আদ্র,রাতে না কে যেন আমার সাথে সহবাস করতে চায়।কে যেন আমার সাথে সহবাস করতে আসে।আমি প্রতিদিন ফিরিয়ে দেই,কিন্তু আজ…

-মাথা ঠিক আছে তোমার?কি সব আবোলতাবোল বলছো?
-আমি সত্যি বলছি আদ্র।

এক বছর আগে আদ্রর হাত ধরে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে স্পর্শা।
বাবা মা বিয়ে ঠিক করছিলো এক ছেলের সাথে,আর সেই জন্য কলেজ থেকে পালিয়ে যায় স্পর্শা।আর বিয়ে করে নেয় আদ্রকে।

বিয়ের পর আদ্রর পরিবার ওদের মেনে নিলেও,স্পর্শার পরিবার ওদের কিছুতেই মেনে নেয়না।

আদ্রর বাবা মা খুব আদর করেন স্পর্শাকে।
তাই ও মা বাবার কথা তেমন মনেই করেনা।
আদ্রর বাবা বাজারে যাবার আগে স্পর্শাকে ডেকে জিজ্ঞেস করে যান ও কি খাবে,কি নিয়ে আসবে।

খেতে বসলে,জোর করে বেশি বেশি খাবার বেড়ে দেন আদ্রর বাবা,স্পর্শার প্লেটে।
আদ্রর মা স্পর্শার কাপড় চোপড় পর্যন্ত ধুয়ে দেন।নিজের সন্তানের মত দেখেন তিনি তার ছেলের বউকে।

কিছু শাশুড়ি আছে,ছেলে বিয়ে করলেই বউকে রান্না করতে চুলার পাড়ে পাঠিয়ে দেয়।
আর যদি হয় প্রেমের বিয়ে তাহলে তো কথাই নেই।

কিন্তু আদ্রর মা স্পর্শাকে রান্না ঘরের আশেপাশেও যেতে দেন না।
সে নিজেই রান্না করেন।

আদ্র প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার সময় স্পর্শার জন্য ফুল,বাদাম,চকলেট,ড্রেস,
একেক সময় একেকটা নিয়ে আসে।

স্পর্শাও ওর শাশুড়ির কাছ থেকে টুকটাক রান্না শিখছে আদ্রকে খুশি করার জন্য।

মায়া মমতা,ভালবাসায় চলছে ওদের সংসার।

আজ বিয়ের এক বছর পূর্ণ হলো আদ্র আর স্পর্শার।
আর আজই স্পর্শার ১৮তম জন্মদিন।
আদ্র স্পর্শাকে স্বর্ণের একটা আংটি গিফট করে।কেক কেটে জন্মদিন আর বিবাহবার্ষিকী একসাথে পালন করে।

খুব ভালো ভাবেই চলছিলো আদ্র আর স্পর্শার সংসার।
কিন্তু হঠাৎ ই স্পর্শার মাঝে পরিবর্তন শুরু হয়।
আর পরিবর্তন টা শুরু হয় ওদের বিবাহবার্ষিকীর দিন থেকেই।

সেদিন রাতে আদ্র ভালবাসার অধিকারে স্পর্শাকে কাছে পেতে চাইলে,
স্পর্শা তাতে অসম্মতি জানায়।
আর সেদিন থেকেই শুরু হয় ওদের দুজনের মাঝে দূরত্ব।

আদ্র যতই ওকে কাছে পেতে চায়,
স্পর্শা ততই ওর থেকে দূরে যেতে থাকে।
আদ্র খেয়াল করে,স্পর্শা এখন আর ওকে সহ্যই করতে পারেনা।
আর মিলন তো দূরের কথা।

একদিন সকালে নাস্তার টেবিলে স্পর্শা আদ্রকে বলে,

আদ্র,রাতে না কে যেন আমার সাথে সহবাস করতে চায়।কে যেন আমার সাথে সহবাস করতে আসে।আমি প্রতিদিন ফিরিয়ে দেই,কিন্তু আজ…

আদ্র,রাতে না কে যেন আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে আসে।আমি প্রতিদিন ফিরিয়ে দেই,কিন্তু আজ…

আদ্র স্পর্শার কোন কথাতেই গুরুত্ব দেয়না।

এদিকে আদ্র আর স্পর্শার সম্পর্কে দূরত্ব বাড়তেই থাকে।

আদ্র স্পর্শাকে যত টা কাছে চায়,স্পর্শা আদ্রর থেকে ততটাই দূরে দূরে থাকে।

রাতে আবারো আদ্রকে স্পর্শা বলছে,

আদ্র আমার কথাটা একবার শোনো প্লিজ।

আদ্র রাগে কোন কথাই বলেনি স্পর্শার সাথে।কারণ স্পর্শা আদ্রকে ইদানীং ওর অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।

স্পর্শা ঘুমিয়ে আছে।
মধ্য রাতে স্পর্শা অনুভব করে কে যেন ওর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে এসেছে।
কিন্তু স্পর্শা কাউকেই দেখতে পাচ্ছেনা।
কিন্তু ও অনুভব করছে যে ওর সাথে শারীরিক সম্পর্ক ঠিকই হচ্ছে।

ও দ্রুত লাইট জ্বালিয়ে ফেলে রুমের।

আর আদ্রকে ডাকে,

এই আদ্র আদ্র উঠো প্লিজ।

-কি হয়েছে?
-দেখোনা,কে যেন আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে গেলো।
-তোমার কি মাথা ঠিক আছে?
-বিশ্বাস করো আমার কথা,আমি পুরোপুরি ফীল করতে পেরেছি।
আমি একটুও মিথ্যে বলছিনা।

-লাইট জ্বালানোর পর কাউকে দেখেছো তুমি?
-না,
-তাহলে কি কেউ এসে,করে,চলে গেলো?
আর আমরা দেখতেও পেলাম না।

কি বলতে চাইছো তুমি?
লজ্জা করেনা তোমার এসব বলতে?
ছিঃ।

আচ্ছা সত্যি করে বলো তো তুমি কি চাও?কাউকে ভালবাসো?তার সাথে ঘর বাধতে চাও?কারো প্রেমে পড়েছো?
তাই এসব বাহানা তাইনা?
এখন আর আমাকেও তোমার ভালো লাগেনা।

কেন স্পর্শা?
আমি কি এমন ক্ষতি করেছি তোমার যে আমাকে এত কষ্ট দিচ্ছো?
আমার স্ত্রী আমার সাথে থাকে কিন্তু আমি ওকে স্পর্শ করতে পারিনা। পারিনা সুখের এক মুহুর্ত অনুভব করতে।

কেন স্পর্শা?

যাও ঘুমাও।
আর আমাকে একটু ঘুমাতে দাও.
হাত জোর করে বলছি।প্লিজ।
সকাল হলেই আমার অফিসে যেতে হবে।

আদ্র ঘুমিয়ে পড়ে।
কিন্তু স্পর্শা কিছুতেই ঘুমাতে পারেনা।
সকাল হতেই গোসল করে নেয়।

আর কোন ভাবেই ভুলতে পারেনা রাতের সেই ঘটনা।

-মা,
-কিরে কিছু বলবি?
-মা একটা কথা বলতে চাচ্ছিলাম।
-হুম বল।

-স্পর্শা তুমি এখানে?
আমি তোমাকে খুঁজছি।
-যা আদ্র কি বলে শুনে আয়।
-আচ্ছা মা।

-এই মেয়ে এই,
তুমি মাকে কি বলতে যাচ্ছিলে?
-মাকে আমি রাতের ঘটনা টা বলতে চাচ্ছিলাম।
তুমি তো বিশ্বাস করলেনা আমার কথা।
দেখি মা বিশ্বাস করে কিনা।
-একটা থাপ্পড় দিয়ে বাসায় পাঠায় দিবো।
মাকে যদি কিছু বলো।
আমি চাইনা তোমার এই আজগুবি কথার জন্য আমার পরিবারে কোন ঝামেলা হোক।

-আদ্র ট্রাস্ট মি প্লিজ।আমি একটুও মিথ্যে বলছিনা।

আদ্র সেদিন নাস্তা না করেই অফিসে চলে যায়।

স্পর্শা আদ্রর নিষেধের কারণে ওর শাশুড়িকে কিছুই বলেনা।

-কিরে আদ্র নাস্তা না করেই চলে গেলো যে?
-ওই তো মা,অফিস থেকে জরুরি কল ছিলো বোধয়।
-ওহ আচ্ছা,আয় নাস্তা করে নে।

সারাদিন স্পর্শা ওর শাশুড়ির সাথেই সময় কাটায়।
কাজ কর্ম করে।
আদ্র ফোন দেয় অফিস থেকে,

স্পর্শা রিসিভ করেনা।

-কিরে ফোন ধরছিস না কেন?কে ফোন দিয়েছে?
-আপনার ছেলে মা।
-ধর তাহলে।
-আমার মা তার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করেনা।
-এ কেমন কথা?
-হুম মা,কেন যেন আমি তাকে..
-কি?

মাকে যদি বলি আমি আজকাল আদ্রকে সহ্য করতে পারিনা।তাহলে সে খুব কষ্ট পাবে।

মনে মনে এই কথা ভেবে স্পর্শা ওর শাশুড়ি মাকে কিছুই বলেনা।

-না মা কিছুনা।
-তোদের কি ঝগড়া হয়েছে নাকি?
-না মা।
-দেখ,এই বয়সে একটু আকটু ঝগড়াঝাঁটি হয়।মিলে যাস।
-আচ্ছা মা।
-ফোন টা ধর।আমি যাই।
-আচ্ছা মা।

-হ্যালো।
-এত দেরি হলো যে ফোন ধরতে?
-একটু ব্যস্ত ছিলাম।
-কি করছে আমার লক্ষী বউটা?
-কিছু না।
-আজ যেন আমার বউটা আমার জন্য শাড়ী পরে বসে থাকে।
আমি আজ তাড়াতাড়ি বাসায় আসবো আমার বউ এর জন্য।
-আচ্ছা।
-লাভ ইউ।
-ঠিকাছে বাই।

স্পর্শা ঠিকই আজ আদ্রর জন্য শাড়ী পরে সেজে বসে আছে।

আদ্র বাসায় ফিরেই ডিনার করে নেয়।

তারপর স্পর্শাকে নিয়ে ছাদে গিয়ে কিছু ক্ষণ গল্প করে।।
স্পর্শা আজ স্বাভাবিক ভাবেই আদ্রর সাথে সময় কাটাচ্ছে।
অনেক ক্ষণ গল্প করার পর আদ্র স্পর্শাকে কোলে করে ওদের রুমে নিয়ে যায়।

স্পর্শা লজ্জা পায়।

আদ্র এক এক করে স্পর্শার কানের দুল,গলার নেকলেস,চুলের ব্যান্ড খুলতে থাকে।
যখনই আদ্র লাইট অফ করে স্পর্শার কাছে যায়।
তখনই কে যেন আদ্রর গলা টিপে ধরে।
আদ্র কোন কথাই বলতে পারেনা।

আদ্রর গলা চিপে ধরে আদ্রকে দেয়ালের সাথে লেপ্টে ফেলে।

এদিকে আদ্র হাত পা ছুড়ে দাপাতে থাকে।

আদ্র ছটফট করতে থাকে,
এখনি যদি আদ্রর গলা না ছাড়ে তাহলে আদ্র এখনি নিঃশ্বাস ত্যাগ করবে।অবস্থা এতটা খারাপ হতে থাকে আদ্রর।

কিন্তু কে এইভাবে আদ্রকে গলা টিপে ধরেছে?
এত রাতে কে ই বা এসেছে ওদের রুমে?
তবে কি স্পর্শা কাউকে আগে থেকেই রুমে এনে রেখেছিলো?
নাকি স্পর্শা নিজেই আদ্রকে খুন করার জন্য গলা টিপে ধরেছে?

কিন্তু স্পর্শা একটা মেয়ে হয়ে এত শক্তি পাবেই বা কই?

আদ্র ছটফট করতে থাকে,
এখনি যদি আদ্রর গলা না ছাড়ে তাহলে আদ্র এখনি নিঃশ্বাস ত্যাগ করবে।অবস্থা এতটা খারাপ হতে থাকে আদ্রর।
আদ্রর হাত পা দেয়ালের সাথে ছুড়ে দাপাচ্ছে।

হাত পা ছুড়াছুঁড়ির আওয়াজে আদ্রর মা শব্দ পেয়ে আদ্রর রুমে চলে আসে।

আদ্র বেখেয়ালি হয়ে যখন স্পর্শাকে কোলে নিয়ে রুমে ঢুকেছিলো তখন আদ্র আর ওদের রুমের দরজা লাগায়নি।
দরজা লাগাতে ভুলে গিয়েছিলো।

আর এই ভুলটার কারণেই হয়তো আজ আদ্র বেঁচে গেলো।

আদ্রর মা রুমে ঢুকে লাইট জ্বালাতেই দেখে আদ্র দেয়ালের সাথে লেপ্টে আছে।
আর স্পর্শা বিছানায় শুয়ে আছে।

ওর মাকে দেখে হাত বাড়িয়েই আদ্র অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো।

-কি হয়েছে তোর বাবা?
আদ্র কি হয়েছে তোর?
কথা বলছিস না কেন?কথা বল।

এদিকে এত কিছু হয়ে যাচ্ছে স্পর্শার কোন সাড়া শব্দই নেই।

-এই স্পর্শা!কেমন ঘুম ঘুমাচ্ছিস তুই?
এদিকে আদ্র কেমন করছে আর তোর কোন খবরই নেই।

আদ্রর মায়ের ডাকাডাকিতে স্পর্শা দ্রুত বিছানা থেকে উঠে আদ্রর কাছে আসে।

-কি হয়েছে মা আদ্রর?
আদ্র,এই আদ্র।কি হয়েছে তোমার?

মা,আদ্রর কি হয়েছে?

-আমি কিভাবে জানবো?রুমে কি আমি ছিলাম?তুই আর আদ্র ছিলি।

স্পর্শা তাড়াতাড়ি করে আদ্রর মুখে পানি এনে ছেটাতে লাগলো।

কিছু ক্ষণ পর আদ্রর জ্ঞান ফিরে।

-কি হয়েছে আদ্র তোর?
-কি হয়েছে আদ্র তোমার?

আদ্র কোন কথা বলতে পারছেনা।

ওর মাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।

আর ইশারায় খাট দেখিয়ে দিচ্ছে।

আদ্রর মা আর স্পর্শা আদ্রকে ধরে নিয়ে খাটে শুইয়ে দেয়।

আদ্র কোন কথা বলেনা,
চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে আদ্রর।আর সারা শরীর ঘামছে।

আদ্রর মা তোয়ালে ভিজিয়ে আদ্রর শরীর মুছিয়ে দেয়।

স্পর্শা আদ্রর হাতে পায়ে তেল মালিশ করে।

কিছু ক্ষণ পর আদ্র কথা বলে।

-স্পর্শা,কে আমাকে গলা টিপে ধরেছিলো?
-কিহ?গলা টিপে?
-হ্যাঁ গলা টিপে।কে ধরেছিলো?
-এত রাতে কে আসবে আমাদের রুমে?কি বলছো তুমি এসব?
-কি বলছিস তুই এগুলো আদ্র?
-হ্যাঁ মা কে যেন আমার গলা টিপে ধরেছে।আমি কিছুতেই কিছু করতে পারছিলাম না,হাত পা দাপাদাপি করা ছাড়া।

আর স্পর্শা,আমার ছটফটে মা পাশের রুম থেকে চলে আসলো
আর তুমি আমাকে একটু বাঁচাতে আসলেনা?
বসে বসে আমার মরণ যন্ত্রণা দেখছিলে?

-বিশ্বাস করো আদ্র,তোমার কি হয়েছে বা কেন হয়েছে,কিভাবে হয়েছে আমি কিছুই জানিনা।আমি কিছুই দেখিনি।
-কিহ?
এত কিছু হয়ে গেলো আর তুমি কিছুই দেখোনি?আর কিছুই বুঝোনি?
-প্লিজ আমাকে বিশ্বাস করো।
মা যখন এসে আমাকে ডাকলেন,তখনই আমি বিছানা থেকে উঠে দেখি তুমি ফ্লোরে পড়ে আছো আর মা তোমাকে ধরে রেখেছেন।

পরে আমি দ্রুত উঠে তোমার কাছে যাই।
আর তারপর মা আর আমি দুজন মিলে তোমাকে খাটে এনে শুয়াই।

এর আগে কি হয়েছে আমি কিচ্ছু জানিনা।

-ওহ তুমি কিচ্ছু জানোনা তাইনা?

-আদ্র রাগ করিস না বাবা,
হয়তো ও ঘুমিয়ে গিয়েছিলো।তোর বাবাও ঘুমিয়ে গেছে।তাই সেও কোন কিছুই টের পায়নি।দেখছিস না এত কিছু হয়ে গেছে সে ঘুমাচ্ছেই।

কিন্তু কে তোর সাথে এমন করলো এটাই তো বুঝতে পারছিনা।

আর আমি যখন আসলাম তখন তো কাউকে বেরিয়েও যেতে দেখলাম না।

-তুমি কাউকে বেরিয়ে যেতে দেখোনি মা?
-নারে বাবা দেখিনি।
আচ্ছা শোন বাবা,ঘুমা তুই একটু।
পরে এসব নিয়ে কথা হবে।

স্পর্শা,তুই ভালো ভাবে দরজা টা একটু আটকে দিস।

-আচ্ছা মা।
-আমি তাহলে যাই আদ্র?
-আচ্ছা যাও মা।

আদ্র দু চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে।
স্পর্শা আদ্রর উপর হাত রাখতেই আদ্র স্পর্শার হাত টা সরিয়ে দেয়।

দুজন চুপচাপ শুয়ে থাকে।

সকাল হয়,
আদ্রর মাথায় শুধু রাতের ঘটনাটাই ঘুরতে থাকে।
কে আদ্রকে মারতে চাইলো।
কি দোষ ই বা আদ্রর।

তবে কি স্পর্শা?

আদ্র স্পর্শাকে ডেকে বলে,

-তুমিই কি রাতে আমাকে খুন করার জন্য গলা টিপে ধরেছিলে?
-কি বলছো তুমি?
আমি কেন আমার ভালবাসাকে খুন করতে চাইবো?

সেটাইতো।স্পর্শা কেন নিজের স্বামীকে খুন করতে চাইবে।
না না,ওকে কেন আমি ভুল বুঝতেছি।

কিন্তু কে এই ঘটনার পেছনে,তার রহস্য তো উৎঘাটন করতেই হবে।

হঠাৎ করেই আদ্রর মায়ের চিৎকার,

-আদ্ররে তোর বাবা আর নেই।

আদ্রর বাবা হঠাৎ ই স্ট্রোক করে মারা যান।

শোকের ছায়া নামে আদ্রর পরিবারে।

সবাই কান্নাকাটি করে,আদ্রর বাবাকে অন্তিম বিদায় জানায়।

এই শোকের মধ্য দিয়েই কেটে যায় কত গুলো দিন।

একদিন রাতে আদ্র স্পর্শাকে জড়িয়ে ধরে,

আর তখনই স্পর্শা আদ্রকে ধাক্কা দিয়ে খাট থেকে ফেলে দেয়।

আর চিৎকার করে বলতে থাকে,

ছুঁবিনা,একদম ছুঁবিনা আমায়।

সারা ঘর তন্ন তন্ন করে আদ্র স্পর্শাকে খোঁজে।
কিন্তু কোথাও স্পর্শাকে খুঁজে পায়না।
হঠাৎ আদ্র যা দেখতে পেলো,তা দেখার জন্য আদ্র প্রস্তুত ছিলোনা।

আদ্র বারান্দায় গিয়ে দেখে এত রাতে স্পর্শা পুরো বাগানে মাথা নিচের দিকে দিয়ে হাতে ভর করে আর পা উপর দিকে দিয়ে হাঁটছে।
সারা বাগান ও এই ভাবে হেঁটে বেড়াচ্ছে।
আদ্র দেখতে দেখতেই স্পর্শা এবার সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ায়।
আর ঘরের দিকে আসার জন্য রওনা দেয়।

আদ্র তাড়াতাড়ি করে ঘুমানোর ভান করে বিছানায় শুয়ে পড়ে।
স্পর্শা আদ্রর পাশে এসে শুয়ে পড়ে।
আদ্র ভয়ে কাঁপতে থাকে।
কিন্তু আপাতত কিছুই বলেনা স্পর্শাকে।

কিছু ক্ষণ পর স্পর্শা-
আদ্র,এই আদ্র।
কাঁপছো কেন তুমি?
আদ্র কোন কথা বলেনা।
কোন কথা না বলে আদ্র নাক ডাকার চেষ্টা করছে।
যাতে স্পর্শা ভাবে ও ভয়ংকর কোন স্বপ্ন দেখেছে।

সকাল হতেই আদ্র ওর মায়ের কাছে যায়।
স্পর্শা এখনো ঘুমাচ্ছে।

-মা,তুমি কি উঠেছো?
-হুম দাঁড়া।কিরে এত সকালে?
-মাগো,

আদ্র ওর মাকে জড়িয়ে ধরে।

-কি হয়েছে?তুই এমন করছিস কেন?
-মা জানো,গত কাল মাঝ রাতে হঠাৎ আমি পানি খেতে উঠি।
আর উঠেই দেখি স্পর্শা খাটে নেই।
-তাতে কি?হয়তো টয়লেটে গিয়েছিলো।
-না মা,আমি পরে ওকে সারা ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজি।কিন্তু কোথাও পাইনা।
-তারপর?
-তারপর যা দেখি,তা দেখার জন্য আমার চোখ কখনোই প্রস্তুত ছিলোনা।
-কি দেখেছিস বল?
-দেখি যে স্পর্শা সারা বাগান ঘুরে বেড়াচ্ছে।
-ও তো রাতে ভয় পায়,কারেন্ট গেলেই তো একা রুমে থাকতে চায়না।
সারা বাগান এত রাতে ও ঘুরবে কি করে?
তুই হয়তো ভুল দেখেছিস।
-আরে শোনোনা,শুধু কি ঘুরেছে?সারা বাগান পা উপরে দিয়ে মাথা নিচে দিয়ে হাতে ভর করে হেঁটেছে।
-কিই?
-হ্যাঁ মা।আমি নিজেও আমার চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
-তারপর কি হলো?
-তারপর কিছু ক্ষণ ওই ভাবে হেঁটে ও সোজা হয়ে আবার রুমে চলে আসলো।
আর আমি ঘুমের ভান করে শুয়ে রইলাম।
আমার সারা শরীর ভয়ে অবস হয়ে আসছিলো।
রাতে কিছু বলিনি,যদি কিছু করে ফেলে।
আর তোমাকেও বলিনি চিন্তা করবে বলে।
তাই সকাল হবার অপেক্ষায় ছিলাম।

এখন কি করবো বলো?
-আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা কি করবো না করবো।

আচ্ছা শোন,তুই স্পর্শাকে বুঝতে দিস না তুই যে এসব দেখেছিস।
আমিও কিছু বুঝতে দিবোনা।
স্বাভাবিক ভাবে চলবি ওর সাথে।
দাঁড়া আমি নাস্তা বানিয়ে দিচ্ছি,
তুই খেয়ে অফিসে চলে যা।
আমি ইমাম সাহেব কে গিয়ে বলি,দেখি সে কি বলেন।

আদ্রর মা আদ্রকে নাস্তা বানিয়ে দেয় আদ্র খেয়ে অফিসে চলে যায়।
স্পর্শা এখনো ঘুমাচ্ছে।

আদ্রর মা ইমাম সাহেবের কাছে যায়।
রাতের ঘটনা তাকে সব খুলে বলে।
আর বলে আপনি একটু আমাদের বাসায় চলেন।ওকে একটু দেখবেন যে ওর কি হয়েছে।

ইমাম সাহেব আদ্রর মায়ের সাথে আদ্রদের বাসায় যায়।

স্পর্শা এখনো বিছানায় শুয়ে।

ইমাম সাহেব স্পর্শাকে ডেকে উঠাতে বলেন।
আদ্রর মা ডাকাডাকি করে কিন্তু স্পর্শা উঠে আসেনা।
ও ঘুমাচ্ছেই।
তারপর ইমাম সাহেব আদ্রর মাকে বলেন আপনি একটা চাদর দিয়ে ওর সারা শরীর ঢেকে দিন।
তারপর আমি ওর কাছে যাবো।ওকে দেখবো।

আদ্রর মা স্পর্শার গায়ে একটা চাদর দিয়ে ঢেকে দেয়।

ইমাম সাহেব তারপর আদ্রর মায়ের সাথে স্পর্শার রুমে ঢুকে।

রুমে ঢুকে স্পর্শার মাথার কাছে গিয়ে ইমাম সাহেব অনেক গুলো দোয়া দরুদপাঠ করেন।
আর পাঠ করে যখনই স্পর্শাকে ফুঁ দেন।
তখনই স্পর্শা কেঁপে উঠে।
এরপর আরো কয়েক বার সে দোয়া পাঠ করে স্পর্শাকে ফুঁ দেন।
যত বার সে ফুঁ দেন ততবার স্পর্শা কেঁপে উঠে।

দোয়া শেষে ইমাম সাহেব রুম থেকে বেরিয়ে আসেন।

-কি দেখলেন ইমাম সাহেব?
-আপনার ছেলের বউর উপর বদ কিছুর আছর আছে।
আর তাই ও এমন করেছে।
-কিন্তু বিয়ে করে কত দিনই তো হয় ও এসেছে।কখনো তো এমন করেনি।
-ওর বয়স কত?
-এইতো ১৮.
-ওর যেদিন ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে সেদিনই ওই বদ টা ওর উপর ভর করেছে।
এই বদ টার ছায়া ওর উপর ছোট থেকেই ছিলো।
কিন্তু ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত সেই বদ টা ওর কাছে আসেনি,আসতে পারেনি।
যেদিনই ওর ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে,ওই বদ ওর উপর এসে গেছে।

-এখন কি করবো আমরা?
-ওর তো আগে থেকেই চিকিৎসা করার দরকার ছিলো।
ওর পরিবারের কেউ আপনাদের ওর এই সমস্যার কথা জানায়নি?
-না,কেউ তো কিছু বলেনি।
তাছাড়া ওরা নিজেরা পছন্দ করে বিয়ে করেছে বলে তারা নারাজ।আর সেই জন্য তাদের সাথে আমাদের ভালো সম্পর্কও নেই।

-আপনি ওর মায়ের কাছে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করুন।
আমার কথার সাথে মিলিয়ে দেখুন মিলে কিনা।
আমি এই পানি টা পড়ে দিচ্ছি,আর তেল পড়ে দিবো।আপনি ওর গায়ে দিয়ে দিবেন।
তারপর কি হয় আমাকে জানাবেন।

আদ্রর মা স্পর্শার মোবাইল নিয়ে স্পর্শার মাকে ফোন দেয়।
ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে,

-আপা যা সত্যি তাই বলবেন,
স্পর্শার উপর কি ছোট বেলা থেকে খারাপ কিছু ছায়া ছিলো?

স্পর্শার মা চুপ করে আছে।
-আপা বলুন দয়াকরে।
-হ্যাঁ ছিলো।
-কাউকে কি দেখিয়েছিলেন ওকে?
কিভাবে জেনেছিলেন?
-কেন আপা?কিছু হয়েছে আমার স্পর্শার?আপনি এসব জানলেন কি করে?
-আপনি আগে আমাকে সব খুলে বলুন,তারপর আমি বলছি।
-একদিন আমার বাবার বাড়ী থেকে বট গাছের নিচ দিয়ে রাত করে ওকে নিয়ে আমি আমাদের বাসায় আসি।
আমার মা অনেক নিষেধ করেছিলো রার করে ওখান দিয়ে যেতে।কিন্তু ওর বাবা শুনেনি কারো কথা।
তারপর আমরা বাসায় এসে বসা মাত্রই হঠাৎই ও খুব কান্না শুরু করে।
আর থামেনা ওর কান্না।সারারাত কান্না করে।

সকালে থেমে যায়।
আবার পরের দিন রাতে আবার কান্না শুরু হয়।
সারারাত কান্না করে।
সকালে থেমে যায়।

তারপরের দিন সকালে আমরা ওকে একটা কবিরাজের কাছে নিয়ে যাই।

কবিরাজ ওকে দেখে বলেন ওর উপর খারাপ কিছুর আছর পড়েছে।
আর সে ওকে কয়েকটা তাবিজ দিয়ে দেন।
আর বলেন,১৮ বছর পূর্ণ হলেই এই খারাপ আত্মা টা ওর উপর চলে আসবে।
তাই ১৮ বছর পূর্ণ হবার আগের দিনই ওকে কোন কবিরাজের কাছে নিয়ে যাবেন আর ওর সমস্যার কথা জানাবেন।
আর যদি আমি বেঁচে থাকি তাহলে আমার কাছে নিয়ে আসবেন।
১৮ বছর পূর্ণ হলেই কিন্তু ওই খারাপ আত্মা ওর উপর চলে আসবে।
আর ওর ক্ষতি করবে।

-ওর তো কিছু দিন আগেই ১৮ বছর পূর্ণ হলো।
আপনি আমাদের একটু আগে জানিয়ে দিবেন না?
জানেন ও গত রাতে কি করেছে?

আদ্রর মা স্পর্শার মাকে সব খুলে বলে।

-আমি এক্ষুণি আসছি আপা আপনাদের বাসায় ওর বাবাকে নিয়ে।
তারপর ওকে নিয়ে সেই কবিরাজের বাসায় যাবো।
জানিনা উনি বেঁচে আছেন কিনা।গিয়ে দেখতে তো দোষ নেই।
নইলে আমার মেয়েকে ওই খারাপ আত্মা মেরেই ফেলবে।

স্পর্শার মা এই বলে কাঁদতে থাকে।

আর হঠাৎ ই স্পর্শার রুম থেকে চিৎকারের শব্দ আসে।
আদ্রর মা দৌড়ে স্পর্শার রুমে যায়।

হঠাৎ ই স্পর্শার রুম থেকে চিৎকারের শব্দ আসে।
আদ্রর মা দৌড়ে স্পর্শার রুমে যায়।

স্পর্শা মা মা বলে চিৎকার দিয়ে আদ্রর মাকে জড়িয়ে ধরে।

-কি হয়েছে তোর?
-মা,আমি এই মাত্র একটা ছায়া দেখতে পেলাম।ছায়া টা আমার দিকে আসছিলো আর আমি আপনাকে ডাকি।
আপনাকে ডাকার পর ছায়া টা অদৃশ্য হয়ে গেলো।
আমি অনেক বার আপনার ছেলেকে বলেছি আমার কাছে রাতেও কিছু একটা আসে।সে আমার কথা বিশ্বাসই করেনা।

-আমাকে তো কখনো বলিস নি তুই।
-আমি বলতে চেয়েছি মা,আপনার ছেলে আমাকে বলতে নিষেধ করেছে।
আমার খুব ভয় করছে মা।খুব ভয় করছে।
-কিচ্ছু হবেনা মা,সব ঠিক হয়ে যাবে।

আদ্রর মা স্পর্শাকে ইমাম সাহেবের দেয়া পানি পড়া খেতে দেয়।
আর তেল পড়া শরীরে দিয়ে দেয়।

এরপর স্পর্শা স্বাভাবিক হয়।

কিছু ক্ষণ পর স্পর্শার মা বাবা চাচা চাচি আদ্রদের বাসায় আসে।

স্পর্শা সবাইকে দেখে খুশিতে আত্মহারা।
বাবা মাকে জড়িয়ে ধরে স্পর্শা কান্না করে।
তারাও তাদের মেয়েকে বুকে টেনে নেন।

আদ্রর মা সবাইকে নাস্তা দেয়
আর বলে যে,দুপুরে খাওয়া দাওয়া করেই তারপর তারা সবাই ওই কবিরাজের বাড়ীতে যাবে।

আদ্রর মা আর স্পর্শা দুজন মিলে সবার জন্য রান্না করে।
স্পর্শা এখন একদম স্বাভাবিক।
স্পর্শা আদ্রকে ফোন দিয়ে বাসায় আসতে বলে দুপুরের খাবার খেতে।
আর বলে মা বাবা এসেছে।
এক সাথে খাবো সবাই।চলে এসো।

আদ্র ওর মাকে ফোন টা দিতে বলে।
আদ্রর মাও বলে আদ্রকে বাসায় আসতে।

আদ্রর বাবা মাকে দেখে আদ্র খুব খুশি হয়।
আদ্রর বাবা আদ্রকে জড়িয়ে ধরে।

তারপর সবাই মিলে দুপুরে এক সাথে বসে দুপুরের খাবার খায়।

এরপর সবাই মিলে আদ্রকে বুঝিয়ে বলে,আসলে স্পর্শার সমস্যা টা কি।
আর ওর উপর যে খারাপ কিছুর ছায়া আছে।
আদ্রও বুঝতে পারে।
আর সবাই স্পর্শাকেও কথা গুলো জানায়।

খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই মিলে ওই কবিরাজের বাড়ীতে যায়।
যেই কবিরাজ ছোট বেলায় স্পর্শাকে দেখেছিলো।

গিয়ে দেখে কবিরাজ বেঁচে আছেন।
তবে বয়স যে বেড়েছে।
আর এত দিন আগের কথা তার কিছুই মনে নেই।

স্পর্শার মা তাকে সব কিছু খুলে বলেন।
তখন কবিরাজ বলে যে,

ওর চিকিৎসা করতে হবে।
কবিরাজ সবাইকে বাইরে বেরিয়ে যেতে বলেন কিছু সময়ের জন্য।
স্পর্শা আর আদ্রকে রেখে।
সে ওদের দুজনের সাথে আলাদা কিছু কথা বলবে।

সবাই বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করে।

-তুমি ওর স্বামী?
-জ্বী।
-তোমার আজ থেকে দায়িত্ব প্রতিদিন ওর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করা।আমি যেই সাত দিন ওর চিকিৎসা করবো সেই সাত দিন।
তোমাদের মেলামেশা হলেই ওই খারাপ আত্মা ওর কাছে আসতে পারবেনা।

কিন্তু তোমরা দূরত্বে থাকলেই ওই খারাপ আত্মা ওর মধ্যে এসে যাবে।

-কিন্তু ও তো আমাকে ওর কাছেই যেতে দেয়না।
ওকে স্পর্শই করতে দেয়না।
-ও না।ওর সাথে থাকা খারাপ আত্মা তোমাকে ওকে ছুঁতে দেয়না।
কারণ ওই পুরুষ আত্মা।ও নিজে চায় ওর সাথে মিলন করতে।
ওই আত্মা তোমাকে সহ্য করতে পারেনা।
আর চাইবে তোমার ক্ষতি করতে।
তুমি সাবধানে থেকো।

ওই খারাপ আত্মা আর স্পর্শার মাঝে তুমিই এখন এক মাত্র দেয়াল।
তোমার কিছু হলে ওই খারাপ আত্মা স্পর্শার মাঝে পুরোপুরি চলে আসবে।
তুমি নিজের আর তোমার স্ত্রীর খেয়াল রাখবে।
সাবধানে থাকবে।
আর যা বলেছি তাই করবে।

-জ্বী আচ্ছা।
-আর আমি ওকে একটা তাবিজ দিয়ে দিচ্ছি,এই তাবিজ টা ও যেন গলা থেকে না খুলে।
কিংবা কোন ভাবেই যেন ওর গলা থেকে খুলে না পড়ে যায়।
-আচ্ছা।
-এটা খুব সাবধানে রাখবে গলায়,আর তোমার স্বামীর সাথে সাথে থাকবে যত ক্ষণ ও বাসায় থাকে।ওর থেকে দূরে দূরে থাকবেনা।
-আচ্ছা।
-তুমি কি করো?
-জ্বী চাকুরী করি।
-তুমি কি সাত দিনের ছুটি নিতে পারবেন?
যদিও তিন দিনেই আমি সব সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করবো।
কিন্তু বেশি দিনের সময় চেয়ে রাখা ভালো তাই আমি সাত দিন বলেছি।
-তিন দিনের ছুটি নেয়া যাবে।
এত দিন দিতে চাইবেনা।
-ঠিকাছে তুমি তাহলে তিন দিনের ছুটিই নাও।
আর এ তিন দিন তোমার বউয়ের সাথে সাথেই থাকবে।
-জ্বী আচ্ছা।
-এই নাও তাবিজ,এই তাবিজ টা ঘুমানোর আগে ওর গলায় পরিয়ে দিবে।
আর আগামীকাল থেকে তিন দিনের যাত্রা শুরু।
মনে থাকবে?
-জ্বী মনে থাকবে।
-আর শোনো মেয়ে,ওইটা খারাপ পুরুষ আত্মা।তোমার কাছে আসতে চাইবে সব সময়।
সুযোগ খুঁজবে।
তুমি সাবধানে থাকবে।আর তাবিজটা সব সময় সঙ্গে রাখবে।
-জ্বী আচ্ছা।
-আল্লাহ্‌ তোমাদের মঙ্গল করুন।

-কই আসুন আপনারা,আমি ওদের যা বলার বলেছি।

সবাই ভেতরে আসে।

-আমি সাত দিনের টাইম নিলাম।চেষ্টা করবো তিন দিনেই যেন সব সমাধান হয়।
তবুও বেশি সময় নিয়ে রাখা ভালো।
এই তিন দিন ওরা দুজন সারাক্ষণ পাশাপাশি থাকবে।

আর এই যে তাবিজ দিয়েছি।
এটা আজ ঘুমানোর আগে ওর স্বামী ওকে পরিয়ে দিবে।
আগামীকাল থেকে তিন দিনের যাত্রা শুরু।

আপনারা এবার আসতে পারেন।

কবিরাজ সবাইকে বিদায় দেন।

আদ্র ওর মা এবং স্পর্শাকে নিয়ে আদ্রর বাসায় চলে যায়।
স্পর্শার বাবা মা সেখান থেকে তাদের বাসায় চলে যায়।

সন্ধ্যা হয়ে আসে।
সন্ধ্যা থেকে রাত।
রাতে আদ্র আর স্পর্শা খাওয়া দাওয়া করে শুতে যায়।

-আমার কিছু হবেনাতো আদ্র?আমার না খুব ভয় করছে।
-কিচ্ছু হবেনা পাগলী।আমি আছিতো।

আদ্র স্পর্শার কপালে একটা চুমু দিয়ে স্পর্শাকে জড়িয়ে ধরে।

(আদ্রর আর স্পর্শার কারোই মনে থাকেনা শোবার আগে তাবিজ গলায় দিতে।)

আর স্পর্শা আদ্রকে বিছানায় ফেলে গলা টিপে ধরে।
-সেদিনই মরে যেতি তুই,সেদিনও তোর গলা টিপে আমিই ধরেছিলাম।কিন্তু তোর মা এসে বাঁচিয়ে নিলো তোকে।
কিন্তু আজ,আজ কে বাঁচাবে তোকে?
হা হা হা।

স্পর্শা আদ্রকে বিছানায় ফেলে গলা টিপে ধরে।
-সেদিনই মরে যেতি তুই,সেদিনও তোর গলা টিপে আমিই ধরেছিলাম।কিন্তু তোর মা এসে বাঁচিয়ে নিলো তোকে।
কিন্তু আজ,আজ কে বাঁচাবে তোকে?
হা হা হা।

আদ্র ছটফট করতে করতেই বিছানায় শুয়ে শুয়ে খাটের ড্রয়ারে হাত দিয়ে তাবিজটা বের করে।
আর আচমকা স্পর্শার গলায় পরিয়ে দেয়।
আর স্পর্শা আদ্রর গলা ছেড়ে দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়।

আদ্র বুঝতে পারে এর আগের বারও স্পর্শার মাঝে ওই খারাপ আত্মা এসে ওর গলা চেপে ধরে।
আর মায়ের আওয়াজ পেয়ে স্পর্শাকে খাটে ফেলে চলে যায়।

আর আজও তাই হয়েছে।

কিন্তু আজ তাবিজ দেয়ার সাথে সাথে স্পর্শার শরীর থেকে চলে যায় সেই খারাপ আত্মা।

আদ্র কিছু ক্ষণ পর স্পর্শার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়।

স্পর্শা চোখ খুলে তাকায়।

-তুমি ঠিক আছো?
-হুম ঠিকই তো আছি।কেন?কিছু হয়েছিলো কী আমার?
-তোমার উপর আবার সেই খারাপ আত্মা এসেছিলো।
-কি বলো?
-হ্যাঁ।আর তুমি আমার গলাও টিপে ধরেছিলে এই মাত্র।
আর সেদিনও তুমিই ধরেছিলে।
-বলছো কি তুমি?
-হ্যাঁ ওই খারাপ আত্মা তোমার উপর এসে এমন টা করেছে।
-সরি আদ্র,আমাকে মাফ করে দাও।
-আরে পাগলি,তোমার তো কোন দোষ নেই।
এই তাবিজের জন্য আজ আমি বেঁচে গেছি।
এটা যেন কোন ভাবেই তোমার গলা থেকে খুলে না যায়।
-আচ্ছা।
-চলো ঘুমিয়ে পড়ি।

স্পর্শা আদ্রকে ওর বুকে জড়িয়ে নেয়।

সকাল বেলা স্পর্শা আদ্রর কপালে চুমু দিয়ে বিছানা থেকে উঠে যেতে থাকে আর আদ্র স্পর্শার হাত টেনে ধরে।

-আরেকটু শুয়ে থাকো।
আমার বুকে মাথা রেখে।
-মা একা একা নাস্তা বানাচ্ছেন,
আমার গোসল করে মায়ের কাছে যেতে হবে।
দেরি হয়ে যাচ্ছে।
-কবিরাজ না বলেছে দুজনকে কাছাকাছি থাকতে?
-চলে এসো কিচেন রুমে।হি হি।

স্পর্শা ধাক্কা দিয়ে আদ্রকে সরিয়ে গোসল করে ওর শাশুড়ির কাছে যায়।

-মা,
-উঠেছিস?
-হুম।
-আদ্র কি করে?
-ফ্রশ হচ্ছে।
-কয়টা দিন দুজন এক সাথেই থাকিস।
কাছাকাছি থাকিস।
তোর রান্না ঘরে আসতে হবেনা।
তুই ওর সাথে রুমেই থাকিস।
আমি রান্না করে খেতে ডাকলে শুধু আসবি।
নইলে রুম থেকেই বের হবার দরকার নেই।

স্পর্শা ওর শাশুড়িমাকে জড়িয়ে ধরে।
-আপনার মত মা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার মা।
সারাজীবন আপনার আঁচল টা আমার মাথার উপর রাখবেন মা।
-পাগলি মেয়ে আমার।রাখবো রে রাখবো।

যা এবার নাস্তা নিয়ে টেবিলে সাজা।
আর সাজিয়ে আদ্রকে ডেকে আন।

-আমি এসে গেছি,ডাকতে হবেনা আমাকে।
-বাহ্ এত ফাস্ট!
-জ্বী,কবিরাজের কথা মানতে তো হবে।
বউ এর সাথে সাথে যে থাকতে হবে।

সেদিন আর স্পর্শার কোন সমস্যা হয়না।
সারাদিন সারারাত ভালো থাকে।

কিন্তু পরের দিন সকালেই হঠাৎ স্পর্শা চিল্লাতে থাকে আর বমি করতে থাকে।

-কি হয়েছে মা তোর?
এমন করছিস কেন?
-ভোগ দে,
-কি দে?
-ভোগ দে।
-মা ও কি বলছে এগুলো?আর এমন করছে কেন?

স্পর্শা মেঝেতে বসে মাথা ঝাঁকিয়ে চুল গুলো নাড়াতে নাড়াতে বলে ভোগ দে,আমায় ভোগ দে।

-আদ্র,তুই এখনি গিয়ে কবিরাজকে নিয়ে আয়।
যত দ্রুত পারিস।

আদ্র দ্রুত কবিরাজের বাসায় যায় আর কবিরাজকে নিয়ে আসে।

-আপনি এসেছেন?
দেখুন ও কি সব বলছে,আর বমি করছে চিল্লাচ্ছে।
-তোমরা সবাই সরো।
আমাকে ওর সাথে কথা বলতে দাও।
আর ওর তাবিজ কই?
আমি না বলে দিয়েছি ওর তাবিজ যেন গলা থেকে না হারায়?

-ঠিক ই তো,ওর তাবিজ কই?
আদ্র,ওর তাবিজ কোথায়?
-জানিনাতো মা।
খোঁজ তাড়াতাড়ি।

আদ্রর মা আর আদ্র তাবিজ খুঁজতে থাকে।
-তাবিজ টা যদি ওর গলায় থাক্তো তাহলে আর ওর কোন সমস্যাই হতোনা।
ওর উপর এখন খারাপ আত্মাটা এসেছে তাই ও এমন করছে।
আদ্রর সাথে আপনি আছেন বলে আদ্রকে মারার চেষ্টা করেনি।
তাহলে ওকে মারার জন্য এখন হামলা করতো।

-এখন আমরা কি করবো?
-তাবিজ টা কোথায় আছে খুঁজুন।
আমি তো আর তাবিজ নিয়ে আসিনি।
আর যা করার এখন আমি করছি।

কবিরাজ স্পর্শার গালে একটা সজোরে থাপ্পড় দিয়ে বলে,

-কি চাই তোর আমাকে বল?
-ভোগ দে,আমায় ভোগ দে।
-কেন দিবো ভোগ তোকে?
-ভোগ দে,আমায় ভোগ দে।
-ভোগ দিলে তুই এই মেয়েকে ছেড়ে যাবি?
-না।
-তাহলে কেন তোকে ভোগ দেবো?
-ভোগ দে।
-তুই ওকে ছেড়ে গেলে ভোগ পাবি।
-দিবিনা তুই ভোগ?
-না দেবোনা।
আগে কথা দে তুই ভোগ দিলে এই মেয়েকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবি?
-ওকে ছাড়ার জন্য ধরিনি।ওকে আমার পছন্দ হয়েছে।তাই ওর কাছে আমি এসেছি।
-তাহলে না খেয়ে মর।
-ভোগ দে।
-পাবিনা,
-ভোগ দে ভোগ দে ভোগ দে।
-কি ভোগ লাগবে তোর বল?
-সন্দেশ আর পোড়া গজার মাছ খাবো আমি।
-সন্দেশ আর পোড়া গজার মাছই আমি তোকে দেবো।
কিন্তু এই মেয়েকে ছেড়ে দিতে হবে।
এই মেয়েকে ছেড়ে তোর ওই বট গাছে ফিরে যেতে হবে।
যেখানে তোর বাসস্থান।আর কখনো তুই এই মেয়ের কাছে আসতে পারবিনা।
কথা দে তুই।

-সন্দেশ আর পোড়া গজার মাছ দিবিতো?
পোড়া গজার মাছ কত দিন হয় খাইনা।
-হুম তাই দিবো।
কিন্তু ওকে ছেড়ে যেতে হবে একেবারে।
-হুম একেবারে ছেড়ে চলে যাবো।
যদি তুই আজকের মধ্যে আমাকে পোড়া গজার মাছ আর সন্দেশ দিস।

আদ্র আর আদ্রর মা স্পর্শার বলা কথা গুলো শোনে অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকে।

-যাও এখনি তোমরা সন্দেশ আর গজার মাছের ব্যবস্থা করো।
-কবিরাজ ভাই,ও তো এসব খায়না।
-আরে বোন,আপনাত পুত্র বধূ না।
খাবেতো এসব ওই খারাপ আত্মা।
আর এসব পেলেই তবে ও আপনাদের বউ কে আজ ছেড়ে যাবে।
নয়তো আজ স্থায়িত্ব অর্জন করে থেকে যাবে ওর শরীরে।

-মা,তুমি থাকো।আমি এখনি খুঁজে আনছি।
কোথায় পাওয়া যায় এই সন্দেশ আর গজার মাছ।দেখি আমি।

আদ্র বেরিয়ে পরে এসবের সন্ধানে।
কিন্তু সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে যায় সন্দেশ পেলেও কোথাও আদ্র গজার মাছ খুঁজে পায় না।

এদিকে স্পর্শা বমি করতে করতে অবস্থা খারাপ।

-হ্যালো মা,
-পেয়েছিস বাবা?
স্পর্শার অবস্থা যে খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
-সন্দেশ পেয়েছি মা কিন্তু গজার মাছ কোথাও পাচ্ছিনা।

হঠাৎ আদ্রর কথা শুনে এক লোক বল্লো,
-কি ভাই গজার মাছ লাগবে?
-হ্যাঁ ভাই।
-আমি দিতে পারবো।তবে আমাকে ১০০০ টাকা দিতে হবে।
আমি একজনের পুকুর থেকে বলে এনে দিতে পারবো।
-ভাই আমি তাই দিবো আমাকে এখনি এনে দিতে হবে।
-চলুন আমার সাথে।

লোকটা আদ্রকে একটা গজার মাছ এনে দেয়।

আদ্র সন্দেশ আর গজার মাছ নিয়ে বাসায় ফিরে।

কবিরাজ আদ্রর মাকে গজার মাছ টাকে পুড়তে বলে।
আদ্রর মা মাছ পুড়ে কবিরাজকে দেয়।

-এনেছি তোর সন্দেশ আর গজার মাছ।
-এগুলো এখন শেওড়া গাছের নিচে গিয়ে রেখে আয়।
-আমি রাখবো,কিন্তু তুই আগে কথা দে এই মেয়ের কাছে আর কোন দিন আসবিনা।
-কথা দিলাম,তুই যদি সত্যি আমাকে গজার মাছ আর সন্দেশ দিস তাহলে আমি আর কোন দিন এই মেয়ের কাছে আসবোনা।
-আপনারা দুজন ওর কাছে থাকুন।
আমি এগুলো শেওড়া গাছ খুঁজে ওই গাছের নিচে দিয়ে আসি।
-দুই বাড়ী পরে একটা শেওড়া গাছ আছে।
আমি আসবো আপনার সাথে,দেখিয়ে দিতে?
-না,তাহলে ও আদ্রর ক্ষতি করে ফেলবে।
আপনি থাকুন।

কবিরাজ শেওড়া গাছের নিচে সন্দেশ আর পোড়া গজার মাছ রাখার সাথে সাথে স্পর্শা ঠিক হয়ে যায়।

কবিরাজ এসে দেখে স্পর্শা একদম সুস্থ।

-কবিরাজ সাহেব আপনি এখানে?
স্পর্শা তাড়াতাড়ি করে মাথা ঢাকে।
-তোমার তাবিজ কই?
-তাবিজ তো সকালে কাপড় পাল্টানোর সময় গলা থেকে পড়ে গেছে।
আমি গলায় দিতে চেয়েছি,কিন্তু আর কিছু মনে নেই।

আপনি এখানে কেন?
কিছু হয়েছে?
-না কিছু হয়নি।
তবে আজ থেকে তুমি মুক্ত ওই খারাপ আত্মা থেকে।
আমার মনে হয়না ও আর তোমার কাছে কোন দিন আসবে।

-ওর কথা কিভাবে বিশ্বাস করবো আমরা ভাই?
-ও কথা দিয়েছে যখন।
তাহলে ও ওর কথা রাখবে।
ওর গজার মাছ না পেলে ও কখনোই ছেড়ে যেতোনা।
এর আগেও আমি অনেক তাড়িয়েছি এসব বদ আত্মা।

যা চেয়েছে তা দিতে পারলে ওরা আর ২য় বার তার উপর আসেনি।
নিশ্চিন্তে থাকুন আপ্নারা।
আর তাবিজ টা তবুও কিছু দিন গলায় রাখুন।

আর আদ্র,তুমি তোমার বউকে সময় দিও।স্বামী স্ত্রী ঘনিষ্ঠ হলে কোন কিছুই তাদের মাঝে সহজে আসতে পারেনা।

আমি এখন আসি।
-খাওয়াদাওয়া করে যাবেন প্লিজ।
-না,আমি বাসায় গিয়ে গোসল করে খাবো।

যদি এর মাঝে কোন সমস্যা হয় তাহলে আমাকে খবর দিও।
-আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।
-তোমরাও ভালো থাকো।

কবিরাজ চলে যায়।
স্পর্শাকে আদ্রর মা গোসল করিয়ে তাবিজ পরিয়ে দেয়।
এরপর আর কোন দিন স্পর্শার কোন সমস্যা হয়নি।

স্পর্শা এখন ওর স্বামী সংসার নিয়ে খুব ভালো আছে।
প্রায় ভুলেই গেছে সবাই অতীতের সেই কালো ছায়ার কথা।
কিন্তু তবুও মাঝে মাঝে বুকের ভেতর কাঁপন সৃষ্টি করে ভাবনার দ্বারা মনের মাঝে উঁকি দেয় সেই ভয়ংকর অতীত।
যা ওরা চাইলেও হয়তো পুরোপুরি কোন দিনও ভুলতে পারবেনা।