ইমাম হুসাইন (আঃ) এর শাহাদতের পর দেখা গেল তাঁর পবিত্র শরীর মােবারকের উপর তেত্রিশটি বর্শার আঘাত, তেতাল্লিশটি তলােয়ারের আঘাত এবং অসংখ্য তীরের আঘাত রয়েছে। ইমাম হুসাইন (আঃ) এর দলে ছিল বত্রিশজন অশ্বারােহী ও চল্লিশজন পদাতিক যুদ্ধা এবং তারা সবাই শহীদ হয়ে গিয়েছিল এবং কাফির ইয়াজিদের দলে জাহান্নামী হয়েছিল আটাশি জন [ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া , ৮ম খণ্ড ]।
ইয়াজিদ বাহিনীর হিংস্র হায়নার দল ইমাম হুসাইন (আঃ) এর পবিত্র শরীর মােবারক হতে সমস্ত কাপড় খুলে পবিত্র লাশকে বেইজ্জতি করেছিল। আল কামিল, বেহার—১০ম খণ্ড ও আত তাবারির বর্ণনা মতে জানা যায়ঃ— ইমাম হুসাইন ( আঃ ) এর তরবারি নিয়েছিল “বনু নাহশাল ইবনে দারিমের এক ব্যক্তি।” তার জুতা মােবারক নিয়েছিল ‘আসওয়াদ আল সাদী’, সে তা পায়ে পড়ার পর পা অবশ হয়ে গিয়েছিল। আর কোর্তা ও পায়জামাগুলি নিয়েছিল ‘বাহর ইবনে কা’ব আর ইবনুল আছমের বর্ণনা মতে তা নিয়েছিল ‘ইয়াহ ইয়া ইবনে আমর আল হারশূ’, এগুলাে পড়ার পর তার শরীরে ধবল রােগ হয়েছিল এবং তাঁর পাগড়ি মােবারক নিয়েছিল “জাবির ইবনে জায়েদ আল অযদী’-এ পাগড়ী মােবারক মাথায় পরিধান করার পর সে পাগল হয়ে গিয়েছিল এবং কুষ্ঠ রােগ দেখা দিয়েছিল, তাঁর বর্ম নিয়েছিল ‘মালিক ইবনে বিশর আল কিন্দী’ সেও পাগল হয়ে গিয়েছিল, ‘বজদিলবিন সলীম’ তাঁর আঙ্গুল কেটে আংটি নিয়েছিল, ‘আমীর মােখতার তাকে বন্দী করে হাত-পা কেটে হত্যা করেছিল। তারপর কুফার গভর্নর ওবায়দুল্লাহ ইবনে জেয়াদের নির্দেশে ‘সেনাপতি ওমর বিন সাদ’ দশজন অশ্বারােহীকে হুকুম দিল ইমাম হুসাইন (আঃ) এর মস্তকবিহীন লাশের উপর ঘােড়া চালিয়ে তাঁর লাশ মােবারককে কারবালার মাটিতে মিশিয়ে দেয়ার জন্য। তাই নির্দেশ মতে, ১। ইসহাক বিন হারবা – যে হুসাইন ( আঃ ) এর জামা খুলে নিয়েছিল|
২ । আখনাস বিন মারসাদ।
৩ । হাকিম বিন তােফাইন সামরানী
৪ । আমর বিন সবিহ সায়দাবী
৫ । রেজা বিন মুনকায আবদী ।
৬ । সালেন বিন খুসহিমা জুফী ।
৭ । ওয়াহেস বিন নায়েম ।
৮ । সালেহ বিন ওয়াব জুফী ।
৯ । হানি বিন শাবস হাজরামী
১০ । উসাইদ বিন মালেক । উক্ত দশজন অশ্বারােহী ঘােড় চালিয়ে আওলাদে রাছুল (সাঃ) , মানব জাতির মুক্তির কাণ্ডারী ইমাম হুসাইন (আঃ) এর পবিত্র নুরানী দেহ মােবারককে ঘোড়ার খুরের আঘাতে খণ্ড-বিখণ্ড করে কারবালার মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল। উক্ত দশজন অশ্বারােহীর জীবনবৃত্তান্ত পাঠে জানা যায় তারা সবাই ছিল জারজ সন্তান। তাদের এ কুৎসিত কর্মের পর যখন ওবায়দুল্লাহ ইবনে জেয়াদের নিকট গিয়েছিল তখন তাদের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে সামান্য পুরস্কার দিয়ে বিদায় করে দিয়েছিল। পরবর্তীতে এ দশজনকেই আলাসীয় বংশীয় মােখতার বন্দী করে হাত-পা বেঁধে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাদের উপড় ঘােড়া চালিয়েছিল। তারপর ইয়াজিদ বাহিনী ইমাম হুসাইন (আঃ) এর পরিবারবর্গের তাবু লুট করতে শুরু করলাে। মেয়েদের কানের ও হাতের অলংকারগুলাে। টেনে ছিড়ে নিয়ে গেল তাদের শরীরের ওড়নাগুলোও নিয়ে গিয়েছিল। প্রচণ্ড শােকে মুহ্যমান নবী বংশের পবিত্র মহিলাগণ ভয়ে জড়সর হয়ে গেল এবং তাদেরকে খােলা আকাশের নীচে বেপর্দা করে বের করে দেয়া হলো। তাবুর ভিতরে জয়নাল আবেদীন ( আঃ ) কে দেখে শশীমার বিন যিলজোশান তাকে হত্যা করার জন্য ধাবিত হলাে, কিন্তু অসুস্থতার কারণে এবং মুনাফিক ওমর বিন সাদের নির্দেশে সে এ কাজ হতে বিরত হলাে।