রাত 2.18

সামিয়া’দের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।

মাঝে মাঝে কুকুর ঘেউ ঘেউ করে উঠছে। আমি আলো থেকে একটু দূরে অন্ধকারের মাঝে আছি বলে হয়তো আমাকে তাড়া করেনি। হালকা বাতাস আছে সেই সাথে মাথায় শিশির পড়ছে। খুব ঠান্ডা লাগছে।
কুকুরগুলো কাজ পায়না শীতের রাতে ঘেউ ঘেউ করে বেড়ায়।
নাহ দশ মিনিট হয়ে গেলো এখনো আসলো না। আবার একবার ফোন দেয়া দরকার।

বাসায় চলে যাও। (সামিয়া) না। তুমি আগে নিচে আসো।
যেতে বলেছি। চলে যাও
আমার কথা তো আগে শুনবা।
না কোনো কথা নাই।
আচ্ছা একবার বেলকনিতে আসো।
একবার দেখেই চলে যাবো।
কেনো ! আমাকে কেনো দেখবা ? যাও তোমার ওই নাবিলার কাছে। প্লিজ একবার তো আসো। তুমি ভুল বুঝতেছো।
না আমি যাবোনা। তুমি আর আমাকে ফোন দিবানা।
প্লিজ… একবার
কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো .. আসছি দাঁড়াও

বেলকনিতে আসতেই আমার টিয়া পাখিকে খুব রাগী চেহারায় তাকিয়ে থাকতে দেখলাম। কি কারণে জানিনা… ওকে রাগি চেহারাতেই একটু বেশিই সুন্দর লাগে।
সেই সময়টায় ওর চেহারায় এক আশ্চর্য সৌন্দর্য ধরা পড়ে। সে জন্যে কখনো ইচ্ছাকরেই ওকে রাগিয়ে দেই। আর সেটা যখন ও বুঝতে পারে তখন ওর ভিতরে ডাইনির শক্তি চলে আসে। যার ফলস্বরূপ আমার উপর ধবলধোলাই চলে কিছুক্ষণ।
.
রং ঠিকমতো চিনিনা। আমার টিয়া পাখি কি যেনো এক রংয়ের চাদর দিয়ে নিজেকে ঢেকে রেখেছে। অসম্ভব সুন্দর কাকে বলে জানিনা। তবে এইটা জানি অসম্ভব সুন্দরের সর্বশেষ ধাপের তুলিটা আমার টিয়া পাখিটাই।
আমি একটু হাসি দিলাম।
` -বলো কি বলবা ?
বললাম তো স্যরি।
দরকার নেই তোমার স্যরির
:-ও আমার কলিগ ছিলো।
আমি শুনতে চেয়েছি ??
-আমাকে ও ভাইয়া বলে ডাকে ।
-তো আমি কি করবো ?
-প্লিজ আর রাগ করে থেকো না।
– তোমার ফোন ও কেনো রিসিভ করবে কেন?
-আসলে আমি একটা মিটিংয়ে বিজি ছিলাম। আর ফোনটা টেবিলে রেখে গেছিলাম। অনেকবার ফোন দিচ্ছো তাই রিসিভ করেছিলো।
তাহলে এখনি ওকে ফোন দিয়ে আমার সামনে কথা বলো। যদি ভাইয়া টাইপের কোনো কথা বলে তাহলে মাফ পাবা।
-এইটা আবার কেমন কথা !! এমন হয় নাকি !
তাহলে আর আমার সাথে কথা বলবানা, যাও।
ওকে ওকে বলছি দাঁড়াও।
নাবিলার সাথে কথোপকথন শোনার পর আমার টিয়ার রাগ ভেঙেছে।

এবার একটু হাসো প্লিজ।
না।
-কেনো ?? (খুব করুণ সুরে)
তোমাকে এখন আমার বিরক্ত লাগছে।।
আমি….
~ ঘেউ ঘেউ ঘেউ ঘেউ

এই সর সর
ঘেউ ঘেউ

কুকুরের ঘেউ শুনলে আমার গলার পানি শুকিয়ে যায়। দৌড় মেরে এরিন’ দের বাসার পাঁচিলে উঠে পড়লাম। আমার এই কান্ড দেখে সামিয়ার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। হি হি হি হি

তুমি হাসছো আমার অবস্থা দেখে !!
ঠিক হয়েছে।
কুকুরটা আরো কিছুক্ষণ ডেকে চলে গেলো।
আর এদিকে আমার টিয়া পাখির মুখের হাসি আরো বিস্তৃত হয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে এই শীতের জমাট রাতে।
আমি একদৃষ্টিতে ওর হাসির দিকে তাকিয়ে আছি। এই হাসিটাকে স্থিরচিত্রে আবদ্ধ করে রাখা গেলেই ভালো হতো। .
হঠাৎ বাসার ভেতর থেকে একটু জোরালো কিছু শব্দের আওয়াজ পেলাম। গেট খুললেন আমার হবু শ্বশুর ( শুধু আংটি পড়ানো হয়েছে তাই এখনো হবু)। লম্বা নলওয়ালা বন্দুক হাতে বের হলেন। একজন আর্মি অফিসারের বাসার সামনে এতো রাতে এমন চিৎকারের আওয়াজ হলে স্বাভাবিক ভাবেই বন্দুক নিয়ে বের হয়ে আসা অনিবার্য।
অবশ্য উনি কিছুদিন আগেই আর্মি থেকে রিটায়ার্ড করেছেন।
কে ? এখনি কে চিৎকার দিলো ?
দোতলা থেকে সামিয়া বললো আব্বু কিছুনা। ভেতরে যাও।
কিন্তু আমার শ্বশুর আব্বার বাজপাখিওয়ালা চোখ থেকে রেহাই পেলাম না। আমাকে পাঁচিলের উপর দেখতে পেয়ে খুব জোড়ে একচোট হেসে নিলেন।
হা হা হা হা …. নেমে এসো বাবা।
(সালাম দিলাম)
(সালামের উত্তর নিয়ে বললেন) কি !! উনার রাগ ভাঙাতে এতো রাতে
এসেছো ?
একটু মুচকি হাসি দিয়ে মাথা চুলকাচ্ছি।
যাক শ্বশুর হয়েছে মনের মতো। এমন রোমান্টিক শ্বশুর পাওয়া কয়জনেরই বা ভাগ্যে থাকে !!
আবারো এই শীতের রাতে আকাশ বাতাস কাঁপানো হাসি দিয়ে আমার শ্বশুরআব্বা যা বললেন তাতে আমার মনে হলো পৃথিবীর সেরা শ্বশুরের জামাই হতে পেরেছি আমি।
এবার থেকে জানিয়ে দিও
আমাকে।(উনি বললেন)
বাসার গেট খোলা থাকবে। বাসায় এসেই রাগ ভাঙিও। কুকুরের তাড়া খেয়ে আর পাঁচিলে উঠতে হবে না।
আমি অবাক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।
ভেতরে এসো। আজ রাতটা শ্বশুরবাড়িতেই কাটাও।
উপর থেকে সামিয়া বলছে, এই কি হলো ভেতরে আসো। আজ তোমাকে শ্বশুরবাড়ির মজা দেখাবো….