বড়লোকের মেয়েকে ভুলিয়ে ভালিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছি প্রায় চার মাস হল। মেয়েটির নাম সাদিয়া। খুবই ইনোসেন্ট মেয়ে…
ছোটবেলায় সিনেমায় দেখেছি চৌধুরী সাহেবের মেয়ের সাথে প্রেম করলে এক পর্যায়ে চৌধুরী সাহেব মেয়ের প্রেমিকের সামনে এক ব্রিফকেস টাকা দিয়ে বলে, বল কোনটা চাস? আমার মেয়ে? নাকি টাকা?
আমিও বিশ্বাস করি একদিন সাদিয়ার বাবা জাফরুল্লাহ চৌধুরী আমাকে এই ধরণের একটা অফার করবে। আর আমি সাথে সাথে বলবো, “স্যার টেহা চাই টেহা চাই!” কিন্তু গত চার মাস হল সাদিয়ার সাথে প্রেম করছি অথচ জাফরুল্লাহ চৌধুরী খবর ই পেল না। আফসোস, বড়ই আফসোস…
বিকেল ৫ টাই সাদিয়াকে পার্কে আসতে বলে আমি আগে থেকেই পার্কে এসে বসে আছি। অপেক্ষা করতে করতে সাদিয়া চলে আসলো,
– সরি! একটু দেরি হয়ে গেল।
– ইটস ওকে সাদিয়া।
– আজ আমার আগেই এসে বসে আছো, ঘটনা কি?
– ঘটনা কিছুনা, আচ্ছা সাদিয়া, এই যে আমি আর তুমি গত চারমাস হল প্রেম করি, এইটা কি তোমার বাবা জানে না?
– না। আব্বু জানলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে। না জানা’ই ভালো।
– তার জানাটা খুবই জরুরী সাদিয়া?
– মানে?
– না মানে কিছুনা। চলো আজ উঠি। ভালো লাগছে না।
সাদিয়াকে রিকশায় উঠিয়ে দিলাম। সাদিয়া চলে গেল। আমি সরাসরি জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অফিসের নিচে গেলাম। অফিসের গেইটের দাড়ওয়ানকে বললাম- তোমাদের বসের নাম্বারটা দাও?
– বসের নাম্বার দেওয়া যাইবো না।
– এই দুই টাকার দাড়ওয়ান, তুমি জানো আমি কে?
– না জানিনা, আপনে কেডা ভাই?
– আমি ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগের নাম শুনে দাড়ওয়ান কাঁপতে কাঁপতে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নাম্বারটা দিয়ে দিল। আজকাল নিজেকে ছাত্রলীগ দাবী করে অনেক মানুষকেই ভয় দেখাচ্ছি। হা হা হা।
রাতে বাসায় এসে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নাম্বারে দিলাম একটা কল। রিসিভ করলো না। দ্বিতীয় বার আবার কল দিলাম।
– হ্যালো কে?
– আমি কে সেটা জেনে লাভ নেই, আপনাকে একটা ইনফরমেশন দেওয়ার জন্য ফোন করেছি।
– কি ইনফরমেশন?
– আপনার মেয়ে যে দুই টাকার এক বস্তির ছেলের সাথে লুতুপুতু করে সেই খবর কি রাখেন?
– কিহ এতো বড় কথা।
দিলাম ফোনটা কেটে। এইবার কাজ না হয়ে যাবে কোথায়। পরেরদিন সকালে ঘুম না ভাঙতে ই সাদিয়া ফোন করে জানালো, সাদিয়ার আব্বু নাকি আমাকে তার বাসায় ডেকেছে। আমি তো মনে মনে খুব বেশি। রেডি হয়ে সোজা সাদিয়াদের বাসায় চলে গেলাম।
সোফার উপরে বসে আছি। আরেক পাশে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বসে আছে। আমাদের থেকে একটু দূরে সাদিয়া দাড়িয়ে আছে। জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাদিয়াকে বললো, “যা তো মা একটু চা করে নিয়ে আয় অনেক দিন তোর হাতের চা খাই না!”
আমি বুঝতে পারছি মেয়েকে পাঠিয়ে দেওয়ার কারণ হল, জাফরুল্লাহ চৌধুরী এখন আমাকে অফার করবে। টাকার অফার। জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলে উঠলো,
– এই ছেলে তোমার বাসা কোথায়?
– জ্বি, মহাখালী বস্তিতে ( মিথ্যা )
– তোমার বাবা কি করে?
– আগে রিকশা চালাইতো, এখন গাঁজা খায়। ( আবার মিথ্যা )
– তোর মতো ছোটলোকের সাহস কি করে হল, আমার মেয়ের সাথে প্রেম করার?😠
– (সিনেমায় ডায়লগ মনে পড়ে গেল) চৌধুরী সাহেব, ভালবাসতে সাহস লাগে না, মন লাগে মন।
– তুই জানিস আমার মেয়ের প্রতি মাসে হাত খরচ কতো?
– হাত খরচ জাইনা আমার কি লাভ, আমি তো তিনবেলা ভাত ই পাই না।
আমার কথা শুনে জাফরুল্লাহ চৌধুরী রেগে গেল। তারপর টেবিলের উপর থেকে বিটকেসটা নিয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি তো বুঝে ফেলছি, জাফরুল্লাহ চৌধুরী এখন আমাকে অফার করবে। ভাবলাম একটু ভং ধরতে হবে। আমি বললাম,
– চৌধুরী সাহেব, টাকা দিয়ে এই মাহিমের ভালবাসা কিনতে পারবেন না। আমরা গরীব হতে পারি, কিন্তু ছোটলোক না।
এই কথা শুনে জাফরুল্লাহ চৌধুরী হাসতে হাসতে বললো, কে আবার তোকে টাকা দিচ্ছে? এইটা খালি ব্রিফকেস। আমি তোকে এই খালি ব্রিফকেসটা দিচ্ছি। যেদিন এই ব্রিফকেস ভর্তি টাকা ইনকাম করে আমার সামনে আসতে পারবি, সেদিন তোর সাথে সাদিয়ার বিয়ে দিবো!
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কথা শুনে দিনে দুপুরে আমার মাথার উপরে ঠাডা পড়লো। আমি সাদিয়াদের বাসা থেকে বেড়িয়ে এলাম।
এই মুহুর্তে আমি রাস্তায় দাড়িয়ে আছি। আমার হাতে ব্রিফকেস। ফাঁকা ব্রিফকেস। ব্রিফকেসের দিকে তাকাচ্ছি আর ভাবছি, শালা এ যুগের চৌধুরীরা এতো ছোটলোক কেন? বাংলা সিনেমার সেই ঐতিহ্যবাহী চৌধুরীরা কোথায় হারালো? কোথায়?