লেখাঃKhyrun Nesa Ripa

পর্বঃ১

সেই কতক্ষণ থেকে সালেহা ঈশা,ঈশা করে হাকডাক করে চলেছে।
_ঈশা, এই ঈশা
সালেহার ডাক শুনে দৌঁড়ে মায়ের রুমে আসলো ঈশা।
_হ্যাঁ….. মা ডাকছিলে?
_আসছে আমার নবাব নন্দিনী!কতক্ষণ পর্যন্ত ডেকে ডেকে হয়রান হয়ে গেছি আর এখন এসে বলছে মা ডাকছিলে(ব্যঙ্গ করে বললো)
_মা আমি শুনতে পাইনি(মাথা নিচু করে বললো)
_তা শুনতে পাবে কেন?সারাক্ষণই তো খালি ফাঁকিবাজি।রান্না কতদূর এগুলো?
_হয়ে এসেছে এখন খালি ডিম ভাজাটা বাকি আছে।
_ওহ্।তাড়াতাড়ি করে ফেল।তোর বাবা আবার একটু বাদেই দোকানে যাবে।ভাত দিতে হবে তো।
_মা এখনো ডালটা ভালভাবে ফোটেনি।
_তাহলে বললি কেন ডিম ভাজা বাকি?
_নিশ্চুপ(ঈশা)
_তাড়াতাড়ি যা আমার সামনে থেকে।এমন সংয়ের মত দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
_মা একটা কথা বলার ছিল।(ভয়ে ভয়ে)
_হু।
_মা আজ তো আমার কলেজের প্রথম দিন।আর এখন ঘড়িতে নয়টা বাজে। যদি এশা একটু হেঁসেলটা সামলাতো তাহলে আমি কলেজে যেতে পারতাম(বেশ মিইয়ে গিয়ে কথাগুলো বললো)
ঈশার এমন কথা শুনেই ক্ষেপে গেল সালেহা।বাজে মুখভঙ্গি করেই বলতে শুরু করলো,
_তোর সাহস হয় কী করে? আমার মেয়েকে দিয়ে কাজ করানোর কথা বলার।মুখ ভেঙ্গে দেব।কথায় কথায় সব কাজে এশাকে কেন ডাকিস তুই।ও কী তোর মত গতর খাটবে নাকি?
ঈশা আর কোন রা’কাটলো না। মায়ের বলা প্রতিটা কথায় কলিজায় আঘাত লাগলো ঈশার।তাড়াতাড়ি মায়ের রুম ছেড়ে পা বাড়ালো রান্নাঘরের দিকে।ওড়নায় চোখের পানি মুছছে আর পেয়াজ কুচি করছে।পেয়াজের রস আর কান্নার পানিগুলো মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল।কেউ দেখলে বুঝবে এটা নিশ্চই পেয়াজ কাঁটার জন্য হয়েছে।তখনি ওমর(ছোট ভাই) এসে ঈশার চোখের পানি মুছে দিতে লাগলো।ঈশা অবাক হয়ে ভাইর দিকে তাকিয়ে রইলো।
_আপু তুই কাঁদিস না।তুই কাঁদলে আমার খুব কষ্ট হয়।মা আমাকে আর এশা আপুকে কত্ত ভালবাসে। কিন্তু তোকে কেন মা সহ্য করতে পারে না?
ঈশা ভাইকে জড়িয়ে ধরে বললো,
_যাহ্ পাগল!কে বলেছে তোকে?মা আমাকে ভালবাসে না।মা সবাইকেই ভালবাসে।
_তুই মিথ্যে বলিস না আমাকে।আমি সবই বুঝি।ছোট হতে পারি কিন্তু এতটুকু বুঝবো না এমনটাও না(ওমর)
_ওরে আমার বুঝদার ভাইরে, তোমাকে আর বুঝতে হবে না।এখন যাও পড়তে বস।
_হু।তোর তো খালি এই এক কথা সারাদিন খালি পড়তে বস।কথাগুলো বলেই গাল ফুলিয়ে চলে গেল ওমর।ঈশা ওমরের এমন গাল ফুলানো দেখে মিটিমিটি হাসছে আর ডিম ভাজছে।
এই বাড়িতে এই একজন মানুষের কারণেই একটু হলেও ঠোঁটে হাসি ফোঁটে ঈশার আর সেটা হল ওমর।ওমর সবেমাত্র ক্লাস ফাইভে পড়ে।মাঝে মাঝে এমন কথাবার্তা বলে মনে হয় যেন কত বেশিই বয়স তার।বয়সের তুলনায় একটু বেশিই পাকা ওমর। খুব ভালবাসে ঈশাকে এই দশ বছরের ছোট ওমরটা!ঈশাও ভাই অন্ত প্রাণ!
মা, ওমা (মিলি)
মিলির ডাকে রাবেয়া রান্নাঘর ছেড়ে এসে বললো,
_এমন ডাকাডাকি করছিস কেন?বাড়িতে কী ডাকাত পরেছে নাকি?
_উফ মা তুমিও না।বড় মা কোথায়?
_তোর বড় মাও রান্নাঘরে (রাবেয়া)
মিলি দৌঁড়ে চলে গেল রান্নাঘরে,
_বড় মা,ও বড় মা?
_কিরে কী হয়েছে তোর আবার?আজ এমন মধুর কণ্ঠে বড় মাকে ডাকা হচ্ছে?
_তুমি এভাবে বলতে পারলে?(নাক ফুলিয়ে)
_হইছে আর নাক ফোলাতে হবে না।এখন কী বলবে বলে ফেল।
_দেখো না তোমার ছেলেকে কতবার করে বলছি আমি কেক বানাবো। কেক বানানোর ইনগ্রিডিয়েন্স গুলো এনে দিতে, দিচ্ছেই না।সেই কতদিন যাবৎ বলে যাচ্ছি,শুনছেই না।কাল আমার এক ফ্রেন্ডের বার্থডে। আমি চাইছিলাম নিজে হাতে কেক বানিয়ে নিয়ে ওকে সারপ্রাইজ দেব।কিন্তু এই পাজি ঈশানটা আমার কোন কথাই শুনছে না।তুমি একটু বলে দাও ওকে।
_না বাবা তোমাদের ভাই-বোনের ব্যাপারে আমি নাই। তুমিই ওকে বুঝিয়ে বল!(রেহানা)
_ধ্যাৎ….ভাল্লাগেনা।
বলেই গজগজ করতে করতে ঈশানের রুমে আসলো মিলি!
ঈশান খাটের মাঝখানটায় শুয়ে এক পায়ের ওপর আর এক পা তুলে নাচাচ্ছে আর ফোনে লাউড দিয়ে গান শুনে যাচ্ছে,
কথা হবে, দেখা হবে,প্রেমে প্রেমে মেলা হবে
কাছে আসাআসি আর হবে না।
চোখে চোখে কথা হবে,ঠোঁটে ঠোঁট নাড়া দেবে
ভালবাসাবাসি আর হবে না
শত রাত জাগা হবে,থালে ভাত জমা রবে
খাওয়া-দাওয়া কিছু মজা হবে না।
হুট করে ফিরে এসে, লুট করে নিয়ে যাবে
এই মন ভেঙ্গে যাবে জানো না
আমার এই বাজে স্বভাব, কোনদিন যাবে না
ভুলভাল ভালবাসি,কান্নায় কাছে আসি
ঘৃণা হয়ে চলে যাই,থাকিনা
কথা বলি একা একা,সেধে এসে খেয়ে ছ্যাঁকা
কেন গালে তাওয়া বাড় বুঝিনা
খুব কাল কোন কোনে,গান শোনাবো গোপনে
দেখো যেন আর কেউ শোনে না
গান গেয়ে চলে যাব,বদনাম হয়ে যাব
সুনাম তোমার হবে হোকনা
আমার এই বাজে স্বভাব কোনদিন যাবেনা।
যদি তুমি ভালবাসো, ভাল করে ভেবে এসো
খেলে ধরা কোনখানে রবে না
আমি পড়ে দিলে ছুঁয়ে,অকালেই যাবে ঝড়ে
গলে যাবে যে,বরফ গলে না
আমি গলা বেচে খাব,কানের আশেপাশে রবো
ঠোঁটে ঠোঁট রেখে কথা হবে না
কারও একদিন হব,কারও একরাত হব
এর বেশি কারও রুচি হবে না।
আমার এই বাজে স্বভাব কোনদিন যাবেনা।
মিলি কোমরে দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে ঈশানের দিকে রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই বুঝি ভষ্ম করে দেবে।কিন্তু মিলির এই রাগ কে দেখে!যাকে দেখাচ্ছে সে তো গান শুনতেই ব্যস্ত তার সাথে পাল্লা দিয়ে পা নাড়ানো।মিলি অনেকক্ষণ এভাবে রাগ দেখানোর পরেও যখন দেখলে ঈশানের সেদিকে কোন খেয়ালই নেই।তখন মিলি গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে গানটা বন্ধ করে দিল।আর ওমনি ঈশানের পা নাড়ানোও থেমে গেল।
_এই তুই গানটা বন্ধ করলি কেন?
_বেশ করেছি বন্ধ করেছি।তুই এখনি যা কেক বানানোর সমস্ত উপকরণ গুলো নিয়ে আয়।(মিলি)
ঈশান বিছানার ওপর হামাগুড়ি দিতে দিতে বললো,
_এখন পারবো না।সর ভাগ এখান থেকে।
_দেখ ভাইয়া, ভাল হবে না বলে দিলাম।
_খারাপটা কী হবে শুনি?(ঈশান)
_প্লিজ ভাইয়া যা রে।
_বিকালে এনে দেব।
_তুই খুব খারাপ।একটাও কথা শুনিস না আমার। রিসান ভাইয়া থাকলে ঠিক এনে দিতো।
_তো যা না।তোর রিসান ভাইয়াকে বল।ঢাকা থেকে এসে তোর সবকিছু এনে দেবে।
_না। তুইও আমার ভাল ভাই।বিকালে না এক্ষুনি যাবি তুই।(মিলি)
_সত্যিই আজ বিকেলে এনে দেব।কী কী লাগবে বল?
_কোকো পাউডার,ভ্যানিলা এসেন্স।
_আর কিছুনা?
_না।আর সবকিছু বাসায় আছে।
_তাহলে তো হয়েই গেল।এই দু’ইটা বিকালে এনে দেব।(ঈশান)
_আজ না তোর কলেজের প্রথম দিন?
_হু।
_তো আজ যাবি না?
_না(ঈশান)
_এটা কোন কথা হল?আজ কলেজের প্রথম দিন অথচ আজই যাবি না। তুই মানুষ?(মিলি)
_হু।আর তোকে কে বললো, কলেজের প্রথম দিন কলেজে যেতেই হয়।
_কেউ বলা লাগবে নাকি।আমি এমনিতেই জানি। ভুলে যাস না আমিও কিন্তু ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি….হু।(মিলি)
_ওরে আমাদের বুড়ি আসছে গো।আচ্ছা যাব এই দুইটার নাম লিখে দে।নয়তো মনে থাকবে না।
ঈশা যখন কলেজে ভর্তি হয়েছিল তখন এসেছিল আবার আজ এসেছে।সব কিছুই অপরিচিত লাগছে।চেনা কোন ফ্রেন্ডও নেই।সবাই ঈশাকে দেখে আড় চোখে মাথা থেকে পা অব্দি দেখছে।মনে হয় ঈশা কোন ভিনগ্রহ থেকে এসেছে।নয়তো কোন এলিয়েন মনে হচ্ছে সবার ঈশাকে।ঈশারও বড্ড অস্বস্তি লাগছে।সবার চলনবলন,ড্রেসআপ,কথা বলার স্টাইল দেখে নিজেকে এদের সবার মধ্যে খুব বেশিই নগন্য মনে হচ্ছে ।আর হবেই তো। ঈশা তো আর সবার মত নতুন নতুন ড্রেস পড়ে আসেনি।সবার মত স্টাইলের ব্যাগ কাঁধে ঝোলানো নেই।সেই কবের একটা পুরনো বোরকা আর হিজাব পড়ে এসেছে।যখন ইন্টারে ভর্তি হয়েছিল তখন ওর মামা এই বোরকাটা কিনে দিয়েছিল।আর কোন বোরকা তো কিনা হয়নি।তাই এটা পড়েই আসতে হলো।
ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চে গুটিশুটি হয়ে বসে আছে ঈশা।ছেলেমেয়েরা ক্লাসে ঢুকছে, বের হচ্ছে আর আড় চোখে ঈশার দিকে তাকাচ্ছে। খুব বেশিই অস্বস্থি লাগছে ঈশার। একটু বাদেই স্যার ক্লাসে আসলো। সবার সাথে পরিচিত হলো।যখন ঈশার নাম জিজ্ঞেস করে।তখন ঈশা নিজের নামটা বলার সাথে সাথেই সামনে থেকে কয়েকটা ছেলে একটা ছেলেকে টিপ্পনী কাটতে লাগলো।ঈশা একবার আড় চোখে তাকায় সে ছেলেটার দিকে।তখনই ওই ছেলেটার চোখে চোখ পড়ে যায়। আর ওমনি ঈশা চোখটা নামিয়ে নেয়।ঈশার সব ছেলেদের মধ্যে সেই ছেলেটাকেই একটু বেশি ভিন্ন ধাঁচের মনে হল।চুল গুলো কোন স্টাইল ছাড়াই এক পাশে এলিয়ে রয়েছে।গায়ে একটা সাদা কালো চেক শার্ট,তার উপর একটা কালো কোর্ট, পরনে একটা কালো প্যান্ট আর পায়ে একজোড়া দামী স্যান্ডেল। ড্রেসআপ দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ বড়লোক ঘরের ছেলে।তবে যার মধ্যে বর্তমান সময়ের ছেলেদের মত কোন স্টাইল নেই।
আমার একটা অনুরোধ প্লিজ কেউ আমার গল্পগুলো কপি করো না।এত কষ্ট করে গল্প লিখার পর যখন দেখি কেউ একজন নিজের নামে গল্পগুলো চালাচ্ছো তখন সত্যিই খুব খারাপ লাগে।তোমাদের এই মন মানষিকতা গুলো চেঞ্জ কর।এই কপি করার মাধ্যমে এতে করে নিজেদেরকেই ছোট করছো।এসব চুরি বন্ধ করো প্লিজ।
চলবে,,,,,,,,,