সকাল সকাল আব্বুর বকানি খেয়ে চাকরীর
ইন্টার্ভিউ দিতে বের হলাম।না জানি আজ কপালে
কি আছে।তবে আমি নিশ্চিত জবের জন্য আমি
সিলেক্ট হবো না।কারণ আগেও প্রায় ১০জায়গায়
ইন্টার্ভিউ দিয়েছি।আর প্রতিবারই ফলাফল এসেছে
আমি সিলেক্ট হয়নি।এটা নিয়ে আমার যে মাথা
ব্যথা তার থেকেও আব্বুর মাথা ব্যথা বেশী।
সব সময় শুধু কথা শুনাবে।চাকরীতে আমি সিলেক্ট
হয়না সেটা কি আমার দোষ।সে যায় হোক আজ।
এখন আমার পরিচয় দেয়া যাক,আমি সোহানুর রহমান ।বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। আর
শুনতে হবে না।আস্তে আস্তে সব জানতে পারবেন।
ইন্টার্ভিউ রুমের বাইরে বসে আছি এমন সময়
একজন আমাকে ভিতরে যেতে বললেন।আর
বসে না থেকে রুমে গেলাম….
আমিঃস্যার আসবো?
কথাটি বলে ভিতরে থাকা মানুষ টাকে দেখে
নিজের কলিজা কেপে উঠলো। কারণ সামনে
আসমা। আসমাকে দেখে পা-টা কাঁপতে শুরু
করে দিছে।
শামিমঃ এই যে মি. আপনি কি ভিতরে আসবেন
নাকি ওখান থেকে চলে যাবেন?
আমিঃ ইয়ে মানে….
শামিমঃ কি মানে মানে করছেন।ইচ্ছা না থাকলে
চলে যেতে পারেন
কথাটি শুনে মন চাইছে সালাকে ইচ্ছামতো পিটাই
কিন্তু আব্বুর জন্য কিছু বলতে পারছি না।
আর কোনো কথা না বাড়িয়ে ভিতরে ডুকলাম।
শামিমঃ প্লিজ সিট
আমিঃজ্বি….
আসমাঃ শামিম সাহেব এবং রেজাউল সাহেব
আমি একাই এনার ইন্টার্ভিউ নিবো।সো প্লিজ
আপনারা কোনো কিছু বলবেন না
রেজাউলঃ জ্বি ম্যাডাম
আসমার এমন কথা শুনে হার্টবিট বেরে গেলো।
এখন কি বলে আল্লাহ ভালো জানে।
আসমাঃ সো মি. সোহান এ যাবৎ কতটা ইন্টার্ভিউ দিয়েছেন
আমিঃ মাত্র ১০টা(নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম)
আসমাঃ ১০টা দিছেন সেটাও আবার মাত্র
আমিঃ জ্বি
আসমাঃ আপনার কি এখনো লুচুমি করার অভ্যাস
আছে?
আমিঃ সরি….আমাকে দেখে কি তাই মনে হয়?
আসমাঃ দেখে তো অনেক কিছুই হয়।এখন
বলুন আপনার কি কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে?
আসমার কথা শুনে মন চাইছে সালিকে ধরে
ইচ্ছামতো পিটাই।কখন কি বলতে হয় এটাও
হয়তো জানে না।
আসমাঃ কি হলো কথা বলছেন না কেনো?
আমিঃ জ্বি মানে ছিলো বাট এখন নাই
আসমাঃ কেনো…সময় শেষ তাই?
আমিঃ না তবে তার বাপের অনেক টাকা যার
জন্য অনেক অহংকার ছিলো।তাই ছেড়ে দিছি
আসমাঃ কি বললি তুই…আমি অহংকার করতাম
আমিঃ আরে আপনি রাগ করছেন কেনো?আমি
কি আপনাকে বলছি নাকি
শামিমঃ ম্যাডাম ওনি তো অন্য কারোর কথা বলছেন
আসমাঃ ওকে আমি সরি।এখন আপনি যেতে পারেন
আমিঃ ঠিক আছে।তবে ম্যাডাম আপনি আগের থেকে
অনেক কিউট হয়েছেন।
আসমাঃ কেনো আগে কি খারাপ দেখতে ছিলাম
আমিঃ শুধু খারাপ না। একদম পেত্নী…
আর কিছু না বলে দৌড়ে বাইরে চলে এলাম।
থাকলে না জানি পেত্নী সালি আমার ঘাড় মটকাতো
বাইরে বের হয়ে হাটতে লাগলাম।আমি জানি
এই জবটাও হবে না।আর অফিসে যে আসমার
সম্পর্কে বললাম অহংকারী আর পেত্নী সেটা
একদম ডাহামিথ্যে কথা।অহংকার জিনিষটা
আসলে কি আসমা নিজে আধও জানে কি না
সন্দেহ। ওর বাবার এতো টাকা থাকার পরেও
ভার্সিটি যেত রিক্সা করে।আর আমি যে একটা
ফকির। যাকে কিনা কোনো কিছুই গিফট করতে
পারিনি।তবে আসমার এগুলো নিয়ে মাথা
ব্যথা ছিলো না।বরং সে নিজেই আমাকে পকেট
খরজের টাকা দিতো।আর পেত্নীটা…আসমাকে
দেখলে পরিরাও হিংসা করবে।নীল শাড়ি,খোলা
চুল,হাতে ভিন্নরকম চুড়ি আর কপালে ছোট একটা
টিপ ব্যাস যে কেউ ওকে দেখে ফিদা হয়ে যেতে
পারবে।
সে যায় হোক এসব ভেবে আর লাভ নাই।আমি
জানি এই জব আর হবে না।বাসায় গিয়ে ফ্রেস
হয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।
রাতে…..
খেয়ে দেয়ে ফেসবুকিং করছি এমন সময়
একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলো…
আমিঃ আসসালামু আলাইকুম কে বলছেন?
আসমাঃ আমি আসমা তোর Ex
আমিঃ ঐ সালি তুই আবার আমারে কল করছিস কেনো
আসমাঃ হুম করতে হলো।কারণ আমার বাবুটা
এখনো যে চাকরী করে না তাই চাকরী দেয়ার জন্য
কল করলাম।
আমিঃ আমি তোর বাপের চাকরী করতে পারবো না
আসমাঃ কেনো পারবে না?
আমিঃ এমনি পারবোনা রাখ তুই
আসমাকে কিছু বলতে না দিয়ে কেটে দিলাম।
আর হ্যা ওকে আমি তুই করে বললাম। এটারও
কারণ আছে।আমি চাইনা আমার মতো বেকারকে
আসমা ভালোবাসুক। মাঝে মাঝেই আসমাকে
মনে পড়তো। তখন অনিচ্ছা সত্বেও চোখ দিয়ে
জল গড়িয়ে পড়তো।মেয়েটার সাথে সব সময়
খারাপ করেছি। আসমাকে ভালোবাসার কথা
আমিই প্রথম বলে ছিলাম।আবার ব্রেকআপটাও
আমিই করেছিলাম।আমি চাইনা আমার জন্য
ওর জীবনটা নষ্ট হয়ে যাক।আর কিছু না ভেবে
সেদিনের মতো ঘুমিয়ে গেলাম।
পরেরদিন…..
সকালের নাস্তা করার পর আড্ডা দেয়ার জন্য
বাসা থেকে বের হলাম।
জয়ঃ কিরে আজ এতো সকাল সকাল
আমিঃ নারে এমনি।আর বাসায় থাকতেও ভালো
লাগে না।সব সময় আব্বুর চাকরী নিয়ে কথা
বলা ভালো লাগে না
জয়ঃ শুধু কি তুই একাই শুনিস আমি শুনি না
আমিঃ তবে আব্বু ঠিকি বলে।আর কতোদিন
এভাবে চলবে
জয়ঃ ঠিক আছে এসব বাদ দে।রাহুল সিগারেট দে
রাহুলঃ কেনো?
জয়ঃ আরে সালা খাবো।
রাহুলঃ কিন্তু সোহান…!
আমিঃ আজ আমিও খাবো
কথাটি বলার পর ওদের দুজনের দিকে তাকাতেই
মনে হলো ভুত দেখার মতো আতকে উঠেছে।
আমিঃ কি হলো,,, এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?
রাহুলঃ ভাই আপনি কি সোহান?
আমিঃ না তোর দুলাভাই দে সিগারেট দে
জয়ঃ সোহান পাগল হয়ে গেছিস নাকি।
আমিঃ না তবে তোরা সিগারেট না দিলে পাগল হবো
একপ্রকার জোর করেই ওদের থেকে সিগারেট
নিয়ে খেতে লাগলাম।কখনো সিগারেট খাইনি
তবে আজ কেনো এটাই ভালো লাগছে।ওদের
সাথে আরো কিছু সময় আড্ডা দিয়ে বাসায়
চলে এলাম।
বাসায় এসে গোসল করে রুমে বসে আছি এমন
সময় আব্বু রুমে আসলো….
আব্বুঃ সোহান তোর চাকরীর কি হলো
আমিঃ জানিনা।
আব্বুঃ তোমাকে কল দেয় নি
আমিঃ না
আব্বুঃ একদম মিথ্যা বলবে না।অফিসের বস
আজ বাসায় এসেছিলো
আমিঃ মা…মা..মানে?
আব্বুঃ তোমার এতো মানে মানে করতে হবে না।
কাল থেকে তোমার জয়েনিং।
আমিঃ কিন্তু আব্বু আমি এই জব করতে পারবো না
আব্বুঃ দেখো সোহান আমি আর কতোদিন এভাবে
সংসার চালাবো।এবার না হয় তুমি কিছু করো।
জানিনা তোমার এই জবটা করতে কি সমস্যা।
আর জানতেও চাই না তবুও তুমি এই জবটা করো
নিজের জন্য না হলেও আমাদের জন্য করো।
আব্বুর মুখের উপর আর কিছু বলতে পাড়লাম না।
তাই রাজি হয়ে গেলাম।তবে যতোটা সম্ভব আসমাকে
এড়িয়ে চলতে হবে।
পরেরদিন…
অফিসের জন্য রেডি হচ্ছি এমন সময় আব্বু এবং
আম্মু রুমে এলো।
আমিঃ কিছু বলবে?
আম্মুঃ না। তবে মন দিয়ে কাজ করবি।
আমিঃ হুম।
আর কোনো কথা না বলে সকালের নাস্তা করে
আব্বু আম্মুকে বিদায় দিয়ে অফিসের জন্য রওনা
দিলাম।প্রায় ৩০মিনিট পর অফিসে এলাম।
চারদিকে একবার চোখ ভুলিয়ে দেখতে লাগলাম।
এমন সময় পিয়ন এসে বলল….
পিয়নঃ আপনি কি সোহান?
আমিঃ জ্বি।
পিয়নঃ ম্যাডাম আপনাকে তার কেবিনে যেতে
বলেছেন….
আমিঃ ঠিক আছে যাচ্ছি।
সেখানে আর দাঁড়িয়ে না থেকে বসের কেবিনে
সামনে এসে দাঁড়ালাম।
আমিঃ ম্যাডাম আসবো?
আসমাঃ হুম আসুন।বসুন এখানে
আমিঃ ধন্যবাদ।
আসমাঃ সোহান আমাকে কি আবার আপন করে
নেয়া যায় না?
আমিঃ সরি।আর এখানে এসব না বললে খুশি
হবো।
আসমাঃ কেনো?
আমিঃ কারণ আপনি আমার বস।আর আমি
সাধারণ কর্মচারী।
আসমাঃ কিন্তু সোহান আমি….(থামিয়ে দিয়ে)
আমিঃ আসমা প্লিজ আমাকে এমন কিছু বলো না।
যেনো এই জবটা ছেড়ে দিতে আমি বাধ্য হয়
আসমাঃ ঠিক আছে আর বলবো না।আমি পিয়নকে
বলে দিচ্ছি তোমাকে তোমার কাজ বুঝিয়ে দিবে
আমিঃ ধন্যবাদ।
আর বসে না থেকে বাইরে চলে এলাম।তারপর
পিয়ন এসে আমার কেবিন আর কাজ বুঝিয়ে
দিয়ে গেলো।প্রথম দিন তাই তেমন কোনো কাজ
ছিলো না।কয়েক জনের সাথে পরিচয় হয়ে নিলাম।
তেমন কোনো কাজ নেই তাই ম্যাডামের রুমে গেলাম..
আমিঃ ম্যাডাম আসবো
আসমাঃ হুম আসো।আর কখনো আসার জন্য
পারমিশন নিতে হবে না।যখন ইচ্ছা তখন আসবে।
আর বলো কি হয়েছে?
আমিঃ হাতে তেমন কোনো কাজ নেই তাই ভাবছি
বাসায় চলে যাবো।
আসমাঃ ওহ। ঠিক আছে সাবধানে যেও
আমিঃ ঠিক আছে
ম্যাডামের রুমে থেকে বের হয়ে কেবিনে থাকা
ব্যাগ নিয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।
বাসায় এসে আম্মুর সাথে একটু কথা বলে রুমে
গেলাম।এরই মাঝে দুদিন চলে গেলো।

পিয়নঃ স্যার আপনাকে ম্যাডাম তার কেবিনে ডেকেছেন
আমিঃ ঠিক আছে।
কেবিনে বসে কাজ করছি এমন পিয়ন এসে
উপরের কথাগুলো বলে গেলো।কিছু বুঝিনা
আমি যতোই আসমাকে এড়িয়ে চলতে চাই
সে ততোই আমার কাছে চলে আসে।
আর কিছু না ভেবে আসমার কেবিনে গেলাম।
আমিঃ ম্যাডাম আসবো?
আসমাঃ ঐ তোমাকে কতোবার বলবো আমার
কেবিনে আসতে তোমার পারমিশন নিতে হবে না
আমিঃ সেটা হয়না ম্যাডাম।
আসমাঃ কেনো হয়না?
আমিঃ কারণ আপনি আমার বস আর আমি
সাধারণ এক কর্মচারী। আর আমাকেই বা
কেনো পারমিশন নিতে হবে না।আরো তো
সবাই আছে তাদের বলুন
আসমাঃ সোহান…তুমি কি আমাকে এখন আর
একটুকু ভালোবাসো না?
আমিঃ কাজের কথা বললে বলুন না হলে
আমি আমার কেবিনে যাবো
আসমাঃ ঠিক আছে যাও
সেখানে আর না থেকে কেবিনে চলে এলাম।
রিয়াঃ কি ব্যাপার মন খারাপ কেনো..কিছু হয়েছে?
আমিঃ না, তেমন কিছু না
রিয়াঃ লাঞ্চে ফ্রি আছো?
আমিঃ হুম কেনো?
রিয়াঃ দুজনে একসাথে লাঞ্চ করতাম
আমিঃ ঠিক আছে।
রিয়াঃ হুম আর শোনো একটু হাসিখুশী থাকো
আমিঃ কেনো… এখন কি আমি মন মরা হয়ে থাকি?
রিয়াঃ আরে না।তুমি এতো হ্যান্ডসাম বাট একটু
কম কম হাসো
আমিঃ তা ঠিক আর হাসে কথা বললে যদি তুমি
আমার প্রেমে পড়ে যাও তাহলে?
রিয়াঃ তাহলে কি তোমাকে বিয়ে করে নিবো
আমিঃ………..
আসমাঃ কাজ বাদ দিয়ে এতো হাসাহাসির কি আছে
রিয়াঃ আসলে ম্যাডাম…(থামিয়ে দিয়ে)
আসমাঃ থাক আর বলতে হবে না।এখন কাজ করুন
রিয়াঃ জ্বি।
তারপর আসমা চলে গেলো।আমরাও কথা বাদ
দিয়ে কাজে মন দিলাম।কাজ করতে করতে
কখন দুপুর হয়ে গেছে খেয়ালি করিনি।
রিয়াঃ এই,যে স্যার,আর কতো কাজ করবেন
আমিঃ ওহ তুমি
রিয়াঃ কেনো অন্য কারো আসার কথা ছিলো বুঝি
আমিঃ আসবে আর কি।সেই মানুষটাই আর নেই
রিয়াঃ থাক আর কথা বলতে হবে না।এখন চলো
আমিঃ হুম চলো।
তারপর রিয়ার সাথেই লাঞ্চটা করে নিলাম।
অফিস ছুটির পর বাইরে আসতেই দেখলাম
রিয়া একটা রিক্সাই বসে আছে।
রিয়াঃ বাসায় যাবে না?
আমিঃ হুম যাবো
রিয়াঃ তাহলে আসো
আমিঃ না থাক।আমি যেতে পারবো
রিয়াঃ আরে সমস্যা কি আসো।আর আমি তো
তোমাদের ওখান দিয়েই যাবো
আমিঃ তারপরেও তুমি যাও।আমি অন্য একটা
রিক্সা করে যেতে পারবো
রিয়াঃ আমি কিন্তু রাগ করবো প্লিজ
আমিঃ ঠিক আছে চলো
রিক্সাতে উঠার পর সারাটা রাস্তা দুজনে কথা
বলতে বলতে এলাম।বাসার কাছে এসে
রিয়াকে বিদায় দিয়ে ভিতরে চলে এলাম।
ফ্রেস হয়ে ফোন টিপছি এমন সময় আম্মু আসলো
আম্মুঃ মেয়েটার নাম কি রে?
আমিঃ কোন মেয়ে আম্মু
আম্মুঃ আরে ঐ মেয়ে যার সাথে তুই রিক্সা করে এলি
আমিঃ ওহ,ওর নাম রিয়া।আমার সাথেই কাজ করে
আম্মুঃ মেয়েটা দেখতে কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ
আমিঃ তো আমি কি করবো?
আম্মুঃ তুই চাইলে ওর বাসায় কথা বলে দেখতে পারি
আমিঃ আম্মু তুমি কি পাগল হলে নাকি
আম্মুঃ এখানে পাগল হওয়ার কি আছে
আমিঃ এখন আমি বিয়ে টিয়ে করবো না।
আর আম্মু প্লিজ এটা নিয়ে কিছু বলো না।
রিয়া শুধুই আমার বন্ধু আর কিছু না
আম্মুঃ হতে কতোক্ষণ
আমিঃ আম্মু আমি তোমার পায়ে ধরি তুমি
এখন যাও
আম্মুঃ ঠিক আছে।তবে তুই ভেবে দেখতে পারিস
আম্মু চলে যাওয়ার পর লম্বা একটা নিশ্বাস
ফেললাম।সালার রিক্সা করে আসাও সমস্যা।
এখন থেকে একা একা হেটে আসতে হবে।
সেদিনের মতো আর কিছু না ভেবে খাবার
খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।
অফিসে….
আসমাঃ সোহান,একটা কথা বলি
আমিঃ জ্বি বলুন
আসমাঃ না।আগে তুমি আমাকে তুমি করে বলো
আমিঃ সেটা আমি পারবোনা ম্যাডাম
আসমাঃ কেনো পারবে না
আমিঃ ব্যস পারবোনা
আসমাঃ ঠিক আছে পারতে হবে না।এখন
বলো,বাসায় থেকে কি তোমার জন্য পাত্রী
দেখছেন
আমিঃ দেখুন এগুলো নিতান্ত আমার পারসোনাল
ব্যাপার। আপনার না জানলেও চলবে
আসমাঃ প্লিজ বলো
আমিঃ ঐ সালি তোকে আমি বলতে যাবো কেনো?
আসমাঃ তুমি আমাকে বকা দিলা
আমিঃ আজ মনে হচ্ছে প্রথম দিলাম
আসমাঃ তাই বলে অফিসে!!
আমিঃ দরকার হলে আরো দিবো তোর সমস্যা
আসমাঃ আমার সমস্যা না হলে কার হবে
আমিঃ ঠিক আছে তাহলে আমি আর এই
জব করবো না।কাল থেকে আর আসবো না
আসমাঃ এই না।তুমি আমাকে বকা দিবা মন
যা চাই তাই দিবা।তারপরেও তুমি জব ছেড়ে
দিও না
আমিঃ মনে থাকে যেনো
আসমাঃ হুম এখন বলো কি খাবে
আমিঃ ছুটি লাগবে
আসমাঃ আরে মাত্র তো আসলে।দুপুর পর যেও
আমিঃ না থাক লাগবে না।আমি যাই
আর কোনো কথা না বাড়িয়ে কেবিনে এসে
কাজ করতে লাগলাম।এই কয়েকদিনে কিছু
বন্ধুও পেয়েছি যাদের সাথে কাজের ফাঁকে
কথা বলতে পারি।হঠাৎ করেই আসমার
কথা মনে পড়লো।মেয়েটা অনেক ভালোবাসে
কিন্তু প্রতিদানে আমি তাকে কিছুই দিতে
পারছি না।
রাফিঃ কি সোহান সাহেব কি ভাবছেন(কাদে হাত দিয়ে)
আমিঃ না তেমন কিছুনা।এমনি,আপনার
কি খবর
রাফিঃ এইতো চলছে ভাই।কিছু মনে না
করলে একটা কথা বলি
আমিঃ মনে করলে বলবেন না?
রাফিঃ আচ্ছা শুনুন, আপনার আর রিয়া
ম্যাডামের সাথে কি সম্পর্ক
আমিঃ কেনো,আর আমরা তো জাষ্ট ফ্রেন্ড
রাফিঃ কিন্তু আমার মনে হয় ওনি আপনাকে
ভালোবাসে
আমিঃ রাফি সাহেব,আপনার কপাল ভালো
যে রিয়া আজ আসেনি।আসলে আপনার
হয়তো খবর করে ছাড়তেন
রাফিঃ হাহাহাহা,হুম।আর শুনুন এখন একটা
বিয়ে করে ফেলেন
আমিঃ তেমন কোনো মানুষ পেলে অবশ্যই
করবো।তখন আর বলতে হবে না।
রাফিঃ কেনো আপনার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই
আমিঃ জীবনে একটা ছিলো।তবে এখন আর নেই
রাফিঃ কেনো?
আমিঃ সেটা অন্য একসময় বলবো।
রাফিঃ ঠিক আছে।এখন যায় কাজ করি
আমিঃ ওকে বাই।
রাফির সাথে কথা বলে আবার কাজে মন
দিলাম।হাতে কিছু কাজ থাকাই খেয়ালি
করেনি দুপুর হয়ে গেছে।
আসমাঃ আর কতো কাজ করবে
আমিঃ মানে…ওহ ম্যাডাম আপনি(দাঁড়িয়ে)
আসমাঃ আরে বসো বসো
আমিঃ জ্বি।
আসমাঃ এখন বাসায় চলে যাও
আমিঃ কেনো
আসমাঃ সকালে যে বললে, তোমার ছুটি লাগবে
আমিঃ না,আমার ছুটি লাগবেনা।
আসমাঃ তখন যে বললে
আমিঃ এমনি বলেছি
আসমাঃ তাহলে চলো লাঞ্চ করি একসাথে
আমিঃ আপনি জান। আমার দেরি হবে
আসমাঃ ঠিক আছে।তোমার কাজ হলে
আমার কেবিনে এসো।দুজন একসাথে খাবো
আমিঃ আপনি খেয়ে নিন।
আসমাঃ তুমি না আসলে আমিও খাবো না
আমিঃ দেখা যাবে।
……………………..
কাজ শেষ করতে আরো ১ঘন্টা সময় লাগে।
টেবিলের নিচ থেকে খাবার বের করতেই
আসমার কথা মনে পড়লো।তাই টিফিনটা
নিয়ে ম্যাডামের রুমে গেলাম।
আমিঃ ম্যাডাম আসবো
আসমাঃ হুম।তুমি সোফায় ৫মিনিট বসো
আমি কাজটা শেষ করে আসছি
আমিঃ জ্বি।
পকেট থেকে ফোনটা বের করে টিপতে
শুরু করলাম।এদিকে অনেক ক্ষুধাও
লেগেছে।কিছু বলতেও পারছি না।তবে
অনেক রাগ হচ্ছিলো।মন চাইছিলো
উঠে গিয়ে আসমার ল্যাপটপ ভেঙে দেয়।
কিন্তু পারছি না।
কিছু সময় পর….
আসমাঃ রেগে গেছো
আমিঃ না
আসমাঃ সোহান,একটা কথা বলি
আমিঃ বলুন
আসমাঃ সেদিন কি আমার কোনো
দোষ ছিলো। যার জন্য তুমি আমার
সাথে ব্রেকআপ করেছিলে
আমিঃ আপনার কোনো দোষ ছিলো না
আর এখনো নাই।
আসমাঃ তাহলে কেনো চলে গেছিলা আমার
জীবন থেকে..?
আমিঃ…….(নিশ্চুপ)
আসমাঃ তুমি যা বলতে আমি তো সেই
কথাই শুনতাম।তাহলে কেনো তুমি
আমার সাথে এমনটা করলে?
আমিঃ……(নিশ্চুপ)
আসমাঃ বুঝলাম আমি কিছু একটা
ভুল করেছিলাম।কিন্তু তুমি তো আমাকে
বলতে পাড়তে। তা না করে হুট করে এক
দিন এসে বললে আমাদের ভালোবাসা আর
রাখা সম্ভব না।কি হয়েছিলো তোমার,
আমিঃ…….(নিশ্চুপ, কারণ তার কথার কোনো
উত্তর দেয়ার মতো ভাষা আমার নেই)
আসমাঃ প্লিজ সোহান কথা বলো
আমিঃ লাঞ্চ করবেন। নাকি চলে যাবো
কথাটি শুনে আসমা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল…
আসমাঃ ঠিক আছে।
তারপর লাঞ্চ শেষ করে নিজের
কেবিনে চলে আসলাম।

আম্মুঃ তোর অফিস কেমন চলছে
আমিঃ এইতো আম্মু চলছে।
আম্মুঃ আচ্ছা শোন আগামীকাল আমি
আর তোর আব্বু তোর মামার বাসায়
যাবো।তুই কি যাবি?
আমিঃ না আম্মু।অফিসে কাজের চাপ অনেক
আম্মুঃকিন্তু ঐ পাগলিটা তো আমাদের
দুজনের মাথা খেয়ে ফেলবে
আমিঃতোমরা এবার মেনেজ করে নাও
আম্মুঃঠিক আছে।তুই এখন রেস্ট নে
আমিঃহুম।
রুমে বসে ফোন টিপছি এমন সময় আম্মু
আসলো।আর এসে যা বলল তা তো
শুনতেই পেলেন।আম্মু বলল যে পাগলি।
আপনারা আবার আমার গার্লফ্রেন্ড
ভাববেন না।পাগলিটা নাম নিলা।অনেক
পিচ্চি তবে ওর কথা বলা আর শাসন
করা সবার মন মুগ্ধ করার মতো।সে
যায় হোক আম্মু চলে যাওয়ার পর আরো
কিছু সময় বন্ধুদের সাথে ফোনে কথা বলে
ঘুমিয়ে গেলাম।
পরেরদিন…..
আব্বু আম্মুকে স্টেশন অবধি এগিয়ে
দিতে গিয়ে অফিসের জন্য অনেকটা
দেরি হয়ে গেছে।প্রায় ৪৫মিনিট। না
জানি আসমা আজ কি বলে।তবে ও
কিছু বলবে,আমার মনে হয়না।কারণ
আসমা আমাকে দেখে অনেকটা ভয়
পাই।কেনো পাই জানিনা।
কেবিনে বসে কাজ করছি এমন সময়
রিয়া ডাকলো।
রিয়াঃএই যে সাহেব,,আজ এতো
দেরি হলো কেনো?
আমিঃএকটু কাজ ছিলো।
রিয়াঃতা কাজটা কি শুনি।বউকে রান্না
করে খাওয়াচ্ছিলেন নাকি
আমিঃথাকলে তো খাওয়াবো।আসলে
আব্বু,আম্মুকে স্টেশনে এগিয়ে দিতে
গিয়েছিলাম।
রিয়াঃকেনো, ওনারা কোথাও গেলো নাকি
আমিঃহুম।মামার বাসায়।
রিয়াঃওহ।এখন বলো আমাকে কেমন লাগছে
রিয়ার এমন প্রশ্ন শুনে কিছুটা অবাক হলাম।
রিয়াঃআরে অবাক হচ্ছো কেনো?
আমিঃতো কি হবো?
রিয়াঃআরে ধুর বোকা।আজ আমাকে
কেমন লাগছে সেটা জানতে চেয়েছি।
রিয়ার সাথে এতোটা সময় কথা বলছিলাম।
কিন্তু খেয়ালি করিনি রিয়া আজ শাড়ি পরে
আসছে।
আমিঃআরে বাহ,আজ শাড়ি পড়ার কারণটা
কি শুনি।
রিয়াঃকেনো আমার বুঝি শাড়ি পড়া বারণ
আমিঃবারণ হবে কেনো।কখনো পড়ো না
তাই জিজ্ঞাস করলাম।
রিয়াঃআগে আমার উত্তর দাও
আমিঃহুম সুন্দর লাগছে
রিয়াঃশুধু সুন্দর (রাগ দেখিয়ে)
আমিঃশুধু কেনো হবে। অনেক অনেক
বেশি সুন্দর লাগছে।যে কেউ আজ
তোমার প্রেমে ফিদা হয়ে যাবে
রিয়াঃকাউকে পড়তে হবে না।শুধু তুমি
পড়লেই হবে(আস্তে আস্তে)
আমিঃ কি বললে…?
রিয়াঃ কিছুনা।
আমিঃ ঠিক আছে এখন কাজ করো
রিয়াঃ হুম।
তারপর দুজনে আর কথা না বলে কাজে
মন দিলাম।কিছু সময় পড় পিয়ন এসে
রিয়াকে ম্যাডামের রুমে যেতে বলল।সেদিকে
কান না দিয়ে নিজের মতো কাজ করতে
লাগলাম।প্রায় ১৫মিনিট পর ম্যাডামের
রুম থেকে রিয়া বের হলো তবে সাথে
আরেকটা মেয়েকে দেখলাম।তবে মেয়েটাকে
অনেক চেনা চেনা লাগছে।কিন্তু সে কে
মনে করতে পারছি না।এতো ভেবে আমার
কাজ নাই।তাই আবার কাজে মন দিলাম।
কিন্তু কপালটা খারাপ তাই শান্তি মতো
কাজটা করতে পাড়লাম না।কারণ আসমা
তার কেবিনে আমাকে ডেকে পাঠিয়েছে।
বিরক্তিকর নিশ্বাস ফেলে ম্যাডামের রুমে
গেলাম।
আমিঃম্যাডাম আসবো
আসমাঃ আসো।আজ এতো দেরি হলো কেনো
আমিঃ একটু কাজ ছিলো।
আসমাঃ ওকে,আর রিয়ার সাথে তোমার
এতো কি কথা থাকে?
আমিঃ ফ্রেন্ড কথা বলতেই পারি
আসমাঃ ফ্রেন্ড নাকি অন্য কিছু
আমিঃদেখুন….(থামিয়ে দিয়ে)
আসমাঃ কি বলবে তুমি,তুমি কি মনে
করেছো।আমি কিছু দেখতে পাই না?
আমি সব সময় তোমাদের উপর নজর রাখি।
আমিঃ আমি রিয়ার সাথে কি কথাটাও
বলতে পারবো না
আসমাঃ না পারবে না
আমিঃ কেনো পারবো না
আসমাঃ আমি বলছি তাই
আমিঃ আসমা তুমি যেটা ভাবছো আসলে
সেটার কিছুই না
আসমাঃ আমাকে শেখাতে হবে না।যাও
কাজ করো আর ওর সাথে।যেনো
কথা বলা না দেখি
আমিঃ আর যদি বলি
আসমাঃ সেটা পরে বুঝতে পারবে
সেখানে আর কিছু না বলে কেবিনে চলে
এলাম।নিজের ওপর অনেক রাগ হচ্ছে।
কেনো যে চাকরিটা করতে গেলাম।এখন
যদি চাকরি ছেড়ে দেয় তাহলে আব্বু অনেক
কষ্ট পাবে।আর রিয়ার সাথে কথা না
বললে কিহ বা হবে।এখন থেকে রিয়াকে
একটু এড়িয়ে চলতে হবে।রিয়ার দিকে লক্ষ্য
করতেই দেখলাম নতুন মেয়েটাকে কাজ
শেখাচ্ছে। আমিও আর কিছু না ভেবে কাজ
করতে লাগলাম।
সবার প্রায় টিফিন খাওয়া শেষ শুধুমাত্র
আমি ছাড়া।কারণ সকালে আব্বু,আম্মুকে
বিদায় দিতে গিয়ে টিফিনটাই আনা হয়নি।
ঘড়ির।দিকে তাকাতেই দেখলাম ২ঃ৩০ বাজে।
অফিসের বাইরে এসে একটা দোকান থেকে
সিগারেট নিলাম।ভিতরে হয়তো খেতে
দিবে না।সিগারেট খেতে খেতে অনেকটাই
চিন্তা ধুর হলো।তাই আর বাইরে না থেকে
অফিসের ভিতরে চলে এলাম।
কাজ করতে যাবো এমন সময় আব্বুর কল…..
আমিঃহ্যা আব্বু,ঠিক মতো পৌছে গেছো?
আব্বুঃহুম প্রায় ৩০মিনিট আগে আসছি
আমিঃবাসার সবাই কেমন আছে
আব্বুঃসবাই ভালো শুধুমাত্র নিলা ছাড়া
আমিঃকেনো আমার গার্লফ্রেন্ডটার
কি হয়েছে
আব্বুঃ সেটা ওর থেকেই শুনো
আমিঃ ঠিক আছে দাও।
……..
নিলাঃতুমি আসলে না কেনো?
আমিঃএখন তো আগের মতো না।এখন
আমি কাজ করি তাই না
নিলাঃহুম তাই কি হয়েছে
আমিঃঅফিসের ম্যাডাম ছুটি দেয় না তো
নিলাঃতাই বলে তুমি আসবে না
আমিঃঠিক আছে আমার বুড়ি গার্লফ্রেন্ড
কিছুদিন পর আমি যাবো
নিলাঃপ্রমিজ করো
আমিঃওকে প্রমিজ।এখন রাখি
নিলাঃকিন্তু আমার পাপ্পি
আমিঃহাহাহাহাহা
নিলাঃভাইয়া এতো হেসো না।পেট ব্যথা করবে
আমিঃঠিক আছে বুড়ি,উম্মাহ
নিলাঃউম্মাহ বাই
নিলার সাথে কথা বলে কল কেটে দিলাম।
ফোনটা ডেস্কের উপর রাখতেই দেখলাম
রিয়া কেমন করুণ আর্তনাদে তাকিয়ে
আছে।হয়তো কিছু বলতে চাইছে, চোখটাও
ঝলমল করছে।হঠাৎ আসমার কথা
মনে পড়তেই সেদিকে আর চোখ না দিয়ে
কাজে মন দিলাম।কিন্তু ক্ষুধার জন্য বার
বার কাজে মন বসছে না।চলে গেলাম ম্যাডামের
কেবিনে।
আমিঃ ম্যাডাম আসবো
আসমাঃ হুম।বলো কি হয়েছে
আমিঃ একটু ছুটি লাগতো
আসমাঃ কেনো
আমিঃ ভালো লাগছে না।আর হাতের কাজ
সব শেষ।
আসমাঃ আজকে ছুটি হবে না।এমনিতেই
আজ লেট করে অফিসে এসেছো। এই
নাও ফাইল যাও কাজ করো(একটা ফাইল দিয়ে)
আমিঃ কিন্তু ম্যাডাম…(থামিয়ে)
আসমাঃ কোনো কিন্তু না।কাল সকালের মধ্যে
ফাইলটা আমি কমপ্লিট চাই
আসমাকে কিছু না বলে ফাইলটা নিয়ে ডেস্কে
চলে এলাম।খুব রাগ হচ্ছিলো।ফাইলটা ছুরে
ডেস্কে মারলাম।
রাফিঃ কি ভাই রাগ করছেন নাকি
আমিঃ……(নিশ্চুপ)
রাফিঃ ম্যাডাম কিছু বলছে?
আমিঃ আপনি আপনার কাজ করুন
আর কোনো কথা না বলে কাজ করতে লাগলাম।
ক্ষুধার্ত পেটে কাজ করতে একদম ভালো
লাগছিলো না।কিন্তু আমি তো আসমার
কাজের গোলাম।তার গোলামি ছাড়া আমার
বা আমাদের সবার কি করার আছে।
একাধারে কাজ করতে লাগলাম।
রিয়াঃ সোহান, বাসায় যাবে না?
আমিঃ হাতে একটু কাজ আছে।সেটা শেষ
করে বাসায় যাবো।তুমি যাও
রিয়াঃ ঠিক আছে বাসায় গিয়ে একটা কল করো
আসমাঃ এতো দরধ দেখাতে হবে না।
যার যার কাজ সেই সেই করুন।ভুলে
যাবেন না এটা কাজের জায়গা।কথা
বলার জায়গা নয়
আমিঃ সরি ম্যাডাম।রিয়া তুমি চলে যাও
রিয়া আর কিছু না বলে চলে গেলো।
আসমার দিকে তাকিয়ে দেখলাম অনেকটা
রেগে গেছে।সেদিকে আর খেয়াল না করে
কাজ করতে লাগলাম।কাজ করতে
করতে খেয়ালি করেনি রাত হয়ে গেছে।
একটু আগে পিয়ন এসে বলে গেলো বাসায়
যেতে।কিন্তু আসমার প্রতি রাগের জন্য
কাজ করতে লাগলাম।আর একটু কাজ
বাকি আছে,এমন সময় রিয়া কল করলো।
রিয়াঃ কল করলে না কেনো?
আমিঃ তুমি কি বলেছিলে?
রিয়াঃ বাসায় গিয়ে কল করতে
আমিঃ কিন্তু আমি তো এখনো বাসায় যাই নি
রিয়াঃ যাওনি মানে।এখন কোথায় তুমি
আমিঃ অফিসে
রিয়াঃ কি বলছো এসব।এতো রাতে অফিসে
কি করছো
আমিঃ কাজ
রিয়াঃ কি এমন কাজ,যার জন্য এতো রাত
অবধি করতে হবে
আমিঃ সেটা ম্যাডাম ভালো জানেন
রিয়াঃ আর কাজ করতে হবে না।বাসায়
যাও।অনেক রাত হয়ে গেছে
আমিঃ হুম আর একটু কাজ আছে।
রিয়ার সাথে আর কথা না বাড়িয়ে কাজ
করতে লাগলাম।প্রায় ৩০মিনিট পর কাজ
শেষ করে ঘড়ির দিকে খেয়াল করতেই
দেখলাম সাড়ে ১০টা বাজে।অফিসে আর
দেড়ি না করে বাইরে চলে এলাম।কিছু সময়
অপেক্ষা করার পর একটা রিক্সা করে
বাসায় চলে এলাম। সাথে কিছু রাতের খাবার।
ফ্রেস হয়ে খাবার টুকু খেয়ে নিলাম।
মাথাটাও ধরে আসছে।এতো লম্বা সময় ধরে
কাজ করার জন্য হয়তো মাথাটা ব্যথা করছে।
বিছানায় শরিরটা এলিয়ে দিতেই ঘুমের ঘরে
চলে গেলাম।
পরেরদিন……
ঘুম থেকে উঠে দেখি ৯টা বাজে।তাড়াহুড়ো
করে রেডি হয়ে অফিসের জন্য রওনা দিলাম।
আজকেও সকালের নাস্তাটা করা হলো না।
অফিসে যেতে যেতে ১৫মিনিট লেট হয়ে যায়।
হয়তো আজকেও বকা খেতে হবে।
নিজের ডেস্কে বসতে যাবো এমন সময়
পিয়ন এসে বলে গেলো,ম্যাডাম তার রুমে
আমাকে ডেকেছেন।যা ভেবেছিলাম সেটাই
হলো।ডেস্ক থেকে কালকের ফাইলটা নিয়ে
ম্যাডামের রুমে গেলাম।
আমিঃম্যাডাম আসবো
আসমাঃ হুম আসো।তুমি একটা কথা বলো
প্রতিদিন তোমার লেট হয় কেনো।নাকি
তুমি অফিসটা নিজের মনে করো।
আমিঃ…….(নিশ্চুপ)
আসমাঃ এরপর থেকে যেনো না দেখি লেট
করে অফিসে আসা।যাও কাজ করো
আসমার কথার কোনো জবাব না দিয়ে
গতকালের ফাইলটা ম্যাডামের টেবিলের
উপর রাখলাম।
আসমাঃ এটা কিসের ফাইল
আমিঃ আপনি গতকাল যে ফাইলটা
দিয়েছিলেন সেটা।
এটুকু বলেই নিজের ডেস্কে চলে এলাম।
ভাবছিলাম অফিসে গিয়ে সকালের নাস্তাটা
করবো কিন্তু সেটা আর হলো না।তবে
রিয়াকে বলে দেখি কি হয়।
আমিঃ রিয়া,একটা কথা ছিলো
রিয়াঃ হ্যা,বলো
আমিঃ তুমি কি টিফিন এনেছো?
রিয়াঃ হুম।কেনো বলতো
আমিঃ সকালের নাস্তাটা করা হয়নি।আর
গতরাতে ভালো করে খেতে পারিনি।যদি
কিছু মনে না করো তোমার টিফিনটা দিলে
খেতে পারতাম।আর লাঞ্চ টাইমে হোটেল
থেকে আমি তোমাকে খাইয়ে দিবো
রিয়াঃ আরে এটা বলতে কি লজ্জা করতে
হবে নাকি।এই নাও, খেয়ে আসো(টিফিন দিয়ে)
আমিঃ ধন্যবাদ।
রিয়াঃ এখন ধন্যবাদ দিতে হবে না।খাওয়া
শেষে যদি ভালো লাগে তখন দিও
আমিঃ ঠিক আছে
আর কোনো কথা না বাড়িয়ে চলে এলাম।

খাবার খেয়ে এসে রিয়াকে টিফিন বক্সটা
ফেরত দিলাম সাথে ধন্যবাদ।
ডেস্কে বসে কাজ করছি সেই সময় রিয়া বলল
রিয়াঃ সোহান
আমিঃ হুম বলো
রিয়াঃ তানহাকে চেনো?
আমিঃ তানহা কে?
রিয়াঃ আমাদের অফিসে নতুন জয়েন করেছে।
ওকে দাড়াও
আমিঃ ঠিক আছে।
একটু পর রিয়া নতুন জয়েনিং করা মেয়েটিকে
সামনে নিয়ে এলো।
তানহাঃ হাই ভাইয়া
আমিঃ হাই
তানহাঃ আমাকে চিনতে পাড়ছেন
আমিঃ চেনা চেনা লাগছে,কিন্তু ঠিক মনে
করতে পারছি না।আর তোমার যে বয়স
তোমাকে তো জব দেয়ার কথা না
তানহাঃ ভাইয়া আপনার মনে আছে একবছর
আগে একটা এক্সিডেন্ট থেকে দুটো মানুষকে
বাঁচিয়ে ছিলেন।সেদিন যদি আপনি না থাকতেন
তাহলে হয়তো আমরা কেউ বাচতাম না
আমিঃ তার মানে তুমি?
তানহাঃ জ্বি ভাইয়া।আপনি হয়তো অন্ধকারে
দেখতে পান নি।কিন্তু আমি দেখেছিলাম।
যখন আপনি আমাদের হাসপিতালে রেখে
চলে গেছিলেন তারপর দুদিন হাসপাতালে
থাকার পর যখন সুস্থ হয়ে যায়।আপনাকে
অনেক খুঁজেছিলাম কিন্তু পাইনি।আম্মুও
অনেক বার আপনাকে দেখতে চেয়েছিলেন
কিন্তু আপনার ঠিকানা তো কিছুই জানিনা
তাই আপনাকে আর সন্ধান করতে পারিনি
আমিঃ আমি দুঃখিত যে পরে আর তোমাদের
কোনো খোজ নিতে পারিনি।আসলে সেই
সময় কিছু কাজ ছিলো। এখন বলো আন্টি
কেমন আছেন?
তানহাঃ আম্মু আর এখন নেই
আমিঃ নেই মানে
তানহাঃ কিছুদিন আগে স্টোক করে মারা গেছে
আমিঃ আমি সরি,আর আঙ্কেল কেমন আছে
তানহাঃ ভাইয়া পৃথিবীতে এখন আমার কেউ
নেই।যখন আমি অনেক ছোট তখন আব্বু
মারা যায়।আম্মু লালন পালন করতেন
ওনার শিক্ষকতার উপার্জন টাকা দিয়ে।
আমিঃ কিন্তু এখন জব করতে গেলে কেনো
তানহাঃ বেচে থাকার জন্য।
তানহার সাথে আরো কিছু কথা বললাম।
কথা বলার সময় আমি স্পষ্ট দেখতে
পাচ্ছিলাম তানহার চোখে জল।ডেস্কে বসে
কাজ করছিলাম ঠিক এমন সময় আসমা
তার রুমে আসতে বলল।আর বসে না থেকে
আসমার রুমে গেলাম।
আমিঃ জ্বি ম্যাডাম বলুন
আসমাঃ রাগ করেছো আমার উপর
আমিঃ আপনার উপর রাগ করতে যাবো কেনো
আসমাঃ আমি জানি তুমি আমার উপর
রেগে আছো।কি করবো বলো,তুমি তো
আমার একটা কথাও শোনো না।সব
সময় শুধু রিয়ার সাথেই কথা বলো
আমিঃ ম্যাডাম কাজের কিছু থাকলে বলুন
আমি আপনার এসব আজাইরা কথা
শুনতে পারবো না
আসমাঃ তুমি কি আমার কথাই বিরক্তি হও
(করুণ ভাবে তাকিয়ে বলল)
আমিঃ হ্যা আমি অনেক বিরক্তি হয়।কি এতো
কথা তোর,বার বার আমাকে তোর কেবিনে
আসতে হবে।আমি তোর কাজ করি ঠিক
আছে কিন্তু তাই বলে আমি তোর অন্য কথা
শুনতে পারবো না।তোর কাজ হলেই হলো
এতে তুই যদি আমাকে তোর অফিসে রাখিস
তাহলে রাখ না হলে আমি তোর অফিসে
আর কাজ করতে পারবো না
আসমাঃ তুমি আমাকে তুই করে বললে?
আমিঃ হ্যা বলছি কি করবি তুই
আসমাঃ কিছুনা।যাও তুমি কাজ করো
সেখানে আর এক মুহূর্তের জন্য না দাঁড়িয়ে
ডেস্কে চলে এলাম।রাগের মাথায় কি থেকে
কি বললাম আল্লাহ ভালো জানেন।এখন
যে কি করবে।আর বার বার আমাকে
ডাকারই বা কি আছে।মনে মনে এসব
ভাবছি আর কাজ করছি।কাজ করতে করতে
প্রায় দুপুর হয়ে গেছে মানে লাঞ্চের সময়।
রিয়াঃ এই যে স্যার
আমিঃ হ্যা বলো
রিয়াঃ যাবে না?
আমিঃ কোথায় যাবো
রিয়াঃ কোথায় মানে,তোমার মনে নেই
আমিঃ কি বলেছিলাম মনে পড়ছে না
রিয়াঃ ঠিক আছে মনে করতে হবে না।
আমি গেলাম থাকো তুমি
আমিঃ আরে রাগ করছো কেনো?
লাঞ্চ করতে তো যাবোই।তুমি তানহাকেও
ডেকে আনো
রিয়াঃ কেনো?
আমিঃ আমি বলছি তাই
রিয়াঃ ঠিক আছে ডেকে আনছি।তুমি
একটু অপেক্ষা করো
রিয়া চলে যাওয়ার পর চেয়ারে বসে ভাবছি
কি করা যায় হঠাৎ কাদে কারো হাতের স্পর্শ
পেয়ে ঘুরে তাকালাম।দেখালাম আসমা
আমিঃ কিছু বলবেন
আসমাঃ লাঞ্চ করবে না?
আমিঃ হুম করবো
আসমাঃ তাহলে আমার কেবিনে আসো
আমিঃ আজ একসাথে লাঞ্চ করতে পারবোনা।
সকালে রিয়ার টিফিন খেয়েছি তাই এখন
তাকে খাওয়াতে হবে
আসমাঃ ওর টিফিন খেতে হবে কেনো
আমিঃ কারণ আব্বু,আম্মু বাসায় নেই
আসমাঃ ওহ
আমিঃ আপনি খেয়ে নিন।
আসমাঃ ঠিক আছে
আসমা চলে যাওয়ার পর পরই রিয়া আর
তানহা এলো।তাদের কোনো কথা বলতে না
দিয়ে বললাম
আমিঃ চলো
তানহাঃ কোথায় ভাইয়া
আমিঃ লাঞ্চ করতে
তানহাঃ কিন্তু আমি তো টিফিন এনেছি
আমিঃ তাতে কি আজ না হয় আমাদের
সাথেই খেলে।
তানহাঃ ঠিক আছে চলুন
আমিঃ রিয়া একটা কথা বলার ছিলো(হাটতে
হাটতে বললাম)
রিয়াঃ বলো
আমিঃ তোমার বাসায় কে কে থাকে
রিয়াঃ বিয়ের প্রস্তাব দিবে নাকি
আমিঃ ঐ চুপ করো,আগে যা বলছি তার উত্তর দাও
রিয়াঃ আমি, আব্বু,আম্মু আর ছোট একটা ভাই
আমিঃ ভাই কি করে
রিয়াঃ ক্লাস ৩ তে পরে
আমিঃ তাহলে গুড
রিয়াঃ আরে কিসের গুড বলবে তো
আমিঃ তোমার বুঝতে হবে না। আগে রেস্টুরেন্টে
ডুকো তারপর সব বলছি
রিয়াঃ ঠিক আছে।
অফিসের পাশে একটা রেস্টুরেন্টে গেলাম।
ভিতরে যাওয়ার পর তিনজন খাবার অর্ডার
করলাম।তারপর খেতে শুরু করলাম।
আমিঃ তানহা তুমি কোন ক্লাস অবধি পড়াশোনা
করেছো বা এখনো করো
তানহাঃ ইন্টার প্রথম বর্ষের এক্সাম দিয়েছি
রিয়াঃ সেটা তো অনেক আগে হয়েছে
আমিঃ রিয়া তুমি চুপ করে খাও
রিয়াঃ ওকে
আমিঃ হুম তানহা বলো
তানহাঃ জ্বি ভাইয়া রিয়া আপু ঠিকি বলেছেন,
অনেকদিন আগে এক্সাম দিছি।২দিন আগেই
রেজাল্ট দিয়েছে।
আমিঃ বুঝলাম।এখন তোমার ইচ্ছা কি
তানহাঃ এখন আর কোনো ইচ্ছা নেই।
আমিঃ মানে,আর পড়াশোনা করবে না?
তানহাঃ ইচ্ছা ছিলো আর আম্মুরও অনেক
ইচ্ছা ছিলো বড় হয়ে আমি শিক্ষিকা হবো।
কিন্তু আগে তো বাচতে হবে তাই না
আমিঃ হুম।তোমার রেজাল্ট কি হয়েছে
তানহাঃ ভাইয়া এগুলো বাদ দিন
আমিঃ যেটা বললাম।সেটা বলো
তানহাঃ প্রথম হয়েছি(বলেই কান্না করে দিলো)
আমিঃ আরে কান্না করছো কেনো?ওকে আমি
কান ধরছি আর কখনো এসব বলবো না
তানহাঃ ভাইয়া আপনার কথা শুনে কান্না
পাইনি।কান্না পেয়েছে আম্মুর কথা মনে করে।
আম্মুকে বলেছিলাম এবারও আমি প্রথম হবো।
কিন্তু আমার কি কপাল দেখুন।আম্মু আমার
রেজাল্ট টাও শুনে যেতে পারলো না।
আমিঃ ঠিক আছে।এখন খাও।আর রিয়া
রিয়াঃ……(নিশ্চুপ)
আমিঃ ঐ কি হলো তোমার
রিয়াঃ……..(এবারো নিশ্চুপ)
আমিঃ ঐ রিয়া(মাথায় গুড্ডি মেরে)
রিয়াঃ আও মারলে কেনো
আমিঃ এতো সময় ধরে ডাকছি শুনতে পাও না
রিয়াঃ তুমি তো চুপ করে খেতে বললে
আমাদের কথা বলা দেখে তানহা ফিক
করে হেসে দিলো।যাক আজ রিয়ার জন্য
হলেও মেয়েটা হাসলো।সব সময় তো চুপ
করেই থাকে।
রিয়াঃ বলো কি বলবে
আমিঃ আজকে তানহা তোমার বাসায় থাকবে
তানহাঃ মানে,ভাইয়া আমি রিয়া আপুর
বাসায় থাকতে যাবো কেনো
আমিঃ আমি বলছি তাই
তানহাঃ কিন্তু ভাইয়া
আমিঃ আমাকে কি পর ভাবো?
তানহাঃ না কিন্তু ভাইয়া..(থামিয়ে দিয়ে)
আমিঃ তাহলে যা বলছি তাই শোনো।আর
রিয়া তোমার বাসায় কি সমস্যা হবে
রিয়াঃএকদম না
আমিঃঠিক আছে।যা বললাম তাহলেই সেটাই করো
তারপর আরো কিছু কথা বলতে বলতে লাঞ্চ
শেষ করে অফিসে চলে এলাম।কিছু সময়
কাজ করার পর আম্মুকে কল করলাম।
আমিঃআম্মু তোমরা এখনি বাসায় চলে আসো
আম্মুঃকিন্তু কেনো
আমিঃআগে আসো তারপর। আর আমার
বুড়ি গার্লফ্রেন্ডটাকে সাথে নিয়ে এসো
আম্মুঃঠিক আছে আসছি
আর কোনো কথা না বলে কল কেটে দিলাম।
তারপর আবার কাজে মন দিলাম।কিন্তু
বার বার একটা পয়েন্টে এসে আটকা পরছি।
অনেকবার চেষ্টা করেও কাজটা করতে
পাড়লাম না।তাই ভাবলাম আসমার কাছে
যায়।যেই ভাবা সেই কাজ।
আমিঃ ম্যাডাম আসবো
আসমাঃ হুম আসো।
আমিঃ এই জাইগায় একটু সমস্যা হয়েছে
(ফাইল থেকে সমস্যাটা দেখিয়ে)
একটু ভাবার পর আসমা নিজেই কাজটার
সলুশন বের করে দিলো।
আমিঃ ধন্যবাদ
আসমাঃ হুম
আমিঃ ম্যাডাম কিছু কথা বলি
আসমাঃ বলো
আমিঃ আমি আপনাকে এতো অপমান
করি তারপরেও কেনো রাগ করেন না?
আসমাঃ ভালোবাসার মানুষের প্রতি রাগ
রাখতে নেই।
আমিঃওহ।ঠিক আছে বাই
আসমাঃ হুম।
ম্যাডামের কেবিন থেকে বের হয়ে আবার
নিজের কাজে মনোযোগ হলাম।অফিস টাইম
শেষ। তাই বাসায় যাওয়ার জন্য রেডি হতে
লাগলাম।একটু আগেই রিয়া আর তানহা
চলে গেছে।বাইরে দাঁড়িয়ে আছি এমন
সময় আসমা গাড়ি নিয়ে সামনে এলো
আসমাঃ বাসায় যাবে না?
আমিঃ হুম।যাবো
আসমাঃ গাড়িতে উঠো
আমিঃআমি যেতে পারবো আপনি যান।।
আসমাঃ চুপচাপ গাড়িতে উঠো
কথা না বাড়িয়ে আসমার গাড়িতে উঠলাম।
আমিঃ তোমার ড্রাইভার নেই কেনো?সরি
তুমি করে বলে ফেললাম
আসমাঃ সমস্যা নেই।আর ড্রাইভার রাখতে
মন চাই না।তাই নিজেই চালাই
আমিঃ ওহ
আসমাঃ হুম।আচ্ছা তোমার বাবা-মা কোথায়
গেছেন বললে না
আমিঃ মামার বাসায় গেছে।কিছু কাজের জন্য
আসমাঃ ওহ।আসবে কবে
আমিঃ আজকে আসতে পারে
আসমাঃ সোহান,তোমার কলেজের কথা।মনে পরে?
আমিঃ পড়লেই বা কি।সেটা আমাদের অতিত তাই না
আসমাঃ হুম কিন্তু
আমিঃ আ এটা নিয়ে আমি আর কথা বলতে
চাই না।প্লিজ এসব আর বলো না
আসমাঃ ঠিক আছে।
তারপর দুজনেই নিশ্চুপ।কিছু সময় পর বাসার
সামনে এসে আসমা আমাকে নামিয়ে দিয়ে
চলে গেলো।বাসার ভিতরে এসে ফ্রেস হয়ে
একটু ঘুমিয়ে গেলাম।ঘুম থেকে উঠে দেখি
রাত ৭টা বাজে।ফ্রেস হয়ে বাইরে আসতেই
দেখলাম বুড়ি(নিলা)।তারমানে আব্বু, আম্মু
চলে এসেছে।
নিলাঃভাইয়া তুমি এমন কেনো?
আমিঃআমি আবার কেমন
নিলাঃএই যে,তুমি আমাদের এগিয়ে আনতে যাওনি
জানো আমি কতো কষ্ট পেয়েছি
আমিঃওরে আমার বুড়িরে কতো কষ্ট পেয়েছে।
চলো ডিয়ার গার্লফ্রেন্ড আম্মুর কাছে যায়
নিলাঃযাবো না
আমিঃকেনো
নিলাঃআগে তুমি আমাকে কোলে নাও
আমিঃআমার এতো শক্তি নেই, যে তোমাকে
কোলে নিবো
নিলাঃযাও তোমাকে নিতে হবে না।এতো
বড় মানুষ আমার মতো ৫বছরের কিউট
মেয়েকেই কোলে নিতে পারবে না হুম
আমিঃবাব্বাহ কতো রাগ আসো বুড়ি
তারপর নিলাকে কোলে করে আম্মু আব্বুর
কাছে গেলাম।

আমিঃআব্বু,আম্মু তোমাদের কিছু কথা বলার
আছে।জানিনা তোমাদের ফলাফল কি দাঁড়াবে
কিন্তু তোমরা প্লিজ আমার কথাটা রেখো
প্রয়োজন হলে কিছু সময় ভাবতেও পারো
আম্মুঃ আগে বলবি তো কথাটা কি
আমিঃ.(তানহার ব্যাপারে সব বললাম)
আব্বুঃ এখন তুমি কি চাও
আমিঃ আব্বু মেয়েটার পৃথিবীতে আপন
বলতে কেউ নেই।আর আমার নিজের কোনো
বোনও নেই।তাই বলছি তানহা আমাদের
সাথেই থাকবে এবং পড়াশুনা করবে
আম্মুঃ কিন্তু মেয়েটা কি রাজি হবে
আব্বুঃ হতেই হবে। তোমার ছেলে যা করার
করবে। মেয়েটার ইচ্ছাটা পূরণ করতেই হবে
আমিঃ আব্বু, তোমরা একটু ভাবতে পারো
কোনো সমস্যা নেই
আব্বুঃ এতো ভাবা ভাবির কি আছে
আমিঃ তাহলে তোমরা রাজি
আব্বুঃ কেনো আমরা কি রাজি হতাম না
আমিঃ ভেবেছিলাম তোমাদের অনেক করে
বোঝাতে হবে।কিন্তু তার আর প্রয়োজন
হলো না থ্যাংক ইউ আব্বু আম্মু।আর
একটা কথা ছিলো
আম্মুঃ কিহ বল
আমিঃতানহাকে তোমরা বাবা মায়ের অধিকার
দিতে হবে
আম্মুঃ আরে পাগল ওকে আমার মেয়ে করে
বাসায় রাখবো চিন্তা করিস না
আমিঃ সত্যি
আম্মুঃ হুম সত্যি
আমিঃ লাভ ইউ আব্বু আম্মু
নিলাঃআর আমাকে কে বলবে
আমিঃআরে আমি তো ভুলেই গেছি আমার
বুড়িটা এখানে আছে
নিলাঃথাক আর বলতে হবে না
আমিঃ ওকে বুড়ি।
আরো কিছু কথা বলে রুমে চলে এলাম।
হাফ ছেড়ে বাচলাম।ভেবেছিলাম আব্বু
আম্মু অপরিচিত একটা মেয়েকে বাসায়
এনে বাবা-মায়ের অধিকার দিবে ভাবতেই
পারিনি।অনেক খুশী লাগছে তার থেকেউ
গর্ব হচ্ছে আব্বুর আম্মুর প্রতি।
পরেরদিন…..
এখনো তানহা বা রিয়াকে এটা নিয়ে
কিছু বলেনি সারপ্রাইজ দিবো তাই।
লাঞ্চ শেষ করে কাজ করছি ঠিক সেই
সময় ম্যাডামের রুমের জোড়ে জোড়ে
কথা বলা বাইরে থেকে শুনতে পেলাম।
কথা বললে ভুল হবে।অনেকটা বকাঝকার
মতো।সবাই কাজ বাদ দিয়ে ম্যাডামের
রুমের দিকে তাকিয়ে আছে।কিন্তু বাইরে
থেকে কিছু বোঝা যাচ্ছে না।এভাবে
আরো কিছু সময় পার হওয়ার পর দেখলাম
তানহা ম্যাডামের রুম থেকে কান্না করতে
করতে বের হচ্ছে।তানহার এমন কান্না
দেখে বুকের ভিতরে ছ্যাঁত করে উঠলো।
যদিও ও আমার নিজের কোনো বোন না।
কিন্তু যখন ও আমাকে ভাইয়া বলে
সব কিছু বলেছে তখন থেকেই ওকে
নিজের বোনের অধিকার দিয়েছি।
অফিসের সব স্টাফ তানহার কাছে
গিয়ে জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে।
রিয়াকে দেখলাম তানহাকে শান্তনা
দেয়ার চেষ্ট করছে।এসব একদম আমার
সহ্য হচ্ছিলো না।উঠে গিয়ে তানহার
কাছে গেলাম।
আমিঃসবাই এখান থেকে যা আর নিজের
কাজ কর(অনেক রেগে আর জোড়ে বললাম)
সবাই আর কিছু না বলে চলে গেলো।
কিন্তু রিয়া তানহার কাছেই আছে।
আমিঃ এই মেয়ে তোকে কি আলাদা ভাবে
যেতে বলতে হবে
রিয়াঃ তুমি আমাকে তুই.. (থামিয়ে)
আমিঃ হ্যা তুই,যা এখান থেকে
ভয় পেয়ে রিয়া কিছু না বলে চলে গেলো।
এবার নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম…
আমিঃ তানহা বোন আমার,সত্যি করে
বলবি তুই কি ম্যাডামকে কিছু বলেছিস
তানহাঃ ভাইয়া বিশ্বাস করুণ আমি ম্যাডামকে
কিছু বলেনি।কাজে একটা ভুল হয়েছে
যার জন্য ম্যাডাম আমার মৃৎ আম্মু
আব্বুকে নিয়ে বকাঝকা করছে (কান্না করে)
তানহার থেকে আর কিছু না শুনে তানহার
হাত ধরে আসমার কেবিনে গেলাম।
আমিঃ তুই তানহাকে কি বলেছিস
আসমাঃ ওর কাজে ভুল হয়েছে তাই
বলেছি।
আমিঃ তানহাকে সরি বল
আসমাঃ হাউ ফানি,ওকে আমার সরি
বলতে হবে নাকি
আমিঃ হ্যা হবে
আসমাঃ যদি না বলি(আমাদের কাছে এসে বলল)
আর ওকে আমার জব দেয়াই ভুল
হয়েছে। কেনো যে এমন একটা বাজে
মেয়েকে জব দিতে গেলাম
আমিঃ ঠাসসসস ঠাসসসসস
আসমার কথাগুলো সুচের মতো শরিরে
বিধে যেতে লাগছিলো।অনেক বেশি
রাগ হচ্ছিলো তাই সহ্য করতে না পেরে
অনেকটা শক্তি দিয়ে থাপ্পড় মারলাম।
আমিঃ কি ভেবেছিস,তোর যা ইচ্ছা তাই
বলবি।তুই জানিস তানহা কে?
আসমাঃ…..(গালে হাত দিয়ে আছে)
আমিঃ তুই কি করে বলবি।আমিই বলছি
তাহলে,তানহা আমার বোন।
আসমাঃ কিন্তু তোমার তো নিজের
কোনো বোন নেই
আমিঃ হ্যা সেটা পরশু অবধি ছিলো।
কিন্তু গতকাল থেকে তানহা আমার বোন।
যদিও ও আমার নিজের মায়ের পেটের
বোন না।কিন্তু আজ এখন থেকে তানহা
আমার মায়ের পেটের বোন।আর তুই
যে জবের জন্য তানহাকে বকা দিয়েছিস
সেই জব আজ থেকে ও করবে না।
কালকের মধ্যে তুই রিজাইন লেটার
পেয়ে যাবি
কথাগুলো বলে ডেস্ক থেকে ব্যাগটা নিয়ে
তানহাকে সাথে করে অফিসের বাইরে চলে এলাম।
তানহাঃ ভাইয়া ম্যাডামের সাথে এভাবে
কথা বলা ঠিক হয়নি
আমিঃ সেটা আমি শুনতে চেয়েছি
তানহাঃ না,কিন্তু জব ছেড়ে দিলে আমি
বাচবো কি করে
আমিঃ ভয় পাচ্ছিস।তুই এখন আমার বোন।
গতকাল আব্বু,আম্মুকে সব বলেছি।
তোকে আজ সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।
কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো বুঝতেই
পারিনি।
কথাগুলো বলে তানহার দিকে তাকাতেই
দেখলাম মেয়েটার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে
পড়ছে। যা দেখতে আমার একদম ভালো
লাগছিলো না।তাই হাসানোর জন্য বললাম…
আমিঃ তুই কি জানিস তুই কান্না করলে
একদম পেত্নীর মতো লাগে
তানহাঃ ভাইয়া…
আমিঃ ঠিক আছে আর বলবো না।আর সরি
তুই করে বলছি
তানহাঃ সরি কেনো,এখন থেকে তুই
করেই আমাকে বলবে
আমিঃ হুম আর তুইও আপনি না তুই করে বলবি
তানহাঃ হাহাহা,ঠিক আছে
তারপর একটা রিক্সা করে সারাটা রাস্তা
তানহার সাথে কথা বলতে বলতে বাসাই
চলে এলাম।।
বাসার ভিতরে আসতেই আম্মুকে বললাম…
আমিঃ আম্মু,ও তানহা
আম্মুঃ চুপ হারামজাদা।মায়ের কাছে
মেয়েকে পরিচয় করিয়ে দিস তোর লজ্জা
করে না একটু
আম্মুর কথা শুনে তানহা হেসে দিলো।
আমিঃ তাই বলে..(থামিয়ে দিয়ে)
আম্মুঃ চুপ কর।তানহা মা আই আমার সাথে
তানহাকে সাথে করে নিয়ে আম্মু রুমে চলে গেলো।
আপনাদের হয়তো বলা হয়নি আমাদের
বাসা তিনতলা। উপরে আমরা থাকি
আর নিচের দুইতলা ভাড়াটে থাকে।ভারা
দিয়েই অনেক টাকা পাওয়া যায়।যার জন্য
আমি চাকরী করতে চাইনি।সেই যায় হোক
আম্মু তানহাকে নিয়ে রুমে যাওয়ার পর
আমি আর সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে
রুমে এসে ফ্রেস হয়ে নিলাম।
নিলাঃ ভাইয়া আপুটা কি এখন থেকে
এখানেই থাকবে?
আমিঃ হুম।আর বুড়ি তুই যেনো ওর সাথে
খারাপ ব্যবহার করবি না
নিলাঃ তুমি আমাকে কি বললে,এখন
তোমার জরিমানা হয়ে গেছে
আমিঃ কিসের জরিমানা
নিলাঃ এই যে তুমি আমাকে তুই করে বলেছো
আমিঃ আল্লাহ,আমি তো ভুল করে বলেছি
নিলাঃ কোনো কথা নাই,তবে এটা একটু
ভিন্ন জরিমানা হয়েছে
আমিঃ শুনি এবার জরিমানাটা কি
নিলাঃ কাল আমরা ঘুরতে যাবো।আমার
যতো ইচ্ছা ঘুরবো খাবো তোমার কিছু
বলা যাবেনা
আমিঃ তাহলে তো আমি ফকির হয়ে যাবো
নিলাঃ হলে হবে তাতে আমার কি
আমিঃ আমি তো তোমার বিএফ তাইনা।
বিএফ এর থেকে টাকা নিবে?
নিলাঃ চুপ,বিএফ মানে বেষ্ট ফ্রেন্ড। তাই
তোমার থেকে আমি নিতেই পারি
আমিঃ আমি কিন্তু মন খারাপ করবো
নিলাঃ আমিও আন্টিকে বলে দিবো
ভাইয়া আমাকে বকা দিয়েছে
আমিঃ থাক তার আর দরকার হবে না।
নিলাঃ হুম।এখন চলো তোমাকে ডাকছে
আমিঃ ওকে ডিয়ার গার্লফ্রেন্ড চলো
নিলাকে সাথে করে নিয়ে আব্বু আম্মুর
রুমে গেলাম।দেখলাম আব্বু আম্মু
অনেক হেসে হেসে কথা বলছে
আমিঃ কি ব্যাপার এতো হাসাহাসির কি আছে
আম্মুঃ সোহান তোকে অনেক অনেক
ধন্যবাদ
আমিঃ কিন্তু কেনো
আব্বুঃ তানহাকে বাসায় আনাই
আমিঃ ওহ
আম্মুঃ জানিস মেয়েটা অনেক ভালো।
আব্বুঃ আরে দেখতে হবে না মেয়েটা কাদের
আম্মুঃ হুম ঠিক বলেছো।
আব্বুঃ তা সোহান,এখন কি করবি
আমিঃ মানে…?
আব্বুঃ ওকে কোনো কলেজে ভর্তি করতে
হবে তাই না
আমিঃ হুম সেটা তো করতেই হবে।
আমার বোন বলে কথা
আব্বুঃ আগামীকাল তাহলে ওকে ভর্তি
করে নিয়ে আই
নিলাঃ কাল হবে না
আম্মুঃ কেনো,তোর আবার কি হলো
নিলাঃ কারণ তোমার ছেলে আমাকে
নিয়ে ঘুরতে যাবে
আম্মুঃ তাই বলে সকালেই
নিলাঃ বললাম তো না
আম্মুঃ ওকে বুড়ি তাই হবে(গাল টেনে)
আব্বুঃ তাহলে পরশু যাও
আমিঃ আমিও তাই ভাবছি।এখন তানহা কোথায়
আম্মুঃ আমি ওকে রুমে রেখে এসেছি
নিলাঃ তাহলে আমি তানহা আপুর
কাছে গেলাম।তোমরা থাকো(নিলা চলে গেলো)
আমিঃ কিছু খেয়েছে?
আম্মুঃ না,বললো অফিসে নাকি লাঞ্চ করেছে
আমিঃ ঠিক আছে।
আরো কিছু সময় কথা বলে রুমে চলে এলাম।
হঠাৎ মনে পড়লো রিয়াকে অফিসে ধমক
দেয়ায় হয়তো কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা।তাই
আর দেরি না করে রিয়াকে কল দিলাম।
রিয়াঃ হ্যা সোহান বলো
আমিঃ কি করো
রিয়াঃএই তো বাসায় এসে ফ্রেস হলাম।
কেনো বলতো?
আমিঃ আমি কি জিজ্ঞাস করতে পারি না
রিয়াঃ হুম পারো।কিন্তু কখনো আগে
থেকে কল করোনা তাই আর কি
আমিঃ হুম।আসলে রিয়া অফিসে তোমাকে
কি থেকে কি বলেছি সেটা নিয়ে যদি
কষ্ট পেয়ে থাকো তাহলে আমি সরি।
আসলে মাথা ঠিক ছিলো না
রিয়াঃ ঠিক আছে সরি বলতে হবে না।
এখন তানহা কোথায়
আমিঃ বাসায় নিয়ে এসেছি।আর তোমাকে
বলাই হয়নি তানহা এখন থেকে আমাদের
সাথেই থাকবে। আমার ছোট বোন আর
আব্বু আম্মুর মেয়ে হয়ে
রিয়াঃ ওয়াও,অনেক ভালোই হবে তাহলে
আমিঃ হুম
………………………….
রিয়ার সাথে অনেকটা সময় কথা বলার
পর বিছানায় শরিরটা এলিয়ে দিলাম।
এরকম ভাবে কিছুটা সময় থাকার পর
বন্ধুদের সাথে মেসেঞ্জারে কথা বলতে
লাগলাম।সালার জবটার জন্য বন্ধুদের
সাথেও ঠিক মতো কথা বলতে পারি না।
তারপর সবাই মিলে রাতের খাবারটা
খেয়ে নিলাম।ড্রয়িং রুমে বসে আছি
এমন সময় নিলা বলল…
নিলাঃ আন্টি আজ আমি আপুর সাথে ঘুমাবো
আমিঃ আজ না অন্য আরেকদিন
নিলাঃ না আজকেই
আমিঃ নিলা…(থামিয়ে দিয়ে)
তানহাঃ ভাইয়া আমিই নিলাকে বলেছি
এটা বলতে।আমি আর নিলা না হয়
একসাথেই ঘুমাই
আম্মুঃ কিন্তু মা তোর যদি কোনো সমস্যা হয়
তানহাঃ আম্মু কোনো সমস্যা হবে না
আম্মুঃ ঠিক আছে তাহলে ঘুমাস
সবার সাথেই তানহা কথা বলতে লাগলো।
তবে সব থেকে ভালো লাগছে তানহা
আব্বু আম্মুকে আব্বু আম্মু বলেই ডাকছে।
যেটা দেখে মনে অনেকটা শান্তি অনুভব
করলাম।সবার সাথে কিছু সময় কথা বলে
রুমে এসে ঘুমিয়ে গেলাম।
পরেরদিন.

নিলাঃ ডিয়ার বয়ফ্রেন্ড, এখন আমার জন্য
আর আপুর জন্য খাবার অর্ডার দাও
আমিঃ ঐ আমি তোর কোন কালের
বয়ফ্রেন্ড শুনি
নিলাঃ দেখো,আমাকে তুই করে বলবে না
তানহাঃ আহা নিলা,বললে কি সমস্যা
আমাকেও তো তুই করে বলে
নিলাঃ আপু, তুমি ছোট তাই বুঝবেনা
আমাকে কথা বলতে দাও
নিলার কথা শুনে আমরা দুজন
হাসবো না কান্না করবো কিছুই
বুঝলাম না।এতো টুকু মেয়ে হয়ে
একদম বুড়ির মতো কথা বলে।
শুধু শুধু তো আর বুড়ি উপাধি
দেয় নি তাকে।সে যায় হোক ওদের
কথা মতো খাবার অর্ডার করলাম।
হ্যা,আমরা নিলার কথা মতোই ঘুরতে
বের হয়েছি।পিচ্চি হলেও রাগ অভিমান
অনেক।সারাটা দিন আমাকে পাগলের
মতো ঘুরপাক করাচ্ছে।কিছু ভুল হলেই
হয় কান্না বা তানহার ফোন নিয়ে আব্বু
আম্মুকে কল করে বলবে আমি নাকি
ওকে মেরেছি। কিছু সময় পর ওয়েটার
খাবার দিয়ে গেলো।
তিনজন বসে খাচ্ছি এমন সময় তানহা বলল..
তানহাঃ ভাইয়া দেখতো ওটা ম্যাডাম না
আমিঃ হুম তো..(পিছনে ঘুরে দেখে)
তানহাঃ দেখ কেমন করুণ ভাবে তাকিয়ে আছে
আমিঃ বাদ দে, এই ছলনা ময়ীর কথা
তানহাঃ তোকে হয়তো কিছু বলতে চাই
আমিঃ বলবে না।আর তুই এসব কি বলছিস
ভুলে গেলি ওর ডাইনির রুপের কথা
তানহাঃ না ভাইয়া,ম্যাডাম হয়তো তেমন না।
আমিঃ তুই আর একটা কথা বললে সেদিন
যে ম্যাডামকে দিয়েছিলাম তোকেও আজ
সেটা দিবো
তানহাঃ……(কথা শুনে তানহা চুপ করে গেলো)
নিলাঃ কি দিয়েছিলে ভাইয়া
আমিঃ মিষ্টি…! খাবে ডার্লিং
নিলাঃ তাই..কি মিষ্টি ভাইয়া
আমিঃ থাপ্পড় মিষ্টি খাবে
নিলাঃ????????
আমিঃ আরে কান্না করছিস কেনো
নিলাঃ তুমি পচা,তানহা আপু চলো আমরা
বাসায় যায়।ভাইয়ার সাথে থাকবো না
তানহাঃ বোন আমার প্লিজ কান্না থামাও।
ঠিক আছে আমরা এখনি চলে যাবো
ভাইয়া চলো এখন বাসায় যায়
আমিঃ ঠিক আছে চল(নিলার কান্না
দেখে বাসায় যেতে রাজি হলাম)
তানহা,নিলাকে দাড় করিয়ে বিল দিতে
গেলাম।কিন্তু বিল দিয়ে এসেই অনেক
অবাক হলাম। আসমা ওদের দুজনের
সাথে হেসে হেসে কথা বলছে
তানহাঃ ভাইয়া তুমিও তাহলে প্রেম করেছো
হঠাৎ তানহার এমন কথা শুনে অবাক
না হয়ে পাড়লাম না।কিন্তু নিজেকে
স্বাভাবিক করে বললাম।
আমিঃ কিসের প্রেম
তানহাঃ থাক আর বলতে হবে না।ম্যাডাম
আমাদের সব বলেছে
আমিঃ কি বলেছে
তানহাঃ এই যে তোমার আর ম্যাডামের
রিলেশন শিপের কথা
আমিঃ চুপ,আর ঐ আপনার লজ্জা লাগে
না এসব কথা সবাইকে বলতে
আসমাঃ নিজের ননদীকেই তো বলছি
আমিঃ কিসের ননদ
আসমাঃ তোমার সাথে আমার বিয়ে হলে
তো তোমার বোন আমার ননদ হবে তাই না
আমিঃ বিয়ে সেটাও আবার তোমাকে হাস্যকর
আসমাঃ দেখা যাবে
আমিঃ দেখতে পাড়বে
আসমাঃ হুম,এখন বলো অফিসে যাও নি কেনো
নিলাঃ আমার জন্য
আসমাঃ মানে..?
নিলা+তানহাঃ……(সব বলে দিলো)
আসমাঃ আগামীকাল আসবে কি?
আমিঃ না
আসমাঃ কেনো..?
আমিঃ কাল তানহাকে কলেজে ভর্তি করাতে হবে
আসমাঃ তাহলে জবের কি হবে
আমিঃ ওর জব করতে হবে না
আসমাঃ সেসবের জন্য এখনো রেগে আছো?
আর আমি তানহার থেকে ক্ষমা চেয়ে নিছি
আমিঃ রাগ না।আর তুমি সেদিন ওর সাথে
খারাপ ব্যবহার না করলেও ওকে আর জব
করতে দিতাম না।এখন ওর ইচ্ছাটাই
পুরন করার প্রচেষ্টা করবে
আসমাঃ ওহ
আমিঃ হুম।নিলা,তানহা চল
তানহাঃ হুম চল
আসমার সাথে আর কোনো কথা না বলে
বাসায় চলে এলাম।একদিন বাসায় কিছু কাজ
করার জন্য অফিসে যেতে পারিনি।কাজ
বলতে,তানহাকে নতুন কলেজে ভর্তি
করা।অফিসের ঠিক উল্টো দিকে তানহার
কলেজে। তাই ওকে এগিয়ে দেয়ার সময়
পাই না।তবে বাসা থেকে কলেজের দূরত্ব
৫মিনিটের।সে যায় হোক,অফিসে বসে
কাজ করছি এমন সময় আসমা এলো…
আসমাঃ কি করছো
আমিঃ দেখছেন না কি করি(স্বাভাবিক হয়ে)
আসমাঃ তুমি সব সময় এমন করো কেনো
আমিঃ তো কেমন করবো,বিরক্তি করবেন
না প্লিজ।আপনি এখন যান
আসমা আর কিছু না বলে চলে গেলো।
লাঞ্চ টাইমে একা বসে আছি এমন
সময় সাইফ(অফিসেই কাজ করে)এলো
সাইফঃ সোহান ভাই,কি খবর
আমিঃ এইতো, আপনার?
সাইফঃ ভালো।ভাই একটা হেল্প লাগবে
আমিঃ বলুন কি হেল্প লাগবে
সাইফঃ আপনি আগে বলুন রাজি হবেন
আমিঃ রাজি হওয়ার মতো কথা হলে
অবশ্যই রাজি হবো
সাইফঃ ভাই আমার আসলে রিয়াকে ভালো লাগে
আমিঃ হুম তো
সাইফঃ আপনি যদি ওকে একটু বলতেন
আমিঃ দেখুন সাইফ ভাই,আপনি ওকে
ভালোবাসেন তাই আমার মনে হয়
এটা আপনার বলাই বেটার হবে
সাইফঃ হুম কিন্তু আপনি যদি ওকে বোঝাতেন
আমিঃ ঠিক আছে বলবো
সাইফঃ ধন্যবাদ
সাইফ চলে যাওয়ার পর আমিও এসে
ডেস্কে বসলাম।রিয়া আপন মনে সে
তার কাজ করছে
আমিঃ রিয়া একটা কথা বলি
রিয়াঃ হুম বলো(আমার দিকে ঘুরে)
আমিঃ তুমি কি কাউকে ভালোবাসো
রিয়াঃ হুম বাসি(মাথা নিচু করে)
আমিঃ ওহ,আসলে সাইফ বলল সে তোমাকে
ভালোবাসে তাই জিজ্ঞাস করলাম
কথাটা শেষ হতে না হতেই রিয়া আমার
দিকে করুণ ভাবে তাকালো।ওর চোখ
দেখে বোঝা যাচ্ছে আমাকে কিছু একটা
বলতে চাই।কিন্তু সেদিকে কান না দিয়ে
কাজ করতে লাগলাম।
সেদিনের মতো কাজ শেষ করে বাসায়
চলে আসলাম।
পরেরদিন……
লাঞ্চ টাইমে আমি আর রিয়া বসে আছি।
কিন্তু মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে অনেক
রেগে আছে, যার জন্য কিছু বলার সাহস
খুজে পাচ্ছি না।তারপরেও মনে একটু
সাহস সঞ্চায় করে বললাম
আমিঃ তুমি কি রেগে আছো
রিয়াঃ হ্যা,আর এখন তোর ঘাড় মটকাবো
আমিঃ মা..মা.মানে,আমি আবার কি করলাম
রিয়াঃ কি করিস নি সেটা বল,তুই কি কিছু
বুঝিস না
আমিঃ আমি আবার কি বুঝবো
রিয়াঃ ধুর,ওকে দাড়া আমি নিজেই বলছি
আমিঃ…….(দাড়িয়ে গেলাম)
রিয়াঃ দাঁড়ালি কেনো?
আমিঃ তুমি বললে তাই
রিয়াঃ চুপ,আমি কি সেই দাঁড়ানোর কথা বলছি
নাকি।তুই বস আমি বলছি
একমিনিট নীরবতা পালন করে বলল..
রিয়াঃ সোহান,জানিনা তুমি আমাকে তোমার
কি ভাবো।কিন্তু বিশ্বাস করো তোমাকে
আমি আমার জীবনের একটা অংশ মনে
করি।যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম
সেদিন থেকেই তোমাকে ভালো লাগতো।
আর সেদিন যে তানহাকে বাসায় নিয়ে
গিয়ে নিজের বোনের অধিকার দিয়েছো
সেদিন থেকেই তোমাকে অনেক অনেক
ভালোবাসি।তোমাকে কিছু বলার আগেই
উল্টো সাইফের কথা বলে আমাকে
রাগিয়ে দিলে।প্লিজ সোহান তুমি আমাকে
ফিরিয়ে দিও না।।
রিয়ার কথা শুনে মাথায় যেনো আকাশ
ভেঙে পড়লো।যাকে ভালো বন্ধু ভাবতাম
সেই নাকি আজ আমাকে ভালোবাসে।কিন্তু
আমি তো কাউকেই ভালোবাসি না।হ্যা,
একজনকে এখনো ভালোবাসি তবে সেটা
আসমা। আসমা ছাড়া কাউকে আমার
জীবনে কল্পনাও করতে পারিনা।হোক
সেটা ধুরে বা কাছে।
রিয়াঃ সোহান,কিছু তো বলো
আমিঃ আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারবো না
রিয়াঃ কেনো
আমিঃ কারণ আমি একজনকে ভালোবাসি
রিয়াঃ কিন্তু কখনো তো আমাকে বলোনি
আমিঃ বলার প্রয়োজন মনে করিনি
রিয়াঃ কিন্তু…(থামিয়ে দিয়ে)
আমিঃ তুমি আমার জীবনের একজন শুভাকাঙ্ক্ষী
হয়ে থাকতে পারো।কিন্তু সঙ্গী নয়
রিয়াঃ ঠিক আছে।তবে একটা কথা জানতে চাই
আমিঃ কি বলো
রিয়াঃ কাকে তুমি ভালোবাসো
আমিঃ আমাদের ম্যাডামকে
রিয়াঃ মানে,কিন্তু ওনি তো…
আমিঃ জানি অবাক হচ্ছো,কিন্তু এটাই সত্যি
রিয়াঃ কিছু মনে না করলে, জানতে পারি
তোমার আর ম্যাডামের রিলেশনের কথা?
আমিঃ হুম কেনো নয়,যখন আমরা অনার্স
দ্বিতীয় বর্ষ পড়তান তখনি আসমার সাথে
আমাদের পরিচয়।
সব বড়লোক বাবার মেয়ের মতো আসমা
ছিলো না।ও ছিলো একদম তাদের উল্টো।
যেটা দেখে প্রথম আমি মুগ্ধ হয়। আসমা
আর আমি একই ডিপার্টমেন্টে ছিলাম
তাই পরিচয় হয় পড়াশোনার ফাকেই।
একদিন ক্লাস শেষ করে আসমাকে বলি
আমিঃ আসমা কিছু কথা বলার ছিলো
আসমাঃ হুম বলো
আমিঃ আমি তোমাকে ভালোবাসি
আসমাঃ সরি সোহান,এটা আমি পারবো না।
তুমি আগে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে
দাড়াও তখন তোমার সাথে প্রেম করবো
আমিঃ কিন্তু ততোদিন হয়তো তুমি থাকবে না
আসমাঃ হুম।তবে আমার থেকেও ভালো
কাউকে জীবনে পাবে।
আর কিছু না বলে আসমা চলে যায়।কিন্তু
তখন ছিলাম নাছোড় বান্দা। আর এমনিতেই
কলেজে থাকাকালীন ছিলাম এক নাম্বার বাদর।
এভাবে আসমার সাথে টুকটাক কথা
বলতাম।প্রতিদিন আসমাকে ভালোবাসি
না বললে যেনো আমার দিনটাই মাটি
হয়ে যেতো।প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন ভাবে
ভালোবাসি কথা বলতে হয়েছে।আর
আসমা একই ভাবে একটা উত্তর দিয়েছে
“আগে নিজের পায়ে দাড়াও”
অনেক সময় আসমার প্রতি রাগ হতো
কিন্তু কিছু বলতে পাড়তাম না।একদিন
হঠাৎ করে বন্ধুদের না বলে আব্বু আম্মুর
সাথে মামা বাসায় চলে যায়।প্রায় ১সপ্তাহ
পরে যখন কলেজে আসি তখনি
আমার উপর দিয়ে সিডর ভয়ে যায়
আসমাঃ ঠাসসস ঠাসসস কুত্তা তুই আমাকে
কিছু না বলে কোথায় চলে গেছিলি
আমিঃ মামা বাসায়
আসমাঃ ঠাসস আমাকে বলিস নাই কেনো
আমিঃ কি বলতাম(গালে হাত দিয়ে)
আসমাঃ ঠাসসস ঠাসসস জানিস আমি
কতো কষ্ট পেয়েছি
আমিঃ চুপ শালি। এতো সময় ধরে মারছিস
আমার মনে হয় কষ্ট হচ্ছে না
আসমাঃ ওকে এসব বাদ,এখন চল
আমিঃ কোথায় যাবো
আসমাঃ প্রেম করতে
আমিঃ কার সাথে
আসমাঃ আমার সাথে, কোনো সমস্যা
আমিঃ আরে না বাবু
তারপর আসমাকে কোলে তুলে নিয়ে পুকুরপাড়ে
চলে আসি।সেদিন থেকেই শুরু হয় আমাদের
ভালোবাসা।প্রায় এক বছর কেটে যায়।
দুজনেই অনেক হ্যাপি ছিলাম।কিন্তু হঠাৎ
করেই আমি আসমার সাথে ব্রেকআপ
করি।সেটাও কোনো কারণ ছাড়া। আসমা
অনেক কান্না করছিলো কিন্তু সেদিন আর
আসমার দিকে দেখেছিলাম না।আমার
নিজেরও অনেক কান্না পেয়েছে
কিন্তু করতে পারিনি।কিভাবে করবো আমি
তো মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে।ফাইনাল
ইয়ারের এক্সাম দেয়ার পর থেকে আমাদের
মাঝে আর কোনো যোগাযোগ ছিলো না।
আর এখন তো তুমি সব জানোই।
কথাগুলো শোনার পর রিয়া চোখ মুছে
চলে যেতে লাগলো।
আমিঃ রিয়া আমি সরি
রিয়াঃ কোনো ব্যাপার না
আমিঃ হুম।আর সাইফের কথা ভেবে দেখতে
পারো।
আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়েই রিয়া
চলে গেলো।সেখানে আর বসে না থেকে
ডেস্কে বসে কাজ করতে লাগলাম।
পিয়নঃ স্যার ম্যাডাম আপনাকে ডেকেছেন
আমিঃ হুম যাচ্ছি
আমিঃ ম্যাডাম আসবো
আসমাঃ হুম আসো
আমিঃ বলুন
আসমাঃ কিছুই না।চুপচাপ এখানে বসে থাকো
আমিঃ কিন্তু আমার কাজ
আসমাঃ আমার সাথে এখানে বসে করবে
আমিঃ ওখানে করলে সমস্যা কি
আসমাঃ সমস্যা আছে
আমিঃ কি সমস্যা
আসমাঃ ঐ যে রিয়ার সাথে সবসময় কথা
বলো সেটা।ওর সাথে কথা বলা যাবে না।
আর আজ ও কান্না করছিলো কেনো?
আমিঃ জানিনা
আসমাঃ তুই বলবি(কলার ধরে)
আমিঃ বলছি আগে ছাড়ুন
আসমাঃ হুম বল(ছেড়ে দিয়ে)
আমিঃ আমাকে ভালোবাসার কথা বলেছিলো
কিন্তু সেটা আমি রিজেক্ট করে দেয় এবং
আপনার আর আমার অতিতের কথা বলি
যা শুনে কান্না করেছে
আসমাঃ হুম ভালো করেছো।তুমি তো
আমার লক্ষী বাবু উম্মাহ (জোড় করে)
আমিঃ দেখুন আমি আপনাকে আর ভালোবাসি না
আসমাঃ দেখা যাবে।এখন কাজ করো বসে
আর কোনো কথা না বলে ম্যাডামের রুমে
বসেই কাজ করতে লাগলাম।

রিয়াঃ ম্যাডাম আসবো?
ম্যাডামের রুমে বসে কাজ করছি এমন
সময় রিয়া বাইরে থেকে কথাটা বলাতে
বাইরের দিকে তাকালাম।
আসমাঃ হুম আসুন
রিয়াঃ আসলে ম্যাডাম, সোহানের সাথে কিছু
কথা ছিলো
আসমাঃ তো বলুন
রিয়াঃ ম্যাডাম অনেকটা পারসোনাল
আমিঃ ঠিক আছে চলো
আসমাঃ ঐ চুপ,দেখেন রিয়া যা বলার
আমার সামনেই বলুন
রিয়াঃ বাইরে আরেক জন আছে
আসমাঃ ওকে
রিয়াঃ সাইফ
আসমাঃ সাইফ সাহেব বাইরে কি করছেন
রিয়াঃ আসলে ম্যাডাম, সোহান আমার
আর সাইফের রিলেশনশিপে অনেক
হেল্প করেছে এইজন্য কিছু কথা বলতে
চাইছি আমরা দুজন
আসমাঃ ওহ এই কথা।ঠিক আছে
চলুন আমিও যাবো
আমিঃ আপনি যাবেন মানে?
আসমাঃ আমি মানে আমি যাবো
আমিঃ তাহলে আমি যাবো না
আসমাঃ কেনো যাবে না
আমিঃ যাবোনা ব্যস
আসমাঃ ঐ তুই যাবিনা, তোর ঘাড় যাবে
একপ্রকার জোড় করেই আসমা ওদের
সাথে কথা বলার জন্য নিয়ে গেলো।
চারজন বসার পর..
রিয়াঃ সোহান তোমাকে ধন্যবাদ
আমিঃ কিসের জন্য
রিয়াঃ এই যে,আমাদের রিলেশনশিপে হেল্প করে
সাইফঃ তবে সোহান ভাই নিজের জন্যও
কিন্তু কাজটা করেছে
আসমাঃ কিসের কাজ
সাইফঃ আপনাকে এখনো সোহান ভাই ভালোবাসে
আমিঃ ঐ চুপ করুণ, কিসব বলছেন
আসমাঃ না চুপ করবেন না।বলুন আপনি
সাইফঃ সোহান ভাই এখনো আপনাকে অনেক
অনেক ভালোবাসে
আসমাঃ তাই বুঝি
সাইফঃ কিন্তু ম্যাডাম আপনি জানেন না
আসমাঃ হুম জানি তো।এ জন্যই তো
নিজের কেবিনে বসিয়ে কাজ করাই
আমিঃ তোমরা কি চুপ করবে,আর ঐ
সালা (সাইফ)তোরে এসব বলতে বলছে কে
সাইফঃ যেটা সত্যি সেটাই বলছি ভাই
আমিঃ রাখ তোর সত্যি
আসমাঃ আহা বাবু রাগ করছো কেনো
আমিঃ আবার বাবু
আসমাঃ তাহলে কি বলবো বাবু
আমিঃ চুপ শালি,থাক তোরা আমি বাসায় গেলাম
আসমাঃ আরে রাগ করছো কেনো
আমিঃ তাহলে কি করবো
রিয়াঃ ঠিক আছে এসব এখন বাদ।ম্যাডাম
আর সোহান বলো কি খাবে
আসমা….(কিছু আইটেমের নাম বলে)
রিয়াঃ আর সোহান কি খাবে?
আমিঃ বিষ খাবো, এখানে কি পাওয়া যাবে
আসমাঃ ঠাসসস,এতো কথা বলিস কেনো
আর আমি যা অর্ডার করেছি সেটাই
দুজনে খাবো।আপনারা অর্ডার করতে পারেন
রিয়াঃ ঠিক আছে
তারপর রিয়া খাবার অর্ডার দিলো।থাপ্পড়
খেয়ে গালে হাত দিয়ে চুপচাপ বসে আছি।
কারণ আমি চাই না আরো একটা থাপ্পড়
খেতে।এমনিতেই শাঁকচুন্নির যে রাগ।আর
হ্যা,আপনাদের তো বলাই হয়নি।সেদিন
রিয়াকে আমার আর আসমার কথা
বলার পর থেকেই রিয়া সাইফের সাথে
কথা বলতো।কিছুটা আন্দাজ করতে
পেরেছিলাম তারা দুজন এখন একে
অন্যকে ভালোবাসে কিন্তু নিশ্চিত ছিলাম
না।তবে আজ নিশ্চিত হলাম।এক সপ্তাহের
ব্যবধানে দুজন দুজনে ভালোবেসে ফেলল।
আর আমি,সেটা তো সেদিন থেকেই কুয়ার
মধ্যে পরে আছি যেদিন থেকে আসমা তার
কেবিনের ভিতরে আমার ডেস্ক করে দিছে।
সব সময় জ্বালাতন। সে যায় হোক,লাঞ্চ শেষ
করে অফিসে এলাম।
কাজ করছি এমন সময় আসমা চেয়ারটা
তার দিকে ঘুরিয়ে নিলো।
আমিঃ কি হলো আবার?
আসমাঃ …(কোনো কিছু না বলে আমার
কোলে এসে বসলো)
আমিঃ কি করছো এ..(মুখ ধরে)
আসমাঃ যেটা করছি সেটা করতে দাও
আমিঃ…….(নিশ্চুপ,কারণ মুখ ধরে রাখছে)
আসমাঃ বাবু তুমি এমন কেনো(কোলে বসে)
আমিঃ রাখ তোর বাবু
আসমাঃ দেখ এই রোমান্টিক সময় যদি
তুই এসব বলিস তোর খবর আছে কিন্তু
আমিঃ আমি এতো রোমান্টিক না।যে
তোর সাথে রোমাঞ্চ করবো এখন
আসমা কিছু না বলে আমার নাদান ঠোট
জোড়াকে নিজের মনে করে চুষতে লাগলো।
প্রায় ৭ মিনিট পর ছেড়ে দিলো।ছেড়ে
দেয়ার পর দুজনেই হাপাতে লাগলাম
আসমাঃ কেমন লাগলো বাবু
আমিঃ একদম জঘন্য
আসমাঃ তাহলে আবার দেয়
আমিঃ তার আর দরকার নাই
আসমাঃ কেনো(আমার কোল থেকে উঠে,
ডেস্কের উপরে বসে দু-পা চেয়ারের
দুই পাশে দিয়ে আমাকে দোলাতে দোলাতে বলল)
আমিঃ যদি আমার পেট খারাপ হয়
আসমাঃ হাহাহা পাগল,কিস করলে
পেট খারাপ হয় তোমাকে কে বলেছে
আমিঃ ফেসবুকে দেখেছিলাম।গার্লফ্রেন্ডকে
কিস করে পেট খারাপ বয়ফ্রেন্ডের
আসমাঃ মজা নাও
আমিঃ আরে না সত্যি দেখেছিলাম
আসমাঃ আচ্ছা এসব বাদ।এখন বলো,
তুমি আমাকে মিথ্যা বলতে কেনো
আমিঃ কি মিথ্যা বলতাম
আসমাঃ এই যে তুমি আমাকে ভালোবাসো না
আমিঃ সত্যিই ভালোবাসি না
আসমাঃ দেখা যাবে বিয়ের পর
আমিঃ কাদের বিয়ে
আসমাঃ তোমার আর আমার
আমিঃ হবে না বিয়ে
আসমাঃ বাজি?
আমিঃ আমি বাজি
আসমাঃ বাট কি বাজি
আমিঃ তুমি যা বলবে তাই
আসমাঃ ঠিক আছে,আমি যদি তোমাকে
বিয়ে করতে পারি তাহলে তোমার সাধ্যমত
কিছু কাজ করতে দিবো যেগুলো তোমার
হারে হারে পালন করতে হবে
আমিঃ ওকে,আর যদি বিয়ে না হয়
আসমাঃ তাহলে সারা জীবনের জন্য তোমার
জীবন থেকে চলে যাবো
আসমার কথা শুনে বুকের ভিতর নিজের
অজান্তেই ছ্যাঁত করে উঠলো।হয়তো
আমি ওকে হারাতে চাই না।কিন্তু আসমা
ওর পরিবার রেখে আমাদের পরিবারে
কিভাবে থাকবে। আসমা হলো বাবা মায়ের
একমাত্র সন্তান এটা ছাড়াও ওর বাবার
অনেক টাকা।ইচ্ছে করলে ওর বাবা একটা
ভালো কোনো পরিবারে তার মেয়ের বিয়ে
দিতে পারেন।কিন্তু আসমার কথা শুনে
এতোটা অসস্থি লাগছে কেনো।আমার
এমন চেহারা দেখে আসমা হেসে বলল..
আসমাঃ আরে ভয়ে পেয়েও না।তোমাকে
ছাড়া কোথাও যাবো না।প্রয়োজন হলে
তোমাকে জোর করে বিয়ে করবো
আমিঃ দেখা যাক
আসমা তখন কিছু না বলে উঠে আমার
কপালে চুমু খেয়ে বলল…
আসমাঃ কাজ করো এখন
আমিঃ হুম।
তারপর কাজে মন দিলাম।অফিস শেষ
করে বাইরে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছি
কিন্তু কোনো মতেই রিক্সার কোনো
খোজ নাই। হেটে যাবো বলে পা বাড়ালাম
এমন সময় আসমা গাড়ি দিয়ে রাস্তা আটকালো..
আসমাঃ বাবু উঠো
আমিঃ ঐ চুপ,সবসময় মজা ভালো লাগে না
আসমাঃ মজা কেনো করবো,আর উঠো
আমিঃ না থাক।আমি হেটেই যাবো
আসমাঃ ঐ উঠবি তুই
আমিঃ না
আসমাঃ শালা তুই উঠবি না মানে তোর
বাপ উঠবে(গাড়ি থেকে বের হয়ে)
আমিঃ তাহলে আব্বুকে গিয়ে বলো
আসমাঃ এটা কথার কথা।এখন তুই উঠ
(কলার ধরে গাড়ির মধ্যে নিয়ে গেলো)
আমিঃ তুমি আমাকে নির্যাতন করছো কেনো
আসমাঃ কি বললে,এটা নির্যাতন
আমিঃ তা নয়তো কি
আসমাঃ আর তুমি যে আমার সাথে ব্রেকআপ
করছিলা,সেটা আমাকে টর্চার করা হয়নি
আমিঃ….(নিশ্চুপ)
আসমাঃ এসব বাদ দিয়ে চুপচাপ বসে থাকো
আমিঃ হুম।
আসমাঃ আমার ননদীর কি খবর
আমিঃ ভালো
আসমাঃ কলেজ যায় রেগুলার
আমিঃ হুম যায়।
আসমাঃ আর বুড়ির কি খবর
আমিঃ দুদিন আগেই বাসায় চলে গেছে
আসমাঃ কে নিতে এসেছিলো
আমিঃ মামা আর মামী
আসমাঃ ওহ
কথা বলতে বলতে বাসায় চলে এলাম।
ফ্রেস হয়ে রুমে বসে আছি এমন সময়
রুমে তানহা এলো
আমিঃ কিছু বলবি
তানহাঃ হুম
আমিঃ হ্যা বল
তানহাঃ ভাইয়া, আজ যখন কলেজে যাচ্ছিলাম
তখন আসমা ম্যাডামের সাথে দেখা
হয়েছিলো
আমিঃ হুম কি হয়েছে
তানহাঃ এটা আমাকে দিছে(কানের ধুল)
আমিঃ এটার তো অনেক দাম।আর তুই
এটা নিতে গেলি কেনো
তানহাঃ আমি নিতে চাইনি।ম্যাডাম আমাকে
অনেক জোর করে দিয়েছে
আমিঃ তোর পছন্দ হয় এটা
তানহাঃ হুম অনেক
আমিঃ ঠিক আছে তাহলে এটা রেখে দে,
তবে আমি একটা ছবি তুলে নেই
তানহাঃ কেনো
আমিঃএমনি(ছবি তুলে)ওকে এখন তুই যা
তানহাঃ ঠিক আছে।
তানহা চলে যাওয়ার পর রাহুলকে কল
দিলাম। কারণ ওর বাবার জুয়েলার্সের
দোকান আছে
রাহুলঃ হ্যা দোস্ত বল
আমিঃ তোকে আমি একটা ছবি দিছি
সেটা দেখ আর আমাকে বল এরকম
কানের দুল আরো আছে নাকি
রাহুলঃ খাড়া আমি দেখছি
আমিঃ হুম
রাহুলঃ দোস্ত আছে(একমিনিট পর)
আমিঃ একটা আমার লাগবে
রাহুলঃ এটা আর এক জোড়ায় আছে
আমিঃ কেনো
রাহুলঃ আরে ব্যাটা, দুই জোড়া ছিলো কাল
রাতে এক জোড়া বিক্রি হয়ে গেছে
আমিঃ ওহ
রাহুলঃ হুম।ওকে কাল আসিস তাহলে
আমিঃ ঠিক আছে বাই
রাহুলের সাথে কথা বলে কেটে দিলাম।
সেদিন রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।

সকালে অফিসে যাওয়ার পথে রাহুলের
জুয়েলারির দোকান থেকে কালকের
ঐ কানের ধুলটা নিয়ে গেলাম।অফিসে
আজ তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য আগে
থেকেই রুমে বসে কাজ করছিলাম।
হঠাৎ কারো আগমন লক্ষ্য করতেই
দেখলাম ম্যাডাম এসেছে…
আসমাঃ আরে জানু,এতো সকাল সকাল
কেনো।আমার কথা কি মনে পরছিলো?
আমিঃ দেখুন ম্য..(থামিয়ে)
আসমাঃ তোমাকেই তো দেখছি
আমিঃ ধুর
আসমাঃ বাবুতা রাগ করেতে বুঝি(আহ্লাদী কণ্ঠে)
আমিঃ…..(নিশ্চুপ)
আসমাঃ কি হলো(পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে)
আমিঃ ছাড়ো…(ওকে ছাড়িয়ে)
আসমাঃ কি হলো
আমিঃ কিছু না।আর প্লিজ আসমা,তুমি
আমার পরিবারকে দয়া করতে হবে না
আসমাঃ মানে, কিসের দয়া
আমিঃ এইটা(পকেট থেকে দুল বের করে)
আসমাঃ এটা তোমার কাছে কেনো
আমিঃ তোমাকে ফেরত দেয়ার জন্য এনেছি
আসমাঃ কেনো
আমিঃ যার জিনিশ তাকে দিতে এসেছি
আসমাঃ কিন্তু আমি তো..(থামিয়ে)
আমিঃ সেসব আমি কিছু জানতে চাই না।
আর এটা তোমার জিনিস তুমিই রাখো
দয়া করে আমার পরিবারকে কিছু দান
করতে হবে না
আসমাঃ ঐ চুপ।আর দুল আমি নিলাম
ঠিক আছে।কিন্তু বাসর রাতে এটাই
তোর হাত থেকে পড়বো মনে থাকে জেনো
আমিঃ বিয়ে হলে তো
আসমাঃ দেখা যাবে। আর শোনো আমি
আজ অফিসে থাকতে পারবো না
আমিঃ তো আমি কি করবো
আসমাঃ কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকলে
সেগুলো তুমি সলভ করে দিবে
আমিঃ ঠিক আছে চেষ্টা করবো
আসমাঃ হুম।ঠিক আছে আমি যায় তাহলে
আমিঃ জ্বি
আসমা চলে যাওয়ার পর আবার কাজ
করতে লাগলাম।হঠাৎ আসমার ব্যবহারের
কথা মনে পড়লো।অফিসে এলো কিন্তু
কোনো কাজ না করে চলে গেলো।কি
এমন কাজ যে আসার সাথে সাথে চলে
যেতে হবে।আর এতোই যদি দরকারি
কাজ থাকে তাহলে আসার কি দরকার
ছিলো।সব কিছু মাথার উপর দিয়ে গেলো।
সেসব আর চিন্তা না করে কাজে মন দিলাম।
সারাটা দিন কাজ করতে অনেকটা বোরিং
লাগছে।কারণ প্রতিদিন আসমার সাথে
বক বক করতে করতে দিনটা পার হয়ে
যায়।কিন্তু আজ সে নেই।আগে বাইরে
কাজ করতাম তখন কারো সাথে কথা
বলতে পাড়তাম। কিন্তু এখন রুমের
মধ্যে কারো সাথেই কথা বলতে পারছি না।
কোনো রকম দিনটা পার করে বাসায় চলে
এলাম।বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে ছাদে গিয়ে
সিগারেট খেতে লাগলাম।অনেক দিন
ছাদে আসি না।তবে এখন কেনো জানিনা
সিগারেট অনেক ভালো লাগে।আগে
দুচোখেই দেখতে পারতাম না।কিন্তু এখন
নিজের অজান্তেই ভালো লাগা কাজ
করে।প্রতিদিন কমপক্ষে দুইটা খেতেই
হয়।আর না খেলে কেমন জানি মনটা
খচখচ করে।সে যায় হোক,সিগারেটটা
ধরিয়ে খেতে লাগলাম আর ছাদে হাটতে
লাগলাম।কিছু সময় ছাদে থাকার পর
রুমে চলে এলাম।একটু পর তানহা
ডেকে গেলো।আম্মু আব্বু নাকি ডাকছে।
তাই আর দেরি না করে আব্বু আম্মুর
কাছে গেলাম।
আমিঃআমাকে ডেকেছো
আব্বুঃ হুম
আমিঃ বলো
আব্বুঃ আগামি সোমবার তোমার বিয়ে
আব্বুর কথা শুনে মনে হচ্ছে আকাশ থেকে
পড়লাম। মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি।
আমিঃ আব্বু এটা স্বপ্ন নয়তো?
আম্মুঃ চুপ হারামজাদা,তোর সাথে কি
তোর আব্বু মজা করছে?
আমিঃ সেটা আমি কি করে বলবো,
মজাও তো করতে পারে
আব্বুঃ সোহান আমি সিরিয়াস
আমিঃ কিন্তু আব্বু পাত্রী তোমরা কই পেলে
তানহাঃ পাত্রী পাইনি।পাত্রী নিজে এসেই
আব্বু,আম্মুর কাছে ধরা দিছে
আমিঃ কিহ,কে সে
আম্মুঃ তোর অফিসের বস
আমিঃ কি বলছো এসব
আব্বুঃ ঠিকি বলছি।আমরা সবাই রাজি
এখন তুমি কি বলো
আমিঃ আব্বু এটা ঠিক হবে না
আব্বুঃ কেনো হবেনা
আমিঃ কারণ ওরা অনেক বড়লোক। আর
ওর বাবার সম্পত্তির গরমে থাকবে
আব্বুঃ আমার কি কম আছে?আর
মেয়েটা খারাপ না।তানহা সব বলেছে
তোর আর ঐ মেয়েটার কথা
আমিঃ তানহা
আম্মুঃ ওকে ভয় দেখিয়ে লাভ নাই।তোর
আব্বু যেটা বলছে সেটাই ফাইনাল
আমিঃ কিন্তু..(থামিয়ে)
আব্বুঃ কোনো কিন্তু নয়।সোমবার তোমার
বিয়ে মানে বিয়ে
আমিঃ ধুর ভাল্লাগেনা…..
আর কোনো কথা না বলে রুমে চলে এলাম।
ধুর আমাকে কোনো কিছু না বলেই বিয়ে
ঠিক করে ফেলার কোনো মানে হয়?
আর এসব বিয়ে টিয়ে কিভাবে ঠিক হলো,
তানহাকে জিজ্ঞাস করি দেখি ও জানে কিনা।
আমিঃ তানহা…
তানহাঃহুম বল(বাইরে দাঁড়িয়ে)
আমিঃ তুই বাইরে দাঁড়িয়ে কেনো?
তানহাঃ আমি জানি এখন যদি আমি
রুমে যায় তাহলে তুই মারবি বা বকা দিবি
আমিঃ আরে না।কিছু বলবো না
তানহাঃ প্রমিজ?
আমিঃ হুম আয়
তানহাঃ বল(রুমে এসে)
আমিঃ আমার বিয়ে ঠিক করতে কে এসেছিলো
তানহাঃ ম্যাডামের বাবা
আমিঃ তুই কি বাসায় ছিলি,আর কখন এসেছিলো
তানহাঃ বিকেল ৩টার সময়।আর ভাইয়া
তুই বিশ্বাস করবি না,ম্যাডামের বাবা
অনেক ভালো।প্রথমে আব্বু রাজি ছিলো
না।কিন্তু যখন বলল,আসমার কোনো
মা নেই।তখন আম্মুর মন গলে পানি
হয়ে যায়।আর আম্মু আব্বুকে কিছু একটা
বলে।যার জন্য আব্বু রাজি হয়ে যায়
আমিঃ ঠিক আছে।আর তোর কলেজ
কেমন চলছে?
তানহাঃ হুম অনেক ভালো।
আমিঃ কিছু বন্ধু হয়েছে
তানহাঃ হুম তিনজন।প্রিয়া,কেয়া,তিশা আর নুসরাত
আমিঃ ছেলে বন্ধু নাই?
তানহাঃ না…আর প্লিজ কারণ জানতে চাস না
আমিঃ ঠিক আছে।এখন তুই যা
তানহা আর কিছু না বলে চলে গেলো।
রুমে শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম, কি
থেকে কি হচ্ছে। আসমার পরিবার
যেমন বড়লোক আমরা সেরকম নয়।
কিন্তু তারপরেও তার বাবা রাজি হয়ে
গেলো,হয়তো মেয়ের সুখের কথা ভেবেই
রাজি হয়েছে।কিন্তু আসমার সাথে যদি
আমার বিয়েটা হয়েও যায়, তাহলে তো
আমার জীবন একদম তেজপাতা করে
ছাড়বে। তার উপর বাজি তো আছেই।
যা হবে দেখা যাবে এসব ভেবে আর লাভ নেই।
সেদিনের মতো ঘুমিয়ে গেলাম।
পরেরদিন….
তানহাঃ কিরে ভাইয়া আজ অফিস যাবিনা?
আমিঃ হুম যাবো
তানহাঃ তাহলে ঘুম থেকে উঠ।আজ আমিও
তোর সাথে অফিস যাবো
আমিঃ তুই কেনো যাবি
তানহাঃ ম্যাডাম যেতে বলেছে
আমিঃ কেনো
তানহাঃ সেটা জানার জন্যই তো যাবো
আমিঃ ঠিক আছে
তানহাঃ হুম তাড়াতাড়ি উঠ
আর শুয়ে না থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে নিলাম।
তারপর সকালের নাস্তা করে অফিসের
জন্য বের হলাম সাথে তানহা।দুজন একটা
রিক্সা করে অফিসে চলে এলাম।
রিয়াঃ আরে তানহা,কেমন আছো
তানহাঃ এইতো আপু ভালো,আপনি কেমন আছেন
রিয়াঃ ভালো,তা কি মনে করে আজ
তানহাঃ ম্যাডাম ডেকেছেন
রিয়াঃ ওহ,তাহলে যাও
তানহাঃ হুম
কথা বলা শেষ করে তানহাকে সাথে করে
কেবিনে ডুকলাম।আমাদের দেখে কাজ
বন্ধ করে উঠে দাঁড়ালো। আমি আমার
চেয়ারে গিয়ে বসলাম। ওপর দিকে
আসমা আর তানহা শোফার উপরে বসলো।
আসমাঃ তানহা,তুমি কি এখনো আমার
উপরে রেগে আছো।যদি রেগে থাকো
তাহলে তুমি বলো আমি তোমার পা
ধরে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি
তানহাঃ ছি:ছি: কি করছেন ম্যাডাম।আর
সেসব আমি অনেক আগেই ভুলে গেছি
আসমাঃ মিথ্যা বলছো,তুমি এখনো আমাকে
ক্ষমা করতে পারোনি
তানহাঃ আরে বলছিতো ম্যাডাম ক্ষমা করে দিছি
আসমাঃ তাহলে ম্যাডাম বলছো কেনো
তানহাঃ ঠিক আছে আর বলবো না
আসমাঃ হুম এখন থেকে ভাবি বলবে
আমিঃ ঐ কিসের ভাবি।এখনো বিয়ে
হয়নি,তানহা একদম ভাবি বলবি না
তানহাঃ ভাইয়া তুই চুপ কর।ভাবির সাথে
আমাকে কথা বলতে দে
আমিঃ….(আর কিছু বললাম না)
আসমাঃ হুম। আর এই নাও দুল
তানহাঃ কিসের দুল
আসমাঃ যেটা তোমাকে দিয়েছিলাম।
কিন্তু তোমার ভাইয়া আমাকে ফেরেত
দিয়ে দেয় সেটা
তানহাঃ মানে,তুমি আমাকে যে দুল
দিয়েছিলে সেটা তো বাসায়
আসমাঃ তাহলে এটা…(দুল দেখিয়ে)
তানহাঃ এটা তো একদম ঐ দুলটার মতো।
কিন্তু তুমি আমাকে যে দুল দিয়েছিলে
সেটা আমি আলমারিতে রেখে দিছি
আসমাঃ তাহলে সোহান যে এটা আমাকে
ফেরত দিলো
তানহাঃ ভাইয়া এসব কি
আমিঃ যেটা দেখছিস সেটা
তানহাঃ মানে
আমিঃ তোকে যে দুল আসমা দিয়েছিলো
সেরকম অন্য একটা দুল তাকে ফেরত
দিয়েছি।তুই আমার বোন, তোকে কেউ
দয়া দেখিয়ে কিছু দিবে সেটা আমি
মানতে পারবোনা। তাই তাকে সেরকম
অন্য একটা দুল কিনে ফেরত দিয়েছি
আসমাঃ একদম চুপ, আমি আমার ননদকে
দিতেই পারি।এতে দয়ার কি আছে?
আমিঃ বিয়ের আগে আমি কিছু নিতে দিবোনা
তানহাঃ ভাবি,আর কিছু বলেবে?
আসমাঃ না, এটার জন্যই ডেকেছিলাম
তানহাঃ ওহ।তাহলে আমি যায়
তানহাঃ ভাইয়া গেলাম
আমিঃ সাবধানে যাস।আর গিয়ে আমায়
একটা কল করিস
তানহাঃ ঠিক আছে
তানহা চলে যাওয়ার পর আবার কাজে
মন দিলাম।কিছু সময় পর পেছন থেকে
গলা জড়িয়ে ধরলো।বুঝতে বাকি
রইলো না এটা আসমা ছাড়া কেউ না।
আসমাঃ বাবু আমি বুঝতে পারছি কেনো
তুমি আমাকে দুল দিয়েছো
আমিঃ কেনো দিয়েছি
আসমাঃ কারণ দুলটা তোমার অনেক
পছন্দ হয়েছে।যার জন্য আমাকে দিতে
চেয়েছিলে।কোনো কারণ না পেয়ে এভাবে
আমাকে দিলে তাই না
আমিঃ জ্বি না।
আসমাঃ আমি জানি
আমিঃ জানো ভালো।এখন ছাড়ো কাজ করবো
আসমাঃ না, ছাড়াবো না
আমিঃ প্লিজ ছাড়ো কাজ করতে দাও
আসমাঃ তাহলে একটা পাপ্পি দাও
আমিঃ পারবো না আমি
আসমাঃ কেনো পারবে না
আমিঃ এমনি
আসমাঃ একটা দাও না প্লিজ
আমিঃ ওকে দাঁড়াও।
আসমাঃ হুম দাও
মুখটা আসমার মুখের কাছে নিতেই
আসমা ওর চোখ বন্ধ করে ফেললো।
আজ কেনো জানি নিজেকে আসমার
দিকে আকষন করছে।টানা টানা চোখ
যা দেখে যে কেউ ওকে দেখে ফিদা হয়ে যাবে।
আসমার চোখ বন্ধ করাই আমিও
ওর ঠোঁটের দিকে তাকালাম। দেখলাম
ঠোঁটটা কাঁপতে শুরু করে দিছে।যখনি
ওকে কিস করবো ঠিক সেই সময়.

আসমাকে কিস করবো এমন সময় বললাম..
আমিঃ আসমা আমার না খুব জোরে
ইয়ে চেপেছে….
কথা বলার পরপরই চোখ খুলে আমার
দিকে রাগি মুডে তাকালো।মনে হচ্ছে
আমাকে এখন ইচ্ছা মতো পিটাবে..
আসমাঃ ইয়ে মানে..?
আমিঃ ইয়ে মানে হিসু,এক নাম্বার যাকে বলে
আসমাঃ কিস করার সময়ই এটা পাওয়ার
ছিলো নাকি তুই এমনি বলছিস
আমিঃ ছি:আমি কি তোমাকে মিথ্যা
বলতে পারি বলো(ডাহা মিথ্যা কথা)
আসমাঃ জানা আছে তোর সত্য কথা
আমিঃ তাহলে আমি যাই
আসমাঃ যাই মানে, কোথায় যাবি
আমিঃ ঐযে হিসু করতে
আসমাঃ তোর সাথে আমিও যাবো
আমিঃ কিহ,তুমি যাবে কেনো
আসমাঃ দেখবো তাই
আমিঃ ছি:তোমার লজ্জা লাগবে না?
আসমাঃ চুপ কর হারামি।আমি কি
তোর মতো লুচু নাকি।দেখবো তুই
ইয়ে করবি নাকি আমাকে মিথ্যা বললি
এইরে মনে হচ্ছে ধরা পরে গেলাম।এতো
কষ্টে একটা মিথ্যা কাহিনী বললাম সেটারও
ফেলুদা বানিয়ে দিলো।
আসমাঃ কি হলো,কি ভাবছো
আমিঃ বিয়ের কথা
আসমাঃ কার বিয়ে
আমিঃ আমার আর আমার
আসমাঃ আমার আর আমার মানে কি
আমিঃ সরি সরি,আমার আর তোমার
আসমাঃ তাই বুঝি,কি ভাবছো বাবু
আমিঃ সময় হলেই বলবো
আসমাঃ ঠিক আছে
আমিঃ হুম।এখন যাই
আসমাঃ হুম যাও
সেখানে আর দাঁড়িয়ে না থেকে বাথরুমে
চলে গেলাম।লম্বা একটা নিশ্বাস ফেলিয়ে
সিগারেট ধরালাম। সালার যতোই বলি
সিগারেট আর খাবো না ততোই নিজেকে
নিকোটিনের ধোয়াই আবদ্ধ করে
ফেলি।সিগারেটটা তাড়াতাড়ি শেষ করে
কেবিনে আসলাম।চেয়ারে বসতে বসতে
আসমা প্রশ্ন করলো
আসমাঃ এতো সময় লাগে
আমিঃ হুম
আসমাঃ এদিকে আসো
আমিঃ কেনো
আসমাঃ একটা মিটিং আছে সেটার জন্য
তোমাকে প্রস্তুতি নিতে হবে
আমিঃ অন্য কাউকে নাও
আসমাঃ না, তুমি মানে তুমি
আমিঃ ঠিক আছে।আর মিটিং কবে
আসমাঃ আগামীকাল লাঞ্চের পর।তবে
তারা সকালেই আসবে
আমিঃ ঠিক আছে।দাও(ফাইল নিয়ে)
আসমাঃ এখানে সব আছে।সমস্যা হলে
আমার থেকে জেনে নিবে
আমিঃ আর যদি ভুল হয়,তাহলে আমার
বোনের মতো আমাকেও বকা দিবে?
আসমাঃ না তোমাকে থাপ্পড় দিবো।এক
কথা শুধু বার বার বলে
মনে হচ্ছে রেগে গেছে তাই আর কিছু
বললাম না।সারাদিন আমাকে রাগাই
কই আমি তো কিছু বলিনা।আর এটুকুতেই
রেগে গেলো।ওকে আমিও আর ডিস্টার্ব
করবো না।মাথা থেকে সব ঝেড়ে ফেলে
কাজে মন দিলাম।অনেক সময় কাজ
করার পর বাইরে যেতেই দেখলাম সবাই
লাঞ্চ করতে গেছে।তাই আমিও কেবিনে
চলে আসলাম।দেখলাম আসমা টিফিন
বের করছে।ওকে টিফিন বের করা দেখে
আবার বাইরে চলে এলাম।অবশ্য আসমা
দুএকবার ডাক দিয়েছিলো কিন্তু আমি
না শোনার ভাব করে বাইরে চলে আসি।
লাঞ্চ টাইম যার জন্য কোনো কাজ নেই।
তাই অফিসের বাইরে এসে একটা চায়ের
দোকানের সামনে এসে সিগারেট ধরালাম।
লাঞ্চ টাইমটুকু পার করতে করতেই ৫টা
সিগারেট শেষ, ভাবছি আরো একটা ধরাবো
কিন্তু মোবাইলে সময় দেখার পর আর
খেলাম না।তারপর আবার অফিসে চলে
এলাম।প্রায় সবাই আবার কাজে মন
দিয়েছে।আমিও কেবিনে ডুকলাম।
আসমাঃ কোথায় গেছিলা
আমিঃ বাইরে
আসমাঃ কেনো
আমিঃ লাঞ্চ করতে
আসমাঃ আমি ডাকলাম শুনলে না কেনো
আমিঃ শুনতে পাইনি
আসমাঃ ঠিক আছে,আসো এখন খাবো
আমিঃ আমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি
আসমাঃ জানি তুমি মিথ্যা বলছো(কাছে এসে)
আমিঃ সত্যি বলছি
আসমাঃ না মিথ্যা(জড়িয়ে ধরে)
আমিঃ….(নিশ্চুপ)
আসমাঃ কুত্তা তোর শরিরে কিসের গন্ধ এটা
আমিঃ মা.মা.মানে কিসের গন্ধ
আসমাঃ তুই সিগারেট খাস(ভালো করে
নিশ্বাস নিয়ে বলল)
আমিঃ আরে না আমি এসব খাই না
আসমাঃ তাহলে আমি কি ভুল গন্ধ পাচ্ছি
আমিঃ সেটা আমি কি করে বলবো
আসমাঃ কুত্তা,বানর,ইঁদুর তুই বাইরে
এটা খাওয়ার জন্যই গেছিলি আমি
কি কিছু বুঝিনা মনে করছিস
আমিঃ…..(নিশ্চুপ)
আসমাঃ বাথরুমে চল
আমিঃ কেনো
আসমাঃ ফ্রেস হবি
তারপর বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিলাম।
ফ্রেস হয়ে কেবিনে ডুকে কাজ করবো
কিন্তু আসমা বাধা দিলো।
আমিঃ কি হলো আবার
আসমাঃ খাবার খাবো তারপর কাজ
আমিঃ তো তুমি খাও,আমি খেয়েছি
আসমাঃ ঐ চুপ সিগারেট খোর। আমি
ভালো করেই জানি তুই কিছু খাস নাই
তাই বেশি কথা না বলে আই তাড়াতাড়ি।
একপ্রকার আসমার জোড়া জুড়িতে
লাঞ্চ করলাম।সেদিনের মতো অফিস
শেষ করে বাসায় চলে এলাম।তবে বাসায়
এসে অনেক অবাক হলাম,কারণ মামা মামি
আর নিলা বাসায়।হালকা কিছু কথা বলে
ফ্রেস হতে গেলাম।ফ্রেস হয়ে বসে আছি
এমন সময় তানহা আর নিলা এলো।
আমিঃ এইযে বুড়ি তোমরা কখন আসলে
নিলাঃ দুপুরে
আমিঃ কেনো এসেছো
নিলাঃ সেটা জানিনা।
আমিঃ তানহা,কেনো এসেছে রে?
তানহাঃ তোর বিয়ের জন্য
আমিঃ ওহ
বসে ওদের সাথে তখন আড্ডা দিতে লাগলাম।
রাতে সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে
গেলাম।
পরেরদিন……
মিটিং থাকার জন্য আজ একটু তাড়াতাড়ি
অফিসে গেলাম।কিছু সময় কাজ করার
পর ক্লাইন্টের সাথে আলাদভাবে দেখা
করার জন্য গেলাম।গিয়ে তো আমি
পুড়াই অবাক।কারণ সেখানে জয়ের
খালাতো ভাই সাব্বির।সাব্বির আমাদের
ব্যাচের ছিলো।কিন্তু কলেজ ছিলো ভিন্ন।
মনে মনে ভাবলাম সাব্বিরকে দিয়ে
কিছু করা যায় নাকি।যেই ভাবা সেই
কাজ। মাথার ভিতর একটা শয়তান প্ল্যান
কষলাম।
সাব্বিরঃ ঐ সালা তোকে ডাকছি শুনতে পাসনি
আমিঃ খেয়াল করিনি(স্বাভাবিক হয়ে)
সাব্বিরঃ তুই এখানে কেনো
আমিঃ এই অফিসে কাজ করি,আর তুই
সাব্বিরঃ তোদের অফিসের সাথে একটা
মিটিং আছে,যার জন্য আমাকে সিলেক্ট
করেছে।তাই এখানে আসা।এসে তোর
সাথে দেখাও হয়ে গেলো
আমিঃ হুম।তবে একটা কাজ করতে হবে
সাব্বিরঃ কি কাজ
আমিঃ আয় ওদিকে বসে তোকে সব বলছি
তারপর এক পাশে গিয়ে সাব্বিরকে সব
বুঝিয়ে বললাম।ওকে কি কি করতে হবে।
সাব্বিরঃ কিন্তু সোহান,তুই জানিস আমার
বিয়ে হয়ে গেছে।এখন যদি এসব করি
আর সেটা যদি আমার বাসায় জেনে
যায় তাহলে আমার বউ আমাকে কি
করবে একটু ভেবে দেখছিস
আমিঃআরে ব্যাটা কিছু হবে না
সাব্বিরঃআর যদি হয়
আমিঃধুর আমি বলছি না, কিছু হবে না
সাব্বিরঃহলে সালা তোর খবর আছে
আমিঃ হুম
সাব্বিরের সাথে আরো কিছু কথা বলে
কেবিনে চলে এলাম।কিছু সময় কাজ
করার পর লাঞ্চ করে মিটিং রুমে
আমি আর আসমা গেলাম।সবাই আগে
থেকেই রুমে ছিলো।দেখলাম সাব্বির
নিজেও আছে।সবার উপস্থিতিতে শুরু
করলো মিটিং। প্রায় ১ঘন্টা পর শেষ
হলো।নিজেও একটু হাফ ছেড়ে বাচলাম।
কেবিনে আমি আর আসমা বসে আছি।
এমন সময় সাব্বির এলো।যাক সালার
তাহলে সাহস আছে।
সাব্বিরঃ আসবো?
আসমাঃ হুম আসুন।প্লিজ সিট
সাব্বিরঃ থ্যাংকস। আপনাকে কিছু
কথা বলার ছিলো
আসমাঃ জ্বি বলুন
সাব্বিরঃ আসলে আমার আপনাকে
ভালো লাগছে।আপনি যদি চান তাহলে
আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই
আসমাঃ সরি,আমার অলরেডি বিয়ে
ঠিক হয়েই আছে
সাব্বিরঃ কিন্তু আপনি চাইলে তো বিয়েটা
বন্ধ করতে পারেন
আসমাঃ আপনাকে আমি বিয়ে করবো না।
আপনি যেতে পারেন
সাব্বিরঃ যদি একটু ভেবে দেখেন তাহলে…
আসমাঃ ঠাসসসসস ঠাসসসস কুত্তার বাচ্চা
তোকে বলছি না আমার বিয়ে ঠিক হয়ে
আছে।তাহলে বার বার এতো কথা
বলছিস কেনো?
সাব্বির থাপ্পড় খেয়ে গালে হাত দিয়ে
চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।আর আসমা
ইচ্ছা মতো বকা দিতে লাগলো।অবস্থা
বেগতিক, তাই ওদের কাছে গেলাম।
আমিঃ ভাই আমি সরিরে..
সাব্বিরঃ সালা রাগ তোর সরি,কতো
জোড়ে থাপ্পড় মাড়ছে
আমিঃ আরে আমি জানি নাকি,এমনটা হবে
আসমাঃ কি হবে..?
আমিঃ কিছুনা
সাব্বিরঃ চুপ সালা,আমাকে মার খাইয়ে
ভেবেছিস তুই বেচে যাবি?কখনো না।
শোনেন ভাবি, সোহান আপনাকে পরিক্ষা
করার জন্য আমাকে আপনার সাথে
এমন এমন কথা বলতে বলে।প্রথমে
আমি রাজি হয়নি।কারণ আমার বাসায়
বউ আছে।কিন্তু ওর জোড়া জুড়িতে
রাজি হয়।যার ফল স্বরুপ থাপ্পড় পেলাম
আসমাঃ তারমানে আপনি সব সোহানের
কথা মতো করেছেন
সাব্বিরঃজ্বি
আসমাঃ আমি আসলে সরি,ভুল হয়ে গেছে
প্লিজ কিছু মনে করবেন না।আর আপনি
এখন জান আমি ওকে দেখাচ্ছি এটা
করার জন্য কি শাস্তি পাবে
আসমার কথা শুনে সাব্বির চলে গেলো।
মনে হচ্ছে আমার উপর দিয়ে এখন
ভুমিকম্প যাবে।
আসমাঃ কেনো এমন করছিলা
আমিঃ সাব্বির তো বলল,পরিক্ষা করার জন্য
আসমাঃ ঠাসসস আমাকে তোর বিশ্বাস হয়না
আমিঃ হুম হয়তো(গালে হাত দিতে)
আসমাঃ ঠাসসস তাহলে পরিক্ষা করার কি আছে
আমিঃ এমনি মজা করছিলাম
আসমাঃ হাত সরা
আমিঃ না
আসমাঃ সরা বলছি
আমিঃ না সরাবো না
আসমা আর কিছু না বলে আমার মাথার
চুল ধরে তার আর আমার দুইজোড়া ঠোটকে
নিজের আয়ত্বে করে চুষতে লাগলো।
প্রায় ১০ মিনিট পর ছেড়ে দিলো।জোড়ে
জোড়ে নিশ্বাস নিতে লাগলাম।কথায়
কথায় শুধু একটা নিষ্পাপ ছেলেটার
উপর অত্যাচার চালাই।
আসমাঃ কেমন দিলাম
আমিঃ জঘন্য
আসমাঃ তাহলে আরেকটা দেয়
আমিঃ না না,আর লাগবে না
আসমাঃ তাহলে বলো কিসটা কেমন লাগলো
আমিঃ হ্যা অনেক ভালো
আসমাঃ হুম গুড বয়।যাও এখন কাজ করো।।।
তারপর আবার কাজে মন দিলাম

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে এলো।
অনেক সুন্দর করে বাসা সাজানো হয়েছে।
আব্বু কিপটে হলে কি হবে শখ আছে অনেক।
যদিও বিয়ে করতে প্রথমে রাজি ছিলাম
না।কিন্তু এখন রাজি।কারণ এই শীতের
রাতে একটা তুমি দরকার, তাছাড়া আব্বু
আম্মুর কথা ফেলতে পারতাম না।সে যায়
হোক,বাসায় সব আত্মীয়স্বজন চলে এসেছে।
দুপুরবেলা সবাই মিলে আমাকে গোসল
করিয়ে দিলা।তারপর রেডি হয়ে আসমাদের
বাসায় রওনা দিলাম।বাসায় গিয়েই হলো
সব সমস্যা।পাত্রী পক্ষকে নাকি গেট
সাজানোর জন্য মোটা কিছু টাকা দিতে
হবে।তাই আমাকে ভিতরে ডুকতে ইচ্ছা
করছে না।মেজাজ পুরোই গরম।এটা
যদি বিয়ে বাসা ছাড়া অন্য কোথাও হতো
তাহলে সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে বাসায় চলে
যেতাম।কিন্তু এসেছি বিয়ে করতে, বউটারে
সাথে না নিয়ে গেলে কেমন হয়।
জয়ঃ আপনাদের কতোটাকা লাগবে।।
মেয়েঃ মাত্র ১৫ হাজার
জয়ঃ ১৫ হাজার সেটাও আবার মাত্র
মেয়েঃ হুম।তাড়াতাড়ি বের করেন
জয়ঃ আমরা তো এতো টাকা আনিনি
অন্য মেয়েঃ তাহলে ১০হাজার দিন
রাহুলঃ আর একটু কম রাখা যায়না
মেয়েঃ জ্বি না।টাকা বের করেন
অনেকক্ষণ মেয়েদের পাম দেয়ার পর
৭ হাজারে রাজি হয়ে যায়।সব নিয়মনীতি
মেনে বিয়েটা সম্পন্ন হয়।আসমাকে
সাথে করে বাসায় চলে এলাম।সবাই এখন
নতুন বউ দেখতে ব্যস্ত। এই ফাকে বন্ধুরা
সবাই মিলে ছাদে চলে এলাম।অনেকক্ষণ
ধরে মনের মধ্যে খচখচ করছিলো।তাই
সিগারেট ধরালাম।
রাহুলঃ দোস্ত বিড়ালটা একটু সাবধানে মারিস
আমিঃ ধুর সালা,আগে বল বউয়ের
থাপ্পড়ের হাত থেকে কিভাবে বাচা যায়
জয়ঃ থাপ্পড় মানে
আমিঃ তোরা বুঝবি না
সিগারেট শেষ করে রুমে চলে এলাম।
বাসরঘর….
রুমে এসে দেখি বউ আমার খাটের উপর
লম্বা ঘুমটা টেনে বসে আছে।ভাবলাম
এই সময় বউটাকে রাগালে কেমন হয়?
দরজা আটকিয়ে দিলাম এক চিৎকার..
আমিঃ আম্মুউউউউউউ চোররররর
এতো জোরে চিৎকার শুনে আসমা কেপে
উঠলো।ঘুমটা সরিয়ে আমার কাছে এসে
বলল…
আসমাঃ কোথায় চোর
আমিঃ আপনি নিজেই তো চোর
আসমাঃ কুত্তা হারামি?
আমিঃ কি ব্যাপার গালি দিচ্ছেন কেনো
আসমাঃ আমি তোর বউ, তোকে গালি
দিবো,মাইর দিবো কোনো সমস্যা
আমিঃ বউ হলে না হয় এসব করতেন,
কিন্তু আপনি তো আমার বউ না
আসমাঃ মানে,তাহলে তোর বউ কে
আমিঃ আসমা,,,,??
আসমাঃ তাহলে আমি কে
আমিঃ সেটা আমি কি করে বলবো
আসমাঃ আচ্ছা এদিকে আসো তো
আমিঃ কেনো
আসমাঃ তোমার মাথায় কি সমস্যা
হয়েছে,এমন আজেবাজে কথা বলছো কেনো
আমিঃ যা সত্যি সেটাই তো বলছি
আসমাঃ ঠিক আছে তুমি এদিকে আসো
আমিঃ না জামুনা
আসমাঃ আমাকে দেখতে দাও কি হয়েছে
আমিঃ ঠিক আছে দেখো(মুখ এগিয়ে দিয়ে)
আসমাঃ ঠাসসসস
আমিঃ…(থাপ্পড় হজম করে গালে হাত
দিয়ে করুণ ভাবে বউয়ের দিকে তাকিয়ে
রইলাম।পৃথিবীতে মনে হচ্ছে আমিই প্রথম
ব্যক্তি যে কিনা বাসর ঘরে বউয়ের হাতে
থাপ্পড় খেলাম)
আসমাঃ তুই সিগারেট খাস
আসমার এমন কথা শুনে গলা শুকিয়ে
গেলো।কি বলবো বুঝতে পাড়ছিনা।জানি
সত্যি বললেও মার খাবো মিথ্যা বললে খাবো।
কি বলবো না বুঝে তুতলাতে শুরু করলাম।
আসমাঃ তুই কি তুতলা
আমিঃ না
আসমাঃ তাহলে প্রশ্নের উত্তর দে
আমিঃ যাই বলি সেটাতেই তো মারবে
আসমাঃ সত্যি কথা বললে মারবো না
আমিঃ অফিসে জয়েন্ট করার আগে থেকে
খাওয়া শুরু করছি
আসমাঃ কেনো এসব খাও(কান্না বিজড়িত কণ্ঠে)
আমিঃ তুমি কান্না করছো কেনো
আসমাঃ এমনি,ঠিক আছে ঘুমিয়ে যাও(কান্না করে)
আমিঃ এবার কিন্তু আমিও কান্না করবো
আসমাঃ তুমি কি এসব ছেড়ে দিতে পারবে না
আমিঃ তুমি কান্না থামিয়ে একটা হাসি
দিলেই পাড়বো
কথাটি শোনার পর আসমা ফিক করে
হেসে দিলো।এখন আসমাকে ভালো
লাগছে।কিছু মানুষের কান্না কেনো জানি
সহ্য হয়না।আর আসমার কান্না সেটা
কখনো হবেও না।যখন ওর সাথে ব্রেকআপ
করি, তখন ও অনেক কান্না করছিলো
যেটা আমার একদম সহ্য হচ্ছিলো না।
সেদিন থেকে ১সপ্তাহ কলেজ গেছিলাম না।
গেলেই হয়তো ওর কান্না দেখতাম।
আসমাঃ কি হলো কি ভাবছো
আমিঃ ভাবছি বাসর করবো কিভাবে
আসমাঃ জ্বি না সোনা,আমার সাথে
যে বাজি ধরছিলা সেগুলো আগে পুরন
করো তারপর বাসর
আমিঃ কিহহ
আসমাঃ কিহ নয় জ্বি
আমিঃ থাকবো না আমি এই বাসায়
আসমাঃ ঠিক আছে চলে যাও
আমিঃ আমি যাবো কেনো,এটা আমার
বাপের বাড়ি।তুমি যাও
আসমাঃ এএএ আইছে বাড়ি দেখাইতে,
কথা না বলে ফ্লোরে ঘুমাও
আমিঃ আমার কিন্তু ঠাণ্ডা লাগবে
আসমাঃ তাহলে ঘুমাতে লাগবে না।খাটেই
আসো
আমিঃ ধন্যবাদ বউ,তুমি আমার অনেক
অনেক ভালো আর কিউট বউ
আসমাঃ থাক আর পাম দেয়া লাগবে না
আমিঃ না সত্যি।আচ্ছা বউ আমি তোমাকে
একটু জড়িয়ে ধরি
আসমা কিছু কথা না বলে আমার পেটের
উপর বসলো।
আমিঃ এখানে বসলে কেনো
আসমাঃ তুই আমারে বউ বউ করছিস কেনো
আমিঃ কেনো বউ
আসমাঃ চুপ,আমার কি নাম নেই।
আমিঃ আছে, বাট এটা ভালোবেসে বলছি
আসমাঃ রাখ তোর ভালোবাসা(পেটের উপর
থেকে নেমে)
আমিঃ ঠিক আছে
আসমাঃ লাইট বন্ধ করো
আমিঃ লাইট বন্ধ করলে আমার ভয় লাগে
আসমাঃ আজ লাগবে না
আমিঃ কেনো
আসমাঃ এতো কেনো কেনো করিস কেনো,
যেটা বলছি সেটা কর।
লাইটটা বন্ধ করতেই আসমা পাগলের
মতো কিস করতে লাগলো।আরো অনেক
কিছু হয়েছে,কিন্তু আপনাদের বলা যাবে না।
বললে আমিও লজ্জা পামু,সাথে আপনারাও
লজ্জা পাবেন।তাই এটা না বলাই ভালো।
আর যারা একান্ত জানতে চান বাসরঘরে
কি হয় তাহলে বিয়ে করে নেন।যতোই হোক
শীতের রাত বলে কথা ।।
দুজনে কখন ঘুমিয়ে গেছি খেয়ালি করিনি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আসমা
আয়নার সামনে বসে চুল ঠিক করছে। আমি
উঠে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে আসমার
চুলের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে দিলাম।হঠাৎ
এমন করাই আসমা অনেকটা কেপে
উঠলো।তারপর স্বাভাবিক হয়ে বলল…
আসমাঃ কখন উঠলা
আমিঃ এই মাত্র
আসমাঃ শাওয়ারে যাও
আমিঃ হুম একটু পর(আস্তে আস্তে)
আসমাঃ কেনো,আবার কি হলো
আমিঃ রাতের মতো আরো একবার ট্রাই করি
আসমাঃ একদম না স্যার।তাড়াতাড়ি বাথরুমে
যাও।আর কোনো কথা না
একপ্রকার জোর করেই আসমা আমাকে
বাথরুমে ডুকিয়ে দিলো।তারপর গোসল
করে রুমে এসে দেখি আসমা নেই।হয়তো
আম্মুর কাছে গেছে।ড্রেস পরে রুমে
বসে আছি এমন সময় নিলা আসলো…
নিলাঃ ভাইয়া তোমাকে ফুফু ডাকছে
আমিঃ কেনো
নিলাঃ নাস্তা করার জন্য
আমিঃ ঠিক আছে চলো
নিলাকে সাথে করে নাস্তার টেবিলে আসলাম।
আব্বু,মামা আর তানহা আগে থেকেই
টেবিলে বসে আছে।
আমিঃ অন্যরা সবাই কোথায়
তানহাঃ রান্না ঘরে
আমিঃ তুই যাস নাই কেনো
তানহাঃ আম্মু বলল, তুই গিয়ে টেবিলে বস
আমিঃ আর তুই বসে পড়লি
তানহাঃ হ্যা,তাছাড়া কি করবো
আমিঃ রান্না শিখতে পারিস না
তানহাঃ রান্না আমার শিখতে হবে না।তুই শিখিস
আমিঃ আমি না হয় শিখবো,কিন্তু তুই শিখবি
না কেনো
তানহাঃ সেটা আমার ইচ্ছা
আমিঃ শ্বশুর বাড়ি গিয়ে কি করবি শুনি
তানহাঃ আব্বুউউউ
আব্বুঃ ঐ চুপ থাক,আমার মেয়ের রান্না
করতে হবে না
তানহাঃ হুম, শোন আব্বু কি বলে
আমিঃ……….????
তানহার সাথে কিছু সময় ঝগড়া করার পর
নাস্তা করে রুমে চলে এলাম।একটু পর
আসমা এলো..
আসমাঃ জানো আজ আব্বু আমাকে
নিতে আসার কথা ছিলো
আমিঃ হুম,কেনো কি হয়েছে
আসমাঃ কিন্তু আমি যাবোনা
আমিঃ কেনো যাবেনা
আসমাঃ আমার ইচ্ছা
আমিঃ কিন্তু তোমার আব্বু তো মন খারাপ
করবে।ভাববে আমরা তোমাকে যেতে দিতে
চাচ্ছি না
আসমাঃ কিচ্ছু ভাববে না।আমি আব্বুকে
বলে দিছি।
আমিঃ ঠিক আছে।
আসমাঃ হুম।আর শুনো আগামীকাল আমরা
ঘুরতে যাবো
আমিঃ মাত্র বিয়ে করলাম, এখনি যেতে হবে
আসমাঃ হ্যা হবে।তুমি যাবেনা
আমিঃ কে বলল আমি যাবো না।যাবো তো
আসমাঃ গুড বয়(গাল টেনে)
আমিঃ তাহলে পাপ্পি দাও
আসমাঃ পাপ্পি নিয়ে কি করবে
আমিঃ উপভোগ করবো
আসমাঃ তাই,,,উম্মাহহহহ হয়েছে
আমিঃ হুম।
তারপর দুজনে মিলে আড্ডা দিতে লাগলাম।
এখন মনে হচ্ছে আসমাকে এতোদিন কষ্ট
দিয়ে ভুল হয়েছে।অনেক অনুশোচনাও হচ্ছে
আসমার সাথে কোনো কারণ ছাড়াই
ব্রেকআপ করে।সেসব ভেবে আর লাভ নেই।
জীবনটাকে নতুন করে সাজাতে এখন
আসমাকেই আমার লাগবে।

বিয়ের এক সপ্তাহ পর…
আসমাঃ কি হলো,তোমার কি গোসল করা হবেনা
আমিঃ হয়ে গেছে প্রায়
আসমাঃ তারাতারি বের হও
আমিঃ হুম
৫মিনিট পর
আমিঃ আমি রেডি
আসমাঃ আজ থেকে কিন্তু অনেক বড়
দায়িত্ব তোমার কাধের উপর
আমিঃ হুম,কিন্তু এগুলো কি দরকার ছিলো
আসমাঃ কোনগুলো
আমিঃ তোমার বাবার কোম্পানির এমডি
পদে জয়েন্ট করা।তুমি নিজেই তো
পারফেক্ট ছিলা তাই না
আসমাঃ না,আমি কখনো ছিলাম না আর
এখনো নেই।আর থাকতেও চাই না।আমি
চাই আমার পরিবারের সাথে সময় কাটাতে।
আমিঃ কিন্তু তোমার বাবা
আসমাঃ দেখো সোহান ,আমার বাবার সম্পত্তি
মানে আমার।আর আমার মানে তোমার।
বিয়ের আগে কি বলেছিলা,আমি যদি
তোমাকে বিয়ে করি তাহলে তুমি আমার
কথা শুনবে।তাই আজকেও শুনতে হবে
আমিঃ সেই তো এক প্রমিজ পেয়েছো
আসমাঃ হুম বাবু।তানহাকেও তো সময়
দেয়া লাগবে, তা না হলে তোমার বোনটা
ম্যাডাম হবে কি করে
আমিঃ আমার বউটা দেখছি সব খেয়ালি রাখে
আসমাঃ দেখতে হবে তো বউটা কার
আমিঃ হুম।এখন যায়
আসমাঃ কিন্তু আমার ওটা?
আমিঃ ওটা মানে
আসমাঃ তুমি জানোনা
আমিঃনা তো(মজা করে)
আসমাঃ যাও তোমার জানতে হবে না
আমিঃ বাবুটা রাগ করেছে বুঝি(জড়িয়ে ধরে)
আসমাঃ………(নিশ্চুপ)
আমিঃ আচ্ছা এখন দিচ্ছি উম্মাহহ
আসমার কপালে ভালোবাসার পরশ
একে দিতেই অভিমানী মুখটা হাসিতে
পরিণত হলো।রুম থেকে বের হয়ে সবাইকে
বিদায় দিয়ে বাইরে চলে এলাম।অফিস
থেকে একটি গাড়ি পাওয়াতে গাড়িতে
উঠে স্টার্ট দিলাম।
এখন আপনাদের বলি,বিয়ের পরের দিন
থেকেই আসমা কোনো না কোনো আবদার
করেই চলেছে।সেগুলোর মধ্যে অন্যতম
আবদার হলো,তার বাবার কোম্পানিতে
বস হয়ে জয়েনিং করা।কিন্তু বরাবরের
মতো আমি এটা রাজি ছিলাম না।কারণ
সবাই হয়তো বাজে কথা বলবে।আর
আমরা যে দেশে বসবাস করি সেই
দেশের কিছু মানুষ নামে পশু আছে।
যারা কিনা সব দলেই থাকে।একজনকে
উৎসাহ দিয়ে খারাপ কাজ করাবে এবং
পরবর্তীতে তাকেই অপরাধী বলে সবার
চোখে খারাপ বানাবে।এছাড়াও অনেক
গুন আছে আমাদের এই দেশের যেসব
শুরু করলে হয়তো শেষ হবার নয়।
সে যায় হোক,গল্পে আসা যাক। আসমার
কথায় যখন বার বার আমি রাজি
হচ্ছিলাম না তখন শুরু হয় তার রাগ
অভিমান এবং প্রমিজ।প্রতিটা রাত
এই সব কথা বলে কান একদম ঝালা
ফালা করে দিছে।এক রাতের কথাই
বলা যাক,
আমিঃ বাবু,মাঝখানে কোলবালিশ না
দিলে হয় না?
আসমাঃ হ্যা হয়,যদি তুই আমার বাবার
কোম্পানিতে বস হিসাবে জয়েন করিস
আমিঃ তোমার বাবার কোম্পানিতে আমি
বস হয়ে জয়েন করতে যাবো কেনো
আসমাঃ আমি বলছি তাই
আমিঃ পারবো না।
আসমাঃ সেটা তো পারবি না।বিয়ের আগে
প্রমিজ করছিলি সেটাও পূরণ করিস না
আমিঃ তোমার একটা কথা ছাড়া সবই তো
পূরণ করে আসছি
আসমাঃ সব গুলো করেছো আর এটা করলে
তোমার কি সমস্যা হবে
আমিঃ সবাই অন্য কিছু ভাববে
আসমাঃ রাখ তোর ভাবা ভাবি।যতোদিন না
তুই আমার কথাই রাজি হচ্ছিস ততোদিন
আমাদের মাঝে এই কোলবালিশ থাকবে
আমিঃ কিন্তু আসমা।
আসমাঃ কোনো কিন্তু নাই।এখন ঘুমা
এভাবে আর কয়দিন যাবে। নতুন বিয়ে
করেছি তার উপর শীতকাল। আগে না
হয় কোলবালিশকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতাম
কিন্তু এখন তো কোলবালিশ সরানোও
যাবে না।প্রতিদিন আসমার এমন
প্যানপ্যানানি আর শীতকালের জন্য গতরাতে রাজি হয়ে যায়।আমার
রাজি হওয়া দেখে আসমা এতোটা
খুশি হয় যার জন্য গতরাতে নতুন করে
ভালোবাসার উদ্ভব ঘটে। আপনাদের
সাথে কথা বলতে বলতে অফিসে
চলে আসছি।
নতুন বস আসবে তাই সবাই আগে থেকেই
শুভেচ্ছা জানানোর জন্য অপেক্ষা করছে।
অফিসের ভিতরে আসতেই সবাই একে
একে শুভেচ্ছা জানালেন। আজ প্রথম
দিন তাই তেমন কোনো কাজ নেই।
বোরিং লাগছে তাই আসমাকে কল দিলাম…
আমিঃ কি করো
আসমাঃ নিলাকে পড়াচ্ছি
আমিঃ নিলা..!ও কবে এলো
আসমাঃ তুমি অফিসে যাওয়ার পরই,মামি
ওকে নিয়ে আসছে।
আমিঃ ওহ
আসমাঃ এই শোনা না
আমিঃ হুম বলো
আসমাঃ আমি চাইছি নিলা এখন থেকে
আমাদের সাথেই থাকুক
আমিঃ কিন্তু মামা মামি
আসমাঃ ওনাদের তুমি ম্যানেজ করবে
আমিঃ যদি না মানে
আসমাঃ তারপরেও তুমি বোঝাবে
আমিঃ ঠিক আছে আমি মামিকে
কল করে সব বলছি।
আসমাঃ ঠিক আছে রাখছি।
আমিঃ হুম।
কথা বলা শেষ করে কিছু সময় ভাবার
পর মামিকে কল দিলাম
আমিঃ হ্যালো মামি কেমন আছো
মামিঃ ভালো,তুই কেমন আছিস
আমিঃ তুমি আমার কথা শুনলে ভালো
থাকবো না।।
মামিঃ তাই নাকি,আচ্ছা বল কি কথা
আমিঃ মামি,আমি আর আসমা চাই
নিলা আমাদের বাসায় থেকে পড়াশোনা
করুক।আর আসমা ওকে বাসায় পড়াশোনা
করাবে।তুমি আর মামা যদি রাজি হও
তাহলে সব সম্ভব
মামিঃ কি বলছিস এসব, নিলা এখনো
অনেক ছোট আর তাছাড়া নীলিমা(নিলার
বোন,মানে আমার মামাতো বোন।এক
নাম্বারের কুত্তী। সব সময় আমার পিছু
লেগে থাকতো।কিন্তু এখন পড়াশুনার
জন্য বাইরে থাকে।)তো বাসায়ই
থাকে না।তাহলে আমি আর তোর মামা
কিভাবে থাকবো বল
আমিঃ তাহলে তুমি আর মামাও বাসায়
থাকো,তাহলেই আর সমস্যা হবে না
মামিঃ মজা নিস….
অনেক বোঝানোর পর মামি রাজি হয়।
তবে এমনি এমনি রাজি হয়নি।
সপ্তাহে ২দিন নিলাকে নিয়ে মামা মামির
কাছে থাকতে হবে।এসব ভেবে আর লাভ
নেই।রাজি হয়েছে এটাই অনেক।।
৪বছর পর……
এই কয়েক বছরে সবার মাঝেই অনেক
চেঞ্জ এসেছে।নিলা আর আমাদের মাঝে
থাকে না।মামা মামি এখন ওকে বাসায়
নিয়ে পড়াশোনা করাই।কিন্তু তারপরেও
আমি, আসমা, তানহা এবং আমাদের
মেয়ে জুথি সবাই মিলে নিলাদের বাসায়
সপ্তাহে একদিন ঘুরতে যায়।।
অন্যদিকে তানহা,বোন আমার সবার কথাই
পূরণ করেছে।নিজের মায়ের কথাটা
পূরণ করতে পেরে নিজেকে সুখী ভাবে না।
সে নাকি আমার মতো ভাই পেয়ে সুখী।
পাগলি একটা। ও হ্যা,এখন তানহা ওর
কলেজের বাংলা ব্যাকরণ ম্যাডাম।।
আব্বুর আম্মুর কথাতেই একটা ছেলের
সাথে ওর সামনের মাসে বিয়ে।।আর
জুথি হলো আমাদের মেয়ে।বয়স দুই
বছর। আব্বু আম্মু বেশিরভাগ সময়
এখন জুথির সাথেই কাটাই।আমি
অফিসে আর আসমা বাসার কাজ।
ভালোই কাটতে লাগলো আমাদের
এই জীবন…
আমিঃ আসমা
আসমাঃ হুম বলো
আমিঃ এদিকে আসো আগে
আসমাঃ কি বলবে সেটা আগে বলো
আমিঃ আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে
আসমাঃ তুমি থাকো আমি খাবার নিয়ে আসছি
আমিঃ ও খাবারে পেট ভরবে না
আসমাঃ কেনো ভরবে না শুনি
আমিঃ কারণ আমার অন্য খাবার লাগবে
আসমাঃ এখন দিতে পারবো না
আমিঃ কেনো বাবু..(কাদে হাত দিয়ে)
আসমাঃ কাজ করতে হবে তাই
আমিঃ একটা দাও না প্লিজ
আসমাঃ একটাই কিন্তু
আমিঃ হুম একটা
আসমাঃ…উম্মাহ… (লিপ কিস করলো)
আমিঃ এতো কম কেনো
আসমাঃ বাকিটুকু রাতে দিবো
আমিঃ সত্যি
আসমাঃ হুম সত্যি….
এখন শুধু রাতের জন্য অপেক্ষা।আল্লাহ
তাড়াতাড়ি রাতটা দিয়ে দাও।