান্তি আর
বেশিক্ষন টিকলো না। হঠাতই মেয়ের
মাথায় ভুত চাপলো…
—এই শোনেন।
—হুম।
—আমাকে মুখে তুলে খাইয়ে দেন।
—আমি পারবো না।
—না পারলে নাই। আমি এখনই বাসায়
গিয়ে আপনার নামে এত্তগুলা মিথ্যা
কথা বলবো। তারপর মজা টের পাবেন।
—আরে কই যাও। আমি কি সত্যি সত্যি
না করছি নাকি?
—তাহলে খাইয়ে দিন।
—দিতে পারি এক শর্তে।
—কি শর্ত?
—তোমাকে স্বীকার করতে হবে যে
আমি নির্দোষ।
—মানে?
—তোমাকে এখন নিজের মুখে বলতে
হবে যে, আমি তোমার গায়ে হাত
দিইনি। আমি তোমাকে এখানে
নিয়ে আসিনি। আমি তোমাকে ধমকও
দেইনি।
—আচ্ছা ঠিক আছে। আপনার সামনে
স্বীকার করতে আমার কোন সমস্যা নাই।
আপনি তো সবই জানেন।
—আচ্ছা তাহলে বলা শুরু করো।
বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান।
আজিকে ঘুঘু তোমার বাধিবো পরান।
পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে
সিক্রেট ভিডিও রেকর্ডারটা চালু
করলাম। আর মেয়েটা বলতে শুরু
করলো………
—এতদ্বারা উপস্থিত সকলের
জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে যে,
আমাদের বাড়ির নতুন ভাড়াটিয়া
এবং আমার স্যার সিহাব আহমেদ কোন
অন্যায় কাজ করেন নাই। উনি আমার
গায়ে হাত দেন নাই। উনি আমাকে
পার্কে নিয়ে আসেন নাই। উনি
আমাকে ধমকও দেন নাই। উপরিক্ত সকল
কর্মই আমার দ্বারা সম্পাদিত হয়েছে।
আমি ইচ্ছাপুর্বক সব কিছু করিয়াছি। ইতি
আমি অবন্তিকা আহমেদ।
—অবন্তিকা আহমেদ মানে কি?
—কোন মানে নাই। আমাকে মুখে তুলে
খাইয়ে দেন। নয়তো……
—ধীরে বৎস ধীরে, দিচ্ছিতো।
অতঃপর আমি তাকে মুখে তুলে খাইয়ে
দিতে লাগলাম। মেয়েটা তৃপ্তি ভরে
খেতে লাগলো। মনে হলো যেন অমৃত
খাচ্ছে। আমারও ওকে মুখে তুলে
খাওয়াতে ভালো লাগছিলো। পুরো
এক প্লেট ফুচকা ইতিমধ্যেই শেষ।
—না আর খাবো না। এবার আপনি খান।
—আমি খাবো মানে? আমাকেও
তোমার মুখে তুলে খাওয়াতে হবে।
—অ্যা… আইছে আমার নাগর। শখ কতো!
আমি আপনাকে কেন খাইয়ে দিবো?
—এই যে এই কারনে।
বলে এতক্ষন যে ভিডিওটা রেকর্ড
হয়েছে সেটা দেখালাম। মেয়ের
চোখ তো ফুটবলের আকার ধারন করেছে।
আমার মতো একটা শান্ত-শিষ্ট ছেলে
যে এইরকম পাজি হতে পারে এটা সে
কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না।
—আপনি এটা কি করলেন?
—কেন ভিডিও করলাম। তোমার
স্বীকারোক্তির ভিডিও।
—এটা কিন্তু চিটিং।
—বেশি কথা না বলে খাইয়ে দাও।
নয়তো এই ভিডিও বাড়িসুদ্ধ সবাই
দেখবে। আর একটা নিরীহ ছেলেকে
ফাসানোর দায়ে সবাই তোমেকে
আচ্ছামতো ঝাড়ি দেবে।
,
অগত্যা সে আমাকে মুখে তুলে খাইয়ে
দিতে লাগলো। আমি বিজয়ের হাসি
দিয়ে খেতে লাগলাম। ওকে
খাওয়াতে যত না ভালো লাগছিলো,
ওর হাতে খেতে তার চাইতে বেশি
ভালো লাগছে। ওকে দেখেও মনে
হচ্ছে না যে আমাকে খাওয়াতে হচ্ছে
বলে ও অখুশি। ওর চোখ দুটো দেখেই
বোঝা যাচ্ছে সেও বেশ আনন্দের
সাথেই কাজটা করছে।
বাই দ্যা রাস্তা দৃশ্যটা আসলেই দেখার
মতো। খুবই রোমান্টিক একটা দৃশ্য। নাটক,
সিনেমায়, এরকম দৃশ্য প্রায়ই দেখা যায়।
যাইহোক রোমান্টিক সিন শেষে
বাড়ি ফিরে এলাম।
পরের দিন দুপুরে গোসল করে মাত্র
বাথরুম থেকে বেড়িয়েছি। এমন
অবস্থায় মেয়ের আগমন। আজ আবার কি
মতলব নিয়ে এসেছে?
—এই মিষ্টার রসায়ন আজকে আবার
আমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে হবে।
—তুমি কি ভিডিওটার কথা ভুলে
গেছে?
—না। কারন এটা এখন আমার হাতেই
আছে।
ওই তেরি! আমার ফোন মেয়ের কাছে
গেলো কীভাবে?
—আমার ফোন তোমার কাছে গেল
কীভাবে?
—ফোনের তো আর হাত পা নেই যে
হেটে বেড়াবে। আমিই নিছি।
—তুমি আমার ফোন নিলে কেন?
—ভিডিওটা ডিলিট করার জন্য।
তার মানে আমার দিন শেষ। আবারো
মেয়ের দিন শুরু। আবারো মেয়ের কথা
মানতে হবে। ধ্যাত্তেরি! ফোনে কেন
যে লক দেই নাই।
—আচ্ছা বলো কোথায় যেতে হবে?
—আজ বিকালে কালিবাড়ি কাজী
অফিসের সামনে দেখা করবেন।
—কাজী অফিসের সামনে কেন?
বিয়ে টিয়ে আছে নাকি?
—হুম।
—কার?
—আপনার আর আমার।
বলেই মেয়েটা চলে গেলো।
মোবাইলটা বিছানায় ছুড়ে দিয়ে
গেলো। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
মেয়েটা কি বলে গেলো? আমার
বিয়ে? মনে হয় মজা করেছে। আচ্ছা
যাইহোক আমাকে তো যেতেই হবে।
নাহলে মেয়ে আবার আম্মু কাহিনি শুরু
করে দিবে।
আমি চলে এসেছি কাজী অফিসের
সামনে।
—এখানে আসতে বললে কেন? কার
বিয়ে।
—কাজী অফিস দেখলেই বিয়ে করতে
মন চায়?
—আমি কখন বিয়ে করতে চাইলাম?
তুমিই তো বললে।
—হইছে, আর কথা বলতে হবে না। চলেন
পার্কটায় বসি।
এতক্ষন এখানে আসার কারন বুঝতে
পেরেছি আমি। আসলে কালিবাড়ি
কাজী অফিসের সামনেই একটা পার্ক
আছে। মেয়ে আমাকে সেখানেই
নিয়ে এসেছে। কিন্তু একটু মজা করে
কাজী অফিসের কথা বলেছে।
মেয়েটা পারেও বটে। নিজে তো
সবসময় হাসিখুশি থাকেই অন্যকেও
হাসাতে পারে। আমার মতো একটা
ভুতের মাঝেও এই মেয়ে দুষ্টুমি
জাগিয়ে তুলেছে। মানতেই মেয়েটা
টেলেন্টেড।
—আচ্ছা, যে চলে গেছে তার কথা
ভেবে আর কতদিন এভাবে থাকবেন?
—কার কথা বলছো তুমি? কে চলে
গেছে?
—আমি রুহীর কথা বলছি।
—রুহীর কথা তুমি জানলে কি করে?
—আমি সব জানি। আর এটাও জানি
রুহী আজ বিয়ে করছে।
—রুহী বিয়ে করছে? কাকে?
—সেটা দেখানোর জন্যই আপনাকে
কাজী অফিসের সামনে আসতে বলছি।
ঐ দেখেন।
ওর কথা শুনে আমি কাজী অফিসের
দিকে তাকালাম। দেখলাম রুহী আর
আমার বন্ধু আনিস মাত্র বিয়ে করে
বেরুচ্ছে। সাথে আমার আরো কয়েকটা
বন্ধুও আছে। আমি দেখেই উঠে যেতে
চাইলাম ওদের কাছে। কিন্তু অবন্তিকা
আমার হাতে টান দিয়ে বসিয়ে
দিলো…
—কই যান?
—ওর সাথে আমার কিছু কথা আছে।
—যে যেতে চায় তাকে যেতে দিন।
কেন আটোকাচ্ছেন তাকে। আর
তাছাড়া রুহী কোনদিনই আপনাকে
ভালোবাসেনি। ও আপনার সাথে
টাইমপাস করেছে মাত্র। ও ওর মতো
চলেছে। আপনিও আপনার মতো
নিজেকে গুছিয়ে নিন। জীবনের
অনেকটা সময় এখনো বাকী। নিজের
জীবনটাকে এভাবে শেষ করে দিবেন
না।
—হ্যা ঠিকই বলেছো। ও পারলে আমিও
পারবো। যাকে হারিয়ে আজ আমার এই
অবস্থা, সে যদি অন্য কাউকে নিয়ে
সুখী হতে পারে। তাহলে আমিও
পারবো।
—হুম। তাই তো বলছি। নিজের জীবনকে
আবারো নতুন করে সাজান।
—তুমি পারবে না অবন্তিকা?
পারবেনা আমার জীবনটাকে আবার
নতুন করে সাজাতে? পারবেনা, আমার
আমার মতো সাইকোর দায়িত্ব নিতে?
—পারবো। আপনি বললে আমি সব
পারবো। আপনিই আমার সব। আপনার
খুশিগুলো আমাকে না দিতে পারলেও,
আজ থেকে কথা দিতে হবে, আপনার সব
দুঃখ আমার সাথে ভাগাভাগি
করবেন।
—আমার সুখ দুঃখ এখন সবই তোমার
হাতে মিসেস রসায়ন।
—মিসেস রসায়ন?
—আমি মিষ্টার রসায়ন আর তুমি
মিসেস রসায়ন।
অবন্তিকা আমার কাধে মাথা রেখে
আমার ডান হাতটা জড়িয়ে ধরে আছে।
আমি তাকিয়ে আছি সামনের দিকে।
আমার ভবিষ্যতের দিকে।
হঠাতই হাততালির আওয়াজ শোনা
গেলো। তাকয়ে দেখি আম্মা, আব্বা,
আন্টি(অবন্তিকার আম্মু) আংকেল
(অবন্তিকার আব্বু) সবাই দাড়িয়ে আছে।
আম্মা বললো…
—ক্ষারক আর এসিড মিলে তো প্রশমন
বিক্রিয়া ভালোই জমেছে।
—ইয়ে… মানে… আম্মা।
—বাহ! অবু। তুই তো সত্যিই কামাল করে
দিয়েছিস। তুই যেদিন প্রথম বলেছিলি
সেদিনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে
তুই পারবি।
বলে উঠলেন আন্টি।
—পারতেই হবে। দেখতে হবে নাম
মেয়েটা কার?
এবার আংকেল মুখ খুললেন। সাথে
সাথে আব্বাও বললেন……
—কিরে মিষ্টার রসায়ন? এখানেই
বসে থাকবি নাকি, বিয়ের বাকী
কাজটাও শেষ করবি।
—বিয়ে? কি বলছো তুমি? আমি তো
কিছুই বুঝতে পারছিনা। বুঝিয়ে বলো।
অতঃপর আম্মা যা বললেন তার সারমর্ম
এরকম…
অবন্তিকার সাথে আমার বিয়ে আম্মা
আব্বা আগেই ঠিক করেছিলেন। সেজন্যই
নিজের বাড়ি থাকতেও অবন্তিকাদের
বাড়িতে ভাড়া আসা। তাছাড়া
রুহীর সম্পর্কে আম্মা-আব্বাকে
অবন্তিকাই বলেছিলো। সব শুনার পর
তারা আমাকে আগের মতো করার জন্য
অবন্তিকাকে দায়িত্ব দেন। আর
অবন্তিকাও কথা দেয় যে, আমার মন
থেকে রুহীর স্মৃতি মুছে দিয়েই সে
আমাকে বিয়ে করবে। তারপর এত
কাহিনি।
—কিরে চল বিয়ের সব ব্যাবস্থা করা
আছে।
—কিন্তু, আম্মা। ও তো মাত্র ক্লাস
টেনে পড়ে। ওর তো বিয়ের বয়সই হয়
নাই।
—কে বললো ও ক্লাস টেনে পড়ে?
—তাহলে? আমার কাছে তো টেনের
বই নিয়েই পড়তে এসেছিলো।
—এক্সকিউজ মি মিষ্টার রসায়ন। আমি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন
বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
আমাকে একদম পিচ্ছি বলবেন না।
—আসলেই নাকি?
—হ্যা বাবা। তোমার কাছাকাছি
যাওয়ার জন্য ও এইসব করেছে।
বললেন আন্টি।
—তাই তো বলি, এত দামড়া একটা
মেয়ে মাত্র ক্লাস টেনে পড়ে
কীভাবে। আমার তো আগেই সন্দেহ
হইছিলো।
—কি আমি দামড়া? দাড়ান দেখাচ্ছি
মজা। বলে সবার সামনেই আমাকে
মারতে লাগলো অবন্তিকা।
—আরে করে কি? করে কি? আগে তো
বিয়েটা শেষ হোক তারপর নাহয়……
তারপর কালিবাড়ি কাজী অফিসেই
বিয়ে করি আমরা। কাজী অফিসে
এটাই মনে হয় প্রথম বিয়ে যেখানে
ছেলে-মেয়ের বাবা-মা উপস্থিত
থেকে তাদের বিয়ে দিচ্ছে।
…………অতঃপর, এসিড ক্ষারকের প্রশমন
বিক্রিয়া শুরু।