-তিথি
-বল
-তোর হাতটা একটু ধরি ?
-আচ্ছা মাঝে মাঝে এত নাকামো করিস
কেন বলত ? এমন ভাবে বলছিস যেন
আগে কখনও আমার হাত ধরিস নি ?
-ধরেছি তো । কিন্তু এখন
অন্যভাবে ধরতে চাচ্ছি ।
-কিরকম ?
-বুঝিস না ?
-নাহ তো ।
-আই লাভ ইউ ।
-তারপর ?
-তারপর তো তুই বলবি ।
-আমি কি বলব ?
-তুই বল , “আই লাভ ইউ”
-আই হেইট ইউ ।
-সত্যিই ?
-হুম । তোকে না বলেছি আমাকে এসব
কথা বলবি না । আমি এসব পছন্দ
করি না ।
-তোকে ছাড়া আমার জীবন অন্ধকার ।
-তো আমি কি করব ?
-……………
-ধেৎ মুড টাই অফ করে দিলি ।
……………… বলেই তিথি উঠে চলে গেল ।
আর
পিছন থেকে রাহাদ তার পথের
দিকে তাকিয়ে রইল । এক অসম্ভব অবাস্তব
প্রেমের
দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সে ……………

.
.
তিথি আর রাহাদ ক্লাসমেট ।
ভার্সিটিতেই ওদের পরিচয় । রোল
নাম্বার পরপর হওয়ায় বিভিন্ন প্রজেক্টের
জন্য দুজনকে একসাথে কাজ করতে হয় ।
এর মাধ্যমেই ওরা ধীরে ধীরে অনেক ভাল
বন্ধু হয়ে যায় । শুধুই বন্ধু ! এর বেশি কিছু
নয় । কারণ দুজনেই জানে এর বেশি আর
সম্ভব নয় …………………
.
.
কিন্তু আজ কয়েকদিন ধরে রাহাদ
নিজেকে কোন ভাবেই
বোঝাতে পারছে না । তার
কাছে মনে হচ্ছে তার এই
জীবনটাতে তিথি ছাড়া অন্য সবকিছুই
বৃথা । ওর সারাজীবনের স্বপ্ন ছিল এমন
একজন জীবনসঙ্গী যে ওকে বুঝবে , ওর
কষ্টগুলো শেয়ার করবে , ওর যখন মন
খারাপ হবে তখন
ওকে কাছে টেনে নেবে , ভালবাসবে ,
ওর মন ভাল করে দেবে ।
.
আর এই সবগুলো গুণই তিথির মধ্যে আছে ।
তিথির হাসি , কান্না , রাগ , অভিমান
সবকিছুই যেন রাহাদকে চম্বুকের মত
আকর্ষণ করে । এই কয়েকবছরেই তিথির এত
কাছাকাছি এসে গেছে যে , নিজের
সবচেয়ে দামী বস্তু
মনটা তিথিকে দিয়ে আজ
নিজেকে সর্বস্বান্ত বানিয়ে ফেলেছে ।
কিন্তু রাহাদ নিজেও জানে , তিথি কখনই
তার হবে না , তিথি যদি নিজ থেকেও
এসে বলে , “রাহাদ ,
আমি তোকে ভালবাসি ” তারপরেও সম্ভব
নয় । কারণ সমাজ-সংসার তাদের এই
ভালবাসা কখনই মেনে নেবে না । তাদের
দুজনের মাঝে যে ধর্ম নামক বিশাল এক
আকাশচুম্বি দেয়াল দাঁড়িয়ে আছে । এই
দেয়াল পেড়িয়ে কখনই রাহাদ তিথির
কাছে যেতে পারবে না…………
.
.
বাসায় এসে সোফায় ধপ করে বসে পড়ল
রাহাদ । তিথির সাথে গত পাঁচ ঘন্টায়
কোন কথা হয় নি । বিকেলের
ঘটনাটা নিয়ে নিজেকে খুব
অপরাধী মনে হচ্ছে রাহাদের । তাই
অনেকটা অপরাধবোধ আর
খানিকটা অভিমান থেকেই তিথিকে ফোন
দেয় নি সে । অভিমান হল এই কারনে যে ,
সে জানে তিথিও তাকে মন থেকে অনেক
ভালবাসে । কিন্তু মেয়ে তো !!!! বুক
ফাটে তো মুখ ফোটে না ।
নিজেকে নিজে কষ্ট দেবে কিন্তু মুখ
ফুটে বলবে না , “ রাহাদ তুই ই আমার সব”
.
.
আরো একটা ঘন্টা পেরিয়ে গেল , এখনও
তিথির সাথে কথা হয়নি ।
ওকে কি সরি বলা দরকার ?
ভাবতে ভাবতেই ফোনটা হাতে নিল
রাহাদ । ঠিক সঙ্গে সঙ্গেই ভাইব্রেশন
দিয়ে মোবাইলের স্ক্রিনটা আপনাআপনিই
জ্বলে উঠল । স্ক্রিনের নাম টা দেখেই
রাহাদের মনে অদ্ভুদ এক আনন্দের শিহরণ
বয়ে গেল । তিথির ফোন ।
-হেলো
-রাহাদ ?
-হুম । বল ।
-কিরে কোন খোঁজ খবর নাই ।
-কিসের খোঁজ খবর ।
-রাগ করেছিস আমার উপর ?
-কেন ? রাগ করব কেন ?
-বিকেলে তোর সাথে ওরকম করলাম যে ।
-নাহ । ঠিকই করেছিস । আমি কিছু
মনে করি নি ।
-তাই ? তাহলে ফোন দিস নি কেন ?
-এমনি কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল না । তাই

-ও আচ্ছা । তাহলে তো আমিই ডিস্টার্ব
করলাম । তাই না ।
-জানি না ।
-আচ্ছা তাহলে তোর জন্য একটা গুড নিউজ
আছে । তোকে আর কখনও ডিস্টার্বড
হতে হবে না ।
-কেন?
-আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে ।
-ও আচ্ছা । কনগ্রচুলেশনস ।
-থ্যাংকস ।
-ওয়েলকাম ।
-শীঘ্রই দাওয়াত পেয়ে যাবি ।
-আচ্ছা ।
-এখন রাখি । অনেক কাজ ।
-আচ্ছা । গুড নাইট ।
-গুড নাইট ।
…………
কথাগুলো একনাগাড়ে বলতে তিথির
অনেক কষ্ট হচ্ছিল । গলাটাতে যেন পাথর
আঁটকে গিয়েছিল ।
ফোনটা রেখেই তাই সব কষ্ট চোখের
অশ্রুর মধ্য দিয়ে বের করে দিতে চাইল ।
অনেক কাঁদল তিথি । কারণ সেও
জানে এখন রাহাদও তার মতই
কাঁদছে…………
.
দুই দিন পর ……
.
আজ তিথিকে ছেলে পক্ষ
থেকে দেখতে আসবে আর একই
সাথে বিয়ের দিনও ঠিক করবে ।
রাহাদের সাথে ওই যে কথা হয়েছিল ,
আর কথা হয় নি । আর এই দুই
দিনে তিথি আদৌ কিছু খেয়েছে না খায়
নি সে নিজেও জানে না । যতই সময়
যেতে থাকল ততই যেন ওর বুকের উপর
একটা পাথর বড় হতে থাকল । বুকের বাম
পাশটায় একটা চিনচিনে ব্যাথা করছে ।
চোখ গুলো কেমন যেন ধুয়ে আসছে ।
সাড়া শরীর যেন আড়ষ্ঠ হয়ে আসছে……
নাহ সে পারবে না । এই বিয়ে তার
দাড়া সম্ভব নয় । কখনই না ।
দৌড়ে গিয়ে মায়ের কাছে বলল , “মা ,
আমি এই বিয়ে করতে পারব না ।”
বলেই বেড়িয়ে পরল । মাকে কিছুই বলার
সুযোগই দিল না…………
.
.
রাহাদের বাসায় দরজা খুলল ওর আম্মু ।
তিথি ওনাকে দেখেই অনেকটা পাগলের
মত বলল ,
-আন্টি রাহাদ কোথায় ?
-আরে ওর কথা বল না ।
কি হয়েছে কে জানে , গত দুদিন কিছু
খায়ই নি । সারক্ষন
বেলকুনিতে বসে কি যেন ভাবে , আর
কিছুক্ষণ পর পর দরজার দিকে যেন
কারোর জন্য তাকিয়ে থাকে
-কোথায় ও ?
-ওর রুমেই , হয়ত বেলকুনিতে ।
……কোনরকম অপেক্ষা না করেই
তিথি ছুটে গেল রাহাদের কাছে ।
দেখল ,বেলকুনিতে বসে আছে নির্বিকার
ভাবে ।
-রাহাদ?
-তিথি ,
উঠে দাড়াল রাহাদ । দুজনেরই চোখ
ভিজে গেছে ।
তারপর
তিথি রাহাদকে জড়িয়ে ধরে এতদিনের
সব জমানো কান্নাই যেন কাঁদতে লাগল ,
বলল ,
-পারলাম না রাহাদ ।
কান্নার মধ্যেও অনেকটা হাসি মুখ
করে রাহাদ বলল ,
-জানতাম
-তুই অনেক খারাপ ।
-কেন ?
-এত কষ্ট দিস কেন আমাকে ?
-আর তুই মনে হয় আমাকে অনেক সুখ
দিস ?
-হুম ।
কান্নার মাঝে হাসল তিথিও । ওর ওই
কান্নাভরা হাসিতে কেমন যেন
আরো বেশি মায়াময় লাগছিল………
.
এভাবেই চলতে থাকল দুজনের অসম্ভব
প্রেম অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে…..