পর্ব -১

– সাহরিয়া…সাহরিয়া.. ঐ ওঠ
তাঁড়াতাড়ি।
– এত সকাল সকাল ক্যান
ডাকতেছো মা।
– সকাল মানে…. এখান সাড়ে
সতটা বাঁজে…আর তোর
মনে নাই আজকে
তোর নানুর বাড়ি যাবো।
দুইদিন বাদে তোর মামার বিয়ে,
তাই আরো সাত দিন আগে
থেকে যাওয়ার জন্য
ফোন করে করে পাগল করে
দিচ্ছে।
ঐ আবার ঘুমাইছিস,ওঠ
এখনি।
একদিকে বাবার ছুঁটি কনফার্ম
হয় না… আর অন্য দিকে
ছেলের ঘুম শেষ হয় না।
যত ঝামেলা সব আমার।
– ওহহহহহহহহহ… মা, তুমি
তো জানো বিয়ে বাড়ি
আমার ভালো লাগেনা।
– ভালো না লাগলে তো আর
ওরা শুনবে না, এখন ওঠে তাঁড়াতাড়ি
রেডি হয়ে নে।
নয়টার দিকে আবার ট্রেন।
সেটা মিস করলে আজকে
আর যাওয়া হবে না।
– ঠিকআছে…. তুমি যাও।

একে তো বিয়ে বাড়িতে
মানুষ জনের ভীড় এর মধ্যে আমার
ভালো লাগে না, তার উপর
আবার অনেক দূর,
প্রথমে একটা মাঠ পার হতে
হবে, তারপরে গ্রামের একদম শেষ
প্রান্তে এক বিশাল বাড়ি।
দিনের বেলা খুব সুন্দর
লাগে, আর রাত হলেই
পরিবেশটা কেমন ভয়ঙ্কর হয়ে যায়।
রাত হলে আমি তো ভয়ে হিসি
পর্যন্ত করতে যেতে পারি না।
তাইতো নানুর বাড়ি যেতে ভালো
লাগে না।
তবে এখন আর কিছুই করার
নাই…যেতেই হবে… তার উপর আবার
মামার বিয়ে বলে কথা।

– সাহরিয়া…. রেডি হইছিস।
– হ্যা মা…. ।
– এবার চল তাঁড়াতাড়ি।
– মা… এত সব ব্যাগ কীসের।
– আরে কত দিন পরে বাবার
বাড়িতে যাচ্ছি কিছুদিন থাকতে
হবে না।
আর বিয়ে বাড়ি বলে কথা,
একটু পর পর ড্রেস চেঞ্জ
করতে হবে।
– তাই বলে এত কিছু।
– হুমমমমম…. তুই চুপ কর,
আর চল।
– ঠিকআছে চলো।

স্টেশনে গিয়ে বসে আছি
এখন বাজে নয়টা পনেরো।

– মা ট্রেন না নয়টার দিকে আসবে
এখন তো নয়টা পনেরো বাজে
ট্রেন কই।
– চুপচাপ বসে থাক ট্রেনের যখন
আসার সময় হবে তখন এমনি
দেখতে পাবি।
আরে ঐ তো মিথিলা চলে আসছে।
– মিথিলা মানে তোমার সেই
ছোট্ট কালের বান্ধবীটা,
এটা বলে মার দিকে
তাঁকাইতেই দেখি সে মিথিলা আন্টিকে
গিয়ে জরিয়ে ধরছে

– সাহরিয়া এই দিকে আয়।
– হুমমমমম।
– মিথিলা এটা হচ্ছে আমার ছেলে
সাহরিয়া।
ঐ বেয়াদপ সালাম দে।
– আস্ সালামু ওয়ালাইকুম আন্টি।
– ওয়ালাইকুম আস্ সালাম… তোমাকে
সেই ছোট্ট বেলাই দেখছিলাম।
– আমি ও আন্টি।
– তুই ও মানে।
– আরে আমি ও তো আন্টিকে
সেই ছোট্ট বেলাই দেখছিলাম সেটা
বলছি।


– কীরে মিথিলা তোর মেয়েটাকে
দেখছি না তো।
– আর বলিস না আসতে আসতে
আবার চকলেট নিতে গেলো।
– ওহহহহহহহহ…..।
– ঐ তো চলে আসছে।

আন্টির কথা শুনে আমি
সেই দিকে তাঁকিয়েই
জ্ঞান হারানোর দশা।

মার কানে কানে বললাম
মা মেয়েটা তো হিন্দি সিনেমার
নাইকাদের মতো।
– চুপ কর শয়তান।

– হ্যালো আন্টি… কেমন আছেন।
– ভালো আছি…আর নিধি তুই তো
দেখি অনেক বড় হয়ে গেছিস।
– হুমমমমম… আর তার সাথে সাথে
ছেলেদের পোশাক ও পড়তে
শুরু করেছে।
– মিথিলা তুই থাম তো… নিধি
এটা আমার ছেলে সাহরিয়া।
– হাই… বলেই চোখ মারলো
কেমন বজ্জাত মেয়ে।
– আর সাহরিয়া…. ও হচ্ছে……।
– নিধি… সেটা জানি আমি।
– হুমমমমম।

এর মধ্যেই ট্রেন চলে আসলো।
আর এত সব ব্যাগ নিয়ে যত
ঝামেলা আমার,
নিজেকে কেমন কুলি কুলি
মনে হইতেছে।

সব শেষে সীটে গিয়ে বসলাম,
তবে বসে ও শান্তি নাই।
দুই বান্ধবী সেই লেভেল এর
গল্প ধরছে,আর কী জোরে
জোরে হাঁসতেছে।

আর কপাল সেদিন এক দিক দিয়ে
ভালো ছিলো।
কারণ ট্রেনের মধ্যে কোন
ভীড় আছিলো না অনেকটা ফাঁকা
বললেই চলে।

তাই সীট থেকে উঠে ট্রেনের দরোজার
কাছে গেলাম।
বাহ্ কী সুন্দর বাতাস।

এমন সময় নিধি ও আসলো।

– এই যে আপনার কাছে
লাইটার আছে।
– লাইটার মানে।
– এহহহহহহহহ অবুঝ শিশু..
এমন ভাব করতেছে লাইটার
চিনে না।
– এই যে আমাকে দেখে কী আপনার মনে
হয় আমি সিগরেট খাই, তাই লাইটার
কাছে থাকবে।
– না সেটা মনে হয় না… তবে আপনাকে দেখে মনে হয় যে আপনি সারাদিন
মদের মধ্যেই ডুবে থাকেন।
– কীইইইইইইইইই……..।
– হা হা হা….. আরে মজা করলাম
তো, আচ্ছা চকলেট খাবেন।
– হুমমমম…।
– জানতাম হুমমমমম বলবেন,
কারণ আপনাকে পুরাই চকলেট
এর মতোই দেখছে।
– হি হি হি….।
– হয়েছে এত গলে পড়া লাগবে না,
এমনি পাম মারতেছিলাম।
– জানি সেটা।


ট্রেন আমাদের গন্তব্যস্থানের
স্টেশনে চলে আসলো।
স্টেশনে নামতেই মামা নানু
সবাই চলে আসলো।
তার মানে আগে থেকেই
সব কিছু ঠিক করা ছিলো।
গাড়িতে করে নানুর বাসাই
চলে আসলাম।

আর গাড়ি থেকে নেমেই
আমার মা আর নিধির
মা দুই জন হাত ধরে দুই জনার
মতো কই জানি চলে গেলো।
নানু আর মামা ও কী জানি কাজের
জন্য গাড়ী নিয়ে চলে গেলো।

আর আমি তো হা করে
দাঁড়িয়ে রইলাম।
একে তো বিয়ে বাড়ি তার
মধ্যে অনেক মানুষ জন।
কাউকে চিনতে পারতেছি না,
আর অন্য কেউ ও আমাকে চিনে না।
কারে গিয়ে কী বলো কিছুই
বুঝতেছি না।

– এই যে মিষ্টার সাহরিয়া…. এমনে
যদি হা করে থাকো তাহলে তো
বিয়ে বাড়ির সব মাছি গুলো তোমার
মুখের মধ্যে দিয়ে পেঁটে প্রবেশ করবে।
– নিধির কথা শুনেই মুখ বন্ধ
করলাম।
– হা হা হা…..এখানে এমন দাঁড়িয়ে
না থেকে আমার সাথে আসো,
চারিদিকে একটু ঘুরে আসি।
– মনে মনে ভাবলাম ঠিকি তো.. এখানে না
দাঁড়িয়ে থেকে ঘুরে আসলেই ভালো হবে।
– ঐ কী হলো… যাবা নাকি
আমি একাই যাবো।
– এই… না না আমি ও যাবো।
– হুমমমমম চলো।


মাটির রাস্তা দিয়ে গ্রামের দিকে
হাঁটতেছি।

– ঐ সাহরিয়া শোন।
– কী?
– আমি তোমারে আপনি করে বলতে
পারবো না…তাই তোমারে তুমি
বলছি বুঝলা।
– আরে…. আমার ও আপনি বলতে
আর শুনতে ভালো লাগে না।
– তা তো লাগবেই না,
সুন্দরী একটা মেয়ে তার মুখে কী
কেউ আপনি শুনতে চায় হুমমমমম।
– তুমি না আসলে একটা।
– ঐ আমি আসলে একটা কী হ্যা।
– কিছু না….. সামনে গেলে ও
বিপদ পিছনে গেলে ও বিপদ
এমন একটা প্রাণী।
– তাই না…তোমারে তো আমি
আজকে সেই মজা দেখামু চলো।
– আচ্ছা কেমন মজা দেখাও
দেখমুনি।

আমি আর নিধি গ্রামের
মধ্যে দিয়ে হাঁটতেছি…
আমাদের দেখে সবাই হা
করে আছে।
আসলে আমাদের না শুধু
নিধিরে দেখে।
কারণ সে ছেলেদের মতো প্যান্ট
টিশার্ট পড়ে আছে তাই।
তবে হ্যা মেয়েটা কিন্তুু ঝাক্কাস।
এর মধ্যেই গ্রাম পার হয়ে মাঠের
মধ্যে চলে আসলাম।

– নিধি আমি একটা কথা
বলি।
– হুমমমমম।
– এখন না বাসার দিকে
যাওয়া দরকার, দেখো
কেমন সন্ধা হয়ে আসতেছে।
– আরে আর একটু সামনে চলো,
কিচ্ছু হবে না।
– সেটা আমি জানি, তবে আমার
রাত লাগলেই খুব ভয় করে।
– ঐ… তুমি কী ছেলে না অন্য
কিছু হুমমমমম…আমি একটা মেয়ে
হয়ে ভয় করছি না আর তুমি।
– না আমার ভয় লাগে এবার চলো।
– ঠিক আছে আমি শর্টকাট জানি,
এই দিক দিয়ে চলো।

শর্টকাট ধরে হাঁটতে হাঁটতে
অন্ধকার নেমে আসলো,
চারিদিকে শুনশান পরিবেশ
সাথে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক,
দূর থেকে শিয়ালের ডাক
শোনা যাচ্ছে আর
এদিকে ভয়ে আমার গা
ঘামতে শুরু করে দিছে।
ভয়ে আস্তে আস্তে নিধির কাছে
গেলাম।

– নিধি আর কতদূর।
– এই তো আর একটু।
– আমার কিন্তুু অনেক ভয় করছে।
– আরে দূর আমি আছি তো, কিছু
হবে না আসো।
– না তবু ও আমার ভয় করছে।

হালকা জোৎনার আলোতে
হাঁটছি।
এর মধ্যে মনে হলো কোন একটা
বড় বড় গাছের বাগানের মধ্যে
ঢুকে ঢুকতেছি।
ঢুকতেই কেমন গা ছমছম করে
উঠলো।

– সাহরিয়া জানো আমরা এখন
কই আছি।
– ভয়ে ভয়ে আওয়াজ বের হচ্ছিলো না।
তবু বললাম… কই।
– আমরা মনে হয় একটা শষাণ
ঘাটে আছি।
এখানে মানুষ পোঁড়ানো হয়,
তেমন গন্ধ পাচ্ছি।
– নিধি প্লিজ এমন মজা করো না
আমার অনেক ভয় লাগতেছে।
– আরে ভয় লাগলে আমি কী
করবো…. আমি তো এখন
রাস্তা ও চিনতে পারতেছি না।
– এটা শুনে তো আমি কেঁদে
দিছি আর নিজের ফিক
কন্ট্রোল করতে পারতেছি না।
– ঐ সাহরিয়া কাঁদছো কেনো।
– আমি এতটা ভয়ে আছি
যে নিজের কান্নাটা ও থামাতে
পারতেছি না।
আর কথা ও বলতে পারতেছি না।
– সাহরিয়া…. ঐ সাহরিয়া
কী হয়েছে তোমার কথা
বলো।
– আমি শত চেষ্টা করে ও
মুখে কথা আনতে পারতেছিলাম না।
এমন সময় হঠাৎ নিধি এসে আমাকে
জরিয়ে ধরলো….।
– ঐ কী হয়েছে তোমার…. আমি তো
শুধু মজা করছিলাম।
আর এখন আমরা তোমার নানুর
মেহগনি বাগানে আছি।
আর তিনমিনিট গেলেই তো বাড়ি
পাবো পাগল।
– তবু আমার ফিক থামতেছিলো
না… আর কথা ও বলতে পারতে
ছিলাম না।

নিধি আমার হাতটা ধরে
বাড়ির কাছে নিয়ে গেলো।
এবার কিছুটা স্বাভাবিক হলাম।
– ঐ এবার তো কিছু বলো।
– হুমমমমম।
– সরি… আর আমি বুঝিনাই যে
তুমি এত বড় একটা ভীতুর ডিম।
– হুমমমম।
বাড়ির ভিতরে যেতেই
দেখি… সবাই আমাদের দুই
জনের জন্য অপেক্ষা করতেছিলো।
– ঐ তোরা কই গেছিলি.. (মা) ।
– এই তো এই দিক ওই দিক একটু
ঘুরলাম আন্টি।
– ঠিকআছে….।
– আমার চোখমুখ ভয়ে লাল হয়ে
আছে।
– সাহরিয়ার কী হইছে রে।
– তেমন কিছু না আন্টি… ও
যে এত বড় একটা ভীতু
আমি আগে সেটা জানতাম না।
– আচ্ছা…. এবার তোরা গিয়ে একটু
ফ্রেস হয়ে খেতে আয়।
আমি তো রুমে গিয়ে গোসল দিলাম।
তারপরে খাবার টেবিলে আসলাম।
চুপচাপ খাচ্ছিলাম
কারো সাথে কোন কথা
বলিনি।
কারণ এমনি তেই অনেক ভয়
পাইছি আমি, জীবনে এমন
ভয় পাইনি।
খাওয়া শেষ করে রুমে চলে
আসলাম।
ঐ দিকে মা নিধি কে বলছিলো।
– কীরে নিধি কী করছি।
– আন্টি আমি সত্যি জানতাম না
যে সাহরিয়া এতটা ভীতু।
তবে আজকে মনে হয় অনেক বেশি
ভয় পাইয়ে দিছি।
– তুই ও না একটা পাগলি।
– আরে আমারে কী না কী
বলছিলো তাই তো।

এই সব শুনে… চুপচাপ শুয়ে
পড়লাম, আর মনে মনে ভাবতেছি
আজকের পর থেকে যাই কিছু
হোক না ক্যান আর ভয় করমু
না হুমমমমমম….।
আর ঐ নিধিরে তো দেখতেছি
সকালটা আগে হোক।

– ঘুমের মধ্যে হঠাৎ অনুভব করলাম
কেউ আমার পিঠের উপর
বসে করমড় করে কিছু খাচ্ছে।
মনে মনে ভাবলাম কোন
রাক্ষস আবার আসলে নাকি।
তবে হ্যা যাই কিছু হোক আর
কোন ভয় করতাম না।
কম্বল গায়ে দিয়ে মাথাটা
কম্বলের মধ্যে ঢুকিয়ে উপুুর হয়ে
ঘুমাচ্ছিলাম,
আর এর মধ্যেই এই কান্ড।
তবে একটু একটু ভয় ও করতেছে,
তবু বুকে সাহস নিয়ে কম্বলের
ভেতর থেকে মাথাটা বের করলাম।

মাথা বের করতেই দেখি,
ওমা চারিদিকে তো আলোই আলোময়
হয়ে আছে।
এর মানে সকাল হয়ে গেছে,
তবে এত তাঁড়াতাড়ি কেমনে সকাল
হয়ে গেলো, নাকি স্বপ্নের মধ্যে
এই সব হইতেছি।
না কোন সন্দেহের মধ্যে থাকা
যাবে না।
সন্দেহ কাঁটাতে নিজেই নিজের
হাতে জোরে একটা কামড় দিলাম ।
– আউউউউউউউউউ বলে
লাফ দিয়ে উঠলাম.. আর
পিঠের উপরে যে বসে ছিলো সে
ধাপ করে খাটের নিচে পড়ে
গেলো।

ধরফর করে উঠে নিচে
তাঁকাইলাম যে কে পিঠে উপরে
বসে ছিলো।

নিচে তাঁকিয়ে যা দেখি,
সেটা দেখে তো আমি অবাক।
আমার পিঠের উপরে নিধি বসে
ছিলো।

– ঐ বেয়াদপ এমন চিৎকার
করে লাফ দিয়ে কী কেউ উঠে
হুমমমম।
– আমি উঠমু তোমার কী?
এত বড় একটা বাড়িতে বসে
খাওয়ার মতো আর কোন জায়গা
পাওনাই।
– পাইনাই জন্যই তো এখানে
এসে বসছি… হি হি।
– এত দাঁত কেঁলাতে হবে না এবার
যাও….বেসরম মাইয়া।
– ঐ কী বললি তুই।
– কিছুনা।
– হারামি সাহরিয়া… খবরদার যদি
আমারে নিয়ে বাজে কথা বলিস।
তাহলে তোরে একদম খেয়ে
ফেলমু।
– ঠিকআছে যাও এবার।


ফ্রেস হয়ে রুমের মধ্যে
শুয়ে শুয়ে গেমস্ খেলতেছিলাম।

এমন সময় মা আসলো।

– আচ্ছা তুই কী বলতো,
বাসার মতো কী তোরে
এখানে ও ডেকে ডেকে খাওয়াতে
হবে।
আর এখন কয়টা বাজে খেয়াল আছে
তোর।
যা সবাই খাবার টেবিলে খাচ্ছে,
তুই ও খেয়ে নে।
– আচ্ছা।


খাবার টেবিলে গিয়ে দেখি,
নিধি, আন্টি আরো অনেকেই
বসে খাচ্ছে।
আমি কিছু না বলে চুপচাপ
দাঁড়িয়ে আছি।

– সাহরিয়া ওখানে দাঁড়িয়ে আছো
কেনো…. খাইছো।
– মাথা নেরে জবাব দিলাম,
না আন্টি।
– না খেয়েই দাঁড়িয়ে আছো…
আসো বসো, নিধি তুই একটু
ঐ দিকে সরে যা।
– না আমি যাবো না, পারলে তুমি
ওকে সরে বসতে বলো।
– যা বলছি।


– আন্টি আমাকে এই প্লেটে খাবার
দিন, আমি রুমে গিয়ে খাবো।
– ঠিকআছে… প্লেট দাও।

প্লেটে করে খাবার নিয়ে রুমে
গিয়ে খেলাম।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে
বাহিরে গেলাম।
খুব সুন্দর করে পুরো
বাড়িটা সাজানো হয়েছে।
সেই সব দেখছিলাম আর
ছবি তুলছিলাম।

এমন সময় আবার ঐ নিধির
আগমন।

– কী করছো ভীতুর ডিম।
– সাঁতার কাঁটতেছি দেখছো না।
– বাহ্ ভালো কথা মনে করে
দিছো তো।
– কীসের ভালো কথা।
– এখানে একটা নদী আছে,
নদীর পারে যাবা।
– আচ্ছা চলো।


– আজকে রাতে আমার
সাথে ঘুরবা।
– হুমমমম।
– এহহহহহহহহ..যে ভীতুর ডিম তুমি কালকে যেমন বাচ্চাদের মতো কানতেছিলে।
– সেটা তো কালকে…. তবে আজকে
অনেক সাহস এসে গেছে তোমার
মধ্যে থেকে।
– কেমন করে শুনি।
– ঐ যে কান্না করার সময় যখন জরিয়ে
ধরছিলে তখন…হি হি হি।
– আন্টি তোমারে বেয়াদপ শয়তান
এমনি আর বলে না।
– হুমমমমম।


ওয়াও এত্ত সুন্দর নদী।

– এই যে হাদারাম নদী সব সময় সুন্দরই
হয়.. বুঝলা।
আর তোমারে কালকে এর পাশ
দিয়েই নিয়ে গেছিলাম,
তখন তো তুমি ভয়ে কাঁপতেছিলে
হা হা হা।
– গত কাল তুমি অনেক মজা
নিছো, আজকে
দেখমুনি কার কতো সাহস।
– তোমার অনেক সাহস
বাড়ছে তাই না।
– হুমমমমম।
– তাহলে একটা জায়গায়
চলো।
– কই।
– আগে চলো তারপরে দেখাচ্ছি।
– হুমমমমম।

একটা ব্রিজের উপর নিয়ে গেলো।

– এবার এর উপর থেকে লাফ দাও।
– কেনো।
– দেখতে হবে না তোমার কত
সাহস বাড়ছে।
– সেটা না হয় ঠিকআছে…লাফ দিবো
তবে বিনিময়ে আমি কী পাবো।
– কী নিবা বলো।
– গত কালের মতো জরিয়ে ধইরো.. হি হি ।
– ঠিকআছে আগে তো লাফ দাও…।
– ওকে…. আমার জুতো, শার্ট আর
ফোনটা তোমার কাছে রাখো।
– সত্যি সত্যি লাফ দিবা নাকি।
– হুমমমমমমম….আর তুমি
আমাকে জরিয়ে ধরার জন্য
প্রস্তুত হও।
– ঠিকআছে… দেখি কেমন পারো।


আর কোন কিছু না ভেঁবেই
ব্রিজের উপরে উঠলাম…
পানির দিকে একবার তাঁকাইলাম,
কেমন একটা খটকা লাগলো,
কারণ নদীর পানি গুলো কেমন
স্থির হয়ে ছিলো।
মনে হচ্ছে আমাকে তার কাছে
ডাকতেছে।
তবে আর কিছু না ভেবে দিলাম
লাফ।


পানিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে
কেমন অস্থির লাগতেছ,
উপরের দিকে উঠতে পারতেছিলাম
না।
নিচের দিকেই যাচ্ছিলাম আরো।
একটা পর্যয়ে মনে হচ্ছিলো আজকেই
আমার শেষ দিন।
দোয়া পড়তেছিলাম, আল্লাহ্ কে
ডাকতেছিলাম।
এমন সময় কোথাই থেকে
একটা আজানা শক্তি দেহের
মধ্যে অনুভব করলাম…আর
সমস্ত শক্তি দিয়ে পানির উপরে
উঠে আসলাম।


আর খুব দ্রুত পানি থেকে
উপরে উঠে আসলাম…
জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছিলাম,
আর ভাবছিলাম আজকে
আল্লাহ্ নিজ হাতে আমাকে
বাঁচিয়েছে।
মনে হচ্ছে আমার যে বউ আছে,
সে খুব আমাকে চায়, তাইতো
আজকে বেঁচে গেছি তার অছিলাই।


ওখান থেকে উঠে হেঁটে হেঁটে ব্রিজের
উপরে উঠলাম।
আর ব্রিজের উপর উঠতেই
নিধি দৌঁড়ে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো।
– সাহরিয়া…. তুমি কী পাগল।
– কেনো… তুমি না লাফ দিতে
বললা, আর তোমাকে জরিয়ে ধরার
সুযোগটা কী হাত ছাঁড়া করতে পারি।
– আসলে তোমার দোষ নাই,
আমিই একটা পাগলি।
যদি আজকে তোমার কিছু
হয়ে যেতো।
আর জানো এই ব্রিজটা অনেক
খারাপ।
তুমি লাফ দেওয়ার একটু পরে
একটা লোক আসছিলো।

– তারপরে ওনি কী বলেছিলো।
– এই ব্রিজটা অনেক খারাপ,
এখান থেকে লাফ দেওয়ার পরে
অনেকেই মৃত অবস্থাই উঠছিলো।
আর আমাকে এখান থেকে চলে
যেতে বলছিলো,
আমি তো তার কথা
শুনেই প্রায় কেঁদেই দিছিলাম।
ভয়ে তোমার কথা বলিনাই,
যে তুমি নিচে লাফ দিছো।
ঐ লোকটা চলে যাওয়ার পরে তো
আমি কাঁদতেই লাগছিলাম আর
তখনি তোমাকে উঠে আসতে দেখি।
– আরে পাগলি আর বইলো না
আমি সত্যিই মরে যেতে লাগছিলাম।
তবে কেউ আমাকে অনেক ভালোবাসে
তার অছিলাই আজকে বাঁচছি।
– কীইইইইই……..?
– হুমমমমম…. পানির উপরে উঠতেই
পারছিলাম না, প্রায়
আধা মরা হয়ে গেছিলাম।
এটা শুনেই…. নিধি আবার
জরিয়ে ধরলো…।
– ঐ শোন আর কোনদিন এমন
পাগলামি করবা না।
– হুমমমমম।
– এবার চলো।


– আচ্ছা নিধি আমার কিছু হলে
তুমি এমন করো কেনো।
– জানি না… এবার চুপ চাপ চলো।


বাসাই এসে গোসল করে
খেয়ে দেয়ে একটু ঘুমালাম।

হঠাৎ নিধির ডাক, সাহরিয়া
ঐ সাহরিয়া তাঁড়াতাড়ি উঠো।
– আরে মাত্র তো শুলাম
কী হয়েছে।
– আরে ছেলে মেয়ে সবাই ক্রিকেট
খেলতেছে, চলো আমরা ও
খেলবো।
– এখন।
– হুমমমমম।
– আচ্ছা চলো।


– বাসাই আরো কয়েকজন
ছেলে মেয়ে ছিলো… তাঁদের
সবাইকে নিয়ে গেলাম।

খেলার মাঠে যেতেই তো সব
ছেলেরা নিধির দিকে কেমন
হা করে তাঁকিয়ে আছে।

নিধির হাত ধরে একটু সাইটে
নিয়ে গেলাম।

– ঐ কী হইছে।
– সব ছেলেরা তোমার দিকে কেমন হা
করে আছে দেখছো।
– আরে দূর, হা করে আছে তো
কী হইছে।
খেলাতো খেলাই নাকি চলতো।

ওদের দলের ক্যাপ্টেন এর সাথে
কথা বললাম।

– এই যে ভাইয়া শোনেন….।
– জ্বী।
– না মানে… আমরা একটু
ক্রিকেট খেলতে চাই, আপনারে
যদি একটু।
– আরে কী যদি একটু বলতেছো হ্যা
খেলতে না নিলে
সবার ঠ্যাং ভেঙে দিবো (নিধি) ।
– ঠিকআছে আপু… তবে মেয়েরা
ও কী খেলবে।
– হ্যা….আমরা বিয়ে বাড়ির দল
আর আপনারা এলাকার ছেলেরা
মিলে একটা ম্যাচ হয়ে যাক।
– আরে ভাই কী বলছেন…. আপনা
পারবেন না তো…।
– দেখা যাক কী হয়।


টচ করে ওরা জিতলো,
সবাই কেমন আমাদের নিয়ে মজা
করছে।
কারণ আমরা অনেক নর্মাল ছিলাম
তাই।
তবে একটা কথাই আছে অপর পক্ষকে
কখন ও দূর্বল ভাবতে নেই।

– নিধি তুমি ঐ সাইটে থাকো…
রাফি তুই কিপার থাক…
এই ভাবে সবাইকে সেট
করে দিলাম।

প্রথম বলিং আমি…..
– ফাস্ট বলেই ছয়….।
এটা দেখে তো সব ছেলে আমাকে
বলতেছে, ভাই আপনারা
পারবেন না।
– তবে আমার একটাই কথা,
আরে ভাই দেখা যাক না কী হয়।

এমন করে আমরা বল করতেছি আর
ওরা ঠিক মতো চার ছয় মারতেছে।

আসলে অনেক দিন থেকে
খেলা হয়নি,
তাই কেমন একটা হচ্ছিলো না।

হঠাৎ নিধি আমার কাছে আসলো।
– সাহরিয়া… কিছু করো এমন
মারতে থাকলে তো, আমরা
ব্যাট ধরার আগেই হেরে যাবো।

– ঠিকআছে… তুমি যাও আমি
দেখতেছি কারা জিতে।


এমন করে দশ ওভারে ওরা
১২৫ রাগ এর টার্গেট দিলো।

– ঐ সাহরিয়া আমরা তো মনে হয়
হেরে যাবো (নিধি)।
– আরে কিচ্ছু হবে না… এইটা আবার
রান হলো… আমাদের সবাই তো
নর্মাল তবু বেশি রান করতে
পারে নাই।
– ঐ কী বলছো… ১২৫ রান বুঝলা।
– হুমমমমম …আমাদের সবাইকে
এক সাথে ডাকলাম।
সবাই শোন জিতবো তো আমরাই
তোমরা শুধু আউট হবা না
যা রান করার আমি তো আছিই।

আমি ওপেনার হিসেবে নামলাম।
প্রথম বল মিস আউট হইতে হইতে
হই নাই। ছয় ওভার
৭০ রানে আমাদের সবাই আউট,
এখন ও চার ওভারে, দরকার ৪৫ রান
আর এখন এক মাত্র সম্বল নিধি।
আমি আর নিধিই আছি।

– সাহরিয়া আমরা জিতবো তো।
– আরে হ্যা পাগলি… তুমি শুধু
আমাকে সিঙ্গেল নিয়ে দিবা।
আর আমরাই জিতবো।
– এক ওভারে নিধি এক রান
ও করতে পারে নাই।
– সাহরিয়া আমি পারছি না।
– আরে শুধু একটু ব্যাটে লাগাও।
– হুমমমমম।

এমন করে ১০৬ রান হলো,
আর এক ওভারে ১৮ রান
দরকার।
– সাহরিয়া আমরা পারবো তো।
– হুমমমমম… দেখে তুমিই জিতিয়ে দিবা।
– ঐ আমি পারবো না….।
– চুপপপপপপপ…. শুধু আমাকে দেখো।
– হুমমমমম।
– আর বাঁকি ছয়টা বল…..
ব্যাটিংয়ে আছি আমি।
প্রথম বলে চার, দ্বিতীয় বলে
ছক্কা তৃতীয় ছয় চতুর্থ বলে তিনটা রান
নিয়ে নিধিকে ব্যাটিংয়ে দিলাম।
– ঐ এটা কী করলে তুমিই
তো পারতে।
– জানি তবে…. জিতিয়ে দিবা
তুমি বুঝলা।
আর দুই বলে তিন রান দরকার,
মনে করো আমি নাই।
এখন তোমাকেই ম্যাচটা জিতিয়ে
দিতে হবে।
– আমি পারবো না তো।
– ওকে তাহলে হেরে যাবো।
– আচ্ছা।
– প্রথম বলে সিঙ্গেল একটা
রান হতো.. তবে আমি দৌঁড়াইনি।
কারণ নিধিকে দিয়েই জিতাবো
না হলে ওকে দিয়ে হারবো।

– সাহরিয়া আমি পারবো না।
– ঠিকআছে যদি না পারো… তাহলে
চলো আর খেলতে হবে না।
কী ভাবলো না ভাবলো ব্যাটটা
নিয়ে চলে গেলো।
আর শেষ বলে চোখ বন্ধ
করে ব্যাটটা চালিয়ে
দিলো।
বলটা ব্যাটের মাঝখানে
লাগলো আর চার হয়ে গেলো।

পাগলিটা তো দৌঁড়ে এসে
আমাকে জরিয়ে ধরলো।
– ওহহহহহহহহহ……আমরা
জিতে গেছি।
– হুমমমমম পাগলি …..।

সন্ধা হয়ে আসছিলো, তাই ওখান
থেকে চলে আসছিলাম।
– ঐ তুমিই তো পারতে।
– আরে তুমি কী করলা হুমমমম,
তুমি ও তো পারলা।
– তবে যাই বলো, ছেলে গুলারে
কিন্তুু তুমি উচিত শিক্ষা দিছো।
– আমি না ম্যাডাম আপনি… হি হি।
– শয়তান দাঁড়াও।
– না দাঁড়ামু না… আবার গত
কাল রাতের মতো ভয় দেখাবা।
– কীইইইই….সকালেই না
বললা সব ভয় শেষ হয়ে গেছে।
– আরে সেটা তো দিনে বলছি,
আর এখন তো রাত।
– ভীতুর ডিম একটা দাঁড়াও।
– না… বাড়ির সামনে গিয়েই
দাঁড়াবো… কারণ দিনে আমার
সাহস ধরে না, আর রাতে
সব উধাও হয়ে যায়…. হি হি হি।

পর্ব -২

– ঘুমের মধ্যে হঠাৎ অনুভব করলাম
কেউ আমার পিঠের উপর
বসে করমড় করে কিছু খাচ্ছে।
মনে মনে ভাবলাম কোন
রাক্ষস আবার আসলে নাকি।
তবে হ্যা যাই কিছু হোক আর
কোন ভয় করতাম না।
কম্বল গায়ে দিয়ে মাথাটা
কম্বলের মধ্যে ঢুকিয়ে উপুুর হয়ে
ঘুমাচ্ছিলাম,
আর এর মধ্যেই এই কান্ড।
তবে একটু একটু ভয় ও করতেছে,
তবু বুকে সাহস নিয়ে কম্বলের
ভেতর থেকে মাথাটা বের করলাম।

মাথা বের করতেই দেখি,
ওমা চারিদিকে তো আলোই আলোময়
হয়ে আছে।
এর মানে সকাল হয়ে গেছে,
তবে এত তাঁড়াতাড়ি কেমনে সকাল
হয়ে গেলো, নাকি স্বপ্নের মধ্যে
এই সব হইতেছি।
না কোন সন্দেহের মধ্যে থাকা
যাবে না।
সন্দেহ কাঁটাতে নিজেই নিজের
হাতে জোরে একটা কামড় দিলাম ।
– আউউউউউউউউউ বলে
লাফ দিয়ে উঠলাম.. আর
পিঠের উপরে যে বসে ছিলো সে
ধাপ করে খাটের নিচে পড়ে
গেলো।

ধরফর করে উঠে নিচে
তাঁকাইলাম যে কে পিঠে উপরে
বসে ছিলো।

নিচে তাঁকিয়ে যা দেখি,
সেটা দেখে তো আমি অবাক।
আমার পিঠের উপরে নিধি বসে
ছিলো।

– ঐ বেয়াদপ এমন চিৎকার
করে লাফ দিয়ে কী কেউ উঠে
হুমমমম।
– আমি উঠমু তোমার কী?
এত বড় একটা বাড়িতে বসে
খাওয়ার মতো আর কোন জায়গা
পাওনাই।
– পাইনাই জন্যই তো এখানে
এসে বসছি… হি হি।
– এত দাঁত কেঁলাতে হবে না এবার
যাও….বেসরম মাইয়া।
– ঐ কী বললি তুই।
– কিছুনা।
– হারামি সাহরিয়া… খবরদার যদি
আমারে নিয়ে বাজে কথা বলিস।
তাহলে তোরে একদম খেয়ে
ফেলমু।
– ঠিকআছে যাও এবার।

ফ্রেস হয়ে রুমের মধ্যে
শুয়ে শুয়ে গেমস্ খেলতেছিলাম।

এমন সময় মা আসলো।

– আচ্ছা তুই কী বলতো,
বাসার মতো কী তোরে
এখানে ও ডেকে ডেকে খাওয়াতে
হবে।
আর এখন কয়টা বাজে খেয়াল আছে
তোর।
যা সবাই খাবার টেবিলে খাচ্ছে,
তুই ও খেয়ে নে।
– আচ্ছা।

খাবার টেবিলে গিয়ে দেখি,
নিধি, আন্টি আরো অনেকেই
বসে খাচ্ছে।
আমি কিছু না বলে চুপচাপ
দাঁড়িয়ে আছি।

– সাহরিয়া ওখানে দাঁড়িয়ে আছো
কেনো…. খাইছো।
– মাথা নেরে জবাব দিলাম,
না আন্টি।
– না খেয়েই দাঁড়িয়ে আছো…
আসো বসো, নিধি তুই একটু
ঐ দিকে সরে যা।
– না আমি যাবো না, পারলে তুমি
ওকে সরে বসতে বলো।
– যা বলছি।

– আন্টি আমাকে এই প্লেটে খাবার
দিন, আমি রুমে গিয়ে খাবো।
– ঠিকআছে… প্লেট দাও।

প্লেটে করে খাবার নিয়ে রুমে
গিয়ে খেলাম।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে
বাহিরে গেলাম।
খুব সুন্দর করে পুরো
বাড়িটা সাজানো হয়েছে।
সেই সব দেখছিলাম আর
ছবি তুলছিলাম।

এমন সময় আবার ঐ নিধির
আগমন।

– কী করছো ভীতুর ডিম।
– সাঁতার কাঁটতেছি দেখছো না।
– বাহ্ ভালো কথা মনে করে
দিছো তো।
– কীসের ভালো কথা।
– এখানে একটা নদী আছে,
নদীর পারে যাবা।
– আচ্ছা চলো।

– আজকে রাতে আমার
সাথে ঘুরবা।
– হুমমমম।
– এহহহহহহহহ..যে ভীতুর ডিম তুমি কালকে যেমন বাচ্চাদের মতো কানতেছিলে।
– সেটা তো কালকে…. তবে আজকে
অনেক সাহস এসে গেছে তোমার
মধ্যে থেকে।
– কেমন করে শুনি।
– ঐ যে কান্না করার সময় যখন জরিয়ে
ধরছিলে তখন…হি হি হি।
– আন্টি তোমারে বেয়াদপ শয়তান
এমনি আর বলে না।
– হুমমমমম।

ওয়াও এত্ত সুন্দর নদী।

– এই যে হাদারাম নদী সব সময় সুন্দরই
হয়.. বুঝলা।
আর তোমারে কালকে এর পাশ
দিয়েই নিয়ে গেছিলাম,
তখন তো তুমি ভয়ে কাঁপতেছিলে
হা হা হা।
– গত কাল তুমি অনেক মজা
নিছো, আজকে
দেখমুনি কার কতো সাহস।
– তোমার অনেক সাহস
বাড়ছে তাই না।
– হুমমমমম।
– তাহলে একটা জায়গায়
চলো।
– কই।
– আগে চলো তারপরে দেখাচ্ছি।
– হুমমমমম।

একটা ব্রিজের উপর নিয়ে গেলো।

– এবার এর উপর থেকে লাফ দাও।
– কেনো।
– দেখতে হবে না তোমার কত
সাহস বাড়ছে।
– সেটা না হয় ঠিকআছে…লাফ দিবো
তবে বিনিময়ে আমি কী পাবো।
– কী নিবা বলো।
– গত কালের মতো জরিয়ে ধইরো.. হি হি ।
– ঠিকআছে আগে তো লাফ দাও…।
– ওকে…. আমার জুতো, শার্ট আর
ফোনটা তোমার কাছে রাখো।
– সত্যি সত্যি লাফ দিবা নাকি।
– হুমমমমমমম….আর তুমি
আমাকে জরিয়ে ধরার জন্য
প্রস্তুত হও।
– ঠিকআছে… দেখি কেমন পারো।

আর কোন কিছু না ভেঁবেই
ব্রিজের উপরে উঠলাম…
পানির দিকে একবার তাঁকাইলাম,
কেমন একটা খটকা লাগলো,
কারণ নদীর পানি গুলো কেমন
স্থির হয়ে ছিলো।
মনে হচ্ছে আমাকে তার কাছে
ডাকতেছে।
তবে আর কিছু না ভেবে দিলাম
লাফ।

পানিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে
কেমন অস্থির লাগতেছ,
উপরের দিকে উঠতে পারতেছিলাম
না।
নিচের দিকেই যাচ্ছিলাম আরো।
একটা পর্যয়ে মনে হচ্ছিলো আজকেই
আমার শেষ দিন।
দোয়া পড়তেছিলাম, আল্লাহ্ কে
ডাকতেছিলাম।
এমন সময় কোথাই থেকে
একটা আজানা শক্তি দেহের
মধ্যে অনুভব করলাম…আর
সমস্ত শক্তি দিয়ে পানির উপরে
উঠে আসলাম।

আর খুব দ্রুত পানি থেকে
উপরে উঠে আসলাম…
জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছিলাম,
আর ভাবছিলাম আজকে
আল্লাহ্ নিজ হাতে আমাকে
বাঁচিয়েছে।
মনে হচ্ছে আমার যে বউ আছে,
সে খুব আমাকে চায়, তাইতো
আজকে বেঁচে গেছি তার অছিলাই।

ওখান থেকে উঠে হেঁটে হেঁটে ব্রিজের
উপরে উঠলাম।
আর ব্রিজের উপর উঠতেই
নিধি দৌঁড়ে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো।
– সাহরিয়া…. তুমি কী পাগল।
– কেনো… তুমি না লাফ দিতে
বললা, আর তোমাকে জরিয়ে ধরার
সুযোগটা কী হাত ছাঁড়া করতে পারি।
– আসলে তোমার দোষ নাই,
আমিই একটা পাগলি।
যদি আজকে তোমার কিছু
হয়ে যেতো।
আর জানো এই ব্রিজটা অনেক
খারাপ।
তুমি লাফ দেওয়ার একটু পরে
একটা লোক আসছিলো।

– তারপরে ওনি কী বলেছিলো।
– এই ব্রিজটা অনেক খারাপ,
এখান থেকে লাফ দেওয়ার পরে
অনেকেই মৃত অবস্থাই উঠছিলো।
আর আমাকে এখান থেকে চলে
যেতে বলছিলো,
আমি তো তার কথা
শুনেই প্রায় কেঁদেই দিছিলাম।
ভয়ে তোমার কথা বলিনাই,
যে তুমি নিচে লাফ দিছো।
ঐ লোকটা চলে যাওয়ার পরে তো
আমি কাঁদতেই লাগছিলাম আর
তখনি তোমাকে উঠে আসতে দেখি।
– আরে পাগলি আর বইলো না
আমি সত্যিই মরে যেতে লাগছিলাম।
তবে কেউ আমাকে অনেক ভালোবাসে
তার অছিলাই আজকে বাঁচছি।
– কীইইইইই……..?
– হুমমমমম…. পানির উপরে উঠতেই
পারছিলাম না, প্রায়
আধা মরা হয়ে গেছিলাম।
এটা শুনেই…. নিধি আবার
জরিয়ে ধরলো…।
– ঐ শোন আর কোনদিন এমন
পাগলামি করবা না।
– হুমমমমম।
– এবার চলো।

– আচ্ছা নিধি আমার কিছু হলে
তুমি এমন করো কেনো।
– জানি না… এবার চুপ চাপ চলো।

বাসাই এসে গোসল করে
খেয়ে দেয়ে একটু ঘুমালাম।

হঠাৎ নিধির ডাক, সাহরিয়া
ঐ সাহরিয়া তাঁড়াতাড়ি উঠো।
– আরে মাত্র তো শুলাম
কী হয়েছে।
– আরে ছেলে মেয়ে সবাই ক্রিকেট
খেলতেছে, চলো আমরা ও
খেলবো।
– এখন।
– হুমমমমম।
– আচ্ছা চলো।

– বাসাই আরো কয়েকজন
ছেলে মেয়ে ছিলো… তাঁদের
সবাইকে নিয়ে গেলাম।

খেলার মাঠে যেতেই তো সব
ছেলেরা নিধির দিকে কেমন
হা করে তাঁকিয়ে আছে।

নিধির হাত ধরে একটু সাইটে
নিয়ে গেলাম।

– ঐ কী হইছে।
– সব ছেলেরা তোমার দিকে কেমন হা
করে আছে দেখছো।
– আরে দূর, হা করে আছে তো
কী হইছে।
খেলাতো খেলাই নাকি চলতো।

ওদের দলের ক্যাপ্টেন এর সাথে
কথা বললাম।

– এই যে ভাইয়া শোনেন….।
– জ্বী।
– না মানে… আমরা একটু
ক্রিকেট খেলতে চাই, আপনারে
যদি একটু।
– আরে কী যদি একটু বলতেছো হ্যা
খেলতে না নিলে
সবার ঠ্যাং ভেঙে দিবো (নিধি) ।
– ঠিকআছে আপু… তবে মেয়েরা
ও কী খেলবে।
– হ্যা….আমরা বিয়ে বাড়ির দল
আর আপনারা এলাকার ছেলেরা
মিলে একটা ম্যাচ হয়ে যাক।
– আরে ভাই কী বলছেন…. আপনা
পারবেন না তো…।
– দেখা যাক কী হয়।

টচ করে ওরা জিতলো,
সবাই কেমন আমাদের নিয়ে মজা
করছে।
কারণ আমরা অনেক নর্মাল ছিলাম
তাই।
তবে একটা কথাই আছে অপর পক্ষকে
কখন ও দূর্বল ভাবতে নেই।

– নিধি তুমি ঐ সাইটে থাকো…
রাফি তুই কিপার থাক…
এই ভাবে সবাইকে সেট
করে দিলাম।

প্রথম বলিং আমি…..
– ফাস্ট বলেই ছয়….।
এটা দেখে তো সব ছেলে আমাকে
বলতেছে, ভাই আপনারা
পারবেন না।
– তবে আমার একটাই কথা,
আরে ভাই দেখা যাক না কী হয়।

এমন করে আমরা বল করতেছি আর
ওরা ঠিক মতো চার ছয় মারতেছে।

আসলে অনেক দিন থেকে
খেলা হয়নি,
তাই কেমন একটা হচ্ছিলো না।

হঠাৎ নিধি আমার কাছে আসলো।
– সাহরিয়া… কিছু করো এমন
মারতে থাকলে তো, আমরা
ব্যাট ধরার আগেই হেরে যাবো।

– ঠিকআছে… তুমি যাও আমি
দেখতেছি কারা জিতে।

এমন করে দশ ওভারে ওরা
১২৫ রাগ এর টার্গেট দিলো।

– ঐ সাহরিয়া আমরা তো মনে হয়
হেরে যাবো (নিধি)।
– আরে কিচ্ছু হবে না… এইটা আবার
রান হলো… আমাদের সবাই তো
নর্মাল তবু বেশি রান করতে
পারে নাই।
– ঐ কী বলছো… ১২৫ রান বুঝলা।
– হুমমমমম …আমাদের সবাইকে
এক সাথে ডাকলাম।
সবাই শোন জিতবো তো আমরাই
তোমরা শুধু আউট হবা না
যা রান করার আমি তো আছিই।

আমি ওপেনার হিসেবে নামলাম।
প্রথম বল মিস আউট হইতে হইতে
হই নাই। ছয় ওভার
৭০ রানে আমাদের সবাই আউট,
এখন ও চার ওভারে, দরকার ৪৫ রান
আর এখন এক মাত্র সম্বল নিধি।
আমি আর নিধিই আছি।

– সাহরিয়া আমরা জিতবো তো।
– আরে হ্যা পাগলি… তুমি শুধু
আমাকে সিঙ্গেল নিয়ে দিবা।
আর আমরাই জিতবো।
– এক ওভারে নিধি এক রান
ও করতে পারে নাই।
– সাহরিয়া আমি পারছি না।
– আরে শুধু একটু ব্যাটে লাগাও।
– হুমমমমম।

এমন করে ১০৬ রান হলো,
আর এক ওভারে ১৮ রান
দরকার।
– সাহরিয়া আমরা পারবো তো।
– হুমমমমম… দেখে তুমিই জিতিয়ে দিবা।
– ঐ আমি পারবো না….।
– চুপপপপপপপ…. শুধু আমাকে দেখো।
– হুমমমমম।
– আর বাঁকি ছয়টা বল…..
ব্যাটিংয়ে আছি আমি।
প্রথম বলে চার, দ্বিতীয় বলে
ছক্কা তৃতীয় ছয় চতুর্থ বলে তিনটা রান
নিয়ে নিধিকে ব্যাটিংয়ে দিলাম।
– ঐ এটা কী করলে তুমিই
তো পারতে।
– জানি তবে…. জিতিয়ে দিবা
তুমি বুঝলা।
আর দুই বলে তিন রান দরকার,
মনে করো আমি নাই।
এখন তোমাকেই ম্যাচটা জিতিয়ে
দিতে হবে।
– আমি পারবো না তো।
– ওকে তাহলে হেরে যাবো।
– আচ্ছা।
– প্রথম বলে সিঙ্গেল একটা
রান হতো.. তবে আমি দৌঁড়াইনি।
কারণ নিধিকে দিয়েই জিতাবো
না হলে ওকে দিয়ে হারবো।

– সাহরিয়া আমি পারবো না।
– ঠিকআছে যদি না পারো… তাহলে
চলো আর খেলতে হবে না।
কী ভাবলো না ভাবলো ব্যাটটা
নিয়ে চলে গেলো।
আর শেষ বলে চোখ বন্ধ
করে ব্যাটটা চালিয়ে
দিলো।
বলটা ব্যাটের মাঝখানে
লাগলো আর চার হয়ে গেলো।

পাগলিটা তো দৌঁড়ে এসে
আমাকে জরিয়ে ধরলো।
– ওহহহহহহহহহ……আমরা
জিতে গেছি।
– হুমমমমম পাগলি …..।

সন্ধা হয়ে আসছিলো, তাই ওখান
থেকে চলে আসছিলাম।
– ঐ তুমিই তো পারতে।
– আরে তুমি কী করলা হুমমমম,
তুমি ও তো পারলা।
– তবে যাই বলো, ছেলে গুলারে
কিন্তুু তুমি উচিত শিক্ষা দিছো।
– আমি না ম্যাডাম আপনি… হি হি।
– শয়তান দাঁড়াও।
– না দাঁড়ামু না… আবার গত
কাল রাতের মতো ভয় দেখাবা।
– কীইইইই….সকালেই না
বললা সব ভয় শেষ হয়ে গেছে।
– আরে সেটা তো দিনে বলছি,
আর এখন তো রাত।
– ভীতুর ডিম একটা দাঁড়াও।
– না… বাড়ির সামনে গিয়েই
দাঁড়াবো… কারণ দিনে আমার
সাহস ধরে না, আর রাতে
সব উধাও হয়ে যায়…. হি হি হি।

পর্ব -৩

– দৌঁড়াই দৌঁড়াই বাড়ির সামনে
চলে আসলাম।
– ঐ শয়তান এমন দৌঁড়াই আসার
কী আছিলো হুমমম।
– আরে এখানে রাত লাগলে
আমার হেব্বি ভয় লাগে।
– কেনো ভয় লাগে শুনি।
– সেটা জানি না.. তবে ভয়
লাগে এটা জানি।
– বাহ্… সকালে তো খুব বীরের
মতো ভাব দেখাইলা এখন সব
কই গেলো।
– সন্ধা লাগলেই তো সবাই ঘুমাই
পড়ে তাই… হি হি।

এমন সময় মা আসলো।

– আচ্ছা তোরা দুইটা সারাদিন কই
থাকিস..এখানে আসার পর থেকে
তোদের কোন খোঁজ খবর নাই।
– কেনো মা…. সকালেই না দেখলা
আমারে ।
– ঠিকআছে এবার বাড়িতে আয়।
ভিতরে কত কাজ কর্ম পড়ে আছে
একটু আকটু কাজ করলে ও তো পাড়িস।
– নিজের বিয়েতেই কাজ
করমু নাকি সন্দেহ.. আর তুমি
এখানে কাজ করার কথা বলতেছো।
– শয়তান ভিতরে আয়… আর নিধি
তুই ও আয়।
– ঠিকআছে মা তুমি যাও
আমরা আসতেছি।

– আহা কী সুন্দর করে বাড়িটা
সাঁজাইছে…একটা জিনিস আমি
বুঝিনা একটা মেয়েরে বাড়িতে
আনার জন্য এত্ত টাকা ক্যান খরচ
করতে হবে।
– বাহ্ খুব ভালো একটা জিনিস
বোঝনাতো… আচ্ছা তাহলে তুমি
তোমার বিয়ে কেমনে করবা শুনি।
– আমি……।
– হুমমমমম।
– আমারে কী তোমার পাগল মনে
হয় হ্যা….এতো সুখে থাকতে
বিয়ে কইরা মরমু নাকি… হি হি।
– কীইইইইইই… বললা শয়তান।
– কিছু না…. ঐ মা না ভিতরে যেতে
বললো… চলো, বলে নিধি হাত
ধরে টেনে ভিতরে নিয়ে গেলাম।


ভিতরে যেতেই দেখি…
মা, আন্টি, নানু, মামা সবাই
কেমন চিন্তিত হয়ে বসে আছে।

– মা…. কী হয়েছে একটু বলবা।
– কিছু না তোরা ভিতরে
যা।
– ওহহহহ… আন্টি বলো না।

– আচ্ছা আমিই বলছি, মিম এর
ফ্যামিলিতে অদ্ভুত একটু রিতি
চালু আছে…।
– আচ্ছা মামা মিম কে।
– আমি যাকে বিয়ে করবো,
তোর হবু মামি।
– ওহহহহহহহহহ… নাইচ নেম,
তারপরে বলো।
– আরে ওদের ফ্যামিলির নিয়ম
অনুযায়ী.. কোন মেয়েকে বিয়ে
করতে হলে…বিয়ের দিন যেই সব
জিনিস পত্র ছেলে পক্ষ নিয়ে যায়,
সেই সব জিনিস পত্র বিয়ের
আগেই মেয়ে পক্ষকে দিয়ে আসতে
হবে।
– ভালোতো… বিয়ের দিন কোন
ঝামেলা হবে না… তবে
এটাতে চিন্তার কী আছে।
– আরে সমস্যা তো এখানেই।
– ওহহহহহহ কোথায় আবার সমস্যা,
একজন যেয়ে দিয়ে আসলেই তো
হলো নাকি।
– ওদের বাড়িতে ঐ সব জিনিস
শুধু দুইজন কে গিয়ে দিতে হবে।
আর সেই দুই জনের মধ্যে একটা
ছেলে আর একটা মেয়ে,
আর সেই দুই জন কে এমন
হতে হবে যাতে তাঁদের ও যেন
সেই দুই জন কে পছন্দ হয়।
এবং একটা পুরো দিন আর
পুরো রাত