রাতের খাবার খেয়ে চা এর দোকানে বসে আড্ডা দিয়ে রুমে ফিরতে ফিরতে এগারোটা বাজিয়ে ফেললো অাবির। বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়েই চমকে উঠলো সে। নয়টা মিসকল উঠে আছে নীহার। সাইলেন্ট করা ছিলো, কিচ্ছু টের পায় নি সে।তাড়াতাড়ি কল ব্যাক করলো।
বেশ কিছুক্ষণ রিং হবার পর ঐ পাশ থেকে নিহার থমথমে গলা শুনতে পেল সে। বরফের মত শীতল।
–হুম বলো!
–সরি, বাইরে ছিলাম, সাইলেন্ট করা ছিলো তাই শুনতে পাইনি।
–তোমার ফোন সব সময় সাইলেন্টই করা থাকে অাবির। অথবা তুমি “অন্য” রুমে থাকো! অথবা ব্যস্ত।একদিন দুদিন না, দিনের পর দিন একই ঘটনা।
–আচ্ছা বাবা, আমি কি টের পেয়ে সাথে সাথে কল ব্যাক করছি না?
–ভদ্রতা করে কল ব্যাক করার আর দরকার নেই। এভাবে হয় না আবির। আমি আর কল দিবো না।
–এসবের মানে কি? আমি তো কল দিবো!
–থাক তোমার আর দিতে হবে না। আমি না বললে কল দাও না। সারাদিন একবারো মনে হয় না একটু খোঁজ নেই। আমি বুঝি আবির
–দেখো নিহা, এটা কিন্তু ঠিক না। আজব! আজ সকালেও আমি!
–বললাম তো, তুমি এখন কিছু বলতে পারছোনা, তাই কনটাক্ট রাখছো। তুমি চাইলে চলে যেতে পারো আবির, এভাবে থাকার মানে নেই কোনো।
–এভাবে তো সব কিছু শেষ হবার কথা ছিলো না। কেন এরকম হলো? কত ভালো বন্ধু ছিলাম আমরা,রিমেম্বার? এখন এমন হচ্ছে কেনো?
— জাস্ট লিভ। আমি তোমার বন্ধু হয়ে থাকতে পারবো না।
আবির নিশ্চিত নয়, ফোন কাটার আগে নিহার ফোঁপানির আওয়াজ পেয়েছে কিনা। কিন্তু ফোন কেটে দেয়াতে সে খুব একটা অবাক হয় নি। সিলিং এর দিকে তাকিয়ে সে বিড়বিড় করে বললো,”এরকম তো হবার কথা ছিলো না!”
প্রথম প্রথম নিহার সাথে রাতের পর রাত যখন কথা বলে কাটিয়ে দিতো সে, সময় মনে হতো যাদুঘড়ির মত ফুরিয়ে যেতো। কতো টপিকে কতো না বলা কথা! কতো চেনে নেয়া, ধীরে ধীরে কাছে আসা। কখন যে তাদের সম্বোধন নাম ধরে ডাকা থেকে বাবুটা হয়ে গেলো টেরই পেলো না দুইজন! কথা হতো, দেখাও হলো। ভালোবাসা পাগলামি বেড়ে গেলো।
একটা সময় আবির আবিষ্কার করলো সে অলস হয়ে গেছে। ভালোবাসা পেয়ে পেয়ে তার মনে চর্বি জমে গেছে।সারাদিন নিজের মত ব্যস্ত থাকে, নিহার কথা ভুলেই যায় যে একটু ফোন নিয়ে খবর নেই। ভাবটা এমন, “আরে সে তো আছেই, কই যাবে সে? এত কেয়ার না নিলেও চলে!”
নিহা আবিরের পরিবর্তনে কষ্ট পায় খুব। সেই প্রথম পরিচয়ের উন্মাদনাটা কই যেনো হারিয়ে গেছে… আগের মত আগ্রহ, আকর্ষণ কিছুই নাই আর ছেলেটার মাঝে। ছেলেরা এমনই- যখনই টের পায় কোন মেয়ের হৃদয় পুরোটাই তার দখলে, তখনই তারা দপ করে আকর্ষণ হারিয়ে কেমন উদাস কুদাস হয়ে যায়। নিহা আর নিতে পারছে না এই অবহেলা।
আবির বুঝতে পারে না কি করবে। আনমনে মোবাইল হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকে দেখে নিহার এক বিশাল ম্যাসেজ। যার সারমর্ম আসলে গুডবাই নোট। আইডিটাও কালো হয়ে গেছে, রিপ্লাই পাঠাবার আর সুযোগ না দিয়ে!
রাত দুটোর দিকে আবির প্রচন্ড কষ্ট নিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে। গত তিন ঘন্টা যাবত সে ইগো আর আবেগের সাথে যুদ্ধ করেছে। সে আবার কল দিবে? মেয়েটাতো বিদায় বলে দিয়েছে। ব্লক মেরে দিয়েছে,সে আবার নত মুখে তাকে ফিরিয়ে নিতে বলবে? কেনো? আবির বুঝছিলো এরকম কিছু হবে। রিলেশন ব্যাপারটা হবার আগ পর্যন্ত বেশ মজার। কিন্তু সেটাকে টেনে নিয়ে যাওয়াটাই আসল ব্যাপার।তার নিজেরও একটা লাইফ আছে। সব সময় কি একই রকম টাইম দেয়া যায় নাকি? কিন্তু সে তো নিহাকে ভুলতে পারবে না।কে এখন তার সাথে দুষ্টুমি করবে? কে তার জন্য না খেয়ে থেকে জোর করে পাঠাবে খেতে? আবির ভেজা চোখে মোবাইল হাতে নিতেই একটা ম্যাসেজ আসার টোন বেজে উঠে.. আবিরের বুক ধ্বক করে উঠে আশায়। এতো রাতে আর কে পাঠাবে ম্যাসেজ?
হুম, নিহাই পাঠিয়েছে -“ভালোবাহুম, নিহাই পাঠিয়েছে -“ভালোবাসি অাবির”
আবির ভেজা চোখেই মন খুলে হেসে উঠে। প্রচন্ড ভালোলাগায় আচ্ছন্ন হয়ে সে ঝাপসা চোখে ম্যাসেজটার দিকে তাকিয়ে থাকে। ম্যাসেজটার প্রতিটা বর্ণ আলাদা আলাদা রংতুলির মতো আচড় কাটছে বুকের গহীনে। আবির চোখ মুছে রিপ্লাই লিখতে থাকে।আজ রাতটা কোনো এক অদ্ভুত উপায়ে তাদের জন্য অনেক লম্বা হয়ে যাবে।
কর্পোরেট ভালোবাসা আর ধোঁকাবাজীর এ যুগে হীরক খন্ডের চেয়ে মূল্যবান একটা মেয়ের সত্যিকার ভালোবাসা।অতি ভাগ্যবান কেউ কেউ সেই অমূল্য জিনিসটা পেয়ে যায়।মেয়েরা খুব সহজে কাউকে মন থেকে ভালো বাসে না। আর যদি একবার ভালোবেসেই ফেলে, তাকে আটকে রাখে একদম বুকের ভিতরে, কিছুতেই দেয় না হারিয়ে যেতে।কেউ আসলে পারেও না তখন হারাতে!