তিশা ক্লাসে ঢুকেই দেখে নতুন একটা ছেলে
সামনের দিকে বসে আছে । এর
আগে কখনো তাকে দেখে নি ।
তিশা ছিল খুব দুষ্টু স্বভাবের । নতুন
কাউকে পেলেই তাকে নিয়ে মজা করতো।
তো সেরকম যদি কেউ একজনকে পায়
তাহলে কি আর বসে থাকতে পারে ।
তাই সে মনে মনে ভাবল,, আজকে সে এই
ছেলেকে মুরগি বানাবে ।
তাই ক্লাসে ঢুকেই সেই ছেলের পাশে গিয়ে
বসলো ।
তারপর…..
—–হায় ! (তিশা)
—-??????(চুপ করে বসে আছে ছেলেটি)
—–আমি তিশা ।(খুব ভাব নিয়ে)
—–তো আমি কি করব ।
কথাটা শুনে তিশা পুরাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে
গেল । ও দিকে তার বন্ধুরা মিটমিট করে
হাসছে ।
তারপর ক্লাস শেষে সবাই একজায়গায় বসা ।
তিশার
ফ্রেন্ডরা তিশা কে নিয়ে মজা করছে…..
——তোকে তো ছেলেটা পাত্তাই দিলনা ।
এই
প্রথমবার তোকে কোনো ছেলে গোল
খাইয়ে দিল । আসলে মানতে হবে ছেলেটা…..
——চিৎকার দিয়ে তিশা তার বান্ধুবিদের
কথা মাঝ পথে
থামিয়ে দিল । তারপর তিশা বাসায় চলে
আসল।
রাতে তিশা ঠিক করল এই ছেলেকে শাস্তি
দিবেই ।
তাই পরেরদিন ক্লাসে গিয়েই ছেলেটার
সম্বন্ধে
সব খবর জোগাড় করল ।
ছেলেটার নাম আকাশ । এখানেই ব্যাচেলর
থেকে
পড়াশুনা করে ।
ছেলেটা খুব গরীব ঘরের । পড়াশুনায় অনেক
ভাল
। খারাপ কোনো অভ্যাস নেই ।
আকাশের বিষয়ে এইসব খবর শুনে তিশার মন
অনেক নরম হয়ে যায় । তাই তার উপর
প্রতিশোধের বদলে তাকে ভালবেসে ফেলে
। কিন্তু সমস্যা হল তাকে কিভাবে বলবে । সে
তো তিশার সাথে কথাই বলে না ।
যেভাবেই হোক কথা গুলো বলতে হবে ।
তাই সে আকাশকে খুঁজতে থাকে ।
কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না। তাই সে
অনেক
চিন্তিত হয়ে পরে ।
অবশেষে গিয়ে দেখে আকাশ ক্যাম্পাসের
এক জায়গায় একা একা বসে আছে ।
তাই সে তৎক্ষনাত সেখানে ছুটে চলে
যায় ।
তারপর….
—–তুমি এখানে বসে আছো । আর আমি
তোমাকে সব জায়গায় খুঁজছি। (তিশা)
—–কেন আমাকে খুঁজছ কেন ? আমাকেও কি
মুরগি
বানাবে । (আকাশ)
—– সবসময় আমাকে তোমার এমন মনে
হয় কেন ? আমি অনেক খারাপ তাই না!( খুব
নরম
ভাবে কথাগুলো বলছে তিশা)
—–আসলে ঠিক তা না । তুমি সবসময় এটা
কর তো তাই
। (আকাশ)
—–আচ্ছা এরপর থেকে আমি ভাল হয়ে যাব।
কখনো কারও সাথে এরকম করব না । তবে
একটা
শর্ত
আছে ! (তিশা)
—-কি শর্ত? (আকাশ)
——শর্তটা হল….তোমাকে আমার সাথে
বন্ধুত্ব
করতেহবে । (তিশা)
—–শুধু এই শর্ত । আচ্ছা ঠিকআাছে ।
(আকাশ)
—–তাহলে আজকে থেকে আমরা বন্ধু ।
(তিশা)
—–আচ্ছা ।(আকাশ)
.
তারপর থেকে বন্ধুত্ব শুরু । তিশা তারপর
থেকে
আর কাউকে নিয়ে মজা করেনা । তিশার
বান্ধুবিরা তো
তিশার আচরনে পুরাই মুগ্ধ । আর এদিকে
তিশারও যে
আর অপেক্ষা সইছে না । তাই সে রাতে ফোন
দেয় আকাশের কাছে ।
—-হ্যালো আকাশ । (তিশা)
—–হ্যাঁ তিশা বল । কিছু হয়েছে ? এত রাতে
ফোন
করছ কেন । (আকাশ)
—–না তেমন কিছু না । তুমি কি কাল
বিকালে আমার
সাথে দেখা করতে পারবে । (তিশা)
—–হ্যাঁ পারব । কিন্তু কেন? (আকাশ)
—–তা দেখা হওয়ার পরই বলব । (তিশা)
—-আচ্ছা ঠিকআছে । (আকাশ)
—–আর হ্যা শোনো । তোমার কি কোনো
নীল পাঞ্জাবী আছে? (তিশা)
—–হ্যাঁ । কিন্তু কেন ? (আকাশ)
—-তুমি সবসময় কেন কেন করো কেন। যা
বলছি
সেটা কর।
কথাগুলো বলেই তিশা ফোনটা কেটে দিল ।
আকাশও বাধ্য ছেলের মত ঠিকানা অনুযায়ী
নীল
পাঞ্জাবী পরে
চলে গেল । কিন্তু আকাশ সেখানে গিয়ে
পুরাই
অবাক হয়ে গেল । কারন আজকে
তার জন্মদিন । আর তিশাকেও অনেক সুন্দর
লাগছে
। সেও একটা নীল শাড়ি পরে এসেছে ।
যাইহোক তারপর তারা কেক কেটে অনেক
আনন্দ করলো ।
তারপর……
দুজনেই বসে আছে একটা বেঞ্চের উপর ।
কেউ কোনো কথা বলছে না।
তারপর…
—–আচ্ছা আকাশ তুমি কি কখনো কাউকে
ভালবেসেছ । (তিশা)
—–না । এখন পর্যন্ত কাউকে ভালবাসিনি ।
কিন্তু হঠাৎ
একথা কেন? (আকাশ)
—– আমি আজকে তোমার কাছে একটা
জিনিস
চাইবো,,,, দিবে ! (তিশা)
—-কি জিনিস? (আকাশ)
—-আগে বল দিবে কি না ? (তিশা)
—-আচ্ছা দিব । এখন বল । (আকাশ)
—–তুমি কি আমাকে ভালবাসতে পারবে….!
(তিশা)
—-আকাশ কথাটা শুনে হতভম্ব হয়ে গেল ।
কিছুই
বলতে পারছে না । শুধু মনে মনে ভাবছে কি
বলবে তিশাকে !
তারপর…..
—–কি কিছু বলছ না কেন ? কিছু তো একটা
বল !
(তিশা)
—-দেখ তিশা,,,,তুমি অনেক ধনী ঘরের
মেয়ে ।
আর আমি…… আমার সম্পর্কে তুমি কিছুই জান
না ।
আমি একটা এতিম । আমার বাবা মা নেই ।
আমি আমার চাচার
কাছে
মানুষ হয়েছি । এটা অসম্ভব । তুমি আমাকে
ভুলে যাও
। (আকাশ)
—–তোমাকে ভুলে যাওয়ার জন্য
ভালবাসিনি। তোমার
যদি কেউই না থাকে তারপরও আমি
তোমাকে
ভালবাসব। বিনিময়ে শুধু তুমি একটু ভালবাসা
দিও । (চোখ
দিয়ে অশ্রু জড়ছে আর কথা গুলো বলছে
তিশা)
অতঃপর আকাশ কিছু না বলেই তিশাকে
জড়িয়ে ধরেছে । তিশাও আকাশকে শক্ত করে
জড়িয়ে ধরেছে । তিশা অনেক কাঁন্না করছে

এভাবে চলতে থাকে তাদের ভালবাসা । কেউ
কাউকে ছাড়া থাকতে পারে না । রাতে
কেউ কারও
সাথে কথা না বলে ঘুমাতে পারে না । কখনো
একটু
খুনসুটি আবার কখনো একটু অভিমান…!
এভাবেই
সামনে অগ্রসর হতে থাকে তাদের ভালবাসা

.
কিছুদিন ধরে তিশা ক্যাম্পাসে আসে না ।
কোথাও
দেখাও করতে আসে না । ফোন সুইচঅফ ।
তিশার
বান্ধুবিরাও কিছু বলতে পারে না । সে জন্য
আকাশ
অনেক চিন্তিত হয়ে পরে ।
প্রতিদিনের মত আজও আকাশ তিশাকে ফোন
দিয়ে
যাচ্ছে । কিন্তু আজকে ফোনটা খোলা
পেয়েছে । তবে রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ ধরছে
না । অতঃপর কে যেন ফোনটা রিসিব করলো
আর
বলল এই ফোনে যেন আর কখনো কল
না দেয় । কারন তিশার নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে
গেছে ।
কথাটা শোনা মাত্রই আকাশের হাতটা থেকে
ফোনটা পরে গেছে । কারন এই
কথার জন্য আকাশ মোটেও প্রস্তুত ছিল না ।
আকাশ বসে বসে চোখের পানি ফেলছে আর
তিশার ছবি গুলো একের পর এক দেখছে ।
ওদিকে তিশাও অনেক কাঁন্না করছে । কারন
তার
সামনে বসেই তার এক বান্ধুবিকে দিয়ে সে
এই
কথা গুলো বলিয়েছে । কারন তার কিছু করার
ছিল
না । তার পরিবারের সম্মানের জন্যই তাকে
এই
বিয়েতে রাজি হতে হয়েছে ।
.
কালকে তার বিয়ে সেই জন্য সে তার রুমের
মধ্যে বসে অনেক কাঁন্না করছে । এমন সময়
তার
বাবার উপস্থিতির কারনে তাড়াতাড়ি
চোখের পানি মুছে
তার বাবাকে বলল…..
—-কিছু বলবে বাবা! (তিশা)
—-হ্যাঁ। আগে বল তুই কাঁন্না করছিলি কেন ?
—–কই। না তো,,, চোখে ময়লা গিয়েছিল
তাই
চোখ দিয়ে পানি পরছে ।
—-আচ্ছা তুই কাউকে ভালবাসিস ? সত্যি
করে বল মা ।
——তিশা কাঁন্না করতে করতে বলল…হ্যা
বাবা । আমি
একজনকে অনেক ভালবাসি । ওর নাম আকাশ।
আকাশ
আমাকে তার নিজের থেকেও ভালবাসে ।
হয়তো
আমার বিয়ের কথা শুনেকষ্টে হয়ত কোনো
রাস্তার বাকে পরে আছে । না হয় কোনো
সিগারেটের আগুনে নিজেকে পুড়িয়ে
ফেলছে
। আবার না হয় নিজের রুমে বসে আমার জন্য
চোখের পানি ফেলছে ।
ও আমাকে অনেক ভালবাসে। আমি ছাড়া ওর
কেউ
নেই বাবা। আমি ছাড়া ও বড়ই একা বাবা ।
কথাগুলো বলে কাঁন্না করতে করতে তিশা
তার
বাবাকে জড়িয়ে ধরে ।
তারপর তার বাবা বলল….
—-মা তুই কাঁন্না থামা। তোর মনটা সত্যিই
মহান। তুই
নিজের ভালবাসাকে মাটি দিয়ে আমাদের
সম্মানের
কথা ভেবেছিস । আজকে আমি বলছি তুই
যাকে
ভালবাসিস তার কাছে যা। (কথা গুলো বলতে
বলতে
তিশার বাবাও কেঁদে ফেলছে।
তারপর সেই রাতেই তিশা আকাশের কাছে
চলে যায়
। গিয়ে দেখে আকাশ চোখের পানি ফেলছে
আর তাদের তোলা ছবি গুলো দেখছে ।
তিশাকে
দেখে আকাশ তার সামনে চলে আসে । তিশা
আকাশকে জড়িয়ে ধরেছে আর বলছে
তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি আর
কখনো এরকম হবে না। আমাকে ক্ষমা করে
দাও।
(কথাগুলো বলছে আর কাঁন্না করছে তিশা)
তারপর আকাশও তিশাকে শক্ত করে জড়িয়ে
ধরেছে । আর দুজনেই অজোড়ে কাঁন্না করছে

.
এরপর তাদের বিয়ের মাধ্যমে পূর্নতা লাভ
করে
তাদের ভালবাসা……..
.
.
.
(পরিশিষ্ট : যদি সবার বাবাই এরকম থাকত
তাহলে কারও
ভালবাসাকেই মাটি চাপা দিতে হত না।
আবার কাউকে
হয়তো নিজের জীবনও শেষ করতে হত না।
পৃথিবীতে সবসময় ভালবাসা বিরাজমান
থাকত ।)