-বারবার ব্যাথায় কুকিয়ে ওঠছে অনু।ধবধবে সাদা বিছানার চাদরে ছোপ ছোপ রক্ত লেগে গেছে। কিন্তু তাতে বিন্দু মাত্র ভুরুক্ষেপ দেখাচ্ছে না নির্ঝর।সে তার নিজের কাজে ব্যাস্ত।

নির্ঝরের প্রত্যেকটা স্পর্শে কেবল রাগ আর ক্ষোভ মিশে রয়েছে।একটুও ভালোবাসা নেই।
অসহ্য যন্ত্রনা মুখ বুজে সহ্য করছে অনু।

অনুর চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ছে।আজই নির্ঝরের সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়েছে অনুর।
অনুর বাবা মা বেশ বেছে বেছে একমাত্র মেেয়র জন্য পছন্দ করেছে নির্ঝরকে।তারপর ধুমধাম করে বিয়েটা সম্পূর্ন হয়েছে।

বিয়ের প্রথম রাতেই স্বামীর এমন ভয়ংকর রূপ কিছুতেই মানতে পারছে না অনু।বড্ড কষ্ট হচ্ছে।বড্ড বেশি

রাতের প্রায় শেষের দিকে নির্ঝর ক্লান্ত হয়ে অনুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছে।

কিন্তু অনুর চোখে ঘুম নেই।স্মৃতির আঙ্গিনায় বার বার উকি মারছে কেউ একজন।
নিজেকে নির্ঝরের বাহুবন্ধন থেকে মুক্ত করে কোনো রকমে একটা ওড়না পেচিয়ে বাথরুমে চলে যায় অনু।

শাওয়ারটা ছেড়ে দিয়ে ইচ্ছে মতো কান্না করতে থাকে।

যদি না সায়ন অনুকে এভাবে একা ফেলে চলে যেত তাহলে নির্ঝর নামের এই মানুষটা কখনোই তার জীবনে আসতো না। আর না কখনো এভাবে নিজের স্বামীর কাছে….।

কথাগুলো ভাবতেই অনুর দুচোখ ভিজে ওঠে।।।

অনু কোনো রকমে সাওয়ারটা শেষ করে ওযু করে বেরিয়ে আসে।
বিছানার দিকে চোখ পড়তেই দেখে নির্ঝর গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
গায়ে কাথাটা টেনে দিয়ে জায়নামাজ আর কোরআন শরীফটা বুকে নিয়ে ঘরের এককোনে চলে যায়।প্রথমে কয়েকপাতা কোরআন পড়তেই বাহিরে আজানের ধব্বনি কানে আসে।তারপর নামাজ

অনু নামাজ শেষ করে পাশ ফিরতেই চোখ যায় তার ঠিক পাশেই সাদা ধবধবে পান্জাবী পরে নামাজে বসেছেন তার স্বামী নির্ঝর।

এতোক্ষন নামাজে এতো মগ্ন ছিলো যে পাশে কেউ আছে সেদিকে খেয়ালই ছিলো না।

নামাজ শেষ করে অনু ওঠে দাড়াতেই নির্ঝরও ওঠে দাড়ায়।
তারপর অনুকে একটানে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। কাছে টেনে এনে কপাঁলে একটা চুমু এঁকে দেয়।

তারপর ধপ করে ছোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।

ঘটনাটা আকষ্মিকভাবে ঘটায় সবই অনুর মাথায় উপর দিয়ে যায়।

:::কই এই ছোয়াই তো কোনো ঘেন্না নেই যা আছে তা হলো ভালোবাসা।
তহলে রাতের ছোয়াই কি ছিলো??

অনু অবাক হয়ে অপলক তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে।সে সোফায় একটা বালিস জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।

কি নিষ্পাপ মুখটা।বিয়ে থেকে শুরু করে এতোটা সময় নির্ঝরের সাথে থাকলেও লোকটাকে ভালো করে দেখা হয়নি অনুর।

“আসলে হৃদয়ের মাঝে কেউ লুকিয়ে থাকলে কি আর কারো দিকে চোখ যায়”

হটাৎই অনুর চোখ যায় বিছানার দিকে।বিছানার বেশ কিছু জায়গায় রক্তের দাগ স্পষ্ট
অনুর চোখ আবার জলে ভিজে যায়……

এরকম একটা লোকের সাথেই তাকে কাটাতে হবে জীবনের বাকি রাতগুলো।

-শাড়ির আঁচলটা ঠিক করো। এভাবে শরীর দেখিয়ে আর যার মন পাও না কেন আমার মন পাবে না।

কথাটা বলেই ঘরের দিকে পা বাড়ায় নির্ঝর।

সেই ভোর রাত থেকেই অনু বারান্দায় দাড়িয়ে আছে।ভোরের আকাশ অনেকদিন দেখা হয় না।
সকালের রক্তিম সূর্য আর কিচির মিচির পাখির গান।হালকা বাতাস।

অনেক দিন পর এভাবে খোলা আকাশ দেখতে বড্ড ভালো লাগছিলো অনুর।সারা রাতে হৃদয়ে যে ঝড় শুরু হয়েছিলো তার অনেকটাই শান্ত হয়ে গিয়েছে।

মৃদু বাতাসে শাড়ির আঁচলটা বুক থেকে একটু সরে গিয়ে পেটের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিলো ব্যাস তা দেখেই নির্ঝরের এমন মন্তব্য।

:::ভুল করেই তো সরে গেছে ইচ্ছে করে তো আর দেখিয়ে বেরাচ্ছি না আমি কি তেমন মেয়ে নাকি??স্বামীই তো পর পুরুষ তো আর নয় এমন করে বলার কি আছে…..
কি নোংরা মানুষ আর কি নোংরা চিন্তা ভাবনা তার ছি!!

কথাগুলো নিজে নিজেই বলছিলো অনু।

হটাৎই দরজার খটখট শব্দে অনু ছুট লাগায় ঘরের দিকে।এতো চিন্তার মাঝে অনু ভুলেই গিয়েছিলো বেশ বেলা হয়ে গেছে।

নির্ঝর ওয়াশরুমে।বোধয় আরেক দফা শাওয়ার নিচ্ছে।বার বার এতো শাওয়ার নেওয়ার কি আছে।
নিক না তাতে আমার কি!ও

অনু দরজা খুলতেই ধরফর করে নীরা ভেতরে ঢুকে পড়ে…….

নীরা হলো নির্ঝরের ছোট বোন…

-কি গো ভাবি এতো বেলা হলো এখনো ঘুম ভাঙ্গছে না বুঝি??
-ঘুমোলে তো ঘুম ভাঙ্গবে ঘুমালাম কখন!!(মনে মনে)
-কিছু বললে??
-কই না তো
-তোমার বর কই??
-শাওয়ারে!!
-ওওও আচ্ছা তো এবার তোমাদের ভালোবাসাবাসির সমাপ্তি ঘটলে নিচে নামো মা তখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে…..
-ভালোবাসা মাই ফুট(মনে মনে)
-কিছু বললে?
-না তো
-ওও তুমি খুব মিষ্টি তাই তো আমার ভাই সেই তুমি তুমি করে একেবারে……
-কি??
-ইয়ে মানে কিছু না।আসছি আমি তোমরা তারাতারি নিচে এসো!!!

অনু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সেখানেই দাড়িয়ে আছে…..
কি বলে গেল??

অনু পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে নির্ঝর দাড়িয়ে আছে।
চোখ দুটো লাল টুকটুকে হয়ে আছে।বোধয় এক্ষুনি টুপ করে রক্ত চলে আসবে।নাকের মাথাটাও লাল হয়ে আছে।নাকটা ফুলে আছে….

নির্ঝর এক দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে।অনুর দিকে নয় অনুর গলায় পড়ে থাকা চেইনটার দিকে।

অনুর কেমন ভয় ভয় করছে।।।
-কিছু বলবেন??
-(..)
-এভাবে কি দেখছেন??

অনু একটু পেছাতেই নির্ঝর অনুর হাত ধরে একটানে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়
তারপর অনুর ঠোটে ঠোট মিলিয়ে দেয়।অনু বার বার ছোটার চেষ্টা করছে।কিন্তু পারছে না কিছুক্ষন পর নির্ঝর নিজেই অনুকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়। অনু হটাৎ ধাক্কায় টাল সমলাতে না পেড়ে দুম করে গিয়ে খাটের কোনে বারি খায়।কপালে একটু লাগলেও কাটে নি।
তবে ব্যাথ্যা করছে।

এতোক্ষনে নির্ঝর ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে।অনু বরফের মতো সেখানেই জমে গেছে।
কি হচ্ছে তার সাথে এসব??

“আচ্ছা যদি সায়ন আমাকে এভাবে একা ফেলে চলে না যেতো যদি বিয়েটা সায়নের সাথে হতো তখনই কি এরকম কিছু ঘটতো”

“হয়তো না…..!!!
তবে সে তো চলে গেছে।চলে যাবে কেন পালিয়ে গেছে।
এসবের মাঝে আমাকে একা ফেলে পালিয়ে গেছে…না কি কেউ তাকে দূরে সড়িয়ে দিয়েছে”

কিছুক্ষন চুপচাপ কান্না করার পর নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে নিচে নামে।
এখন সব কিছুই মেনে নিতে হবে।স্বামী বলে কথা!!

নিচে অনুর শ্বাশুড়ি ননদ শ্বশুড় সবাই টেবিলে বসে আছে করছে…
বাড়ির সবাই খুব ভালো।তাদের কাছে অনু যেন এক মহামূল্যবান জিনিস।তাতে একটু আঁচরও যদি লাগে তাতে বোধয় মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে……
তবে অনু শ্বাশুড়ি একদম চুপ চাপ।কোনো কথা বলছে না।
অনুর দিকে একবার ফিরেও তাকাচ্ছে না।
নির্ঝরের সাথে গোটা বিয়েতে অনু তার শ্বাশুড়িকে একবার ও দেখে নি।বোধয় তিনি এই অনুষ্ঠানে নিজেকে জড়াতেই চান নি।

বিষয়টা অনুর চোখে বড্ড লাগছে কিন্তু মনে দাগ কাটছে না।
“নতুন বউ বলে কথা”
আর ভালোই তো লাগছে এতো আদর যত্ন মন্দ লাগার প্রশ্নয় ওঠে না”
তবে অনুর ধারণা মতে শ্বাশুড়িরা এমনই হয়।
তবে সায়নের মা ভদ্র মহিলা ছিলো একদম এরকম বড্ড রাগী।তবে অনুকে তার ভারী পচ্ছন্দ ছিলো।।।

আজ অনুর বউ ভাত।
অনুর মা বাবা ভাই ভাবি সবাই এসেছে….

অনু এতো লোকের মাঝে মাকে টেনে নিয়ে আড়ালে চলে যায়
এতোটা সময় বোধয় সে মায়েরই অপেক্ষায় ছিলো!!
মাকে জড়িয়ে ইচ্ছে মতো কেঁদে দেয়

-অনু
-মা আমাকে নিয়ে চলো আমি থাকবো না এখানে
-কেন রে বাবুই কি হয়েছে??
-আমি সায়নের কাছে যাবো।সায়ন কোথায়??
-অনু!! (ধমকিয়ে)
-বলো না মা আমার সান কোথায়??
-অনু…..
-মা প্লিজ এই লোকটার সাথে থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব!!এই লোকটা খুব বাজে….

অনুকে কথার মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে।

-অনু নির্ঝর খুব ভালো ছেলে একটু মানিয়ে নাও…ও তোমাকে সুখে রাখবে।

(অনুর মা কথাগুলো বলে মাথা নিচু করে ফেলে….)
-সায়নকে ছাড়া আমি সুখে থাকতে পারবো না মা।
মা প্লিজ বলো না সায়ন কোথায়।আমি সায়নের কাছে চলে যাবো……

মেয়ের ছলছল চোখের দিকে তাকিয়ে অনুর মা অনামিকা আড়া মুখ খোলে

-অনু আসলে সায়ান….

কোথা থেকে দুম করে নির্ঝর চলে আসে।অনুর মাকে ইশাড়ায় চুপ করিয়ে দেয়।

-অ্যান্টি বাহিরে খেতে দিয়েছে আপনি খাবেন না চলুন!!

-হুম্ম বাবা চলো।।

অনুর মা যাওয়ার আগে ছলছল চোখে একবার নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়।

অনুর মা চলে যায়।অনু মায়ের পেছন পেছন যেতে লাগলে নির্ঝর অনুর হাত ধরে টেন মারে

অনুও হুমড়ি খেয়ে পড়ে নির্ঝরের বুকে।

-কি হলো হাত ধরেছেন কেন ছাড়ুন!!
-(…)
-কি অসভ্যতামি হচ্ছে শুনি।
-(…)
-ছাড়ুন অসভ্য লোক একটা….!!
-(…)

নির্ঝর অনুকে শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরে আছে।
তারপর পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে অনুর চোখের নিচে টেপ্টে যাওয়া কাজলটা মুছিয়ে দেয়।।।
কান্না করার ফলে চোখের নিচে কাজলটা টেপ্টে গিয়েছিলো!!

“তোমার চোখে দেখেছিলেম আমি আমার সর্বনাশ”

-কিহ্
-(…)
-কি বললেন??
-জানি না!!
-নিজে বলে এখন বলছেন জানি না।
-হুম্ম সত্যিই জানি না তোমাকে এখন ঠিক কি করা উচিত
-মানে??
-জানি না!!!

কথাটা বলেই নির্ঝর রুমালটা পকেটে রেখে দিয়ে হাটা ধরে।
অনুও নির্ঝরের পেছন পেছন হাটছে।হাটছে না রিতিমতো ছুটছে….
নির্ঝর ইয়া লম্বা মানুষ।তার উচ্চতার কাছে অনু নিছকই বাচ্চা।
“উফ একেবারে হাতি একটা”

অনুর কাছে তার স্বামীকে পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় চরিত্র বলে মনে হচ্ছে।
যার হৃদয়ের বেলাভূমিতে কখনো মেঘ তো কখনো বৃষ্টি।
আবার মাঝে মাঝে রোদ্দুরও উকি মারে……!!!
কি চায় এই রহস্যময় মানব!!
না রহস্যময় স্বামী নামক এক অজানা চরিত্র….!!

নির্ঝর ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে অনুর দিকে।অনুর ভয়ে বুক কাঁপছে….যদি কাল রাতের মতো আবার!!!
“না না অসম্ভব…..”

বউ ভাতের অনুষ্ঠান শেষে সবাইকে বিদায় দিয়ে অনু ঘরে চলে আসে।পোশাক পাল্টে….
বেশ আয়েশ করে বিছানায় বসতেই নির্ঝরের আগমন ঘটে।

নির্ঝরকে দেখে বিছানার একপাশে গুটিসুটি মেরে বসে পড়ে অনু।
নির্ঝর ঘরে ঢুকে অনুর দিকে তাকাতেই অনুর কাল রাতের কথা মনে পড়ে যায়।

নির্ঝরকে এগিয়ে আসতে দেখে অনু দুম করে দাড়িয়ে যায়।
একটা ছোট্ট ঢোক গিলে বলতে শুরু করে…..

-দেখুন মি.চৌধুরী আপনার সাথে আমাকে জোড় করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।আমি অন্য কাউকে ভালোবাসতাম। আর এখনো বাসি।কথাগুলো আমি আপনাকে কালই বলতাম কিন্তু আপনি তো আপনার কাজে না না স্বামীগিরি ফলাতে ব্যস্ত ছিলেন তাই বলার সুযোগটাই হয়ে ওঠে নি…..কিন্তু শুনে রাখুন যে দিন সে ফিরে আসবে সেদিন আমি…

বাকি কথা বলার সুযোগ হয়নি অনুর নির্ঝর অনুর চুলে মুঠি ধরে নিজে দিকে টেনে নেয়।তারপর ঠোটে ঠোট মিলিয়ে দেয়।

অনু বার বার হাত পা ছুড়ছে কিন্তু কিছু করার উপায় নেই।দুচোখ
অনু নির্ঝরকে সর্ব শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিতেই নির্ঝর পেছনে সরে যায়।

-আপনি কি চান বলুনতো এভাবে বার বার জোড় করছেন কেন।যদি এতোই শরীরের নেশা হয়ে থাকে তাহলে পতিতা পল্লী গেলেই পারতেন। কেন আমার আর সায়নের মাঝে এলেন???

নির্ঝর বাক রুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে অনুর দিকে।

“তুমি তার কাছে যেতে চাও যে তোমার সবটা চায় না কিন্তু তার কাছে যেতে চাও না যে তোমার ভালোমন্দ সবটা চায়”

কথাগুলো বলেই নির্ঝর বিছানা থেকে একটা বালিস ঢিল মেরে অনুর দিকে ছুড়ে দেয়।

অনু বালিসটা হাতে নিয়ে বাঁক রুদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে।

আর কোনো কথা হয়নি দুজনের মাঝে।
নির্ঝর খাটের উপর উবু হয়ে শুয়ে পড়ে আর অনু এখনো ওভাবেই দাড়িয়ে আছে।

-লাইটটা ওফ করে দাও (অনুর দিকে না তাকিয়ে)

অনু একটা ভেংচি কেটে সোফার দিকে পা বাড়াতেই
-না এই ঘর তোমার না এই ঘরের জিনিসগুলো তাই এই ঘরের কোনো জিনিস ব্যবহার কারার অনুমতি তোমার নেই!!
-তাহলে আমি কোথায় শোবো?
-মেঝেতে??
-কি?
-ইচ্ছে কারলে বারান্দা ফাকা আছে!!

অনু গোল গোল চোখে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে।
এই লোকটা উন্নত শ্রেনীর অসভ্য।
অসভ্যতার সকল স্তর পাড় করে এসেছে।

কথাগুলো নিজের মনে মনে বলে অনু মেঝেতেই গুটি শুটি মেরে সুয়ে পড়ে।।।একটু কষ্ট হলেও
বেশ ক্লান্ত থাকায় ঘুম চলে এসেছে খুব দ্রুত।
আর তো মাত্র একটা দিন কালকে বাড়ি গিয়েই সায়নের কাছে চলে যাবে অনু সারা জীবনের জন্য।
সায়নের কথা মনে পড়তেই অনুর কাছে কোনো কষ্ট যেন কষ্টই মনে হচ্ছে না।

“আচ্ছা সায়ন কি মেনে নিবে আমাকে”
“নিবে না কেন যা হয়েছে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে এটাতো একরকম ধর্ষনই বলা যায়।সায়নের ভালোবাসার কাছে এসবই তুচ্ছ”

উওর গুলো নিজেই নিজের মতো সাজিয়েছে অনু।।

ভোর রাতে একটু চোখ মেলতেই অনু দেখতে পায় নির্ঝর নিচের দিকে ঝুকে উবু হয়ে তাকিয়ে আছে অনুর দিকে।

অনু বেশ ভায় পেয়ে যায়
“আবার কি কাল রাতের মতো”

“আচ্ছা অনু কখনো কি শুনেছো কোনো ছেলে কোনো মেয়ের নাক ফুলের প্রেমে পড়ে??
কখনো কি শুনেছো একটা মেয়ের গলুমলু গালের প্রেমে পড়ে??
কখনো কি শুনেছো কোনো ছেলে কোনো মেয়ের গালের মাঝখানে পড়া ছোট্ট টোলের প্রেমে পড়ে??
আমি পড়েছি….একবার নয় বার বার পড়েছি।
সে পড়ে প্রেমের পুড়ে ছারখার হয়েছি তবুও বলতে পারিনি”

কথাগুলো অনুর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

-মি.চৌধুরী কি বলছেন কি এই সব??
-জানি না!!

কথাগুলো বলেই নির্ঝর ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।

সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে সদর দরজার কাছে যেতেই
রাহেলা বেগম নির্ঝরের মায়ে চোখে পড়েন।ভোর বেলায় কোরআন তেলওয়াত করার অভ্যেস ওনার।একটু পিপাসা পেয়েছিলো তাই পানি খেতে এসে কাউকে যেতে দেখেন।নিচু গলায় ডেকে ওঠেন
-কে ওখানে
-আমি মা
-নির্ঝর
-এতো ভোর ভোর কই যাও আব্বু
-একটু বাহিরে যাবো ভালো লাগছে না….

আর কথা বাড়ান নি ওনি।
নির্ঝরের যখন মন খারাপ থাকে তখন সে বাহিরে চলে যায় হাটতে

খোলা আকাশ মৃদু বাতাস এসব নাকি নির্ঝরের কাছে মন ভালো কারার মেডিসিন।।

এখন বেশ ভোর হয়ে গেছে।তেমন আলো না ছড়ালেও বেশ সব কিছু স্পস্ট দেখা যাচ্ছে……

নির্ঝরের বলা কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই বাহিরে আজানের ধ্বনি কানে যায়।

অনু ঝটপট নামাজ পড়ে নেয়।
নামাজের বিছানায় কেঁদে বুক ভসিয়ে দেয়
অনুর চাওয়া বলতে ঐ একজনই “সায়ন”

সকাল সকাল শ্বশুড় বাড়ির সবার আবদার তারা আজ নতুন বউয়ের হাতে বানানো নাস্তা খাবে।

অনুও রান্না ঘরে ঢুকে বেশ হেলেদুলে রান্না করছে।
আজই তার এ বাড়িতে শেষ দিন।
তাই না হয় একটু সবার আবদার রাখলাম তাতে দোষের কি!!

খাবার টেবিলে সবাইকে খাবার দেওয়া হয়ে গেছে যে যার মতো বসে পড়েছে।
তবে রাহেলা বেগম সোফায় বসে অনুর গতিবিধী লক্ষ করছে।
অনু সবার সাথে নিজের প্লেটটাও সাজিয়ে ফেলেছে।

এবার অনু শ্বাশুড়ি মায়ের দিকে চোখ পড়ে…

-অ্যান্টি আসুন না খেতে বসুন

এবার রাহেলা বেগম তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে
-কোনো মেয়ের নিজের স্বামীর কথা ভুলে যেতে পারে হয়তো কিন্তু কোনো মা নিজের ছেলের কথা ভুলতে পারে না!!!

কথাগুলো বলে ওনি সিড়ি বেয়ে উপরে ওঠে যান।

“সত্যি তো ওনি সেই কখন বেরিয়েছে গেছে এখনো ফিরলো না তবে কি আর বাড়ি যাওয়া হবে না”

অনুর মনটা খারাপ হয়ে যায়…..

হটাৎই পেছন থেকে কেউ হুংকার দিয়ে ওঠে….

-অনু তারাতারি তৈরী হয়ে নাও।

অনু পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে নির্ঝর দাড়িয়ে আছে।

অনুর আর খাওয়া হলো না খুশির ঠ্যালায় নাচতে নাচতে উপড়ে চলে যায়।

আজ অনু আর নির্ঝর জোড় বেধে অনুদের বাড়ি এসেছে।
বিয়ের পর প্রথম মেয়ে জামাই বাড়ি এসেছে অনুর বাবার আনন্দের অন্ত নেই।

সবাই নির্ঝরকে নিয়ে ব্যস্ত আর অনুর দুচোখ একজনকে খুজছে।

হটাৎই অনুর চোখ যায়…
দরজার আড়ালে….

দরজার কাছে যেতেই দেখে সোহা সেখানে ঠোট উল্টে কাঁদছে!!

অনুর দুচোখ সোহাকেই খুজছিলো।
অনু কোনো দিকে না তাকিয়ে সোহার কাছে ছোট লাগায়….

-সোহা তোর ভাই কোথায়??
-অনু আপু ভাইয়া ….
-আমাকে তোর সাথে যেতে বলেছে তো??
-(…)
-চল সবাই এখন মি.চৌধূরীকে নিয়ে ব্যস্ত এই সুযোগ তুই বাহিরে অপেক্ষা কর আমি আমার ব্যাগ নিয়ে আসছি….!!!

সোহা হলো সায়নের একমাত্র ছোট বোন

(বাকি পরিচয় পরে দিবো)

সোহা নিরবে বাহিরে বেরিয়ে যায়।
অনুও ঘরে গিয়ে গুটি গুটি পায়ে সদর দরজা পেরিয়ে বাহিরে চলে আসে।

সে চলে যাচ্ছে তার ভালোবাসার মানুষ সায়নের কাছে।
আর পেছনে ফেলে যাচ্ছে তার দুই দিনের স্বামীকে……

ছাদের এক কোনে চুপটি করে বসে আছে অনু।চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি পরছে।এরকম কিছু হবে সেটা তার কল্পনারও বাহিরে।

বার বার সায়নের কথা মাথায় ঘুরছে।

“কোই ভালো তো তোমায় কম বাসিনি তাহলে এভাবে অভিমান করে ছেড়ে চলে গেলে কেন??”

সায়নের সাথে প্রথম দেখা প্রেম সব যেন চোখের সামনে ভাসছে।
এই তো ছাদের এই কর্নারটাই দাড়িয়েই সায়নের সাথে প্রথম চোখা চোখি হয়েছিলো অনুর…….

অতীতে ডুব দেয় অনু…..

সায়ন হলো অনুদের প্রতিবেশী।অনুর বাবা ব্যাংকে চাকুরি করে।ট্রান্সফার জব।
বাবার বদলির খাতিরে অনুরা পরিবার সহ ঢাকায় চলে আসে।নতুন জায়গা নতুন পরিবেশ সবমিলিয়ে বেশ মন খারাপ মন খারাপ পাচ্ছিলো অনুর। পুরানো কলেজ পুরানো বন্ধু সব ফেলে আসতে কারই বা ভালো লাগে।

তাই মন ভালো করার জন্য কানে হেড ফোন গুজে ছাদের উদ্দশ্যে রওনা হয় অনু।
খোলা আকাশ মন ভালো করার মেডিসিন।
বেশ কিছুক্ষন ছাদে হাটা হাটি করতেই চোখ যায় অনুদের ছাদ বারাবর পাশেই আরেকটা ছাদের দিকে।

ছাদের মাঝখানে বিছানা পেতে বইয়ে মুখ গুজে বসে আছে একটি ছেলে।চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা পড়নে হালকা নীল রঙ্গের টি শার্ট আর কালো রং-এর থ্রি কোয়াটার প্যান্ট।এমন ভাবে বইয়ের দিকে ঝুকে আছে যে তার মুখটাও ঠিক মতো দেখা যাচ্ছে।

কেন যেন ছেলেটাকে দেখে অনুর বেশ কৌতুহল জাগে।অনুর ছেলেটার মুখ দেখতে বেশ ইচ্ছে করছে।

বেশ কিছুবার উকি ঝুকি মারার পরও ছেলেটার মুখ দেখতে অক্ষম হয় সে।
শেষ বার উকি মারতেই ছেলেটা দুম করে দাড়িয়ে যায়।
অনুর সাথে চোখাচোখি হয়ে যায় তার।

অনু লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলে

ছেলেটা অনুর দিকে এগিয়ে আসে

-আপনি কি কিছু বলবেন আমায়??
-ইয়ে মানে না তো(অনু বেশ লজ্জা পেয়ে যায়)
-না আমার মনে হলো বোধয় কিছু বলতে চান তাই বার বার। আচ্ছা যাই হোক হ্যাই আমি সায়ন আহাম্মেদ।

-আমি অনু

ছোট্ট করে নিজের নামটা বলেই অনু ছুট লাগায় নিচে। কেন যেন তার বেশ লজ্জা করছে।
“ইশ কি লজ্জা”
সায়ন সেখানে দাড়িয়েই মুচকি দিয়ে হাসছে।

-লজ্জা পাওয়া ভালো। লজ্জা তো নারীর ভূষণ।।।।

এটাই ছিলো অনু আর সায়নের প্রথম দেখা।

তারপর আর কখনো কথা হয়নি দুজনের মাঝে।তবে দেখা হতো মাঝে মাঝে ছাদের এখানটাই

সায়ন প্রায়ই ছাদের এ পাশটায় বসে বসে পড়তো।মাঝে মাঝে দুজনের দেখা হতো চোখা চোখি হতো তবে কথা হতো না”
(বাকিটা পড়ে আরেক দিন বলবো)

অতীত কতো সুন্দর ছিলো।কোথা থেকে কি হয়ে গেল।

তখন সোহাকে পাঠিয়ে দেওয়ার পর

অনু বাড়ির সবার চোখে ফাকি দিয়ে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আশে।তার ধারনা সায়নই সোহাকে পাঠিয়েছে অনুকে নিয়ে যেতে।সে হয়তো তার প্রিয়তমার জন্য বাহিরে অপেক্ষা করছে।

সায়নের জন্য অনুর বুকে বেশ অভিমান জমে আছে….

অনু বাড়ি থেকে বেড়িয়ে ছুট লাগায় বাড়ির পেছনের দিকে।
সোহা অনুর কথা মতো সেখানেই অপেক্ষা করছিলো।।।

অনু সেখানে এসেই চারদিকে খোজাখুজি শুরু করে দেয়।
-কাকে খুজছো এভাবে??
-সোহা তোর ভাই কোথায়??
-কেন খোজছো তাকে??
বেশ ঝাঝালো কন্ঠে সোহা অনুকে প্রশ্নটা করে
অনু অবাক চোখে সোহার দিকে তাকিয়ে আছে
-মানে??
-মানে বুঝলে না বেশ তো হেলে দুলে বিয়েটা করে নিলে আবার বরকে নিয়ে বাপের বাড়িও এলে।বিয়ে করার আগে একবারও কি আমার ভাইয়ের কথা ভাবেছিলে???
-এসব কি বলছিস সোহা??
-ঠিকই তো বলছি!!!সেদিন তুমি আসো নি বলেই আজ!!
-কি??
-ভাইয়া আজই লন্ডন চলে যাচ্ছে আর মাত্র একুশ মিনিট পর ফ্লাইট।।।

সোহার কথায় অনু আকাশ থেকে পড়লো।

-সায়ন চলে যাচ্ছে???
-হুম্ম এই নাও মা এগুলো তোমায় ফিরিয়ে দিতে বলেছে…

সোহা অনুর হাতে কয়েকটা কাগজ ধরিয়ে দেয়।এগুলো কাগজ নয় এগুলো চিঠি যেগুলো অনু সায়নকে দিয়েছিলো।।

চিঠিগুলো অনুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে সোহা পেছনে হাটতে শুরু করে।।।

কিছু দূর গিয়ে সোহা দাড়িয়ে যায়।
পেছন ফিরে সোহার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে…
-অনু আপু হয়তো তোমার ছলনায় আমার ভাইয়ের জীবনটা শূন্য হয়ে গেল।।।আমি আমার ভাইয়ের ভালোবাসা হারালাম….

ও আর হ্যা এই চিঠি গুলোর অস্তিত্ব এখানেই শেষ করে দাও না হলে যদি তোমার বরের হাতে চলে যায়।তোমার বড়লোক বড় কি তোমার মতো এরকম মেয়েকে মানবে…..???
ভালো থেকো!!

আর একটি কথাও বলেনি সোহা।চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বাড়ির পথে হাটা ধরে সে।।।

অনু সেখানেই ঠায় দাড়িয়ে আছে।বিয়ের আগের দিনও অনুর সায়নের সাথে কথা হয়েছিলো।সায়নের কথা মতে সে রাতের মাঝা মাঝি সময়ে বাড়ির পেছন দিকটায় অপেক্ষা করবে অনুর জন্য। তারপর অনুকে নিয়ে পালিয়ে যাবে অনেক দূরে।।।

অনু এসেছিলো।সারা রাত অপেক্ষা করেছে সায়নের জন্য।কিন্তু সে তো আসে নি।তারপর দিন নির্ঝরের সাথে বিয়ে হয়ে যায় অনুর।।

অনু চিঠিগুলো মুষ্টি বদ্ধ করে বাড়ি ফিরে আসে ছাদের এককোনে গুটিশুটি মেরে বসে পড়ে। সায়নের সাথে সম্পর্কের শুরুটাও ছিলো এই ছাদ আবার হয়তো শেষটাও এখানেই হতে চলেছে।।

“আচ্ছা তবে কি ছলনা আমি করেছি তুমিই তো আসো নি বার বার ডেকেছি তবুও আসো নি মুখ ফিরিয়ে রেখেছিলে।আজ সব সম্পর্কের ইতি টেনে পাড়ি জমালে সদূর পাড়ে।তবুও ছলনাময়ী আমিই হলাম”

কথাগুলো বলেই অনু হাউ মাউ করে কাদতে শুরু করে।

এভাবে কতো সময় কেটেছে জানা নেই।
অনু যখন চোখ খোলে তখন বেশ রাত হয়ে গেছে।নির্ঝর বালিশে হেলান দিয়ে একটা ডায়রিতে কিছু একটা লিখছিলো আর অনু নির্ঝরের বুকের উপর শুেয় আছে একে বারে নির্ঝরকে জাপটে ধরে।।

অনু ধরফর করে উঠে দাড়ায়।এদিক সেদিক চোখ বুলায়, না এটা তো তার ঘর নেই।এই ঘরটা সাথে অনুর বাড়ির কোনো ঘরেরই মিল নেই…..

সে তো বাবার কাছে ছিলো।ঘরে ড্রমি লাইট জ্বালানো ছিলো তাই তেমন কিছু দেখাও যাচ্ছে না।।

অনু বার বার মনে করার চেষ্ট করছে এটা কোন জায়গা

-মি.চৌধূরী আমাকে কোথায়। এনেছেন??

নির্ঝর অনুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে উওর দেয়

-যে দিন আমি তোমার নাম নিয়ে তিন বার কবুল বলি সেদিনই তোমার পায়ে এক অদৃশ্য শিকল পড়িয়ে দিই আর যখন তুমি আমার নামে তিন তিন বার কবুল বলো সেদিনই তুমি নিজে নিজেই সেই শিকল পায়ে বেঁধে নাও অর্থাৎ তুমি চাইলেও আমার থেকে দূরে যেতে পারবে না।কারণ তোমার অস্তিস্ত এখন আমাতেই বন্দী।আমি যে তোমার স্বামী।।।

অনুর চোখ বেয়ে আবার বৃষ্টি নামে।
কথাগুলো সায়ন বললে বোধয় ভালো শুনাতো।।

নির্ঝর ওঠে গিয়ে ঘরের আলোটা জ্বালিয়ে দেয়।অনু ভালো করে তাকিয়ে দেখে এটা নির্ঝরের ঘর।নির্ঝর তাকে আবার এ বাড়ি নিয়ে এসেছে।সকালেই তো অনু ঘরটাকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলো আবার ফিরতে হলো এই ঠিকানায়

বিকেলে,
অনুকে অনেক খোজাখুজরি পর যখন অনুর দেখা মিলছিলো না তখন অনুর বাবা মায়ের মুখ শুকিয়ে যায়।তাদের ধারনা বোধয় তাদের একমাত্র মেয়ে পালিয়ে গিয়েছে।

কিন্তু নির্ঝর কি মনে করে ছাদে চলে যায়।ছাদে যেতেই চোখ পড়ে অনুর দিকে অনু ছাদের দেয়াল ঘেষে পড়ে রয়েছে।নির্ঝরের বুক ধক করে ওঠে
“অনু কিছু করে বসলো না তো??”

অনুর কাছে যেতেই দেখে না সে অঙ্গান হয়ে গিয়েছে।।

নির্ঝর একটা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে অনুকে কোলে তুলে নেয়।
তারপর আর একমুহূর্ত সেখানে দাড়ায় না।
অনুকে কোলে নিয়ে হাটা ধরে গাড়ির দিকে।
শ্বশুড় বাড়ির সবার কথা অগ্রহ্য করে নির্ঝর অনুকে নিয়ে বাড়ি চলে আসে।।

কান্না কাটির ফলে অনুর বেশ মাথা ধরেছে…..
তাই অনু কথা না বাড়িয়ে বালিশ নিয়ে ওঠে আশে।তার জায়গা যে এ ঘরের মেঝেতে।

অনু ওঠে আসতেই নির্ঝর অনুর কোমড় জড়িয়ে ধরে।তারপর অনুর খোলা পেটে মুখ ডুবিয়ে দেয়।অনু ঠায় দাড়িয়ে আছে…..

হয়তো এটাই তার নিয়তি।এখন থেকে যা হবে সব তাকে মানতে হবে।

হাজার হোক এটাই অনুর নিয়তি।।।

নির্ঝর বারান্দায় বসে একটার পর একটা সিগারেট ধরাচ্ছে।
অনু কাথা মুড়ি দিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।

নির্ঝরের পাশেই ছাই হয়ে পরে রয়েছে সায়ন আর অনুর চিঠিগুলো।।
তাদের মাঝের লিপিবদ্ধ কিছু ভালোবাসা!!!

অনু কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে সে হুস নেই।
মেয়েটা বেঘোরে ঘুমোচ্ছিলো।কিন্তু নির্ঝরের চোখে ঘুম নেই।

ভালোবাসা নামক আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে নির্ঝরের হৃদয়!!!

সকালে সূর্যের আলো চোখে পড়তেই অনু ধরফরিয়ে ওঠে যায়।

বোধয় অনেক বেলা হয়ে গেছে।যা আজকে আর নামাজটাই আর হলো না।

বিছানার এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখে নির্ঝর নেই।
কোনো রকমে ওড়না জড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় সে।

গোসল শেষে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ঘরের এদিক সেদিক ঘুরে ঘুরে দেখছিলো অনু।
নির্ঝরের ছোটবেলা থেকে শুরু করে বড় বেলা পর্যন্ত সব ছবি দেয়ালে লাগানো।

কতো হাস্যজ্জল ছেলে অথচ অনুর সামনে এলেই যেন পৃথিবীর সকল গভীরতা ভর করে এই ছেলের মাঝে।।

“আচ্ছা সায়নও কি বিয়ের পর বদলে যেত।বিয়ের পর নাকি প্রেমিক প্রেমিক থাকে না স্বামীতে পরিবর্তন হয়।পরিবর্তন হয় তাদের আচরণের”

[[[অনুর এই প্রশ্ন নিয়ে একবার সায়নের সাথে অনুর বেশ দ্বন্দ বেধে যায়।।।

সেবার অনু আর সায়নের প্রেমের তৃতীয় বছর চলছে।
তখন মোটামোটি দুই পরিবারের সবাই সায়ন-অনুর সম্পর্কের ব্যপারে জানে।তাদের সম্পর্কে দুই পরিবারের কারোর ই কোনো অমত ছিলো।।

রিতীমতো তাদের সম্পর্ক বিয়ে অব্দি পৌছে গিয়েছিলো।।দুই পরিবারের কথা বার্তাও হয়ে গিয়েছে।
সায়নে পরিক্ষা শেষ হলেই অনুকে ঘরে তুলবে সায়নের বউ করে!!

সায়ন তখন সিলেটে।ইন্জিনিয়ারিং থাির্ড সেমিস্টারে পরিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিধায় অনুর সাথে কথা খুব কম হয়।
সায়ন বরাবরই পড়াশোনায় বেশ মনোযোগি।।

একদিন মাঝরাতে অনু ফোনের পর ফোন করে সায়নকে….
সায়ন তখন মনোযোগ দিয়ে অংক কষছিলো।

এতো রাতে অনুর ফোনে বেশ বিরক্ত সে…..তবুও প্রিয়তমার ফোন বলে কথা!!

সায়ন ফোনটা কানে ধরতেই অপর পাশ থেকে কোনো কথা নেই শুধু কান্নার আওয়াজ

অনুর কান্না শুনে সায়নের বুকটা ধক করে ওঠে।
কি জানি কি হলো!!

-অনু পাখি কি হয়েছে??
😭😭😭😭
-বলবে তো কি হয়েছে এমন কাঁদছো কেন??

কাঁদতে কাদতে অনু হেচকি তুলে ফেলেছে।
-বলবে তো কি হয়েছে???
-তুমি বদলে গেছো সান।আমাকে আর আগের মতো ভালোবাসো না। বিয়ে হয়ে গেলে আরও ভালোবাসবে না তখন তুমি আমাকে ভুলেই যাবে।।
-কিহ্
-হুম্ম।তুমি এখুনি আর আমায় ভালোবাসো না বিয়ের পর কি করবে শুনি???
-কে বলেছে এগুলো??
-ভাবি বলেছে
-মানে কি এগুলোর??
-মানে বিয়ে করলে প্রেমিক আর প্রেমিক থাকে না বর হয়ে যায় তখন তুমিও আমার বর হয়ে যাবে।
-হুম্ম তো
-তখন তুমি আর আমায় ভালোবাসবে না!
-কেন বাসবো না
-কারন বিয়ে হয়ে গেলে নাকি মানুষ বদলে যায়।
এই যে দেখো সবে তো বিয়ের কথা হয়েছে তাতেই তুমি কেমন বদলে গেছো

সায়ন মুচকি হেসে অনুকে জবাব দেয়

-সব সম্পর্কে একটা আলাদা নাম আছে আলাদা টান আছে।যখন সম্পর্ক প্রেমের থাকে তখন তাতে নানা রকম বাধ্য বাধকতা থাকে আর থাকে হারানোর ভয়।আর বিয়ে হয়ে গেলে সম্পর্কের নাম পরিবর্তন হয়।পরিবর্তন হয় সেই বাধ্য বাধকতা গুলো।।।তবে ভালোবাসার ধরনেরও পরিবর্তন হয় কিন্তু পরিমাণের কোনো পরিবর্তন হয় না বরং ভালোবাসা বেড়ে যায়।।
-ওওও তার মানে তুমি বদলাবে না??
-একদমই না
-তাহলে ঠিক আছে!!!
-অনু
-হুম্ম
-না কিছু না
-বলেই ফেলো
-কিছু কথা না হয় জমিয়ে রাখলাম।যখন আমাদের টোনাটুনির সংসার হবে তখন শুনাবো
-কখন??
-কোনো এক নিঝুম রাতে আকাশে পূর্ণ চন্দ্র থাকবে আর আমার বুকে তুমি!!!
-তাই??
-হুম্ম।আমার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলে তুমি
আমি তোমাতেই আবদ্ধ থাকতে চাই
তোমাতেই করতে চাই বসবাস

অনু চুপ করে সায়নের কথাগুলো শুনছিলো
-অনু ঘুমিয়ে পড় অনেক রাত হয়েছে

অনু দুম করে ফোনের লাইন কেঁটে দেয়।এই ছেলে একেবারে উচ্চ শ্রেনীর আনরোমান্টিক!!
রোমান্টিকতার কিছুই বোঝে না!!

অনু গাল ফুলিয়ে শুয়ে পড়ে।
তার চোকে এখন নতুম স্বপ্ন। আর মাত্র কয়দিন পর তার আর সায়নের আকদ!!

এতো শত স্বপ্ন নিয়ে অনু ঘুমিয়ে যায় সে রাতে…..]]]

অতীতের কথাগুলো ভাবতেই অনুর চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকে।

“কোথায় সায়নের দেখানো স্বপ্ন কোথায় সায়নের সেই টোনাটুনির সংসার”
সব তো সে নিয়ে গেল???

অনু দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথাগুলো ভাবছিলো হটাৎই কাঁধে কারো গরম নিঃশ্বাসে অনুর হুস ফিরে। অনু কারেন্ট শক খাওয়ার মতো দূরে ছিলটকে পড়ে…..

নির্ঝর অবাক চোখে তাকিয়ে আছে…..

অনু ছলছল চোখে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে।
-আপনি কেন বোঝেন না আমি আপনাকে চাই না।আপনার প্রত্যেকটা স্পর্শ আমার কাছে বিষের মতো!!

নির্ঝর চোখ মুখ শক্ত করে উওর দেয়
-সে তুমি চাও বা না চাও তুমি আমার শুধুই আমার!!

নির্ঝর হন হন করে ঘরে থেকে বিরিয়ে যায়। অনু চোখ মুখ মুছে নিচে নামে।

রান্না ঘরে অনুর শ্বাশুড়ি, চাচী শ্বাশুড়ি মোটা মোটি সবাই টুকটাক কাজ করছে।

অনু সেখানে যেতেই সবাই নতুন বউকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়।

সবাই অনুকে এটা ওটা সেখাচ্ছে শুধু অনুর শ্বাশুড়ি মুখ গোমড়া করে কাজ করেই যাচ্ছে।

অনু এবাড়িতে আসার পর থেকে লক্ষ করছে ভদ্র মহিলা অনুকে একেবারে নিতে পারছে না

অনু কৌতুহল বসত শ্বাশুড়ির পাশে গিয়ে দাড়ায়
-অ্যান্টি আপনাকে হেল্প করে দিই??
পাশ থেকে অনুর চাচী শ্বাশুড়ি বলে ওঠে
-অ্যান্টি কি বলছো মা বলো শ্বাশুড়ি তো মায়ের মতোই হয়

অনুর শ্বাশুড়ি ছোট চাচীকে থামিয়ে ঘাড় না ঘুড়িয়ে জবাব দেয়

-রাখো তো ওমন বউকে মেয়ে ভাবার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।
তোমার মুখে অ্যান্টি ডাকই মানায়।
খবরদার আমাকে ঢং করে মা বলতে এসো না!!

অনু শ্বাশুড়ির কথা শুনে থমকে যায়।।।

সামান্য মা ডাকাতেই এতো সমস্যা???
কি করেছি আমি যে ওনি আমাকে সহ্য করতে পারেন না!!!

-তুমি এখানে দাড়িয়ে কি করছো যাও নিজের ঘরে যাও।এখানে তোমার কোনো কাজ নেই!!

অনু কথা না বাড়িয়ে হন হন করে ঘরে চলে আসে…..

-আমারও বয়ে গেছে আপনার ছেলের বউ হয়ে থাকতে একবার সায়ন ফিরুক তারপর…..

সায়নের সাথে সম্পর্কের শুরুটা ছিলো বেশ রোমাঞ্চকর…..
ছোট্ট একটা দীঘীর পার, একটা বকুল তলা,কিছু কাশ ফুল আর একটা ছোট্ট নাকফুল!!ব্যাস এগুলোই ছিলো সায়ন-অনুর সম্পর্কের মূখ্য উপাদান!!!

সেদিনটা ছিলো শুক্রবার। অনুর বাবার কোনো এক গ্রাম্য বন্ধুর আমানত্রনে অনুরা হুট করেই গ্রামে যায়।
অনুর বাবার সেই বাল্য বন্ধুর একমাত্র মেয়ের বিয়ে।
তাই বেশ দল বেঁধে পরিবার সহ অনুরা গ্রামে চলে আসে।

তখনও অনুর সাথে সায়নের সম্পর্ক বাড়ির ছাদ অবদিই আটকে আছে।তবে মাঝেমাঝে রাস্তায় দুই একবার দেখা হলে শুধু একটু মুচকি হাসিতেই আবদ্ধ ছিলো তারা দুজন।

অনুর গ্রামে তেমন আশা হয় না।
এখানে এসে গ্রামে সহজ সরল মানুষগুলোর সাথে মিশে বেশ ভালোই লাগছে অনুর।
এরই মাঝে বিপত্তি বাঁধে….

রাতে গায়ে হলুদে মেয়ের জন্য রাখা সব হলুদ চুরি হয়েগেছে।।।
কি সর্বনাশ এখন কি হবে।এদিকে বেলাও যে শেষের দিকে সন্ধ্যের পর হলুদ বাটাবাটি শুরু হবে।

কোনো উপায় না পেয়ে কনে পক্ষের কিছু মেয়ে বেরিয়ে পরে বাগান থেকে হলুদ তুলতে।অনুও তাদের সাথে চলে আসে….
নদীর উপার বাগান থেকে তারা হলুদ তুলে নিয়ে আসবে তারপর বাটাবাটি শুরু হবে….

যথারিতী বাড়ির সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট্ট নদী পাড় করে তারা হলুদ নিয়ে ফিরছিলো এমন সময় অনুর চোখ যায় রাস্তার উপারে ব্যাগ পত্র নিয়ে দাড়িয়ে থাকা মাঝামাঝি বয়সি এক মহিলা ও তার মেয়ের দিকে।তারা অসহায়ের মতো মুখ করে রাস্তায় দাড়িয়ে আছে।

দুজকে দেখে মনে হচ্ছে না তারা গ্রামের কেউ।
অনু ঝটপট তাদের কাছে চলে যায়
হতে পারে তারা কোনো বিপদে পড়েছে..
অনু সালাম দিয়ে কথা বলা শুরু করে…
-অ্যান্টি কোনো সমস্যাই পড়েছেন??
-আর বলো না মা অনেকদিন পর গ্রামে এসেছি গ্রামের পথ ঘাট তেমন মনে নেই।।
-ওও আপনি পথ ভুলে গেছেন??
-হ্যা

পাশ থেকে সোহা বলে ওঠে….

-হুম্ম আমরা এখানে একদাদুর বাড়ি এসেছি।এক চাচাতো বোনের বিয়ে কিন্তু আম্মু পথই ভুলে গেছে!!
-তোমাদের সাথে কেউ নেই যে পথ চিনে
-ভাইয়া আছে কিন্তু সে লেইট লতিফ ট্রেন ফেইল করেছে বলে আসতে দেরী হচ্ছে বোধয় ঘন্টা দুয়েক লাগবে।।
-কি সর্বনাশ এতোক্ষন আপনারা এখানে দাড়িয়ে থাকবেন!!
-হুম্ম কি আর করবো।

অনু ভদ্র মহিলার দিকে তাকিয়ে দেখেন ওনি বড্ড ঘামছেন!!
বোধয় শরীর খারাপ করছে….

-অ্যান্টি আপনি আমাকে সেখানকার ঠিকানা বলুন আমি দেখছি খুজে দিতে পারি কি না।।
-মা ঠিকানাটাই তো মনে নেই!!
আসলে এটা তাদের নতুন বাড়ি এখানে তেমন আশা হয় নি!!

অনুকে এতোক্ষন দাড়িয়ে বকবক করতে দেখে তারাও এগিয়ে আসে।অনুর সাথে কনের ছোট বোন নিলুও ছিলো।।।

নিলু ভদ্র মহিলাকে দেখে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে
-বড় চাচী তুমি এসেছো
-নীলু।।।
নীলু এদিক সেদিক তাকিয়ে বলে
-সায়ন ভাই কোথায় তাকে তো দেখছি না!!

(নিলুর একমাত্র ক্রাশ হচ্ছে সায়ন)

সোহা ক্ষেপে যায়….
-সবসময় ভাইয়ার খবর নাও কেন এখানে আমি আছি মা আছে দেখতে পাচ্ছো না??? মার শরীর খারাপ চলো আমাদের বাড়ি নিয়ে চলো ভাইয়ার আসতে দেরী হবে।

-ওও তা আগে বললেই তো হয় সায়ন ভাই…….না থাক তোমরা বাড়ি চলো চাচী।।

ভদ্র মহিলা আর কেউ নয় সায়নের মা আর বোন সোহা

পাশ থেকে সায়নের মা বলে ওঠে
-সেই কবে তোদের এই নদীর ধারে বাড়িটাতে এসেছি এতো কি মনে থাকে তাই পথ ভুলে গেছি।।
-ওও আসলে চাচী সায়ন ভাইই বললো এই বাড়িটা থেকেই বিয়ে দিতে।
সোহা:::এখন দাড়িয়ে বকরবকর না করে বাড়ি নিয়ে চলো আমাদের
নিলু:::হুম্ম চল…..নিয়েই তো যাচ্ছি!!

নিলু সামনের দিকে হাটা ধরে….
এতো ব্যাগ পত্র নিয়ে সায়নের মা আর সোহা দাড়িয়ে আছে….
এতোগুলো।নেওয়া যায়।
এদিকে নিলুও হাটা ধরে সামনের পথে!!!

অনু এগিয়ে গিয়ে সায়নের মায়ের হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে নেয়।

সবাইকে নিয়ে বাড়ি চলে আসে।

সায়নের বাবার চাচাতো ভাইয়ের বাড়ি এটা…..

প্রায় সন্ধ্যে নেমে গেছে বড়রা বড়দের মতো আর ছোটরা ছোটদের মতো আনন্দ করছে।
অনুর বেশ ভালোই লাগছে।একেবারে বিশুদ্ধ বাঙ্গালী বিয়ে যাকে বলে।
অনুর সাথে দুষ্টমিতে যোগ দিয়েছে সোহা ও।
সোহা সহজে কোনো মানুষের সাথে মিশে না তবে যাকে পছন্দ হবে তার কথায় আলাদা।

হলুদ বাটা বাটিতে প্রায় সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত নেমে গেছে।
গ্রামে এইটুকু রাত মানেই গভীর রাত…..
সবাই যে যার মতো কাজে ব্যাস্ত

সোহা,নিলু আর অনু তিনজন বাড়ির সামনে বকুল তলার নিচে বাধায় করা পাড়টায় বসে বসে গল্প করছিলো….

হটাৎই তিনজনের ডাক পড়ে…
সবাই তেঁতুল মাখিয়েছে অনুকে খাওয়ার জন্য ডাকা হয়েছে।

অনু সোহা আর নিলুকে বসতে বলে বাড়ির দিকে পা বাড়ায়….
-তোমরা বসো আমি এখানে নিয়ে আসছি
-ওদিকটা কিন্তু বেশ অন্ধকার যেতে পারবে তো??

পাশ থেকে সোহা বলে ওঠে
-সবাই কি তোমার মতো চোখ কপাঁলে তুলে হাটে যে একটু পর পর উল্টে উল্টে পরবে!!
-কি বললি??
-কি আবার বলবো তুমি তো ভাইয়াকে দেখলেই দুম দাম করে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাও তাই বললাম….
সোহার কথাশুনে নিলুর মুখটা ছোট হয়ে যায়।
অনু হেসে ওঠে
-অনুদি তুমি আলোটা নিয়ে যাও।
-না লাগবে না সোহা আমি এই যাবো আর আসবো….

অনু অন্ধকারে পথ হাতড়ে বাড়ির দিকে পা বাড়াতেই কঠিন কিছু একটার সাথে বাড়ি খেয়ে দুম করে নিচে পড়ে যায়….

অনু প্রথমে ভাবে হয়তো তাল গাছ টাছ হবে।পড়ে সেই কঠিন বস্তুকে নড়েচড়ে ওঠতে দেখে অনু ভযে চিৎকার দিয়ে ওঠে……

“বাবা গো গাছ আবার নড়ে”

সোহা নীলু দুজনই অনুর চিৎকারে এগিয়ে আসে…..
-ইয়ে মানে সরি আমি দেখতে পাই নি!!
সোহা ছুটে এসে আলো জ্বালিয়ে দেখে অনু ভয় ভয় মুখ নিয়ে নিচে পড়ে রয়েছে….

-ভাইয়া তুই
-সায়ন ভাই তুমি এসেছো

নিলু সায়নকে দেখে এগিয়ে যেতেই পায়ে পা বিধে দুম করে নিচে পড়ে যায়।
সোহা দাড়িয়ে দাড়িয়ে কপাল চাপড়াচ্ছে….
-হয়ে গেলো।মানুষ সুলাইমান খানকে দেখেও এতো হুমরি খায় না যতোটা তোকে দেখে হুমড়ি খায়।এখন আবার নিলুপির সাথে অনুপিও যোগ দিয়েছে। এক সাথে দুদুটো মেয়ে…..
চল এখান থেকে বাড়ি ভেতরে চল না হলে দুজনই হয়তো এবার ভিমড়ি খাবে….!!

সায়নের কানে সোহার কথা ঢুকছে না সে তো অনুকে দেখতে ব্যাস্ত।

রাতে মৃদু আলোয় অনুকে চিনে নিতে সায়নের একটুও কষ্ট হয়নি।

অনুও সায়নের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে
দুজনের কেউই কাউকে এখানে এভাবে আশা করেনি
সায়ন অনুর দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়….

অনুও সায়নের হাত ধরে নেয়।
অনু সায়নের হাতে ভর করে ওঠে দাড়ায়।।।
নিলু ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে!!

সায়ন মুচকি দিয়ে হাসছে….

অনুর কিছুটা লজ্জা লাগছে।
অনুর বুকটা ভীষনভাবে ধুকধুক করছে….
-বোধয় কিছু হতে চলেছে!!
-হয়তো।।।

-আহ্ নির্ঝর লাগছে….ছাড়ুন আমাকে প্লিজ!!!
-লাগুক তোমার এতো সাহস হয় কি করে যে তুমি সায়নকে ফোন করো??
একটুও লজ্জা করে না???

নির্ঝর অনুর হাত পেছনে মুড়ে রেখেছে।অনু ব্যাথ্যায় ছটপট করছে….
অনুর অপরাধ সে সায়নকে ফোন করেছিলো।যদিও ফোন বার বার রিং হয়ে কেটে গেছে সায়ন ফোন তোলেনি!!!

নির্ঝর সেই সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় অফিসের উদ্দেশ্য প্রায় রাতের দিকে বাড়ি ফিরে দেখে অনু বারান্দায় দাড়িয়ে কাকে যেন ফোন করছিলো আর বার বার চোখের পানি মুছছিলো…!!!

নির্ঝর কিছু একটা আন্দাজ করে অনুর কাছে গিয়ে ছো মেরে ফোনটা কেড়ে নেয়।ফোনের স্ক্রনের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় সেখানে সায়নের নাম্বার।
নির্ঝরের মাথা আগুন ধরে যায়….

অনুকে টেনে ঘরে আনে….ফোনটা আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেলে।

নির্ঝর অনুর হাতটা পেছনে মুড়ে রেখেছে…..
অনু বার বার ছোটার চেষ্টা করছে..

অনু কেঁদে দেয়
-দেখুন মি.চৌধুরী আপনি কি চান বলুন তো??
-তুমি কি চাও সেটা আগে বলো?? আমাকে কেন আরো খারাপ হতে বাধ্য করছো!!
-সায়নকে চাই!!
-আর আমি তোমাকে!!

নির্ঝর অনুর হাতটা ছেড়ে দেয়….
অনু নির্ঝরের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে দাড়ায়….
“তুমি তাকেই ভালোবাস যে তোমার ভালোগুলোকে ভালোবাসে তুমি তাকে ভালোবাসো না যে তোমার খারপগুলোকেও ভালোবাসে”

কথাগুলো বলে নির্ঝর বেরিয়ে যায়…..

অনু থম মেরে বসে পড়ে মেঝেতে….
সায়নকে ঘিরে তার মনেও এক বড় সড় দ্বন্দ রয়েছে……।।
সায়নের হটাৎ চলে যাওয়া…..
দুই পরিবারের মধ্যে দ্বন্দের কারণ কোনোটাই অনুর জানা নেই!!!

Flash back
[[[[গ্রামের সেই বিয়ে বাড়িতে সায়ন অনু বেশ কাছাকাছি আসে….
টুকটাক দেখাদেখি একটু চোখাচোখি আর একটু ভালো লাগা এক পর্যায়ে ভালোবাসা।

অনু সায়ন বাড়ির সামনে বাঁধায় করা পাড়টায় পাশা পাশি বসে আছে। অনু নিচের দিকে তাকিয়ে হাতে কি একটা আঁকি বুকি করছিলো….

সায়ন দুম করে অনুর হাতটা ধরে ফেলে।
অনু একরকম চমকে ওঠে সায়নের দিকে তাকায়
সায়ন সেই পাড়ের মেঝেতে হাটু গেড়ে বসে।
অনুর দিকে কয়েকটা কাশফুল আর একটা নাক ফুল এগিয়ে দেয়….

-জানি না ভালোবাসা কি শুধু জানি আমার ভালোলাগার আরেকটা নাম তুমি।

অনু হা করে সায়নের দিকে তাকিয়ে আছে…
-জানো আমি প্রথম দেখায় তোমার প্রেমে পড়েছিলাম।
একেবারে যাকে বলে পা পিছলে আলুর দম!!

অনু সায়নের কথায় হো হো করে হেসে দেয়

কোনো মেয়েকে প্রোপোজ করার সময় এসব কেউ বলে ….তা অনুর জানা ছিলো না।
অনু সায়নের দিকে হাত বাড়িয়ে কাশ ফুল গুলো নিয়ে নেয়।
কিন্তু নাক ফুলের দিকে হাত বাড়িতেই সায়ন হাত সরিয়ে নেয়
-উহু এটা এখন তোমায় নয় যেদিন তুমি আমার বউ হবে সেদিন নিজের হাতে পড়িয়ে দেবো…..

ব্যাস এটাই শুরু সায়ন অনুর সম্পর্কের।
অনুকে সায়নের মায়ের বেশ পছন্দ হয়েছে।
সায়নও নিঃসন্দেহে ভালো ছেলে।

বাসায় ফিরে দুই পরিবারের মধ্যে সায়ন অনুকে নিয়ে কথা বর্তা পাকা করা হয়।অনুর পরিক্ষা শেষ হলেই সায়নের সাথে আকদ করিয়ে রাখবে।
বেশ বছর তিনেক তারা প্রেম করে….

দেখতে দেখতে আকদের দিন এগিয়ে আসে।
আকদের দিন দুই পরিবারই বেশ সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছে নিজেদের।
সেদিন সকাল থেকেই অনুর শরীরটা কেমন কেমন করছে।একটু পরপর মাথা ঘুরছে সাথে অসম্ভব পেট ব্যাথা করছে আবার কমেও যাচ্ছে।
অনুর ধারনা হয়তো ফুড পয়জ্নিং হয়েছে।
কিন্তু বিপত্তি বাধলো যখন আকদের জন্য অনুকে নিচে ডাকা হলো অনুর হটাৎ করেই আবার প্রচুন্ড পেট ব্যাথ্যা করতে শুরু করলো।অনু অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে সিড়ি বেয়ে নামার সময় মাথা ঘুরে দুম করে পা পিছলে নিচে গড়িয়ে পড়ে।

ঘটনাটা হটাৎ ঘটায় সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।সিড়ি বেয়ে পড়ে অনুর মাথায় প্রচুন্ড আঘাত লাগে অনুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালে প্রথমবার যখন অনু চোখ খোলে তখন সায়ন অনুর হাতটা শক্ত করে ধরে রয়েছে।
তারপর আবার অনু গ্ঞান হারিয়ে ফেলে।।
কিন্তু পরের বার চোখ খুলে অনু আর সায়নকে দেখে নি সেই দেখায় ছিলো সায়নকে শেষ দেখে।
শুধু সায়ন কেন সায়নের পরিবারের কাউকেই অনু আর দেখে নি।

হাসপাতালে বাবা মা কে সায়নের কথা বললে সবাই যেন মুখে কুলুপ এটে বসে আছে।কেউ সায়নের নামও মুখে আনছে না।।

ব্যাস তারপর সব কেমন পাল্টে গেল এবাড়ির কেউ আর সায়নকে সহ্য করতেই পারে না।
এখানে সায়নের নাম নেওয়াও মানা।

অনু সায়নের সাথে অনেক যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয় না।সোহাটাও আর অনুর আসে পাশে আশে না।।।
একরকম হওয়া বিয়ে ভেঙ্গে যায়।।।

তারপর নির্ঝরের সাথে অনুর বিয়ে ঠিক করা হয়।এ বিয়েতে অনুর কোনো মত ছিলো না বাড়ির সবাই একরকম ধরে বেধে অনুকে বিয়েটা দেয়

অবশ্য বিয়ের দুই দিন আগে অনুর সায়নের সাথে কথা হয়
সায়ন অনুকে নিয়ে পালাতে চায়।বিয়ের আগের দিন অনু সায়নের বলা ঠিকানায় চলে তো আসে কিন্তু সায়ন আসে না……..।।অনু সারা রাত সেখানে অপেক্ষা করে কিন্তু সায়ন আসে না।পরদিন ভোর বেলা অনুর ভাই অনুকে খুজে নিয়ে এসেছিলো।তবে ইতি মধ্যে সারা বাড়ি কথাটা ছড়িয়ে পরেছে কণে নাকি পালিয়েছে…..

তবে এই গুজবে নির্ঝেরর সাথে বিয়েটা ভাঙ্গে নি….

সায়নের হটাৎ পরিবর্তনের কারনটা অনুর আজও অজানা।
তার ধারনা হয়তো এর পেছনে তার ভাইয়ের কোনো হাত আসে সে যে সায়নকে দুচোক্ষে সহ্য করতে পারে না।তার নাকি প্রথম থেকেই নির্ঝরকে পছন্দ……

তবে অনুর ধারনা কতোটুকু সত্য তাও অনু ভালো করে জানে না]]]

((এখন বর্তমানে আশা যাক))

প্রায় রাত গড়িয়ে ভোর হতে চললো নির্ঝরের কোনো খবর নেই।
অনুর মনে শুধু একটা কথায় ঘুরছে এই লোকটা বার বার কি বলতে চাইছে টা কি??

অনু বারান্দায় পায়চারি করছে এমন সময় বাড়ির গেট দিয়ে একটা গাড়ি ভেতরে ঢুকছে….
এটা নির্ঝরের গাড়ি।
অনু একটু উকি ঝুকি মারতেই দেখে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে একটি মেয়ে বসা……
মেয়েটি নিজে গাড়ি থেকে নেমে নির্ঝরকে দরজা খুলে দেয়।
নির্ঝরের ডান হাতে ইয়া বড় ব্যান্ডেজ…..

মেয়েটি নির্ঝকে ধরে ধরে ভেতরে নিয়ে আসছে।
নির্ঝর কেমন খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছে….
এই দৃশ্য দেখে অনুর কপালে কিন্ঞ্চিৎ ভাজ পড়লো…..!!!

বাড়ির বেলটা বাজছে।অনু ছুট লাগায় দরজা খুলতে….অনু
দরজার কাছে যাওয়ার আগেই নির্ঝরের মা গিয়ে দরজা খুলে দেয়।।।।
মেয়েটি নির্ঝরকে সোফায় বসিয়ে রেখে নির্ঝরের মাকে গিয়ে জড়িরে ধরে….!!!

অনু মেয়েটিকে ঘুরে ঘুরে দেখছে….
কোথায় যেন দেখেছিলো মেয়েটিকে কিন্তু কিছুতেই মনে আসছে না……!!
“মেয়েটিকে কোথায় যেন দেখেছিলাম…..”

-আপনার মতো চরিত্রহীন লোককে শুধু ঘেন্না করা যায় ভালোবাসা যায় না….!!

কথাগুলো বলেই অনু ঘর থেকে বেরিয়ে যায়…
নির্ঝর আর সিমি দুজনই বাকরুদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে….

কিছুক্ষন আগের ঘটনা….
সিড়ির সামনেই অনু দাড়িয়ে আছে।নির্ঝরের হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ দেখের অনুর খুব ইচ্ছে করছে একবার নির্ঝরের কাছে এগিয়ে যেতে কিন্তু নির্ঝকে ঐ মেয়েটা আর নির্ঝরের মা এমন ভাবে ঘিরে রেখেছে যে অনু চাইলেও যেতে পারছে না
কেমন একটা সংকোচ কাজ করছে।

একটু পরই
নির্ঝর মেয়েটির হাতে ভর করে ওঠে দাড়ায় তারপর এগিয়ে আসে সিড়ির দিকে..
অনু ভেবেছিলো নির্ঝর হয়তো তার কাছেই এগিয়ে আসছে
কিন্তু একি কান্ড…..!!!
নির্ঝর সেই নতুন মেয়ের হাত ধরে ঘরে চলে গেলো অনুর দিকে একবার তাকালোও না….।।।
তার ঠিক পাশেই যে একজন প্রানী তার দিকে কৌতুহলী দৃষ্টিতে অপেক্ষা করছে সেদিকে নির্ঝরের খেয়ালই নেই…!!!
নির্ঝর দিব্য ঘরে চলে যায়….

অনুও পেছন পেছন চলে গেলো ঘরে।
কি সর্বনাশ ঘরের দরজাও বন্ধ করে রেখেছে।
রাগে অনুর গা জ্বলছে….
প্রথম দিনই বুঝেছিলাম এ লোকের চরিত্রে সমস্যা রয়েছে….!!!
না হলে কেউ প্রথম দিনই নিজের বউকে জোড় করে….

অনু গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলো….

-“এই যে মি.চরিত্রবান স্বামী এবার দরজাটা খুলুন আমিও দেখি আপনার ভালোবাসার বাহার…”

ভেতর থেকে কোনো সাড়া নেই।
অনুতো দরজা ধাক্কিয়েই যাচ্ছে।
লাথি ঝাটা কিছু বাকি রাখেনি…
পারলেতো কখন দরজা ভেঙ্গে ফেলতো!!
-কি হলো ভেতরে কি এমন লীলাখেলা চলছে যে দরজা বন্ধ করতে হয়….

অনু বার বার দরজা ধাক্কাচ্ছে একটু পর সিমি দরজা খুলে দেয়।
সিমি হলো সেই মেয়েটি।।।

অনু রাগী দৃষ্টিতে সিমিকে একপলক দেখে নেয়
“নাহ মুখটা খুব চেনা চেনা লাগছে যেন কোথাও দেখেছি কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছিনা…”

সিমি অনুকে দেখে মুচকি হেসে জানতে চায়
-কেমন আছো মিসেস চৌধুরী

অনু সিমির কথার উওর না দিয়ে সিমিকে এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় তারপর ভেতরে চলে যায়….

অনু নির্ঝরকে কথাগুলো বলেই দমদম করে বেরিয়ে আসে
ঘরের বাহিরে এসেই ছুট লাগায়চ ছাদে।
আজকে জোছনা রাত…

অনুর বড্ড ইচ্ছে ছিলো বরের সাথে জোছনা বিলাস করবে….
বর মানে তো সায়ন কিন্তু..

অনু হাউ মাউ করে কেঁদে দেয়।
অনু ইচ্ছে মতো কাঁদছে।
কিন্তু কার জন্য কাঁদছে সে
সায়নের জন্য নাকি সেই দুদিনের স্বামীর জন্য।
উওরটা অনু নিজেও জানে না কিন্তু সে কাঁদছে প্রচুন্ড কাঁদছে…..

একটু পরই কেউ একজন ধীর পায়ে অনুর দিকে এগিয়ে আসে
অনুর কাঁধে হাত রাখতেই অনু বেশ ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়

-বাবা গো!!
-কি হলো ভয় পেলে বুঝি

নির্ঝর অনুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়।
অনু নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে দেয়।
-তাহলে শেষ হলো আপনার লীলাখেলা
-কি বলছো এসব
-বন্ধ দরজার পেছনে কি হয় তা আর আমাকে বুঝাতে হবে না
-অনু তুমি যেমনটা ভাবছো বষয়টা তেমন নয়….
-চুপ করুন আপনার চরিত্র সম্পর্কে আমাকে বোঝাতে আসবেন না।।

নির্ঝর অনুর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে…
অনুর চোখে মুখে স্পস্ট রাগ দেখা যাচ্ছে….
-অনু তোমার কি হিংসে হচ্ছে
-একদমই না
-ভালো
-হুম্মমমমমম।আপনি যার সাথে যা খুশি তাই করুন আমার জন্য আমার সায়ন….

নির্ঝর হাতের একটা অঙ্গুল দিয়ে অনুর ঠোট জোড়া বন্ধ করে দেয়…

-সসসসসস্
“জানো অনু আজ পূর্নিমা।যেদিন তোমায় আমি প্রথম দেখেছিলাম সেদিনও পূর্ণিমা ছিলো।সময়টা ছিলো রাতের শেষের দিকে।সবে পূব আকাশে সূর্য উঠছিলো আমি সমুদ্রের পাড়ে খোলা আকাশের নিয়ে দাড়িয়ে ছিলাম।হটাৎই চোখ যায় সমুদ্রর ঢেউয়ের দিকে।
একটা মৎসকন্যা ঢেউয়ের সাথে আমার দিকে ভেষে আসছিলো।কৌতুহল আটকাতে না পেরে আমিও ছুটে গেলাম সেই মৎস্যকন্যার কাছে।তখন সে সমুদ্রর পাড়ে উবু হয়ে পরে ছিলো।আমি কাছে গিয়ে মুখটা ঘুরিয়ে নিতেই দেখতে পেলাম এটা সত্যি সত্যিই একটা মৎস্যকন্যা।তার সারা শরীর ধবধবে সাদা। ঠিক রূপকথার গল্পে যেমনটা হয়”

অনু বেশ মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনছিলো….

কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে অনু বলে ওঠে
-ওটা কি সত্যিই মৎস্যকন্যা ছিলো???

নির্ঝর ধীর পায়ে অনুর একদম কাছে চলে আসে একহাতে অনু চেপে ধরে বুকের সাথে।
তারপর কপালে একটা গভীর চুমু এঁকে দেয়

“হুম্ম সত্যিই ওটা একটা জীবন্ত মৎস্যকন্যা ছিলো অনু”

অনুর কেমন কেমন লাগছে।নির্ঝর আবার সিমি নামের মেয়েটির সাথে পরকীয়ায় জড়ালো না তো?? বলায় যায় না লোকটার তো এমনিতেও চরিত্রের সমস্যা রয়েছে।

ছাদ থেকে ঘরে ফিরে বিছানার একপাশে পা ঝুলিয়ে বসে আছে অনু।নির্ঝরের কোনো খবরই নেই।
সে সিমির সাথে দেখা করতে গেছে।সিমি ঘরে।মেয়েটি নাকি এই বাড়িতেই থাকবে।
বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর নির্ঝর ঘরে ফিরে।
অনু একই ভঙ্গিতে বসে আছে।

নির্ঝর অনুর দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়
-কি হলো ঘুমোবে না

অনু একবার নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়
-কি হলো??
-দেখুন মি.চৌধুরী আমি যেমন আপনার কোনো বিষয়ে নাক গলাচ্ছি না তেমন আপনিও আমার বিষয়ে আপনার নাক ঢুকবেন না! হুহ্
-মানে??

অনু তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠলো….
-ঢং এতোক্ষন যেখানে ছিলেন সেখানেই থাকুন না শুধু শুধু এখানে এলেন কেন??এলেই যখন আমাকে নিয়ে পড়লেন কেন?
-ওওও
-ঠিক আছে?
-মানে?

নির্ঝর ওঠে গিয়ে দরজার কাছে চলে যায়
অনু রাগে ফুসছে
-মি.চৌধুরী আপনি সত্যিই একজন চরিত্রহীন মানুষ।আপনার যদি ঐ মেয়ের সাথেই বিশেষ কিছু ছিলোই তাহলে শুধু শুধু আমাকে সায়নের থেকে আলাদা করলেন কেন???

নির্ঝর ধপ করে দরজাটা বন্ধ করে দেয়….তারপর অনুর কাছে এগিয়ে এসে অনুর হাতে কব্জি ধরে টেনে তোলে
-সব কথায় সায়ন সায়ন করো কেন??লজ্জা করে না অন্যের বউ হয়ে পরপুরুষের নাম নিতে??
-না করে না কারণ আমি কোনো দিন আপনাকে….

কথার মাঝখানে অনু কেঁদে দেয়। নির্ঝর অনুর হাত ছেড়ে দিয়ে বারান্দায় হাটা ধরে…।।
আজকাল অনুকে নিয়ে নির্ঝর বড্ড দ্বদ্নে আছে।নির্ঝরের ধারনা ছিলো অনু হয়তো একটু একটু করে নির্ঝরের কাছে আসবে ভালোও হয়তো বাসবে।কিন্তু যতো দিন যাচ্ছে হীতে বিপরীত হচ্ছে।সায়ন নামটা যেন কেউ অনুর হৃদয়ে একেবারে খোদায় করে লিখে দিয়েছে।

নির্ঝর একটা সিগারেট ধরায়।তারপর ডুব দেয় অতীতে।

“সেদিন ছিলো শুক্রবার।নির্ঝর যখন বুয়েটে চান্স পেলো তখন এই দীর্ঘ অ্যাডমিশান নামক জার্নির ক্লান্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পাড়ি জমায় সমুদ্র সৈকতে…..নির্ঝর একাই ঘুরাঘুরি করতে ভালোবাসতো।

সমুদ্র বরাবরই নির্ঝরের বড্ড প্রিয় ছিলো।সেদিন নির্ঝর সূর্যদয় দেখার জন্য সমুদ্রর কিণারায় দাড়িয়ে আছে।তখনও আলো তেমন ছড়ায় নি….সবে সূর্য মামা পূবের আকাশে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন!!

হটাৎই নির্ঝরের চোখ যায় দূরে অনেক দূরে একটা কিছু ঢেউয়ে ভেসে যাচ্ছে।কাছে যেতেই দেখে একটা মেয়ে পানিতে বেশ নেকানিচুবানি খেয়ে বালির উপর পারে রয়েছে।তখন আকাশে সূর্য উঠতে শুরু করেছে।
নির্ঝর মেয়েটির মুখের উপর থেকে চুল সরাতেই সূর্যের আলো সরাসরি মেয়েটির মুখের উপর পরেছে।
“কি আশ্চর্য এ যেন কোনো এক মায়াবিনি না না হয়তো কোনো এক মৎস্যকন্যা,নয়তো জলপরী পথ ভুল করে কিনারায় উঠে এসেছে”
মেয়েটিকে প্রথম দেখেই নির্ঝরের বুকের বা পাশটা ধক করে ওঠে।জীবনে প্রথম ভালোলাগা হয়তো ভালোবাসা।

নির্ঝর মেয়েটির নাকে হাত দিয়ে দেখে মেয়েটি বেঁচে আছে।আশেপাশে তাকিয়ে দেখে না আশে পাশে কেউ নেই তাহলে কি মেয়েটি একাই এসেছিলো সমুদ্রে?? হতে পারে, এতো ভাবার সময় নেই তারপর ঝটপট কোলে তুলে নেয়।মেয়েটিকে হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়।তখন অবশ্য তার গ্ঞান ছিলো না।বেশ কিছুক্ষন পর নির্ঝর মেয়েটির কেবিন থেকে একটু বাহিরে বেরিয়ে যায় ডাক্তারের খোজে।তখন অবশ্য মেয়েটি বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।বাহির থেকে ফিরে এসে মেয়েটিকে আর দেখা হয় নি নির্ঝরের। কোথায় সে?? গোটা হাসপাতাল খুজেও পায় নি নির্ঝর। সে নাকি গ্ঞান ফিরতেই কোথাও চলে গিয়েছে।তারপর গোটা সমুদ্র সৈকত খুজেও মেয়েটির কোনো খবর পায় নি নির্ঝর।সেই মেয়েটিই ছিলো আজকের অনু।

নির্ঝর মুচকি হেসে সিগারেটটা ফেলে দিয়ে হাটা ধরে ঘরের দিকে।

অনু গুটিসুটি মেরে আধ সোয়া হয়ে বিছানায় সুয়ে আছে।নির্ঝর অনু পাশে মেঝেতে হাটু গেড়ে বসে পড়ে।তারপর অনুর গলায় নাক ডুবিয়ে দেয়।

“সে দিন নির্ঝর ভেবেছিলো মেয়েটি হয়তো ক্ষনিকের জন্য তার বুকের বা পাশটায় এক তীর বিঁধে দিয়ে গেছে।সে তীরে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলো নির্ঝরের হৃদয়।নির্ঝর তখন হারে হারে বুঝে গিয়েছিলো ভালোলাগা কি?? এটা কি শুধুই ভালোলাগা না কি ভালোবাসা কি জানি…??? তবে সেদিনের সেই মেয়েটি যে নির্ঝরের রাতের ঘুম হারা
তারপর বেশ কিছুদিন নির্ঝরের ভালোই কেটেছে।তবে সেই এক মূহুর্তেই অনু নির্ঝর হৃদয়ে যে জায়গা করে নিয়েছে তা নির্ঝর বেশ বুঝতে পারছে।আচ্ছা এভাবেও কি ভালোবাসা হয়। হুম্ম হয় তো হয় বলেই হয়তো এতো কিছুর পরও অনুকে নির্ঝর পেয়েছে”

নির্ঝরের গরম নিঃশ্বাস বার বার অনির চোখে মুখে পড়ছে।অনুর ঘুম ভেঙ্গে যায়।
অনু লাফিয়ে নির্ঝকে সজোড়ে ধাক্কা মেরে দেয়…..।।
নির্ঝর টাল সমলাতে না পেরে মেঝেতে পরে যায়….
-আপনাকে না আমার কাছে আসতে বারণ করেছি!!

নির্ঝর চুপ করে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে।
-শুনুন ভুল করেও যদি আবার আমার কাছে আসার চেষ্টা করেন আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।

নির্ঝর এখনো একই ভঙ্গিতে বসে আছে…..
অনুর দিকে তাকিয়ে নির্ঝর বলতে শুরু করে।

“জানো অনু সায়ন তোমাকে চায় খুব করে চায় তবুও ও তোমাকে ভালোবাসে না।ও শুধু তোমাকে চায় তবে ভালোবাসে না”

কথাগুলো বলেই নির্ঝর দাড়িয়ে যায়।অনু অবাক চোখে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে।

অনুর চোখ যায় নির্ঝরের হাতের দিকে।নির্ঝরের যে হাতটায় ব্যান্ডেজ করা ছিলো সে হাত থেকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছে।

অনু কোনো রকমে বিছানা থেকে ওঠে নির্ঝরের কাছে গিয়ে নির্ঝরের হাতটা ধরতেই নির্ঝরে হাত সরিয়ে নেয়।

-দেখুন নির্ঝর আপনার হাত দিয়ে রক্ত পরছে।
-পরুক তাতে তোমার কি?
-কিছুই না তবে আমি এতোটা অমানবিক না।আপনার মতো???
-কি!!
-চুপ

অনু দ্রুত গিয়ে নির্ঝরের হাতে আবার ব্যান্ডেজ করিয়ে দেয়।
এরকম সময় হটাৎই নির্ঝরের ফোনটা বেঁজে ওঠে…..

অনু ওঠে গিয়ে ফোনের কাছে যেতেই দেখে ফোনের স্ক্রিনে সায়ন নামটা স্পস্ট দেখা যাচ্ছে সাথে সায়নের নাম্বারটা।
এই নাম্বারটা কি ভুল যায়???

অনু কাঁপা হাতে ফোনটা কানে ধরতেই
অপর পাশ থেকে সায়নের গলা। বেশ উত্তেজিত লাগছে সায়নকে…..

-হ্যালো নির্ঝর…. (সায়নের গলা)
-(…)
-হ্যালো হ্যালো!!

অনুর চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি পরছে……এতো দিন পর সে!!!
-(…)
-শুনতে পাচ্ছিস না। আমি সায়ন বলছি…নির্ঝর!!

এবার আর অনু চুপ করে থাকতে পারে নি।একেবারে হুহু করে কেঁদে দেয়।নির্ঝর অবাক চোখে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে।অনু কাঁদছে।

অনু অস্পস্ট স্বরে বলে ওঠে
-সান তুমি আমি অনু….!!!

নির্ঝর অনুর মুখে “সান” নামটা শোনা মাত্র ওঠে গিয়ে ছো মেরে অনুর কাছ থেকে ফোনটা কেড়ে নেয়।
অনু এখনো কেঁদেয় যাচ্ছে…..
নির্ঝরের হাত থেকে বার বার ফোনটা কাড়ার চেষ্টা করছে সে

কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পড়ে অনু।
নির্ঝর অসহায় দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে।

অনু কি মনে করে….ওঠে দাড়ায় আর নির্ঝরের কলার চেপে ধরে।।
-আপনি সায়নকে কি করেছিলেন মি.চৌধুরী??????

আকাশে একটা চাঁদ উঠেছে।সে চাঁদের বড্ড আলো।আমার খুব ইচ্ছে করছে তোমাকে ছুঁয়ে দিতে।তোমার কোলে মাথা রেখে জোছনা পোহাতে।কিন্তু তুমি……!!!

বারান্দায় দাড়িয়ে একটার পর একটা সিগারেট ধরাচ্ছিলো নির্ঝর। অনু বার বার সায়নের কথা জানতে চাইছে কিন্তু অনুকে দেওয়ার মতো কোনো উওরই নির্ঝরের কাছে নেই।
যা আছে তা অনুকে জানাতে চায় না নির্ঝর

বেশ বেলা করেই অনুর ঘুম ভাঙ্গে।রাতে কান্না করতে করতে কখন ঘুমিয়েছে তা মনে নেই।
কোনো রকমে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতেই দেখে সোফায় পাশা পাশি নির্ঝর আর সিমি বসে আছে।দুজন বেশ হাসাহাসি করছে।বারবার সিমি নির্ঝরের গায়ে ঢলে ঢলে পরছে।নির্ঝরও তেমন…..

অনু আড় চোখে দুজনকে দেখছে
অনু কেন যেন বেশ রাগ হচ্ছে।

“চরিত্রহীন লোক কোথাকার”

অনু রাগে দুমদুম করতে করতে রান্না ঘরে চলে যায়।
রান্না ঘরে অনুর শ্বাশুড়ি রান্না করছে।অনুকে রান্না ঘরে দেখে ওনি একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।
ভদ্র মহিলা কেন যেন অনুকে একেবারে সহ্য করতে পারে না।

-অ্যান্টি আমি হেল্প করি??

অনুর শ্বাশুড়ি একবার অনুর দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়

-অ্যান্টি….
-না এই বাড়ি তোমার না এই রান্নাঘর।এ বাড়িতে তোমার সীমানা কেবল নির্ঝরের ঘর পর্যন্তই….

অনু ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে আছে।
উফ্ শ্বশুড়ি জাতিটাই এরকম…..
বউদের দুচোখে সহ্য করতে পারে না।কিন্তু আমি করেছিটা কি???

অনু দুমদুম করে রান্না ঘর থেকে চলে আসে….
অনু সিড়ি বেয়ে উঠার সময় নির্ঝর আর সিমিকে আড় চোখে দেখছে।হুট করে হোচট খেয়ে অনু হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায়
-আহ্

অনুর দিকে তাকাতেই দেখে অনু মেঝেতে পায়ে হাত দিয়ে বসে আছে।
নির্ঝর বসা থেকে উঠে ছুট লাগায় অনুর কাছে।
অনু পায়ে হাত দিয়ে সিড়ির কাছে বসে আছে।
-দেখি কোথায় লেগেছে??
-নো নিড!!সরুন….
-স্টুপিডের মতো কথা বলা বন্ধ করো
-বললাম তো লাগবে না।।।

নির্ঝর অনুর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে সোজা অনুকে কোলে তুলে নেয়।
অনু বার বার ছোটার চেষ্টা করছে।কিন্তু নির্ঝর কোলে তুলে হাটা ধরে ঘরের দিকে।

দূর থেকে নির্ঝরের মা রাগী চোখে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে।
ওনার ভেতর থেকে বার বার দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসছে
“এই একটা মেয়ে আমার ছেলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দিলো”

কি মনে সিমিও হাটা ধরে নির্ঝরের ঘরের দিকে…..

নির্ঝর তখন অনুকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে অনুর পায়ে ঔষুধ লাগাতে ব্যস্ত।

সিমি সরাসরি নির্ঝরের ঘরের ঢুকে যায় তারপর নির্ঝরের হাত ধরে টানতে থাকে
-নির বাহিরে চল!!

নির্ঝর অবাক চোখে সিমির দিকে তাকিয়ে আছে….
অনু তো রাগে জ্বলে যাচ্ছে….
-কি??
-নির চল কথা আছে

অনু মুখ বাকিঁয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে…..

সিমি নির্ঝরকে টানতে টানতে বাহিরে নিয়ে যায়…..

-নির ও তো সায়নের প্রেমিকা অনু!!
-হুম্ম
-নির তুই অনুকে কেন বিয়ে করলি???
-মানে??
-মানে প্রশ্নটা কাল রাতেই তোকে করতাম।কাল আমি সত্যিই অনুকে চিন্তে পারি নি।।
-ওওও
-নির্ঝর অনু তো!! তুই ওকে কেন বিয়ে করলি??
-সিমি!!
-নির তুই জানিস না সায়ন ওকে কেন বিয়ে করে নি???
-সিমি প্লিজ!!
-নির ও তো…..!!
-চুপ…..

সিমি অবাক চোখে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে।
-সিমি সায়ন শুধু অনুর ভালো গুলোকে ভালোবেসেছে।সেই ভালোগুলোর মাঝে যেই খারাপটা রয়েছে তা সায়ন মানতে পারেনি।কিন্তু আমি অনুর ভালো মন্দ সব কিছুকেই ভালোবাসি।অনু সায়নকে ভালোবাসতো তাই হাজার চাওয়া সত্তেও কখনো অনুর সামনে দাড়াই কিন্তু যখন সায়ন ওকে…..

দরজার দিকে তাকাতেই দেখে অনু দাড়িয়ে আছে…..
কৌতূহলী আর রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে।
নির্ঝর তখন সিমির দুই বাহু ধরে দাড়িয়ে আছে…..

অনুকে দেখে নির্ঝর সিমিকে ছেড়ে দেয়।কথায় কথায় নির্ঝর কখন সিমির এতো কাছে চলে এসেছে বুঝতেও পারে নি।

অনু নির্ঝর দিকে এগিয়ে এসে বলতে শুরু করে….
“আপনি সত্যিই একজন চরিত্রহীন পুরুষ।যদি ঐ মেয়ের সাথে আপনার কিছু থেকেই থাকে তাহলে শুধু শুধু আমাকে জোড় বিয়ে করে আমার জীবন আর ভালোবাসা দুটোকেই এভাবে শেষ করে দিলেন কেন??”

নির্ঝর অনুর দিকে তাকিয়ে আছে।বোধয় সে কিছুই শোনেনি কিন্তু অনুর ছলছল চোখ…..!!

কেন??
অনু কেন কাঁদছে??
কারনটা কি শুধুই সায়ন???

উওরটা নির্ঝর জানে না…জানতেও চায় না।কি হবে জেনে সে তো অনুকে চায়।অনুকে নিজের কাছে রাখার সম্পূর্ণ অধিকার তার আছে।কারণ নির্ঝর অনুর স্বামী।